#প্রণয়
#পর্বঃ৩৪
#তানিশা সুলতানা
“ওই বলদ তোকে বের হতে বললাম না?
সূচক মাথা নিচু করে খাটের নিচে ঝুঁকে তানহার দিকে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বলে। তানহা চোখ বন্ধ করে মশাদের গুষ্টি উদ্ধার করছিলো। সূচকের ধমকে চমকে ওঠে। মাথাটা উঁচু করতেই ঠাস করে বাড়ি খায় খাটের সাথে। চোখ মুখ খিঁচে মাথায় হাত দিয়ে ” উহহহহ”
শব্দ করে ওঠে। সূচক মুখ ঘুরিয়ে শ্বাস টানে। এই মেয়েটা এতো স্টুপিট কেনো? এর কি সামান্যতম বুদ্ধিও নেই। বেকুব একটা। বলদ।
“তুই কি বের হবি? না কি আমি লাঠির ব্যবস্থা করবো?
খাটের ওপর বসে বলে সূচক। তানহা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসে খাটের তলা থেকে। মাথায় মাকড়সার জাল লেগে আছে। হাঁটুতে কনুইয়ে ময়লা লেগে গেছে।
এতোদিন তোহা এই রুম পরিষ্কার করার দায়িত্বে ছিলো। মেয়েটা এতোটাই অলস যে ময়লা উঠাতে কষ্ট হবে বলে ঝাঁড়ু দিয়ে খাটের গলায় ময়লা ঢুকিয়ে দিতো। জীবনেও তো খাটের নিচে পরিষ্কার করে নি। মাকড়োসার জাল ভাঙা তো দুরের কথা।
মাথা নিচু করে মাথায় হাত দিয়ে কাঁদো কাঁদো ফেস করে দাঁড়িয়ে আছে তানহা। সূচক তাকায় তানহার দিকে।
” তুই বড় হবি কবে? তোর বয়সের মেয়েরা দুই বাচ্চার মা হয়ে গেছে অনেকেই। আর তুই এখনো বাচ্চাদের মতো হাত পায়ে ময়লা বাঁধিয়ে ঘুরিস।
সূচক বলতে বলতে হাত এগিয়ে তানহার হাত ধরে টান দিয়ে পাশে বসিয়ে দেয়। তানহা ভয়ে আবার চোখ বন্ধ করে নেয়। ভেবেছিলো থাপ্পড় টাপ্পড় মারবে। কিন্তু আওয়াজ না পাওয়ায় পিটপিট করে চোখ খুলে। সূচক এখনো তাকিয়ে আছে তানহার দিকে।
“বলদ একটা
তানহার মাথার মাকড়োসার জাল ফেলে দেয় সূচক। হাতের ভেজা টাওয়াল দিয়ে কনুই মুছে দেয়।
” বইকেন না প্লিজ। আমি আর কখনো ভুল করবো না।
তানহা মাথা নিচু করে রিনরিনিয়ে বলে। সূচক কপালে ভাজ ফেলে।
“বকবো না?
বকা খাওয়ার মতো কাজ করিস নি?
তানহার খোঁপা করা চুল গুলো মুঠো করে ধরে বলে শান্ত গলা বলে সূচক। তানহা ছোট ছোট চোখ করে সূচকের দিকে তাকিয়ে থাকে। সদ্য গোছল করায় লোকটাকে একদম সিগ্ধ লাগছে। ফর্সা নাকে এখনো বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে। খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতেও পানি। মাথার বড়বড় চুল গুলো থেকেও টপটপ করে পানি পড়ছে।
আহা যেনো একটা আস্ত ঝর্ণা।
তানহা মুচকি হাসে।
” আপনি এতো কিউট কেনো?
সূচকের নাকটা টেনে দিয়ে বলে তানহা। চট করে তানহার চুল ছেড়ে দেয় সূচক। চোখ পাকিয়ে তাকায় তানহার দিকে। তানহা ভয় পেয়ে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে মাথা নিচু করে ফেলে। এই বুঝি থাপ্পড় পড়বে গালে?
“চট করে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে তোহাকে ডেকে নিয়ে আয়।
সূচক আড়মোড়া ভেঙে দুটো বালিশ এক করে তাতে আধশোয়া হয়ে বলে। তানহা চট করে চোখ খুলে। বড়বড় চোখ করে তাকায় সূচকের দিকে।
” বববুঝলাম না।
শুকনো ঢোক গিলে বলে তানহা।
“তোর কিউট বর তোর থেকে চুমু চাইছে। জলদি দিয়ে বের হ।
খাবো আমি। খিধে পেয়েছে।
চোখ বন্ধ করে পুরোপুরি শুয়ে বলে সূচক। তানহা এখনো ঘোরের মধ্যে আছে। এটা কি সত্যিই সূচক? কিস চাইছে? তাও আবার তানহার থেকে? নিশ্চয় এটা তানহার ভোম। চুমু দিতে যাবে আর ভোম কেটে যাবে আর থাপ্পড় পড়বে গালে। এরকম রিক্স নেওয়াই যাবে না।
আল্লাহ তানহার ভাবনা এতো খারাপ হয়ে গেলো কি করে? ছি ছি ছি তানহা কি ইমাজিন করছে এখন? সূচক চুমু চাইছে ওর কাছে? ইমাজিনের একটা সীমা থাকা দরকার। সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে।
” ওই বুঁচকি কি বললাম? কথা কানে গেলো না?
সূচক চোখ খুলে তানহাকে আকাশ পাতাল ভাবতে দেখে জোরে একটা ধমক দিয়ে বলে। তানহা থমথমে খেয়ে ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে।
“না মানে কি যেনো বলছিলেন?
তানহা থতমতো খেয়ে বলে।
” চুমু দিতে বলেছি। চুমু
কিস
শুনেছিস? নাকি কানের কাছে মুখ নিয়ে চিৎকার করে বলতে হবে?
তানহার হাত ধরে টান দিয়ে বুকের ওপর ফেলে বলে সূচক। তানহা দুই হাত বিছানার ওপর গিয়ে পড়ে সূচকের দুই পাশ দিয়ে।
হুটহাট আক্রমণে বারবার ঘাবড়ে যাচ্ছে তানহা। যে কোনো সময় হার্ট অ্যাটাক করবে নিশ্চিত।
“জলদি কর।
আবারও চোখ বন্ধ করে নেয় সূচক। তানহা ফাঁকা একটা ঢোক গিলে চোখ বন্ধ করে চট করে সূচকের কপালে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে দেয়। সাথে সাথেই ছেড়ে দেয় সূচক। তানহা তারাহুরো করে উঠে বসে। লজ্জায় গাল দুটো ভারি হয়ে গেছে। তাকানোর সাহস পাচ্ছে না। নিজেকে শূন্যে অনুভব করছে।
” এবার যা তোহাকে ডেকে নিয়ে আয়।
সূচকের কথা শেষ হতে দেরি তানহার দৌড় দিতে দেরি নেই। এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
লজ্জায় রাঙা হয়ে আছে তানহা। ইসসস কি করলো ও? কিভাবে বেহায়ার মতো চুমু দিলো সূচকের কপালে? সূচক কি ভাবলো?
রুমে ঢুকে দুই হাতে মুখ চেপে ধরে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে তানহা। বৃষ্টি তোহা ইভা ওরা গল্প করছিলো। তানহাকে এরকম লজ্জা মাখা হাসি দেখে সবাই ভ্রু কুচকে তাকায়।
বেপার কি?
“এই তুমি এভাবে হাসসো কেনো? আর লজ্জায় ই বা পাচ্ছো কেনো?
বৃষ্টি চেয়ার থেকে উঠে কোমরে হাত দিয়ে তানহার পাশে দাঁড়িয়ে কপালে তিনটে ভাজ ফেলে বলে।
তানহা বৃষ্টির কথা শুনে মুখ থেকে হাত সরিয়ে বৃষ্টির দিকে ঘুরে শয়।
” ইসসসস কি করলাম আমি।
তানহা বৃষ্টির হাত ধরে টান দিয়ে বৃষ্টিকে পাশে শুয়িয়ে দিয়ে বলে। বৃষ্টি ব্যাথা পেতে পেতে বেঁচে যায়। তোহা আর ইভা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে।
“এই মেয়ে পাগল হয়ে গেছো না কি?
বৃষ্টি তারাহুরো করে উঠে বসে রাগী কন্ঠে বলে।
” হ্যাঁ হ্যাঁ আমি পাগল হয়ে গেছি। উনি আমায় পাগল করে দিয়েছে।
তানহা এক লাফে উঠে বসে। কোলের মধ্যে বালিশ নিয়ে তাতে দুই হাতে ভর দিয়ে গালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে তানহা।
ওরা তো বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। এই উনিটা কে? তোহা জানলেও ওরা তো জানে না।
“তোহা একে বাথটাবে চুবিয়ে রেখে আয় তো।
বৃষ্টি দাঁত কটমট করে বলে।
” ও আপু গো
আমাদের বাথটাব নাই গো আপু
আমাকে বরং পুকুরে চুবিয়ে রেখে আসো।
তানহা এক গাল হেসে বলে। বৃষ্টি বিরক্তিতে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তোহাও তানহার পাশে গাল হাত দিয়ে বসে পড়ে। ইভা দাঁত দিয়ে নখ কাটছে। টেনশন হলে ও এটাই করে।
“তানহা
সূচক ওর রুমে থেকে চিৎকার করে ডাকে। হুরমুরিয়ে উঠে বসে তানহা। যেনো এতখনে পরে বাস্তবে ফিরলো।
” তোহা তাড়াতাড়ি তোর ভাইয়ের রুমে চল। তোকে ডাকতে বলেছিলো।
তানহা হকচকিয়ে ঢোক গিলে বলে।
“সেটা বলতে এতখন লাগলো তোর?
তোহা তানহার মাথায় চাটি মেরে বলে।
তানহা মাথা নিচু করে মাথায় হাত বুলায়।
” এতোখন কি হয়েছিলো তোমার?
ইভা বোকা বোকা চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে।
“তুই বুঝবি না।
বলেই তানহার হাত ধরে জলদি জলদি বেরিয়ে যায়।
” দেখতে হচ্ছে বেপারটা।
বৃষ্টিও ওদের পেছন পেছন যায়।
তোহা হুরমুরিয়ে ঢুকে পড়ে সূচকের রুমে। তানহা মাথায় ঘোমটা টেনে ধীরে সুস্থে ভেতরে প্রবেশ করে। সূচক এখন বিছানায় গোল হয়ে বসে ফোন দেখছে।
“ভাই ডাকছিলে?
তোহা সূচকের পাশে বসে বলে।
” তোর আর তানহার জন্য কয়েকটা ড্রেস বোরকা আর কিছু কসমেটিক এনেছি। তাই দেখানোর জন্য ডাকছিলাম।
সূচক ফোন রেখে মুচকি হেসে বলে।
“কোথায়
কোথায়
দেখি?
তোহা খুশিতে গদগদ হয়ে বলে। সূচক ব্যাগ গুলো এগিয়ে দেয়। তোহা খুলে খুলে দেখছে। আর তানহা এক কোনায় দাঁড়িয়ে সূচকের দিকে তাকিয়ে আছে। আহা এই সুদর্শন পুরুষটা তানহার একমাএ জামাই। ভাবা যায়?
” তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?
সূচক তানহাকে বলে। তাহা তারাহুরো করে ড্রেস দেখা শুরু করে।
চলবে