বস বর পর্ব ৩+৪

#বস_বর (পর্ব-৩ ও ৪)
Part-3
Writer : Eti Chowdhury
.
উঠতে বলছি উঠো।

– বসের সাথে একত্রে যাওয়াটা সবাই ভালো চোখে দেখবে না।

বলেই একটা রিকশায় উঠে গেলো ইতি। রোদকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না। ইতি নিজে নিজে বলছে,

-ভাবে কি উনি নিজেকে। ওনি যা বলবে তাই হবে একে তো আমাকে জোর করে বিয়ে করেছে। কেনো করেছে তাও বলছে না। আবার মিথ্যেও বলা হচ্ছে। আর সহ্য হচ্ছে না আমার।

রাগে ফুসতে ফুসতে অফিসে চলে যায় ইতি। অফিসেও শান্তি নেই অফিসে ডুকতেই ইতিকে দেখা মাত্র অনেকেই কানাকানি শুরু করে দিয়েছে। গতকাল রোদ যেভাবে সবার সামনে টেনে নিয়ে গেলো। উফফ সে কি লজ্জা সে কি লজ্জা।

অফিসে,

ইতি রিমির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,

– কি খবর রিমি?

– জ্বি, ম্যাম ভালো।

– আমার গতকালের মিটিংটা কবে হচ্ছে?

– আজিই ম্যাম। উনারা কিছুক্ষণ পর আসছেন।

– ওকে।

ইতি রিমির সাথে কথা বলছিলো তখনই সেখান দিয়ে রোদ যাচ্ছিল। যাওয়ার সময় ইতিকে দেখে বলে,

– আজকের মিটিংএর পেপার গুলো নিয়ে আসো তো।

– জ্বি, আসছি।

সবাই কিভাবে দেখছে ইতিকে সে যেনো কোনো জোকার বা এলিয়েন। মনে মনে রোদের গুষ্টি উদ্ধার করে ইতি বলে, “সব উনার জন্য সহ্য হচ্ছে না আমার একদম”। ভাবতে ভাবতেই রোদের কেবিনে চলে যায় ইতি,

– Can I come in?

– Sure. বসো। মিটিংএর আগে সব একবার ডিসকাস করে নিলে হয় তো ভালো হবে।

– জ্বি।

ইতি রোদকে সব ডিটেইলস বলছে।

রোদের চোখ শুধু ইতির দিকে যাচ্ছে। হালকা বাতাসে মেয়েটার চুলগুলো উড়ছে ওকে অপূর্ব লাগছে দেখতে।

ইতি চুলগুলোর জন্য বিরক্ত হচ্ছে। বিরক্তির রেখা তার মুখে ফুটে উঠেছে৷ চুলগুলো জ্বালাছে তাই চুল ঠিক করতে গিয়ে রোদের দিকে চোখ গেলেই সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নেয় ইতি রোদ তো তাকেই দেখছে। মনে মনে অবাক হয় সে। মানুষটা তার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেনো। রোদ নিজেও চোখ সরিয়ে নিলো। তাও ইতি দেখে ফেলেছে হয়ত রোদ যে তাকেই দেখছিলো। ইতি নিজের চুল গুলো বেধে ফেলল বার বার উড়ে উড়ে আসছিলো তাই। রোদের রাগ উঠে গেলো তা দেখে। মনে মনে বলছে কে বলেছে ওকে চুল গুলো বাধার জন্য। ভালোই তো লাগছিলো তার দেখতে।

রিমির আসার শব্দে হুদিস হয় রোদের,

– Sir আসবো?

– এসো।

– Sir, Ma’am Client চলে এসেছে মিটিংএর সময় হয়ে গেছে।

– Ok We r coming……

ইতি উঠে সামনে সামনে যাচ্ছিল আর রোদ পিছনে ছিলো। পিছন থেকে রোদ ইতির চুলের ক্লিপটা খুলে আগে চলে গেলো। চুল খুলে দিতেই ইতি কি যেনো বলল তা আর শুনার জন্য রোদ অপেক্ষা করল না চলে গেলো। ইতি বলল,

– আমার চুল….. উফফ আর পারছি না উনাকে নিয়ে। পাজি একটা।

কিন্তু কথাটা রোদ শুনেনি তার আগেই সে বেরিয়ে যায়।

মিটিং রুমে ইতিকে দেখেই রোদের রাগটা চরমে উঠে গেলো। মনে মনে বলছে,

-আমি চুল খুলে দেওয়ার পরও সাহস হয় কিভাবে আবার চুল বাধার দেখাচ্ছি মজা মিটিংটা শেষ হোক আগে।

ইতি রোদের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,

– হুহ…..আমার চুল খোলা হচ্ছে তাই না। একটা ক্লিপ গেছে তো কি হয়েছে আমার কাছে কি ক্লিপের অভাব আছে নাকি হুহ…

রোদের থেকে চোখটা সরিয়ে নেয় ইতি। রোদকে দেখেই বুঝতে পারে মানুষটা রেগে ভুত হয়ে আছে। তাও মনে মনে ভাবে তাতে আমার কি হুহ। ইতি মিটিংয়ে মন দিলো।

মিটিংটা ভালোই হলো ডিলটাও ফাইনাল হয়ে গেলো। ইতি হাসি মুখে রোদের দিকে তাকালো কিন্তু রোদ একবারের জন্যও ইতির দিকে তাকালো না। এমনকি সারা মিটিংএ একবারো ইতির দিকে তাকায়নি সে। Laptop এ কি যে এতো দেখে আল্লাহ জানে আর রোদই জানে হুহ….

রোদ মনে মনে হাসছে আর বলছে,

– পাগল মেয়ে একটা জুটেছে আমার কপালে। বার বার শুধু আমাকেই দেখছে আমি ওকে দেখছি কিনা। ভাবছে হয়ত আমি রাগ করে ওর দিকে তাকাচ্ছিই না। পাগল মেয়েটা তো জানেই না যে আমি শুধু ওকেই দেখছি আমার Laptop এর সিসি টিভি ক্যামেরাতে। জানলে হয়ত লজ্জায় লাল হয়ে যাবে পাগলীটা।

ইতি অনেক্ষণ অপেক্ষাও করল কিন্তু রোদ- কিছু বলছে না তাই রাগ করে বের হয়ে গেলো ইতি মিটিং রুম থেকে। রাগে ফুসতে ফুসতে নিজের কেবিনে চলে এলো। রাগে ফুসছে আর বলছে,

-আমার জন্য নতুন একটা ডিল হলো অথচ আমাকে একটা Thanks ও বলল না। আজ আর ফিরেই যাবো না। বাবার বাসায় থেকে যাবো একে বারে হুহ….

রোদ অপেক্ষা করছিলো সবার বেড়িয়ে যাওয়ার। সবাই বেরলেই সে ইতির কাছে যাবে। কিন্তু মেয়েটাই তার আগে বেরিয়ে গেলো। ইতির কান্ড দেখে রোদ নিজে নিজেই বলছে,

– ওমা পালিয়ে গেলো। এতো ভয় পায় আমাকে।

বলেই হেসে দিলো রোদ। কেবিনে এসেই ইতিকে ফোন দিলো ইন্টারকমে। বলল,

– আমার কেবিনে আসো।

– জ্বি, আসছি।

ফোনটা কান থেকে নামিয়ে বলে,

-আল্লাহই জানে কপালে কি আছে।

রোদের কেবিনে গিয়ে নক করে বলে,

– May I come in??

– এসো

– জ্বি বলুন

– কাছে আসো

– মানে?

– বাংলা বুঝ না? কাছে আসো।

ইতি রোদের টেবিলের কিছুটা সামনে গেলো। রোদ বলল,

– আরো কাছে

ইতি টেবিলের আরো একটু কাছে গেলো। রোদ বলল,

– আরো কাছে

শেষমেষ ইতি একদম টেবিলের সাথে গিয়ে দাড়াল রোদ আর ইতির মাঝে দূরত্ব বলতে কেবল টেবিলটাই আছে।

রোদ বসা থেকে কিছুটা উচু হয়ে ইতির মাথার পিছনে হাত দিয়ে চুলের ক্লিপটা খুলে দিলো। ইতি যেনো অবাক হয়ে আসমান থেকে পরল। হা করে রইল সে। রোদ বলল,

– এখন যাও

– এটা কি হলো?

– কেন? তুমি দেখতে পাও না? নাকি অনুভব করতে পারো না কোনটা?

– আমি দুটোই পারি কিন্তু আপনি আমার চুল খুলে দিলেন কেনো?

– কারণ তোমার বাধা চুল আমার পছন্দ না।

– তাতে আমার কি? আমার চুল আমি বাধবো না ছাড়বো সেটা আমার ইচ্ছা

– ওহ… তাই বুঝি…

রোদ চেয়ার থেকে উঠে একটু একটু করে ইতির দিকে এগোতে শুরু করল। ইতি বলল,

– অবশ্যই তাই।

বলে ইতি দিলো দৌড়। রোদ যেভাবে তার দিকে আগাচ্ছিলো বলা যায় না যে মানুষ কি থেকে কি করে বসে।

ইতির কান্ড দেখে রোদ না হেসে পারল না। যে দৌড় দিলো হয়ত ভয় পেছে। বলা যায় না লজ্জাও পেতে পারে।

ইতি এক দৌড়ে নিজের কেবিনে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পরে। কোন মতে নিজের চেয়ারে বসে বলে,

– আল্লাহ এই মানুষ নামি ভুতটার হাত থেকে বাঁচাও আমাকে।

অফিস টাইম শেষে ইতি বের হয়ে যায় তার বাবা-মার কাছে যাবে বলে। নিচে নামতেই রোদের ড্রাইভার ইতির সামনে এসে রোদের গাড়ি নিয়ে হাজির। ইতিকে দেখে এগিয়ে এসে বলে,

– চলুন মেডাম

– নাহ আমি গাড়িতে যাবো না। আপনি আপনার স্যারকে নিয়ে যান আমি চলে যেতে পারবো।

– Plz Madam আপনি একা গেলে আমার চাকরী থাকবে না।

কথাটা শুনে ইতির অনেক মায়া হলো। সেই সাথে রোদের ওপর প্রচন্ড রাগও হলো কিভাবে পারে উনি অসহায় মানুষগুলোর সাথে এমন করতে। ইতির অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে জোর করে বিয়ে করল আর… এসব ভাবতে চাইছে না এখন ইতি। ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসি দিয়ে বলে,

– আচ্ছা চলুন।

ইতি বাবার বাসায় চলে আসে। ইতি গাড়ি থেকে নামতেই ড্রাইভার গাড়ির পিছন থেকে অনেক রকম মিষ্টি, ফল, গিফ্ট নামাতে শুরু করল। এতো কিছু দেখে অবাক হয়ে ইতি জিজ্ঞেস করে,

– এতো কিছু কোথা থেকে এলো?

– আপনি বের হবার আগেই স্যার নিজে গিয়ে এসব কিনেছেন। আমাকে বলেছেন বিয়ের পর আজ প্রথম আপনি বাপের বাড়ী যাচ্ছেন কোনো কিছুর কমতি যেনো না থাকে তাই।

ইতি অবাক হয়ে থাকে। রোদের আসল রুপটা কি তা সে কোনো ভাবেই বুঝে উঠতে পারছে না। রোদ ইতিকে পছন্দ না করেই এতো কিছু করছে। কিন্তু কেনো?? মনে মনে ভাবে ইতি।

ড্রাইভারের ডাকে হুদিস পায় ইতি,

– মেডাম এখানে তো পার্কিং এর জায়গা নেই। আমি আশে পাশেই আছি আপনি যখন বাসায় যাবেন আমাকে ফোন দিলেই হবে আমি চলে আসবো।

– না আপনি চলে যান। আমি আজ যাবো না।

– কিন্তু স্যার যে বলল আপনাকে নিয়ে যেতে।

– আপনার স্যার কে যা বলার আমি বলে দিবো।

ইতির বাবার বাসায়,

ইতিকে এত কিছুসহ দেখে অবাক হয়ে গেলেন সবাই। প্রতিবেশীরাও অনেকে এসেছে ইতিকে দেখতে। ইতো মধ্যে সবাই শুনেছে ইতির অনেক বড় ঘরে বিয়ে হয়েছে তাই আগ্রহবশত অনেকেই এসেছে ইতিকে দেখতে।

ইতি বাবা-মার কাছে ক্ষমা চাইল তাদের কষ্ট দেয়ার জন্য। এমন কষ্ট দেয়ার জন্য যা সত্যি ইতি নিজে করেনি কিন্তু একথা তাদের বলা যাবে না। বাবা-মা জানতে পারলে ইতির জন্য চিন্তা করবে আর সবে মাত্র বাবার অপারেশন হয়েছে। ইতি তার বাবাকে নিয়ে কোনো ঝুকি নিতে চায় না। তাই সে বাবা-মার সামনে হাসি খুুশি থাকার চেষ্টা করছে। ইতিকে খুশি দেখে উনারাও অনেক খুশি হলেন। ইতিকে মাফও করে দিলেন।

বাবা বললেন,

– তোর সুখেই আমরা সুখি রে মা।

– বাবা তুমি আমার জন্য দোয়া করো।

ইতিকে একা আসতে দেখে ওর মা বলল,

– তা তুই একা এলি কেনো? জামাই বাবাকে সাথে করে নিয়ে আসতি।

– আসলে অফিসে অনেক কাজ তাই উনি আসতে পারেননি। অন্য সময় নিয়ে আসবো।

– আমরা তো ভেবে ছিলাম জামাই বাবাজি ও আসবে তাই তার জন্য টুকটাক আয়োজনও করেছিলাম।

ইতি মুখ কালো করে বলল,

– ও এখন জামাই ই সব মেয়ে পর হয়ে গেলো বুঝি।

– নারে মা তুই কি কখনও পর হতে পারিস।

বলেই বাবা ইতিকে বুকে জরিয়ে নিলেন।

রাত ১০টা বেজে গেছে। ইতি আরাম করে টিভি দেখছিল ছোট ভাইয়ের সাথে।

মা এসে বলল,

– তুই যে আজ থাকছিস জামাই জানে তো? উনি আপত্তি করবে না তো??

– না না আপত্তি করবে কেনো??

– তাই ভালো।

ইতি মনে মনে বলে,

– শয়তানটার নাম নিতেই হাজির।

মানে রোদ নিজে না তার কল চলে এলো। ভাগ্যিস কথাগুলো ইতি মনে মনে বলছিলো না হলে যে মা শুনে ফেলত। ইতি বারান্দায় চলে গিয়ে কল রিসিভ করল,

– হ্যালো….

– Already ১০টা বাজে

– আমার বাসায় ঘড়ি আছে আমি জানি ১০ টা বাজে?

– বাসায় মানে? আমিও তো বাসায় তুমি কোথায়?

– আমি আপনার বাসা না আমার বাসার কথা বলছি হুহ…

– বের হচ্ছো কখন?

– জ্বি না বের হচ্ছি না।

– মানে?

– মানে আমি আসছি না।

– দেখো ভালো হবে না কিন্তু

– তাই?? কি করবেন?

– ওহ…. আমাকে Challenge করা হচ্ছে?

– জ্বি, পারলে কিছু করে দেখান।

– Ok Challenge Accepted Mrs Rod Chowdhury আজকের রাত আমি আপনার সাথেই কাটাবো।

যেই বলা সেই কাজ। রাত ১১:৩০ বাজে ইতিদের বাসার কনিংবেল বেজে উঠলো।

মা দরজা খোলার জন্য যেতে নিলে ইতি বলে

– মা দাড়াও আমি দেখছি।

ইতি গিয়ে দরজা খুলেই হা করে রইল। মুখ ফসকে বেরিয়ে এলো,

– আপনিইইইইইইই……

চলবে………
.
.
.
বস_বর
Part-4
Writer : Eti Chowdhury
.
যেই বলা সেই কাজ। রাত ১১:৩০ বাজে ইতিদের বাসার কনিংবেল বেজে উঠলো।

মা দরজা খোলার জন্য যেতে নিলে ইতি বলে,

– মা দাড়াও আমি দেখছি।

ইতি গিয়ে দরজা খুলেই হা করে রইল। মুখ ফসকে বেরিয়ে এলো,

– আপনিইইইইইইই……

– আমাকে Challenge করার আগে ভাবা উচিত ছিলো My Dear Wife

বলেই ইতিকে ভেঙ্গচি কাটে রোদ।

ইতি মনে মনে বলল,

– আসলে একটা খাটাশ।

ভেতর থেকে ইতির মা চেঁচিয়ে উঠলেন,

– কিরে মা কে এসেছে?

– আসসালামু আলাইইকুম।

সালাম দিতে দিতে ইতিকে ধাক্কা দিয়ে ভিতরে চলে গেলো রোদ। শশুড় শাশুড়িকে সালাম করল।

রোদকে দেখে ইতির বাবা বললেন,

– বাবা তুমি এতো রাতে কোন সমস্যা হয়নি তো?

– না বাবা আসলে ইতি বার বার ফোন দিচ্ছিলো ওর নাকি ভালো লাগছে না তাই আর কি…….. বলেই রোদ ইতি একটা চোখ মারল।

ইতি হা হয়ে মনে মনে বলল,

– ছিঃ কি বড় মিথ্যাবাদী। নিজে বাঁচার জন্য আমাকে ফাসাচ্ছে। ছিঃ আমি বাবা মাকে মুখ দেখাবো কিভাবে লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে।

মনে মনে বলছে আর বড় বড় চোখ করে রোদের দিকে তাকিয়ে আছে ইতি।

ইতিকে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতে দেখে মা বললেন,

– কিরে তুই কি ভাবছি দাড়িয়ে দাড়িয়ে। যা জামাই বাবা কে ঘরে নিয়ে যা ফ্রেস হতে দে আমি খাবার রেডি করে তোদের ডাকছি।

– কিন্তু উনি তো আমাকে নিতে এসেছেন।

– একি কথা না বাবা আজ কিন্তু তোমাদের ছাড়ছি না।

ইতির মায়ের সাথে তাল দিয়ে বাবাও বললেন,

– হ্যাঁ, আমিও একমত। এতো রাতে আর যেতে দিচ্ছি না।

রোদ শশুড় শাশুড়ির কথার বাধ্য হয়ে বলল,

– আপনারা যা বলেন তাই……

বলেই আবার ইতিকে চোখ মারল রোদ। শশুড়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

– বাবা আমি ফ্রেস হয়ে এসে আপনার সাথে কথা বলছি।

ইতির একদম ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও রোদকে রুমে নিয়ে গেলো।

রুমে ডুকতেই ইতি আগে আগে যাচ্ছিলো রোদ পিছন পিছন। হুট করেই পিছন থেকে ইতিকে একটা হ্যাঁচকা টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে যায় রোদ।

রোদ এভাবে টান দেয়ায় অবাক হয় ইতি। রোদ হঠ্যাৎ করে ইতিকে জরিয়ে ধরাতে ইতির আত্মা পর্যন্ত কেঁপে উঠে।

রোদ ইতির কানের কাছে মুখ নিয়ে গেলো। ইতির নিঃস্বাশ ভারী হয়ে আসছে। ইতি চোখ খিচে দাড়িয়ে রইল। মেয়েটা মনে হয় ঠান্ডায় জমে যাচ্ছে। রোদ একদম ইতির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,

– আর করবে আমায় Challenge?

– আমার ঘাট হয়েছে। ছাড়ুন আমায়।

ইতি একটা ধাক্কা দিয়ে রোদকে সরিয়ে বেরিয়ে গেলো। রুম থেকে বেরিয়েই একবার পিছন ফিরে নিজের সাথে বলে,

– উনি মানুষ না পাগল উফফ আমার সহ্যের সীমা পেরিয়ে যাচ্ছে লোকটা। আর নিতে পারছি না আমি তাকে। ওকে ফাইন আমাকে হারানো এবার মজা দেখাবো। আসুন আগে।

রোদ অনেক্ষণ বসে শশুড় আর শালার সাথে আড্ডা দিলো। শাশুড়ি খাওয়ার জন্য ডাকলে অনেক ক্ষুদা লেগেছিলো রোদের কিছু খাওয়া হয়নি যে তাই এক ডাকেই উঠে গেলো সে।

রোদ গিয়ে ইতির পাশেই বসল। ইতি মনে মনে বলে,

– উফফ অসহ্য…. আমাকে জ্বালানো মজা দেখাচ্ছি। খাও আগে।

রোদ খাবার মুখে দিতেই তার চোখ বড় হয়ে গেলো। আর চিবাতে পারছে না সে এতো ঝাল।

খেতে গিয়ে রোদের মুখ চুবসে যেতে দেখে ইতির মা জিজ্ঞেস করলেন,

– কি হলো বাবা খাবার মজা হয়নি? খাচ্ছো না যে?

– না মা খাচ্ছি। অনেক মজা হয়েছে।

রোদ আড় চোখে ইতির দিকে তাকাল। মেয়েটা মিটমিট করে হাসছে রোদের আর বুঝতে বাকি রইল না কাজটা ওর করা। মেয়েটা এমন কেনো। রাগ উঠে গেলো তার।

রোদের অবস্থা আন্দাজ করতে পেরে মনে মনে আনন্দিত হচ্ছে ইতি আর ভাবছে,

– হিহিহি… খাও বাচ্চু। আমাকে জ্বালানো মজা বুঝো এখন।

কিছুক্ষণ যাওয়ার পর ইতি লক্ষ করে রোদের চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে কিন্তু সে খেয়েই যাচ্ছে থামছে না।

রোদ খাওয়া সম্পূর্ণ শেষ করে উঠে রুমে চলে গেলো। রুমে গিয়েই মুখ চেপে চিৎকার শুরু করল,

-ওহ মাগো কি ঝাল। মরে গেলামরে।

কারো রুমে ডুকার শব্দ পেয়ে পিছনে ঘুড়তেই রোদ দেখে ইতি। রোদ এক ঝটকায় ঝড়রের গতিতে ইতির কাছে গিয়ে ওকে দরজার সাথে শক্ত করে চেপে ধরলা। ইতির ঠোঁট দুটো রোদ নিজের ঠোঁট দুটো দিয়ে আকড়ে ধরলা।

হঠাৎ রোদের৷ এমন কান্ডে ইতির হাত থেকে পায়েসের বাটিটা পরে গেলো। ইতির রোদের জন্য পায়েস নিয়ে এসেছিলো। রোদের ঝাল কমাতে কিন্তু মেয়েটা কিছু বুঝে উঠার আগেই রোদ ওর ঠোঁট দুটো আকড়ে ধরল। অনেক চেষ্টা করছে ইতি নড়তে কিন্তু পারছে না। ইতির মুখ দিয়ে কেবল ঙ্গোগানির শব্দ বের হচ্ছে তাও রোদের মুখেই সীমাবদ্ধ।

রোদের ঝাল না কমা পর্যন্ত ওর ঠোঁট দুটো ছাড়লো না। অনেক্ষণ পর ছাড়লো। ইতিকে ছাড়তেই দেখে ওর চোখ বেয়ে পানি চলে এলো।

ইতি নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে রোদকে ধাক্কা দিলো একটা। ধাক্কা দিয়ে বলে,

– আপনি কি মানুষ না পশু।

চোখের পানি মুছতে মুছতেই বাথরুমে চলে গেলো মেয়েটা। অনেক্ষন কান্না করল বাথরুমে বসে বসে।

ইতিকে বাথরুমে যেতেে দেখে পিছন পিছন রোদও যায়। কিন্তু ওকে আটকাবার আগেই সে মুখের ইপর দরজাটা আটকে দেয়। রোদ বাইরে থেকে ডাকতে থাকে,

– এই দরজা খুলো। আমার কথা শুনো ইতি।

বাইরে থেকে রোদ ডাকলো তাও দরজা খুলল না ইতি। কিন্তু অনেক্ষণ হলো ইতি রোদের কোন সাড়া শব্দ পাচ্ছে না। বাথরুম থেকে বের হতেই ইতির চোখ চড়াগ গাছ।

– Sirrrrrrrrrrrrrrrrrr

বলেই চিৎকার দিলো ইতি। রোদ মাটিতে পরে আছে। ইতির চিৎকার শুনে ইতির বাবা, মা, ভাই ইমন চলে এলো। রোদের চেহারা লাল হয়ে গেছে একদম। রোদকে এঅবস্থতায় দেখে ইতির বাবা বলল,

– আমি যাই ডাক্তারের ব্যবস্থা করি।

– বাবা দাড়াও উনার নিজেস্ব ডাক্তার আছে। তাকেই দেখাব।

ইতি ড্রাইভারকে ফোন দিয়ে বলল গিয়ে ডাক্তারকে নিয়ে আসতে।

ডাক্তার এসে চেকআপ করলেন,

– ভয় পাওয়া লাগবে না আমি এনটি ডট দিয়ে দিয়েছি। ঘুমাক ঠিক হয়ে যাবে।

– কিন্তু হঠ্যা করে এমন হলো কেনো?

– ঝালের এলার্জি।

– মানে?

– জি, রোদ এর ছোট বেলা থেকেই ঝালে এলার্জি। ঝাল সে একদম সহ্য করতে পারে না। প্রথমে লাল হয়ে ফুলে যায় এর মধ্যে ঝাল না কমলে জ্ঞান জারিয়ে ফেলে। আজও তাই হয়েছে। ভয় পেয়েন না একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে।

ডাক্তার চলে যাবার পর বাবা ইতিকে অনেক কথা শুনালেন। মা দেখেছিলো ইতিকে ঝাল দিতে তখন বাচার জন্য মিথ্যে বলেছিলো যে রোদের ঝাল অনেক পছন্দ।। ঝাল না হলে সে খায় না। কিন্তু এখন ইতিরও অপরাধবোধ কাজ করছে রোদকে মজা দেখাতে গিয়ে কি করে বসলো। যদি রোদের কিছু হয়ে যেতো তখন কি হতো। অনেক্ষণ পর তার জ্ঞান ফিরলো।

বাবা জিজ্ঞেস করলেন,

– এখন কেমন লাগছে?

– জি বাবা এখন ঠিক আছি। আপনার চিন্তা করবেন না। আপনারা গিয়ে শুয়ে পরেন।

– উনার দিকে খেয়াল রাখিস।

মা ইতিকে একটা খিচি দিয়ে চলে গেলেন।

-হুহ…. ওনার সামনে বলার কি দরকার ছিলো।

– কি কেমন লাগল?

মিটমিট করে হাসছে রোদ।

– হুহ…..

মিট মিট করে হাসছে একটুর জন্য ইতির জান বের হয়ে যাচ্ছিলো আর উনার হাসি পাচ্ছে। রাগ দেখিয়ে ইতি বলে,

– হুহ….আপনি আসলেই একটা খাটাশ।

বলেই খাটের অন্য পাশে ফিরে শুয়ে পরলো ইতি আর তেমন কোনো কথা হলো না।

সকালে,

রোদ সকালে চোখ খুলতেই দেখে পাগলীটা লুতুপুতু হয়ে ঘুমাচ্ছে। এলোচুল আর হালকা রোদ মুখের উপরে অপরূপ লাগছে মন চায় এভাবেই আজীবন চেয়ে চেয়ে দেখি। ইতি কিছুটা নড়ে উঠলো। ইি দেখার আগেই রোদকে বের হতে হবে আজ মেডামের জন্য Surprise আছে যে। মনে মনে ভেবেই একটা শয়তানি হাসি দিলো রোদ।
.
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here