#প্রণয়ে_তুমি
#পর্ব_১৭
#writer_nahida_islam
অতসী রেডি হয়ে নিলো। ইফাজ তার ছোট চাচার বাইক নিয়ে অতসীকে নিয়ে অনিকদের বাসায় যায়। গাড়িতে থেকে নেমে অতসী ভেতরে ডুকে অনিককে দেখে থমকে দাড়ায়। তাহলে কী এবার আর শেষ রক্ষে হলো না। কারণ অনিকের কারণে ই আজ অতসী নিজের গ্রাম ছেড়ে দূরে চলে গেছে, অতীস বাবার অসুস্থতার কারণ ও অনিক। অনিকের জন্য কী এবার সংসার টা ভাঙ্গবে।
ইফাজ অনিকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে, হাসি মুখে জিজ্ঞেস করে কী অবস্থা দুস্ত, কেমন আছিস।
অনিক অতসীর দিকে তাকিয়ে বললো,
-এটা কে?
ইফাজ অনিকের মুখটা ঘুরিয়ে বললো,
-গার্লফ্রেন্ড নাহ্ বিয়ে করা বউ।
মুহুর্তে ই অনিকের মুখটা মলিন হয়ে গেলো।
-কী বাহিরে দাড় করিয়ে রাখবি ভেতরে যেতে দিবি না নাকি।
অনিক কিছু বললো না আনমনে শুধু বললো,
-চল
ইফাজ অতসী দুজনে ই ভেতরের রুমে গিয়ে বসলো, অনিকের মা সামনে আসতে ই অতসীর দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে গেলো। ছেলের পাগলামোর কথা ভুলে যায়নও তিনি ও। তাও হাসিমুখে বললো,
-কেমন আছো বাবা?
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো আন্টি। আপনার বউমাকে নিয়ে চলে ই আসলাম আপনার হাতের ইলিশ খিচুড়ি খেতে।
-ভালো করেছো। অতসী মা এসো আমার সাথে।
অনিক ইফাজের সাথে বসে কথা বলছে। অতসী অনিকের মার সাথে যেতে ই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো,
-এখুনি আমার বাড়ি থেকে চলে যাও, খুব কষ্ট হয়েছে আমার ছেলেকে ঠিক করতে। তোমাকে না পেয়ে পাগল হয়ে পড়েছিলো আমার ছেলেটা। খুব কষ্ট নিজের আয়াতে এনেছি। কেনো এসেছো আবার আমার সংসারে আগুল লাগাতে।
-আপনার বাড়ি জানলে আমি কখনো এখানে আসতাম না।
-যাও নিজের স্বামী নিয়ে বেরিয়ে যাও আমার বাসা থেকে।
অতসী আর না দাড়িয়ে সোজা ইফাজের হাত ধরে টেনে নিয়ে বাহিরে নিয়ে আসলো,
-অতসী কী হয়েছো এভাবে টানছো কেনো।
-অন্তু আপু কল দিয়েছি দ্রুত বাড়িতে ফিরতে হবে।
অতসী ইফাজকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত বাসায় নিয়ে আসে।
-এভাবে যে নিয়ে আসলে অনিক কী মনে করেছে।
-কিছু মনে করে নাই।
-অতসী সব জায়গায় তোমার জেদ মানায় না।
-আমি জেদ করেনি যা করেছি আমাদের ভালোর জন্য করেছি।
অন্তু এসে ইফাজের কানে ধরে বললো,
-তোদের এক সাথে হওয়া নিষেধ করছি না।
-আপু ব্যথা লাগছে,
-আগে বল আবার কী নিয়ে ঝগড়া করছিস?
-অনিকদের বাসায় গিয়েছিলাম অতসী আমাকে মিথ্যা বলে নিয়ে আসলো ভালো করে বসতে ও দেয়নি।
-ওহ্ অনিককে আসতে বললি না, অনেকদিন অনিকের সাথে কথা হয়না। কেনে চলে এলে অতসী
কথাটা বলে পিছনে তাকাতে ই দেখলো অতসী নেই, চলে গেছে হয়তো।।
_______________________________
বাড়ির পেছনে আমগাছের নিচে একটা শেকড়ে বসে আছি। অতীতে,
কারো অতীত বিষাক্ত আবার কারো অতীত আনন্দ দিয়ে ভরপুর। যে অতীতে আনন্দ বিদ্যমান তা খুব কম ই মনে পড়ে কিন্তু বিষাক্ত অতীতটা হাজার চেষ্টা করে ও ভুলতে পারা যায় না।
সদ্য দশম শ্রেনীতে উঠেছিলাম তখন। স্কুলে আসার সময় প্রায়ই আমার অনিক আমাকে ডিস্টার্ব করতো। সারাক্ষণ আমার পিছনে লেগে থাকা মানুষ টা নাম অনিক। একদিন মাঝরাস্তায় দাড় করিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল,
-অতসী আমি তোমাকে কোনো প্রেমের প্রস্তাব দিচ্ছি না সোজা বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছি।
ভয় আর একগাদা বিরক্তি নিয়ে বলেছিলাম।
-আপনি আবার আমার সামনে আসলে বাসায় বিচার দিবো।
ঐদিন স্কুল থেকে বাসায় যখন ফিরছিলা, বাসায় অনেক মানুষের উপস্থিতে দেখে কৌতুহলী হয়ে কাকিমাকে জিজ্ঞেস করলাম,
-এতো মানুষ কেনো কাকিমা?
-তুই নাকি অনিক নামের একটা ছেলের সাথে প্রেম করিস। এখন ই এ অবস্থা। আর কদিন পরে তো ছেলে নিয়ে পালিয়ে যাবি।
-কী বলছো কাকিমা এসব।
-কেনো কানে শুনিস না। ছেলের মা এসেছে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করতে।
জানি কাকিমা আমার কথা বিশ্বাস করবে না তাই দ্রুত বাবার কাছে চলে গেলাম। বাবকে সব খুলে বললাম।
সব শুনে অনিকের মাকে, বাবা বিয়ের জন্য না বলে দেয়।
সব সুখ আমার ঐদিন ই মাটি হয়ে যায়। রাতে অনিক তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে আমাকে বাসা থেকে তুলে নিতে আসে। আমাকে বাঁচাতে এসে বাবার উপর এলোপাতাড়ি মাইর খেতে হয়। আমাকে ঐদিন নিয়ে যেতে পারেনি কিন্তু বাসায় অনেক ভাঙ্গচুর হয়। বাবাকে হসপিটালের এডমিট করতে হয়। এর পর থেকে আমরা বাসা বাড়া থাকি। অনিক নামের ছায়া যেনো আমার জীবনে আর না পড়ে তাই অনেক দূরে চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমার ভাগ্যের জোরে আবার সেই সমস্যা সমমুখীন হতে হলো। এখন শুধু আমি একা না পুরো একটা পরিবার আমার সাথে জড়িত।
পাশ ফিরে তাকাতে ই দেখলাম ইফাজ। আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
-কখন আসলেন?
-কী এতো ভাবছো হে,সেই কখন তোমার পাশে এসে বসলাম কিন্তু তুমি একবার ফিরে ও তাকালে না কী এতো ভাবছো।
-তেমন কিছু না।
-তেমন কিছু না হলে ই আমাকে ও দেখতে পেলে না। কী এমন ভাবনায় মগ্ন ছিলে।
-চলো বাসায় চলো।
ইফাজ অতসীর হাত ধরে বাসায় ভেতরে নিয়ে যায়।অতসীকে দেখে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছে। এতো ঝগড়ুটে মেয়েটা হঠাৎ শান্ত হয়ে গেলো কীভাবে।
সন্ধ্যা হাতে ই বড়কাকিমা, মাটির চুলার পিঠা বানাতে বসলো। আমি ও গিয়ে মাটির চুলার পাশে বসে বড় কাকিমার সাথে কথা বলছিলাম। ইফাজ তার কাজিনদের সাথে রুমের ভেতর বসে কথা বলছিলো। আমার শ্বশুড়ি জা কে কাজে সহায্য করছে।
হঠাৎ কেউ অতসী নাম ধরে ডাকলো। কাকিমা আমি দুজন ই ডাক শুনে তাকালাম। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না। কারণ মেইন গেইটের বাহির থেকে কেউ ডেকেছে।
-অতসী তোমার বড়কাকা মনে হয় ডেকেছে যাও দেখে এসো কেনো ডেকেছে।
অতসী বাহিরে যেতে ই অতসীর মুখ চেপে ধরে। কিছুক্ষনের মধ্যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
ইফাজ বেশকিছুক্ষনপর রুম থেকে বের হয়ে অতসীকে খুজে কিন্তু কোথাও পায়না অতসীকে। বড়কাকিমা সবটা বললো তখন কি হয়েছি। সাথে সাথে ইফাজের ফোনকে কল আসে।
-কী ভাই বউকে খুজে পাচ্ছো না তো। খুজে পাবি আমার দেওয়া ঠিকানায় চলে আস। সাবধান কাউকে সাথে নিয়ে আসবি না।
চলবে,
[ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]