প্রেমের পরশ পর্ব -১১

#প্রেমের_পরশ
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ছোয়াকে তোরাব আগলে নেয়। অতঃপর তাকে দাড় করিয়ে তার দিকে পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বিনীত ভাবে জানতে চায়,
‘ঠিক আছ তো তুমি?’

ছোয়া ক্লান্ত গলায় উত্তর দেয়,
‘জ্বি, ধন্যবাদ আমাকে সামলে নেওয়ার জন্য।’

তোরাব তখন ছোয়ার একটু কাছে এসে বলে,
‘কেউ চাইলে সারাজীবনের জন্য আগলে রাখতে পারি।’

ছোয়া কি বলবে বুঝতে পারছিল না। শুধু অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল ছোয়ার দিকে। এমন সময় ছোয়ার কানে আসে আমানের রাগী কন্ঠস্বর। আমান ছোয়াকে রাগি গলায় বলে,
‘কি করছিস তুই এখানে?’

ছোয়া পিছনে ফিরে আমানের দিকে তাকায়। আমান ছোয়ার দিকেই এগিয়ে আসছিল। ছোয়ার একেবারে কাছে এসে তার হাতটা শক্ত করে ধরে আমান বলে,
‘খুব বাড় বেড়েছিস তাইনা তুই? একেই তো এভাবে একা একা অসুস্থ শরীর নিয়ে ভার্সিটিতে এসেছিস আর এখন রাস্তায় এভাবে মানুষের গায়ে ঢলে পড়ছিস!’

ছোয়ার মাথায় রাগ উঠে যায়। আমানের কথার প্রতিত্তোরে সে বেশ কড়া গলায় বলে,
‘আপনাকে আগেও বলেছি আমান ভাই ভদ্রভাবে কথা বলতে। যদি আমার সাথেকে ভদ্র ভাষায় কথা বলতে না পারেন তো আর বলার দরকার নেই।’

আমান ছোয়াকে কিছু বলতে যাবে তখন তোরাব বলে ওঠে,
‘ছোয়া তো ঠিকই বলেছে আমান। একটা মেয়েকে কিভাবে সম্মান দিয়ে কথা বলতে হয় সেটা তোর শিখে আসা উচিৎ। ছোয়ার সাথে এত জোরাজোরি করার কোন রাইট কিন্তু তোর নেই।’

আমান তখন ঠাট্টার স্বরে বলে,
‘তুই আমাকে এসব ভদ্রতা শেখাতে আসিস না। আমি সেটা তোর থেকে ভালোই জানি। অন্তত তোর মতো মুখোশ পড়ে নিজের ভেতরের কুৎসিত রূপকে আড়াল করি না।’

তোরাবকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ছোয়ার হাত ধরে নিজের সাথে নিয়ে যায় আমান। একটু এগিয়ে যাওয়ার পর ছোয়া এক টানে নিজেকে তোরাবের থেকে সরিয়ে নেয়। অতঃপর হালকা শ্বাস নিয়ে বলে,
‘আপনি এভাবে আমার সাথে জোরাজোরি কেন করছেন আমান ভাইয়া?’

আমান ছোয়ার দিকে তাকিয়ে শান্ত ভাবে বলে,
‘আমি যা করছি সেটা তোর ভালোর জন্যই করছি ছোয়া। তুই ঐ তোরাবের থেকে দূরেই থাকিস সেটাই তোর জন্য ভালো হবে।’

‘আমি একজন এডাল্ট মেয়ে। তাই আমি কার সাথে মিশব আর কার সাথে মিশবো না সেটার অনুমতি নিশ্চয়ই তোমার কাছ থেকে নেব না। আর তোরাব ভাইয়ের মধ্যে খারাপ কি আছে? ভার্সিটির সবাই তার প্রশংসা করে। কত ভদ্র একটা ছেলে, কত ভালো ভাবে কথা বলে।’

আমান এবার রেগে যায়। ছোয়াকে চোখ রাঙানি দিয়ে বলে,
‘ভুলে যাস না চকচক করলেই সোনা হয়না। তোরাবকে তোর থেকে ভালো আমি চিনি। সেই কলেজ লাইফ থেকে ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব। ওকে বাইরে থেকে যেমন লাগে ও কিন্তু আসলে তেমন নয়।’

ছোয়া আমানের কথায় গুরুত্ব দেয় না। সে নিজের মতো হাটতে থাকে। অতঃপর একটি সিএনজি নিয়ে সেখানে উঠে পড়ে।

২১.
বাড়িতে পৌছে ছোয়া শুয়ে পড়েছিল৷ বিকেলের দিকে ঘুম ভাঙলে আলগোছে উঠে পড়ে সে। আচমকা বিছানায় শক্ত কিছু একটা জিনিস তার শরীরে আঘাত হানে। ছোয়া বিছানা হাতড়ে একটা ব্রেসলেট পায়। ব্রেসলেটটা হাতে নিয়ে ছোয়া বলে,
‘এটা কার? আর এখানে কি ভাবে এলো?’

অতঃপর ছোয়া গতরাতের ঘটনা মনে করার চেষ্টা করে। কাল রাতে অসুস্থ শরীরে ছোয়া অনুভব করে কেউ তার পাশে এসে বসেছিল। তার মাথায় জলপট্টি দিচ্ছিল এবং তার অনেক সেবাও করছিল। ছোয়ার সেই সময় মনে হয়েছিল সেটা হয়তো তার আম্মু ছিল। কিন্তু এই ব্রেসলেটটা দেখে এখন তার বেশ খানিকটা চিন্তা হচ্ছে।

ছোয়া ব্রেসলেটটা ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলে,
‘এরকমই একটা ব্রেসলেট তো আমি আমান ভাইয়ার হাতে দেখেছিলাম। তার মানে কি,,,’

তার ভাবনা শেষ করার পূর্বেই মতিয়া বেগম রুমে চলে আসেন। তিনি ছোয়ার উদ্দ্যেশ্যে বলেন,
‘তুই সাবধানে থাকার চেষ্টা করস মা। হুনলাম ঐ চেয়ারম্যানের পোলা জাহিদ নাকি জেল থাইকা জামিন লইয়া বের হইছে। তোকে নিয়া আমার খুব চিন্তা হইচ্ছে। শোন তুই কিন্তু এহন একা কোথাও যাবি না। আমানের লগে থাকবি সবসময়।’

ছোয়া মতিয়া বেগমের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘তুমি এত হাইপার হয়ো না। ঐ জাহিদ আর আমার কিছু করতে পারবে না।’

মতিয়া বেগম আর কিছু বলার আগেই আমান রুমে চলে আসে। ছোয়ার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘আমার ব্রেসলেটটা খুজে পাচ্ছি না কোথাও। আজ তুই ভার্সিটি যাওয়ার পর আমি এই রুমে এসে আমার ভার্সিটির একটা প্রজেক্ট কমপ্লিট করেছি। দেখ তো কোথাও পড়ে আছে কিনা।’

ছোয়া ব্রেসলেটটা আমানকে দেয়। অতঃপর মনে মনে ভাবে,
‘আমি জানি কাল রাতে আপনি আমার রুমে এসেছিলেন কিন্তু এখন সেটা স্বীকার করছেন না। আপনাকে আমি বুঝতে পারি না আমান ভাইয়া। আপনার ব্যবহার এত অদ্ভুত কেন? কখনো মনে হয় আপনি সত্যি আমার কথা ভাবেন, আবার কখনো মনে হয় আপনি আমাকে সহ্যই করতে পারেন না। কিন্তু আসল সত্যিটা কি?’

২২.
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে ছোয়া রুমে এসে বই পড়তে বসেছে। এমন সময় তার ফোনে একটি ফোনকল চলে আসে। ছোয়া বিরক্ত হয়ে ফোনটা রিসিভ করতেই শুনতে পায় জাহিদের গলা। জাহিদ বিশ্রীভাবে হেসে বলছিল,
‘কি ভেবেছিলি তুই? আমাকে জেলে পাঠিয়ে শান্তিতে থাকতে পারবি? দেখ তোর শান্তি নষ্ট করার জন্য আমি চলে এসেছি।’

ছোয়া ভীষণ ভয় পেয়ে যায় জাহিদের কথা শুনে। ভয়ে সে ঘামতে শুরু করে। ছোয়া অনুনয়ের সুরে বলে,
‘আপনি এমন কিছু করবেব না। আমি তো আপনার কোন,,,’

এমন সময় কারেন্ট চলে যায়। ছোয়ার ভয় যেন দ্বিগুণ বেড়ে যায়। ভয়ে সে চিৎকার করে ওঠে। আমান ছোয়ার রুমের পাশ দিয়েই যাচ্ছিল। ছোয়ার চিৎকার শুনে দ্রুত চলে আসে ছোয়ার রুমে। ছোয়াকে আগলে নিয়ে বলে,
‘ভয় পাস না তুই। আমি আসি তোর পাশে।’

ছোয়া আমানের হাত শক্ত করে ধরে বলে,
‘জাহিদ আমাকে হুমকি দিয়েছে আমার ক্ষতি করবে। আমার খুব ভয় করছে আমান ভাইয়া।’

আমান তখন ছোয়াকে সাহস জুগিয়ে বলে,
‘তুই একদম ভয় পাবি না। ভয় মানুষকে আরো বেশি দূর্বল করে দেয়। তোকে সাহসী হতে হবে ছোয়া। মনে রাখিস তোকে রক্ষা করার জন্য সবসময় কাউকে পাশে পাবি না। তাই নিজের আত্মরক্ষার ব্যবস্থা তোর নিজেকেই করতে হবে।’

কথাটা বলে ছোয়ার হাতে একটি স্প্রে তুলে দিয়ে আমান বলে,
‘এটা তোর কাছে রাখবি সবসময়। এই স্প্রেটা তোর উপর হা’মলাকারীর চোখে ছু’ড়বি দেখবি সে কয়েক মিনিট চোখে দেখতেই দেখতেই পাবে না। তাছাড়া কেউ তার ক্ষতি করার চেষ্টা করলে তার জায়গামতো লা’থি মা’রবি। এভাবেই মেয়েদের উচিৎ নিজেদের সেফ রাখার ব্যবস্থা করা।’

ছোয়া যেন এবার সাহস পেলো। আমানের দিকে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
‘তোমাকে ধন্যবাদ। আপনার জন্য এখন আমি একটু ভরসা পাচ্ছি।’

আমান ছোয়াকে উদ্দ্যেশ্যে করে বলে,
‘আর একটা কথা। তোরাবের থেকেও পারলে দূরে থাকিস। কারণ ছেলেটা সুবিধার নয়। ছেলেটার সম্পর্কে এক লাইনে যদি কিছু বলা যায় তাহলে আমি বলব প্লেবয়। এমন ছেলের সাথে কথা না বলাই ভালো।’

আমান একটু থেমে আবার বলে,
‘আর হ্যা, তোর প্রয়োজন হলে আমাকে বলিস আমি তোর জন্য অনেক ভালো ছেলে খুজে দেব। যেই ছেলে তোর জন্য পার্ফেক্ট হবে।’

ছোয়া মৃদু হেসে বলে,
‘আমার জন্য ছেলে খোজার আপনার প্রয়োজন নেই আমান ভাইয়া। আমি নিজের বর নিজেই খুজে নেব।’

আমান ঠাট্টা করে বলে,
‘তুই আমার উপর ভরসা রাখতে পারিস। নিজে না জানি কোন টাকাওয়ালা টাকলা, মোটা, আর বুড়ো মানুষের গলায় ঝুলে পড়ার প্ল্যানে আছিস।’

ছোয়া বলে,
‘এমনটা নয়। আমি নিজের জন্য খুব ভালো কাউকেই পছন্দ করব। যে সবদিক দিয়ে সেরা হবে। একদম তোমার মতো।’

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here