#প্রথম_প্রতিশ্রুতি
পর্ব—-০৩
মূল ভাবনা। কাহিনী। নির্মাণ : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।
এরপর রাতে ঐ ঘর থেকে প্রতিশ্রুতিকে উদ্ধার করা হয়।পুলিশ অনেক খুঁজে তদন্ত চালিয়েও ধর্ষকের সন্ধান পেলো না।
জীবনের কালো অধ্যায়টা ধীরে ধীরে মুছে যেতে থাকে প্রতিশ্রুতির জীবন থেকে।কিন্তু আজকে আবারো সেই স্মৃতি যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো তার…..
এই প্রথমের ভেতরে কিছু একটা তো নিশ্চই চলছে…নয়তো একটা পূর্ণবয়স্ক মানুষ সে কিনা শারিরীক সম্পর্কের মানে বোঝে না।এও হয়…??এমনটাও তো হতে পারে ও সবটা জানে, সবটা বোঝে শুধু একটা মুখোশ পরে আছে।
কিন্তু কেউ কোনো কারণ ছাড়াই এরকম একটা বোকা হাবাগোবা সেজে কেন থাকতে যাবে…তবে কি সেদিনের সেই ধর্ষণ আর আজকের টিভিতে দেখা ঘটনার সাথে কোনো যোগাযোগ আছে প্রথমের……!!???
নাহহ!!আর কিছুই ভাবতে পারছে না প্রতিশ্রুতি। যে যতোই এই বিষয়টা নিয়ে ভাবতে যাচ্ছে মাথাটা ক্রমাগত ভারী হয়ে আসছে তার।সেই রাতের ব্যক্তি যদি প্রথম হয়ে থাকে…. তবে ওর তো চেনার কথা প্রতিশ্রুতিকে।সবকিছু জেনেও কেন সে ওকে বিয়ে করতে গেলো!
নাহ!নিজের স্বামীর বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করছে প্রতিশ্রুতি।দুএকটা ঠুনকো,আন্দাজি প্রমানের জন্য নিজের সহজ সরল স্বামীকে সন্দেহ করাটা চরম অন্যায় হচ্ছে তার।
ড্রয়ারটা খুলে ভেতরের জিনিসগুলো ভালো করে দেখতে থাকে প্রতিশ্রুতি।সেইভাবে দেখার মতো কিছুই চোখে পড়লো না।
হঠাৎ খুঁজতে খুঁজতে একটা কাগজের খাম চোখে পড়লো তার।খামটাকে ড্রয়ার থেকে বের করে খুলে দেখতে লাগলো প্রতিশ্রুতি।
ভেতর থেকে কতোগুলো ছবি বেরিয়ে আসলো।সবগুলোই মেয়েদের ছবি।এদের আগে কখনো দেখে নি প্রতিশ্রুতি।কিন্তু মেয়েদের ছবি ওর স্বামীর ড্রয়ারে এলো কিকরে কিছুই বুঝতে পারছে না।ওর জানামতে প্রথমের তেমন কোনো আগ্রহ নেই মেয়েদের ব্যপারে।তবে ওর কাছে এতোগুলো মেয়ের ছবি আসলো কোথা থেকে!!
এগুলো ও নিজে রেখেছে,, নাকি অন্য কেউ রেখে দিয়েছে।কে জানে…..!???
একটু পরে মনে হলো কেউ একটা ওর কাঁধে হাত রাখলো পেছন থেকে।চমকে উঠল প্রতিশ্রুতি।
—-কি ব্যাপার,,আপনি!!আপনি এতো তাড়াতাড়ি ফিরে এলেন??
(প্রথমকে উদ্দেশ্য করে বললো)
—কেন,আমি আসাতে কি খুব অসুবিধা হলো তোমার….??!
—না না,অসুবিধা হবে কেন।আপনার ঘরে আপনি ছাড়া আর কে আসবে….?
—তোমার হাতে কি এগুলো….কি লুকিয়ে রেখেছো….???
—-তেমন কিছু না,ড্রয়ারের ভেতরে পেলাম!
—তুমি আমার অনুমতি ছাড়া ড্রয়ারে হাত দেবে না কখনো।যেগুলো বের করেছো রেখে দাও (রেগে বললো)
এই প্রথম প্রথমকে রাগতে দেখছে প্রতিশ্রুতি। ও রাগ করতেও জানে সত্যি জানা ছিলো না ওর।বেশ অবাকই হলো প্রথমের এই ব্যবহারে!!
—কি হলো,তাকিয়ে আছো কেন… রাখতে বলছি না (আবারো ধমকের স্বরে)
—হ্যাঁ,,হ্যাঁ।রাখছি।
প্রতিশ্রুতি ড্রয়ারের ভেতরে চশমা আর কাগজগুলো রেখে দিলো!প্রথম একটু স্বাভাবিক হয়েছে আগের থেকে।
—দেখো সরি।আমি কখনো কারোর ওপরে রাগ করি না।আজ জানি না কেন রাগ হলো আমার।তুমি কিছু মনে করো না।(লজ্জিত হয়ে বললো)
—আপনার বৌ তো আমি,আপনি শাসন করবেন না তো কে করবে।আমি রাগ কেন করতে যাবো হ্যাঁ!!(হেসে)
—-এই বৌ বৌ,,বলবে না একদম।ভীষণ লজ্জা লাগে আমার।
—ন্যাকা,, এসেছে লজ্জাবতী নারী… এটা কে জুটেছে কপালে আমার(মনে মনে ভাবতে থাকে প্রতিশ্রুতি)
—কিছু বললেন….
—নাহ, না কিছু বলি নি। আচ্ছা আপনাকে আমার বৌ বলবো না তো কি বলবো আমি। বুঝতে পারছি ভীষণ লজ্জা লাগে আপনার।
—জানি না,,কি বলবে….এইভাবে স্বামী বৌ একদম বলো না আমার সামনে। এ ছাড়া যা খুশি ডেকো।
এই বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো প্রথম…. স্বামীর চলে যাবার দিকে চেয়ে একটা হাসি দিলো প্রতিশ্রুতি।কিন্তু তার মনে একটা খটকা এখনো যেন রয়ে গেছে।সেটা হলো ছবিগুলো।এই ছবিগুলো কাদের,আর এই ঘরে কেন সেটা আর তার জানা হলো না।
–
–
–
–
এরপর দুপুরবেলা বাবার বাসা থেকে একটা ফোনকল আসে প্রতিশ্রুতির।প্রথমকে বললে প্রথম যেতে চাইলো না।তাই বাধ্য হয়ে প্রতিশ্রুতিকে একাই যেতে হলো।যদিও বিকেলেই ফেরার সিধান্ত হয়েছে।
কিন্তু নিজের বাড়ি থেকে বেরোতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসলো প্রতিশ্রুতির।যদিও বাড়ির লোক রাতটা থেকে যেতে বলে,,কিন্তু প্রথমের কথা চিন্তা করে বাসার উদ্দেশ্য রওয়ানা দিলো সে….
–
–
–
রাত তখন প্রায় সাড়ে আটটা।রাস্তায় জ্যামের মাঝে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে প্রতিশ্রুতির!!অধৈর্য হয়ে চারদিকে সে চোখ বোলাচ্ছে আর অপেক্ষা করে যাচ্ছে কখন জ্যামটা কাটবে!
হঠাৎ নিজের চোখে একটা অদ্ভুত আর অসংলগ্ন জিনিস আবিষ্কার করে প্রতিশ্রুতি।রাস্তার বিপরীত পাশে একটা গলির ভেতরে যেন প্রথমকে যেতে দেখলো সে…..ওর সাথে দুই তিনজন লোক!সবার চেহারায় কেমন একটা গুন্ডা গুন্ডা ভাব স্পষ্ট….!!
বিষয়টা কি বোঝার জন্য গাড়ি থেকে একা নেমে পড়লো।তারপর সে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িগুলো পাস করতে করতে গলিটার ভেতরে গিয়ে ঢুকলো।এই গল্পের মূল লেখক এবং আইডি নাম ‘প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ’!কেউ অন্য নাম দিয়ে কপি করার চেষ্টা করলে অনুগ্রহ পূর্বক আমার আইডিতে যোগাযোগ করে বিষয়টা অবহিত করুন।লোকগুলো খানিকটা দূরে আছে ওর।ওদের পালের গোদাকে ঠিক দেখা যাচ্ছে না,কারন তাকে আড়াল করে পেছনে ছেলেগুলো হেঁটে চলছে…
চুপিচুপি তাদেরকে পিছু করতে থাকে প্রতিশ্রুতি…লোকগুলো চারদিক তাকিয়ে একটা বাসার ভেতরে ঢুকে পড়লো…প্রতিশ্রুতি এক দৌড়ে সেই বাসাটার কাছে যায়…বাসার সামনে একটা আধখোলা জানালা !!
জানালাটা দিয়ে উঁকি মারতেই যা দেখতে পেলো নিজেকে স্থির রাখতে পারলো না প্রতিশ্রুতি!!
—হে, সৃষ্টিকর্তা। এটা কি দেখছি আমি ।এতো প্রথম…. ও এখানে কি করছে??
প্রথমের বেশভূষা সম্পূর্ণ অন্যরকম।সেই ছিমছাম, সাদামাটা, সহজ সরল প্রথমের সম্পূর্ণ উল্টো এর সবকিছু…..কিন্তু গলার স্বর, সেটা তো আর পাল্টালো সম্ভব নয়। প্রতিশ্রুতি স্পষ্ট শুনতে পেলো ভেতরে প্রথম কিছু একটা বলছে।
এই দৃশ্য দেখে ভয়ে পা কাঁপতে লাগলো প্রতিশ্রুতির….তার মানে ও যেটা ভাবছে সেটা সত্যি…. এই সবকিছুর সাথে প্রথম জড়িয়ে।
লোকজন চলে আসাতে ঐ জায়গা থেকে সরে পড়লো প্রতিশ্রুতি।কারণ ও চায় না প্রথম দেখে ফেলুক ওকে বা সন্দেহ করুক।তারপর সোজা নিজের বাসায় চলে আসলো!সারাটা পথ যে কিভাবে জার্নি করে এসেছে একমাত্র সেই জানে…
বেডরুমের দরজাটা খুলতেই যেন মাথায় বাজ পড়লো তার…!!!প্রথম একটা ম্যাগাজিন হাতে বিছানার ওপরে শুয়ে আছে….!!!পাশেই একটা চায়ের কাপ।
—একি তুমি …. এই তোমার বিকেলে আসা হলো….????
(পরম নিশ্চিন্ত মনে নিজের স্ত্রীর উদ্দেশ্য প্রশ্ন ছুড়ে মারলো প্রথম, ওর কথায় খানিকটা অভিমান মাখা!!)
চলবে!!!