#প্রণয়াসক্ত
#পর্ব_০৪
#Sumaiya_Sumu(লেখিকা)
“নতুন একটি ভোর। নতুন একটি সকাল শুরু হলো। সারাদিনে কার জন্য কি অপেক্ষা করছে তা কেউ জানে না। সারারাত বৃষ্টি হয়েছে তাই এখন প্রকৃতি ঠান্ডা, শীতল, স্নিগ্ধ। প্রকৃতির শীতল হাওয়ায় বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছে নাতাশা। ফজরের নামাজ পড়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সকাল’টা উপভোগ করছে নাতাশা। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তারপর ছাঁদে চলে গেলো নিজের গাছগুলো কেমন আছে দেখতে। নাতাশার একটা গোলাপ গাছে আজ ফুল ফুটেছে তাই ওর মন খুশিতে ভরে উঠলো। সে ফুরফুরে মনে নিচে নেমে এসে কলেজ যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিলো। তারপর নাস্তা করে আম্মুকে বলে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো”।
“কলেজে পৌঁছে রিক্সা থেকে নেমে ভিতরে ঢুকে দেখি রিমি ফোনে কার সাথে যেনো রাগারাগি করছে। আমার মনে হচ্ছে দুলাভাইয়ের সাথে হিহিহি”। যাই দেখি গিয়ে….
‘কিরে কার সাথে কথা বলছিস’?
‘আর কার সাথে কমু’?
‘দুলাভাইয়ের সাথে নিশ্চয়ই’?
‘হু’।
‘কি হয়েছে? এতো রাগ করিস কেন’?
‘আরে মাঝে মাঝে হুদাই ঝ’গ’ড়া করতে ভাল্লাগে হিহিহি’।
‘কিহ্! তুই দুলাভাইরে এমনে প্যারা দেস রিমু’?
‘শোন যে প্যারা সহ্য করে দিন শেষে ফিরে আসবে তাকেই বিয়ে করা উচিত আর যে প্যারা সহ্য করতে পারবে না তাকে বিয়ে করলে জীবন’টা পানসা হয়ে যাবে’।
‘তুই কি বললি এসব? সব আমার মাথার উপর দিয়ে গেলো’।
‘হইছে তুমি বুঝবাও না মনু। তুমি তো একটা নিরামিষ’।
‘হ নিরামিষ’ই ভালো। প্যারাহীন জীবন। এই রোজ রোজ কথা বলা, দেখা করা, ঘুরতে যাওয়া এসব আমার দ্বারা হবে না’।
‘দেখমু নে। কোনোদিন যদি কাউকে ভালোবাসিস আর প্রেম করিস তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না বলে দিলাম’।
‘ধুরর এসব প্রেম আমার ভাল্লাগে না৷ আর আমি এতো আলগা পিরিত পারিও না তাই কেউ প্রেম করতেও আসবে না’।
‘যাদের প্রেম করতে ভাল্লাগে না তারাই কিন্তু একসময় কাউকে গভীরভাবে ভালোবেসে ফেলে’।
‘তুই কি বলতে চাস’?
‘কিছুই না। তোর মতো গ’বে’টে’র মাথায় এসব ঢুকবে না’।
‘রিমুুমুমু’।
‘কিচ্চে’?
‘তোরে কিন্তু আমি’…
“আমাদের খুনসুটির মাঝেই ক্লাসের ঘন্টা বেজে গেলো তাই আমি আর রিমি কলেজে চলে গেলাম। ক্লাস শেষ করে ক্যাম্পাসে বসে গল্প করছিলাম এমন সময় হঠাৎ কালকের সেই বখাটে ছেলে গুলো এসে আমার পায়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। আমি একটু ঘাবড়ে গিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। তারা সমানে কেঁদে কেঁদে আমার কাছে কালকের ব্যবহারের জন্য মাফ চাইছে। আমি একটু অবাক হলাম। তারা এমন করছে কেন? আর আমি তাদের দিকে খেয়াল করে দেখলাম তাদের শরীরে মা’ই’রের দাগ স্পষ্ট। চোখ-মুখে কেমন শুকিয়ে গেছে। চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে। তাদের চোখে-মুখে প্রচন্ড ভয় হানা দিচ্ছে। কিন্তু তাদের সাথে কে এই কাজ করলো”? আমি তাদের বললাম…
‘আমার সাথে যেই ব্যবহার করেছেন সেই ব্যবহার আর কোনো মেয়ের সাথে করবেন না। মেয়েদের সম্মান করতে শিখুন’।
‘তারা কিছু না বলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে’।
‘আমি তাদের আবার বললাম, আচ্ছা আপনাদের চেহারার এই অবস্থা কেন? কে করেছে এসব আপনাদের সাথে’?
‘আমরা কিছু বলতে পারবো না’।
“এইটুকু বলেই তারা একপ্রকার পালিয়ে গেলো। বিষয়’টা আমাকে প্রচন্ড ভাবাচ্ছে। হঠাৎ কারো ধাক্কায় আমি ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলাম। পাশে তাকিয়ে দেখি রিমি”। আমি কিছু বলছি না দেখে রিমি’ই বলে উঠলো….
‘কিরে কি ভাবছিস’?
‘ভাবছি ছেলেগুলোর এই অবস্থা কে করলো’?
‘যেই করুক একদম ঠিক করেছে। মেয়েদের সম্মান দিতে পারে না অ’স’ভ্য গুলো। এসব ছেলের জন্যই আমরা মেয়েরা আজ কোথাও নিরাপদ নই’।
‘আমি কিছু বললাম না’।
‘কিরে আবার কোথায় হারিয়ে গেলি’?
‘হ্যা হ্যা বল? কিছু বলছিলি’?
‘তুই এতো কি ভাবছিস বল তো? আমি তোকে কত কিছু বললাম তুই কিছুই শুনলি না হুহ্’।
‘রাগ করিস না রিমু। শোন না আমার মাথায় অনেক কিছু ঘুরছে তাই একটু’…
‘হয়েছে বুঝেছি। এবার আমাকে বল তো কি নিয়ে এতো ভাবছিস’?
‘জানিস দুইদিন ধরে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে আমার ফোনে মেসেজ আছে মানে মেসেজ বলতে কবিতা লিখে পাঠায় কিন্তু কল দিলেই নাম্বার বন্ধ। আবার দেখ কালকে আমার বার্থডে উইশ ওভাবে। আজকে আবার এই ছেলেগুলোর এমন অবস্থা। ছেলেগুলো বলতেও চাইলো না কে তাদের সাথে এমন করেছে, খেয়াল করেছিস তুই? আমি বলার পর কেমন পালিয়ে গেলো’?
‘হ্যা ঠিক বলেছিস তুই’।
‘হুম এসব বিষয়গুলোই আমাকে ভাবাচ্ছে। আমি বুঝতে পারছি না এই সব ঘটনা কি কাকতালীয় নাকি এমনিতেই হচ্ছে? আচ্ছা তোর কি মনে হয়? এসব ঘটনা কি একজনই ঘটাচ্ছে নাকি আলাদা আলাদা ব্যাক্তি করছে’?
‘আমার মাথায় তো কিছুই আসছে না রে’।
‘এখন আসবে না কেন? তুই না সবকিছুতে সন্দেহের গন্ধ পাস। এখন গোয়েন্দাগিরি কর হুহ্।
‘আরে বাবা আমি কি কোনো প্রফেশনাল গোয়েন্দা নাকি যে তোর এতো জটিল কেস আমি সহজে ধরতে পারমু’?
‘চুপ থাক ভাই। আমার মাথা কাজ করছে না’।
‘আচ্ছা এখন এগুলো নিয়ে এতো টেনশন করিস না। চল বাসায় যাই। দেখা যাক সামনে কি হয়’।
‘ঠিক আছে চল’।
“তারপর আমি আর রিমি একটা রিক্সা নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। বাসায় পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া-দাওয়া করে একটা গল্পে বই পড়তে লাগলাম। বই পড়তে পড়তে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি মনেই নেই। মোবাইলের ক্রিং ক্রিং শব্দে ঘুমে ছুটে গেলো। মোবাইল’টা হাতে নিয়ে দেখি রিমি ফোন দিয়েছে। আমার স্বাদের ঘুম’টা নষ্ট করলো তাই ফোনটা কানে ধরেই দিলাম এক ঝাঁ’ড়ি”।
‘এই ছেরি ফোন দিয়ে আমার ঘুম’টা নষ্ট করলি ক্যান’?
‘তোর ঘুম ছাড়া কোনো কাম নাই’?
‘না নাই। তোর কি’?
‘পরীক্ষায় ডাব্বা পাইলেই বুঝবি’।
‘চুপ থাক। কেন ফোন দিছোস সেটা বল’?
‘আরে ওইযে’…
‘কি’?
‘কি জানি বলার জন্য ফোন দিলাম’?
‘আমি কেমনে জানমু’?
‘ধুররর মনেই তো পড়ছে না’।
‘তুইও না। আচ্ছা মনে পড়লে আবার ফোন দিস। আমি এখন উঠে ফ্রেশ হই’।
‘আচ্ছা’।
“রিমির সাথে কথা বলা শেষ করে ফোন কে’টে দিলাম। কিন্তু উঠতে ইচ্ছে করছে না আলসেমি লাগছে। তাই মোবাইল’টা নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করলাম। এমন সময় টুং করে মেসেজ টোন বেজে উঠলো। আবারও সেই অপরিচিত নাম্বার থেকে মেসেজ”। মেসেজটা ওপেন করলাম….
“আজ আমি একজন মায়াবতীর গল্প বলবো;
যে প্রতিদিন তার গভীর কালো চোখে আঁকে মমতার কাজল,
দীঘল চুল বেঁধে রাখে ভালোবাসার বিনুনীতে,
হাসিতে ছড়ায় উচ্ছাস আর অভিমানে হয় নীল,
আমি আজ সেই মায়াবতীর গল্প বলবো।
সে মায়াবতী এক যাদুকর!
তার চলার পথের ধূলো, আলো-বাতাস জানে সেই গল্প;
তারা জানে কেমন করে সে আগলে রাখে আমায় মমতার বাঁধনে;
কেমন করে সে দূরদেশে থেকেও হৃদয়ের সবচেয়ে কাছে থাকে;
কেমন করে সে ঝড়-বৃষ্টিতে ধরে রাখে হাত;
কেমন করে সে ভোলায় আমার সকল ব্যর্থতা;
সে মায়াবতী! সে যাদুকর! সে আমার আত্মজা।
সে এখন অনেক দূরদেশের বাসিন্দা;
সাত-সমুদ্র পেড়িয়ে তার সাক্ষাত পাওয়ার অপেক্ষায় থাকি;
চাইলেও আর আমি তার কাছে যেতে পারিনা,
পারিনা তার নরম গালে আদর খেতে,
বলতে পারিনা আবোল তাবোল আমার যত কথা,
শোনাতে পারিনা তাকে নিয়ে আমার এই অর্থহীন কবিতা,
সে এখন অনেক দূরদেশের বাসিন্দা।
মায়াবতীরা কি এমনই হয়?
চোখের কোণের অনেক বাইরে থাকে-
হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায়না তাদের?
মনের ঘরে সকল সময় ঘুরে-বেড়ায়, কিন্তু পাশে এসে বসেনা।
শুধু আশা জাগিয়ে রাখে হৃদয়ে;
আশা আবার দেখা হবার কোন এক ফাল্গুনের ভোরে।
আমি জানি দেখা হবে কোন একদিন তার সাথে,
যেদিন আমি মায়াবতীকে আমার অপেক্ষার কথা বলবো,
আমার কান্নার কথা বলবো,
বলবো আমার আশার কথা।
সেদিন যত ফুল ফুটবে জানবে আমার অপেক্ষার কথা,
সেদিন যত পাখি গাইবে শুনবে আমার ভালোবাসার কথা”।
“এতো সুন্দর কবিতা পড়লে কার না মন ভালো হয়ে যায়! আমারও মনটা ফুরফুরে হয়ে উঠলো। অপরিচিত নাম্বার’টায় কল দিলাম কিন্তু নাম্বার বন্ধ। এটা তো রোজকার কাহিনি তাই বেশি ভাবলাম না। দেখা যাক, কতদিন এভাবে মেসেজ পাঠাতে পারে। একদিন না একদিন তো সামনে আসবেই, ততদিন না হয় অপেক্ষা করি। কিন্তু আমার মনে খটকা লাগছে, আমার কেন যেন মনে হচ্ছে এসব ঘটনা একজন ব্যাক্তি’ই ঘটাচ্ছে। শুধু আমি ধরতে পারছি না। আমাকে এই রহস্য খুঁজে বের করতেই হবে”।
#চলবে….
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।]