থাপ্পড় টা বেশ জোরে ই লেগেছে, ইফাজ রক্তবর্ণ চোখ করে তাকিয়ে আছে অতসীর দিকে। ইফাজ রেগে গিয়ে অতসীর হাত ধরতে ই আরেকটা থাপ্পড় ইফাজের গালে পড়লো,
-নেক্সট টাইম মেয়েদের ডিস্টার্ব করা বা গায়ে হাত দেওয়ার আগে আমার দেওয়া দুইটা থাপ্পড় আর আমার নামটা মনে রাখবেন অতসী।
ইফাজের হাতে থাকে বিয়ারের বোতলটা ছুড়ে মেরে সাথে সাথে অনিকের কলার চেপে ধরলো,
-তোরা থাকতে কী করে পারলো পুরো কলেজের সামনে আমাকে থাপ্পড় মারতে।
অনিক চুপ করে দাড়িয়ে থেকে ভয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বললো,
-আপনার বাবা বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখছিলো, তাই কিছু বলতে পারিনি বস।
বাবার কথা শুনে দ্রুত বাইক স্টার্ট দিয়ে কলেজ থেকে চলে গেলো ইফাজ।
স্বপ্নের কলেজে পা রেখে এমন একটা কাহীনি হবে তা ভুলে ও কল্পনা করেনি অতসী। কিন্তু অন্যায় দেখলে চুপ থাকতে পারে না অতসী। অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করতে পিছ পা হয় না।
–হেই আমি রুহি, তোমার নাম অতসী আমি জানি।খুব ভালো লাগলো তুমি যে শয়তানগুলোকে থাপ্পড় মারলে। কিন্তু ওর বাবা তো এ কলেজের প্রিন্সিপাল তোমাকে যদি এ কলেজে পড়তে না দেয়।
অতসী হাটা থামিয়ে রুহির দিকে তাকিয়ে বললো,
-মেয়েদেরকে কীভাবে টিচ করতেছিলো দেখলে তো, ওড়নাতে ও টান দিতেছিলো এগুলো দেখে আমি চুপ থাকতে পারিনি। এমন অসভ্য ছেলের জন্য আমাকে যদি এ কলেজে পড়তে না হয় তো পড়বো নাহ্।
-বাই দ্যা ওয়ে আমার ফ্রেন্ড হতে পারি।
অতসী হাসি মুখে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
-অবশ্যই
অনিক চুপ করে ইফাজের পিছনে দাড়িয়ে আছে, রুমে থাকা সব জিনিস পত্র অর্ধেক ভাঙ্গা শেষ। এক হাতে কাচের গ্লাস হাতে নিয়ে দেয়ালে বাড়ি মারে অন্য হাতের সিগারেট দিব্বি টানছে।
অনিকের সামনে গিয়ে বললো,
-এ অপমান আমি কী দিয়ে মুছবো। কীভাবে পারলো তোরা এতোগুলো মানুষ থাকতে এই সামন্য মেয়ে আমাকে থাপ্পড় মারতে কী করে পারলো।
-বস আপনার বাবা ছিলো তাই তো পারি নাই কিছু করতে।
-তো তখন পারোস নাই এখন খুজে বের কর কি করা যায়। এই মেয়ে আজ কলেজ থেকে বাসায় ফিরে কীভাবে দেখবো। কালকে সকালে খবরের কাগজে হেডলাইন হবে,”কলেজের প্রথম দিন ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা”
যতক্ষণ না এই হেডলাইন দেখছি আমার শান্তি নেই। যা করার ব্যবস্থা কর।
ইফাজ অট্টহাসি হাসলো।
প্রথম দিন তাই ক্লাস তেমন হচ্ছে না। প্রথম ক্লাস টা কোনো রকম হয়েছে। বাকি ক্লাসগুলো তো হবে না মনে হচ্ছে।
অতসী কলেজ থেকে বের হতে ই কলেজের সাইডে থাকা ফার্মেসি দিকে চোখ পড়তে ই মনে পড়লো,
বাবার জন্য ওষুধ নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। পার্সটা খুলে দেখলো দু’শ ত্রিশ টাকা আছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফার্মেসির দিকে পা বাড়ালো অতসী।
ঔষুধ কিনে মাত্র দশটা বেচে গেলো। পার্সে টাকাটা রেখে হাটতে লাগলো অতসী।
ইফাজ কলেজে আসতে ই জানতে পারে বেশ কিছুক্ষণ আগে অতসী কলেজ থেকে চলে গেছে।
-বস আপনাকে ভয় পেয়ে ই আগে চলে গেছে।
অনিকের কথা শুনে মুচকি হাসলো ইফাজ। সিগারেট এর শেষ টান দিয়ে ফেলে দিলো।
-এই মেয়ের সব ইনফরমেশন চাই কালকের ভিতরে।
কথাটা বলে ই ইফাজ চলে যায়।
অতসী বাড়িতে ডুকতে ই বাড়িওয়ালা হাজির,
-বলি আর কতো মাসের ভাড়া এক সাথে দিবা। চার মাস তো হতে চললো।
অতসী খুব নরম স্বরে বললো,
-চাচা দিয়ে দিবো আমাকে একটু সময় দিন। বাবা একটু সুস্থ হলে ই দিয়ে দিবো।
-তোমার বাবার তো এক পা কবরে চলে গেছে, কখন মরে যায় ঠিক নাই। যদি পারো ভাড়া দেও নয়তো বাসা ছাড়ো। যত্তসব ফালতু
অতসী চুপ করে কথাগুলো শুনে রুমে চলে গেলো।
ফ্রেশ হয়ে চুলায় ভাত আর আলু সিদ্ধ বসালো।
ইফাজ বাসায় ডুকতে ই কাজের মেয়েটা ডেকে বললো,
-ভাইজান খাবেন না, খালাম্মা আপনাকে আসলে তার রুমে যেতে বলেছে।
ইফাজ সোজা তার মায়ের রুমে চলে যায়। অনিতা বেগম বই পড়ছিলেন। ছেলেকে দেখে বই পড়া রেখে ছেলের কাছে এসে বসলে,
-আমার বাবা টা রাগ করেছে কার উপর?
-আম্মু তুমি জানো আজকে একটা মেয়ে আমাকে অপমান করেছে পুরো কলেজের সামনে থাপ্পড় মেরেছে।
অনিতা বেগম রাগে ফুসে উঠে বলেন তোর বাবা কোথায় ছিলো।
-বাবার জন্য ই ঐ মেয়েকে কিছু করতি পারিনি নয়তো এতোক্ষণ শেষ করে দিতাম।
-তার মানে তুই অপরাধ করেছিস। আর রুমের সব জিনিস পত্র এ জন্য ই ভেঙ্গেছিস।
– ধুর তুমি ও আমায় ভালোবাসো না। থাকবো তোমাদের সাথে আমি।
ছেলেটা বেশি আদর পেয়ে এমন মাথায় উঠে বসেছে, যা নয় তা করছে।
অতসী তার বাবাকে রাতের খাবার খাইয়ে ঔষুধ খাইয়ে নিজের রুমে গিয়ে শুতে ই দুচোখে ঘুম চলে।আসলো।
সকালের ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা বানিয়ে বাবাকে খাওয়ালাম। ঘড়ির দিকে তাকাতে ই দেখলাম নয়টা বেজে গেছে, অনেকটা পথ হেটে যেতে হবে তাই আর বিলম্ব না করে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
কলেজে পা রাখতে ই তুষার এসে জড়িয়ে ধরলো ইফাজকে, তুষার ইফাজের খুব ভালো বন্ধু।
-বন্ধু তোকে নাকি কোন মেয়ে মেরেছে।
কথাটা বলার সাথে সাথে অতসী এসে তাদের সামনে হাজির। অতসী তাদের ক্রস করার সময় পাশ থেকে অনিক বলে উঠে,
-ঐ যে যাচ্ছে সুন্দরী কমলা উনি ই ভাইকে থাপ্পড় মেরেছে।
অতসী কথাটা শুনে অনিকের সামনে এসে বললো,
-কালকের থাপ্পড়ের কথা মনে আছে।
অনিক বাধ্য ছেলের মতো মাথা নেড়ে বললো,
-হুম
-তাহলে যেনো নেক্সট টাইম মেয়েদের দেখলে সালাম দিতে দেখি ঐ সব আজেবাজে কথা যেনো না শুনি।
এবার ইফাজ অনিককে সরিয়ে সামনে এসে বললো,
-এতো উড়ো না পাখি তোমার ডানা কাটতে আমার একটা মুখের কথা ই যথেষ্ট। কিন্তু নাহ্ অন্য কাউকে দিয়ে নয় আমি নিজে তোমার ডানা কাটবো।
-লজ্জা থাকলে আবার আমার সামনে এসে এসব বলতেন নাহ্
-আমার সব লজ্জা তোমাকে দিয়ে দিয়েছি অনেক আগে ই, আরো দিবো শুধু আজ কলেজ থেকে বের হও।
-অসভ্য বদ লোক
ইফাজ ওরনা টান দিতে হাত বাড়ালে ই তুষার হাত ধরে ইফাজকে নিয়ে চলে যায়,
-আরে ভাই এইখানে সিসি ক্যামেরা লাগানো তোর বাপ সব দেখছে হয়তো। চল এখন।
পৃথিবীর এই একমাত্র ব্যক্তি যাকে ইফাজ ভয় পায়।
অতসী ক্লাস রুমে যেতেই রুহি বললো,
-কেনো জামেলা করতে যাও বলো তো, ইফাজ খুব বাজে। তোমার যদি কিছু হয়ে যায়।
-কী হবে কী করবে আমার এই ছেলে।
-অযথা জামেলা করো না তোমার ক্ষতি হতে পারে। আমি ইফাজকে খুব ভালোভাবে ই চিনি।
অতসী কোনো কথা না বলে মুচকি হাসলো।
ইফাজ মেয়েটা কিন্তু জোস, বাইকের উপর হেলন দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে সিগারেট টানছে ইফাজ। তুষারের কথা শুনে তুষারের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বললো,
-তো আমি কি করবো। কতো মেয়ে আমার জন্য পাগল এই সুমী কে ই দেখনা ইফাজ ইফাজ করতে করতে জান দিয়ে দেয়।
-ধুর ঐগুলো আটা সুন্দরী আর অতসী ন্যাচারাল।
-আমাকে যে থাপ্পড় মারছে তা কিন্তু ন্যাচারাল না মনে রাখিস।
-আরে রাগ করিস কেন বন্ধু তোর সাথে একটু মজা ও করতে পারবো না।
অতসী কলেজ কলেজ মাঠে দাড়িয়ে দাড়িয়ে স্যারদের ভাষন শুনছে নবীনবরন আগামীকাল। এটার জন্য ই মুলত স্যাররা কথা বলছে।
অতসী এক ফাকে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে যায়। যা বলবে পরে রুহির কাছ থেকে জেনে নেওয়া যাবে। কিছুদূর যেতে ই ইফাজ তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে অতসীকে গিরে ধরে। রাস্তার মাঝখানে অতসী আর চার দিকে ইফাজের সাঙ্গপাঙ্গ,
-কী রাজি তো কালকে খবরের কাগজে হেডলাইন হতে।
চলবে,
[ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]
#প্রণয়ে_তুমি
#পর্ব_১
#writer_Nahida_islam