প্রণয়ে_তুমি
#পর্ব_৭
#writer_nahida_islam
ক্যাফেতে যাওয়ার পর অতসী, তুষার রুপম আর অন্তুর সাথে কথা বললো। সবাই বসে গল্প করতেছিলো হঠাৎ রুপম বলে উঠলো,
-শালাবাবু বিয়ের আগে বউকে একবার প্রপোজ করে ফেলো দেখি…
ইফাজ অবকা হয়ে তাকিয়ে বললো,
-এই বদ মেয়েকে আমি প্রপোজ করবো! ইম্পসিবল।
-আপনি কী মিস্টার অসভ্য খান বদ কাকে বলেন হে?
-দেখলেন তো কিছু বললে ই রবি সীম হয়ে যায়।
রুপম ভ্রুকুচকে জিজ্ঞেস করলো, রবি সীম আবার কীভাবে হয়,
-ঐ তো কিছু বললে ই জ্বলে উঠে আপন শক্তিতে।
-অন্তু আপু দেখলে তো কেমন অসভ্য যে।
-তোর দুজনই ই চুপ করবি প্লিজ। হইছে অনেক, চল এখন বাসায় চল। দুজন ঝগড়া করতে করতে মাথা খেয়ে ফেলবি।
-আপু আমি বাইকে করে এই মেয়েকে নিয়ে যেতে পারবো না। আর যদি নিয়ে যাইতে বলো তো কিন্তু মাঝরাস্তা নামিয়ে দিবো।
-আমি আপনার সাথে যাবো ও না।
-আচ্ছা তোমাদের দুজনকে একসাথে দিবো না, অতসীকে আমি পৌঁছে দিবো। ইফাজ তুই রুপমকে নিয়ে চলে যা।
অন্তু অতসীকে নিয়ে গাড়ি বসে, অতসী কে চুপ করে বসে আছে তাই অন্তু জিজ্ঞেস করলো,
-অতসী তোমার আর কি কি শপিং বাকি আছে বল আমাকে, আর তো বেশিদিন বাকি নাই মাত্র তিনদিন। এখন আর কলেজে যেতে হবে না। কালকে সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে কারণ তোমাদের বিয়েটা আমাদের বাংলো বাড়িতে হবে।
অতসী শুধু মাথা নাড়ালো, কোনো কথা বললো না।
অন্তু অতসীকে তার বাসার সামনে নামিয়ে চলে গেলো। অতসী বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লো। শুয়ে ফোন হাতে নিতে ই দেখলো ইফাজের নম্বর থেকে মেসেজ আসলো,
-এখন ও সময় আছে পালিয়ে যাও..
মনে মনে ইফাজকে একগাদা বকা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো অতসী।
________________________
সকাল বেলা, কানমলা খেয়ে ইফাজ ঘুম থেকে উঠলো। অনিতা বেগম ছেলের ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছে।
-এই বার ই শেষ আমি গুছিয়ে দিলাম, এর পর থেকে বউ ব্যাগ গুছিয়ে দিবি বুঝলি।
-মা আমি বিয়ে করতে চাই না।
-বিয়ের দিন কাজি যখন বলবে বলো বাবা কবুল, তখন ও কী বলবি আমি বিয়ে করতে চাই না।
-উফফ মা এসব ভালো লাগে না আমার।
-কী ভালো লাগে বল তো। অতসীকে কল দিয়ে তো জিজ্ঞেস ও করতে পারিস মেয়েটা সব ঠিক ঠাক ভাবে গুছিয়ে নিয়েছে কী না।
-পারবো না বদ মেয়ে একটা আমি কিছু বললে ই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।
ছেলের কথা শোনে অনিতা বেগম হাসছে। ইফাজে কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, আমার ছেলেটা এতো বড় হয়ে গেলো আমি বুঝতে ও পারিনি।
সন্ধ্যা হতে ই ইফাজদের বাংলো বাড়িতে সবাই পৌঁছে যায়। অন্তু অতসীকে তার রুম দেখিয়ে দিলো। অতসী বাবাকে একটা রুমে শুইয়ে দিয়ে নিজের প্রয়োজন জিনিসগুলো গুছিয়ে রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
ইফাজ খাবার নিয়ে এসে দরজায় কয়েকবার নক করলো। অতসী ওয়াশরুমে থাকায় দরজা খুলতে একটু লেইট হলো,
-জীবনে কোনো দিন তুমি ঠিক টাইমে দরজা খুলতে পারছো হে,
-আপনার গন্ধ পেলে ই আমি লেইট করে দরজা খুলি এটা বুঝতে হবে।
ইফাজ রাগি একটা লুক দিয়ে জিজ্ঞেস করলো
-গন্ধ মানে,
-কিছু নাহ্
-বদ মেয়ে
-অসভ্য ছেলে
-অসভ্য ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হইছো কেনো।
-আপনাকে কৈফিয়ত দিতে হবে।
-না তোমার বয়ফ্রেন্ড কে গিয়ে দাও।
-আচ্ছা, বায়।
-খাবারটা নিয়ে দরজা অফ করো।
অতসী হাত থেকে টান দিয়ে খাবারটা নিয়ে অনেক জোরে দরজা বন্ধ করে দেয়। ইফাজ জানালা দিয়ে বললো,
-দরজা কি তোমার টাকার এতো জোরো দরজা লাগালে কেনো,
অতসী কোনো উওর দিলো না।
-কী হলো কথা বলো না কেনো
এবার ও অতসী কোনো উওর দিলো না,
-এই বদ মেয়ে বলো না কেনো, দরজা কী তোমার টাকার হে..
-আমার মুখ ও আপনার টাকার না আমি কোনো উওর দিবো না।
ইফাজ একটা মুখ ভেংচি দিয়ে চলে যায়।
পরের দিন বেলা বেড়ে যাওয়ার সাথে
ইফাজের কিছু আত্মীয় বন্ধুরা বাংলোতে চলে আসে। অতসীকে অনেকবার জিজ্ঞেস করার পর ও সে বললো, এই দুনিয়াতে তার বাবা ছাড়া কেউ নেই। ব্যাপারটা বেশ খটকা লাগলো অন্তুর। তাহলে কী কোনো অতীত লুকাতে চাচ্ছে অতসী।
ইফাজের খালামনি এসে ইফাজ দেখে বললো,
-এবার যদি ইফাজ একটু ভালো হয়,
-খালামনি আমি খারাপ ছিলাম কবে।
-এই মাঝে মাঝে রাতে বাসায় আসতে না। সারাদিন বন্ধুদের সাথে মেতে থাকতে, অফিসের কোনো কাজে তোমাকে পাওয়া যায় না এগুলো কি বাবা ভালো,
-সবাই আমার বিপক্ষে, আমার পক্ষে কেউ নেই।
তুষার ইফাজের কাধে হাত রেখে বললো,
-কেদো না বন্ধু আমি আছি।
ইফাজে বন্ধুরা মিলে পুরো বাড়ি সাজিয়েছে। অন্তু সব দায়িত্ব নিয়ে হলুদের সব ব্যবস্থা করলো, বাড়ির একটা সাইতে ইফাজের হলুদের ব্যবস্থা করলো অপর সাইডে অতসী হলুদের ব্যবস্থা করলো।
অন্তু অতসীকে হলুদের শাড়ি পড়িয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দিলো। অতসীকে রুমে বসিয়ে অন্তু চলে যায়। অন্তু চলে যাওয়ার সাথে সাথে অতসী তার বাবার রুমে চলে যায়। বাবাকে জড়িয়ে ধরে বাবা মেয়ে দুজনে ই কান্না করে।
-তোর মা থাকলে আজকে তোকে দেখে অনেক খুশি হতো রে। কতো স্বপ্ন দেখতো মেয়েকে এক রাজকুমারের মতো দেখতে ছেলের কাছে বিয়ে দিবে।
বিয়ে তো হচ্ছে ঠিক ই কিন্তু মানুষটা তো আর নাই রে।
বাবার কথা শুনে অতসী আরো বেশি কান্না শুরু করে।
অতসীর কান্না শুনে অন্তু রুমে চলে আসে,
-অতসী কেনো কান্না করছো? আমারা কী তোমার কেউ না নাকি।
অন্তু অতসী চোখ মুছে অতসীকে নিয়ে হলুদ দিতে চলে যায়।
দুজনের হলুদ শেষ হতে হতে রাত প্রায় একটা মতো বেজে যায় অতসী কোনো রকম রুমে ডুকে ই শুয়ে পড়ে।
_____________________________
খুব সাদামাটা ভাবে ই ইফাজ অতসীর বিয়েটা হয়ে যায়। একটা রুম ইফাজ আর অতসীর জন্য সাজানো হয়। অন্তু অতসীকে রুমে বসিয়ে দিয়ে বাহিরে চলে যায়। রুপম তুষার ইফাজকে নিয়ে বাগানে দাড়িয়ে আছে, সে কিছুতে ই রুমে যাবে না।
-শালাবাবু এখন কেনো ভয় পাচ্ছো, বিয়ে তো করে ই ফেলছো, বেচে থাকলে বাসর ঘরের যেতে ই হবে।
-এই ভয় কোথায় পাই আমি,
-তাহলে যেতে চাও না কেনো?
-ইফাজ তুই না গেলে আমি যাই…
-দুলাভাই আমার আগে তুষারকে বিয়েটা করানো উচিত ছিলো।
-সে তুষারের কথা তোমাকে ভাবতে হবে না।
-ভালোই ভালোই যাবে নাকি অন্য পথ অবলম্বন করবো,
রুপম আর তুষার ইফাজকে টেনে নিয়ে রুমে ডুকিয়ে বাহির থেকে তালা লাগিয়ে রেখে চলে আসে…
চলবে,
[ভুলক্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, আজকে ভ্যাকসিনের জন্য লেইট হলো]