#প্রেম
#সিজন ২
#অন্তিম পর্ব
#Tanisha Sultana (Writer)
মিষ্টিরা মিষ্টিদের দেশের বাড়ি চলে এসেছে। এখন থেকে মিষ্টির কলেজ মিষ্টির বাবার অফিস মা ভাইয়ের স্কুল অনেকটা দুর হয়ে যায় বলে ওরা ওখানে থাকতো। মিষ্টি মাএ একটা এক্সাম দিয়েছে। আর দেওয়া হবে না।
নিজের রুমে জানালার গ্রিল ধরে সামনের বাড়ির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি জীমের কথা ভাবছে। “জীম এখন কি করছে? চাকরিতে জয়েন করেছে তো? না কি পাগলের মতো খুঁজছে? জীম কি ওর রুমে এসে আমার রুমে উঁকি মারে? আমাকে না দেখতে পেয়ে সিগারেট মদ এগুলো খায় না কি আমার কথা ওর মনেই পড়ে না?
মিষ্টি এসব ভাবছে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে মিষ্টির। এটাই কি ভালোবাসা? ভালোবাসার মানুষটা এতো দুরে আছে তবুও প্রতিনিয়ত তাকেই অনুভব করছে।
” মিষ্টি
মিষ্টি চোখের পানি মুছে মায়ের দিকে তাকায়
“হ্যাঁ মা বলো
” খেতে আসো
“খাবো না
” তোমার বাপি ওয়েট করছে
“পাঁচ মিনিট আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি
মিষ্টি ফ্রেশ হয়ে খেতে যায়। মিষ্টির বাবা খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে। এটাই বাবার ভালোবাসা। সন্তান যত বড়ই অন্যায় করুক সে ঠিক হ্মমা করে দেয়।
মিষ্টি খেতে বসে। খাবার গলা দিয়ে নামছে না। তবুও পানি দিয়ে গিলে খায়। বাবা মা ভাই এখন আর তেমন কথা বলে না মিষ্টির সাথে।
রুমের প্রায় অর্ধেক জিনিস ভেঙে ফেলেছে জীম। পাগলের মতো বিহেব করছে।
” আমার টাকায় কেনা জিনিস ভাঙলে মিষ্টি ফিরে আসবে না
জীম হাতে ফুলদানি নিয়েছিলো ভাঙার জন্য তখন বাবা কথাটা বলে। জীম ফুলদানিটা রেখে দেয়।
“তুমি মিষ্টির জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছো। ভালো স্টুডেন্ট হয়েও মিষ্টি এখন এক্সাম দিতে পারছে না তোমার জন্য। খুব কি দরকার ছিলো নিষ্পাপ মেয়েটার নামে এতো বড় অপবাদ দেওয়ার? কেনো করলি এমন?
” আমি এসব করি নি। ভালোবাসি মিষ্টিকে ওর নামে বদনাম কি করে দেবো?
চিৎকার করে বলে জীম।
“জব পেয়েছিস। মন দিয়ে জব কর। মিষ্টিকে ভুলে যা। ও তোর জন্য না। আমি চায় না তোর জন্য মিষ্টির আরও বড় কোনো হ্মতি হোক।
জীমের বাবা চলে যায়।
জীম দরজা বন্ধ করে বেয়ারের বোতলটা হাতে নেয়। অনেকদিন খাওয়া হয় না। মিষ্টি ওর জীবনটাকে সাজিয়ে দিয়েছিলো। বখাটে জীমটা মিষ্টির জীম হয়ে উঠেছিলো। কিন্তু এখন আবার জীম বেয়ারের বোতল হাতে নিলো। নেশা না কি কষ্ট ভোলায়। তাই এবার জীম এটাই করবে।
” যে আমার মিষ্টির নামে বাজে বদনাম দিয়েছে কসম খোদার তাকে আমি খুন করবো। একবার শুধু খুঁজে বের করি।
জীম বেয়ার আর সিগারেট নিয়ে বেলকানি দিয়ে মিষ্টির রুমে যায়। মিষ্টি পড়ার টেবিলে বসে খায়।
মিষ্টি কানে হেডফোন গুঁজে জীমের গাওয়া
“তুমি আমার কাছে ফুটফুটে ওই রাতের সুখ তারা
তাই রাত জাগিয়া মনের সুখে দেই যে পাহারা…
তুমি আমার কাছে শিশির ভেজা সোনালি সকাল
তোমায় এক পলক দেখিলে আমি হয়ে যায় মাতাল…..
এই গানটা শুনছে। একদিন বিকেল বেলা জীম মিষ্টিকে নিয়ে নদীর পারে ঘুড়তে গেছিলো। তখন মিষ্টিকে গানটা শুনিয়েছিলো। মিষ্টি রেকর্ড করেছিলো।
” মিষ্টি
বাবার ডাকে মিষ্টি হেডফোন খুলে।
“বাপি কিছু বলবে
মিষ্টির বাবা মিষ্টির পাশে বসে বলে
” হুমম বলো না
“আনি তোমার বিয়ে ঠিক করেছি
বিয়ের কথা শুনে মিষ্টির মুখটা কালো হয়ে যায়। চোখ দুটো ভরে আসে।
” যে বদনাম তুমি ঘাড়ে নিয়েছো সেই বদনাম থেকে মরার আগে বেরতে পারবে না। ছেলেটা ভালো। সব জেনেও তোমায় বিয়ে করতে চায়। আমার খুব পছন্দ ছেলেটাকে। আশা করি তোমার কোনো বলার নেই। বাপিকে বিন্দু মাএ ভালোবেসে থাকো তো দ্বিতীয় বার এমন কিছু করো না যাতে তোমার বাপি মরে যায়
বাপি চলে যায়। মিষ্টি ওয়াশরুমে গিয়ে সাওয়ার অন করে চিৎকার করে কাঁদে।
“কি করবো আমি? আমি যে ভীষণ ভালোবাসি জীমকে। ওকে ছাড়া অন্য কারো সাথে কি করে থাকবো আমি? বাপি কেনো আমাকে বুঝতে পারছে না? কার কাছে বলবো? কে বুঝবে আমায়
একঘন্টা গোছল করে মিষ্টি ড্রেস চেঞ্জ করে। ফোনটা হাতে নেয়। ওই বাড়ি থেকে আসার পরেই ফোন অফ করে দিয়েছিলো। সিম অন করে। সাথে সাথে জীমের অজস্র মেসেজ কল আসে। মিষ্টি জীমকে ফোন দেয়। জীম মিষ্টির ছবি হাতে নিয়ে মদ খাচ্ছিলো। মিষ্টি ফোন পেয়ে খুশিতে আটখানা হয়ে ফোন রিসিভ করে
” ওই ফুলটুসি কোথায় তুই? তুই জানিস না আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারি না। দম বন্ধ হয়ে আসে আমার। আমি তোকে ভীষণ ভালোবাসি। আমি তোর ওই পিক ভাইরাল করি নি রে। আমি তোকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না রে। মরে যাবো। প্লিজ ফুলটুসি চলে আয়
“জীম শান্ত হয়ে আমার কথা শুনেন
” কি করে শান্ত হবো। তিনদিন তোকে দেখি না।
“আজ দেখা করবো
” এখুনি। কোথায় আসবো বল
“বিকেলে। আমি এড্রেস মেসেজ করে দেবো।
” দুই ঘন্টা দেরি হবে তোকে দেখতে। আমি তোকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না রে।
“বাঁচতে হবে। জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না।
” কিন্তু আমার জীবনটা থেমে গেছে। সময় যাচ্ছে না। এই তিনদিন মদ আর সিগারেট ছাড়া কিচ্ছু খায় নি। গোছলও করি নি। সেইদিন যে শার্ট প্যান্ট পড়ে তোকে কলেজে দিয়ে এসেছিলাম এখনো সেগুলোই পড়ে আছি। আমার প্রতিটা স্পন্ধনে তোর নাম লেখা
মিষ্টি আর কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। মিষ্টি লর কান্নার আওয়াজ পেলে জীম আরও পাগলামি করবে। তাই দাঁতে দাঁত চেপে কান্না কাটকাচ্ছে মিষ্টি।
মিষ্টি ফোন কেটে দেয়। মিষ্টির বাবা আড়াল থেকে কথা শুনে ফেলে। উনি ইফাদকে ফোন দেয়। সবটা বলে
“আংকেল আপনি চিন্তা কইরেন না। ওই জীমের গল্প আমি আজকেই শেষ করবো।
একটা পার্কে সামনাসামনি দাঁড়িয়ে আছে জীম মিষ্টি। তিনদিন দেখেনি জীম তার প্রেম কে। জীম হাউমাউ করে কেঁদে দিয়ে মিষ্টিকে জড়িয়ে ধরে। মিষ্টিও কাঁদছে।
মিষ্টি জীমকে ছাড়িয়ে একটা গাছের নিচে বসে। জীমের এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে দিয়ে বলে
” একি অবস্থা হয়েছে আপনার?
জীম মিষ্টির হাতটা ধরে বলে
“আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
মিষ্টি হাত ছাড়িয়ে নেয়।
” অসম্ভব বলে পৃথিবীতে কিছু নেই। সব সম্ভব
“এই ফুলটুসি তুই কি আমাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য এখানে এসেছিস
” হুমমম
“বললেই হলো। আমি যেতে দেবো না তোকে। আমার #প্রেম তুই। তোকে ছাড়া বাঁচবো কি করে?
চিৎকার করে বলে জীম।
” আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি। তাই তো শেষ বার আপনাকে দেখার জন্য এখানে আসতে বলেছি। জানি আমাকে ভুলতে পারবেন না। কিন্তু আমি আপনার জন্য না। আমি আপনার প্রেম হয়েই থাকতে চায়। বাপি আমার বিয়ে ঠিক করেছে
জীম হো হো করে হেসে ওঠে
“সব মেয়েরাই যাওয়ার সময় এই ডাইলোকটা দেই। যদি আমি বেঁচে থাকি তাহলে তোকে নিয়ে বাঁচবো আর যদি মরে যাই তাহলে তোকে নিয়েই মরবো। কিন্তু তোকে ছাড়ছি না। চল এখন তুই আমার সাথে যাবি
জীম মিষ্টির হাত ধরে টানে। মিষ্টি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে। মিষ্টির বাবা আর ইফাদ পিস্তল হাতে নিয়ে ওদের সামনে দাঁড়ায়। মিষ্টি বাপিকে দেখে ভয় পেয়ে যায়।
” জানতাম এখনি ভিলেন আসবে। সরে যাও তোমরা
“আমার মেয়েকে ছেড়ে দাও জীম।
জীম মিষ্টিকে জড়িয়ে ধরে বলে
” ছাড়বো না।
জীম মিষ্টির বাবা আর ইফাদ হাতাহাতি করছে। জীমকে মারছে। মিষ্টি ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। চিৎকার করে ছাড়তে বলছে কিন্তু ছাড়ছে না। জীমের শরীর হ্মতবিহ্মত হয়ে গেছে।
“আআআআআআআআআআআআআআআআআ
মিষ্টির চিৎকারে ইফাদ আর বাবা জীমকে মারা বন্ধ করে। ইফাদের হাত ফসকে গুলি বেরিয়ে মিষ্টির মাথায় লাগে। মিষ্টি পরে যায়। মিষ্টির বাবা আর ইফাদ নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কি হয়ে গেলো। জীম উঠে মিষ্টির কাছে যায়
” ওই ফুলটুসি। কিচ্ছু হবে না।
মিষ্টি জীমের হাত ধরে অস্পষ্ট সরে বলে
“খুব ভালোবাসি আপনাকে
মিষ্টি চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে। ইফাদ আর মিষ্টির বাবা মিষ্টিকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। জীমও ওদের পেছনে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে যায়।
করিডোরে বসে মিষ্টির বাবা মা পাগলের মতো কান্না করছে। ইফাদও কাঁদছে। মিষ্টিকে পাওয়ার জন্য এতো লড়াই। জীম মিষ্টির সম্পর্ক টাও ভেঙে দিলো। সেই মিষ্টিই যদি চলে যায় তাহলে কার জন্য এতোকিছু করলো।
জীম অপারেশন থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
ডাক্তার দরজা খুলে বের হয়। জীম ভেতরে যায়। ইফাদ দৌড়ে আসে
” মিষ্টি কেমন আছে?
ডাক্তার মাথা নিচু করে বলে
“সি ইজ নো মোর
ইফাদ ঠাস করে বসে পড়ে।
” আমি মিষ্টিকে মেরে ফেললাম। মেরে ফেলেছি আমি। আমার জন্য হয়েছে সব
চিৎকার করে কাঁদছে ইফাদ। মিষ্টির বাবার তো হুশ নেই।
জীম চুপচাপ মিষ্টির পাশে বসে। সাদা চাদর দিয়ে মিষ্টিকে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
জীম মিষ্টির শুকনো মুখটার দিকে তাকিয়ে বসে আছে। মিষ্টির কপালে শেষ ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে জীম।
এখন আর কোনো ঝামেলা হবে না। কেউ মিষ্টিকে অপবাদ দিতে পারবে না। আর কখনো মিষ্টি বই নিয়ে বসবে না। কেউ আর মিষ্টিকে বলবে না “তোমার এখানে না থাকাই ভালো” কেউ অপমানও করতে পারবে না।
শেষ বারের মতো গোছল করিয়ে সাদা কাফনে মুরিয়ে খাটিয়ায় শুয়িয়ে রাখা হয়েছে। পুরো গ্রামের সবাই কাঁদছে। যেই মানুষ গুলো আজ সকালেও মিষ্টিকে দেখলে ছি ছি করতো তারাও কাঁদছে। আজব দুনিয়া।
জীমের বাবা মা জীমের দিকে তাকিয়ে আছে। এতো শান্ত ভাবে মিষ্টিকে দেখে যাচ্ছে।
প্রেম এমনই হয়।
“আমার মিষ্টি কতো শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে। অথচ আমার ভেতরটা জ্বলে পুরে যাচ্ছে। আমিও মৃত্যুর গন্ধ পাচ্ছি। হয়ত খুব তাড়াতাড়ি জীমও মিষ্টির কাছে চলে যাবে।
একবছর পরে
হাসপাতালের বেডে সুয়ে আছে জীম। সিগারেট আর মদ খাওয়ার জন্য ভেতরের সব নষ্ট হয়ে গেছে।
মিষ্টির বাবা জীমকে দেখতে এসেছে।
” জীম
জীম মিষ্টির বাবার দিকে তাকায়
“শশুড় মশাই আপনি
” তুমি কেমন আছো?
“মিষ্টি ছাড়া কি জীম ভালো থাকতে পারে? ছন্নছাড়া। তবে খুব তাড়াতাড়ি আমিও ভালো থাকবো। আমার ফুলটুসির সাথে থাকবো। আবার আমরা প্রেম করবো। সেখানে কেউ আমাদের আলাদা করবে না। ওখানে ইফাদ আর কোনো বাপি থাকবে না। আমি ওই দিনটার অপেক্ষায় আছি।
মিষ্টির বাবা চোখ দিয়ে পানি পড়ছে
” কাঁদবেন না। এটা হওয়ার ই ছিলো। আফসোস আগে করতে হয় পরে না। তবে শেষ বার আমার একটা কথা রাখবেন?
মিষ্টির বাবা জীমের হাত ধরে বলে
“কিহহ বলো
” আমার বাবা মাকে একটু দেখে রাইখেন।বোনটাকে একটা ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিয়েন। এসব আমার করার কথা ছিলো আমি আমার হাতে তো সময় নেই।
সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে জীম মিষ্টির কবরের কাছে যায়। কবরের ওপরে একটা বেলি ফুলের মালা দেয়
“খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না ফুলটুসি। তোমার চলে যাওয়াটা আমি সয্য করে নিয়েছি। আর দিন গুনেছি কবে তোমার কাছে যাবো। তোমার ডান পাশে আমার জায়গা হবে। দেখো দিনটা চলে এসেছে। আমি আসছি। আবারও প্রেম করবো আমরা। ভালোবাসি বলবো। সব সময় তোর সাথে থাকবো আমি। তোর লম্বা চুল গুলো এলোমেলো করে দেবো। তুইও শোধ নিবি। আমরাও ভালো থাকবো মিষ্টি। কেউ আর তোর নামো বদনাম দেবে না। আমি খুব তাড়াতাড়ি আমার প্রেমের কাছে আসছি
জীম কথা বলতে বলতে মিষ্টির কবরের পাশে শুয়ে পড়ে। মিষ্টিকে মনের কথা বলতে বলতেই চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে। জীম মিষ্টির প্রেমের কাহিনি শেষ হয়।
_______________সমাপ্ত ____________
Allah kolponao kori nai arokom sad ending hobe💔💔💔💔💔ending part ta pore chokher pani thamaite pari nai😱😭😭😭😭😢😢😰😰