#প্রথম_প্রতিশ্রুতি
পর্ব—-০৮
মূল ভাবনা।কাহিনী।নির্মাণ : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।
চিঠিটা খুলতেই দেখলো ভেতরে কয়েকটা লাইন লেখা :
“দুইশ উনপঞ্চাশ টা ডান!!আর একটা মাত্র রেপ বাকি।তবেই আড়াইশো হবে।আর এটাই হবে আমার জীবনের শেষ রেপ।আর সেটা তোমার দ্বারা পূর্ণ হতে চলেছে।তৈরী থেকো।”
লেখাগুলো পড়ে ভয়ে আর আতংকে হাত পা কাঁপতে লাগলো প্রতিশ্রুতির।চিঠিটা কে পাঠালো তার কাছে।তার কোনো নাম বা ঠিকানা উল্লেখ নেই।তবে যেই পাঠাক না কেন সে যে একজন ভয়ানক সাংঘাতিক লোক এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
হঠাৎ প্রতিশ্রুতির মনে হলো কেউ যেন ওর সামনে এসে দাঁড়ালো।মূহুর্তেই চমকে উঠলো সে….
—-কি হলো,এতো সকালে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে কি করছো??
—নাহ!কিছু না……
—কিছু না মানে…..???
—এমনি এলাম…..
—আচ্ছা,তোমার হাতে কি ওটা…..????
(সর্বনাশ!!এবার প্রথমকে কি উত্তর দেবে প্রতিশ্রুতি!এই চিঠিটা কিছুতেই দেখানো যাবে না ওকে।)
—-না,,কিছু না…..
—-কিছু না বললেই হলো,আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি একটা চিঠির মতো কিছু আছে তোমার হাতে….
—আরে এটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না,,ছেড়ে দাও।
—ঠিক আছে দেখাও আমাকে….
—হ্যাঁ,দেখবো ।তার আগে বলো তো গতকাল রাতে কোথায় গিয়েছিলে তুমি….??
—গতরাতে গিয়েছিলাম মানে…. কোথায় যাবো আমি??
—দেখো আমি কিন্তু কেয়ার টেকারের কাছ থেকে জেনেছি গেটের চাবিটা তোমার কাছেই ছিলো।আর সকালে এসেই দেখতে পেলাম গেটটা খোলাই আছে।তার মানে কি দাঁড়ালো।
(প্রতিশ্রুতির মুখ থেকে কথাগুলো শোনার পরে যেন একপ্রকার ঘাবড়ে গেলো প্রথম)
—তুমি কি সন্দেহ করছো আমায় কোনো কারণে…??
—নাহ,তোমায় সন্দেহ কেন করবো আমি।শুধু এটুকুই জানতে চেয়েছি রাতে কোথায় গিয়েছিলে তুমি…. তুমি তো জানো গতরাতে একটা ধর্ষণ হয়েছে আমাদের এলাকায়।
—হ্যাঁ,নিউজে দেখলাম। কিন্তু রাতে কোথাও যাইনি আমি।গেটটা আমি কিছুক্ষণ আগেই খুললাম।ইন ফ্যাক্ট সার্থক বেরিয়েছিলো জগিং করতে।তুমি তো জানো ও সকালে জগিংএ বের হয়।আজ একটু আগেই বের হয়েছিলো মনে হয়।
এবার কাগজটা দেখাও….
—আচ্ছা,,আগে বাসায় চলো,,পরে দেখাচ্ছি। এবার চলো…..
প্রতিশ্রুতি নিজের স্বামীকে কোনোরকম একটা বুঝ দিয়ে বাসায় নিয়ে গেলো।প্রথমকে এই চিঠিটার ব্যপারে কিছুই বলতে চায় না সে…তবে সমস্যা আরো বাড়তে পারে। আগে সে জানতে চায় চিঠিটা ঠিক কে পাঠিয়েছে,, কার ইন্ধন আছে এই ব্যপারে……
কিন্তু যাই হয়ে যাক না কেন….. মন থেকে ভয়টা যেন কিছুতেই কাঁটছে না প্রতিশ্রুতির।না জানি কখন কি হয়ে যায়।একটা অজানা বিপদের আশংকায় প্রহর গুনতে হচ্ছে তাকে।।
–
–
–
–
এভাবে সারাটা দিন কেটে গেলো…..রাতের বেলা।প্রায় দেড়টার দিকে ঘুম ভেঙে গেলো প্রতিশ্রুতির।হঠাৎ মনে হলো ও নিজের বাড়িতে নেই…. একটা গাড়ির ভেতরে আছে সে আর গাড়িটা চলছে……
সবকিছু একটা দুঃস্বপ্নের মতো মনে হতে লাগলো প্রতিশ্রুতির কাছে।কিন্তু না,,ধীরে ধীরে বুঝতে পারলো যা ঘটছে সব সত্যি।কেউ প্রতিশ্রুতিকে একটা ট্যাক্সিতে বন্দী করে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আর কে নিয়ে যাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না সে….
প্রতিশ্রুতি এটাও বুঝতে পারছে ওকে অজ্ঞান করা হয়েছিলো,,আর অজ্ঞান করেই গাড়িতে তোলা হয়েছে।।চিৎকার করবার মতো শক্তি টুকু পাচ্ছে না সে এই মূহুর্তে।
গাড়িটা অনেকখন পরেই থেমে গেলো…..দুজন অপরিচিত লোক এসে প্রতিশ্রুতিকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিলো…. তারপর একটা বাসার ভিতরে চলে যায়।
জায়গাটা বেশ পরিচিত লাগছে প্রতিশ্রুতির কাছে…..এতো সেই ঘরটা যেখানে প্রথমবার ধর্ষণ করা হয়েছিলো তাকে…..তার মানে আগেরবার যে ব্যক্তি ধর্ষন করেছিলো তাকে এটা তারই কাজ।তবে….কি সকালবেলা চিঠিটা এখান থেকেই এসেছিলো!??
—কেউ আছো…… আমার কথা শুনতে পাচ্ছো কেউ….. কেন নিয়ে এসেছো আমায় এখানে….???
(চিৎকার থেকে বলতে থাকে প্রতিশ্রুতি… কিন্তু চারপাশ থেকে কোনো উত্তর এলো না…)
—কি হলো,কথা বলছেন না কেন…. দেখো আমার সাথে চালাকি করার চেষ্টা করো না একদম…আমি জানি তুমি একজন সিরিয়াল রেপিস্ট।দিনের পরে দিন মেয়েদের ধর্ষণ করে তুমিই তাদের খুন করছো।কেন করছো এগুলো….????কি উদ্দেশ্য তোমার…??আমার সামনে এসো….???!
(হঠাৎ একটা পরিচিত গলার আওয়াজ ভেসে আসলো ঘরের বাহির থেকে…. )
—এই তুমি এতো কথা বলছো কেন… চুপ করবে??কি ভেবেছো তোমার চিৎকার চেঁচামেচি শুনে কেউ সাহায্য করতে ছুটে আসবে তোমায়।যদি তাই ভেবে থাকো তবে ভুল করছো তুমি!
—কে….. কে তুমি…. আমায় এখানে নিয়ে এসেছো কেন তুমি???
(লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বলে প্রতিশ্রুতি)
—আমি তোমাকে নিয়ে আসিনি।যা করার আমাদের বস করেছে।আর একটু অপেক্ষা করো…. তিনি একটু পরেই চলে আসবে।
—বস…..কে বস তোমাদের…..????
—সেটা নিজেই দেখতে পাবে…. অবশ্য যদি তিনি চান।তবে হ্যাঁ….শুধু এইটুকু জেনে রাখো তোমার সাথেও সেটাই হতে চলছে যা বাকিদের সাথে হয়েছে।নিজের চরম সর্বনাশের জন্য অপেক্ষা করতে থাকো….
ভয় আর আতংকে প্রতিশ্রুতির প্রান ওষ্ঠাগত প্রায়।ওর অনুমান তার মানে সত্যি।ভয়ংকর কিছু ঘটতে চলেছে প্রতিশ্রুতির সাথে….
প্রতিশ্রুতি জানে না কে ওকে নিয়ে এসেছে ওখানে…. আর ও নিজের বাড়ি থেকে অজ্ঞান অবস্থায় গাড়ির ভেতরে চলে আসলো এটাও জানা নেই।প্রথমদের বাড়ি থেকেই তাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে… এটা তো ঠিক। কিন্তু প্রথম…. সার্থক… অন্যান্য লোকজন এরা কোথায় ছিলো তখন..বাসার এতো মানুষদের চোখের আড়াল থেকে অন্য কেউ এসে প্রতিশ্রুতিকে কিডন্যাপ করলো কিকরে???বিশেষ করে প্রথম!!??কিছুই মাথায় ঢুকছে না প্রতিশ্রুতির।
একটু পরে দরজার বাইরের সেই লোকটা আবারো বলে উঠলো….
—এইতো বস এসে গেছেন….বস এসে গেছেন আমাদের!!
প্রতিশ্রুতির কানে রুমের দরজাটা খোলার শব্দ কারোর কানে ভেসে আসলো… সাথে পায়ের আওয়াজ ।ভীষণ পরিচিত যেন সেই পায়ের আওয়াজ তার….!!!
চলবে…