#প্রণয়
#পর্বঃ৩২
#তানিশা সুলতানা
“ইমন ভাইয়া ফালতু কথা বাদ দিন। আমার সাথে এরকম ফ্লার্ট করবেন না আপনি। তাহলে আমি ভাইয়াকে বলে দিবো।
রাগে গজগজ করতে করতে বলে তোহা। ইমন হাসে। ছাঁদের একদম শেষ সীমানায় এসে রেলিং ধরে দাঁড়ায়। তোহাও এসে ইমনের পাশে দাঁড়ায়। এরকম করার কারণ আজকে শুনেই ছাড়বে।
” বললাম তো কারণ জানলে ঠাস করে পড়ে যাইবা।
আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে ইমন।
“পড়লে পরবো। আপনাকে ধরতে হবে না। আমি আবার একা একাই উঠে চলেও যেতে পারবো।
মুখ বাঁকিয়ে বলে তোহা।
ইমন ভ্রু দুইটা আড়াআড়ি ভাবে ভাজ করে সরু চোখে তাকায় তোহার দিকে। কখনো মেয়েটাকে ভালো করে খেয়াল করা হয় নি। সময় নিয়ে তাকিয়ে থাকা হয় নি এই মেয়েটার দিকে। কিন্তু আজকে চোখ দুটো আপনাআপনিই আটকে গেছে। মেয়েটার নাক বোঁচা। কিন্তু আজকে একটু বেশিই বোঁচা মনো হচ্ছে। মনে হচ্ছে হাতির পা পড়েছিলো নাকে।
চোখ দুটো বড়বড়। কিন্তু টানা টানা না। ভ্রু গুলো ছড়ানো। হাইট পাঁচ ফিট হবে না। তার কাছাকাছি হবে। একদম গোলুমলু। এতোটাই গোলুমলু যে গলায় তিনটা ভাজ পড়েছে।
শাড়ি পড়েও একে বড়বড় দেখাচ্ছে না। একদম পিচ্চি পিচ্চিই লাগছে।
ইমন শব্দ করে হেসে চোখ ফিরিয়ে নেয়। তোহা গাল ফুলিয়ে তাকায় ইমনের দিকে।
“এখান থেকে যাও তোহা। তোমার সাথে আর ফ্লাট করবো না। দুই চার বছর পরে ডিরেক্ট বিয়ে করে নেবো।
তোহার রাগ ক্রমশ বাড়ছে। ফাজলামো পেয়েছে এই লোকটা? যখন যা খুশি তাই করবে? তা কেনো? একদম লোকটার কথায় পাত্তা দেবে না তোহা। একদম না। ধান্দা বাজ একটা।
” আপনাকে বিয়ে করবো আমি? হাহহহহহ
স্পষ্ট ভাবে বলছি শুনে রাখুন।
আমার স্কুলের ওই আবির ভাইয়াকে আমার ভালো লাগে। আর ওনাকেই বিয়ে করবো।
তোহা ভাব দেখিয়ে বলে। আবির নামটা বলার কারণ চট করে অন্য নাম মনে আসে নি। আর আবিরকে উনি চিনবেও না শিওর।
তোহার কথা শুনে ইমন ফিক করে হেসে ফেলে। হাসতে হাসতে পড়ে যাবে এমন অবস্থা।
তোহা একটু ভয় পায়। উনি কি চিনে না কি আবিরকে?
হায় আল্লাহ কি বলে ফেললো?
“সিরিয়াসলি তোহা??
ওই আবির? একবার পরিহ্মা দেবে? চোখটা একটু বাঁকা?
ওয়াও দুজনকে একদম পারফেক্ট মানাবে।
ইমন হাসতে হাসতে বলে। তোহার এবার কান্না পাচ্ছে। আর কোনো নাম পেলো না?
” ওহহ সরি আবির না। বিজয় স্যারকে ভালো লাগে। আমরা রিলেশনশিপ এ আছি।
বলেই দুলতে দুলতে চলে যায় তোহা। ইমনের হাসি থেমে যায়।
🥀🥀
এইটা কোনো কথা?
সূচক বলেছিলো গল্প করবে। কি কি করেছে এতোদিন? কেনো করেছে সব কিছু তানহাকে বলবে। কিন্তু সেই মানুষ এখন তানহার কোলে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। তাও আবার গভীর ঘুম। পা দুটো অবশ হয়ে আসছে তানহার। কতোখন এভাবে বসে থাকা যায়? ঘন্টা খানিক তো হবেই মহারাজ ঘুমিয়েছে। আরে ভাই তুই ঘুমবি তো বালিশে ঘুমা না। তানহার নিষ্পাপ পা টা কেনো দখল করলি? বেচারা যদি অল্প বয়সেই হাঁটার শক্তি হারিয়ে ফেলে তাহলে তো তুই একে ডিরেক্ট ডিভোর্স দিয়ে দিবি। সে কি আর তানহা জানে না?
তানহা মুখ বাঁকিয়ে বিরবির করে বলতে থাকে আর সূচকের চুলের ভাজে হাত ঢুকিয়ে বিলি কাটতে থাকে।
হঠাৎ দরজায় কড়া নরে। কেঁপে ওঠে তানহা।
“তানহা বেরিয়ে আসো। লান্স করবো সবাই মিলে।
ইরিন ডেকে বলে। তানহা কাচুমাচু হচ্ছে। এবার কি করবে? লোকটাকে ডাকবেই বা কি করে? সে তো নিশ্চিন্তে ঘুমচ্ছে। এদিকে তানহার খিধেও পেয়েছে ভীষণ। সকাল বেলা এখানে আসার খুশিতে খাওয়া দাওয়াও হয় নি ঠিক মতো।
” শুনছেন,
এই যে
উঠুন না
তানহা সূচকের গালে হালকা থাপ্পড় দিতে দিতে ডাকে। সূচক নরে চরে পিটপিট করে চোখ খুলে। চোখ খুলে তানহার মুখটা দেখে এক গাল হাসে সূচক।
“ডাকছিস কেনো?
চমকে ওঠে তানহা। চোখ দুটো বন্ধ করে শুকনো ঢোক গিলে। এই লোকটার ঘুম ঘুম কন্ঠটাতো মাদকের থেকেও বেশি নেশাক্ত।
সূচক আড়মোড়া ভেঙে হাই তুলতে তুলতে উঠে বসে। তানহার পা দুটো যেনো কোনো একটা বড় পাথরের চাপা থেকে মুক্তি পেলো।
পায়ে হাত দিয়ে চোখ খুলে পা দুটো টানটান করে তানহা। চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে ব্যাথায়।
” এই টুকুতেই এই অবস্থা।
সারাজীবন সামলাবি কি করে আমায় কদু?
সূচক মুচকি হেসে তানহার নাক টেনে দিয়ে বলে। তানহা গাল ফুলিয়ে ফেলে। অন্য মেয়েদের বয়ফ্রেন্ড বা জামাই কি সুন্দর করে জান, সোনা,ময়না, কলিজা, লিডার আরও কতো কি নামে ডাকে। আর এই লোকটা কদু, লাউ, বুঁচি, পিচ্চি এসব বলে ডাকে।
মানে মুখেও তো মধু নেই ই সাথে একটুখানি রসকস নেই।
পুরোই হনুমান।
“বাইরে গিয়ে আমার আর তোর খাবার রুমে নিয়ে আয়।
বলেই সূচক ওয়াশরুমের দিকে তাকায়। তানহা বড়বড় চোখ করে তাকায় সূচকের দিকে।
” আমি এটা কিছুতেই পারবো না। সবাই কি ভাববে? ছি ছি ছি
তানহা চট করে বলে ওঠে। সূচক দাঁড়িয়ে যায়। পেছন ঘুরে সূচকের দিকে তাকায়।
“পারবি না? একটা চটকানি দিয়ে দাঁত ফেলে দেবো। কদু কদুর মতো থাকবি। আমি যা বলবো তাই শুনবি।
ফট এখান থেকে
সূচক ওয়াশরুমে ঢুকে ঠাস করে দরজা আটকে দেয়। তানহা মাথায় হাত দিয়ে ফোঁস করে শ্বাস টানে।
এখন আবার লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে অতোগুলো মানুষের মধ্য থেকে খাবার নিয়ে রুমে আসতে হবে?
এই লোকটা সারাজীবনই হনুমান থেকে যাবে। কখনোই মানুষ হবে না।
তানহা ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে নিজেকে একবার দেখে নেয়। আঁচল পেছন দিয়ে আবার সামনে আনে কাঁধ জড়িয়ে।
তারপর ছিটকিনি খুলে ধীর পায়ে বেরিয়ে যায়।
মানুষ জন গিজগিজ করছে এখন। ছোট বাসা তার মধ্যে মানুষ একদম মাছের বাজারের মতো মনে হচ্ছে। তোহা ইমনের মায়ের সাথে খাবার সার্ভ করছে। মহিলাটি খুব ভালো।
ফ্লোরে মাদুর পেতে লাইন ধরে বসেছে সবাই। ইরিন তোহা আর ইরিনের মা খাবার বেরে দিচ্ছে। ইমন পানি এগিয়ে দিচ্ছে।
তানহার ভীষণ লজ্জা লাগছে এখন। ও তো পারতো ওদের সাথে সাহায্য করতে? কি মনে করলো এরা? মুখ দেখাতেই অস্বস্তি হচ্ছে ওর।
তানহাকে এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইমন তোহার হাত ধরে হালকা করে টান দিয়ে এক পাশে নেয়। তোহা কটমট চোখে তাকায় ইমনের দিকে।
” রিলাক্স আমি তোমার আর আবিরের বিয়ের স্বাহ্মি দেওয়ার জন্য ডাকি নি। তোমার ভাই আর ভাবি খাবে। তো তুমি একটু কষ্ট করে তাদের খাবার রুমে পৌঁছে দেবে আমার সাথে?
ওই যে তোমার ভাবি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লজ্জা পাচ্ছে। সে সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকলেও খাবার চাইবে না।
আমাদের আবার তিনটার আগেই বের হতে হবে। দুই ব্যাচ স্টুডেন্ট পড়াতে হবে।
তোহা মুখ বাঁকিয়ে চলে যায়। ইমনও কিচেনে চলে যায়।
“তুই রুমে যা
আমি খাবার নিয়ে আসছি।
হঠাৎ কারোর শব্দ শুনে চমকে ওঠে তানহা। পাশাল তোহাকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
” সরি ইয়ার
একসাথে এসে তোর সাথে থাকতে পারছি না।
তানহা তোহার হাত ধরে বলে।
“ইটস ওকে বেবি। তুই আমার ভাইকে সামলা তাতেই হবে।
তানহা লজ্জা পায়।
” হইছে আর লজ্জা পাইতে হবে না। রুমে যা। আসছি আমি।
তোহা চলে যায়। তানহাও রুমে ঢুকে যায়।
“কি রে খাবার কই?
সূচক তোয়ালে দিয়ে হাত মুখ মুছছে। তানহাকে রুমে ঢুকতে দেখে বলে। তানহা চুপচাপ খাটে গিয়ে বসে।
” খাবার আমার মুরোদ হয় নি?
সূচক তোয়ালে তানহার মুখের ওপর ছুঁড়ে মেরে বলে।
তানহা মাথা থেকে তোয়ালে নামিয়ে বারান্দার দিকে যায়।
“তোহা আনছে।
সূচক খাটে আধশোয়া হয়ে আইসিটি বইটা খুলে তাতে চোখ রাখে। তানহা বারান্দায় তোয়ালে মেলে দিয়ে সূচকের পাশে বসে
” আপনি ইন্টারের বই কেনো পড়ছেন?
তানহা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।
“ইন্টারের স্টুডেন্ট পড়াই আমি। জানিস বারোজন স্টুডেন্ট নিয়ে কোচিং শুরু করেছিলাম। দুই মাসে এখন আমার একশত সত্তর জন স্টুডেন্ট হয়ে গেছে আমার।
তানহা অবাক হয়ে শুনছে। উনি কোচিং সেন্টার খুললো কবে? আর কেনোই বা খুললো? কাউকে বলে নি কেনো? তানহাকেই বা বললো না কেনো?
অভিমান হয় তানহার। মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন থাকলেও জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হচ্ছে না। কেনো জিজ্ঞেস করবে? নিজে থেকে তো কখনো কিছু বললো না?
থাক শুনতেও হবে না তানহার।
এসব ভাবনার মাঝেই তোহা আর ইমন খাবার হাতে চলে আসে। তানহার সামনে একটা কাপড় বিছিয়ে তার ওপর খাবার নামায়। সূচক বই রেখে গোল হয়ে বসে। তোহা সূচকের ডান পাশে বসে। ইমন দাঁড়িয়ে আছে।
” দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? খাবি না তুই? বেরোতে হবে আমাদের।
সূচক প্লেটে খাবার নিতে নিতে বলে।
“তোহা বেরে দাও আমায়।
সূচক চেয়ার টেনে বসে বলে। তোহা হাত গুটিয়ে বসে। মানে সে দেবে না। তানহা বেরে দেয়।
ইমন তোহার দিকে মুখ বাঁকিয়ে তাকিয়ে খাওয়া শুরু করে। সূচক তোহার মুখের সামনে এক লোকমা ধরে। তোহা খেয়ে নেয়। ও এটার জন্যই অপেক্ষা করছিলো।
সূচক খাচ্ছে আর তোহাকে খাওয়াচ্ছে। ইমন নিজের মতো খেয়ে যাচ্ছে। আর তানহা হাত গুটিয়ে বসে আছে। কেউ ওকে একবার খাওয়ার কথা বলছেও না।
চলবে