#প্রথম_প্রতিশ্রুতি
পর্ব—-০২
মূল ভাবনা। কাহিনী। নির্মাণ : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।
—না না,,এসব কি ভাবছি আমি…!!একটা ঘড়ি কিছুতেই সবকিছুর প্রমান হতে পারে না।দেখতে একই রকম অনেকগুলো ঘড়ি থাকতেই পারে।ওটা অন্য কারোর হবে হয়তো।
কিন্তু প্রশ্ন হলো প্রথম গেলো কোথায়…??সেই রাতে যে রুম থেকে চলে গিয়েছিলো…তারপর ঘুমিয়ে পড়ে প্রতিশ্রুতি।পরে প্রথম এসেছিলো কিনা,নাকি কোথায় ছিলো,এখন কোথায় আছে কিছুই জানে না সে।
যাই হোক না কেন….রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো প্রতিশ্রুতি।তারপর গোসল সারার জন্য বাথরুমে দিকে গেলো।এমনিতে যদিও সকাল সকাল গোসল করার মতো কিছুই ঘটে নি রাতে।গোসল সেরে এসে কিছুক্ষণ পরেই সে বেডরুমে উপস্থিত হলো।
এসেই দেখে ভেতরে প্রথম দাঁড়িয়ে আছে… হঠাৎ তাকে দেখে বেশ অবাক হলো প্রতিশ্রুতি!!
—কি ব্যাপার,,সারা রাত কোথায় ছিলেন আপনি???
—বাইরে ছিলাম!!
—বাইরে ছিলেন সেটা আমিও জানি।কিন্তু সেই বাইরে টা কোথায়??
—মায়ের ঘরে ছিলাম!তার সাথেই ঘুমিয়েছি।
—আপনি এখনো মায়ের কাছে ঘুমান…. (অবাক হয়ে)
—কেন,ঘুমাই তো!কাল আপনি যে অসভ্যতা করলেন আমার সাথে…তারপরেও আপনার সাথে রাত কাটাতাম কিকরে…??
—আমি অসভ্যতা করেছি আপনার সাথে??
—তা,নয়তো কি!আমি একটা পুরুষ মানুষ!আপনি মহিলা আপনার সাথে জামা কাপড় খুলবো কেন আমি…সত্যি আপনি না বড্ড অসভ্য আছেন।
ও গড….এ কে রে….এই ছেলে এখনো নাকি মায়ের কাছে ঘুমায়!সে ঠিক আছে…ঘুমাতেই পারে… কিন্তু স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের মানে বোঝে না।বাবা মা এটা কার সাথে বিয়ে দিলো আমায়…একদিন এর সাথে কাটাতে না কাটাতেই লাইফটা হেল করে দিলো একেবারে।
——— (মনে মনে ভাবলো প্রতিশ্রুতি)
—আচ্ছা শোনো আমার ওয়ালেট টা দাও!
—ওয়ালেট কোথায় আছে???
—ঐ তে ড্রয়ারে…আর এই নাও চাবি…আর হ্যাঁ,চাবিটা এখন থেকে তোমার কাছেই রেখো।
প্রথমের হাত থেকে চাবিটা নিয়ে ড্রয়ার খুললো প্রতিশ্রুতি।তারপরে তাকে ওয়ালেটটা বের করে দিলো!চাবিটা রেখেই রুম থেকে হনহন করে বেরিয়ে যায় প্রথম।
হঠাৎ ড্রয়ারের ভেতরে একটা জিনিস দেখে চোখ আটকে গেলো প্রতিশ্রুতির।জিনিসটাকে উঠিয়ে চোখের সামনে ধরলো !
একটা ভাঙা চশমা….!!!চশমাটার এক প্রান্ত ভেঙ্গে আছে…..এমনিতে সব ঠিক আছে… শুধু একটা ফ্রেমে গ্লাস নেই…!জায়গাটা ফাঁকা। একটা বিষয়ে বেশ খটকা লাগতে লাগলো প্রতিশ্রুতির।
আজ থেকে তিন বছর আগের কোনো এক রাতের ঘটনা,,প্রতিশ্রুতির জীবনের সবথেকে ভয়ানক অধ্যায় রচিত হয় সেই রাতে…যা মনে পড়লে আজো তার শরীর শিউরে ওঠে…!!
সেই রাতে এক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির হাতে ধর্ষণ হয় প্রতিশ্রুতি…. সে ঘটনা ওর জীবনের মোড়ই পাল্টে দিয়েছিলো!!ওর শ্বশুড়বাড়ির লোক সে ব্যাপারে কিছুই জানে না। তাদের জানতে দেয়া হয় নি।কিন্তু সেদিনের ধর্ষণের সাথে চশমার কি সম্পর্ক…. চলুন যেনে নেয়া যাক…
তখন রাত প্রায় আটটা….স্কুল থেকে বাড়ি না ফিরে নিজের এক আত্মীয়কে দেখতে হসপিটালে যায় প্রতিশ্রুতি।হসপিটাল থেকে বেরোতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়।বাসার উদ্দেশ্য গাড়ি খুঁজতে থাকে সে…
প্রায় আধাঘন্টা পার হয়ে যায়,, কোনো গাড়ি পাওয়া গেলো না।হঠাৎ একটা ট্যাক্সি পেয়ে গেলো….উৎসাহে ড্রাইভারকে ভাড়া পর্যন্ত জিজ্ঞেস না করে সে ট্যাক্সিতে উঠে পড়ে…
প্রতিশ্রুতি লক্ষ্য করলো গাড়ির ভেতরে আরো একজন লোক বসে আছে…বলে রাখি -তখন শীতকাল ছিলো!লোকটা একটা কোর্ট আর ক্যাপ পরিহিত…এমনভাবে তার মুখমন্ডল ঢাকা ছিলো যে বাহির থেকে কিছুই বোঝা যাচ্ছিলো না।
ড্রাইভার আপন করে তার গাড়ি চালাচ্ছিলেন।লোকটার সাথে বসতে ভীষণ অস্বস্তি ফিল হচ্ছিল প্রতিশ্রুতির।কিন্তু তখন করার কিছুই ছিলো না।
এক পর্যায়ে সে লোকটা এসে তার পাশেই বসলো… প্রতিশ্রুতি কিছু একটা বলতে যাবে ঠিক তখন লোকটা একটা রুমাল বের করে তার মুখের সামনে ধরলো….
তারপর আর তার কিছু মনে নেই…ধীরে ধীরে চোখজোড়া বন্ধ হয়ে আসে।
যখন চোখ খুললো নিজেকে একটা অন্ধকার ঘরের ভেতরে আবিষ্কার করলো প্রতিশ্রুতি।কেউ আগে থেকেই চোখ দুটো বেঁধে দিয়েছে।তাই কিছুই দেখা যাচ্ছে না।তবে এইটুকু বুঝতে পারছে সে একটা বিছানার ওপরে আছে।নিশ্চই জায়গাটা কোনো ঘরের রুমের ভেতরে হবে …
—কেউ আছো,, কে নিয়ে আসলো আমাকে এখানে….কেউ আছো….??
চারপাশ থেকে কোনো প্রতুত্ত্যর আসলো না।
—কি হলো,,আমার কথার উত্তর দিচ্ছো না কেন,,কেউ আছো কি….???
হঠাৎ মনে হলো কেউ একটা যেন ঢুকলো ঘরের ভেতরে…দরজাটা বন্ধ করার একটা আওয়াজ আসলো…তারপর সে ধীরে ধীরে বিছানার ওপরে উঠলো।
অন্ধকারে কিছু দেখতে না পেরে হাত হাতড়াতে লাগলো…একটা উন্মুক্ত শরীরের স্পর্শ পেলো তার হাত….এবং সে একজন পুরুষ।প্রতিশ্রুতি ভীষণ ভয় পেয়ে যায়।
—কে আপনি,, আমায় কেন নিয়ে এসেছেন এখানে… কি চান!???(আতংকিত স্বরে)
লোকটা কোনো উত্তর না দিলো প্রতিশ্রুতিকে ধাক্কা মেরে বিছানার ওপরে শুয়ে দিলো।তারপর ওর ওপরে উঠে পড়ে….
নিজের সর্বশক্তি দিয়ে তাকে বাঁধা দেবার অনেক চেষ্টা করে প্রতিশ্রুতি…কিন্তু কোনো লাভ হলো না।এক পর্যায়ে বুঝতে পারলো সে ধর্ষণ হচ্ছে লোকটার হাতে….মনে হচ্ছিলো যেন লোকটা একটা ধারালো ছুড়ি দিয়ে তার দেহটা কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলছে।এমন অসহ্য যন্ত্রণা আগে কখনো সে অনুভব করেনি…প্রচন্ড ব্যথা আর যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলো প্রতিশ্রুতি….!!!সেই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির অমানবিক হিংস্র ধাবা সহ্য করা তার পক্ষে অসম্ভবপর হয়ে পড়ছিলো…
—আহহহ!!ছাড়ুন আমায়….এবার ছেড়ে দিন দয়া করে। প্লিজ। মরে যাবো আমি…. আর সহ্য করতে পারছি না।(কেঁদে কেঁদে অনুরোধ করতে থাকে)
লোকটা ওর কথায় কর্ণপাত করলো…সে তার নিজের শরীরের চাহিদার শেষ বিন্দু পর্যন্ত মিটিয়ে প্রতিশ্রুতিকে ছেড়ে দিলো…তারপর চোখের বাঁধনটা খুলে দিয়ে দ্রুত বাইরে চলে যায়…!!
চোখ মেলে কোনোক্রমে বিছানার ওপরে উঠে বসলো প্রতিশ্রুতি…ওর সারা শরীর যেন অবশ হয়ে আছে…বিছানার চাদরের ওপরে রক্তের দাগ স্পষ্ট…! একটু পরে পাশেই একটা চশমার ভাঙা অংশ চোখে পড়ে প্রতিশ্রুতির।লোকটার সাথে হাতাহাতি করার সময়ে চশমার ফ্রেম থেকে একটা গ্লাস আলাদা হয়ে গিয়েছিলো….সেটা এখনো মনে করতে পারছে প্রতিশ্রুতি।
প্রথমের ড্রয়ারে পাওয়া চশমার ভাঙা অশংটা যেন সেই রাতের বিছানায় পড়ে থাকার চশমারই অংশবিশেষ!!!
অকস্মাৎ নিজের মনটা একটা অজানা ভয়ে কেঁপে উঠলো প্রতিশ্রুতির!!
চলবে…..