#প্রতিশোধ
#পার্ট_16
#জামিয়া_পারভীন
নিরা আর তৃণার বার্থডে তে তুষার এর বাড়িতে বড় অনুষ্ঠান এর আয়োজন করা হয়। সাইফ তৃণাকে কথা দেয় অনুষ্ঠানে তৃণার জন্য গিফট থাকছে। তবে গিফট টা হচ্ছে সারপ্রাইজ। নিরা আর তৃণা একই রকম টপস ড্রেস পড়ে আজ। এতে দুই বোন কে চিনাই যাচ্ছেনা। কে নিরা কে তৃণা এটা পার্থক্য করবে প্রেমিক রা। তৃণা মনে মনে প্লান করে সাইফ যদি তাকে না চিনতে পারে তাহলে সাইফের সাথে সম্পর্ক রাখবে না। আর নিরাও সেইম কথা ভাবে। ভালোবাসার পরীক্ষা নিবে আজ নিরা আর তৃণা। দুই বোন কে চিনার কোন পার্থক্য নাই কারণ দুইজনের গলার ভয়েস আকৃতি, সব সেইম।
এক মাত্র অনেকদিন থেকে যারা দেখেছে তারাই বুঝবে কে নিরা কে তৃণা। প্রথম দেখাতে কেউ বুঝবেনা কোন টা কে। আর এই জন্যই অল্প পরিচয় এর তৃণাকে চিনতে না পেরে আবির নিরাকে শাস্তি দিয়ে ফেলেছিলো। কিন্তু আবির যে ভালো ছেলে এটা তার সাথে থাকতে থাকতে নিরা বুঝেছে, এতো অবহেলা করার পরও আবির ওকে ছেড়ে যায়নি। শত অপমান সহ্য করেও আবির নিরার সাথে নত দৃষ্টি তে কথা বলেছে। এই বা কম কিসের নিরার কাছে।
আজ চুড়ান্ত পরীক্ষা করবে নিরা, দেখবে কেমন চিনতে পারে আবির।
,
,
,
সন্ধ্যায় বিশাল পার্টির আয়োজন করা হয়, সেখানে আবিরের কলিগ সহ নিরা তৃণার ক্লাস ফ্রেন্ড এন্ড সাইফের ফ্যামিলি সবাই আমন্ত্রিত ছিলো। সাইফের ফ্যামিলি কে ডাকা হয়েছে এটা আবির জানতো না। আবিরের ফ্যামিলির সবাই এসেছে, আবিরের ছেলে রোমানার কাছে আছে , আবির ওর বাবা মায়ের কাছে দাঁড়িয়ে আছে। এরই মাঝে সাইফের ফ্যামিলি চলে আসে। আবির বেশ অবাক হয় সাইফ কে দেখে।
সাইফের ফ্যামিলি কে দেখে আবিরের পরিবার বেশ ইতস্তত বোধ করে। সাইফ ই আগে আবিরের সাথে কথা বলে
__ হাই ( সাইফ)
__ হ্যালো ( ভয় মিশ্রিত কণ্ঠে আবির)
__ তারপর কি অবস্থা, একদম আশা করিস নি তাই না। ( সাইফ)
__ কিছুটা হলে ও জানি আমার শ্যালিকা তোকে ভালোবাসে। হয়তো সেই জন্যেই তোর আগমন। যা হয়েছে ভুলে যা, নতুন করে শুরু কর, অভিনন্দন তোকে। ( আবির)
__ তাইইইই, এতো ই সহজ, আমি তো আর আগে জানতাম না তুই তৃণার বোনের হাজবেন্ড, তৃণার বোন আমার বোনের সুখ কেড়ে নিয়েছে তুই ভাবলি কিভাবে তৃণাকে আমি সুখে রাখবো। ( সাইফ)
__ তার মানে তুই রিভেঞ্জ নিতে এসেছিস। ( আবির)
__ হা হা হা ( তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে চলে যায় সাইফ)
,
,
যথাসময়ে নিরা আর তৃণা হাজির হয় টপ্স আর জিন্স পড়ে, দুই জন ই মডার্ণ সাজে সজ্জিত। দুই জনের বাম হাতে ব্রেসলেট, গলায় মুক্তোর মালা, কানে দুল, চুল গুলো ছাড়া আছে, ডান হাতে দুইটা আংটি পড়েছে, উঁচু হিল তাও সেইম সব কিছু। এভাবে দুই জন কে দেখতে পাবে তা কেউ কল্পনা করেনি।
এরই মাঝে এনাউন্স করা হয় আবির আর সাইফ যদি ওদের চিনতে না পারে তাহলে নিরা আর তৃণা কেউইই ওদের সাথে থাকবেনা। সাইফ মনে মনে ভাবছে যে করেই হোক চিনতেই হবে নইলে সব প্লান বৃথা যাবে।
আবির সাইফ দুইজন ই নিরা আর তৃণা কে চিনার চেষ্টা করে, আবির এক টা মেয়ের হাত ধরে একই সাথে সাইফ অন্য মেয়ের হাত ধরে নেয়। দুই জন একিই সাথে প্রেমিকা দের বাম হাত ধরে।
নিরা আবির কে জড়িয়ে ধরে বলে
__ কিভাবে চিনলে
__ এনগেজমেন্ট রিং তোমার বাম হাতে আর তৃণার নাই। এটাই পার্থক্য দুইজনের, তুমি এনগেজ তাই ( আবির)
আর সেইম প্রশ্ন তৃণা সাইফ কে বলে সাইফ ও বলে
__ তোমার রিং ফিংগারে রিং নাই তাই। বলে সাইফ একটা রিং বোনের হাত থেকে নিয়ে সবার সামনে পড়িয়ে দেয় তৃণাকে।
__ এই সময় আবির নিরা কে বলে
I just wanna hold you tight in my arm and wisher in your ear ” I Love U ” আবির নিরা কে জড়িয়ে ধরে সবার সামনে। নিরাও লজ্জা পেয়ে যায়।
__ সাইফও তৃণাকে বলে
পথিবীর কিছুই চাই না শুধু তোমার ভালোবাসা ছাড়া…. তৃনাও সাইফের বুকে নিজেকে সঁপে দেয়।
সবার হাত তালি তে মুখরিত হয়ে উঠে পরিবেশ। নিরা আর তৃণা এক সাথে কেক কাটে প্রথমবার, সবাইকে কেক খাওয়ায় দুই বোন। নিরা এতোক্ষণে সাইফের বোনের দিকে খেয়াল করে মুখ বিষন্ন হয়ে গেলো। এতো অনন্যা, মানে আবিরের যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিলো।
,
,
,
রাত্রে আবির নিরা বাসায় আসার পর আবির কে নিরা জিজ্ঞেস করে…
__ তুমি কি মেয়েটাকে ভালোবাসতে?
__ ভালোবাসা কিনা জানিনা, বিয়ে টা শুধু ঠিক হয়েছিলো। হয়তো মায়া জন্মে গেছিলো, জানো! ওর জন্য প্রথম গিফট কিনি দুইটা শাড়ি। ওকে দিবো ভেবেছিলাম কিন্তু তার আগেই এক্সিডেন্ট এ তোমাকে দিয়ে দিই। তোমার কি মনে আছে তোমাকে প্রথম যে শাড়ি পড়িয়েছিলাম সেটা অনু কে উদ্দেশ্যে কেনা ছিলো।
__ হুম বুঝেছি, এর প্রতিশোধ নিতে চাই সাইফ তাইনা। এজন্যই তুমি আমাকে বলেছিলে, সাইফ তৃণাকে ভালোবাসে না।
__ সাইফ আর আমি এক সাথে পড়েছিলাম, এই সুবাদে অনু আমাকে পছন্দ করে আমার বাবা মায়ের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। সাইফের চেয়ে ভালো সাইকোলজিস্ট ছিলো না বিধায় ওর কাছে পাঠিয়েছিলাম কিন্তু আমি নিজে দেখা করিনি৷ কারণ চিনে ফেললে শত্রুতা করতো। ( আবির)
__ এখন কি হবে? ( নিরা)
__ একমাত্র অনু ই পারবে এই বিয়ে ঠিক করতে। অনুর সাথে কথা বলতে হবে। ( আবির)
__ ওকে তাইই বলো। ( নিরা)
,
,
,
অনন্যা কে দেখা করার জন্য অনেক কষ্ট করে রাজি করায় আবির। অনন্যা আসতে রাজি হয়, অনেক বার রিকুয়েস্ট করার পর অনন্যা রাজি হয়। একটা রেস্টুরেন্ট এ দেখা করে আবির আর অনন্যা।
__ হ্যাঁ কি সমস্যা, বলে ফেলো ( রাগী কণ্ঠে অনন্যা)
__ আমি নিরা কে ভালোবেসে বিয়ে করিনি, এটা করতে আমি বাধ্য হয়েছিলাম। আমার তোমাকে ব্যাপার টা জানানো উচিৎ ছিলো, কিন্তু আমি না জানিয়ে তোমাকে এড়িয়ে গিয়েছিলাম। আই এম সরি।, প্লিজ ফরগেভ মি। ( আবির)
__ এতদিন পর এইসব বলার জন্য ডাকোনি নিশ্চয়ই। কি বলতে চাও ক্লিয়ারলি বলো। ( অনন্যা)
__ নিরা মেয়েটা নির্দোষ ছিলো, একটা এক্সিডেন্ট হয় নিরার সাথে। যাতে সে কনসিভ করে, সব দোষ আমার ছিলো। আমার রাগের জন্য একটা মেয়েকে ভুল বুঝে খারাপ করে দিই। এরপর নিরা সুইসাইড করতে গিয়েছিলো। নিজের অপরাধ বোধের জন্য আমি বিয়ে করতে বাধ্য হই। আমি নিরুপায় ছিলাম অনু। ( আবির)
__ তার মানে তুমি একজন জঘন্য ব্যক্তি, ছিঃ মানুষ এতো নিচে নামে। বাই দ্যা ওয়ে, তোমার মতো নিচ মানুষের সাথে কথা বাড়িয়ে ই বা কি লাভ। তৃণার জন্য তুমি দোষী হয়েছো। আবার নিজেকে ছোট করছো, লজ্জা করেনা। যাই হোক তোমার জন্য আমার এতো ক্ষতি হয়েছে সেটার কি হবে শুনি। তোমার সাথে বিয়ে ভাঙার পর ড্যাড মান সম্মান এর কথা ভেবে ওই বিয়ের ডেট এ একটা মাতালের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়। মাতাল এর অত্যাচার এ আমি দিন রাত কেঁদেছি আর তোমাকে অভিশাপ দিয়েছি। গত ২ মাস আগে মদ খেয়ে মাতলামি করে এক মেয়েকে রেপ করে এখন সে জেলে। আর আমাকে দিয়ে গেছে যন্ত্রণা ময় একটা স্মৃতি ( আমার ছেলে)। পারবে এইসব কষ্ট মুছে দিতে। জানি পারবেনা, তাই আমার রিভেঞ্জ আমি নিয়েই নিয়েছি অলরেডি। ( অনন্যা)
__ মানে? ( আবির)
__ তোমার শ্যালিকার ভুল অপবাদ এ তুমি নিরাকে শাস্তি দিয়েছিলে তাইনা। তোমার শ্যালিকার তো শাস্তি পাওয়া উচিৎ তাইনা ( অনন্যা)
__ কি করেছো তুমি, হ্যাঁ আমি ওর প্রতি বিরক্ত থাকলেও সে তার ভুল বুঝেছে তাই ক্ষমা করে দিয়েছিলাম। ( আবির)
__ তুমি ক্ষমা করলেও আমি কিভাবে ক্ষমা করি বলো। ( অনন্যা)
__ কি করেছো তুমি ওর? ( আবির)
অনন্যা হাসতে থাকে আর আবির তৃনা কে ফোন দিতেই থাকে কিন্তু তৃনার ফোন সুইচড অফ বলছে।
(
চলবে….