#প্রেমসাগরের_উত্তাল_ঢেউ
লেখিকা-লাবিবা নুসরত
||পর্ব-১২||
ছায়ামূর্তিটা আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগোতে লাগলো। একসময় হালকা আলোয় তার মুখটা দৃশ্যমান হয়ে উঠলো।
নিজের সামনে এই মানুষটাকে দেখে জাহিনের চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম।
“তুই? তার মানে এইসব কিছুর পিছনে তুই ছিলি?”
ফারহান একটা হাসি দিলো। বিশ্রী লাগলো জাহিনের কাছে।
“হুম মাই ইনোসেন্ট ব্রাদার। তুই তো কিছুই বুঝিস না! দেখ আমাকে কেউ সন্দেহও করে নি। কিন্তু তুই এখানে কেন এলি বলতো? কিভাবে জানলি হুম? আমার প্ল্যানটা একটু খারাপ করে দিলি।”
জাহিন~”ভাইয়া? তুই এসব কেন করেছিস? আবার গর্ব করে স্বিকার করছিস! প্রাচী তোর কি ক্ষতি করেছিল?”
ফারহান~”উফফ জাহিন তুই না বড্ড বোকা। জানিস তো আমি কারন ছাড়া কিছুই করি না।”
জাহিন~”সব কিছুর একটা লিমিট থাকে ভাইয়া। তোকে এখনো সম্মান দিচ্ছি বলে কথা ঘুরাবি না। আচ্ছা ভাবির কথা ভাবিস নি একবারো? প্রাচীকে কেন কিডন্যাপ করেছিস? সোজাসাপটা উত্তর দে।”
ফারহান~”আমি তোর কাছে উত্তর দিতে বাধ্য নই জাহিন। আর প্রাচীকে এখানে রেখে চলে যা। আর কাউকে কিছু বলবি না।”
জাহিন~”আমাকে কি ছোট বাচ্চা পেয়েছো যে যা বলবে তা করবো?”
ফারহান~”ওকে! তাহলে মরার জন্য প্রস্তুতি নে। আর প্রাচীকে আমার কাছে দে।”
জাহিন~”ভাইয়া? তুই কি করতে চাচ্ছিলি? আর প্রাচীকে আমি তোর হাতে তুলে দেব ভাবলি কি করে? আমাফ হবু বউ ও।”
ফারহান~”হুহ! হবু বউ? ও কি রাজি ছিল নাকি? যাইহোক যা বলেছি কর। নাহলে আমি ভুলে যাব তুই আমার ভাই।”
জাহিন~”তোর সাহস দেখে আমি অবাক! মানে সিরিয়াসলি? নিজেকে কি ভাবিস? আমি তোকে ভয় পাই?”
ফারহান~”এখানে কে কাকে ভয় পায় তা নিয়ে গবেষণা চলছে না। সো এইসব সো কুল ডায়লগ দেয়া বন্ধ কর।”
জাহিন~”দেখ প্রাচীর অবস্থা ভালো না। এখন তুই ওর সাথে কেন এমন করলি তা বল৷ আমি ওকে নিয়ে হসপিটালে যাব।”
ফারহান~”আমি যা বলেছি তা কর জাহিন। একবারের বেশি দুইবার বলতে আমি পছন্দ করি না।”
জাহিন বিরক্ত হলো। এরপরও নিজেকে সামলে নিল।
“আমি তোকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি? কেন করেছিস এসব?”
ফারহান~”কারন আমি প্রাচীকে ভালোবাসি৷ উত্তর পেয়েছিস?”
জাহিন~”ভাইয়া! তুই বিবাহিত! প্রহর ভাবির কথা কি চিন্তা করিস নি তুই? আর তোদের অনাগত বাচ্চাটা? ওর কথা ভাবলেও তো এইরকম একটা কথা মুখ দিয়ে বের হয় না।”
ফারহান~”না আমি কারো কথা ভাববো না। আমি শুধু জানি প্রাচী আমার। এখন বেশি কথা না বলে ওকে দে।”
ফারহান জাহিনের কাছ থেকে প্রাচীকে নেয়ার জন্য পা বাড়ালো। জাহিন কিছুই করতে পারছে না। কারন কোলে প্রাচী। হঠাৎ ফারহান কাউকে ডাক দিলো। দুইজন লোক এসে জাহিনের কাছ থেকে প্রাচীকে নিয়ে নিল। জাহিন আটকায় না। কারন প্রাচী কোলে থাকলে সে কিছুই করতে পারবে না।
প্রাচীকে নিয়ে তারা দুজন আবারও সেই চেয়ারে বসিয়ে দিলো। জাহিনকে ফারহান বলল,
“হুম তো ব্রাদার। তুমি কি আমার কথা মতো কাজ করবে? নাকি তোমাকে পরপারে পাঠাবো?”
জাহিন~”হুহ! তোকে আমি ভয় পাই না আগেই বলেছি৷ এখন বল? প্রাচীকে যদি ভালোবাসিস তো প্রহর ভাবিকে বিয়ে করে তার জীবন নষ
করলি কেন?”
ফারহান~”আমি প্রাচীকে যেদিন প্রথম দেখি সেদিনই ভালোবেসে ফেলি। কিন্তু বাধ্য হয়ে প্রহরকে বিয়ে করতে হয় শুধু ওর বাবার জন্য। এরপর থেকে আমি প্ল্যান করতে থাকি কিভাবে প্রাচীকে নিজের করে পাবো। কিন্তু প্রহরের জন্য তা সম্ভব হচ্ছিল না। এরপর হঠাৎ শুনি আয়ুসের সাথে প্রহরের বিয়ে। এরপর আমি প্ল্যান করি এই বিয়ে ভাঙবো। আমি আরোহিকে জানতাম। ও প্রাচী আর প্রাচীর পরিবারকে অপছন্দ করতো। আমি আর আরোহি মিলে ওই ছবি গুলো তুলি। ইডিট করে সেখানে প্রাচীর চেহারা দিয়ে দেই। আরোহি সেগুলো আয়ুসকে দেখায়। আমার প্ল্যান সফল হয়েছিল কারন আয়ুস বিয়েটা ভেঙে দিয়েছিল। পরে আরোহি আয়ুসকে বিয়ে করে নেয়। আমি ভেবেছিলাম এখন প্রাচীকে নিয়ে দেশের বাইরে চলে যাবো৷ কিন্তু তা আর হতে দিলি কই! যাইহোক মরার জন্য রেডি হ।”
নিজের কথা শেষ করে আশেপাশে তাকালো সে। চারিদিক ভালো করে লক্ষ্য করে ওই দুইজন কালো পোশাক পরিহিত লোককে বলল,
“যাও তোমরা জাহিনের খাতিরযত্ন করো। আর জাহিন আমি এখন যাই ওকে?”
“এক মিনিট মিস্টার ফারহান খান।”
হঠাৎ কারো কণ্ঠ শুনে থমকে গেলো ফারহান। পিছনে ঘুরে প্রহরকে দেখতে পেল সে। সাথে আনোয়ার আর ইজাজও আছে। প্রহরের চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে।
কণ্ঠ ধরে আসছে। সে দাঁড়ানোর শক্তি পাচ্ছে না। ফারহানের এই রূপ তার কাছে একদম নতুন।
প্রহর ফারহানের কাছে গিয়ে ঠাস করে একটা থাপ্পড় মারলো গালে।
ফারহান গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
“ছিঃ! আমার ভাবতেও লজ্জা হয় তোমাকে ভালোবেসেছিলাম! শেষ পর্যন্ত আমার বোনকে নিয়ে তুমি? আমার বলতেও ঘেন্না লাগছে৷”
পিছন থেকে মিস্টার ইজাজ বলে উঠে,
“তোকে আমি পুলিশে দিবো।”
এই বলে তিনি প্রাচীর কাছে চলে যান। চেয়ার থেকে উঠিয়ে নিজের কোলে নিয়ে নেন।
জাহিনকে বলেন,
“জাহিন আমি ওকে নিয়ে হসপিটালে যাচ্ছি৷ তুমি এদিক সামলাও।”
ইজাজ চলে গেলেন। আনোয়ার শুধু ছেলের কাছে এসে বলেন,
“লজ্জা লাগছে তোকে নিজের ছেলে বলে পরিচয় দিতে। একবার প্রহরের আর ওর অনাগত সন্তানের কথা ভাবতে পারতি!”
প্রহরের দিকে ঘুরে বললেন,
“চল মা। এখানে থাকতে হবে না। ফারহান নামের কেউ ছিল সেটা ভুলে যা। ও মরে গিয়েছে আজ থেকে।”
তিনি প্রহরকে নিয়ে চলে গেলেন। যাওয়ার আগে প্রহর একবার পিছনে ঘুরে তাকিয়ে ফারহানকে দেখলো। চিরচেনা ফারহান এখন আর আগের মতো নেই। সে এখন অনেক দূরুত্বে অবস্থান করছে। প্রহরের এক কথায় ঘৃণা হচ্ছে। এই মানুষটাকে ভালোবাসলো সে? যে কিনা তার সাথে সাথে তার বোনের জীবনটাও শেষ করতে চেয়েছিল?
সবাই চলে গেলেন। জাহিন আর ফারহান এখানে একা। আর ওই দুজন একপাশে বসে আছে। জাহিন ফারহানের দিকে একবার তাকিয়ে বলল,
“খারাপ লক্ষ্য পূরন হয় না।”
জাহিনও চলে গেলো। ফারহান ওই দুজনকে বলল,
“দেখছিস কি? আমাদের কাজ বাকি। পুলিশ আসতে পারে। চল এখান থেকে।”
_______________________
হসপিটালের কোরিডোরে সবাই বসে আছে। জাহিনের হসপিটালেই আনা হয়েছে প্রাচীকে। লারাকে ফারহানা শান্তনা দিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে মিডিয়া খবর পেয়ে গিয়েছে। পুলিশ নিজে থেকেই ইজাজের সাথে দেখা করতে এসেছে।
প্রহর এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে। লারা বা ফারহানা এখনো কিছু জানে না ফারহানের সম্পর্কে। জাহিন ডক্টরের সাথে কথা বলছে। তিনি জাহিনকে খবর দিয়েছেন। জাহিন ভিতরে গিয়ে দেখতে পেলো প্রাচী বেডে শুয়ে আছে। মুখটা মলিন। জাহিন বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারলো না।
ডক্টর মাহিমা। তিনি জাহিনের ভালো ফ্রেন্ড। সে জাহিনকে বলল,
“জাহিন? আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই৷ তার আগে বলো মিস্টার ইজাজের মেয়ে তোমার সম্পর্কে কি কিছু হয়?”
জাহিন একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“আমার হবু স্ত্রী। এখন বল ?”
ডক্টর মাহিমা~”তুমি তো বুঝতেই পারছো যে ওর সাথে কি হয়েছে?”
জাহিন~”আমি জানি! কিন্তু এখন কাউকে এসব নিয়ে বলার দরকার নেই। আর কারন জিজ্ঞেস করিস না প্লিজ। আপাতত আমার কথা শোন। ওর সর্বোচ্চ খেয়াল রাখবি। আর আমিতো আছি।”
মাহিমা বলল,
“ওকে। আমি ট্রিটমেন্ট শুরু করেছি৷ তবে এটা কিন্তু পুলিশ কেইস। আমি তোর কথা মতো চুপ থাকছি। তবে মেয়েটার এই হাল কিভাবে হলো?”
জাহিন~”সেটা পরে বলবো। এখন ওকে দেখ।”
জাহিন বাইরে এলো। মিস্টার ইজাজ তাকে বলল,
“আমার মেয়ে কেমন আছে? ওর সাথে দেখা করতে পারবো?”
জাহিন~”আংকেল এখন দেখা করতে পারবেন না। ডক্টর দেখছে।”
ইজাজ~”ও সুস্থ হয়ে যাবে তো?”
জাহিন ইজাজের হাত মুঠো করে বলল,
“প্রাচী সুস্থ হয়ে যাবে আংকেল। কিচ্ছু ভাব্বেন না।”
ইজাজ~”আর ফারহান? ওর কি হবে? ওকে তো রেখে চলে আসলাম। ওকে আমি শেষ করে ফেলবো।”
জাহিন~”আংকেল আপনি এখানে থাকুন। আন্টির খেয়াল রাখুন। ওইসব আমি দেখবো।”
তখনউ ফারহানা আসেন। জাহিনকে বলেন,
“আচ্ছা ফারহান কোথায়? জাহিন তুই ওকে কল দে তো।”
ইজাজ~”আপা! ওর জন্যই আজ আমার মেয়ের এই অবস্থা।”
ফারহানা~”মানে?”
জাহিন~”মা আমি তোমাকে বুঝিয়ে বলবো। আমার সাথে আসো।”
ফারহানা~”দাড়া তুই। ভাইজান আপনি বলুন।”
এরপর ইজাজ ফারহানাকে সবকিছু বললেন। তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে প্রহরের পাশে গিয়ে বসলেন। প্রহর হঠাৎ করে তাকে জরিয়ে ধরলো।
“আম্মা! আমি কি দোষ করেছিলাম? আমার সাথেই কেন এমন হলো? ফারহান কেন এমন করল? ওকে তো কতো ভালোবাসতাম আমি! আমি ও কিনা আমাকে!”
ফারহানা~”চুপ কর মা। আমি সব শুনেছি। ওকে ছাড়বো না। নিজের পাপের শাস্তি ও পাবে।”
______________________
রাতে,,,,,,,,,
প্রাচীকে বেডে দেয়া হয়েছে। এখনো জ্ঞান ফেরে নি। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে এসব নিয়ে রিপোর্ট করা হয়েছে। জাহিন একা হাতে সব সামলেছে। প্রহর বেশ দুর্বল হয়ে গিয়েছে৷ মাঝখানে একবার জ্ঞান হারিয়েছিল। ওকেও ভর্তি করা হয়েছে। স্যালাইন দেয়া হচ্ছে ওকে। লারা এখন অনেকটা স্বাভাবিক। অন্তত মেয়েটা বেঁচে তার কাছে ফিরেছে। তাকে সব বলেছে ফারহানা। ফারহানের ব্যাপারে শুনে তিনিও চিন্তিত।
লারাকে জোর করে বাসায় নিয়ে গিয়েছে ইজাজ। হসপিটালে এখন জাহিন আর ফারহানা আছে। বাকি সবাই বাসায় গিয়েছে। জাহিন সবাইকে এখন ফারহানকে নিয়ে ভাবতে নিষেধ করেছে।
মাঝরাতে জাহিন কেবিনে ঢুকে৷ প্রাচী ঘুমিয়ে আছে। পাশে নার্স ছিলো৷ জাহিনকে দেখে সে চলে গেলো।
জাহিন প্রাচীর পাশে বসে। ওর হাত গুলো মুঠোয় ভরে নিয়ে একটা চুমু দেয়। কেন জানি প্রাচীকে এই অবস্থায় দেখতে পারছে না।
“আমার একটা ভুলের কারনে তুমি এতো কষ্ট পেয়েছো। ওরা অনেক কষ্ট দিয়েছে না? আমি কাউকে ছাড়বো না। তোমার প্রতি করা অত্যাচারের হিসাব ওদের দিতে হবে। আমার একমাত্র প্রমতত্তা! প্লিজ আমার কাছে ফিরে এসো! তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না!”
জাহিন বুঝতেই পারে নি কখন কান্না করে দিয়েছে। সে দ্রুত কেবিন ত্যাগ করে। নার্সকে প্রাচীর কাছে রেখে প্রহরের কেবিনে যায়৷ সেখানে ফারহানা ছিলেন৷ প্রহরও ঘুমাচ্ছে। ফারহানার চোখে ঘুম নেই। ছেলের এমন একটা কান্ড তাকে হতবাক করেছে।
জাহিন একবার উঁকি দিয়ে বারান্দায় এসে দাড়ালো। ঠিক তখনই ওইদিনের লোকটা এলো।
জাহিন তার উপস্থিতি বুঝতে পেরে বলল,
“নুরুল?”
নুরুল~”জ্বি স্যার! আসলে কি থেকে কি হয়ে গেলো!”
জাহিন~”ওরা ভেবেছিল আমার প্ল্যান নষ্ট করবে। কিন্তু সেটা এতো সহজ না। আমার প্রাচীকে এতো কষ্ট দিয়েছে না? সব কিছু মাশুল দিতে হবে ওদের। তুমি এখন যাও।”
নুরুল~”আচ্ছা স্যার।”
চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,,,,,,,,,,
(গল্প এখনো শেষ হয়ে যায় নি। তাই পুরোটা না পড়ে বাজে মন্তব্য করবেন না প্লিজ।🙂
হ্যাপি রিডিং)
Asole pracir er ki hoichilo purapuri tule doren ni.