বউ চুরি পর্ব ১১

#বউ চুরি
#সিজন-১

পর্ব ঃ ১১

লেখিকাঃ জান্নাতুল নাঈমা

রাগে সে কি করবে বুঝতে পারছে না। সব তছনছ করে দিতে ইচ্ছা করছে তার। মুসকান কে কিছু বলতে যাবে তৎক্ষনাত মুসকান ওঠে এক দৌড়ে বাথ রুম চলে গেলো। ইমন হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। কি ঘটলো ব্যাপারটা………

মুসকান এর গা গুলাতে লাগলো। নেশা করে এসেছে আজো এতো বাজে গন্ধ ভেবেই বমি বমি ভাব হলো তার। চোখে মুখে পানি দিয়ে বেশ কিছুক্ষন গলায় পানি দিয়ে গড়গড় করে ফেলে দিলো। এখন তার একটু ভালো লাগছে।
ছি কি গন্ধ, ওগুলো কিভাবে খায় মানুষ ছি।
তয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলো মুসকান।
ইমন এখনো দাড়িয়ে আছে দুহাত মুঠ করে। কঠোর চোখে দেখছে সে মুসকান কে।

মুসকান তয়ালে টা রেখে মাথা নিচু করেই এগিয়ে এলো ইমনের দিকে। সামনে দাঁড়িয়ে ভয়ে ভয়ে আমতা আমতা করতে লাগলো। সরি বলবে বলবে ভাব এমন সময় ইমন মুসকানের হাত ধরে টেনে বাইরে দাঁড় করালো। মুসকান অবাক চোখে ইমনের দিকে তাকালো। চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে। রাগ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। আবারো কিছু বলবে এমন সময় ইমন বলে ওঠলো- আমার রুমে যেনো তোমায় আর কখনো না দেখি।
মুসকানের বুকটা ধক করে ওঠলো। ধীর গলায় বললো- কি বলছো??
একবার বলেছি শুনতে পাওনি। এক কথা বার বার আমি বলিনা আশা করি সেটা তুমি জানো। ধমকের সুরে বলে ওঠলো ইমন।
মুসকান কেঁপে ওঠলো। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো- সরি।
আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে। একটু শুনবে?? মায়া ভরা চাহনিতে তাকালো ইমনের দিকে।

চুপ কোন কথা নেই। আমার সামনে থেকে সরে যাও তোমার মুখ দেখতেও ইচ্ছা করছে না। বলেই বেশ শব্দ করে দরজা লাগিয়ে দিলো। মুসকান আবারো কেপে ওঠলো। এইভাবে ইমন তাকে বের করে দরজা লাগাবে সে ভাবতে পারেনি। বিশ্বাস করতে পারছে না এতোক্ষন যা ঘটলো কিছুই বিশ্বাস হচ্ছে না তার। ধপ করে দরজার সামনেই বসে পড়লো।
দরজায় মাথা ঠেকিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেদে যাচ্ছে মুসকান। ইমন ও দরজার ওপাশে বসে সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে একের পর এক।
কাঁদতে কাঁদতে একসময় দরজায় মাথা হেলিয়েই ঘুমিয়ে পড়লো মুসকান। কান্নার শব্দ, ফুপানির শব্দ আর পাচ্ছে না ইমন।
হয়তো ওর রুমে চলে গেছে ভেবেই বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।

ভোরের দিকে ইরাবতী ছেলের রুমে আসতেই দরজার সামনে মুসকান কে দেখতে পেলো।
একি তুমি এখানে কেনো জোর গলায় বললো ইরাবতী। নাহ ঘুম ভাঙছে না।
নিচু হয়ে হালকা ঝাকাতেই ঘুম ভেঙে গেলো মুসকানের। চোখ দুটো কচলে ইরাবতীকে দেখে হালকা চমকে ওঠলো। ওঠে দাঁড়ালো মাথা নিচু করে। কাল রাতের কথা মনে পড়তেই বুকটা হুহু করে ওঠলো।

কি আমার ছেলে ঘরে জায়গা দেয়নি তো। দিবেওনা তোমার জন্য এটাই ভালো হবে তুমি আর ইমনের ধারে পাশে এসো না। তোমাকে ইমন আর চায় না এটা নিশ্চই বুঝতে পেরে গেছো।
মুসকান অসহায় মুখে তাকালো ইরাবতীর দিকে।
এই কি সেই মামনি যে আম্মুর থেকে বেশি ভালোবাসতো আমায়?
সব ভালবাসা শেষ হয়ে গেলো। শুধুই নিজের ছেলের জন্য আমায় ভালোবেসেছিলো মন থেকে মেয়ের মতো ভালোবাসেনি? মনে মনে ভাবতে লাগলো মুসকান।
কি হলো চুপ করে দাঁড়িয়ে আছো কেনো। দেখো ইমন এর কাছে এসে লাভ নেই আমরা ওর জন্য মেয়ে দেখবো আর অন্যএ বিয়ে দিয়ে দিবো। তুমি এতোদিন যেভাবে ছিলে ওভাবেই থাকো। এতোদিন যেহেতু আমার ছেলেকে মেনে নিতে পারোনি এখনও আর মেনে নিতে হবে না। এ বাড়িতে জায়গা পেয়েছো এতেই সন্তুষ্ট থাকো।
পুরো শরীর যেনো অবশ হয়ে যায় যখনি ইমনের অন্যএ বিয়ের কথা শুনে মুসকান। সত্যি নিজের ভালবাসার মানুষ অন্যকারো হয়ে যাওয়ার কথা শুনলে কতোটা যন্ত্রনা হয় হারে হারে টের পাচ্ছি আমি। একি কষ্ট ও তো ইমন ভাইয়া ও পেয়েছে। কতোটা আঘাত তাকে আমি দিয়েছি। সেই সব আঘাত কি আমি ভালোবেসে ভুলিয়ে দিতে পারবো না। একটা সুযোগ কি আমাকে কেউ দিবেনা। চোখ বেয়ে পানি ঝড়ে পড়লো। ইরাবতী দেখেও না দেখার ভান করে দরজায় বেশ কয়েকবার টোকা দিলো।
ইমন ঘুম ঘুম চোখে হালকা তাকিয়ে ওঠে দরজা খুলে দিয়ে আবার গিয়ে শুয়ে পড়লো। নেশার রেশটা তার কাটেনি এখনো। ইরাবতী ছেলের কান্ড দেখতে দেখতে ভিতরে গেলো।

মুসকান স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়েই রইলো। দৃষ্টি তার বিছানার দিকে।
ইরাবতী ইমন কে ডাকতে লাগলো। মায়ের ডাকে ভালোভাবেই ঘুম ভেঙে গেলো ইমনের। ওঠে বোসলো।
কি অফিস নেই আজ কে??
আছে তো।
তাহলে ওঠসিস না কেনো এখনো যা ফ্রেশ হয়ে নে।
ইমন বিছানা থেকে নামতে যাবে এমন সময় ইরাবতী বললো- দিপক আজি আসবে হয়তো বিকাল হবে। কাল তোকে আর দিপক কে নিয়ে আমার বান্ধবীর বাসায় যাবো ওর ছোট মেয়ে কে দেখতে।
দিপকের জন্য?? বলেই ওঠে দাঁড়ালো খুব স্বাভাবিক ভাবেই।
না দিপকের জন্য না তোর জন্য। মেয়েটা খুব ভালো দেখতেও সুন্দরী।
ইমন রেগে গেলো মাকে কিছু বলতে যাবে এমন সময় চোখ পড়লো দরজার বাইরে। মুসকান চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।
মুসকান কে দেখে দাঁতে দাঁত চেপে বললো-
আচ্ছা ঠিক আছে কখন বের হবে কাল আমাকে জানিও। আমি সময় বের করে নিবো বলেই বাথরুম চলে গেলো।
মুসকান আর এক মূহুর্তও দাঁড়ালো না দৌড়ে গিয়ে তার রুমের দরজা আটকে দিলো। কান্নায় ভেঙে পড়লো।
হে আল্লাহ আমার শেষ আশাটাও আর রইলো না। সব শেষ হয়ে গেলো। আমাকে এ বাড়ির কেউ ভালোবাসে না কেউ নেই আমার। কেউ নেই, কেউ নেই বলেই ডুকরে কেঁদে ওঠলো। কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরেই নেতিয়ে পড়লো মেয়েটা। ধীর গলায় বলতে থাকলো – আমি তোমাকে ভালবাসি খুব ভালোবাসি। একদিন দূরে গিয়েই আমি তোমাকে খুব খুব করে অনুভব করেছি বিশ্বাস করো। তোমার আদর তোমার ভালবাসা খুব মিস করি। আমাকে তো তোমার মতো করে কেউ আগলে রাখে না ইমন ভাইয়া। জানো এবাড়ির কেউ আর আমাকে আগের মতো ভালোবাসে না। আমি না খেয়ে থাকলেও কেউ খোঁজ নেয় না। আমর মন খারাপ দেখে কেউ আর অস্থির হয়ে পড়ে না। আমি খুব একা হয়ে গেছি খুব। আমার বুকের ভিতর খুব কষ্ট হয়। আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। তুমি কেনো বুঝছোনা কেনো দূরে সরে যাচ্ছো। আমি ভুল করেছি আমাকে তুমি আরো অনেক অনেক মারো তবুও ছেড়ে যেওনা। আমার কেউ নেই কেউ তো নেই আমার। আপন মনে কেঁদে যাচ্ছে আর এসব বলে যাচ্ছে মুসকান। যে কেউ দেখলে এখন ভাববে এ একটা মানসিক রোগী।

সকালের খাবাড় খেয়ে যে যার মতো চলে গেলো।
ইমন রুমে এসে কিছু ফাইল নিয়ে বের হচ্ছে।

আলেয়া মুসকানের খাবাড় নিয়ে বেশ কিছুক্ষন দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে। কোন সারা শব্দ না পেয়ে জানালা দিয়ে ওকি দিতেই যা দেখলো তাতে তার হাত থেকে সব খাবাড় পড়ে গেলো।
ভয়ে একটা চিৎকার দিয়ে ওঠলো। ইমন বাবা গো……….

ইমন আলেয়ার এমন চিৎকার শুনে ছুটে এলো। সাথে ইরাবতী, দীপান্বিতা দিপু ও এলো।
ইমন জানালায় তাকাতেই তার হৃদস্পন্দন থেমে গেলো। পাগলের মতো দরজায় দুকাধ দিয়ে দুবার ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেলো। তার শরীরে যেনো হাজারগুন শক্তি বেড়ে গেছে। প্রিয় জিনিস হারানোর ভয়টা যে কি সেটা সে দ্বীতিয়বার আবার অনুভব করতে লাগলো।
দরজা খুলতেই দৌড়ে গিয়ে মুসকানের পা দুটো ধরলো।
সবাই এসে তারাতারি মুসকানের গলা থেকে ওড়নার বাঁধন টা খুলে ফেললো। ইমন মুসকান কে জরিয়ে ধরে চিৎকার করে কেঁদে ওঠলো।
মুসকান… এই মুসকান…. কি করলে এটা তুমি,, কেনো করলে। এই আমাকে ছেড়ে তুমি কোথায় যাচ্ছিলে এতো বড় সাহস কে দিয়েছে তোমায়।
বার বার একি ভুল কেনো করছো এবার কিন্তু আরো বড় শাস্তি দিবো তোমায়। চিৎকার করে বললো ইমন।
মুসকান নেতিয়ে পড়লো ইমনের কোলে।

ইমন তারাতারি হসপিটাল যেতে হবে সময় নেই ইমন ওঠো। দিপান্বিতা চিৎকার করে বলে ওঠলো। সবাই কান্নায় ভেঙে পড়লো। ইমন মুসকান কে কোলে নিয়ে পাগলের মতো ছুটে গেলো। গাড়িতে ওঠে তার বুকে মুসকান কে চেপে ধরলো। ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে আর ইমন কান্না করতে করতে মুসকান কে ডেকে যাচ্ছে। পাগলের মতো করছে সে। ছটফট করছে মুসকানকে বার বার জাগানোর চেষ্টা করছে। ইমনের চোখের অজস্র পানি মুসকানের মুখে পড়ছে।

ইরাবতী, দিপান্বিতা, দিপু, আলেয়া পিছনের গাড়িতে আসছে। মোজাম্মেল চৌধুরী কে ফোনে জানানো হয়েছে।

আল্লাহ আমার মুসকানের যেনো কিছু না হয় আল্লাহ তুমি একটু মুখ তুলে তাকাও। কাঁদতে কাঁদতে আল্লাহ কে ডাকতে লাগলো ইমন।

চলবে……………………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here