প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব -২৩

#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
(২৩)(প্রেমময় অধ্যায়❤️)

রাত ১০ টা ২৫,আদৃতের মন ভালো নেই,আঁখির কথা মন থেকেই সরাতে পারছে না,আজকে আঁখির মন খারাপ হওয়ার কারণ নিজেকেই মনে হচ্ছে, আদৃত তো নাও পারত আঁখির সাথে এভাবে কথা বলতে।তবে আঁখিই বা কেন তাকে এমন করে ধিক্কার দিলো!কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না আদৃত,কিন্তু এমন সময় সে কিছু বুঝতেও চায় না,তার মন যে আঁখির সন্নিকটে যাওয়ার যুদ্ধে জয় লাভে উঠে পরে লেগেছে, কালো রঙের একটা শার্ট, হাতে ঘড়ি পরে নিল,তারপর চুলগুলো ঠিক করে সদর দরজা দিয়ে বেড়িয়ে যাবে তখন সামনে প্রকট হলো রিংকি।

″আরে কোথায় যাচ্ছো আদৃত?আসার পর থেকে তো ভালো করে কথাটাও বলো নি,একটু বসো না।″

″রিংকি আমার আর্জেন্ট কাজ আছে তাই যেতে হবে তুমি নিজের রুমে যাও।″

″কী শুরু করেছ? আসছি থেকেই তো রুমে বসে আছি কোথাও তো ঘুরতেও নিয়ে গেলে না, তোমার দেশে অতিথি আসলে না কি এমন করে লোক?″

″সমস্যা নেই, কালকে মা বাবার সাথে করে বেড়িয়ে আসো কোথাও,আমি এখন চলি।″

″আদৃত কথা শুনো।″

আদৃত আর না দাঁড়িয়েই চলে গেল।রিংকি অভিমানে নাক মুখ কুঁচকে নিল মুহুর্তে।

তখন আদৃতের পরিবারের বাকি সবাই সেখানেই বসে গল্পগুজব করছিল,শায়েলা মির্জা এবার বেশ বড়সড় হাসি দিয়ে বললেন।

″রিংকি মা কালকে রেডি থেকো–আমরা সবাই মিলে আমার এক বান্ধবীর বাসায় যাবো নে,কেমন।″

″কথাটা শুনে রিংকির কুঁচকানো চেহারা আরও কুঁচকে গেল,কোনোরকমে জবাব দিলো।″

″দেখি,গেলে বলব।″

অতএত নিজের রুমে চলে গেলো,শায়েলা মির্জা ফিক করে হেসে দিলেন।

″শায়েলা তুমিও না,এমনটা কেনো করো বলোতো ওর সাথে?″

″তো ওর সাথে করব না তো কার সাথে করব!ছেলের ঘাড়ে পে**ত্নি চড়বে আর আমি চড়তে দিব!″

″মা তুমিও না।″

″খবরদার ইশিকা আমার শাশুড়ি মাকে কিছু বলেছ তো,আমি কিন্তু মায়ের টিমে।″

″তোমাকে নিয়েও আর পারা গেল না।দেখো না রিংকি না আবার তোমাদের দু’জনকে কোনো ইনজেকশন দিয়ে পৃথিবীর বাইরে পাঠিয়ে দেয়।ভুলে যেও না ডাক্তার ও।″

কথাটা শুনে সবাই একে ওপরের দিকে তাকিয়ে হেঁসে দিল।

আঁখির ফোনে কল আসলো গার্ড ফায়সালের।

″ম্যাম ডা.আদৃত এসেছেন,তাকে কি ভিতরে আসতে দিব?″

″অবশ্যই, উনাকে পাঠিয়ে দিন।″

অল্পসময়ে কলিংবেল বেজে উঠলে আঁখি নিজেই এগিয়ে গেল দরজা খুলতে,দরজা খুলেই দেখতে পেল নিচে বেশ বড়সড় একটা কেক রাখা,যাতে লিখা শুভ জন্মদিন হিটলার,আঁখি পিছন মুড়ে দেয়ালের ঘড়িতে দেখতে পেলো রাত ঠিক ১২ টা বাজে তখন,দরজার সামনের নিচের পুরো জায়গা জুরে হরেক রঙের বেলুন শোভা পেয়েছে,চোখ তুলে সামনে তাকিয়ে দেখল তার গার্ড সহিত আদৃত হাতে বেলুন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,সবাই একসাথেই বলে উঠল।

শুভ জন্মদিন ম্যাম।

ওদের এমন অবস্থা দেখে আঁখি হেসে দিল।সবাইকে ধন্যবাদ জানাল।

এবার আঁখি হেসে কেকটা উঠিয়ে নিলো,অতঃপর গার্ডেরা নিজেদের অবস্থানে চলে গেলে আদৃতকে আঁখি ভিতরে আসতে বলল।

আঁখি খুশিমনে বলল আদৃতকে।

″ধন্যবাদ ডাক্তার সাহেব।″

″সরি…″

″কেনো? ″

″দিনে এভাবে তোমার সাথে কথা বলা হয়ত ঠিক হয় নি।″

″সেটা তো ওভাবে কথা বলার আগে ভাবা উচিৎ ছিল আপনার।এখন আর মাফ চেয়ে কি লাভ?কেন এসেছেন আপনি?চলে যান,আমার আপনাকে দেখতেই মন চাইছে না।″

″আঁখি এসব কি বলছ তুমি!আসলেই আমি দুঃখীত।″

″তো আমি কি করব আপনার দুঃখীত দিয়ে, মাথায় দিব না পায়ে পরব।যত্তসব। ″

আঁখির কথা শুনে আদৃত অসহায়ের মতো তাকিয়ে রইল,আদৃতের দিকে বেশ খানিক সময় রূঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফিক করে হেসে উঠে বলল।

আপনি সেই আসত ঢেঁড়সই রয়ে গেছেন,একটুও বদলান নি,এমন এক আধটু কথার জন্য কেউ সরি বলতে আসে।একসময় তো সরির স ও বলতে চাইতেন না সে কি দম্য,আর আজকে এক ক্ষমা না পাওয়ার বদলে কেমন নিরামিষ চেহারা উপস্থাপন করলেন আপনি মুহুর্তেই। হা হা হা হা…

আঁখি তো হাসতে হাসতে নেই,আদৃত পলকেই বিলীন হলো তার হাসিমাখা মুখের মায়ায়,কতদিন পর সে মুক্তঝরা হাসি দেখার সৌভাগ্য হলো তার।

আদ্রিশ রিয়াদের জানাযা পরেই চলে এসেছিল বাড়িতে,প্রিয় বন্ধুর মৃ*ত্যু*তে আজ অনেক জল জড়িয়েছে চোখের,মাথাটা অনেক ধরেছে তাই চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে চিৎ হয়ে।মাথায় ঘুরছে তখন আদৃতের বলা আঁখিকে নিয়ে কথাগুলো,মনে জন্মেছে অসীম ভয়,আঁখিকে যদি আদৃত আবার ছিনিয়ে নেয় তবে সে কি করবে এবার?হঠাৎ নিচ থেকে রিদিকার কান্নার শব্দ শুনে তাড়াহুড়োয় বেড়িয়ে এলো আদৃশ।এসে দেখল রিদিকা নিজের চুল তার মায়ের হাত থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে,দৃশ্যটা সহ্য করতে না পেরে আদ্রিশ হুংকার দিয়ে বলল।

মা এসব কি করছ!ছাড়ো ওকে।

আদ্রিশ এগিয়ে গিয়ে তাকে ছাড়াবে তার আগেই রিদিকা নিজেকে ছাড়িয়ে নিল।আদ্রিশ এবার গর্জে বলল।

তোমার সাহস হলো কি করে মা রিদিকার চুলে হাত দেওয়ার?

″বাবা ও অভিনয় করছে,ও নিজে থেকে আমার হাত দিয়ে এমনভাবে ধরেছিল যে মনে হয়েছে আমি ধরেছি।″

″মিথ্যে বলো না মা,রিদিকা বলো কি হয়েছে?″

″কিছু হয় নি তুমি যাও।″

″রিদিকা বলো,তুমি না বললেও আমি জেনে নেওয়ার অন্য রাস্তা বের করে নিব,তাই বলো জলদি,কি হয়েছে?″

লুকানোর আর কোনো রাস্তা নেই এমন ভাব নিয়ে রিদিকা বলে ফেলল।

আসলে আজকে আদিল ভাইয়া যখন বাইরে যাচ্ছিলেন তখন কিছু টাকা দিয়ে আমি আমার প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস আনতে বলেছিলাম,ভাইয়া সবার বলা জিনিস আনলেও আমার গুলো আনলেন না,আর যখন জিজ্ঞেস করলাম কেনো আনলেন না তখন বললেন উনি আমার চাকর না কি যে আমার বলা জিনিস উনি আমার কথামতো নিয়ে আসবেন।
আমি তখন বললাম,আমি আপনাকে চাকর ভাববো কেনো?ছোট বোন হিসেবে অধিকার মনে করে বলেছি।
এমনটা ভাববেন জানলে আমি উনাকে কখনও নিজের জিনিস আনতে বলতাম না।
কথাগুলো শুনে এসেই মা আমার চুল মুঠো করে ধরলেন।
আমি না কি মুখে মুখে তর্ক করি,ফকিন্নির মেয়ে হয়ে বড় বড় কথা বলি।

″রিদিকা সব কিছু মিথ্যে বলছে আদ্রিশ,ওর কথায় আসিস না।″

″খবরদার ভাইয়া আর একটা কথা বলেছ তো আমি ভুলে যাব তুমি আমার বড় ভাই হও,তোমাদের সায় দিয়ে আমি মাথায় তুলেছি,তোমরা কী ভেবেছ তোমরা যা তা করবে আর আমি মেনে নিব, নো ভাইয়া,ভুলে যেও না তোমরা সবাই আমার টাকায় খেয়ে পরে আছো তাই আমার স্ত্রীর সাথে সামনে থেকে ব্যবহারটা ঠিক করে করবে আশা করি।নয়ত তোমাদের সাথে সব সম্পর্ক ত্যাগ করতে বাধ্য হব আমি
কখনও এমনটা ভাবি নি আর এমন করে কথা বলিও নি কিন্তু আজ তোমরা আমায় তা করতে বাধ্য করলে।″

″রিদিকা আজ থেকে তোমার যা চাই তুমি আমাকে বলবে নয়ত কাজের লোক দিয়ে আনিয়ে নিবে,ওপরের খেয়ে পরে এদের গায়ের চামড়া মোটা হয়ে গেছে তাই মনুষ্যত্ব গুলিয়ে খেয়েছে,চলে এবার কক্ষে।″

আদ্রিশ রিদিকাকে নিয়ে চলে গেলে তিনজোরা অশ্রুশিক্ত চোখ তাকিয়ে রইল তাদের দিকে।

আঁখি কেকটা টেবিলে রাখবে কিন্তু তার আগেই হাত থেকে ভুলবশত কেকটা ফ্লোরে পরে গেল,আঁখি জিহ্বায় কামড় দিয়ে আদৃতের দিকে তাকাল,অতঃপর অসহায়ের মতো মুখ বানিয়ে বলল।

সরি, ডা.সাহেব।

আদৃত গুমরো মুখ করে বলল।

তুমি একটুও বদলাও নি,মিস প্যারা ছিলে আর প্যারাই আছো।

আঁখি এবার চট করে একটা বড় হাসি মুখে টাঙিয়ে বলল।

আমি আপনার জন্য মিস প্যারা থাকবও সারাজীবন দেখে নিবেন আপনি।এবার পেঁচার মতো মুখ করে না থেকে চলুন কেক বানাই।

আঁখি আদৃতের হাত ধরে কিচেনের দিকে টেনে নিয়ে যেতে শুরু করল।আদৃত ৬ বছর পূর্বে আঁখির সাথে কাটানো সে মুহুর্তগুলোতে চলে গেছে এক পলকেই।ক্ষণগুলো তো এমনই ছিল।

আজ আঁখির জন্মদিন, আজকের দিনে কতরকম ভাবে আঁখিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাত আদ্রিশ,কতভাবে ভাবে উদযাপন করত আর আজকের এই দিনেই সে আঁখির বি*র*হ দ*হ*ণে পোঁড়ছে,ইচ্ছে করছে তার উড়ে চলে যেতে আঁখির কাছে,পাশেই শুয়ে আছে রিদিকা,অসম্ভব সুন্দরী এক রমণী,কিন্তু আজ তার এতো পাশে থেকেও তার প্রতি তেমন কোনো টান অনুভব করছে না যেমনটা আঁখি পাশে থাকলে করত আদ্রিশ প্রতিনিয়ত,কি করবে আদ্রিশ,সবকিছুই তো অসহ্য লাগছে তার।

আঁখি কেক বানাচ্ছে আর আদৃত ধ্যান ধরে দেখে যাচ্ছে তাকে,হঠাৎ আঁখি বেশ খানিক চকলেট আঙুল দিয়ে আদৃতের নাকে মেখে দিল।তারপর হেসে বলল।

″এই যে চোখা নাকওলায়া,এভাবে কারো দিকে হা হয়ে তাকিয়ে থাকা ঠিক না।ঠিক সময়ে বিয়ে হয়ে গেলে দোষটা চলে যেত আপনার।″

″এই যে,তুমি আমার চরিত্রে কি দোষ দেখেছ?″

″বাহ রে, আমি চরিত্রে দোষ কখন বললাম?কথায় আছে না চোরের মনে পুলিশ পুলিশ। ″

″তুমি কিন্তু আমায় আবার কথার জালে ফাঁসাচ্ছ। ″

″কেউ ফেসে গেলে আমি কী করব?হা হা হা হা।হয়েছে হয়েছে এখন আর নিরামিষ চেহারাটাকে আর নিরামিষ বানাতে হবে না,কেকটা হোক ততসময় আমরা ছাঁদ থেকে ঘুরে আসি,মনে হয় বৃষ্টি আসবে।″

আঁখি আদৃতের হাত টেনে নিয়ে এবার ছাঁদের দিকে হাঁটা ধরল।

মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছে,হনহনিয়ে বহমান হাওয়া যেন শীতের আগমণ বাণী দিয়ে যাচ্ছে,শীতল পরিবেশে উষ্ণতার ছোঁয়া পেতে দুই নর নারী যেন একে ওপরকে বেঁছে নিল প্রেমময় আশ্রয় হিসেবে,আঙ্গাঙ্গি হয়ে দু’জন দাঁড়িয়ে আছে,উপছে পরছে দু’জনের গরম নিশ্বাস একে ওপরের উপর,এতোটা কাছে এসে আর যে দূরে যাওয়ার মনোভাব গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছে না,আজ যেন সবকিছুই তাদের মধুরমিলনের আশ রেখে বসে আছে,আজ পরিবেশটাও যেন তাদের মনের তালে তাল মিলিয়ে দোলে ওঠেছে,আর কি চাই দুই প্রেমিক হৃদয়ের ভালোবাসার অতলে তলানোর জন্য,তাই আর দেরি করতে চাইল না সে প্রেম পিয়াসু দুটি মন,অধরে অধর জমিয়ে দিল আঁখি–আদৃত নামক যুবক ও রমণী।

সাথে সাথেই হকচকিয়ে ঘুম থেকে উঠল আদ্রিশ,খারাপ সপ্ন দেখেছে সে,আঁখি আদৃত কি*স করছিল মুহুর্তটা চোখের সামনে থেকে সরছেই না,নিশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আসছিল তার তখন,সপ্নে যাদের একসাথে দেখতে পারছে না সত্যতে তাদের এভাবে দেখার কথা তো ভাবতেও পেরে ওঠে না।পাশ ফিরে তাকাল এবার রিদিকার দিকে,অগোছালো হয়ে শুয়ে আছে সে,শরীরের বিভিন্ন জায়গা উন্মুক্ত,কিন্তু আদ্রিশের আজ যেন কোনো মোহ নেই তার প্রতি,আঁখিকে হারানোর ভয় বুকে যেন কা*ম*ড় দিয়ে বসেছে।

দেখতে দেখতেই বৃষ্টি নেমেছে,মনের আনন্দে বৃষ্টিতে ভিজছে আঁখি,আদৃত ওকে বার বার ভিতরে চলে আসতে বলছে তবে কে শুনে কার কথা।

″এই আঁখি,ভিতরে আসো জ্বর আসবে।″

″পারলে এসে নিয়ে যান দাদু মশাই।″

″তুমি এভাবে আসবে না তো।″

″না।″

″দাঁড়াও আসছি।″

অতঃপর আদৃত এগিয়ে গিয়ে আঁখিকে টেনে ভিতরে আনতে গেলে আঁখি ওকে উল্টো জব্দ করে বসল, আদৃত একদিকে তাকে টানলে আঁখি অপরদিকে তাকে টানতে লাগল,টানাটানিতে দু’জনই ছাঁদে পরে গেল,আঁখি খিল খিল করে হেসে উঠে বলল।

″আপনি আগেও আমার সাথে পেরে ওঠেন নি আর এখনও পারেন না কথাটা মানতেই হবে।″

″তোমার সাথে তো আমার দাদাও পেরে উঠবেন না।″

আঁখি এবার হেসে আদৃতকে টেনে তুলল,অতঃপর নিজের মতো ভিজতে লাগল,আদৃত শুধু তার দিকে বিমোহিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে মনে মনে বলতে লাগল।

তুমি মোটেও বদলাও নি আঁখি,আমাদের মধ্যকার সম্পর্ক বদলে গেলেও তুমি আমার সেই আঁখিই এখন রয়ে গেছো,যার সাথে কিছুসময় পার করলে যে কেউ তার প্রেমে পরবে সেই রমণীকে নিজের করে পেয়েও কীভাবে হাতছাড়া করল আদ্রিশ!একেই বলে হয়ত কারো পৌষ মাস তো কারো সর্বনাশ,পৌষমাসটা আমার কপালে অবশেষে জুটল যা আমি আর কখনও হারাব না আর,সর্বনাশটা না হয় আদ্রিশেরই থাকল,তোমাকে এবার নিজের করে নেওয়ার সকল পন্থাই অবলম্বন করব আমি আঁখি,তুমি যে শুধুই আমার।

অনেক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজে দু’জন ঘরে চলে আসলো,তবে আদৃত কি পরবে,বাড়িতে কোনো ছেলে মানুষের কাপড় তো নেই,ভিজে বেড়ালের মতো আদৃত সামনে দাঁড়িয়ে আছে আর আঁখি নখ কামড়ে ভেবে যাচ্ছে কি পরাবে আদৃতকে, হঠাৎ মনে পরল তার কাজের লোক রহমত এর কথা,ঘরে দু’জন কাজের লোক রহমত আর আরেকটা মেয়ে কাজ করে,রহমত মিয়াকে জিজ্ঞেস করল এবার আঁখি।

″রহমত চাচা আপনার কাপড় আছে তো?″

″হো মা,তইলে শার্ট থাকলেও প্যান্ট নাই,আমি তো লুঙ্গি পরি।″

কথাটা শুনে আঁখি দাঁত কেলিয়ে এবার আদৃতের দিকে তাকাল,আদৃত ভালো করে চিনে আঁখিকে,তাই ঝটপট বলে উঠল।

″একদম না।আমি ভিজে কাপড়ে থাকব সমস্যা নেই,বাড়ি গিয়ে চেঞ্জ করব।তাছাড়া আমি কখনও লুঙ্গি পরি নি।″

″জীবনে পরেন নি আজকে পরে নিবেন সমস্যা কই?রহমত চাচা থাকতে আপনি কষ্ট করবেন কেনো?চাচা আপনার একটা লুঙ্গি শার্ট সহিত নিয়ে আসুন তো।″
কথাটা বলে আঁখি মুখ চেঁপে হাসতে লাগল।

আজ তিন বছর, আঁখির জন্মদিন নামক এই দিনটায় বিষাদ ছেঁয়ে থাকে খান ম্যানশনে,জন্মদিনে কতো হৈ-হুল্লোড় করে বেড়াত আঁখি পুরো খান ম্যানশনে,সবার কাছেই তার হরেক ধরনের আবদার থাকত,দুষ্টুমি, ফাজলামোতে মশগুল রাখত সবাইকে সারাদিন,এই ঘরের মানুষ থেকে জড়বস্তু, কীটপতঙ্গ অব্দি যেন প্রায়ই আঁখির শোকে শোকায়িত হয়ে থাকে,বাড়িটা যে প্রাণহীন আজ তিন বছর ধরে আঁখি ব্যতীত।
আশরাফ খান মেয়ের এই জন্মবার্ষিকীতেও না খেয়ে ঘুমিয়ে পরার চেষ্টায় মগ্ন হয়ে আছেন,প্রতিবছর জন্মদিনে যে মেয়ে বাবার হাতে খাওয়ার আবদার করে বসত সে বাবার গলা দিয়ে এমন দিনে খাবার কি করে নামবে,মা মিসেস তাহমিনা খানও নিরবে কান্না করছেন।আহিলও না খেয়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আঁকাশের চাঁদের পানে তাকিয়ে আছে একধ্যানে,তখন কাঁধে হাত রাখল তার প্রিয়তমা স্ত্রী মাইশা,আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা সে।

″কি হলো ঘুমোবে না।″

″কি তুমি এখনও ঘুমোয় নি?″

″তুমি না ঘুমোলে কি করে ঘুমোবো?″

″ঘুম আসছে না লক্ষীটি, তুমি ঘুমিয়ে পরো,তোমার এভাবে বেশি রাত জেগে থাকা ঠিক না।″

″একটা আবদার করব?রাখবে বলো?″

″বলো কি চাই তোমার?″

″আঁখিকে ফিরিয়ে নিয়ে আসো।″

″তা কখনও সম্ভব না।″

″কেনো সম্ভব না?″

″ও আমাদের নিজের ইচ্ছেতে ছেড়ে চলে গেছে।″

″আর তোমরাও তো যেতে দিয়েছ?কখনও আটকাতে চেয়েছ ওকে?″

″কেন আটকাব,ওর কাছে তো আমাদের থেকে ওই আদ্রিশ তখন বড় ছিল।আজ তার মাসুল কিভাবে ওকে দিতে হয়েছে দেখেছ?″

″ও তো ছোট মানুষ ভুল করে গেছে, তোমরা কি পারতে না ওকে ক্ষমা করে মেনে নিতে?আমরাও তো ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম,আমি গরীব ছিলাম বলে বাবা তো প্রথমে আমাদের বিষয়ে মানছিলেন না তখন আঁখিই আমাদের সাহায্য করেছিল,আমাদের হয়ে বাবাকে বুঝিয়েছিল,আর ওর সময় তুমি কি করলে বলো?ওকে ওর ভালোবাসার মানুষটাকে ছেড়ে দিতে বললে!″

″ছেড়ে দিতে বলেছি কারণ আদ্রিশ ওর জন্য ঠিক ছিল না।″

″তোমার জন্য ঠিক ছিল না কিন্তু ওর জন্য তো ছিল,চাইলেই কি কেউ কারো প্রতি তার ভালোবাসার অনুভুতি মুহুর্তেই মেরে ফেলতে পারে আহিল?আর যেখানে কথা রইল আদ্রিশের বিশ্বাসঘাতকার সেখানে একটাই কারণ, হয়ত আল্লাহ আঁখির কপালে আদ্রিশকে লিখেন নি তাই কারণবশত সে তার জীবন থেকে সরে গেছে,কোনো নিশ্চয়তা ছিলো কি তোমাদের পছন্দ অনুযায়ী আঁখি বিয়ে করে নিলে তার সাথে এমনটা ঘটত না,এসব ভাগ্যের ব্যপার আহিল এসবে এতো যুক্তি খাটালে তো হবে না,তাও আঁখি এখন নিজের ভুল বুঝতে পারছে এখন না হয় তোমাদের ওকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিৎ, এমনটা করে যেমন আমরা কেউ ভালো নেই তেমন হয়ত আঁখিও ছটফট করে আমাদের জন্য।″

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here