#প্রেম
#সিজন ২
#পর্বঃ৩
#Tanisha Sultana (Writer)
মিষ্টির মাথার ওপর দিয়ে গেছে সব। জীম আসলে কি বললো মিষ্টির বুঝতে পবলেম হচ্ছে। “ইনডিরেকলি প্রপোজ করলো কি” এটাই মাথায় আসছে মিষ্টির। কিন্তু না এসব ভাবা যাবে না। পড়ায় মন দিতে হবে।
সব চিন্তা ঝেড়ে মিষ্টি আবার পড়ায় মন দেয়।
কিছু জরুরি কাজে মিষ্টির বাবা মাকে ঢাকার বাইরে যেতে হবে দুইদিনের জন্য। এখন পাবলেম হচ্ছে মিষ্টি কোথায় থাকবে। একা একা এই বাসায় তো মিষ্টি থাকতে পারবে না। না রান্না পারে না নিজের চুল নিজে আঁচড়াতে পারে। কিছুই পারে না। মিষ্টি মিষ্টির বাবা মা আর ভাই বসে আছে। মন দিয়ে ভাবছে সবাই।
তাজ বলে ওঠে
“আইডিয়া
সবার মনোযোগ তাজের দিকে। কি সলিশন বের করলো এই এগারো বছরের পিচ্চিটা?
” বলো
মা উৎসাহিত হয়ে জিজ্ঞেস করে
“আমাদের পাশের বাসায় নতুন মানুষ এসেছে। খুব ভালো তারা। আপির সবার একটা আপিও আছে। তো ওই আপিকে আপুর কাছে রেখে গেলে কেমন হয়
তাজের এই চটপটে হয়ে এতো সুন্দর একটা সলিশন দেখে বাবা মা সহ মিষ্টিও প্রচুর অবাক হয়।
“চিনি না জানি না একটা আপুর সাথে আমি কি করে থাকবো?
মিষ্টি মুখটা ছোট করে বলে।
” আজিব তো জাস্ট আটচল্লিশ ঘন্টা থাকতে পারবে না? যখন তুমি বড় ভার্সিটিতে পড়বে তখন তো মাসের পরে মাস অচেনা মানুষদের সাথে থাকতে হবে।
বাবার কথায় মিষ্টি একদম চুপ। সত্যিই তো সারাজীবন তো আর বাবা মায়ের আচল ধরে থাকা যাবে না।
জীম, জীমের বাবা মা বোন একসথে খেতে বসেছে। জীমের বাবা জীমের দিকে তাকিয়ে খাচ্ছে। জীম বিরক্ত হয়ে খাচ্ছে
“পবলেম কি শান্তিতে কি খেতেও দেবে না
” আমি আমার এতো কষ্টের টাকায় তোমাকে বাইক কিনে দিয়েছি সেই বাইক আমি কাল অন্য একটা ছেলের কাছে কেনো দেখলাম?
জীম জানতো বাবা এমন একটা কথায় বলবে। আসলে এটা নতুন কিছু না। তিন মাস হয় বাইকটা কিনে দিয়েছে আর এই তিন মাসে মোটমাট আট বার ফ্রেন্ডরা ওর বাইকটা ধরেছে আর বাবা এই প্রশ্নটা করেছে।
জীম মুখে রুটি পুরে বলে
“একটা মাইয়ার পেছনে দৌড়াতে গিয়ে ভুলে বাইকটা ফেলে এসেছিলাম তাই ওরে নিয়ে আসতে বলছি।
জীমের এমন সোজাসাপ্টা কথায় জীমের বাবার রাগ হয়। বাবাকে শোনাচ্ছে মেয়ের পেছনে দৌড়ানোর কথা। জীমের মা বোন ওদের ঝগড়ায় বেশ এনজয় করছে
“লেজ ছাড়া বাঁদর একটা। নিলজ্জ কোথাকার। মেয়েদের পাশে শুধু দৌড়াতেই হবে কেউ পটবে না।
” অভিশাপ দিয়ো না তো। যদি থাকে নসিবে তাহলে মেয়েসহ মেয়ের বাবা,মা এসে কলিং বেল বাজাবে
জীমের কথা শেষ হওয়ার আগেই কলিং বেল বেজে ওঠে। জীম লাফ দিয়ে সরে যায়। জীমের বাবা মা বোন তো অবাক
“বিশ্বাস করো বাবা এই মাইয়ারে আমি চিনি না। আমি নিশ্পাপ।
” আগে দেখি মেয়েটা কেমন। যদি ভালো হয় তো বেঁচে গেলি নাহলে চাপকে গাল লাল করে দেবো
জীমের বাবা দরজা খুলতে যায়। । জীম মা আর বোন উঁকি মারছে দেখার জন্য কে? জীম আল্লাহ করছে। না জানি কে এসেছে? যদি কোনো হিরো আলমের বউ টাইপের কেউ আসে তাহলে?
এসব ভেবে জীম ঘামতে শুরু করেছে।
“আরে পুলিশ অফিসার যে ভেতরে আসুন
হাসিমুখে বলে জীমের বাবা। পুলিশ শুনে জীম চমকে তাকায়। দেখে মিষ্টি, বাবা মা আর তাজ এসেছে। মিষ্টিরা বসে।
” এই প্রথম আমার ছেলেরে নিয়ে গর্ববোধ হচ্ছে। একটা পুলিশের মেয়ে পটিয়েছে। অবশ্য আমার ছেলে তো। এই মেয়েরেই ছেলের বউ বানাবো। আগে ছেলেটারে বুকে জড়িয়ে ধরতে হবে
জীমের বাবা মনে মনে বলছে
জীম দাঁত দিয়ে নখ কাঁটছে আর ভাবছে
” এই মেয়েটা এখানে? নিশ্চয় বাপির কাছে কমপ্লেন করেছে আমার নামে। ওরে আজ আমি দেখিয়ে দেবো আমি কি জিনিস?
জীমের বোন মলি মায়ের কানে বলে
“তোমার ছেলে তো জটিল একটা মেয়ে পটিয়েছে। প্রাউড ফিল করছি
” কার ছেলে দেখতে হবে না😎
“আসলে আমরা দুইদিনের জন্য চিটাগং যাবো। মিষ্টির এক্সাম তাই ওকে নিতে পারবো না। আমার মেয়েটা আবার একটাথাকতে পারবে না। অভ্যাস নেই। তো বলছিলাম আপনার মেয়ে যদি রাতে ওর সাথে থাকতো
মিষ্টির মা বলে। জীম বলে ওঠে
” আমি থাকবো ওর সাথে। আমি ভয় পায় না। বোন ও তো ভয় পায়। একদম সেভ করে রাখবো
জীমের বাবা চোখ বড়বড় করে বলে
“জীমম
জীম একটু হাসার চেষ্টা করে মাথা চুলকিয়ে বলে
” নাহহ আমি থাকবো না। আমিও তো ভয় পায়। বোনই থাকবে।
জীমের মা বলে
“কোনো বেপার না। দুটোদিন মিষ্টি আমাদের বাড়িতেই থাকুক।
” হুুমমম থাকুক না। আমাদের এখানে থাকলে ভালোই হবক
জীম বলে ওঠে। সবার নজর জীমের দিকে। জীম এটা বুঝতে পেরে বলে
“মা আমি আসছি
” দাঁড়াও
মিষ্টির বাবা বলে। জীম দাঁড়িয়ে যায়
“তোমাকে সেদিন পুলিশ স্টেশনে দেখছিলাম না।
” না আংকেল আমি না
“আমার তো মনে হচ্ছে
” সত্যি আংকেল আমি না। আসছি আমি কাজ আছে
জীম চলে যায়। মিষ্টি হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। বাঁদর একটা।
পরেদিন শুক্রবার। মিষ্টির বাবা মা চলে গেছে। মা বাবাকে বাই বলে মিষ্টি জীমদের বাড়িতে ঢুকতে গেলেই কেউ হাত ধরে টেনে একটা রুমে নিয়ে যায় মিষ্টিকে। মিষ্টি খুব ভয় পেয়ে যায়।মিষ্টির একটা গুন ভয় পেলে গলা দিয়ে আওয়াজ বের হয় না।
জীম মিষ্টিকে রুমে এনে দরজা বন্ধ করে দেয়। মিষ্টি কাঁপছে।
” কাঁপছিস কেনো?
জীম মিষ্টিকে বসায়।
“এতো ভয় পাস কেনো তুই? আমি তো তোকে বকি না তাহলে? রিলাক্স
” আআআআপনি আমাকে এখানে আনলেন কেনো?
“বলবো
” হুমমম
“বলি
” হুমম
“থাক না বললাম
মিষ্টি জীমের দিকে তাকায়। জীম মিষ্টির গালে হাত দেয়
” তোকে দেখার পর থেকে আর কোনো মেয়ের দিকে তাকায় নি। কারো ফোন তুলি নি। কারো সাথে মিট করি নি
“কেনো?
” সেটা তো তুই বলতে পারবি। কেনো এমন হয়? তুই কি জাদু করছিস আমাকে?
মিষ্টি চোখ বড়বড় করে জিমের দিকে তাকায়।
“বিশ্বাস করেন আমি জাদু করি নি ইনফেক্ট পারিও না
” কিন্তু আমার তো মনে হয় তুই পারিস
“সত্যিই পারি। বিলিভ মি
জীম ফিক করে হেসে ওঠে। মিষ্টি বোকার মতো তাকিয়ে আছে। মিষ্টি বুঝতে পারছে এখানে ও হাসার মতো কি বললো?
জীম কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিষ্টি বলে
” আমি যাবো
“হুমম যাবি তো। আমি কি তোকে আটকে রাখবো না কি?
মিষ্টি কিছু বলে না।
” শোন আমার তোকে ভালো লাগে। #প্রেম করবো তোর সাথে
মিষ্টি কিছু বলতে যায়
“আমি কিন্তু তোকে প্রপোজ করি নি বা তোর মতামতও চায় নি। জাস্ট তোকে জানালাম। আমি জানি তুই আমাকে চিনিস না জানিস না আমাকে তোর ভালোও লাগে না কিন্তু বিশ্বাস কর এতে আমার কিচ্ছু এসে যায় না। আমার তোকেই চায়
” দেখুন আপনি
“হুমম বুঝেছি।
” কি
“তুই অনেক এক্সকিউজ দিবি। বাট জীম কিছুই শুনবে না। দরকার হলে তোর বাবার কাছে প্রপোজাল দেবো৷ তোর বাবা রিজেক্ট করলে কি করবো জানি না।
মিষ্টি হাত কচলাচ্ছে। এই ছেলেটা এমন কেন?
“আমার বলা শেষ এবার যেতে পারিস
মিষ্টি একটু জীমের দিকে তাকিয়ে থেকে বেরিয়ে যায়। জীম মুচকি হাসে।
রাতে মিষ্টি বাবার সাথে কথা শেষ করে একটু ফেসবুকে ঢুকে। রাইয়ান রহমান জীম নাম দিয়ে সার্চ দেয়। জীমের আইডিতে ঢুকে। দেখে তিনদিন আগে একটা গান আপলোড দিছে। কেনো জানি মিষ্টির গানটা শুনছে ইচ্ছে করলো। গানটা অপেন করলো
” প্রথম দেখায় তোমার প্রেমে পড়েছি
তোর মাঝে যেনো হারিয়ে গেছি”
এই গানটা। গানটা মিষ্টির দারুণ লাগে। পারফেক্ট সিঙ্গার বলে মনে হচ্ছে মিষ্টির জীমকে
“বাঁদরটা ভালোই গান করে।
মিষ্টি মুচকি হাসে। মলি মিষ্টিকে খেতে ডাকে। মিষ্টি খেতে যায়। দেখে জীম বাবা মা বসে আছে। মিষ্টি জীমের মুখোমুখি একটা চেয়ারে বসে।
” তো লেজ ছাড়া বাঁদর আপনি এই সময় বাড়িতে
জীমের বাবা খেতে খেতে বলে
“বিয়ে করবো এই কথা বলার জন্য বাড়িতে এসেছি। যতসব
” খান তো বাবার হোটেলে কোন মেয়ে বিয়ে করবে আপনাকে? চেহারে তো বাঁদরের মতো
“ঝগড়া করার মুড নাই
মিষ্টি ফিক করে হেসে ওঠে। জীমের বাবা আর জীম মিষ্টির দিকে তাকায়। মিষ্টি যখন বুঝতে পারে ওর দিকে সবাই তাকিয়ে আছে হাসি থামিয়ে বলে
” সরি আসলে লেজ ছাড়া বাঁদর নামটা শুনে হাসি পেলো
“ইটস ওকে মামনি। তুমিও ওকে এই নামে ডাকবা
” হুমম লেজ ছাড়া বাঁদর
এবার সবাই হেসে ওঠে জীম ছাড়া। জীম মিষ্টির হাসি দেখতে ব্যস্ত।
“ফুলটুসি। হাসলে ওকে এতো সুন্দর লাগে। নতুন করে আবার প্রেমে পড়ে গেলাম। এই মেয়ের সব কিছুি প্রেমে পড়ার মতো। আমার ফুলটুসি
জীমও মুচকি হাসে।
চলবে