প্রহেলিকা পর্ব ৩৮+৩৯

#প্রহেলিকা
#পর্ব_৩৮
#আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা

(অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ)
———————–

বাতাসে বৃষ্টির আভাস। ক্ষণে ক্ষণে গর্জে উঠছে মেঘ। যেকোনো মুহুর্তেই ধরণীকে নিজস্ব বারিধারায় ভিজিয়ে দিতে প্রস্তুত। এ যেন বর্ষাকাল আগমনের পূর্ববর্তী বার্তা। বারান্দায় দাঁড়িয়ে কালো মেঘে মোড়ানো আকাশের দিকে অনিমেষ চেয়ে আছে ইনশিতা। চোখের পলকটাও পড়ছে না তার। মনের মধ্যে খুশির বৃষ্টিরাও তা ধিন ধিন শব্দ তুলে ঝরে পড়তে চাইছে। আজ তার খুশির দিন। সবচেয়ে বেশি খুশির দিন। এখন আর কোনো ভয় থাকবে না। থাকবেন না জেহেরকে খুইয়ে ফেলার আতঙ্ক। শঙ্কামুক্ত জীবন শুরু করতে যাচ্ছে সে।

টুপটাপ বৃষ্টির ফোঁটারা পড়ছে। সন্ধ্যের হিম হিম বাতাস সাথে বৃষ্টির ছাঁট ইনশিতার মনে অন্যরকম সুর তুলছে। চোখেমুখ সহ গলার বেশ খানিকটা বৃষ্টির ছাঁটে ভিজে গেছে। ইনশিতা তাকালো বাম হাতে ধরা চিঠিটার দিকে। সে হাসছে। এই চিঠিটাই তার আনন্দের মূল উৎস। চোখের সামনে আরেকবার চিঠিটা মেলে ধরল। তারপর বৃষ্টির মধ্যে ধরল। ধীরে ধীরে চিঠিটা ভিজে কালো কালিগুলো মিশে গিয়ে নিমিষেই সাদা কালো রঙের কাগজে পরিণত হলো। এখন আর বোঝা যাচ্ছে না কোনো লেখা। তারপর চিঠিটাকে টুকরো টুকরো করে বৃষ্টির মধ্যে ছেড়ে দিলো।

এই মুহুর্তে আনন্দে উদযাপন করতে ইচ্ছে করছে বড্ড। ছাদে গিয়ে একবার বৃষ্টিতে ভেজা যাক! এক মুহুর্তও নষ্ট করল না সে। বারান্দা থেকে দৌড়ে গিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠল। ছাদের দরজা পার হতেই থেমে গেল সে। ইয়া বড় বড় কতগুলো গার্ড ছাদের কার্ণিশ ঘেঁষে ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। জিহাদের পালানোর খবর শুনেই জেহের বাড়িটাকে ফুল সিকিউরিটিতে রেখেছে। পুরো বাড়ি জুড়ে কত শত গার্ডসদের যে হিড়িক পড়েছে! জেহের কোনো রিস্ক নিতে চায় না তার রোজকে নিয়ে। জেহেরটাও কী যে! এখন তো আর কোনো গার্ডসদের প্রয়োজন নেই। এখন আর তাকে তো হারিয়ে ফেলার ভয়ও থাকবে না। কীসের কারণে? জিহাদের? সে তো এখন আর নেই। তাহলে? ইনশিতা মৃদু হাসে।

লাফাতে লাফাতে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে যায় সোজা জেসমিন চৌধুরীর ঘরে। জেহের তাকে বলেছে সে ছাড়া আর কোনো ছেলের সামনে না যেতে। তাই গার্ডসের সরাতে জেসমিন চৌধুরীর সাহায্যের প্রয়োজন। ত্যাড়া গার্ডসরা কিছুতেই যাচ্ছিল না। তাদের কথা হলো স্যারের কথা ছাড়া এক পাও নড়বে না। পরে তাদেরকে চাকরি নট করার হুমকি দিয়েই নিচে নামালেন জেসমিন চৌধুরী।

পুরো ছাদ খালি হতেই ইনশিতা দৌড়ে চলে যায় ছাদে। বিশাল বড় ছাদ। এক কোণায় অ্যাটাচড চেয়ার আর গোল টেবিল। আরেক কোণায় বিভিন্ন প্ল্যান্টস। ছাদের চারপাশে বিভিন্ন শেডের গোল গোল বাতি জ্বালানো। ইনশিতা গিয়ে সেগুলো অফ করে দিলো। চিলেকোঠার টিমটিমে আলো জ্বালিয়ে দিলো। হলুদ ম্লান আলোয় ছাদের আংশিক আলোকিত এখন। আর আংশিক নিকষ কালো আঁধারে ঢাকা।

ঝুমঝুম করে বৃষ্টির ধারা বাড়ছে। মাঝে মাঝে আকাশ আলোকিত হয়ে চমকে উঠছে বিদ্যুৎ। ছাদের মাঝখানে গিয়ে আকাশের দিকে মুখ করে চোখ বন্ধ করে আছে সে। পুরো শরীর ভিজে একাকার। ইনশিতার মুখে এখনো লেপ্টে আছে সেই প্রাণকাড়া মুচকি হাসি। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ধীরপায়ে সে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল ছাদের কার্ণিশে। এখান থেকে আবছাভাবে দেখা যাচ্ছে টুকরো টুকরো চিঠির অংশ। যেই চিঠিটা তার মনের মাঝে আগত ভয়, আতঙ্ক, সংকোচ মুহুর্তেই ধূলিসাৎ করে দিয়েছিল।

আজ বিকেলে হঠাৎ পরিচারিকা এসে তার হাতে এই চিঠিটা ধরিয়ে দিয়েছিল। বাহির থেকে কোন গার্ড নাকি পরিচারিকাকে দিয়ে তাকে দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছে। পরিচারিকাকে বিদায় দিয়ে সে দরজা আটকে ভ্রু কুঁচকে চিঠিটাতে চোখ বুলায়। বেশ লম্বা একটা চিঠি। হঠাৎ কে-ই বা তাকে চিঠি পাঠাবে?

গুটি গুটি অক্ষরে সম্বোধনের জায়গায় লেখা, প্রিয়তমা। ইনশিতা কৌতুহল দমাতে না পেরে পড়তে শুরু করে।

প্রিয়তমা আমার,

জানি এখন তুমি আমার প্রিয়তমা আর নেই। হয়ে গেছ অন্য কারো। অথচ আমি দুটো বছর ধরে তোমাকেই মনে মনে আমার প্রিয়তমা বলে জেনে এসেছি। মনটা হঠাৎ করেই সেই ডাক বদলাতে পারল না। বদলাতে পারবে কিনা সেটাও জানিনা। একটা কথা জানো? আমি কিন্তু সেই প্রথম থেকেই তোমাকে নিয়ে নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলাম। আমার জীবনটা তিক্ত ছিল প্রচুর। প্রতিদিন সকলের সামনে ভালো থাকার অভিনয় করে যেতাম, ভালোবাসার অভিনয় করে যেতাম। হিংসা, রাগ, ক্রোধ আমাকে জ্বলে পুড়ে ছারখার করে দিতো প্রতিটা মুহুর্ত।সেই ক্রোধের উপর ছায়া পড়লো তোমাকে দেখার পর। তোমায় নিয়ে হিংসাবিহীন, ক্রোধবিহীন, ভালোবাসাময় জীবনের স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু পরে, তোমাকে পেয়েও না পাওয়াটা পুনরায় তীব্র ক্রোধের আগুনে ঘি ঢেলে দিলো। নতুন করে জ্বলতে থাকলাম রোষানলে। সে যাই হোক, তোমাকে একটি চমৎকার খবর দেওয়া আছে? গেস করতে পারছো কী? নিশ্চয়ই ভাবছো কোনো প্ল্যানকেই আমি চমৎকার বলছি? উহু, এটা কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের চমৎকার। আমি চলে যাচ্ছি ইনশিতা। দূরে…তোমার থেকে বহু দূরে চলে যাচ্ছি। এমন দূরে যাচ্ছি যে, হয়তো কোনোদিন খুঁজে পাবে না। আর এও জানি যে খোঁজার চেষ্টাও করবে না। আমি কিন্তু এখন আর কোনো প্ল্যান-ম্ল্যান করছি না। সত্যি কিন্তু। আমি ভুল করেছি। ভুল বুঝতেও পেরেছি। তুমি যদি আমাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে আমার ভালোবাসার জায়গাটা চিনিয়ে না যেতে তাহলে হয়তো এই ভুলটা আজীবন করে বেড়াতাম। আমার ভালোবাসাটা আসলেই নোংরা তাই না? আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি তা। কিন্তু বিশ্বাস করো, তোমার মুখ থেকে আমার ভালোবাসাটাকে নোংরা বলা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আমার ভালোবাসাটা বিশুদ্ধ ছিলো প্রায় দুবছর ধরে। তারপর আমাকে এমন পাগলে পেয়েছে যে…থাক, ওদিকে আর না যাই। তোমাকে জেহের কতটা ভালোবাসে আমি জানি না, তবে তুমি যে জেহেরকে কতটা ভালোবাসো সেটা বুঝতে পারছি। নাহলে দেখো না, তুমি তো পারতেই জেহেরকে ছেড়ে আমার কাছে আসতে, আমি তো জেহেরের মতোই দেখতে তাই না! যেখানে তোমার ভালোবাসা পুরোটাই আমার মতো অবিকল দেখতে জেহেরকে ঘিরে সেখানে আমিই বা তোমাকে ছিনিয়ে নিয়ে কী করবো বলো? আমি আর তোমাদের ভালোবাসাময় জীবনে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবো না, প্রমিস। আমি আর তোমার আর জেহেরের লাইফে ইন্টারফেয়ার করবো না, প্রমিস। আমি কখনোই আর তোমাদের কোনো ক্ষতি করতেও চাইবো না, প্রমিস। দূরে থেকেও কখনো তোমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টাও করবো না, প্রমিস। তোমাদের জন্য অমঙ্গল কামনা করবো না, প্রমিস। দূরে থাকলেও তোমাকে কখনোই ভুলবো না, প্রমিস। তোমার স্মৃতি নিয়ে আজীবন বেঁচে থাকবো, প্রমিস। আর তোমাকে…শুধু তোমাকেই ভালোবেসে যাবো, প্রমিস। যতগুলো প্রমিস করেছি সবগুলো মেনে চলবো, প্রমিস।

এই ইতুপাখি, ভালোবাসতে না-ই পারো, মন থেকে ক্ষমা করবে কী? দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিও ইতুপাখি। নাহলে যেভাবে অনুতাপ নিয়ে বেঁচে আছি পরে হয়তো তাও পারবো না। আমার একটা শেষ কথা রাখবে? আমার ভালোবাসাকে আর নোংরা করে দেখো না প্লিজ। আমার ভালোবাসা সত্যিই নোংরা নয়…ভালোবাসা পাওয়ার পদ্ধতি ভুল থাকলেও ভালোবাসাটা বিশুদ্ধ ছিলো। চলে যাচ্ছি। সারাজীবনের জন্য। কোথায় যাচ্ছি বলবো না কিন্তু। ভালোবাসি শুধু এটুকুই জেনে রেখো। ভালোবেসেছিলাম, ভালোবাসি এবং ভবিষ্যতেও বাসবো।

ইতি
তোমার চোখে একজন অমানুষ।

চিঠিটা পড়ে ইনশিতার হাত কাঁপছিল প্রচুর। শরীরটাও থেকে থেকে কেঁপে উঠছিল। খুশিতে নাকি দুঃখে সেটা সে নিজেও বুঝতে পারছিল না। তবে তার মনে খুশির ভাগটাই বেশি লাফঝাঁপ করছে, এটা সে টের পেয়েছিল। তাই খুশিটাই অগ্রাধিকার পেল বেশি। সবচেয়ে বড় বাঁধা যখন চলে গিয়েছে তাহলে এখন আর কিসের ভয়? ইনশিতা চিঠিটাকে টুকরো করে দিয়েছিল এই কারণেই যাতে জেহের না দেখে। জেহের দেখলে নিশ্চয়ই রেগে যাবে।

আচমকা হেঁচকা টানে ইনশিতার ভাবনার সুতো ছিঁড়ে। হতভম্ব চোখে পেছন ফিরলেই দেখে ভেজা চুপচুপে গায়ে দাঁড়িয়ে আছে জেহের। শক্ত করে ধরে রেখেছে তার হাত। অফিসের ফর্মাল ড্রেসেই এখনো। চিলেকোঠার টিমটিমে আলোয় সে দেখতে পেল জেহেরের রাগী দুটো চোখ, খোঁচা খোঁচা দাড়ি সমৃদ্ধ লালচে গাল, আর কপালের চুল থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়া পানি। এই প্রথম ইনশিতার কাছে কোনো ছেলেকে এতটা মোহনীয় লাগলো। সম্মোহিতের মতো তাকে টানছে‌।

এদিকে জেহেরকে খবর পাঠিয়েছিল তার গার্ড। তারপর হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে সে। রোজকে ছাদে দেখে তার মেজাজ তুঙ্গে। এই ভরসন্ধ্যায় ছাদে আসার কী দরকার? তাও আবার এমন বৃষ্টির মধ্যে! জ্বর বাঁধিয়ে ফেললে? কোনো কাণ্ডজ্ঞান কী নেই মেয়েটার?

বৃষ্টি আরো বেড়েছে। চারপাশের সবকিছু বৃষ্টির কারণে ঝাপসা হয়ে আসছে। জেহের ইনশিতার হাত টানতে টানতে নিয়ে আসে চিলেকোঠায়।

-“হোয়াট দ্যা হেল রোজ? এখন ছাদে আসার মানেটা কী? তোমাকে আমি বারণ করেছিলাম বৃষ্টিতে না ভিজতে। আর গার্ডসদের নিচে পাঠিয়েছ কেন? বলেছিলাম তোমায় আমি নিয়ে না আসা পর্যন্ত ছাদে পা না রাখতে?…”

তিরিক্ষি মেজাজ নিয়ে জেহের আরো এক চোট ধমকায় ইনশিতাকে। ইনশিতা সেই ধ্যানে নেই। আজকে জেহেরের এই রাগটাকেও বড় ভালো লাগছে তার। ইচ্ছে করছে জেহেরকে তার সামনে বসিয়ে গালে হাত দিয়ে তার রাগ দেখে।

জেহের খেয়াল করল রোজ তার কথা কানে নিচ্ছে না একদম। কেমন অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আরেকবার ঝাঁকালো ইনশিতাকে।

-“হোয়াট হ্যাপেন রোজ? কী হয়েছে তোমার?”

ইনশিতা প্রত্যুত্তর না দিয়ে আচমকা জেহেরকে জড়িয়ে ধরল। ফিসফিসিয়ে বলল,

-“আই লাভ ইউ জেহের।”

জেহেরের থমকালো কয়েক মুহুর্তের জন্য। রোজ তাকে এর আগেও ভালোবাসি বলেছে তবে এমন গভীরভাবে এই প্রথম। রোজের ভেজা চুলে আলতো হাত বুলাতে বুলাতে বলল,

-“কিছু হয়েছে রোজ?”

ইনশিতা মাথা উঠিয়ে মোহগ্রস্তদের মতো বলল,

-“লাভ ইউ বলতে কী আবার কিছু হওয়া লাগেনি? আমি আপনাকে খুব খুব খুব ভালোবাসি। পৃথিবী সমান ভালোবাসি, সৌরজগৎ সমান ভালোবাসি। আপনাকে ছেড়ে কোত্থাও যাবো না আমি…”

ইনশিতা কেমন এলোমেলো ভাবে কথাগুলো বলছিল। জেহের ইনশিতাকে চিলেকোঠার ভেতরে নিয়ে এলো। ভেতরে কয়েকটা পুরোনো কাঠের আলমারি আর ফোমের পুরোনো সোফা ছাড়া কিছুই নেই। নিজে বসে ইনশিতাকে কোলে বসালো সে। ইনশিতা কপট অভিমানী গলায় বলল,

-“কী হলো? আমি আপনাকে এত সুন্দর ভাবে আই লাভ ইউ বললাম আর আপনি কিছুই বললেন না? এটা কি ঠিক হলো?”

জেহের জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজালো। সে বুঝতে পারছে আজকে তার রোজের মনটা খুবই ভালো। তাই এমন এমন কথা বলছে। কিন্তু সে জবাবে কী বলবে? ভালোবাসার কথা কীভাবে বলতে হয়? শুধু ভালোবাসি ছাড়া আর কিছুই তো জানে না সে। আসলে তার আবেগময় কথা মুখ দিয়ে আসে না একদম। প্রিয় মানুষকে যে কতরকমের ভালোবাসার কথা বলে সেটা সে জানে না। সত্যি বলতে কী, তার এত আবেগ দিয়ে কথা বলাটা আসলে ভালো লাগে না। কেমন যেন মিথ্যে মিথ্যে মনে হয়। সে সবসময় গম্ভীর হয়েই থাকতে পছন্দ করে। ভালোবাসার কথাটাও গম্ভীর হয়ে তার মুখ থেকে নিঃসৃত হলো।

-“হু, আমিও তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে কারো হতে দেবো না কোনোদিন। কেউ হাত বাড়ালে তার অস্তিত্ব বিলীন করে দেবো। আর তুমি, কোনোদিন আমি ছাড়া কোনো ছেলের দিকে তাকাবে না। ওকে?”

ইনশিতা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। এটা কী ভালোবাসার কথা ছিল নাকি হুমকি? সে যাই হোক, এখন আর এসব ভেবে সময় নষ্ট করবে না। এখন সময়টা খুবই রোমান্টিক। বাহির থেকে ঠান্ডা বাতাস এসে শরীরের সর্বাঙ্গে কাঁপন ধরাচ্ছে। রিমঝিম শব্দে বৃষ্টি নৃত্য করে মধুর আওয়াজ তৈরি করছে। ইনশিতা বলল,

-“একটা গান ধরুন। গিটার নিয়ে আসি?”

জেহের গম্ভীর গলায় বলল,

-“আমি গান জানি না।”

-“আরে, কয়েক লাইনের হলেই হবে। ধরুন ধরুন, ভুল হলে আমি ঠিক করে দেবো।”

-“আমি সত্যি কোনো গান জানি না। এসবের প্রতি কখনোই ইন্টারেস্ট ছিল না যে আলাদা করে শেখার প্রয়োজন হবে।”

-“ধূর! একদমই আনরোমান্টিক আপনি। এখন যদি রাফি…”

ইনশিতা কথাটা বলতে গিয়ে থেমে গেল। সে কী বলতে যাচ্ছিল! এখন তো সে রাফিদের কথাটা কোনো ভাবে মুখ দিয়ে বের হয়ে যেত? জেহের তো তাহলে সিংহের ন্যায় তেড়ে উঠত। দেখল জেহের ইনশিতার কথাটা নিয়ে ভ্রু কুঁচকে ভাবতে বসেছে মাত্র। জেহেরকে ভাবার সময় না দিয়ে প্রসঙ্গ পাল্টাতে সে বলল,

-“আচ্ছা, একটা কবিতা?”

-“নো।”

-“ছড়া? আয় আয় চাঁদ মামা? না, আম পাতা জোড়া জোড়া? টুইঙ্কেল টুইঙ্কেল?”

জেহের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। সে বুঝল রোজ মজা নিচ্ছে। সে ইনশিতাকে নামিয়ে উঠে দাঁড়ায়।

-“চলো, বেশিক্ষণ থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে।”

ইনশিতা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,

-“সাধে কী আর আপনাকে আনরোমান্টিক বলি? সময়-গময় বুঝেন না। এখন আবহাওয়াটা দেখছেন? কী রোমান্টিক! এই সময়ে এক কাপ কফির সাথে গান না হলে চলে বলুন? আচ্ছা সেসব নাহোক, বসে বৃষ্টি দেখাও তো এক ধরনের রোমান্টিরতা। সেটাই করি এখানে বসে বসে। দেখুন, কী সুন্দর বৃষ্টির আওয়াজ! কী রোমাঞ্চিত বাতাস। আর আপনি আসছেন ঠান্ডা নিয়ে। আপনি গেলে যান তো, আমি যাব না।”

ইনশিতা সিঙ্গেল সোফাটাকে টান দিয়ে দরজার কাছাকাছি আনল। পা উঠিয়ে গালে হাত দিয়ে খুব মনোযোগ সহকারে বৃষ্টি দেখতে লাগল। ভাব এমন যেন, এখন বৃষ্টি দেখাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। জেহের চুপচাপ দেখল শুধু। তারপর কোনো কথা না বলেই রোজকে কাঁধে তুলে সোজা রুমে চলে আসলো। ইনশিতার চেঁচামেচিকে কোনো পরোয়াই করল না সে। বাথরুমে ইনশিতাকে নামিয়ে দিলো সে।

-“যাও, চেঞ্জ করে আসো।”

ইনশিতা তখন রাগে বোম। রাগে ফোঁস ফোঁস করে নিঃশ্বাস নিচ্ছে সে।

-“যাও।” জেহের শীতল কন্ঠে হুংকার ছাড়ল।

ইনশিতা ভেতরে ভেতরে ভয় পেলেও শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। এবার জেহেরের নিজেরও খুব রাগ উঠছে। তবে রাগটাকে খুব কষ্টে গিলে দুজনের জামা কাপড় নিয়ে ভেতর থেকে দরজা আটকে দিলো। ইনশিতা বিস্মিত হয়ে প্রায় চিৎকার দিয়ে উঠল।

-“কী আশ্চর্য! আপনি আসলেন কেন? বের হোন। আমি আগে চেঞ্জ করে নিই। নাহলে আপনি চেঞ্জ করুন, আমি অন্য ওয়াশরুমে যাচ্ছি।”

জেহের নির্বিকার ভাবে আবারও ইনশিতাকে কোলে তুলে বাথটাবে ফেলে দিলো।

-“সমস্যাটা কী আপনার? আপনার কথা মতো…”

আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই জেহেরের ভয়ঙ্কর শীতল দৃষ্টি দেখে চুপ হয়ে গেল। সে জানে জেহের খুব রেগে আছে। তাই এখন কথা বাড়িয়ে নিজের বিপদ আনার মানে হয় না। জেহের নিজেও বাথটাবে বসে ইনশিতাকে কাছে টেনে নিলো। রক্ত হিম করা কন্ঠে বলল,

-“কী যেন বললে তুমি তখন?”

-“ক-কখন কী ব-বললাম?”

-“আমি নাকি আনরোমান্টিক?”

-“হ্যাঁ, না মানে না না।”

-“চলো, রোমান্টিকতার ক্লাস নেই।”

ইনশিতা তড়াক করে উঠে দাঁড়াল। ভ্যাবলা হাসি হেসে বলল,

-“কী যে বলেন না আপনি! এখন এই অবস্থায় থাকলে তো ঠান্ডা লেগে যাবে। সেই কখন থেকে ভেজা অবস্থায় আছি কিনা। আপনিও চেঞ্জ করে নিন। চলুন চলুন, ভেজা অবস্থায় থাকলে বুঝলেন, ভয়ানক জ্বর লেগে যাবে। তখন কী হবে বলুন তো, আপনার অফিস কামাই হবে, আমার কলেজ কামাই হবে। দুজনকে সারাদিন খোৎ খোৎ নাক টানতে হবে। মানে যা তা অবস্থা।”

বলতে বলতে ইনশিতা মাথা মুছতে লাগল। আড় চোখে দেখল জেহের বাথটাবে দুহাত ছড়িয়ে আরামে হেলান দিয়ে শুয়ে তাকে দেখছে। ইনশিতার ভেজা জামা শরীরের সাথে আঁটসাঁট হয়ে লেগে পূর্ণ যৌবনের জানান দিচ্ছে। ইনশিতার শরীরের গাঁথুনি চমৎকার। ঠোঁট তিরতির করে কাঁপছে তার। সেই কাঁপা কাঁপা পাতলা কোমল ওষ্ঠাধরে জেহেরের মোহাচ্ছন্ন চাহনি নিবদ্ধ।

.

.

আফজাল ইজিচেয়ারে বসে দুলছেন। কপালে বৃদ্ধ হয়ে যাওয়া চামড়ায় কিঞ্চিৎ ভাঁজ। দুহাতের তালু জোড়ের উপর থুতনি রেখে জানালার বাহিরে তাকিয়ে আছেন। রুমের বাতি বন্ধ। ল্যাম্পপোস্টের আলোতে হালকা আলোকিত তার রুম। বৃষ্টির ছাঁট এসে জানালার পর্দা ভিজিয়ে দিচ্ছে তাও তিনি বিকারহীন। জেসমিন চৌধুরী রুমে এসে জানালা খোলা দেখে তড়িঘড়ি করে জানালা লাগালেন,

-“এ মা! দেখছো না পুরো রুম ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে? চোখে কী পট্টি বেঁধেছিলে নাকি?”

বলতে বলতে তিনি পেছনে ফিরে স্বামীকে উদাসীন দেখলেন। তাকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে। স্বামীর কাঁধে হাত রাখলেন তিনি।

-“তুমি কী জিহাদকে নিয়ে চিন্তা করছো? আবার কোনো ক্ষতি করে ফেলে না এই ভয়ে?”

আফজাল হাত নামালেন। ডানে বামে মাথা মৃদু নাড়াতে নাড়াতে বললেন,

-“জিহাদ আর কোনো ক্ষতি করবে না।”

-“তুমি এত নিশ্চিত হচ্ছো কীভাবে?”

আফজাল সেই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বললেন,

-“ছেলেটার জন্য আমি কোনোদিন কিছুই করতে পারিনি। আজ যখন আমার কাছে একটু ভালো থাকার জন্য অনুনয় করল, আমি আর না করতে পারিনি। ভালো থাকতে পাঠিয়ে দিলাম তাকে।”

জেসমিন বিস্ফোরিত নয়নে তাকাল,

-“তার মানে তুমি…”

-“কী করতাম আর? শেষ জীবনে এসে ছেলেটার জন্য কিছু করে দেওয়ার সুযোগ পেলাম, সেটা দূরে ঠেলে দেই কী করে বলো? তবে নিশ্চিত থাকো। ছেলেটা আর কারো ক্ষতি করবে না। সবাইকে কষ্ট দিয়ে সে নিজেও কিন্তু ভালো থাকেনি। এখন যখন একটু ভালো থাকতে চায়…”

আফজাল দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। জেসমিন চৌধুরী তাকালেন স্বামীর দিকে। রাস্তার নিয়নের আলোয় তিনি ঠিকই দেখতে পেলেন স্বামীর ভাঙ্গা গালে চিকচিক করছে জল।

.
.
চলবে…
#প্রহেলিকা
#পর্ব_৩৯
#আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা

(অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ)
———————–

বিকেলে ইনশিতা সুইমিং পুলে পা ডুবিয়ে বসে আছে। আকাশে বৃষ্টি নেই, তবে যখন তখন এসে পড়তে পারে। কেউ দেখলে বলবে না যে এখন বিকেল, একদম সন্ধ্যার মতো সময়টা। বাতাসে কেমন মিষ্টি গন্ধ। ঝিরিঝিরি বাতাস গায়ে মাখিয়ে নীলচে কালো আকাশের নিচে বসে থাকতে মন্দ লাগছে না। গতকালই জেহের এই রিসোর্টে নিয়ে এসেছিল তাকে। ইনশিতা জানে না কেন। পুরোটা ভাড়া করেছে সে। এখান থেকে সমুদ্রের গাঢ় নীল পানি স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। বড় বড় ফেনীল ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরে। আকাশ আর সমুদ্র মিলন দৃশ্য দেখে ইনশিতার চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে।

মনটা ছটফট করছে এক্ষুনি ছুটে গিয়ে সমুদ্রের বুকে ঝাঁপ দিতে। তবে যেতে পারছে না সে। জেহেরের কড়া আদেশ সে ছাড়া যাতে সমুদ্রের দিকে পা বাড়ানোর ভুল না করে। তাই পুলের নীল পানিতে পা ডুবিয়েই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর চেষ্টা করছে সে।

ইনশিতা মাথা বাড়িয়ে একটু উঁকি দিলো। কালো চশমা আর শার্ট প্যান্টে ফিমেল গার্ড তাকে দূর থেকে নজর রাখছে এখনো। ইনশিতা আরো কিছুক্ষণ থেকে রুমের ভেতর চলে গেল। রুমটাও বেশ বড়। বিছানা থেকে দেয়াল সব সাদা রঙের। এতক্ষণ বসে থেকে কী করবে? জেহের আবার কোথায় গেল?

বসে থেকে কোনো কাজ না পেয়ে রুমে অ্যাটাচড করা টিভি চালিয়ে দিলো। চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে হুট করে একটা চ্যানেলে চোখ আটকে গেল। ইনশিতার হৃৎস্পন্দন দ্রুত গতিতে ছুটে চলছে। সে দৌড়ে এসে টিভির সামনে দাঁড়াল। চোখ বড় বড় করে দেখতে লাগল সে। টিভির বড় পর্দায় দেখাচ্ছে Chris Hemsworth কে। ইনশিতা বলে বোঝাতে পারবে না এই লোকটাকে সে কত্ত পছন্দ করে। এই একটা সিরিয়াস ক্রাশ খেয়েছিল সে জীবনে। একটা মুভিও সে বাদ দেয়নি তার, সবগুলাকে কতবার যে রিপিট করে দেখেছে সে নিজেও জানে না।

Chris Hemsworth এর পরিধানে একটি হাফ প্যান্ট ব্যতীত কিছুই নেই। তার সিক্স প্যাক বডি দেখে ইনশিতা বারবার লজ্জিত হচ্ছে। সে বারবার চোখ বন্ধ করে লাজ রাঙা মুখ নিয়ে আড় চোখে দেখছে আবার। যেন সে এখন তার সামনেই দাঁড়ানো। ইনশিতা দিন দুনিয়া ভুলে টিভির পর্দায় একধ্যানে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে ঐ হ্যান্ডসাম বডিটা। পারে না তো টিভির মধ্যে ঢুকে যায়। সে ঠোঁট কামড়ে দুষ্টু চাহনিতে তাকিয়ে বলল,

-“উফফ! মাহ্ হটিনটি বয়!”

এক পর্যায়ে সে টিভির পর্দায় চুমু দেওয়া শুরু করে দিলো। জেহের মাত্রই রুমে ঢুকেছে। রোজের বলা কথাটিও সে শুনে নিয়েছে। সামনের দিকে তাকাতেই সে হতভম্ব হয়ে যায়। রোজ টিভির সামনে দাঁড়িয়ে চুমু খেয়ে যাচ্ছে কৃত্রিম কাঁচের ওপারে বলিউড অভিনেতার উপর। চকিতেই তার চেহারায় হতভম্ব ভাব ছাপিয়ে ফুটে ওঠে তীব্র ক্রোধ আর রাগ। এতদিন রোজকে চোখে চোখে রেখেছে যাতে কোনো ছেলের দিকে ফিরেও না তাকায় আর এখন তো দেখা যাচ্ছে ঘরেই শত্রু অবস্থিত। নিমিষেই জেহেরের কপালের রগ দপদপ করে জ্বলে উঠল। ফর্সা মুখ হয়ে উঠল লাল। মাথার চুল টেনে ধরল। নিজেকে যতই বুঝ দিচ্ছে যে এটা সাধারণ ব্যাপার ততই ভেতরের মনটা হিংস্র হয়ে উঠছে। কিছুতেই মানতে চাইছে না। রোজ সে ছাড়া আরেকটা ছেলেকে চুমু খাচ্ছে? যতই কৃত্রিম কাঁচ হোক। সামনে পেলেও নিশ্চয় এমন করতো? হটিনটি বলেছে? সে ছাড়া অন্য কোনো ছেলের দিকে তাকাবে কেন? হোক সে অভিনেতা। ছেলে তো! জেহের আর নিজেকে কন্ট্রোলে রাখতে পারল না।

দরজা আটকে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে ইনশিতাকে কোলে তুলে সোজা খাটে ছুঁড়ে ফেলল। আচমকা আক্রমনে ইনশিতা হতভম্ব। সে বুঝতে পারল না তার সাথে এই মাত্র কী হলো। জেহের শান্ত দৃষ্টিতে একবার টিভিটার দিকে তাকাল। তারপর হুট করেই ফ্লাওয়ার ভেস নিয়ে টিভির মুখোমুখি মারতেই মুহুর্তেই চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেল। ইনশিতার পুরো বিষয়টা বুঝে উঠতে খানিক সময় লাগল। জেহের ফোঁস ফোঁস করতে করতে ইনশিতার সামনে এসে দাঁড়াল। ইনশিতা উঠতে চাইলে তাকে আবার ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হলো।

-“কী করছেনটা কী?”

জেহের উত্তর না দিয়ে পরনের হোয়াইট শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করল। তার চোখমুখে রাগ উপচে পড়তে চাইছে। শার্ট খুলে ছুঁড়ে মারল দূরে। ইনশিতা চোখ ছানাবড়া করে তাকিয়ে রইল শুধু। জেহের কী করতে যাচ্ছে? খাটে উঠে ইনশিতার সামনে নিজের সিক্স প্যাক বডিকে মেলে ধরল। গজরাতে গজরাতে বলল,

-“কী বলেছিলে? হটি? দেখো, আমাকে দেখো? হট মনে হচ্ছে? হু? কী, মনে হচ্ছে না হট?”

জেহের ইনশিতার দুগাল ধরে নিজের শরীরের সামনে ধরল। ইনশিতা চোখ বড়বড় করে রইল। এতক্ষণে সবটা বুঝেছে সে। তৎক্ষণাৎ সে চোখ বন্ধ করে ফেলল। ইনশিতার বলতে লজ্জা পেলেও সে স্বীকার করতে বাধ্য যে জেহের আসলেই হট। তবুও জেহেরের খোলা দেহ দেখতে তার প্রচণ্ড লজ্জা করে। ইনশিতার শ্বাস দ্রুত ওঠানামা করছে। মাথা ঝিমঝিম করছে। টিভিতে তো লাজ শরম ভুলে দেখা যায়, কিন্তু সামনাসামনি? তার সামনে জেহেরের হ্যান্ডসাম আর ফর্সা বডি মেলে থাকলেও সে তাকাতে পারছে না লজ্জায়। কান দিয়ে মনে হচ্ছে তার ধোঁয়া বের হবে। একবার আড়চোখে তাকিয়ে দ্রুত চোখ বন্ধ করে ফেলল। জেহের তো…আসলেই…ক্রিসের চাইতেও বেশি হ্যান্ডসাম। এতদিনে ভালোভাবে লক্ষ্য করল সে। এত হ্যান্ডসাম তার হাজব্যান্ড! তা ভাবতেই আরো লজ্জারা পেয়ে বসল তাকে। চারপাশে কী আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে? নাহলে এত গরম লাগছে কেন? সো হটটটট!

-“চোখ খোলো রোজ।”

ইনশিতা তাও চোখ খিঁচে বন্ধ করে আছে। জেহের দাঁত কিড়িমিড়িয়ে আবার বলল,

-“আই সেইড ওপেন ইওর আই’জ ড্যাম।”

তবুও ইনশিতার নড়চড় নেই। জেহের ইনশিতার মুখ ছেড়ে দিলো। ইনশিতা তখনো চোখ বন্ধ করে আছে। হঠাৎ তার চোখে মুখে ঘাড়ে ঠান্ডা স্পর্শ পেতেই চোখ খুলল সে। তাকিয়ে দেখল জেহের তার দুহাত শক্ত করে ধরে তাকে চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছে। বহু কষ্টে ইনশিতা বলল,

-“জ-জ-জেহের…”

জেহের মুখ তুলে ঠোঁট চেপে ধরে বলে,

-“এটা তোমার শাস্তি। যতক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখবে ততক্ষণ এই শাস্তি ভোগ করতে হবে।”

ইনশিতা আশ্চর্যান্বিত হয়ে থেমে থেমে বলল,

-“চোখের পলক তো এমনিও পড়ে।”

-“বললাম না, যতবারই চোখ বন্ধ ততবারই…”

কথা শেষ না করেই সে আবারো একই কাজ করতে লাগল। ইনশিতা চোখ খুললেও লজ্জায় পড়বে, চোখ না খুলেও লজ্জায় পড়ছে। তবুও…তার ভালোই লাগছিল জেহেরের উষ্ণ ছোঁয়া পেতে। এমন করে অনেক সময় কেটে যাওয়ার পর জেহের আকস্মিক আবার হুংকার দিয়ে উঠল। ইনশিতাকে ছেড়ে তার সামনে হাটু গেঁড়ে বসল। ইনশিতার মুখ তখন লজ্জায় লাল। চোখ তুলে তাকাতে পারছে না সে। জেহেরের হুংকার শুনে সামনে তাকাল সে। জেহের বাঁকা হেসে বলল,

-“হট তো হলাম। এবার নাহয় নটি হয়ে দেখাই। হটিনটি বয়?”

বলেই সে প্যান্টের বোতামে হাত দিলো। ইনশিতার মনে হয় নিঃশ্বাসটাও আটকে গেছে তার। জেহের কী করবে বুঝতে পেরে দ্রুত জেহেরকে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে সে দৌড়ে বাথরুমে চলে গেল। বুক দুরুদুরু করে কাঁপছে তার। ইশ! জেহের পাগল হয়ে গেল নাকি? কী করতে যাচ্ছিল? ইনশিতা দ্রুত মুখ ঢেকে ফেলল।

ইনশিতাকে চলে যেতে দেখে জেহের বাঁকা হাসল। সেই বাঁকা হাসি ঠোঁটে ফুটিয়ে রেখেই বাথরুমের দিকে এগোতে এগোতে বলল,

-“ইওর হটিনটি বয় ইজ কামিং বেবিগার্ল। গেট রেডি ফর পানিশমেন্ট।”

.
.
চলবে…

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here