প্রেয়সী পর্ব ১৪+১৫

প্রেয়সী

১৪|
মনে হচ্ছে, এহসান আমার থেকেও বেশি ভয় পাচ্ছে। সান্ত্বনা খুঁজে খুঁজে ওরে দিতে হবে। যেখানে সান্ত্বনা আমার প্রয়োজন।
তন্ময় ভাইয়ের পেছনে মারজি দাঁড়িয়ে। ও ইশারা করছে দ্রুত মাফ চাইতে। মাফ চাইতাম? ভয়েস বেরোবে আমার? ইশ। কখনোই না। ভয়ে আমি চোখ নিচেই রেখেছি। সাহস হচ্ছেনা আর তাকানোর।
সে রেগে নাকি অন্যকিছু বোঝা যাচ্ছেনা। তীব্র ভাবে শ্বাস নিচ্ছেন আর ফেলছেন। ঘেমে শরীরের শার্ট সম্পুর্ন ভিজে। কপালের সাইড হতে ঘাম বেয়ে আছে। স্ট্রিট লাইটের আলোয় তার ফেইসে লাল আভাস। আমি ওড়নার কোণ দু’হাতে চেপে ধরলাম। মাইর দিবে নাকি? দিলে দিবে। কিন্তু রাস্তায়? সাথে মারজি আর এহসান আছে। এখন থাপ্পড় দিলে, মানইজ্জত সব যাবে। আঁড়চোখে তাকালাম।
সে এখনও ঠাঁই দাঁড়িয়ে। তার চোখের তীক্ষ্ণতা আমার উপর।
আচমকা এসে, দুবাহু চেপে ধরলেন। আকাশ ফাটিয়ে চেঁচালেন,
‘ ঘর থেকে বেরোনোর অনুমতি কে দিয়েছে তোকে?
তুই কি চাস, হাত-পা ভেঙে বাড়িতে বসিয়ে রাখতাম? কতটা স্পর্ধা বেড়েছে মেয়েটার। কিছু যদি হতে যেত? এতটা নাদান তুই এখনও কেন? কী করব তোকে নিয়ে আমি? ‘
দ্রুত কথা বলায়, তার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। মুখমণ্ডল সম্পুর্ন
লাল হয়ে উঠছে । আমি কেঁদে ফেললাম। কাঁদতে কাঁদতে তার কোমর জড়িয়ে ধরলাম। দ্রুত মাথাটা তার বুকে এলিয়ে দিলাম। তাকে এভাবে দেখে আমারই ভয় করছে। অথচ, জড়িয়ে ধরে নিজেই হতবাক। সত্যিই এমন একটা কাজ করে ফেললাম আমি? হাত কাঁপছে। আমার বুকের তীব্র ধুকপুক কি সে শুনতে পাচ্ছেন? তার শরীরের সেই অদ্ভুত ঘ্রাণ নাকে আসছে । ম্যানলি স্মেল। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে, কতটা ক্লান্ত সে । নিশ্চয়ই ঢাকা থেকে ডিরেক্ট এসেছেন, আমায় খুঁজতে।
তন্ময় ভাই শক্ত হয়ে আছেন। তার চেঁচামেচি বন্ধ হয়ে গিয়েছে নিমিষেই। ধীরে কেমন শান্ত হয়ে গেলেন। পরপরই
আমার মাথা চেপে ধরলেন। শক্ত কন্ঠে বললেন,
‘ আর কখনও যদি এটার দ্বিতীয় বার না আসে। যদি আসে, সেদিনই দু’পা ভেঙে বাড়িতে বসাই রাখব। শুনেছিস? ‘
আমি তার বুকেই মাথা দোলালাম। সেও দাঁড়িয়ে। একচুল ও সরেননি। বরং ধীরে পিঠে হাত রাখলেন। হঠাৎ চোখ গেলো বাম সাইডে, মারজি মুখ চেপে হাসছে। লজ্জা লেগে উঠলো। দ্রুত সরে দাঁড়ালাম।
সামনে তাকাতেই দেখলাম দ্রুত পায়ে রবিন ভাই আসছেন। সাথে বাবা আর বড় চাচ্চু।
সোজা হয়ে দাঁড়ালাম। তখনই বাবা এসে বুকে আগলে নিলেন।
তার গাল আমার মাথায় রাখলেন। বাবা এখনও কাঁপছেন। যেমন বড় ম্যারাথন শেষ করে এসেছেন। রবিন ভাইয়া অসহায়ত্ব কন্ঠে বললেন,
‘ পাগলের মতো নাচিয়েছিস। ভয়ংকর ভাবে। দেখ, এখনও শ্বাস নিতে পারছিনা। ‘
বড় চাচ্চু বললেন,
‘ হয়েছে। মেয়েটা ক্লান্ত। বাড়ি চল।’
আবারও চোখের কোণে জল জমছে। বাবা দু’হাতে মুখ তুলে, চোখের জল মুছিয়ে দিচ্ছেন। তার চোখ মুখ অন্ধকার। এইতো কেঁদে ফেলবেন এমন অবস্থা। সে আমাকে জড়িয়ে হাঁটা ধরলেন। কোনো প্রশ্ন বা রাগ কিছুই প্রকাশ করলেন না। গাড়িতে বাবা আমাকে নিয়ে পিছু বসলেন। বাবার বুকে মাথা এলিয়ে দিলাম। বারবার মাথায় হাত দিচ্ছেন। বাবা হয়তো প্রচন্ড ভয় পেয়েছেন। এখনও তীব্র ভাবে শ্বাস ফেলছেন।
বাড়ি ছেড়ে সত্যিই বোকামি করেছি। সকলে কতটা ভয় পেয়েছেন, তা তাদের চেহারায় স্পষ্ট। অবশ্য প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে শরীর আমার।
চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। বাড়ি থেকে রেগে বেরোনোটা প্রচন্ড ভয়ংকর। অদ্ভুত চিন্তাভাবনায় শরীরে শক্তি থাকেনা। একদম অসহায় লাগে। পৃথিবীতে আমার কেউ নেই, তা মনে করিয়ে দেয়।

হয়ত ঘুমিয়ে পরেছিলাম। উঠেছি বাবার ডাকে। এখনও গাড়িতে। আশপাশে তাকালাম। বাড়ির সবাই মেইনগেইটের সামনে। মামা’রা এখনও যায়নি। সুমনা’কে দেখতেই, মাথাটা ধরে আসলো।
চোখ বুঝে শ্বাস ফেললাম। বেরোতে পারিনি, তার আগেই বড় মা চেঁচাচ্ছেন। আমি নামতেই সে তার বুকে জড়িয়ে নিলেন।
‘ কীরে। এইধরনের কাজ কেউ করে, হ্যাঁ? জানিস কতটা ভয় পাইয়ে দিয়েছিস? ‘
বলতে বলতে ভেতরে নিচ্ছেন। রুবি দীপ্ত আমার পাশেপাশে হাঁটছে।
আঁড়চোখে তাকালাম, মা কাঁদছেন। কাঁদুক। সে তার ভাইদের চিন্তা করেন। সবসময় তাদের কথা আগে ভাববেন। কষ্ট পাক সে।
কথা বলবো না তার সাথে। সবসময় ভাইয়ের মেয়েকে ছাড় দিবে কেন? ভাই কষ্ট পাবে, রাগবে সেগুলো কেন ভাববেন? আমার কষ্ট সেটার কি? সেটার মুল্য নেই?
ড্রয়িংরুমে বসাতে চাইলেন। আমি বসলাম না। উপরে চলে যাব বললাম।
মামা সামনে আসলেন,
‘ কি অসভ্য হয়ে যাচ্ছিস’রে? আমরা এসেছি কথা বলতেই তো, নাকি? কি হয়েছে, মিটমাট করতাম। আর তুই বাড়ি ছেড়ে চলে গেলি? বলি এতো জেদ কই থেকে আসে? মা মারলেই ঘর ছাড়তে হয় বুঝি? এগুলো কই থেকে শিখিস?’
বাবা শক্ত হয়ে আছেন। আচমকা আমাকে টেনে বললেন,
‘ উপরে যা। ‘
যেতে পারনি। মামী বাম হাত চেপে ধরলেন।
আদুরে স্বরে বললেন,
‘ এমন অল্প ঘটনায়, মাথা গরম করলে হয়? আজ বাদে কাল পরের বাড়ি যাবি, তখন? তখন তো এমন মাথা গরম করলে, শ্বাশুড়ি ঘর ছাড়া করবে। আয় বস। তোর জন্য চিন্তায় কেউ বাড়ি ফিরতে
পারিনি এখনও। ‘
বসলাম না, ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলাম। ঘাড়ত্যাড়া ভাবলে ভাবুক।
তাও এই মেয়েকে আমি একদমই বরদাস্ত করব না। একদমই না।
পরপরই রুমে চলে এলাম। এদের দেখতেও ইচ্ছে হচ্ছেনা একদম।
ঘর আটকে বসে রইলাম।

ফ্রেস হয়ে মাত্র বেরিয়েছি। তখনই দরজায় নক। আওয়াজ দিলাম,
‘ কে? ‘
‘ আমি। ‘
দীপ্তর কন্ঠ। খুললাম। শুধু দীপ্ত না। সাথে রুবি আপু।
‘ কি সাহস’রে তোর। বাব্বাহ৷ ভয় পাইয়ে দিয়েছিস আমাদের। কী মারাত্মক থমথমে পরিবেশ ছিলো বাড়িতে, তা যদি দেখতিস। ‘
কথা বললাম না। রুবি আপু গাল ছুঁয়ে দিলেন,
‘ গালে মেরেছিল চাচী? ‘
দীপ্ত হাত টেনে বিছানায় বসালো,
‘ চিন্তা করিও না। আর কখনও চাচী হাত তুলবে না তোমার উপর। আজ ছোট চাচ্চু সেই রেগেছেন। চাচী’কে সোজাসাপটা বলেছেন,
ভাইয়ের পরিবারের তরফদারী করতে চাইলে, ল্যাগেজ নিয়ে চলে যেতে৷ আরও বলেছেন, আমার মেয়ের গায়ে আর কক্ষনও হাত তুলবে না। আহ, সেই এক্সাইটম্যান্ট বস। ‘
রুবি আপু দীপ্তর মাথায় টোকা মারলেন,
‘ তুই চুপ কর।’
দীপ্ত মাথা দুলালো,
‘ আররে, মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট নিউসই তো দেওয়া হলোনা। ‘
আঁড়চোখে দীপ্তর দিক তাকালাম। ও সোজা হয়ে দাঁড়ালো। হাত উঁচু করে অ্যাক্টিং করতে লাগলো,
‘ লিসেন। তুমি অরুর কী হও, আই ডোন্ট কেয়ার। ফারদার, যদি আর কখনও শুনি তুমি ওর ব্যাপারে নেগিটিভিটি ছড়িয়েছ, বিলিভ মি, তোমাকে নিজ হাতে হাজতে ভোরে আসবো। যত্তসব ডিজগাস্টিং পিপলস। ‘
আমি অবাক হয়ে গেলাম। এটা নিশ্চয়ই তন্ময় ভাই। সেই এভাবেই কথা বলেন রাগলে।
‘ কখন বলেছেন এগুলো? ‘
দীপ্ত হাসছে,
‘ তুমি উপরে উঠার কিছুক্ষন পর। ইশ, যদি সুমনা আপুর চেহরাটা দেখতে। ‘
রুবি আপু হাত টানতে লাগলেন আমার।
‘ চল খাবি। বড় মা ডাকছে। ‘
‘ যাবো না। ‘
‘ চল, চল। নাহলে তন্ময় তোকেও ছাড়বে না। সে এভাবেই প্রচন্ড
রেগে। ‘
তাও বসে রইলাম। মা হয়তো আমার উপর রেগে। এখন দেখলেই সব ঝাড়বেন। আর এখন কোনো কথা শুনতে প্রস্তুত নই আমি। ওদের দুজন’কে জোরপূর্বক বের করলাম। তারপর বিছানায় লাফ মারলাম। আপাতত একটা ঘুম প্রয়োজন।

হঠাৎ তন্ময় ভাইয়ের কন্ঠে লাফ মেরে বসলাম। সে হয়তো দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। ডাকছেন আমায়,
‘ অরু? ‘
দ্রুত জবাব দিলাম,
‘ জ্বি, আসছি। ‘
শরীর থেকে চাদর সরিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। ওড়না খুঁজে, বুকে জড়িয়ে দ্রুত বেরোলাম।
‘ জ্বি? ‘
‘ খেতে আয়। ‘
ইনিয়েবিনিয়ে বললাম,
‘ খিদে নেই। খাব না। ‘
‘ থাপ্পড় খাবি? দ্রুত হাঁট। ‘
হু। অসহায় আমি। একদম কপালে সুখ নেই। নিচে নেমে চুপচাপ টেবিলে বসলাম। লজ্জা করছে। সবাই খুবই রেগে আমার উপর হয়তো। এতো বড় কান্ড করলাম। এখন প্রচন্ড অপ্রস্তুত হয়ে আছি।
বড় মা পেছন হতে গাল টানলেন,
‘ এবার ছাড় পাচ্ছিস। এরপর এমন কাজ করলে, খবর আছে
কিন্তু। ‘
ছোট চাচী ধমকে দিলেন আমায়,
‘ তুই ছোট? যদি কিছু হতো? বোকা মেয়ে। কতটা টেনশনে রেখেছিস, আইডিয়া আছে? ‘
‘ আইডিয়া থাকবে কীভাবে? মাথায় আবর্জনা দিয়ে ভরা। ‘
রবিন ভাইয়ের কথায় তাকে ভেঙচি দিলাম। কি সাধুসঙ্গ আসছে। নিজেই কতবার রেগে বাড়ি ছাড়লো। আমাকে ভাষন দিচ্ছে। বাহ।
‘ কাকে ভেঙচি দিচ্ছিস? আমি তোর বড়। ‘
রুবি আপু ঠেস মারলেন,
‘ কী আমার বড়। এহ। ‘
সকলেই হাসছেন আর কথা বলছেন। ভুলেই গেলাম আজকের বড় ড্রামার কথা। হঠাৎ বড় চাচ্চু বললেন,
‘ রুবির জন্য প্রস্তাব এসেছে। ‘
নিমিষেউ থমথমে হয়ে গেলো পরিবেশ। শুধু তন্ময় ভাইয়ের অনুভুতিহীন কন্ঠ,
‘ আমার এক বন্ধু রুবিকে পছন্দ করে। রুবিও পছন্দ করে। ছেলেদের অবস্থা ভালো। তুমি বললে, ও ওর পরিবার নিয়ে
আসবে। ‘
কী সাহস। একদম সোজা বলে দিলো? এদিকে রুবি আপু খাবার রেখে দৌঁড়। বাকি সবাই তন্ময় ভাইয়ের দিক তাকিয়ে, যিনি আপাতত খাচ্ছেন। মাথা নিচু করে। কোথাও তাকাচ্ছেন না। তার কী কোনো হেলদোল নেই? সে যে রুবি আপুর সম্পর্ক ফাঁস করে দিল।
প্রেয়সী

১৫|
সকলেই বেশ অপ্রস্তুত। বড় চাচ্চু বললেন,
‘ কোন বাড়ির ছেলে? এদিকেই থাকে তো? ‘
‘ হ্যাঁ। ‘
‘ একটু এক্সপ্লেইন কর তন্ময়। ‘
‘ তারা আসলে জেনে নিও৷ ‘
‘ আজীব। তুমি একটু খুলে বলবে না পরিবার সম্পর্কে? ‘
‘ রুবি’কে জিজ্ঞেস কর। ‘
ব্যস। আঁড়চোখে দেখলাম রুবি আপু ফুঁসছেন। ওইযে দরজার পেছনে দাঁড়িয়ে। এবার সে দ্রুত উপরে চলে গেলেন। তন্ময় ভাই’টা কি দিয়ে তৈরি? এ’রে দিয়ে কোনো ভরসা নেই। একদম ফাঁসিয়ে দিবে নগদে।
বড় চাচ্চু শ্বাস ফেললেন,
‘ তাহলে আসতে বলিও। ‘
তন্ময় ভাই মাথা নাড়ালেন। তারপর উঠে চলে যাচ্ছিলেন।
তখনই বড় মা রান্নাঘর থেকে, চেঁচাতে চেঁচাতে আসছেন,
‘ তুই খেলি কী? এই খাওয়া হয়ে গেলো? ‘
সে টেবিল হতে পানির গ্লাস নিয়ে, বড় মা’র হাতে ধরিয়ে দিলেন।
‘ পানি খাও। ‘
এবং দ্রুত পায়ে চলে গেলেন। বড় মা আবারও চেঁচাতে চেঁচাতে রান্নাঘরে যাচ্ছেন,
‘ হ্যাঁ। আমার মাথা তো গরম। ‘
আমি ভাবছি, চাচ্চুরা, বাবা সকলেই পারমিশন দিয়ে দিলেন? এতো সোজা? এই তন্ময় ভাই কী বাড়ির? বাব্বাহ। এক কথায় সবাই চুপ করে, মেনে নিল। একেই না বলে পাওয়ার। দ্যি গ্রেট তন্ময় শয়তানের পাওয়ার। আমার মতো ভালো মানুষের দামই নেই বাড়িতে। রাজত্ব থাকে শয়তান’দের। হু।

ড্রয়িং রুমে সকলে বসে। রুবি আপুকে বড় চাচ্চু’র পাশে বসানো হয়েছে। তার চেহরার দিক তাকানো যাচ্ছেনা। মনে হচ্ছে কেউ ভিষণ ভাবে তাকে বকেছে বা বকবে। বড় চাচ্চু আদুরে হাতে, রুবি আপুর মাথায় স্পর্শ করলেন। শান্ত স্বরে প্রশ্ন করলেন,
‘ তোমার কী সেই ছেলেকে পছন্দ? ‘
রুবি আপু চুপ। ছোট চাচ্চু ধমক দিলেন,
‘ কথা বলছিস না কেন? ভাইয়া প্রশ্ন করছে। ‘
বড় চাচ্চু ছোট চাচ্চু’কে চোখ রাঙালেন,
‘ তোমাকে বাম হাত ঢুকাতে বলিনি। বলেছি না বাচ্চাদের সাথে চেঁচামেচি করে কথা বলতে না? ‘
ছোট চাচ্চু চুপ হয়ে গেলেন। আমি মুখ চেপে ধরলাম। হাসি পাচ্ছে প্রচন্ড। এখনও আমার বাবা আর ছোট চাচ্চু বড় চাচ্চু’কে বাঘের মতো ভয় পান। মুখের উপর কখনও কথা বলেননি। আমাদের দাদা মারা যান অল্প বয়সে। আর দাদী তো তারও আগে। তো বলা যায়, তাদের বড় চাচ্চু নিজ হাতে মানুষ করেছেন বিয়ে দিয়েছেন।
রুবি আপু ধীরে জবাব দিলো,
‘ জ্বি চাচ্চু। ‘
‘ তুমি কী শিয়র? ‘
‘ জ্বি। ‘
‘ তাহলে কথা কী আগাবো? ‘
রুবি আপু লজ্জা পেলেন। চাচ্চু হাসছেন।
‘ বাহ। আমাদের মেয়ে বড় হয়ে গেছে। ‘
তারপর তন্ময় ভাইকে বললেন,
‘ কথা বলেছিলে? ‘
তন্ময় ভাই ওপর পাশের সোফায় বসে। চা খাচ্ছেন,
‘ হু। কাল বিকেলে আসবে। ‘
‘ তাহলে তুমি কাল ঢাকা যেও না। বাড়িতে থেকো। ‘
‘ আমি থেকে কী করতাম? ‘
বড় চাচ্চু হাসলেন।
‘ বোন’কে দেখতে আসবে, আর তুমি বলছ থেকে কী করবা? ‘
এবার শব্দ করে হাসতে হাসতে বললেন,
‘ অরু’কে দেখতে আসলেও এটা বলবা নাকি? ‘
আমি প্রচন্ড লজ্জা পেলাম। রবিন ভাইয়ের পিছু লোকালাম। তন্ময় ভাই এবার চায়ের কাপ টেবিলে রাখলেন।
‘ মজা করছ আমার সাথে?’
‘ মজা কেন? অরুকে তো বিয়ে দিতে হবে। তাই না? আর প্রপোজাল ও অনেক আসছে। মেয়ে বড় হয়েছে। ‘
তন্ময় ভাই উঠতে নিচ্ছিলেন। বড় চাচ্চু হেসে আবারও বললেন,
‘ জবাব দিবেনা? ‘
‘ কী শুনতে চাচ্ছো এক্সাক্টলি? ‘
‘ তুমি জানো আমরা কী শুনতে চাচ্ছি। ‘
‘ তুমি থাকতে আমার বলতে হবে কেন? বিয়েটা দিয়ে দাও অরুর আমার সাথে। ‘
বোমা ফাটিয়ে তন্ময় ভাই চলে গেলেন। বড় চাচ্চু হাসছেন।
আমি দ্রুত সাইড কেটে চলে এলাম। সকলেই আপাতত এই বিষয়ে কথা বলছেন। কীভাবে বলে দিলেন? লোকটা কি আদৌও আমাদের মতো রক্তে তৈরি মানুষ?

এদিকে রুবি আপুর নাচ কে দেখে। কামরায় ঢুকে তার আধুনিক নাচ। সেই নাচে আমাকে নিয়েও দুললো৷ বারবার বলছে,
‘ অরু। উফ। সবাই মেনে নিল। এই তন্ময় তো আমার খুশির জীন বেরোলো। ‘
আর দীপ্ত’কে তো কোলেই নিয়ে ফেলল,
‘ নামাও আমাকে। কী লজ্জাজনক। আমার কী বয়স আছে
এখনও কোলে চড়ার? ‘
রুবি আপু হাসছেন,
‘ আমার খুশিতে, তোরাও নাচবি। ‘
‘ নাচবো। আগে নামাও। ‘
দীপ্ত’কে নামিয়ে দিতেই, ও চোখ গরম দেখিয়ে চলে যাচ্ছে আর ধীরে ধীরে কি কি যেন বলছে। সেদিকে খেয়াল নেই রুবি আপুর। তিনি দিব্বি নাচতে ব্যস্ত। হঠাৎ রবিন ভাই আসলো। সে আসতেই রুবি আপু নাচা বন্ধ করে দিল।
‘ বাহ? এতো সুখ? ‘
‘ ওই তুর কমনস্যন্স নেই? দেখছিসস মেয়েরা-মেয়েরা ঘরে? ‘
‘ মেয়েদের দেখছিনা। বোনের নামে গরুর মাংসে তৈরি দুই গরু দেখছি। ‘
আমি অবাক চোখে তাকালাম। এইটা বলতে পারলো? আমি কী বলব, তার আগেই রুবি আপু রবিন ভাইয়ের চুল টেনে ধরলেন। শুরু হলো দ্বিতীয় যুদ্ধ। এদের লেগেই থাকে। আর আমার লাগে তন্ময় ভাইয়ের সাথে। অবশ্য এমন চুল টানাটানি না। খোঁচা মেরে কথা বলা। সেটাও তন্ময় ভাই মারেন। আমিতো তার সাথে কথা বলেই পারিনা। আমি একশো কথা বলব, অথচ সে এক সেন্টেন্স বলে আমাকে কাঁদিয়ে চলে যাবে। ভাবতেই হাসতে লাগলাম।
রবিন ভাইয়ের কন্ঠ,
‘ ইব্রাহিমের মতো শিক্ষিত ভদ্র ছেলে, তুরে পছন্দ করলো? আস্তাগফিরুল্লাহ। এই ছেলের চোখে কী পড়েছে? ‘
‘ আচ্ছা? তোর গার্লফ্রেন্ডের নাম্বার আছে। দাঁড়া। ‘
‘ এহ। এগ্লা সব টাইম পাস। কল দিলে কিচ্ছু আসবে যাবেনা। ‘
রবিন ভাইয়ের সাথে না পেরে, রুবি আপু বিচার দিতে চলে গেলো।
রবিন ভাই যেতে যেতে বলল,
‘ তন্ময় ডেকেছে তোকে। ‘
‘ এখন? ‘
‘ হু। ‘
এখন? এতো রাত্রে। আমার ধরেছে ঘুম। মারাত্মক ধরনের।
‘ কই সে? ‘
‘ ছাঁদে। ‘

ছাঁদে উঠলাম। রাতের আকাশ চমৎকার দেখাচ্ছে। তারাদের মেলায় একদম পরিপূর্ণ। সেই পরিষ্কার চমৎকার আকাশের নিচে একজন চমৎকার যুবক দাঁড়িয়ে। মারাত্মক সুন্দর দেখাচ্ছে। কথা বলছেন আর এদিক-সেদিক হাঁটছেন। কথা হচ্ছে এমন,
‘ হ্যাঁ – দ্যাটস ওকে। গুড। ইউ আর ডুয়িং ওয়েল। ওয়াও। ইজ ইট ট্রু। আচ্ছা। ‘
কথা বলতেই জানেন না লোকটা । অবশ্য আমার সাথে তো এটুকুও বলেন না। যাও বলেন সেটুকু হলো ধমক। উম, সেদিন রাত্রে কত কিউট ছিলেন। একদম কিউট তন্ময়। ওমন থাকলে কী হয়? ইশ।
তা’কে আর কখনও কী সেই ভাবে দেখতে পাব? আবার ড্রাংক হয়ে যাক। যাক, যাক, যাক। তন্ময় ভাই ফোন রাখতেই, আমার দিক ফিরলেন। ইশারা করলেন তার দিক যেতে। আমি ধীরে এগোলাম।
বুকের এই রোগ কী কখনও যাবেনা? তার কাছে যাওয়া’টা একটা অসুখ মনে হয়। যেটার মেডিসিন নেই।
সে আমার চুল পেঁচিয়ে ধরলেন।
‘ চুল ছাড়া কেন? ‘
নিচুস্বরে জবাব দিলাম,
‘ খুলে গিয়েছে। ‘
এবার একটু শক্ত করে ধরলেন। কানের কাছে মুখ এনে বললেন,
‘ বিয়ে করবি তো আমায়?’

চলবে
চলবে
® নাবিলা ইষ্ক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here