#প্রেমসাগরের_উত্তাল_ঢেউ
লেখিকা-লাবিবা নুসরত
||পর্ব-১৩||
ভোরের আলো এখনো ফোটে নি। বাইরে এখনো অন্ধকার। কোরিডোরের বড় ঘড়িটা জানান দিচ্ছে সময় এখন তিনটা বেজে পঁচিশ মিনিট।
দুইহাত মুঠো করে কপালে ঠেকিয়ে বসে আছে জাহিন। চোখ গুলো লাল হয়ে আছে। না ঘুমানোর কারনে এমন হয়েছে।
হঠাৎ নার্স তার সামনে এলো। জাহিন ভয় পেল এই ভেবে যে প্রাচীর কিছু হয়েছে কিনা।
সে নার্সকে জিজ্ঞেস করলো,
“কি হয়েছে? প্রাচী ঠিক আছে তো?”
নার্স~”স্যার! ম্যাম রেসপন্স করছে৷ আসুন।”
জাহিন এক মূহুর্তও দেরি করলো না। প্রাচীর কাছে চলে গেলো। চোখ কাঁপছে। আর হাতে আঙুল গুলোও কিছুটা নরছে। জাহিন মুখটা প্রাচীর কানের কাছে নিল। মৃদু স্বরে বলল,
“প্রাচী?”
প্রাচী একদমই হালকা ভাবে বলে,
“হু।”
জাহিন হেসে ফেলল। সে ভাবতেই পারে নি প্রাচী তার কথা উত্তর দিবে।
জাহিন খেয়াল করলো প্রাচী কিছু বলছে। বোঝার জন্য একটু ঝুকে গেলো। প্রাচী পানি চাচ্ছে। জাহিন খুবই সাবধানের সাথে প্রাচীকে পানি খাওয়ালো।
নার্সকে বলল,
“আপনি যেতে পারেন৷ আমি ওর কাছে থাকছি।”
নার্স চলে যেতেই সেখানে ইজাজ এসে পরলেন। আর সাথে লারাও আছেন। জাহিন তাদের দেখে অবাক হলো।
“আপনারা এই সময়?”
ইজাজ~”আমি একাই আসতাম। লারাকে আটকাতে পারি নি৷ ও কেমন আছে এখন?”
জাহিন~”আলহামদুলিল্লাহ আংকেল। প্রাচী রেসপন্স করছে। জ্ঞান পুরোপুরি ফিরতে একটু টাইম লাগবে।”
লারা গিয়ে প্রাচীর ওপাশে বসলেন। হাত ধরে একটা চুমু দিলেন।
“আমার মেয়েটা! আল্লাহ তুমি ওকে সুস্থ করে দাও!”
এইবলে তিনি জাহিনকে বললেন,
“প্রহর কোথায়? ও কি বাসায় গিয়েছে?”
জাহিন~”না। কেবিনে আছে৷ ওকে স্যালাইন দেয়া হয়েছে। মা ওর কাছেই আছে।”
লারা~”আমি তাহলে ওকে একটু দেখে আসি।”
ইজাজ আর লারা প্রহরের কাছে চলে গেলেন। যাওয়ার আগে ইজাজ জাহিনকে বললেন,
“বাবা তুমি না থাকলে যে কি হতো!”
জাহিন~”আমি দায়িত্ব পালন করেছি আংকেল।”
ইজাজ মুচকি হেসে চলে গেলেন। জাহিন আবারও প্রাচীর কাছে এসে বসলো।
____________________
সকালের দিকে প্রাচীর জ্ঞান ফিরলো। এখনো শরির দুর্বল। সবাইকে বলা হয়েছে প্রাচীর গায়ে হাত তোলা হয়েছে তাই ওর এই অবস্থা। প্রহর এখন অনেকটা ভালো আছে। তবে তার মনের ভেতর ঝর বয়ে চলেছে। তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফারহানা আর আনোয়ার তার সাথে আছে। হসপিটালে প্রাচীর সাথে জাহিন সর্বক্ষণ থাকছে। ইজাজ অবাক হয়ে যাচ্ছেন জাহিনকে দেখে। এতো ব্যস্ত একজন মানুষ দিন-রাত এক করে তার মেয়ের পাশে থাকছে। লারা বেশ নিশ্চিন্ত কারন এবার মেয়েটা একটু সুখের দেখা পাবে৷
প্রাচীকে আস্তে করে উঠিয়ে বেডের সাথে হেলান দিয়ে শুইয়ে দিলো জাহিন।
হাতে একটু ব্যাথা পেয়ে চিৎকার দিল প্রাচী।
জাহিন ঘাবরে গিয়ে বলল,
“ককি হয়েছে প্রাচী? ব্যাথা পেয়েছো?”
প্রাচী একদমই নিচু স্বরে বলে,
“না!”
জাহিন লারাকে বলল,
“আন্টি? স্যুপটা প্রাচীকে খাইয়ে দিন? ওর শরির দুর্বল অনেক।”
জাহিন বাইরে আসলো। ইজাজও পিছন পিছন আসলো।
“জাহিন?”
জাহিন~”জ্বি আংকেল?”
ইজাজ~”তুমি কেন আমাদের কাছ থেকে সত্যিটা লুকাতে গেলে? আমার মেয়ের সাথে ফারহান যা করেছে আমি ওকে খুন করবো৷ তুমি কেন কিছু করতে দিচ্ছো না?”
জাহিন~”আপনাকে টেনশন করতে হবে না আংকেল! আমি তো বললাম এসব আমার উপর ছেড়ে দিন? আমার উপর বিশ্বাস রাখুন। আর প্রাচীকে আমিই বিয়ে করবো। ওর সাথে হওয়া সব অন্যায়ের শাস্তি আসল দোষীকে পেতে হবে।”
ইজাজ~”আমি তোমার বিশ্বাস করি। কিন্তু ফারহানের এমন জঘন্য কান্ডে সবাই হতবাক। ও কেন এমন করলো? আমার কিন্তু সন্দেহ হচ্ছে।”
জাহিন~”সব জানতে পারবো। ধৈর্য ধরুন আংকেল। আপনি প্রাচীর কাছে যান।”
____________________
একটা বাংলো থেকে মাস্ক পরা একটা ছেলে বের হলো। হাতে একটা ব্যাগ। তার মনের ভিতরে প্রচন্ড ভয় কাজ করছে। নিজের জীবন নিয়ে সে আশংকায় আছে। সামনে একটা কালো রঙের গাড়ি। ছেলেটা গাড়ির দরজা খুলতে গেলে কেউ তাকে আটকিয়ে ধরে।
আশেপাশে তাকিয়ে সে দেখে কয়েকটা লোক দাড়ানো।
শুকনো ঢোক গিলে ছেলেটা বলে,
“তোমরা কারা?”
সেখান থেকে একজন এগিয়ে আসে। ছেলেটার হাত মোচর দিয়ে বলে,
“আমি কে সেটা খুব ভালো করেই জানিস। কিন্তু বড্ড বড় একটা ভুল করে ফেলেছিস তুই। আর এটার শাস্তি তোকে পেতে হবে। খুব ভয়ংকর হবে তোর শাস্তি।”
এইবলে ছেলেটাকে নিয়ে তারা চলে গেলো।
_____________________
আয়ুস মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। সে টিভিতে প্রাচীর খবর দেখেছে। আরহি অনেকক্ষন ধরে আয়ুসকে পর্যবেক্ষন করছে।
আরোহি আয়ুসের সামনে যায়। সেদিকে আয়ুসের কোনো খেয়াল নেই। চোখ বন্ধ করে প্রাচীর কথা ভেবে যাচ্ছে সে। সেদিন প্রাচীর চোখে নিজের জন্য ভালোবাসা দেখে নি সে। দেখেছে ঘৃণা। আয়ুস ভেবে পায় না বিস্বাসঘাতকের এমন চাহনির মানে কি! আর জাহিনকে সে চিনেছিলো। অনেকবার বিভিন্ন প্রোগ্রামে আর টিভিতেও জাহিনকে দেখেছে সে।
আয়ুস এতো মনোযোগ দিয়ে এসব ভাবছিল যে আরোহিকে খেয়াল করে নি।
হঠাৎ আরোহি আয়ুসের পাশে বসে পরলো। ওর কাধে হাত রেখে বলল,
“কি হয়েছে তোমার?”
আয়ুস~”কিছু না।”
আরোহি~”আচ্ছা শোনো। একটা কথা বলি?”
আয়ুস~”হুম বলো।”
আরোহি~”তুমি বাবা হবে!”
আয়ুস চোখ বড় করে আরোহির দিকে তাকায়।
“সত্যি?”
আরোহি~”হুম সত্যি!”
______________________
প্রাচী চুপ করে শুয়ে আছে। চোখ বেয়ে পানি পরছে ওর। হঠাৎ করে এমন একটা ধাক্কা মেনে নিতে পারছে না সে।
মনে মনে প্রাচী ভাবছে,
“কেন আমার সাথেই প্রতিবার এমন হয়? আমি কেন সুখি হতে পারি না। এতো সব কষ্ট আর নিতে পারছি না আমি।”
জাহিন প্রাচীর চোখে পানি দেখে ওর কাছে যায়।
“প্রাচী?”
প্রাচী চোখ খুলে ফেলে। জাহিনের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। জাহিন প্রাচীর পাশে বসে। মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“আর কয়েকটা দিন এখানে থাকতে হবে এরপর বাসায় যাবো। বুঝেছো?”
প্রাচী~”আমার ভালো লাগছে না।”
জাহিন~”উহু কষ্ট করে কথা বলতে হবে না। আমি বুঝতে পারছি তোমার এখানে ভালো লাগছে না। আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করো।”
প্রাচী~”আমার কষ্ট হয় না কথা বলতে। আমাকে একটু উঠান।”
জাহিন প্রাচীকে ধরে উঠিয়ে বসায়। পিছনে একটা বালিশ রেখে হেলান দেয় প্রাচী।
জাহিন প্রাচীর হাত ধরে বলে,
“এখন কেমন লাগছে?”
প্রাচী~”মোটামুটি। মা-বাবা কই? আর আপুনি?”
জাহিন~”আছে। তারা আসবে একটু পর।”
প্রাচী~”জাহিন?”
জাহিন~”হুম বলো?”
প্রাচী~”আমাকে কে কিডন্যাপ করেছিল? জানেন আমি মুখ দেখি নি। কিন্তু ওই ছেলেটা…”
প্রাচী আর কিছুই বলতে পারে না কান্না করে দেয়।
জাহিন ওকে জরিয়ে ধরে। প্রাচী জাহিনের বুকের উপরে মাথা রেখে কান্না করেই চলেছে।
জাহিন শান্তনা দিচ্ছে না বা কান্না করতে নিষেধ করছে না। মনে মনে সে বলে,
“এবারের মতো কান্না করে নাও! যত পারো চোখের জল বিসর্জন দাও। এরপর থেকে আমি তোমার চোখে আর পানি আসতে দেব না।”
হঠাৎ জাহিনের ফোনে একটা কল আসে। জাহিন সেখানেই রিসিভ করে। ওপাশ থেকে কিছু শুনে জাহিন একটা হাসি দেয়৷
চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,,,,,,,,
(আসসালামু আলাইকুম। গল্প প্রায় শেষের দিকে। আর বেশি পর্ব নেই৷ আর কাল একটা শেষ ধামাকা আছে। তখন পুরো রহস্য জেনে যাবেন।
হ্যাপি রিডিং)