#প্রেম
#সিজন ২
#পর্বঃ৭
#Tanisha Sultana (Writer)
“মারামারি কেনো করলেন?
” ওরা আমায় মারতে আসছিলো
“কেনো?
” আগে আমি ওদের মারছিলাম তাই
“এখন আমাকে ছুঁয়ে কথা দেন আর কখন মারামারি করবেন না
” ঠিক আছে করবো না
“আমায় ছুঁয়ে বলতে হবে
” বললাম তো
মিষ্টি জীমের হাতটা নিজের হাতে রাখে।
“এখন বলেন আপনি আর কখনো কারো গায়ে হাত তুলবেন না। যদি তুলেন সেই দিন ই হবে জীম মিষ্টির শেষ দেখা
” কথা দিলাম
“গুড বয়
মিষ্টি জীমের চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলে।
” এটা কি হলো
“আপনিও একদিন দিছিলেন
” শোধ নিলি
“বলতে পারেন।
” খুব ভালোবাসি তোকে। খুব তাড়াতাড়ি একটা জব নিবো তারপর তোকে বিয়ে করবো
“হুমম
” পারবো তো
মিষ্টি জীমকে জড়িয়ে ধরে বলে
“অবশ্যই।
এরকম খুনশুটি দুষ্ট মিষ্টি ভালোবাসায় কাটছে জীম মিষ্টির দিন। প্রতিদিন কলেজে যাওয়ার সময় জীম মিষ্টিকে দিয়ে আসে আবার আসার সেময় নিয়ে আসে। রাতের বেলা দুইজনে চুপিচুপি দেখা করে। মিষ্টির এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে আজকে। সারা রাত পড়েছে মিষ্টি। জীমকে বলে দিয়েছে এক্সামের কয়েকদিন বেশি কথা বলবে না। জীম এখনো কোনো জব টব পায় নি। কিন্তু প্রাণ পণ চেষ্টা করছে জব পাওয়ার কিন্তু কাজ হচ্ছে না।
বাবার সাথে পরিহ্মার হলে যায় মিষ্টি। জীম বাইক নিয়ে মিষ্টির জন্য অপেক্ষা করছিলো কিন্তু মিষ্টি যায় নি। এতে জীমেরও কোনো অভিমান হয় নাই। কারণ প্রতিদিন তো জীমের সাথেই যায় আজ নাহ গেলো বাবার সাথে।
এক্সাম শেষে জীমের সাথে বাড়ি ফেরে। বাসায় ঢুকতেই মিষ্টির বাবা মিষ্টিকে ডাকে। মিষ্টি বাপির সামনে দাঁড়ায়। মিষ্টির বাবা ঠাস ঠাস মিষ্টির গালে দুটো চড় মারে
” ছি মিষ্টি ছি। তুমি এতো নোংরা হয়ে গেছো? সারাদিন ওই বখাটের সাথে ঘুড়ে বেড়াও আবার রাতে নিজের রুমে ছি
মিষ্টির চোখ দিয়ে ঝড়ঝড় করে পানি পড়ছে। মিষ্টির মা আর ভাইও কাঁদছে। মিষ্টির বাবার চোখেও পানি
“আমি গর্ব করে বলতাম আমার মিষ্টির মতো মেয়ে হয় না। আমার মিষ্টি তার বাবা মা ভাইকে ভীষণ ভালোবাসে। সেই মিষ্টি এই প্রতিদান দিলো তার। বিশ্বাস ভাঙলে তুমি? আমাকে তোমার জন্য অফিস থেকে ছি ছি করছে। হাসাহাসি করছে মিষ্টি
” বাবা আমি জীমকে ভালোবাসি
মিষ্টির বাবা আবার থাপ্পড় মারে। মিষ্টি ছিটকে পড়ে যায়।
“আমিও তোমাকে ভালোবাসি মিষ্টি। তাই এখনো তোমাকে মেরে ফেলি নি। আর আজ স্পষ্ট বলে দিচ্ছি। যদি আমাদের সাথে থাকতে চাও তো জীমকে ভুলে যাও আর যদি জীমকে বেঁছে নাও তো ওই যে দরজা। বেরিয়ে যেতে পারো।
মিষ্টি বাবার পা জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলে
” বাপি আমার দুজনকেই চায়। জীমকে কি করে ভুলবো
“তুমি কি চাও এবার আমাকে পুলিশ অফিসারের পদ ত্যাগ করতে হোক? জীমকে ভালোবাসো ঠিক আছে ওর হাত ধরে পালিয়ে যেতে এরকম নোংরামি করার কি খুব দরকার ছিলো
বাবার কথা গুলো মিষ্টির শরীরে তীরের মতো বিধছে। এসব কি বলছে বাবা? বাবার মুখ থেকে এরকম কথা শুনতে হবে মিষ্টি তা জীবনেও কল্পনাও করে নি
বাবা রুমে চলে যায়। মিষ্টির মা মিষ্টির কাছে বসে
” এটা তুমি কি করলে মিষ্টি। চারপাশের লোকজন আমাদের ছি ছি করছে। জীম আর তোমার ঘনিষ্ঠ ছবি তুলে সেগুলো ভাইরাল করে দিয়েছে। তোমার বাবার অফিস থেকে উনি এসব দেখে এসেছে আর ওনাকে অনেক কথা শোনাচ্ছেন। আমিও স্কুলে যেতে পারছি না।
“কিন্তু মা আমি এসবের কিছুই জানি না
” তুমি তো এখন জীমের ভাবনায় বিভোর। ডাটা অন করো বিউজফিল্ডে দেখতে পাবে
মিষ্টি রুমে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকে। দেখে সেখানে মিষ্টিকে নিয়ে জীম যেদিন ছিনেমা হলে গেছিলো আর ঠোঁটের ওপরে হাতে কিছ করছিলো। সেখানে হাত দেখা যাচ্ছে না পেছন থেকে তোলা তো বাজে একটা সিন। তারপর বাইকে। রুমে। কপালে কিস জড়িয়ে ধরা। সব বাজে বাজে মুহুর্তের ছবি। আর ক্যাপশনে বড়বড় করে লেখা “কমিশনার আবির চৌধুরীর মেয়ে সাথে বখাটে রাইয়ান রহমান জীম এর অবোধ্য সম্পর্ক ”
মিষ্টি ফোনটা আছাড় মারে চিৎকার করে কাঁদে।
“এটা কেনো হলো আমার সাথে? জীম কেনো করলো এমন?
মিষ্টির ফোনে ফোন আসে। মিষ্টি রিসিভ করে
” হ্যাঁ তিথি বল
“কি দেখছি এসব আমি মিষ্টি? এসব কি? তুই জীমের সাথে ছি।
” তিথি আমি কিচ্ছু করি নি রে
“আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু তোদের এরকম ছবি কে তুলল? জীম আর তুই ছাড়া তো কেউ থাকতি না। তাহলে কি জীম এমনটা করলো
মিষ্টি চমকে ওঠে যেমনটা উঠেছিলো যেদিন জীমকে প্রথম নিজের রুমে দেখেছিলো। তিথি হেলো হেলো করে যাচ্ছে কিন্তু মিষ্টি কথা বলছে না।
” জীম করেছে এমনটা। জীম ছাড়া আর কে করবে? আমার জীমনটা শেষ হয়ে গেলো। #প্রেম আমায় শেষ করে দিলো। এতো বড় অপবাদ নিয়ে বাঁচবো কি করে আমি?
মিষ্টি হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।
বিকেলের দিকে জীম ইন্টারভিউ দিয়ে বাসায় আসে। আজ ইন্টারভিউ অনেক ভালো হয়েছে। চাকরি হয়ে যাবে কনফার্ম। জীমের যে কি খুশি লাগছে। এবার মিষ্টির বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেবে। মিষ্টির বাবা ফিরিয়ে দিতে পারবে না। মেনে নেবে জীমকে। ধুমধাম করে জীম মিষ্টির বিয়ে হবে। কতো ভালো হবে। কতো সুন্দর হবে জীম মিষ্টির জীবন।
“পুতুলের মতো করে সাজিয়ে রাখবো আমি আমার ফুলটুসিকে। লম্বা চুল গুলো নিজে হাতে আঁচড়ে দেবো। ভালোবাসার ঘড় বাঁধবো আমরা।
এসব ভেবে জীম ফ্রেশ হতে যায়।
মিষ্টিদের বাড়িতে কিছু মহিলা আসে অনেক কথা শুনিয়ে যায়। মিষ্টিদের এখান থেকে চলে যেতে বলে। এখন আবার নতুন শব্দ এড করেছে সেটা হলো মিষ্টি প্রেগন্যান্ট।
এসব শুনে মিষ্টির নিজেকে নিজের শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু না আত্মহত্যা মহা পাপা। এটা করা যাবে না।
সারাদিন মিষ্টির বাবা মা ভাই আর মিষ্টি কিছুই খায় নি। মিষ্টির বাবা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। মাও তাই। মিষ্টি বাবা পাশে এসে বসে
” বাপি চলো না আমরা এখান থেকে অনেক দুরে চলে যায়।
মিষ্টির বাবা মুখ তুলে মিষ্টির দিকে তাকায়।
“ছোট বেলায় তুমি মরে গেলো হয়ত আমাদের এই দিনটা দেখতে হতো না
মিষ্টি আর কিছু বলার সাহস পায় না।
” আমার জন্য হয়েছে এসব। সব কিছুর জন্য আমি দায়ী। পাপি আমি। কেনো প্রেম করলাম। কেনো ভালোবাসলাম। যদি ভালো না বাসতাম তাহলে এসব কিছু হতো না।
এসব ভাবতে ভাবতে মিষ্টি রুমে চলে যায়।
সারাদিন দৌড় ঝাপ করার জন্য জীম খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই আর মিষ্টির সাথে দেখা করতে যেতে পারে না। সকালে ঘুম থেকে উঠে মিষ্টির রুমে চলে যায়। কিন্তু মিষ্টি নেই। কোথাও মিষ্টি নেই। খাটের ওপর একটা চিরকুট রাখা। জীম সেটা খুলে
“আমার জীম
আমি জানি তুমি আমাকে খুঁজে না পেলে ভেঙে পড়বে। কষ্ট পাবে। সবার বিরক্তির কারণ এখন আমি হয়ে গেছি। কলেজে এক্সার দেওয়ার জন্য গেছিলাম টিচাররা বললো আমি যেনো আর কলেজে না যায়। বাবা বললো আমি ছোট বেলাতে মরে গেলেই ভালো হতো। এখন আপনি হয়ত বলবেন এরকম রিলেশন তো আমি হাজারটা করি। আমি কি করবো বলেন তো। আমার লাইফটা শেষ হয়ে গেছে। আমি আপনাকে দায়ী করছি না। আপনি পুরুষ মানুষ তাই আপনার ওপর এরকম হাজারটা অভিযোগ আসলেও কেউ সিরিয়াসলি নেবে না। সমাজ আপনাকে কলঙ্ক দেবে না। কিন্তু আমার হ্মেএে বিষয়টা অন্য। তাই অনেক দুরে চলে গেলাম। অনেক দুরে। বাপি মা ভাইকে নিয়ে নতুন সুখের আশায় ছুটছি। দয়া করে খুঁজবেন না আমায়। নতুন করে জীবন সাজান। আপনি কিন্তু আমাকে ছুঁয়ে কথা দিছেন কখনো মারামারি করবেন না। আমি জানি আপনি জব পেয়েছেন। মন দিয়ে কাজ করেন। ফিউচার ব্রাইট করতে হবে তো।
ইতি
মিষ্টি
চিরকুট পড়ে জীম বসে পড়ে।
” এটা হতে পারে না। আমার মিষ্টি আমাকে ছেড়ে যেতে পারে না। আমি খুঁজে বের করবো মিষ্টিকে।করবোই।
চলবে