প্রণয় বর্ষণ পর্ব -১২

#প্রণয়_বর্ষণ (১২)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
______________

স্পর্শীর জ্বর ভালো হয় ২ দিন পর। রুদ্র ২ দিন রাতেই একবার করে এসে দেখে গেছে। বাড়িওয়ালা নিয়ে প্যান প্যান করে স্পর্শী তাই বেশিক্ষণ থাকে না। আজ ভার্সিটি শেষ করে টিউশনিতে গিয়েছিলো স্পর্শী। ফেরার পথে রুদ্রকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে স্পর্শী হেঁসে তাকায়। রুদ্র স্পর্শীর দিকে এগোতে এগোতে বলে,

‘সুস্থ হতে না হতেই দৌড়ে চলে আসছিস!’

স্পর্শী হাসে। উত্তর না দিয়ে নিজেই জিজ্ঞেস করে, ‘আপনি একা কেন? বাইক কোথায়? আর আপনার চ্যা’লাাপ্যালা গুলা কই?’

‘প্রতিদিন তো বাইক নিয়েই ঘুরি আজ ভাবলাম তোকে নিয়ে একটু রিক্সায় ঘুরা যাক। আর আমি থাকলে ওরা আসে না।’

স্পর্শী কিছু না বলে হাসে। দুজনে হেঁটে আসে সামনের মোড় পর্যন্ত। ততটুকু সময় দুজনেই চুপ থাকে। মোড় থেকে রিক্সা নিয়ে তাতে বসে৷ স্পর্শী গায়ে দেওয়া শাল শক্ত করে চেপে এক কোণে বসে। রুদ্র হাত এগিয়ে দিয়েও আবার ফিরিয়ে নেয়। নিজে সামান্য চেপে বসে বলে, ‘এদিকে চেপে বস। নয়তো পড়ে যাবি।’

স্পর্শী চুপচাপ সরে বসে। তারপর রুদ্রর দিকে তাকিয়ে বলে, ‘বাড়ি যাচ্ছি?’

রুদ্র পকেট থেকে ফোন বের করতে করতে বলে, ‘নাহ।’

‘এই সন্ধ্যা বেলা কোথায় যাবো? তার মধ্যে এতো ঠান্ডা!’

স্পর্শীর প্রশ্নে ভ্রু কুঁচকে তাকায় রুদ্র। পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে আবার নিজের দিকে তাকায়। সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, ‘তোর জ্বর কি সত্যিই ভালো হয়ছে?’

স্পর্শী থতমত খায়। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বলে, ‘ভালো না হলে কি এখানে থাকতাম?’

রুদ্র নজর সরিয়ে ফোনের দিকে তাকায়। ফোন স্ক্রল করতে করতে বলে, ‘তোর নিজের দিকে দেখ আর আমার দিকে দেখ! সোয়েটার পড়েছিস, শাল নিয়েছিস তাও তোর ঠান্ডা লাগে! আর আমি শুধুমাত্র একটা টি-শার্ট পড়ে চলে আসছি। তাইলে তোর চেয়ে বেশি আমার ঠান্ডা লাগা উচিত? তাহলে আমার কেন ঠান্ডা লাগতেছে না?’

স্পর্শী কপালে ভাজ ফেলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। বিড়বিড় করে বলে, ‘এ’লিয়েনের মতো পুরা! ইনার যে কখন ঠান্ডা লাগে আর কখন গরম লাগে আল্লাহ মালুম। আল্লাহ তুমি এই বান্দারে হেদায়েত দাও যেনো কখন গরম আর কখন ঠান্ডা তা বুঝতে পারে। আমিন!’

পাশ থেকে রুদ্রও বলে, ‘আমিন!’

স্পর্শী থতমত খেয়ে লাফিয় উঠে। রুদ্রর তখনো ফোনের দিকে মন। স্পর্শীর ইচ্ছা করে কপাল চাপড়াতে। বিড়বিড় করে বলেও শান্তি নেই! মনে মনে একদম সাউন্ড ছাড়া কথা বলা দরকার ছিলো। স্পর্শীর ভাবনার মধ্যে আর রুদ্রর ফোন স্ক্রল করতে করতেই নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে যায়। শীতের জন্য ভালোই কুয়াশা পড়েছে। স্পর্শীর পড়ানো শেষ করতে করতে সেখানেই আযান পড়ে গেছে। তাই এটুকু আসতে ভালোই অন্ধকার মনে হচ্ছে। স্পর্শী নিরিবিলি জায়গা দেখে হাত চেপে ধরে রুদ্রর। ভীত গলায় বলে, ‘এটা কোন জায়গা? এই কুয়াশার মধ্যে ঘুরতে আসার কোনো দরকার ছিলো রুদ্র ভাই?’

রুদ্র ভ্রু কুঁচকে একবার হাতের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘শীতের রাতে ঘুরার মজাই আলাদা। চুপচাপ হাত ধরে আমার সাথে হাঁটতে থাক।’

স্পর্শী গাল ফুলিয়ে হাতও ছেড়ে দেয়। আবছা আলোয় ঠোঁট কামড়ে হাসে রুদ্র। নিজেই স্পর্শীর হাত আঁকড়ে ধরে সামনে হাঁটা লাগায়। খানিকটা দুর যেতেই জ্বলতে থাকা কাঠের পাশে গিয়ে বসে দুজন। স্পর্শী আগুনের উষ্ণ ছোয়া নেয় ভালো মতো। হেঁসে বলে, ‘আগে থেকেই প্ল্যান করে আসছেন!’

রুদ্র হাসে। জবাব দেয় না। দুজনে অনেকক্ষণ সেখানে বসে গল্প করে। এরপর আবার উঠে পড়ে। স্পর্শী আর রুদ্র একসাথে সামনের একটা ছোট রাস্তায় যায়। একটু পর পর ল্যাম্পপোস্টের আলোয় পুরো রাস্তা আলোকিত হয়ে আছে। সাথে কুয়াশায় রাস্তা হালকা হালকা ভেজা। স্পর্শী ভেজা রাস্তা দেখেই লাফিয়ে ওঠে। পা থেকে জুতো খুলে রুদ্রের হাতে ধরিয়ে দেয়। রাস্তার মাঝে গিয়ে খালি পায়ে লাফায় আর খিলখিল করে হেঁসে ওঠে। রুদ্র হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ একবার স্পর্শীর দিকে তো আরেকবার হাতে থাকা জুতোর দিকে তাকিয়ে থাকে। ভ্রু কুঁচকে স্পর্শীর লাফানো, হাসির দিকে তাকাতেই তার কপাল টান টান হয়ে যায়। হাত থেকে জুতো একাই পড়ে যায়। মৃদু বাতাসে স্পর্শীর চুল গুলো হালকা এলোমেলো, মুখে ফুটে উঠেছে এক বিশ্বজয় করা হাসি। এতটুকুতেই এই মেয়ে এতো খুশি! রুদ্র অপলক তাকিয়ে থাকে স্পর্শীর মুখের দিকে। এক হাত পকেটে গুজে আরেক হাত রাখে বুকের বাম পাশে। চিনচিনে ব্যাথা টা সজাগ হয়। রুদ্র বিড়বিড় করে আওড়ায়,

‘এভাবে হাসিস না পর্শী! আমার বুকে লাগে। গত ৫ বছরে আমি তোর এই হাসিটা ভীষণ মিস করেছি। যখন তুই হাসিস আমার হৃদয়ে ঝড় হয়। ভ’য়ং’কর এক প্রণয়ের ঝড়।’

স্পর্শী তখনো নিজের লাফানোতে ব্যস্ত। রুদ্র যে তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এতে তার এতটুকুও খেয়াল নেই। রুদ্র একদম ধীর পায়ে এগোয় স্পর্শীর কাছে। রুদ্রকে নিজের অনেকটা কাছে উপলব্ধি করতে পেরে চমকে ওঠে। রুদ্র একদম মুখটা নিয়ে স্পর্শীর কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,

‘আমাকে মে’রে ফেলার চিন্তায় আছিস? এভাবে হাসিস না প্লিজ। আমার ভীষণ বুকে ব্যাথা হয়। হয় এই ব্যাথা উপশম কর! নয়তো এই ব্যাথার কারণ হোস না।’

স্পর্শী জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে দ্রুত সরে যায়। রুদ্র ঠোঁট কামড়ে হাসে। রুদ্র সোজা হয়ে সামনে পা বাড়াতে বাড়াতে বলে, ‘স্ট্যাচু হয়ে না দাঁড়িয়ে থেকে দ্রুত আয়।’

স্পর্শী শক্ত করে শাল চেপে ধরে ধীর পায়ে এগোয়। রুদ্রও হাঁটার স্পীড কমিয়ে দিয়েছে। দুজনের মধ্যেই পিনপতন নীরবতা। চারপাশ থেকে ঝিঁঝি পোকার আওয়াজ ভেসে আসে। রাস্তা দিয়ে মাঝে মাঝে দু একজন লোক হেঁটে যাচ্ছে। রুদ্র নীরবতা ভেঙে ডাকে,

‘পর্শী!’

স্পর্শী ছোট্ট শব্দে ‘হু’ বলে। রুদ্র ফের বলে, ‘অনেকের স্বপ্ন থাকে শীতের রাতে প্রিয় মানুষটার হাত আঁকড়ে হেঁটে যেতে দূরদূরান্তে। আমার সে ইচ্ছে পূরণও হচ্ছে। তাই না!’

স্পর্শী মাথা নিচু করে হাসে। এই হাসি রুদ্র না দেখলেও হয়তো অনুভব করতে পারে। তাই তো স্পর্শীর হাসির সাথে তাল মিলিয়ে সে নিজেও হাসে। স্পর্শী কথা এড়ানোর জন্য বলে,

‘আচ্ছা সারাদিন তো আপনাকে দেখা যায় না। থাকেন কই আপনি?’

রুদ্র হাঁটা থামিয়ে পেছনে তাকায়। ভ্রু নাচিয়ে বলে, ‘মিস করিস বুঝি!’

‘ত-তা কখন বললাম! ম-মোটেও আমি আপনাকে মিস করি না। আমি তো জাস্ট আপনাকে এমনিই জিজ্ঞেস করলাম।’

রুদ্র হাসি আটকে গম্ভীর গলায় বলে, ‘সেদিন তো কত কি বলে অপ’মান করলি তাই একটা ছোট খাটো কাজ করি। যাতে করে আর কেউ ওসব না বলতে পারে।’

স্পর্শী অ’পরাধবোধে মাথা নিচু করে নেয়। মিনমিনে স্বরে বলে, ‘সরি!’

রুদ্র হেঁসে আঙুলের ফাঁকে আঙুল গলিয়ে দেয়। চুলগুলো কানের পৃষ্ঠে গুঁজে দিয়ে বলে,

‘আর মাথা নিচু করতে হবে না। ফুসকা খাবি?’

স্পর্শী মাথা নাড়ায়। রুদ্র স্পর্শীকে নিয়ে হাঁটা লাগায়। স্পর্শী সেই কথাটার জন্য এখনো আপসেট দেখে রুদ্র শান্ত গলায় বলে,

‘ওইদিনের জন্য অ’পরাধবোধ রাখবি না। তুই যা করেছিস তা তোর দিক দিয়ে ঠিক আছে। আর আমি ওইসব মনে রাখি না।’

রুদ্র হাজারটা কথা বলে স্বাভাবিক করে স্পর্শীকে। দুজন পাশাপাশি হেঁটে সামনে এগোতে থাকে। রুদ্র কথায় কথায় স্পর্শীর বন্ধুদের কথা তোলে। হেঁসে বলে,
‘তবে তোর বন্ধুদের কথা বলতেই হবে পর্শী। সবার ভাগ্যে কিন্তু এমন বন্ধুবান্ধব জোটে না। তোর সব প্রবলেমে তোর সাথে থাকে। তোর অসুস্থতার কথা শুনলেই চলে আসে দেখতে।’

স্পর্শী নিজেও হাসে। একবার রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘এই জন্যই নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হয়। এতো ভালো মা, এতো ভালো ফ্রেন্ড, এতো ভালো রেণু আপা পাইছি এটাই অনেক। আর কি চাই?’

রুদ্র বাঁকা হেঁসে বলে, ‘আমাকে চাই না?’

স্পর্শী কেঁপে ওঠে। কোনো কথা না বলে মাথা নিচু করে নেয়। তারপর দুজনে ফুচকা খেয়ে আজকের মতো ঘুরাঘুরি অফ দেয়।

বাড়ি ফিরার পর থেকে স্পর্শীর মন যেমন ফুরফুরা তেমনই লজ্জায় লাল হচ্ছে। লজ্জা পাওয়ার কি আছে! এটা ভেবে নিজেই নিজেরে একশো বার গা’লি দিচ্ছে। ফ্রেশ হয়ে তাানিয়ার পাশে সোফায় বসে পড়ে। তানিয়ার ফোন হাতে থাকলেও অন্যমনষ্কতা খেয়াল করে স্পর্শী। ভ্রু কুঁচকে বলে, ‘তোর আবার কি হয়ছে?’

তানিয়া তখনো নিজের ধ্যানে মগ্ন। স্পর্শী তানিয়ার বাহুতে ধাক্কা দেয়। চমকে ওঠে তানিয়া। আমতা আমতা করে বলে, ‘কি কি হয়ছে? বল!’

স্পর্শী কপালে ভাজ ফেলে তানিয়ার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে। সন্দিহান কন্ঠে শুধায়, ‘তোর কি হয়ছে সত্যি করে বল তো? তোকে ২/৩ দিন থেকে অন্যমনষ্ক লাগে আমার কাছে। কথা না ঘুরিয়ে ক্লিয়ার করে বল!’

তানিয়া মাাথা নিচু করে নেয়। মিনমিনে স্বরে বলে, ‘আমি ফয়সাল ভাইকে সেদিন আবেগের বসে বলে ফেলছি ‘আমি যদি সত্যিই ফিহার মা হয়!’ এটা শুনে উনি কিছুক্ষণ চুপ হয়ে গেলেন তারপর গম্ভীর মুখ করে আমার কোল থেকে ফিহাকে নিয়ে নিলো। হাত ধরে টেনে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে বললো, ‘আর কখনো এ বাড়িতে আসবে না।’ বলেই ঠা’স করে দরজা আটকে দিলো।’

তানিয়ার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ে স্পর্শী। বোকার মতো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রয় তানিয়ার কাঁদো কাঁদো মুখপানে। অবাক কন্ঠে শুধায়,

‘তুই ইনডিরেক্টলি উনাকে বিয়ে করতে চেয়েছিস?’

‘আরেহ গা’ধী ইনডিরেক্ট কোথায়! ডিরেক্টই বিয়ে করতে চাইছি।’

স্পর্শী ঘর কাঁপিয়ে এক ধমক দেয়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? মানছি তুই এতগুলো দিন ধরে উনাকে ভালোবাসিস তাই বলে এক বাচ্চার বাপকে বিয়ে করবি!’

তানিয়া কেঁপে ওঠে। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, ‘আমি উনাকে ভালোবাসি স্পর্শী। মানছি উনার একটাা বেবি আছে তাতে কি! বউ তো নাই। তাছাড়া উনার লাইফটা অগোছালো হয়ে গেছে যদি আমি ভালোবেসে তা গুছিয়ে দিতে পারি তবে তাতে দো’ষ কোথায়?’

‘আচ্ছা মানলাম তাতে একটুও দো’ষ নেই। আঙ্কেল আন্টি মানবে?’

তানিয়া মাথা নিচু করে নেয়। স্পর্শী শান্ত কণ্ঠে বলে, ‘এখন কি আঙ্কেল আন্টির মতের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করবি?’

তানিয়া উত্তর দেয় না। স্পর্শীও বসে না। চুপচাপ নিজের রুমে চলে যায়। তানিয়া মাথা চেপে বসে ভাবতে থাকে। আসলেও কোনো বাবা মা চাইবে না তার মেয়ের বিয়ে একটা বিবাহিত ছেলের সাথে হোক। কি করবে এখন সে!

____________
পরের দিন সন্ধ্যায় কেবল স্টুডেন্ট পড়িয়ে বের হয়েছে স্পর্শী। রিক্সায় উঠতে যাবে এমন সময় হাজির রুদ্র। চোখে মুখে গম্ভীরতা স্পষ্ট। স্পর্শী তাকে দেখে ভ্রু কুঁচকায়। রুদ্র গম্ভীর গলায় বলে,

‘আমার সাথে আয়!’

স্পর্শী খানিকটা অবাক হয়েই বলে, ‘এই সময়! আজও ঘুরতে যাবেন?’

রুদ্র স্পর্শীর হাত টেনে রিক্সা থেকে নামায়। স্পর্শী বুঝতে পারে না আজ লোকটা এতো ক্ষে’পে আছে কেন! রুদ্র স্পর্শীকে টেনে এনে গাড়িতে বসায়। স্পর্শী ফের শুধায়, ‘আপনি এতো রেগে আছেন কেন?’

রুদ্র উত্তর দেয় না। স্পর্শী দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারও শুধায়, ‘আচ্ছা কোথায় যাবো এটা অন্তত বলেন!’

রুদ্রর সহজ উত্তর, ‘বিয়ে করতে যাচ্ছি।’

চলবে..
(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গত দুদিন না দেওয়ার জন্য দুঃখিত। আজ রাতে আরো একটা পর্ব দেবো ইন শাহ আল্লাহ।’)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here