#প্রণয়_বর্ষণ (১৩)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
_______________
রুদ্রর বাড়ির লিভিং রুমে বসে আছে স্পর্শী৷ স্পর্শীর পাশেই রুদ্র, শাহাদাৎ শেখ, শাহাদাৎ শেখের মা, রামিয়া, রুদ্রর মা রেহেনা, রুদ্রর বাবা শফিক শাখাওয়াত, রুদ্রের বোন রাইমা বসে আছে। সবার মুখেই গম্ভীরতা স্পষ্ট। স্পর্শী শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে। পুরো রাস্তা সে অনেক বুঝিয়েছে রুদ্রকে কিন্তু তাতে বিশেষ একটা লাভ হয়নি। রুদ্রর মা একদম পছন্দ করে না স্পর্শীকে তাই তো আসার পর থেকেই চোখ মুখ কুঁচকে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু শফিক শাখাওয়াতের মুখে একটুও বিরক্তি নেই বরং এতদিন পর মেয়েটা কে দেখে সে খুশিই হয়েছে। স্পর্শ স্পর্শীর কোলে। স্পর্শী বাড়ির মধ্যে ঢুকতে না ঢুকতেই সে এসে জাপ্টে ধরেছে। এতোদিন পর বোনকে কাছে পেয়ে বিশাল খুশি সে। রুদ্র আছে বলে ভয়ে কিছু বলতে পারছে না রামিয়া। নীরবতা ভেঙে রুদ্র শাহাদাৎ শেখের উদ্দেশ্যে বলে,
‘আশা করি আমাদের বিয়েতে আপনার কোনো আপত্তি নেই!’
শাহাদাৎ শেখ উত্তর দিলেন না। কিন্তু স্পর্শীর দাদী তেতে উঠে বলেন, ‘আপত্তি নাই মানে? আমাগো আপত্তি আছে। রেহেনা তুই কিছু কস না কেন? এই পোলা কি পা’গল হইয়া গেছে নাকি? এমন অ’লক্ষী মাইয়ারে কেউ বিয়ে করে!’
স্পর্শী চুপ করে থাকে। সে জানতো বিয়ের কথা উঠলে এমনই হবে। তাই তো সে এই প্রণয়ে জড়াতে চায়নি। এখন আবার তার মা নিয়ে কথা উঠবে। যা সে সহ্য করতে পারবে না। রুদ্র বাঁকা হেঁসে বলে,
‘নানু তোমার মতো অ’লক্ষীরে কেন নানাভাই বিয়ে করছিলো বলো তো?’
স্পর্শীর দাদী ক্ষে’পে উঠে। রেহেনা ছেলেকে ধমকে ওঠে বলে, ‘রুদ্র! নিজের নানুকে সম্মান দিয়ে কথা বলো।’
রুদ্র শব্দ করে হেঁসে ওঠে। শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে বলে, ‘সম্মান! আর এই মহিলাকে! তোমার মা কে বলো পর্শীকে সম্মান দিয়ে কথা বলতে নয়তো খুব খারাপ হবে!’
রেহেনা দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘এখন কি ওর পা ধরে বসে থাকতে হবে আমাদের!’
রুদ্র কিছু বলার আগেই রেহেনা স্পর্শীর কাছে আসে। স্পর্শকে কোল থেকে টেনে নিয়ে রামিয়ার কাছে দিয়ে স্পর্শীকে টেনে তুলে। বাহু শক্ত করে চেপে ধরে রাগী কন্ঠে বলে, ‘তোর মতো বে’হা’য়া নি’র্ল’জ্জ মেয়ে আমি একটাও দেখিনি। নিজের মা’কে তো খেয়েছিস এখন আমার ছেলের জীবনটাও খেতে এসেছিস!’
রুদ্র এ পর্যায়ে শান্ত হয়ে বসে। স্পর্শীর রিয়েকশন দেখেই সে কিছু বলবে নয়তো চুপ থাকবে। স্পর্শী নিজের বাহু থেকে হাত সরিয়ে দেয় রেহানার। কাঠকাঠ গলায় বলে,
‘সব বিষয়ে আমার মা কে টেনে নিজেদের মানসিকতার পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আর রইলো বাকি আপনার ছেলে! তো এখানে উনি আমাকে এনেছেন আমি নই। আপনার ছেলেকে আপনি আঁচলের নিচে যত্ন করে রাখুন কেমন! আর রুদ্র ভাই পুরো রাস্তা আপনাকে এটা হাজার বার বুঝিয়েছি তবুও আপনি আমার কথা শোনেননি। এখন নিশ্চয় শান্তি পেয়েছেন?’
রুদ্র শান্ত দৃষ্টিতে তাকায়। স্পর্শী ব্যাগ তুলে দরজার দিকে এগোতে নিলে রুদ্রর বাবা শফিক শাখাওয়াত ডাকে। স্পর্শী পেছনে ফিরে তাকায়। শফিক শাখাওয়াতের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকায় রেহেনা তাতে অবশ্য তিনি খুব একটা পাত্তা দেন না। স্পর্শীর কাছে এগিয়ে এসে তার মাথায় হাত রাখেন। আদুরে কন্ঠে বলেন,
‘কোথায় যাচ্ছিস? এ বাড়িতে পা রেখেছিস মানে এ বাড়ি থেকে আর যেতে দিচ্ছি না। কে কি বললো তাতে পাত্তা দিস না মা! ওরা তোর সুখ সহ্য করতে পারে না কিন্তু আমার ছেলেটাকে অন্তত ভাসিয়ে যাস না। সে তোকে অনেক বেশি ভালোবাসে মা। তোর জন্য, শুধুমাত্র তোর জন্য ২ মাস কষ্ট করে আমাদের বিজনেস ‘ও’ আবার চালু করেছে। যে ছেলেকে সারাদিন কিছু করতে বললেও পাত্তা দিতো না সে তোর জন্য সব ছেড়ে ছুড়ে কাজে মন দিয়েছে। ওর মায়ের জন্য ওর ভালোবাসাটা তুচ্ছ করে দিস না প্লিজ।’
স্পর্শী মাথা নিচু করে নেয়। শাহাদাৎ শেখ তৃষ্ণার্থ পাখির মতো মেয়ের দিকে তাকায়। শফিক শাখাওয়াতের মতো সেও যদি পারতো তার মেয়ের মাথায় এভাবে হাত রাখতে! কিন্তু কোন লজ্জায় সে তার মেয়ের মাথায় হাত রাখবে!
রেহেনা রেগে বলে, ‘কি বলতেছো এগুলা তুমি?’
শফিক শাখাওয়াত কড়া চোখে তাকিয়ে বলে, ‘মেয়ে মানুষের গলা এতো উচু হতে নেই রেহেনা। আমি ভালোবেসে মাথায় তুলে রেখেছি বলে তোমার সব কথা চুপচাপ মেনে নিবো এতো ভালোও কিন্তু নই আমি! তোমার জন্য নিজের ছেলের সুখ আমি বিসর্জন দিতে পারি না তাই মা হয়ে ছেলের সুখের কারণ না হলেও অন্তত কষ্টের কারণ হয়ো না। চুপ করে থাকো।’
পাশ থেকে রুদ্র অদ্ভুত ভাবে তাকায় নিজের বাবার দিকে। তাদের বাবা তাদেরকে ভালোবাসে এটা সে জানতো তাই বলে এতোটা! সে জানতো না। একই পরিবারের দুই রকম গল্প। দুই বাবার দুই রকম গল্প। সবার কথার ফাঁকে সে রিফাত আর হারুণকে এসএমএস করে দেয়। শফিক শাখাওয়াত স্পর্শীর সামনে দুহাত পেতে বলে,
‘আমার ছেলের সুখটা কেড়ে নিস না মা।’
স্পর্শী শফিক শাখাওয়াতের হাত আঁকড়ে ধরে। চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে। একবার আড়চোখে নিজের বাবার দিকে তাকায়। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
‘এভাবে বলবেন না আঙ্কেল!’
শফিক শাখাওয়াত খুশিতে গদগদ কন্ঠে শুধায়, ‘তার মানে তুই বিয়েতে রাজী?’
স্পর্শী মাথা নিচু করে মাথা নাড়ায়। রাইমা খুশিতে নেচে ওঠে। শফিক শাখাওয়াত খুশিতে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে শাহাদাৎ শেখের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘শাহাদাৎ তোমার কোনো সমস্যা নেই তো?’
স্পর্শী তাকায় শাহাদাৎ শেখের দিকে। শাহাদাৎ শেখ মলিন হেঁসে একবার মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘স্পর্শীর যখন কোনো আপত্তি নেই তখন আমারও কোনো আপত্তি নেই।’
রেহেনা, রামিয়া, স্পর্শীর দাদী ফোঁ’স করে ওঠে। এতোটা সময় কিছু বলেনি রুদ্র। এবার সোজা হয়ে বসে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘বাবার তো কোনো আপত্তি নেই মা। আশা করি তোমারও নেই! আর থাকলে বলতে পারো আমি বিয়ে করে বউ নিয়ে চলে যাবো।’
রেহেনা দাঁতে দাঁত চেপে বসে থাকে। হারুন আর রিফাত উকিল, কাজী, তানিয়া আর রেণু আপাকে নিয়ে বাড়ির মধ্যে আসে। স্পর্শী আর রুদ্রকে পাশাপাশি বসিয়ে প্রথমে রেজিস্ট্রার এবং পরে বিয়ে পড়ানো হয়। কিছু সময়ের ব্যবধানে দুজনে একটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যায়। কি থেকে কি হয়ে গেলো ভেবেই স্পর্শী টাস্কি খাচ্ছে। এখন সে এই বডি বিল্ডারের বউ! বিয়ে শেষে হারুণ, রিফাত, রাইমা, শাহাদাৎ শেখ, শফিক শাখাওয়াত, তানিয়া, রেণু আপা নতুন বিবাহিত জুটিকে অভিনন্দন জানায়। ছোট্ট স্পর্শও তার এলোমেলো বুলিতে অভিনন্দন জানায়।
যাওয়ার সময় শাহাদাৎ শেখ রুদ্রকে একপাশে ডাকে। স্পর্শীকে তখন তানিয়া আর রাইমা লজ্জা দিতে ব্যস্ত৷ শাহাদাৎ শেখ রুদ্রকে ডেকেছে দেখে ভ্রু কুঁচকায় স্পর্শী। রুদ্র একবার স্পর্শীর দিকে তাকিয়ে এগোয় শাহাদাৎ শেখের কাছে। স্পর্শীও পেছন পেছন যায়। রুদ্র শাহাদাৎ শেখের দিকে তাকিয়ে হেঁসে বলে, ‘বিয়ের গিফ্ট টিফ্ট দেবেন নাকি শ্বশুরমশাই!’
শাহাদাৎ শেখ হুট করেই রুদ্রের হাত আঁকড়ে ধরে। রুদ্রকে অবাকের ওপর অবাক করে দিয়ে বলে, ‘মেয়েটাকে আমি গত ৫ বছর অনেক ক’ষ্ট দিয়েছি রুদ্র। তুই আমার মেয়েটাকে কখনো ক’ষ্ট দিস না বাবা। ওর গত ৫ বছরে আপন বলতে কেউ ছিলো না। বাবা, দাদী থাকতেও ওকে অনাথের মতো থাকতে হয়েছে। এখন ওর তুই-ই সব। ওকে প্লিজ ভালো রাখিস বাবা। ক’ষ্ট পেতে দিস না।’
রুদ্র হতবাক। একদিনের ঝা’ড়িতে লোকের এতো পরিবর্তন! কিছু বলার আগেই স্পর্শী কাছে এগিয়ে আসে। শান্ত গলায় বলে, ‘আমাকে নিয়ে খুব চিন্তা আপনার! কবে থেকে? কই ৫ বছরে তো একদিনও খোঁজ নেননি। এমনকি কখনো জিজ্ঞেসও করেননি কেমন আছি! তাহলে হঠাৎ আজ এতো দরদ, এতো চিন্তার কারণ?’
শাহাদাৎ শেখ মাথা নিচু করে নেয়। অপ’রাধী কন্ঠে বলে, ‘আমাকে ক্ষমা করে দিস মা!’
স্পর্শী হো হো করে হেঁসে ওঠে। হাসতে হাসতে কেঁদে ফেলে। রুদ্র এক হাতে আগলে নেয় তাকে৷ স্পর্শী ভাঙা গলায় বলে, ‘ক্ষমা করে দিস মা? আজ কতদিন পর মা ডেকেছেন মনে আছে আপনার? ৫ বছরের কত গুলো দিন হয় জানেন আপনি? ক্ষমা চাচ্ছেন আমার কাছে? আচ্ছা ক্ষমা করে দিবো আপনি আমার ৫ বছর ফিরিয়ে দিন! আপনি আমার একেকটা য’ন্ত্রণাময় রাত থেকে শান্তি ফিরিয়ে দিন! পারবেন? আচ্ছা এসব ছাড়েন। গত ৫ বছরে আপনি একদিনও আমার পাশে বসেছেন? মাথায় হাত রেখেছেন? কখনো জিজ্ঞেস করেছেন৷ কেমন আছি! খেয়েছি কি না! রাতের পর রাত কেমন কাটে খোঁজ নিয়েছেন? আজ পর্যন্ত আমার মায়ের কবর একবারও জিয়ারত করেছেন? একবারও তার কবরের পাশে বসেছেন? কোন মুখে ক্ষমা চান আপনি? আপনার বিয়ে নিয়ে আমার কখনো কোনো অভিযোগ ছিলো না। বিয়ে করতেন অন্তত আমার মায়ের মৃ’ত্যুর ৪০ টা দিন পরই করতেন। খুব কি ক্ষ’তি হতো? নাকি ম’রে যেতেন? আপনি বিয়ে করার পর কি একটা দিনও আমাকে আদর করে ‘মা’ ডাকতে পারতেন না? পারতেন কিন্তু করেননি৷ প্রয়োজন মনে করেননি। তেমনই আমিও আপনাকে ক্ষমা করার প্রয়োজন মনে করছি না।’
ডুকড়ে কেঁদে উঠে স্পর্শী। শাহাদাৎ শেখ চুপচাপ সরে যায়। রুদ্র নিজের প্রশস্ত বুকে আঁকড়ে নেয় তার পর্শীকে। স্পর্শী ভরসার জায়গা পেয়ে বাচ্চাদের মতো কাঁদে। কতদিন পর, কতগুলো সময় পর সে মন খুলে কাঁদছে! তার হিসেব কি কেউ রেখেছে? উহু নাহ। সে বেঁচে আছে নাকি ম’রে গেছে এই খোঁজ টুকুও তো কেউ নেয়নি৷ তবে এখন কেন সে ক্ষমা করবে! রুদ্র স্পর্শীকে কিছু বলে না৷ মন খু্লে কাঁদুক মেয়েটা।
________
রাতে তানিয়া আর রেণু আপা এ বাড়িতেই থেকে যায়। কিছু সময়ের মধ্যেই হারুণ আর রিফাতকে দিয়ে ফুল আনিয়েছে তানিয়া আর রাইমা। দুজনে এটুকু টাইমের মধ্যে রুদ্রের ঘর সাজিয়ে ফেলেছে সুন্দর করে। স্পর্শী এতক্ষণ রেণু আপার সাথে গেষ্ট রুমে বসে ছিলো। রেণু আপা হেঁসে মাথায় হাত রাখে স্পর্শীর। বলে, ‘এইবার তোমার কষ্টের পালা শেষ। সুখী হও আপা।’
স্পর্শী জড়িয়ে ধরে রেণু আপাকে। কাঁদো কাঁদো গলায় বলে, ‘আমি তোমার বিয়ে না দিয়ে এবাড়িতে আসতেছি না। আজ রাতটা থাকবো ঠিক আছে কিন্তু কাল সকাল সকাল আমি চলে যাবো ওখানে।’
রেণু আপা হো হো করে হেঁসে বলে, ‘কি কও আপা এইগুলান! এইডা তোমার শ্বশুরবাড়ি তুমি এইহানেই থাকবা। আমার কিছু একটা ব্যবস্থা আমি কইরা নিমু।’
‘আমি এতোটাও স্বা’র্থপর নই আপা। তুমি আমার জন্য কত কিছু করেছো আর আমি স্বা’র্থপরের মতো শুধু নিজেরটা ভাববো তা কখনো হয় না।’
রেণু আপা হাসে। এ পৃথিবীতে এই মেয়েটা ছাড়া তার আসলেই কেউ নেই। জীবন যু’দ্ধে ল’ড়াই তো করে নেবে কিন্তু এমন ছোট বোন সে কই পাবে! রেণু আপার ভাবনার মাঝেই হাজির হয় তানিয়া আর রাইমা। তানিয়া একটা প্যাকেট স্পর্শীর হাতে ধরিয়ে বলে,
‘যান ম্যাম! এটা পড়ে আসুন।’
স্পর্শী ভ্রু কুঁচকে বলে, ‘এটা কি?’
‘শাড়ি।’
স্পর্শী দ্রুত প্যাকেট সরিয়ে রেখে বলে, ‘পা’গল নাকি! আমি শাড়ি টাড়ি পড়তেও পারি না আর সামলাতেও পারি না। একদম এসব পড়তে পারবো না।’
রাইমা তানিয়ার কাঁধে হাত রেখে বলে, ‘তা বললে তো হচ্ছে না ভাবিজান। তোমার আজ বিবাহ জীবনের প্রথম দিন উফফস রাত বলে কথা!’
তানিয়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় রাইমার দিকে। হাত সরিয়ে বলে, ‘পড়িস তো ক্লাস টেনে। এতো পাকছিস কেমনে? যা পড়তে বস পিচ্চি।’
মুখ ফুলায় রাইমা। রেণু আপা হেঁসে প্যাকেট হাতে নিয়ে বলে, ‘আপা চলেন আমি পড়াই দিতেছি।’
স্পর্শী চুপচাপ গাল ফুলিয়ে রেণুর থেকে শাড়ি পড়ে নেয়। তানিয়া আর রাইমা হালকা করে সাজিয়েও দেয়। তারপর স্পর্শীকে ধরে নিয়ে ঘোমটা দিয়ে বসিয়ে দেয় রুদ্রের বেডের মাঝখানে। তারপর ৩ জন মিলে বাহিরে দরজা আঁটকে দাঁড়ায়। অপেক্ষা এখন রুদ্রের! কিন্তু এতো ধৈর্য এই বিচ্চু বাহিনীদের তো নেই। তাই রাইমা নিজে পুরো বাড়ি খুঁজে রুদ্রকে টেনে নিয়ে আসে। দরজার সামনে তানিয়া, রেণু আপাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে,
‘ব্যাপার কি? আজ সবাই মিলে আমার রুমের সামনে কেন?’
তানিয়া দাঁত কেলিয়ে বলে, ‘বিয়ে তো লুকায় লুকায় করছেন তাই বাদ বাকি বন্ধুগুলা আসতে পারলো না। ব্যাপার না পরের বার সবাই আসবে। এখন কথা হলো বিয়ে ছোট করে হোক আর বড় করে কিন্তু হয়ছে তো। আজ আপনাদের ফার্স্ট নাইট! এখন রুমে ঢুকতে হলে আমাদের টাকা দিতে হবে।’
রুদ্র হাই তুলতে তুলতে বলে, ‘আমার রুমে ঢুকতে এখন আমার টাকা দিতে হবে!’
রাইমা বলে, ‘অবশ্যই। এতো কষ্ট করে ফুল আনালাম, ঘর সাজালাম, বউ সাজালাম আর টাকা নেবো না! জলদি টাকা বের করো।’
রুদ্র পকেটে হাত গুজে বলে, ‘এক কাজ কর বোন! তোরা বরং আজ আমার বউয়ের সাথে থেকে যা আমার আর ওই ঘরে গিয়ে কাজ নেই।’
পেছনে ঘুরে শিষ বাজাতে বাজাতে চলে যেতে নিলে টেনে ধরে রাইমা আর তানিয়া। রুমের মধ্যে থেকে শব্দ করে হাসতে থাকে স্পর্শী..
চলবে..
(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)#প্রণয়_বর্ষণ (১৩)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
_______________
রুদ্রর বাড়ির লিভিং রুমে বসে আছে স্পর্শী৷ স্পর্শীর পাশেই রুদ্র, শাহাদাৎ শেখ, শাহাদাৎ শেখের মা, রামিয়া, রুদ্রর মা রেহেনা, রুদ্রর বাবা শফিক শাখাওয়াত, রুদ্রের বোন রাইমা বসে আছে। সবার মুখেই গম্ভীরতা স্পষ্ট। স্পর্শী শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে। পুরো রাস্তা সে অনেক বুঝিয়েছে রুদ্রকে কিন্তু তাতে বিশেষ একটা লাভ হয়নি। রুদ্রর মা একদম পছন্দ করে না স্পর্শীকে তাই তো আসার পর থেকেই চোখ মুখ কুঁচকে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু শফিক শাখাওয়াতের মুখে একটুও বিরক্তি নেই বরং এতদিন পর মেয়েটা কে দেখে সে খুশিই হয়েছে। স্পর্শ স্পর্শীর কোলে। স্পর্শী বাড়ির মধ্যে ঢুকতে না ঢুকতেই সে এসে জাপ্টে ধরেছে। এতোদিন পর বোনকে কাছে পেয়ে বিশাল খুশি সে। রুদ্র আছে বলে ভয়ে কিছু বলতে পারছে না রামিয়া। নীরবতা ভেঙে রুদ্র শাহাদাৎ শেখের উদ্দেশ্যে বলে,
‘আশা করি আমাদের বিয়েতে আপনার কোনো আপত্তি নেই!’
শাহাদাৎ শেখ উত্তর দিলেন না। কিন্তু স্পর্শীর দাদী তেতে উঠে বলেন, ‘আপত্তি নাই মানে? আমাগো আপত্তি আছে। রেহেনা তুই কিছু কস না কেন? এই পোলা কি পা’গল হইয়া গেছে নাকি? এমন অ’লক্ষী মাইয়ারে কেউ বিয়ে করে!’
স্পর্শী চুপ করে থাকে। সে জানতো বিয়ের কথা উঠলে এমনই হবে। তাই তো সে এই প্রণয়ে জড়াতে চায়নি। এখন আবার তার মা নিয়ে কথা উঠবে। যা সে সহ্য করতে পারবে না। রুদ্র বাঁকা হেঁসে বলে,
‘নানু তোমার মতো অ’লক্ষীরে কেন নানাভাই বিয়ে করছিলো বলো তো?’
স্পর্শীর দাদী ক্ষে’পে উঠে। রেহেনা ছেলেকে ধমকে ওঠে বলে, ‘রুদ্র! নিজের নানুকে সম্মান দিয়ে কথা বলো।’
রুদ্র শব্দ করে হেঁসে ওঠে। শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে বলে, ‘সম্মান! আর এই মহিলাকে! তোমার মা কে বলো পর্শীকে সম্মান দিয়ে কথা বলতে নয়তো খুব খারাপ হবে!’
রেহেনা দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘এখন কি ওর পা ধরে বসে থাকতে হবে আমাদের!’
রুদ্র কিছু বলার আগেই রেহেনা স্পর্শীর কাছে আসে। স্পর্শকে কোল থেকে টেনে নিয়ে রামিয়ার কাছে দিয়ে স্পর্শীকে টেনে তুলে। বাহু শক্ত করে চেপে ধরে রাগী কন্ঠে বলে, ‘তোর মতো বে’হা’য়া নি’র্ল’জ্জ মেয়ে আমি একটাও দেখিনি। নিজের মা’কে তো খেয়েছিস এখন আমার ছেলের জীবনটাও খেতে এসেছিস!’
রুদ্র এ পর্যায়ে শান্ত হয়ে বসে। স্পর্শীর রিয়েকশন দেখেই সে কিছু বলবে নয়তো চুপ থাকবে। স্পর্শী নিজের বাহু থেকে হাত সরিয়ে দেয় রেহানার। কাঠকাঠ গলায় বলে,
‘সব বিষয়ে আমার মা কে টেনে নিজেদের মানসিকতার পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আর রইলো বাকি আপনার ছেলে! তো এখানে উনি আমাকে এনেছেন আমি নই। আপনার ছেলেকে আপনি আঁচলের নিচে যত্ন করে রাখুন কেমন! আর রুদ্র ভাই পুরো রাস্তা আপনাকে এটা হাজার বার বুঝিয়েছি তবুও আপনি আমার কথা শোনেননি। এখন নিশ্চয় শান্তি পেয়েছেন?’
রুদ্র শান্ত দৃষ্টিতে তাকায়। স্পর্শী ব্যাগ তুলে দরজার দিকে এগোতে নিলে রুদ্রর বাবা শফিক শাখাওয়াত ডাকে। স্পর্শী পেছনে ফিরে তাকায়। শফিক শাখাওয়াতের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকায় রেহেনা তাতে অবশ্য তিনি খুব একটা পাত্তা দেন না। স্পর্শীর কাছে এগিয়ে এসে তার মাথায় হাত রাখেন। আদুরে কন্ঠে বলেন,
‘কোথায় যাচ্ছিস? এ বাড়িতে পা রেখেছিস মানে এ বাড়ি থেকে আর যেতে দিচ্ছি না। কে কি বললো তাতে পাত্তা দিস না মা! ওরা তোর সুখ সহ্য করতে পারে না কিন্তু আমার ছেলেটাকে অন্তত ভাসিয়ে যাস না। সে তোকে অনেক বেশি ভালোবাসে মা। তোর জন্য, শুধুমাত্র তোর জন্য ২ মাস কষ্ট করে আমাদের বিজনেস ‘ও’ আবার চালু করেছে। যে ছেলেকে সারাদিন কিছু করতে বললেও পাত্তা দিতো না সে তোর জন্য সব ছেড়ে ছুড়ে কাজে মন দিয়েছে। ওর মায়ের জন্য ওর ভালোবাসাটা তুচ্ছ করে দিস না প্লিজ।’
স্পর্শী মাথা নিচু করে নেয়। শাহাদাৎ শেখ তৃষ্ণার্থ পাখির মতো মেয়ের দিকে তাকায়। শফিক শাখাওয়াতের মতো সেও যদি পারতো তার মেয়ের মাথায় এভাবে হাত রাখতে! কিন্তু কোন লজ্জায় সে তার মেয়ের মাথায় হাত রাখবে!
রেহেনা রেগে বলে, ‘কি বলতেছো এগুলা তুমি?’
শফিক শাখাওয়াত কড়া চোখে তাকিয়ে বলে, ‘মেয়ে মানুষের গলা এতো উচু হতে নেই রেহেনা। আমি ভালোবেসে মাথায় তুলে রেখেছি বলে তোমার সব কথা চুপচাপ মেনে নিবো এতো ভালোও কিন্তু নই আমি! তোমার জন্য নিজের ছেলের সুখ আমি বিসর্জন দিতে পারি না তাই মা হয়ে ছেলের সুখের কারণ না হলেও অন্তত কষ্টের কারণ হয়ো না। চুপ করে থাকো।’
পাশ থেকে রুদ্র অদ্ভুত ভাবে তাকায় নিজের বাবার দিকে। তাদের বাবা তাদেরকে ভালোবাসে এটা সে জানতো তাই বলে এতোটা! সে জানতো না। একই পরিবারের দুই রকম গল্প। দুই বাবার দুই রকম গল্প। সবার কথার ফাঁকে সে রিফাত আর হারুণকে এসএমএস করে দেয়। শফিক শাখাওয়াত স্পর্শীর সামনে দুহাত পেতে বলে,
‘আমার ছেলের সুখটা কেড়ে নিস না মা।’
স্পর্শী শফিক শাখাওয়াতের হাত আঁকড়ে ধরে। চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে। একবার আড়চোখে নিজের বাবার দিকে তাকায়। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
‘এভাবে বলবেন না আঙ্কেল!’
শফিক শাখাওয়াত খুশিতে গদগদ কন্ঠে শুধায়, ‘তার মানে তুই বিয়েতে রাজী?’
স্পর্শী মাথা নিচু করে মাথা নাড়ায়। রাইমা খুশিতে নেচে ওঠে। শফিক শাখাওয়াত খুশিতে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে শাহাদাৎ শেখের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘শাহাদাৎ তোমার কোনো সমস্যা নেই তো?’
স্পর্শী তাকায় শাহাদাৎ শেখের দিকে। শাহাদাৎ শেখ মলিন হেঁসে একবার মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘স্পর্শীর যখন কোনো আপত্তি নেই তখন আমারও কোনো আপত্তি নেই।’
রেহেনা, রামিয়া, স্পর্শীর দাদী ফোঁ’স করে ওঠে। এতোটা সময় কিছু বলেনি রুদ্র। এবার সোজা হয়ে বসে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘বাবার তো কোনো আপত্তি নেই মা। আশা করি তোমারও নেই! আর থাকলে বলতে পারো আমি বিয়ে করে বউ নিয়ে চলে যাবো।’
রেহেনা দাঁতে দাঁত চেপে বসে থাকে। হারুন আর রিফাত উকিল, কাজী, তানিয়া আর রেণু আপাকে নিয়ে বাড়ির মধ্যে আসে। স্পর্শী আর রুদ্রকে পাশাপাশি বসিয়ে প্রথমে রেজিস্ট্রার এবং পরে বিয়ে পড়ানো হয়। কিছু সময়ের ব্যবধানে দুজনে একটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যায়। কি থেকে কি হয়ে গেলো ভেবেই স্পর্শী টাস্কি খাচ্ছে। এখন সে এই বডি বিল্ডারের বউ! বিয়ে শেষে হারুণ, রিফাত, রাইমা, শাহাদাৎ শেখ, শফিক শাখাওয়াত, তানিয়া, রেণু আপা নতুন বিবাহিত জুটিকে অভিনন্দন জানায়। ছোট্ট স্পর্শও তার এলোমেলো বুলিতে অভিনন্দন জানায়।
যাওয়ার সময় শাহাদাৎ শেখ রুদ্রকে একপাশে ডাকে। স্পর্শীকে তখন তানিয়া আর রাইমা লজ্জা দিতে ব্যস্ত৷ শাহাদাৎ শেখ রুদ্রকে ডেকেছে দেখে ভ্রু কুঁচকায় স্পর্শী। রুদ্র একবার স্পর্শীর দিকে তাকিয়ে এগোয় শাহাদাৎ শেখের কাছে। স্পর্শীও পেছন পেছন যায়। রুদ্র শাহাদাৎ শেখের দিকে তাকিয়ে হেঁসে বলে, ‘বিয়ের গিফ্ট টিফ্ট দেবেন নাকি শ্বশুরমশাই!’
শাহাদাৎ শেখ হুট করেই রুদ্রের হাত আঁকড়ে ধরে। রুদ্রকে অবাকের ওপর অবাক করে দিয়ে বলে, ‘মেয়েটাকে আমি গত ৫ বছর অনেক ক’ষ্ট দিয়েছি রুদ্র। তুই আমার মেয়েটাকে কখনো ক’ষ্ট দিস না বাবা। ওর গত ৫ বছরে আপন বলতে কেউ ছিলো না। বাবা, দাদী থাকতেও ওকে অনাথের মতো থাকতে হয়েছে। এখন ওর তুই-ই সব। ওকে প্লিজ ভালো রাখিস বাবা। ক’ষ্ট পেতে দিস না।’
রুদ্র হতবাক। একদিনের ঝা’ড়িতে লোকের এতো পরিবর্তন! কিছু বলার আগেই স্পর্শী কাছে এগিয়ে আসে। শান্ত গলায় বলে, ‘আমাকে নিয়ে খুব চিন্তা আপনার! কবে থেকে? কই ৫ বছরে তো একদিনও খোঁজ নেননি। এমনকি কখনো জিজ্ঞেসও করেননি কেমন আছি! তাহলে হঠাৎ আজ এতো দরদ, এতো চিন্তার কারণ?’
শাহাদাৎ শেখ মাথা নিচু করে নেয়। অপ’রাধী কন্ঠে বলে, ‘আমাকে ক্ষমা করে দিস মা!’
স্পর্শী হো হো করে হেঁসে ওঠে। হাসতে হাসতে কেঁদে ফেলে। রুদ্র এক হাতে আগলে নেয় তাকে৷ স্পর্শী ভাঙা গলায় বলে, ‘ক্ষমা করে দিস মা? আজ কতদিন পর মা ডেকেছেন মনে আছে আপনার? ৫ বছরের কত গুলো দিন হয় জানেন আপনি? ক্ষমা চাচ্ছেন আমার কাছে? আচ্ছা ক্ষমা করে দিবো আপনি আমার ৫ বছর ফিরিয়ে দিন! আপনি আমার একেকটা য’ন্ত্রণাময় রাত থেকে শান্তি ফিরিয়ে দিন! পারবেন? আচ্ছা এসব ছাড়েন। গত ৫ বছরে আপনি একদিনও আমার পাশে বসেছেন? মাথায় হাত রেখেছেন? কখনো জিজ্ঞেস করেছেন৷ কেমন আছি! খেয়েছি কি না! রাতের পর রাত কেমন কাটে খোঁজ নিয়েছেন? আজ পর্যন্ত আমার মায়ের কবর একবারও জিয়ারত করেছেন? একবারও তার কবরের পাশে বসেছেন? কোন মুখে ক্ষমা চান আপনি? আপনার বিয়ে নিয়ে আমার কখনো কোনো অভিযোগ ছিলো না। বিয়ে করতেন অন্তত আমার মায়ের মৃ’ত্যুর ৪০ টা দিন পরই করতেন। খুব কি ক্ষ’তি হতো? নাকি ম’রে যেতেন? আপনি বিয়ে করার পর কি একটা দিনও আমাকে আদর করে ‘মা’ ডাকতে পারতেন না? পারতেন কিন্তু করেননি৷ প্রয়োজন মনে করেননি। তেমনই আমিও আপনাকে ক্ষমা করার প্রয়োজন মনে করছি না।’
ডুকড়ে কেঁদে উঠে স্পর্শী। শাহাদাৎ শেখ চুপচাপ সরে যায়। রুদ্র নিজের প্রশস্ত বুকে আঁকড়ে নেয় তার পর্শীকে। স্পর্শী ভরসার জায়গা পেয়ে বাচ্চাদের মতো কাঁদে। কতদিন পর, কতগুলো সময় পর সে মন খুলে কাঁদছে! তার হিসেব কি কেউ রেখেছে? উহু নাহ। সে বেঁচে আছে নাকি ম’রে গেছে এই খোঁজ টুকুও তো কেউ নেয়নি৷ তবে এখন কেন সে ক্ষমা করবে! রুদ্র স্পর্শীকে কিছু বলে না৷ মন খু্লে কাঁদুক মেয়েটা।
________
রাতে তানিয়া আর রেণু আপা এ বাড়িতেই থেকে যায়। কিছু সময়ের মধ্যেই হারুণ আর রিফাতকে দিয়ে ফুল আনিয়েছে তানিয়া আর রাইমা। দুজনে এটুকু টাইমের মধ্যে রুদ্রের ঘর সাজিয়ে ফেলেছে সুন্দর করে। স্পর্শী এতক্ষণ রেণু আপার সাথে গেষ্ট রুমে বসে ছিলো। রেণু আপা হেঁসে মাথায় হাত রাখে স্পর্শীর। বলে, ‘এইবার তোমার কষ্টের পালা শেষ। সুখী হও আপা।’
স্পর্শী জড়িয়ে ধরে রেণু আপাকে। কাঁদো কাঁদো গলায় বলে, ‘আমি তোমার বিয়ে না দিয়ে এবাড়িতে আসতেছি না। আজ রাতটা থাকবো ঠিক আছে কিন্তু কাল সকাল সকাল আমি চলে যাবো ওখানে।’
রেণু আপা হো হো করে হেঁসে বলে, ‘কি কও আপা এইগুলান! এইডা তোমার শ্বশুরবাড়ি তুমি এইহানেই থাকবা। আমার কিছু একটা ব্যবস্থা আমি কইরা নিমু।’
‘আমি এতোটাও স্বা’র্থপর নই আপা। তুমি আমার জন্য কত কিছু করেছো আর আমি স্বা’র্থপরের মতো শুধু নিজেরটা ভাববো তা কখনো হয় না।’
রেণু আপা হাসে। এ পৃথিবীতে এই মেয়েটা ছাড়া তার আসলেই কেউ নেই। জীবন যু’দ্ধে ল’ড়াই তো করে নেবে কিন্তু এমন ছোট বোন সে কই পাবে! রেণু আপার ভাবনার মাঝেই হাজির হয় তানিয়া আর রাইমা। তানিয়া একটা প্যাকেট স্পর্শীর হাতে ধরিয়ে বলে,
‘যান ম্যাম! এটা পড়ে আসুন।’
স্পর্শী ভ্রু কুঁচকে বলে, ‘এটা কি?’
‘শাড়ি।’
স্পর্শী দ্রুত প্যাকেট সরিয়ে রেখে বলে, ‘পা’গল নাকি! আমি শাড়ি টাড়ি পড়তেও পারি না আর সামলাতেও পারি না। একদম এসব পড়তে পারবো না।’
রাইমা তানিয়ার কাঁধে হাত রেখে বলে, ‘তা বললে তো হচ্ছে না ভাবিজান। তোমার আজ বিবাহ জীবনের প্রথম দিন উফফস রাত বলে কথা!’
তানিয়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় রাইমার দিকে। হাত সরিয়ে বলে, ‘পড়িস তো ক্লাস টেনে। এতো পাকছিস কেমনে? যা পড়তে বস পিচ্চি।’
মুখ ফুলায় রাইমা। রেণু আপা হেঁসে প্যাকেট হাতে নিয়ে বলে, ‘আপা চলেন আমি পড়াই দিতেছি।’
স্পর্শী চুপচাপ গাল ফুলিয়ে রেণুর থেকে শাড়ি পড়ে নেয়। তানিয়া আর রাইমা হালকা করে সাজিয়েও দেয়। তারপর স্পর্শীকে ধরে নিয়ে ঘোমটা দিয়ে বসিয়ে দেয় রুদ্রের বেডের মাঝখানে। তারপর ৩ জন মিলে বাহিরে দরজা আঁটকে দাঁড়ায়। অপেক্ষা এখন রুদ্রের! কিন্তু এতো ধৈর্য এই বিচ্চু বাহিনীদের তো নেই। তাই রাইমা নিজে পুরো বাড়ি খুঁজে রুদ্রকে টেনে নিয়ে আসে। দরজার সামনে তানিয়া, রেণু আপাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে,
‘ব্যাপার কি? আজ সবাই মিলে আমার রুমের সামনে কেন?’
তানিয়া দাঁত কেলিয়ে বলে, ‘বিয়ে তো লুকায় লুকায় করছেন তাই বাদ বাকি বন্ধুগুলা আসতে পারলো না। ব্যাপার না পরের বার সবাই আসবে। এখন কথা হলো বিয়ে ছোট করে হোক আর বড় করে কিন্তু হয়ছে তো। আজ আপনাদের ফার্স্ট নাইট! এখন রুমে ঢুকতে হলে আমাদের টাকা দিতে হবে।’
রুদ্র হাই তুলতে তুলতে বলে, ‘আমার রুমে ঢুকতে এখন আমার টাকা দিতে হবে!’
রাইমা বলে, ‘অবশ্যই। এতো কষ্ট করে ফুল আনালাম, ঘর সাজালাম, বউ সাজালাম আর টাকা নেবো না! জলদি টাকা বের করো।’
রুদ্র পকেটে হাত গুজে বলে, ‘এক কাজ কর বোন! তোরা বরং আজ আমার বউয়ের সাথে থেকে যা আমার আর ওই ঘরে গিয়ে কাজ নেই।’
পেছনে ঘুরে শিষ বাজাতে বাজাতে চলে যেতে নিলে টেনে ধরে রাইমা আর তানিয়া। রুমের মধ্যে থেকে শব্দ করে হাসতে থাকে স্পর্শী..
চলবে..
(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)