#প্রিয়_তুই
#নূরজাহান_আক্তার_আলো
#পর্ব_২৫
পরদিন সকালে সারার ডে/ড বডি তিতাসদের বাসায় এসে পৌঁছাল। পাড়া-পড়শীরা উঁকি দিয়ে দেখলেও কেউ এগিয়ে আসলেন না। পরে তিতাস মাদ্রাসার কয়েকজন মহিলাদের এনে সারার গোসল সম্পূর্ণ করল। তারপর এতিমখানার শত শত ছেলেদের এনে সারার জানাযায় শরীক করল। কাছের আত্মীয়-স্বজন কেউ আসলেন তো কেউ মুখ ফিরিয়ে চলেও গেলেন। তবুও তিতাস কাউকে কিছু বলল না। আজ ভোরের দিকেই ওর মায়ের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। উনি সারার কথা শুনে শুধু এইটুকু বলেছেন,’আমার মেয়েটাকে দেখার একটু সুযোগ করে দাও।”
পরে তিতাস তার মা ও ভোরকে নিয়ে বাসায় চলে এসেছে।
তাদের হসপিটালে রেখে ভরসা পাচ্ছিল না। যেভাবে ওদের ক্ষতি করার চেষ্টা করা হচ্ছে তাতে রিক্স নেওয়াটা বোকামি।
তারপর সারার দাফন কাজ সম্পূর্ণ করা হলো। ধীরে ধীরে সবাই চলেও গেল। শুধু সাড়ে তিন হাত মাটির নিচে সারায় চিরনিদ্রায় শায়িত রইল। তার এই ঘুম আর কখনো ভাঙ্গবে না, কখনো না। এতিমখানার ছেলেগুলোর জন্য খাবারের এবং বস্ত্রের সু-ব্যবস্থাও করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে তিতাস। এখন ক’ব র স্থান ফাঁকা।শুধু তিতাস আর ওর বাবা
সেখানে বসে নীরবে অশ্রু ঝরিয়ে দোয়া করল সারার জন্য।
পিয়াসের ক’ব র জিয়ারত করতেও কেউ ভুললেন না। এর
ঘন্টা দু’য়েক পরে তিতাস ওর বাবাকে নিয়ে বাসায় ফিরল।
পুরো বাসা থমথমে রুপ ধারণ করেছে। গুমোট ধরে আছে পরিবেশে। আবহাওয়াতেও কেমন গুরু গম্ভীর ভাবটা স্পষ্ট।
এভাবে সারাদিন কেটে রাত ঘনিয়ে এলো। ঘড়ির কাটা ঘুরে
এখন রাত দশটার ঘরে। সময় যেন দ্রুত বেগে ছুটে চলছে।
এরপরও কেউ চাচীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারলেন না।
তিতাসের বাবার লকার ভাঙা দেখে যা বোঝার উনারা সব বুঝে নিয়েছেন। রোজাকেও নিয়ে গেছেন তিনি। ভোর অসুস্থ শরীরে সকলের খাবারের ব্যবস্থা করল। তারপর তিতাসকে দিয়ে পাঠাল ওর বাবা-মাকে সামান্য কিছু হলেও খাওয়াতে।
ওর খুব শরীর খারাপ করছে। সে চুপচাপ শুয়ে চোখজোড়া
বুজে নিলো। আর তিতাস বিনাবাক্যে উঠে গেল ওর বাবার রুমে।
___________★_★___________
বর্তমানে বিলাশ বহুল এক বাসায় অবস্থান করছেন শাহিনা। পাশের রুমে শুয়ে শুয়ে রোজা কাঁদছে। মেয়েটা হুইলচেয়ার থেকে পড়ে গেছে।পানির পিপাসায় সে মেঝেতে শুয়ে ছটফট করছে। মা! মা! করে এতবার ডেকেও কোনো লাভ হচ্ছেনা।
শাহিনার প্রেমিকও শাহিনাকে উঠে যেতে দেয় নি। শারীরিক মিলনে উন্মাদ তারা দু’জন। বাচ্চা মেয়েটার করুণ আতনার্দ তাদের কানে পৌঁছালেও তারা গুরুত্ব দিচ্ছে না। পরে নাহয় গিয়ে দেখবে। তাদের পাশেই পড়ে রয়েছে মোটা-সোটা বড় একটা ফাইল। সেখানে তিতাসের বাবার সম্পত্তির দলিলপত্র আছে। শাহিনা আসার সময়ই ক্যাশ টাকাসহ এগুলো সঙ্গে এনেছে। তাছাড়া উনি আর সেখানে ফিরবেন না। তবে রেখে এসে কী হবে? এতদিন অনেক ভালো সেজে সকলের কথায় নেচেছেন, তবে আর নয়। এবার নিজের কথা ভাবার সময় এসে গেছে। আর শাওন মরেছে ভালো হয়েছে। সে তো ছিল একটা গুঁটিমাত্র। সারা ওকে না মারলে সেই মে/রে ফেলতো।
তবে সারাকে মারার সময় উনার বেশ মজা লেগেছে। একটা শত্রুকে মে/রে প্রাণে প্রশান্তির ছোঁয়া পেয়েছেন। আহা, প্রাণ জুড়িয়ে গেছে। তবে আফসোস ভোর আর উনার জা নাকি ম/রে নি। সত্যি বাবা এদের কৈ মাছের প্রাণ। নয়তো বাঁচার কথা না। ধুুর সব কষ্ট বৃথা গেল। ভোর মর/লে তিতাসের বড় বড় লোকচার অন্তত বন্ধ হতো। ছেলেটা উনাকে বড্ড বেশিই
ভুগিয়েছিল। তবে কাজের কাজ কিচ্ছুই হাসিল করতে পারে নি। তাকেও ধোকা দিয়ে ঠিকই ঘোল খাইয়ে ছেড়েছে। তবুও
এই ছেলের শিক্ষা হয় নি, উনার পেছনে লোক লাগিয়েছিল।
ভাগ্যিস সেদিন ডাক্তারের কাছেই গিয়েছেন, নয়তো কী যে হতো। এছাড়াও কেউ কী কখনো জানবে উনার কথা শুনেই সারা ভুল পথে পা বাড়িয়ে ছিল। ওকে বাসা থেকে যেতে উনি সাহায্য করেছিলেন। এমনকি ডাক্তারের কাছে যাওয়ার নাম করে সারার কাছে গিয়ে লাখ লাখ টাকা আনতেন। বিনিময়ে সারাকে ওর মায়ের হাতের রান্না খাবার দিয়ে আসতে হতো।
একবার সারা ওর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিল। পরে উনি সারাকে থুথু মেশানো খাবারও খাইয়েছিলেন। আর মেয়েটা
মায়ের হাতে রান্না পেয়ে খুশিত গদগদ হয়ে খেয়েছিল। এই কাজ উনি প্রায়ই করতেন, মনে শান্তি পেতেন। যদিও একথা আর কখনো প্রকাশিত হবে না। হওয়াও তো সম্ভবনায় নেই।
আর সারা কীভাবে যেন উনার প্রেমিকের কথাটা জেনেছিল,
এবং উনাকে থ্রেট দিয়েছিল সবাইকে জানানোর। এই জন্যই ওকে ম/র/তে হলো। আহারে বেচারা সারা।
সেদিন দুপুরের ঘটনা,
শাওন প্রায় সারার বাসায় অন্য উদ্দেশ্যে আসত। তবে সারা কখনোই তার সঙ্গে ইন্টিমেন্ট হতে চায়নি। কিন্তু শাওন ওকে ছাড়ত না, ছ্যা’চ’ড়া’র মতো পেছনে লেগেই থাকত। সেদিনও সে সারার বাসার সেই কারণেই এসেছিল। সারা প্রচন্ড অসুস্থ ছিল আর বাসা ফাঁকা পেয়ে শাওন জোরপূর্বক ওর উদ্দেশ্য
হাসিল করার চেষ্টা করো। সেই মুহূর্তে শাহিনা সেখানে পৌঁছে এসব দেখেও চুপ থাকে। বরং শাওনকে উৎসাহিত করে তার কাজ করার। শাওনও নিজেকে সিংহ প্রমাণ করতে তাই’ই করে। পরে সারা শাওনের বুক বরাবর লাথি মেরে ওকে নিচে ফেলে দেয়। তারপর ঝটপট উঠে দাঁড়িয়ে ফল কাটার ছু/রি
তুলতেই শাওন তাকে থাপ্পড় মেরে বিছানায় ছুঁড়ে মারে এবং ধর্ষণ করে। শাহিনার কল আসায় সে সারার সবুজ রঙের রং সারার মুখ গুঁজে পাশের রুমে চলে যায়। এরপর ইচ্ছে মতো প্রেমালাপ চালিয়ে এই রুমে দেখে সারা শাওনের বুকে ছু/রি বসিয়ে বদ্ধ পাগলের মতো কুঁ/পিয়ে যাচ্ছে। শাওন ততক্ষণে
মারা গেছে। শাহিনার নিঃশব্দে ঢুকে আস্তে করে ফুলদানিটা তুলে আঘাত করে সারার কাঁধে। সারা মুখ থুবকে পড়ে যায়।
তারপর শাহিনা তাকে ইচ্ছে মতো ঠোঁটে, বুকে, পেটে আঘাত করে। এতেও শান্তি পাচ্ছিলেন না তাই ফিনাইল এনে সারার মুখে খুলে জোর করে খাওয়ান। পরক্ষণেই সারার মুখ দিয়ে সাদা ফ্যানা বের হতে থাকে এবং নিস্তেজ হতে থাকে। তখন উনি সবুজ রঙা ওড়না দিয়ে সারাকে শ্বাসরোধ করে মে/রে
অ’ র্ধ’ ন’গ্ন অবস্থায় দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসিয়ে রাখেন। এবং সারার লকার থেকেও টাকা গয়না যা পেয়েছেন নিয়ে এসেছেন।যদিও ভেবেছিলেন একদিনে সব কয়েকটা পথের কাটাকে মে/রে ঝামেলা মুক্ত হবেন। কিন্তু আফসোস হলো না, ভোর ও তিতাসের মাকে কড়া ডোজের ওষুধ খাইয়েও কাজ হলো না, তারা বেঁচে গেল। তবে এটাই এর নয় খেলা
এখনো বাকি।
_________★_★________
সারা মারা যাওয়ার তিন সপ্তাহ পর তিতাসের জোড়াজুরিতে
উনারা এই বাসাটা ছেড়ে দিলো। কারণ শাহিনা তাদের নামে কেস করেছে। উনাকে নাকি মানসিক ও শারীরিকভাবে খুব অ’ত্যা চা/র করা হতো। এত অ’ত্যা’চার সহ্য করতে না পেরে উনি বাধ্য হয়ে বাসা থেকে পালিয়ে গেছেন। উনি এখন এই বাসার দখল চান। স্বামীর অবর্তমানে মেয়েটাকে নিয়ে বেঁচে থাকা আশ্রয় চান। এই একটা সপ্তাহে এসব ঝামেলায় বাকি সদস্য অতিষ্ঠ। পরে, তিতাস রেগেই ওদের আরেকটা ফ্ল্যাটে বাকিদের নিয়ে উঠেছে। গোছগাছের কাজও শেষ। তিতাস জেদ করেই আরো একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।এজন্য ভোর ওর সঙ্গে কথা বলা বন্ধ রেখেছে। তিতাস ওদের রুমে এসে দেখে ভোর বেলকণিতে দাঁড়িয়ে আছে। সে বেলকণিতে গিয়ে খুব সন্তপর্ণে ভোরকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
-”আমার চাঁদের মুখখানা মলিন কেন, হুম?”
-”ছাড়, ভালো লাগছে না।”
-”শরীর খারাপ?”
-”না।”
-”মন খারাপ?”
-”না।”
-”তবে?”
-”ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নকে এভাবে নষ্ট করিস না তিতাস, প্লিজ
। জীবনটা ছেলেখেলা নয়। কেন করছিস পাগলামি বল না? আগামীকাল পরীক্ষা আছে যা পড়তে বস।'”
-”না, বলেছিই তো পরীক্ষা দিবো না। বাবার ব্যবসা দেখভাল করবো। ভয় পাচ্ছেন নাকি, আপনার ভরণপোষণ ঠিকঠাক ভাবে দিতে পারব না ভেবে?”
ভোর আর নিজের রাগ সামলাতে না পেরে তিতাসকে থাপ্পড় মেরে বসল। তারপর তিতাসের টি- শার্টের কলার ধরে রুমে নিয়ে গিয়ে বিছানায় বসাল। এরপর বই এনে হাতে ধরিয়ে পড়তেও ইশারা করলো। কিন্তু তিতাস বই রেখে উঠতে গেলে ভোর পুনরায় তাকে আঁটকালো। নিজেকে সামলে তিতাসকে
সাধ্যমতো বোঝাল। কিন্তু তিতাস গোঁ ধরে পা বাড়াতেই ভোর তার পায়ের উপর উঠে তিতাসের নিচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরে রাখল। তিতাস ছড়াতে চায়লেই সে দাঁত বসিয়ে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে ভোর নোনতা কিছুর স্বাদ পেলো।বোধহয় র/ক্ত বেরিয়ে গেছে। তবুও সেও রাগ নিয়ে সেভাবেই দাঁত বসিয়েই রাখল।
তিতাস আর না পেরে ভোরকে এক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ঠোঁট চেপে ধরল। তখন ভোর ওর ঠোঁটে লেগে থাকা র/ক্ত মুছতে মুছতে বলল,
-”এবার বল, পরীক্ষা দিবি না?”
-”ভোর আমাকে রাগাবেন না বারবার কিন্তু ছাড় পাবেন না।”
-”কি করবি, ইন্টিমেন্ট হবি? তো আয় বাঁধা দিবো না আমি। তবুও তোকে পরীক্ষা দিতে হবে মানে দিতে হবেই।”
তিতাস ঠোঁটটা চেপে ধরে সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইল। মুখে তার বিরক্তির ছড়াছড়ি। এসবের মানে হয়? তখন ভোর দুই পা এগিয়ে বিনাসংকোচে সরিয়ে ফেললো তার শাড়ির আঁচল।
তখন তিতাস ভোরের চোখে চোখ রেখে বলল,
-”যা করছেন ভেবে করুন। আমি কিন্তু আজ পিছ পা হবো না। কড়ায় গন্ডায় বুঝে নিবো আমার পাওনা।”
To be continue………………!!