বন্ধ দরজা ৩ ৬ পর্ব এবং শেষ পর্ব

“”বন্ধ_দরজা””
পর্ব-৩৬
লেখা-মিম
-” তুমি না থাকলে আমি সোসাইটি দিয়ে কি করবো? মুড়ি খাবো সোসাইটি দিয়ে? বলো কোথায় যেতে চাও?”
-” বুঝে শুনে বলছো তো? এখানে তোমার সমস্ত বিজনেস পড়ে থাকবে।”
-” বুঝে শুনেই বলছি। বিজনেস কি করবো না করবো সেটা সম্পূর্ন আমার ব্যাপার।”
-” আমি দেশের বাইরে যেয়ে সেটেলড হতে চাচ্ছি।”
-” ঠিকাছে। কোথায় হতে চাও বলো?”
-” যেখানে তোমার সুবিধা হয়।”
-” অস্ট্রেলিয়া? কানাডা?”
-” বললাম তো যেখানে তোমার সুবিধা হয়।”
-” দু তিন মাস সময় দিতে হবে আমাকে।”
-” হুম দিলাম।”
-” আরেকটা কথা রাখতে হবে।”
-” কি?”
-” বাবার বাড়ি যেতে পারবা না। আমার এখানে থাকতে হবে।”
-” তোমার মা যদি ফের এখানে আসে?”
-” আসবে না। আর যদি আসেও তোমার সাথে মুখ নেই? কথা বলতে পারো না? উত্তর দিয়ে দিবা।”
-” তানভীর তুমি সিউর তো তুমি আমাকে নিয়ে দূরে সেটেলড হবে?”
-” অফকোর্স আই এ্যাম সিউর। তুমি ছাড়া আমার কে আছে বলো? তারউপর আমার বাচ্চাটা? নিজের সন্তানের কাছ থেকে কি দূরে থাকা সম্ভব? আমার দ্বারা কোনোভাবেই সম্ভব না। ওয়ার্ল্ডস বেস্ট পাপা হতে চাই আমি।”
-” নিজের বাচ্চারকথাটাই ভাবলে। আমার কথা তো ভাবলে না। কখনো তো বললে না ওয়ার্ল্ডস বেস্ট হাজবেন্ড হতে চাই।”
-“তুমি কি জেলাস সুহায়লা?”
-” কার উপর জেলাস?”
-” বেবির উপর।”
-” ধ্যাত কি যে বলো না।”
-” মাফ করেছো আমাকে?”
-” না। আরও কিছুদিন কাঠ খড় পোড়াও। এরপর মাফ পাবে।”
-“তো কি কি করতে হবে আমাকে?”
-” খুঁজে বের করো। সব তো আর আমি মুখে তুলে খাইয়ে দিবো না। যথেষ্ট রোমান্টিক তুমি। আমার চেয়েও বেশি। তোমাকে ভেঙে চুরে সব বলতে হবে বলে মনে হয় না।”
কথাটা বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলো সুহায়লা। দরজার কাছে যেয়ে থমকে দাঁড়ালো সে।
-” তোমাকে একটা কথা বলি?”
-” হুম বলো।”
-” যেদিন এ বাড়িতে বিয়ে করে এসেছিলাম সেদিন তোমার এই ছোট্ট ছাদটা দেখে মনে হয়েছিলো আমার পার্কে যেতে হবে না প্রেম করতে। এখানে বসেই তোমার সাথে দিব্যি প্রেম করতে পারবো। জায়গাটা পার্কের চেয়ে আরওবেশি সুন্দর। কখনো আশাটা পূরন হয়নি। পূরন করবে?”
-” এখান থেকে যাওয়ার আগেরদিন রাত পর্যন্ত তোমার সাথে এই ছাদে প্রতিদিন সময় কাটাবো। খুশি?”
কোনো উত্তর দিলো না সুহায়লা মুচকি হেসে চলে গেলো। কিছু কিছু সময় মানুষের মুখ ফুটে কিছু বলতে হয়না। চোখে মুখের আলোর ঝলকানি দেখেই আন্দাজ করে নেয়া যায় মানুষটা কতটুক খুশি হয়েছে। তানভীরও বুঝে নিয়েছে সুহায়লার খুশির পরিমানটুকু।
মাস দুয়েক সময় লেগেছে সুহায়লার পাসপোর্ট আর ওদের দুজনের ভিসা তৈরী হতে। কানাডা সেটেল হবে ওরা। আগামিকাল রাতের ফ্লাইট। ২০দিন হলো সাদমানের বিয়ে শেষ হয়েছে।জমিয়ে আনন্দ করেছে ওরা দুজন সাদমানের বিয়েতে। নিজের পরিবারকে , আত্মীয়দেরকে তো আর কাছে পাবে না। কবে নাগাদ তাদের সাথে দেখা হবে সেটারও ঠিক নেই। আজকাল সুহায়লার মনে হয় জীবনটা সুন্দর। যেমনটা ভেবেছিলো তার চেয়ে বেশি সুন্দর। রাজপুত্র এসেছে। জীবন বদলেছে। তবে রুপকথার মতো না এরচেয়ে আরো বেশি সুন্দর। ওর ছোট ছোট স্বপ্নগুলো পূরন করছে তানভীর। সাধারনত এই খুটিনাটি ইচ্ছাগুলো পূরন করতে কাউকে কখনো দেখা যায় না। কিন্তু তানভীর করে। বাসর রাতে তানভীরের কথায় মনে হয়েছিলো সে ভিন্ন। অন্য সবার মতো না। সত্যিই সে ভিন্ন। একদম ভিন্ন। অন্য দশটা মানুষের সাথে কোনোদিক দিয়েই ম্যাচ হয় না। এই যে সুহায়লাকে খাটের মাঝখানে বসিয়ে রেখে নিজে একের পর এক লাগেজ গোছাচ্ছে। সুহায়লা ওর দিকে তাকিয়ে ওর কাজ দেখছে। কয়েকবার বলেছিলো ওকে হেল্প করার জন্য। তানভীর বেশ ঝাঁঝালো গলায় সুহায়লাকে না করে দিয়েছে। বলেছে, তুমি খাটে বসে অর্ডার দাও কিভাবে গুছাবো। সুহায়লাও তাইই করছে।
-” তানভীর, তোমার কি কষ্ট হচ্ছে?”
-” কেনো?”
-” এতবছর এখানে থেকেছো, এ দেশে বড় হয়েছো, বন্ধুবান্ধব সব ফেলে চলে যাবে। কষ্ট হচ্ছে না?”-
-” কষ্ট তোমার হচ্ছে সুহা। আমার না। আমার তেমন কেউ নেই এখানে। কিন্তু তোমার অনেকেই আছে। ওদের ফেলে থাকতে তোমার কষ্ট হবে। অলরেডি তোমার কষ্ট শুরুও হয়ে গেছে।”
-” ঠিক বলেছো। তখন তো হুট করে বলে ফেলেছি দূরে চলে যাবো। এখন নিজেরই কষ্ট হচ্ছে।”
-” এখনও সময় আছে। ডিসিশন নাও। চাইলে এখানে থেকে যেতে পারো। প্ল্যান ক্যান্সেল করবো।”
-” নাহ, এখানে থাকার মতো অবস্থা নেই।”
-” তাহলে মন খারাপ করা বন্ধ করো। তোমাকে তিন চারদিন ধরে দেখছি সারাদিন মুড অফ করে বসে থাকো। আমার এসব মোটেই পছন্দ হচ্ছে না।”
-” তোমার ব্যবসা নিয়েও চিন্তায় আছি। সাদি পারবে তো সব ঠিকঠাকভাবে মেইনটেইন করতে।”
-” কি যে বলো না সুহা! পারবে না কেনো? অবশ্যই পারবে। ও যথেষ্ট ট্যালেন্ট ছেলে। আমি বুঝে শুনেই ওকে দায়িত্ব দিয়ে যাচ্ছি।”
-” চলো না পুরো বাড়িটা একটু ঘুরে আসি। কবে না কবে বাড়িটাতে পা রাখবো তার তো ঠিক নেই। কাল তো চলেই যাবো। এরপর তো নতুন বাড়িতে আমাদের আনাগোনা হবে।”
-” চলো।”
পুরো বাড়ির প্রতিটা রুম খুটেখুটে দেখছে সুহায়লা। শ্বশুড়ের কথা খুব মনে পড়ছে। লোকটা বেঁচে থাকলে হয়তো এ বাড়ি ছেড়ে যাওয়া হতো না। এ বাড়িতে তার অনেক স্মৃতি। বেশিরভাগই খারাপ। তবু এখানকার প্রতি একটা আলাদা মায়া কাজ করে। হতে পারে বিয়ের পর এই বাড়িতে প্রথম পা রেখেছিলো তাই।
একই লেপ গায়ে জড়িয়ে দুজনে বসে আছে ছাদে। আকাশের তারা দেখছে। আজ চাঁদ নেই। পুরো ফকফকে পরিষ্কার আকাশ। আকাশের তারাগুলোকে একদম জোনাকি পোকার মতো লাগছে। সুহায়লার হাত আলতো করে ধরলো তানভীর।
-” সুহা?”
-” হুম?”
-” মনের দরজা কি এখনো বন্ধ করে রেখেছো?”
-” কি মনে হয়?”
-” জানি না। খারাপ স্মৃতিগুলোকে এখানে ফেলে রেখে যাওয়া যায় না?”
-” স্মৃতি তো সেই কবেই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়েছি। মনের দরজাও খুলে দিয়েছি। পুরোনো স্মৃতিগুলো যাতে তাড়া না করতে পারে এজন্যই তো এখান থেকে সরে যাচ্ছি। নতুন করে সব শুরু করতে চাই তোমাকে নিয়ে। সমস্ত স্মৃতি এ বাড়ির আঙিনায় মাটি চাপা দিয়ে রেখে দিতে চাই। নতুন বাড়ি, নতুন জায়গা,নতুন স্মৃতি হবে আমাদের। সেখানে পুরান স্মৃতির কোনো জায়গা থাকবে না।”
সুহায়লার কাঁধ জড়িয়ে ধরলো তানভীর। নতুন করে ভালোবাসার শুরুটা বোধহয় এখান থেকেই।
(সমাপ্ত 😀)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here