#প্রেম_পায়রা 🕊️🕊️
#লেখনীতে: ইনায়াত আহসান ( ছদ্মনাম)
#পঞ্চবিংশ_পর্ব
ইশরাকের বলা কথাগুলো কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায় মিশরাত। কার ই বা তার আর স্নিগ্ধের সাথে শত্রুতা যে তাদের দুজনকে আলাদা করে দেয়ার জন্য এতো প্রচেষ্টা।
– ” আপনি এসব কি বলছেন ভাইয়া? এগুলো কি করে সম্ভব!”
মিশরাতের প্রশ্নের জবাবে ইশরাক আলতো হাসলো।
– ” ইয়েস মিসেস মিশরাত। আমি যা বলছি তা ঠিকই বলছি। তাই এখন সেই মাস্টার মাইন্ড কে ধরতে হলে আগে রবিনকে ধরতে হবে!
আর সেটার জন্য আমার কিছু ইনফরমেশন প্রয়োজন। কারো কাছে রবিনের পার্সোনাল নাম্বার রয়েছে?”
ইশরাকের প্রশ্নে ইরফান কললিস্ট থেকে তড়িঘড়ি করে রবিনের ফোন নম্বর ঘেঁটে ঘেঁটে বের করে ইশরাকের দিকে এগিয়ে দিতেই ইশরাক নম্বরটা নিয়ে নেয়।
ইশরাক নাম্বার টা নিতেই সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। বিকেলের দিকে ঢাকায় পৌঁছে সর্বপ্রথম মিশরাত আর ইরফানের সাথে একটা রেস্টুরেন্টে দেখা করে সে।
– ” আচ্ছা ঠিক আছে, আমি এখন উঠি! খুব সম্ভবত রাতের দিকেই রবিনের লোকেশন ট্রাক করা হয়ে যাবে!
আর রবিনকে একবার হাতের মুঠোয় পেলে ও নিজেই সব কিছু গড়গড় করে বলে দিবে! ডোন্ট ওয়ারি!”
মিশরাত আর ইরফানের দিকে তাকিয়ে বলে গটগট করে বাইরের দিকে হাঁটা শুরু করলো ইশরাক। আর মিশরাতও ইশরাকের যাওয়ার পানে এক ফালি আশা নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে। কে জানে জীবনের কোন মোড়ে গিয়ে থামবে এই ঝড়!
ইফতেখার চৌধুরীর রিলিজের সব পেপারে সাইন করে ডক্টরের কাছে বুঝিয়ে দেয় স্নিগ্ধ। ইফতেখার চৌধুরী আর মিসেস ইয়ামিন চৌধুরীর সাথে কোনোভাবে কথা বলার চেষ্টা করলেও তারা দুজন মুখ ফুটে কিছু বলেন নি। তাতেই স্নিগ্ধর বোঝা হয়ে গিয়েছে যে এবারে তাকে সবকিছু ঠিকঠাক করার জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে!!
দীর্ঘ এক উত্তপ্ত নিঃশ্বাস ত্যাগ করে ইফতেখার চৌধুরীকে নিয়ে বাইরের দিকে পা বাড়ায় স্নিগ্ধ।
গাড়ির কাছে পৌঁছাতেই মিসেস ইয়ামিন চৌধুরী কাঠকাঠ গলায় বলে উঠেন,
– ” বাকি রাস্তা টুকু আমরা একাই যেতে পারবো! তোমার আর প্রয়োজন মনে করছি না স্নিগ্ধ। আর তোমাকে আমি যেটুকু বলেছিলাম আশা করি নিশ্চয়ই তোমার মনে আছে?”
মিসেস ইয়ামিন চৌধুরীর কথায় স্নিগ্ধ শুধু সম্মতি জানালো।
– ” ইটস টু লেট মিশরাত এন্ড ইরফান! আমাদের যা করতে হবে খুব শীঘ্রই করতে হবে! রবিনের লোকেশন ট্রাক করে জানা গিয়েছে সে আরো পঁয়তাল্লিশ মিনিট আগেই সিটি হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়েছে আর লোকেশন অনুযায়ী তার গাড়ি এয়ার পোর্টের দিকেই যাচ্ছে। আমি যদি ভুল না হই, তাহলে খুব সম্ভবত রবিন আজ রাতের মধ্যেই দেশ ছাড়ার প্ল্যান করছে!”
ইশরাকের বলা কথা শুনতে পেয়ে মিশরাতের বিস্ময়ের সীমানা রইলো না। সবকিছু যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
– ” হ্যালো মিশরাত! তুমি কি আমাকে শুনতে পারছো? আমি আমার টিম নিয়ে এক্ষুনি বের হচ্ছি রবিনকে ধরার জন্য!”
– ” আমরাও যাবো আপনার সাথে!”
– ” আর ইউ শিওর? ওখানে কিন্তু রিস্ক ও থাকতে পারে!!”
– ” ইয়েস আ’ম শিওর। আমি আর ভাইয়া এখনি আশ্রম থেকে বের হচ্ছি!”
ইশরাককে উদ্দেশ্য করে বলার পর কল কেটে দিলো মিশরাত। চোখে মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট।
– ” ইশরাক কি বলেছে মিশরাত? রবিনের কোনো ক্লু পাওয়া গিয়েছে!”
– ” হ্যাঁ ভাইয়া, এখনি আমাদের বের হতে হবে! বউমনি কি ঘুমিয়ে পড়েছে?”
ইরফান মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাতেই মিশরাত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
– ” স্যার, মিশরাত ম্যামের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। সে বর্তমানে ঢাকাতেই রয়েছেন। তবে এটা দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে যে তাকে কেউ কিডন্যাপ করে রেখেছে! তবে আমরা জায়গাটা ট্রেকিং করে জানতে পেরেছি!”
হঠাৎ ফোনের অপর পাশ থেকে সৌরভের বলা কথা শুনে চমকে উঠলো স্নিগ্ধ। এ কদিনে কম চেষ্টা করে নি সে মিশরাতকে খোঁজার। কিন্তু আজকে হঠাৎ এভাবে তাকে ফিরে পেতে হবে কল্পনাও করে নি সে।
– ” ওকে আমি আসছি! তুমি আমাকে লোকেশন টা সেন্ড করে দাও!”
স্নিগ্ধর কথানুযায়ী সৌরভ একটা লোকেশন সেন্ড করে দিলো স্নিগ্ধকে।
– ” আমি আসছি মিশরাত! আমি আসছি!”
কথাগুলো বিড়বিড় করতে করতে পাশ থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো স্নিগ্ধ।
গাড়ির ব্যাক সিটে বসে আছে মিশরাত। চোখে মুখে আতংকের ছাপ। পাশেই ইরফান বসে রয়েছে। আর ফ্রন্ট সিটে বসে ইশরাক রবিনের লোকেশন অনুযায়ী ড্রাইভার কে বিভিন্ন ইনফরমেশন দিচ্ছে।
মিশরাতকে চিন্তিত থাকতে দেখে পাশ থেকে ইরফান বলে উঠলো,
– ” চিন্তা করিস না! সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে! ধৈর্য ধর।”
ভাইয়ের কথা শুনে অসহায় দৃষ্টিতে একবার ইরফানের দিকে তাকায় মিশরাত। ইরফান ও চোখের ইশারায় তাকে আশ্বাস দেয়।
– ” ইয়েস! ইয়েস, রবিনের গাড়িটা পাওয়া গিয়েছে ! আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা রবিনের গাড়িকে ক্রস করতে পারবো!”
সামনের সিট থেকে হঠাৎ করে ইশরাকের বলা কথা শুনতে পেয়ে আশার আলো দেখতে পেল ইরফান আর মিশরাতের।
প্রায় মিনিট বিশেক পর গাড়িতে হঠাৎ ব্রেক কষাতে হালকা সামনে ঝুঁকে পড়লো মিশরাত আর ইরফান।
গাড়ির ফ্রন্ট লাইটের আলোয় রাস্তা হালকা আলোকিত হয়ে রয়েছে। একটা গাড়ির সামনে গাড়ি এসে দাড়াতেই দরজা খুলে বেরিয়ে পড়লো ইশরাক। পিছু পিছু মিশরাত আর ইরফান ও বেরিয়ে আসল। এভাবে হুট করে গাড়ির সামনে কেউ আসার কারণে বিগড়ে যাওয়া মেজাজ নিয়ে দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসে রবিন। কিন্তু পরক্ষণেই মিশরাত আর ইরফানকে দেখতে পেয়ে ভড়কে উঠলো রবিন।
– ” ফারাহ্ ত,ত্, তুই এখানে?”
– ” হ্যাঁ মিস্টার রবিন সাহেব। ফারাহ্ এখানে!
তা কোথায় পালানোর প্ল্যান করছিলেন রবিন সাহেব!”
ইশরাকের কথায় সরু চোখে তাকিয়ে বলল,
– ” তুই কে? আর তোমরা এখানে কী করছো? আমারে যাইতে দাও! নাইলে ভালো হইবো না বলে দিলাম!”
– ” হ্যাঁ, হ্যাঁ বলছি তো! এত তাড়া কিসের? আমি ইশরাক ফাহিম! দ্যা ডিটেকটিভ অফিসার! আর এখানে এসেছি তোমার কিছু বিশেষ খাতির যত্ন করতে!”
পুলিশের কথা শুনে চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল রবিনের। কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ছে। আশপাশ কয়েকবার তাকিয়ে পালানোর পথ খুঁজে সেখানে পা বাড়াতে নিলেই ইশরাক সেটা বুঝতে পেরে তড়িৎ গতিতে রবিনের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।
– ” আরে কোথায় পালাচ্ছেন রবিন সাহেব। পালালে হবে নাকি! এখনো প্রশ্নোত্তর করা বাকি!”
– ” আমার রাস্তা ছাড় ইশরাক, নাইলে কিন্তু আমার চাইতে খারাপ আর কেউ হইবো না। আমারে যাইতে দে!”
– ” যদি জেলে না যেতে চাও তাহলে সবটা বলে দাও রবিন। নাহলে কিন্তু তোমাকে জেলে যাওয়ার চাইতে কেউ বাঁচাতে পারবে না! সো যদি জেলে যাইতে না চাও যা যা জিজ্ঞেস করবো সোজাসুজি সেগুলোর উত্তর দিবে!
রবিন হাশপাশ করছে। তার কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। এভাবে যে তাকে ধরা পড়তে হবে তা কল্পনাও করতে পারে নি সে।
– ” আচ্ছা ঠিক আছে! আমি বলতাছি! আমি সব বলতাছি! কিন্তু আমি জেলে যাইতে চাইনা!”
রবিনের কথায় বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো ইশরাকের মুখের কোণে।
– ” মিশরাতের সাথে এসব ছবি কার কথায় বানিয়েছো তুমি? কার প্ল্যান অনুযায়ী এখন পর্যন্ত এত সব ড্রামা চালিয়েছো? এসবের পেছনের মাস্টার মাইন্ড কে?
আর কেনই বা তুমি তার সাথে হাত মিলিয়েছো!”
– ” অরিন! অরিন সারাহ্র কথায়!
অরিনের কথা মাফিক আমি সেইদিন ফারাহ্র লগে শপিং মলে দেখা করি আর প্ল্যান অনুযায়ী মিশরাতের লগে একটু জোরাজুরি করার চেষ্টা করি আর সেটাই পেছন থেকে ক্যামেরা বন্দি করে অরিন। সেইগুলারে ইডিট কইরা তার প্রায় এক মাস পর পেনড্রাইভ আকারে আমি স্নিগ্ধর কাছে পাঠায় দেই। আর অরিন ও তার প্ল্যান অনুযায়ী স্নিগ্ধরে ঘুমের ওষুধ খাওয়াইয়া সেদিন নেশাক্ত বানাইয়া ফারাহ্র সামনে হাজির করে যাতে দুইজনের মধ্যেই ঝগড়া শুরু হয়। আর দুজনেই যাতে দুই প্রান্তে চইলা যায়।”
ছোট একটা দম নিয়ে গড়গড় করে বলে দিল রবিন। আর রবিনের বলা কথা কর্ণপাত হতেই মিশরাতের চোখ দুটো কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম।
– ” অরিনের সাথে তোমার পরিচয় হলো কি করে? আর তুমি ই বা অরিনের কথা শুনে এগুলো করতে গেলে?”
– ” অরিনের সাথে আমার যোগাযোগ হয় প্রথমবার ফোনে। সে আমারে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়া তার প্ল্যান সম্পর্কে আমারে জানায়। আমি ও হ্যাঁ বলছি কারণ আমি ফারাহ্র কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতে চাইছিলাম! আমারে প্রত্যাখ্যান কইরা ঐ স্নিগ্ধর লগে বিয়েতে রাজী হওয়ার জন্য আর সবচেয়ে বড় কথা সেইদিন সবার সামনে আমারে থাপ্পড় মাইরা অপমান করার জন্য আমি অরিনের সাথে হাত মিলাইছি!”
সবটা শুনে যেন মিশরাতের মাথা ঝিমঝিম করছে। গোলক ধাঁধায় পড়ে জীবনের সবচেয়ে বড় কঠিন রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছে সে।
চারপাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন। জঙ্গলের মতো একটা রাস্তার মাঝ বরাবর একটা পরিত্যক্ত ফ্যাক্টরি বা গোডাউনের মতো রয়েছে। আশেপাশে কোনো মানুষের হদিস পাওয়াও বড় মুশকিল।
ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট অন করে ধীর পায়ে গোডাউনের দিকে এগোতে থাকে স্নিগ্ধ। সৌরভের কথা অনুযায়ী মিশরাতকে এখানেই কিডন্যাপ করে রাখা হয়েছে।
গোডাউনের ভিতরে প্রবেশ করতেই সারি সারি কার্টুন চোখে পড়ে স্নিগ্ধর। গলা শুকিয়ে আসছে তার। খানিকটা ভেতরে যেতেই কয়েকবার মৃদু গলায় মিশরাতের নাম উচ্চারণ করে সে। কিন্তু কোনো রেসপন্স না আসায় আরো কয়েক পা সামনে এগোতে থাকে সে। একদম শেষের দিকে পৌঁছাতেই একটা ছায়ামূর্তি দৃশ্যমান হয় তার চোখে। কোনো মেয়েলি ছায়ামূর্তি। চোখে মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল স্নিগ্ধর। অবশেষে মিশরাতের দেখা পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সে।
– ” ম,ম্,মি,মিশরাত!”
আলতো স্বরে পেছন থেকে ডাক দিয়ে উঠলো স্নিগ্ধ।
– ” ওয়েলকাম মিস্টার আশফিন চৌধুরী স্নিগ্ধ! ওয়েলকাম টু দ্যা হেল!!”
কিন্তু প্রত্যুত্তরে অন্য কারো কন্ঠস্বর শুনে আঁতকে উঠল স্নিগ্ধ। এটা তো মিশরাতের গলার আওয়াজ না। তাহলে এই ছায়ামূর্তি টাই বা কার?…………
#প্রেম_পায়রা 🕊️🕊️
#লেখনীতে: ইনায়াত আহসান ( ছদ্মনাম)
#ষট্বিংশ_পর্ব + ( বোনাস পর্ব)
ছায়ামূর্তিটা পেছনে ফিরতেই বিস্মিত হয়ে উঠলো স্নিগ্ধ। মুখ দিয়ে অস্ফুট স্বরে শুধু উচ্চারিত হলো,
– ” অ,অ্,অরিন?”
ছায়ামূর্তিটা সামনে এগিয়ে আসলো।
– ” হ্যাঁ মিস্টার আশফিন চৌধুরী স্নিগ্ধ! অরিন, অরিন সারাহ্!”
আশেপাশে ভালোভাবে পরখ করে নিল স্নিগ্ধ। না কোথাও মিশরাতের চিহ্ন পর্যন্ত নেই। তাহলে সৌরভ তাকে ফোন করে মিশরাতের কিডন্যাপিং সম্পর্কে কথাগুলো বলল কেন?
– ” কি ব্যাপার কাকে খুঁজছো স্নিগ্ধ? মিশরাতকে?
সো স্যাড! মিশরাত এখানে থাকলে তো তুমি মিশরাতকে খুঁজে পাবে!”
অরিনের কথা শুনে সরু চোখে তাকালো স্নিগ্ধ।
– ” আমাকে এভাবে ধোঁকা দিয়ে এখানে আনার মানে কি মিস অরিন? আর সত্যি করে বলোতো তুমি আমার কাছে চাইছো টা কি!!
একবার শুধু মাত্র তোমার জন্য মিশরাত আমাকে ভুল বুঝেছে? জেনেশুনে এগুলো করার পেছনে তোমার কারণ কি অরিন!!”
বদ্ধ গোডাউন রুমে স্বল্প লালচে আলোর একটা লাইট জ্বলছে। আবছা আলোয় দুজনের চেহারাই স্পষ্ট।
– ” কারণ তো অনেকই আছে, মিস্টার স্নিগ্ধ। কিন্তু ঠিক কোনটা দিয়ে শুরু করবো বুঝে উঠতে পারছি না!
কোনটার জন্য হিসেব নিবো আগে? আমার অস্তিত্বকে মুছে দেয়ার জন্য না আমার আনানকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার জন্য!!”
আনানের নাম শুনতেই বুকটা ধক করে উঠল স্নিগ্ধর। অরিনের সাথে আনানের কিসের সম্পর্ক? আর কিসের অস্তিত্ব মুছে দেয়ার কথা বলছে সে?
স্নিগ্ধকে এভাবে ভাবনায় মগ্ন থাকতে দেখে অরিন হেসে উঠলো উচ্চশব্দে। আর সেটা কর্ণপাত হতেই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে অরিনের দিকে তাকায় স্নিগ্ধ। অরিন এবার হাসি বন্ধ করে দিয়ে খুব গভীর ভাবে স্নিগ্ধর চোখে চোখ রাখল।
– ” কিছু কি দেখতে পাচ্ছো এ দু চোখে স্নিগ্ধ। দু বছর আগে লন্ডনের সেই চেনা পরিচিত রাস্তা, রাস্তায় পড়ে থাকা একটা মেয়ের রক্ত মাখা শরীর? কিছু কি মনে পড়ছে?”
অরিনের কথা শুনে স্নিগ্ধর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গিয়েছে ইতিমধ্যে।
-“এই সব কথা, বৈশিষ্ট্য সব তো একটা মানুষের সাথেই মিলে সেটা তো হলো,, না না এ হতে পারে না!”
মনে মনে বিড়বিড় করে বললো স্নিগ্ধ।
– ” এসব তো শুভ্রতার সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা! তুমি কি করে জানলে আর তোমার সাথে শুভ্রতার কানেকশন কি!!”
অরিনের দিকে তাকিয়ে অবাক দৃষ্টিতে প্রশ্ন ছুড়ে দিল স্নিগ্ধ।
– ” এখনো চিনতে পারো নি আমায় স্নিগ্ধ?
এই অরিন সারাহ্ ওপ্স সরি শুভ্রতাকে চিনতে পারো নি তুমি?
এই পাঁচ মাস তোমার সাথে ছিলাম আমি। এতোটা কাছাকাছি থেকেও চিনতে পারো নি? সো স্যাড তাইনা! কিন্তু কি আর করার বলো!
আমি আমার খেলাটাই ঠিক এমন ভাবে সাজিয়েছি যে সাপও মরবে লাঠিও ভাঙবে না!
তবে তোমার জন্য অনেক আফসোস হচ্ছে আমার স্নিগ্ধ!!”
শুভ্রতা নামটা শুনতেই স্নিগ্ধর শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল। পুরো শরীর টাই ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল। এ কি করে সম্ভব!!
– ” শ্,শু্,শুভ্রতা!!!
কিন্তু এটা কি করে সম্ভব!! শুভ্রতা তো দ,দু বছর আগে লন্ডনের সেই রাস্তায় রোড এক্সিডেন্টে ম,মারা যায়। তাহলে তুমি কি করে শুভ্রতা হতে পারো? হাউ ইজ ইট পসিবল!!”
কম্পিত কন্ঠে অরিনকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো স্নিগ্ধ। চোখে মুখে কৌতুহলের বিশাল এক ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
– ” অরিন ম্যাডামের উদ্দেশ্য তোরে আর স্নিগ্ধরে দুইজনরে আলাদা কইরা দেয়া। আর যতদূর সম্ভব জানি স্নিগ্ধরে মাইরা ফালার প্ল্যান করতেছে ঐ মাইয়া!
এর বেশি আর কিছু জানি না আমি। আমারে এবার ছাইড়া দে! আমি পুলিশের কাছে যাইতে চাই না!!”
শেষের টুকু কানে না পৌঁছালেও প্রথম বাক্যটুকু কানে বাজছে মিশরাতের। স্নিগ্ধকে মেরে ফেলার কথা শুনতেই পুরো শরীর হিম হয়ে গিয়েছে।
– ” এখনো তো পুরোপুরি জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলো না রবিন সাহেব, পালাই পালাই করছেন কেন!
সবে মাত্র তো এটা স্বীকার করেছেন এখন আমাদের অরিনের এড্রেস দিন আর যেসব কথা এখন বলেছেন সেগুলোই কোর্টে গিয়ে রিপিট করতে হবে। আর বাদবাকি শাস্তি টুকু না হয় কোর্টেই ফয়সালা করা হবে।
এবার সোজাসুজি বলুন অরিন কোথায়!!”
ইশরাক এগিয়ে গিয়ে রবিনকে জেরা করা শুরু করে দিল। আর এদিকে মিশরাত ঠায় মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে। মুখ দিয়ে টু শব্দ বের হচ্ছে না। মনের মধ্যে হাজারো উদ্ভট চিন্তা ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে তার।
– ” কি বললো এগুলো রবিন? স্নিগ্ধ, স্নিগ্ধ কোথায় আপনি!!
আপনার কিছু হতে পারে না!”
মনে মনে বিড়বিড় করে উঠে মিশরাত।
– ” আমি সত্যিই জানি না অরিন কোথায় আছে! আমারে যাইতে দে!
আমি সবকিছু কবুল করছি তো। আমি পুলিশের কাছে যাবো না!!”
– ” সেটা তো করা যাবে না রবিন সাহেব! আফটার অল এতকিছুর পেছনে আপনি জড়িত ছিলেন। আপনাকে এতো সহজে কি ছাড়া যায় বলুন!!
অরিনের কোনো ঠিকানা না জানলেও তার পার্সোনাল বা কোনো হিডেন নম্বর তো অবশ্যই আপনার জানা যেটা দিয়ে অরিন আর আপনি যোগাযোগ করতেন। সেই নাম্বার দাও! ইমিডিয়েটলি!!
কন্সটেবল আবির, ইনাকে নিয়ে যান! আর নাম্বার টা কালেক্ট করুন ইনার কাছ থেকে।”
ইশরাকের কথা মতো পেছনের গাড়ি থেকে আবির বেরিয়ে এসে রবিনকে ধরে ফেলে।
– ” এইটা ঠিক করলি না ফারাহ্! আমারে এত বড় ধোঁকা দিয়া পুলিশের কাছে ধরায় দিলি! আমি এর শেষ পর্যন্ত দেইখা ছাড়মু। আমি কইতাছি আমি এর চেয়ে বেশি কিছু জানি না!”
রবিনের কথাকে অগ্রাহ্য করে ইশরাকের ইশারায় আবির রবিনের হাতে হাতকড়া পরিয়ে দিয়ে গাড়িতে নিয়ে বসিয়ে রাখে।
এদিকে ইশরাক পেছনে ফিরতেই মিশরাতকে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
– ” মিশরাত, আর ইউ ফাইন?
কি হয়েছে এভাবে স্টোন হয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন? রবিনের কথা ভাবছো? ডোন্ট ওয়ারি, আমি কথা দিচ্ছি আমি স্নিগ্ধর কিছু হতে দিব না!!”
মিশরাতের মাঝে তবুও তেমন কোনো ভাবান্তর ঘটলো না। চোখের কোণে অশ্রু জমে তা চিকচিক করছে।
– ” ইয়েস মিস্টার আশফিন চৌধুরী স্নিগ্ধ! ইউ আর রাইট। আমি অরিন সারাহ্ ওরফে শুভ্রতা!
সেই শুভ্রতা যে কি না শুধু মাত্র তোমার জন্য তার চেহারা, তার অস্তিত্ব, তার ভালোবাসা আনানকে হারিয়েছে। তোমার জন্য সেদিন আনান আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল!!”
– ” কি হাবিজাবি সব বলছো তুমি!! তুমি শুভ্রতা কি করে হবে ? শুভ্রতা তো ঠিক দু বছর আগে কার এক্সিডেন্ট করেছিল! আর ঐ হসপিটালের ডক্টর তো নিজেই আমাকে বলেছিল যে শুভ্রতা ইজ ডেড!
তাহলে তুমি নিজেকে শুভ্রতা বলে দাবি করছো কি করে!!”
স্নিগ্ধর কথায় অরিন মৃদু হাসলো। তবে সে হাসিতেই হাজারটা রহস্য লুকায়িত।
– ” হ্যাঁ বলেছে, ডক্টর তোমাকে বলেছিল যে শুভ্রতা ইজ ডেড। কিন্তু কি আর করার ডক্টরের কথা ভুল প্রমাণিত করে আমি বেঁচে গেলাম। তবে সেটা পুরোপুরি না! অর্ধেক মৃত হয়ে বেঁচে থাকলাম আট মাস। হসপিটালের সেই বেডে কোমায় কাটাতে হয় আট মাস!!
এই আট মাসের এক একটা মুহূর্ত আমার কাছে বিষের মতো লাগতো। তবে আট মাস পর যখন জ্ঞান ফিরেছিল তখনই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খেয়েছিলাম।
যখন জানতে পেরেছিলাম এক্সিডেন্টে আমার চেহারার প্রায় ৬৮ ভাগ ড্যামেজ হয়ে গিয়েছে যার ফলস্বরূপ আমার চেহারা, শুভ্রতার চেহারাকে পাল্টে দেয়া হয়েছিল। সেদিন কোমা থেকে আসার পর পরই আমি দৌড়ে গিয়েছিলাম হসপিটাল থেকে আনানের কাছে! কিন্তু সে কি করেছিল জানো!!
সে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। আমাদের এতো দিনের ভালোবাসাকে প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছিল শুধু মাত্র তোমার জন্য।”
ক্রুদ্ধ কন্ঠে স্নিগ্ধকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো শুভ্রতা। রাগে ক্ষোভে শরীর রি রি করছে।
– ” লাইক সিরিয়াসলি শুভ্রতা? তুমি আসলেই এসব বলছো?
আমার জন্য তুমি আনানকে হারিয়েছো? আমি যে ঠকেছিলাম? তার কি হবে?
আমি তো তোমাকে ভালোবাসতাম তাই না? অনেকটা পথ পাড়ি দিয়েও মাঝ রাস্তায় তুমি আমার হাত ছেড়ে দিয়েছিলে! আর তুমি কি না বলছো যা কিছু হয়েছে সব আমার জন্য??”
আহত কন্ঠে প্রত্যুত্তরে বলে উঠলো স্নিগ্ধ।
—————
– ” মিশরাত! অরিনের লোকেশন পাওয়া গিয়েছে। আর ফোনটাও এখনো ওখানে অন করা আছে!”
ইশরাকের কথায় তড়িৎ গতিতে পাশ ফিরে তাকালো মিশরাত। শুকনো মুখে হালকা আশার আলো দেখা যাচ্ছে।
– ” সত্যি ইশরাক ভাইয়া? আমি স্নিগ্ধর কাছে যাব। প্লিজ আমাকে স্নিগ্ধর কাছে নিয়ে চলুন।”
অনুনয়ের ভঙ্গিমায় বললো মিশরাত।
– ” ডোন্ট ওয়ারি মিশরাত। লোকেশন খুব একটা বেশি দূরে না। ধানমন্ডির আশেপাশে একটা এরিয়ায় আছে অরিন। যেতে খুব একটা বেশি সময় লাগবে। তোমরা গাড়িতে বসে পড়ো, আমি আসছি!”
ইশরাকের কথামতো মিশরাত গিয়ে গাড়িতে বসে পড়লো। মনে মনে হাজার দুশ্চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।
– ” আই উইশ স্নিগ্ধ, আপনার কিছু হয় নি। আপনি ঠিক আছেন!!
আল্লাহ্ প্লিজ!!
স্নিগ্ধর যাতে কিছু না হয়! প্লিজ সেভ হিম!”
মনে মনে দোয়া দুরূদ পড়তে থাকে মিশরাত।
– ” হ্যাঁ তুমি আমাকে ভালোবাসতে! কিন্তু তোমার সাথে রিলেশনে যাওয়ার পর আমি বুঝতে পারি ধীরে ধীরে তোমার প্রতি আমার ফিলিংস গুলো আসলে ভালোবাসা ছিলো না! যেটা ছিল সেটা হলো ভালো লাগা! আর আনান? আনানের প্রতি যে ফিলিংস হচ্ছিল আমার মনে তাতে আমি আনানের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ি। আর সেটা আমি তোমাকে কয়েকবার জানানোর ও চেষ্টা করি! কিন্তু সুযোগ পাইনি।
আর এরই মাঝে তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড আনান ও আমাকে তার ফিলিংস এর কথা জানায়। তাই আমি কোনো কিছু না ভেবেই হ্যাঁ বলে দেই।
সেদিন সন্ধ্যায় ও আমি আর আনান একসাথে রেস্টুরেন্টে দেখা করতে গিয়েছিলাম। সেদিন তুমি ও সেখানে উপস্থিত ছিলে। কিন্তু আমাকে কিছু এক্সপ্লেইন করার সুযোগ না দিয়ে সেখান থেকে চলে গিয়েছিলে তুমি!!
আর তারপর ই এক নিমিষেই আমার জীবনটাকে লন্ডভন্ড করে দিলে তুমি!!
আর তুমি বলছো তুমি কিছু করোনি ?”
অরিন ক্ষীণ কন্ঠে বলে উঠলো।
– ” হোয়াট দ্যা হেল শুভ্রতা! আর ইউ ম্যাড? কি সব উল্টা পাল্টা বলছো!
আমি তো তোমার মৃত্যুর কথা শুনে ২-৩ মাস পরেই বিডিতে চলে আসি!! আর তুমি বলছো কি না আনান আমার জন্য তোমাকে ছেড়ে দিয়েছে? আর ইউ লস্ট ইউর মাইন্ড?”
– ” আমি ঠিকই বলছি! তোমাদের বন্ধুত্বের কারণে আনান ফিরিয়ে দিয়েছিল আমাকে!
আমার ভালোবাসাকে!!
আর ঠিক সেদিন থেকেই আমি ঠিক করেছিলাম আমি প্রতিশোধ নিবো। আমি আবারও ফিরে আসবো তোমার জীবনে। তবে সেটা শুভ্রতা হয়ে না! অরিন হয়ে। আর দেখো আমি সেটাই করেছি। অরিন হয়ে তোমার লাইফে এন্ট্রি করেছি। মিশরাত আর তোমাকে আলাদা করে দিয়েছি! এখানে মিশরাতের কোনো ভুলই ছিল না। মিশরাত তো শুধু আমার খেলার একটা গুটি ছিল!!
আর মিশরাতকে ইউজ করেই আজকে তোমাকে এখানে আনা হয়েছে মিস্টার স্নিগ্ধ। আর সেই কাজে আমার সহযোগী কে ছিল জানো?
তোমারই হিডেন এসিস্ট্যান্ট সৌরভ!!”
অরিনের বলা কথায় একের পর এক দফা অবাক হচ্ছে স্নিগ্ধ। এই কথাটাও তার ব্যতিক্রম নয়।
– ” সৌরভ?”
– ” ইয়েস সৌরভ! ইউ নো এখনকার দুনিয়ায় অলমোস্ট সবকিছু টাকার উপরেই চলে। এটাও আলাদা কোনো বিষয় নয়।
যাক গে সে সব কথা। এখন সময় এসেছে সবকিছুর প্রতিশোধ নেয়ার। আর আমার প্রতিশোধ আমি তোমার মৃত্যু দিয়েই পূর্ণ করবো স্নিগ্ধ। আফসোস তোমার এই মৃত্যুর সময় তুমি তোমার প্রিয়জনকে এক নজর দেখতেও পারবে না।”
বলেই একমুহূর্ত দেরি করে পেছন একটা গান বের করে স্নিগ্ধর দিকে তাক করলো অরিন।
স্নিগ্ধ ও হালকা ঘাবড়ে যায়। অরিন মুচকি হেসে গানের ট্রিগারে যেই চাপ দিবে তখনি পেছন থেকে কেউ সজোরে স্নিগ্ধ বলে চিল্লিয়ে উঠে।
– ” স্,স্ন, স্নিগ্ধ!!!!!”
মিশরাতের গলার আওয়াজ পেয়ে পেছনে ফিরে তাকালো স্নিগ্ধ। মিশরাত হন্তদন্ত হয়ে ছুটে ভেতরে প্রবেশ করে গোডাউনের। পেছন পেছন ইশরাক আর ইরফান ও প্রবেশ করে ভিতরে।
মিশরাত সহ বাকি দুজনকে একসাথে দেখতে পেয়ে চমকে উঠে শুভ্রতা।
– ” তোমরা এখানে!!!”
অরিনের হাতে গান দেখে আঁতকে উঠে মিশরাত। গলা শুকিয়ে এসেছে তার।
– ” কি মনে করেছিলেন অরিন ম্যাডাম? আপনি চুপি চুপি স্নিগ্ধ আর মিশরাতকে আলাদা করে দিয়ে স্নিগ্ধকে মারার প্ল্যান করবেন অথচ আমরা কিছুই করতে পারবোনা? পুলিশকে কি গাধা মনে করেন?”
ইশরাক সোজাসাপ্টা গলায় বলে উঠলো।
– ” হাউ ডেয়ার ইউ? তোমাদের কে বলেছে আমার কথা!!
হু দ্যা হেল!”
– ” সে যেই বলুক না কেন! এখন হাতের ঐ পিস্তল টা বুদ্ধিমানের মতো নিচে ফেলে দিন! নাহলে কিন্তু পরিস্থিতি হিতের বিপরীতে চলে যেতে পারে।”
– ” আমাকে কি বোকা মনে হয়? আমি এত কিছু করেছি শুধুমাত্র আজকের দিনটার জন্য। আর আমাকে পিস্তল ফেলে দিতে বলছো!!
উহু!! আজকে তো আমি শুট করবোই। আর তাতে কেউ বাধা দিলে সেও মরবে। এন্ড ডোন্ট ডেয়ার!!”
একনাগাড়ে বলে কোনো সুযোগ না দিয়ে ট্রিগারে আঙুল চালিয়ে দেয় শুভ্রতা। এদিকে মিশরাত সেটা খেয়াল করতেই আতকে উঠে ।স্নিগ্ধের অনেকটা পাশে থাকায় কোনোকিছু না ভেবে স্নিগ্ধকে ধাক্কা দেয়।
পুরো পরিবেশ একটা গুলির আওয়াজে থমথমে হয়ে গিয়েছে। হঠাৎ করে ধাক্কা সামলাতে না পারায় স্নিগ্ধ গিয়ে পাশের কার্টুনের সাথে ধাক্কা খায়। পাশ ফিরে তাকাতেই ভয়ে কলিজার পানি শুকিয়ে এসেছে তার। পুরো শরীর হিম হয়ে আসছে। নড়াচড়ার বোধশক্তি টুকুও তার মাঝে নেই।
মিশরাতের চোখ বেয়ে অশ্রু টপটপ করে গাল বেয়ে নামছে। ব্যাথায় চোখ দুটো খিচে বন্ধ করে রেখেছে সে। পেটের দিকটায় গুলি ছেদ করে ঢুকে গিয়েছে। যার ফলস্বরূপ পরিহিত সাদা জামাটা লালচে বর্ণ ধারণ করেছে। এদিকে শুভ্রতাও বেশ থতমত খেয়ে যায়। কিন্তু পরক্ষণেই আবারো গান তাক করতেই পাশ থেকে ইশরাক এসে শুভ্রতার হাত গান নিয়ে সজোরে একটা থাপ্পর বসিয়ে দেয় গালে।
– ” কন্সটেবল, এরেস্ট হার!!”
– ” না এ হতে পারে না!! আমার প্রতিশোধ আমি অপূর্ণ রাখতে পারি না। আমাকে ছেড়ে দাও!!”
শুভ্রতার কথায় ভ্রূক্ষেপ না করে ইরফান আর স্নিগ্ধ দৌড়ে মিশরাতের দিকে এগিয়ে যায়। ততক্ষণে মিশরাতের নিস্তেজ শরীর মেঝেতে এলিয়ে পড়েছে।
– ” মিশরাত, এই মিশরাত! চোখ খুলো। কিছু হবে না! কেন? কেন আমার জায়গায় এসে কেন দাঁড়ালে তুমি!!”
– ” বোন প্লিজ ওঠ! দেখ এমন পাগলামি করিস না! প্লিজ চোখ দুটো বন্ধ করিস না!”
ইরফান আর স্নিগ্ধ পাগলের মত প্রলাপ বকে চলেছে আর মিশরাত স্নিগ্ধর কোলে মাথা রেখে চুপটি করে সবটা শুনছে। মুখের মধ্যে স্মিত হাসি লেগেই আছে।
– ” ভাগ্য আমাদের এমন কেন স্নিগ্ধ?
আজ যখন সবটা ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা তখনি আমার হাতে সময় নেই!
আমার কথাটাই বোধহয় সেদিন কবুল হয়ে গিয়েছিল।
সবটা ঠিক হবে! ভুল বোঝাবুঝি দূর হবে! কিন্তু সেদিন আর চাইলেও তোমার কাছে আমার ফেরা হবে না।
দেখো ঠিক সেটাই হচ্ছে।
মৃত্যু তোমার আর আমার মাঝখানে প্রাচীর গড়ে দিয়েছে। যেটা আর চাইলেও কোনোদিন ভাঙা সম্ভব না। এটাই আমাদের দুজনকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে!
আমি চাইনি এমনটা হোক। এত কাছাকাছি এসেও আবার দূরে চলে যেতে হবে!
ভা,ভালো, ভালোবাসি স্নিগ্ধ!”
খুব কষ্ট করে বলে উঠলো মিশরাত। গলা ধরে আসছে বারবার। আর মনে হচ্ছে এই বুঝি নিঃশ্বাস টাও তার সঙ্গ ত্যাগ করে দিবে!!………….
#চলবে 🍂
(