#গল্পঃবসন্ত এসে গেছে
#লেখাঃনুশরাত জেরিন
#পর্বঃ২০
,
,
সন্ধায় বেলকনিতে বসে ঝিরিঝিরি মৃদুমন্দ বাতাস উপভোগ করছে অপু।
বাতাসে খোলাচুল গুলো এদিক ওদিক দোলা খাচ্ছে।
নাকে ভেসে আসছে মিষ্টি ফুলের ঘ্রান।
নোমানের রুমের এই বেলকনিটায় এখন সম্পূর্ন রূপে অপুর রাজত্ব।
অপু নিজের পছন্দ মতো নানা ধরনের ফুলের গাছের টব দিয়ে সাজিয়েছে বেলকনিটাকে।
একটা দোলনাও রেখেছে পাশে।
অন্য রুমের বেলকনিতে যদিও লাগাতে পারতো অপু,কিন্তু এই রুমটা বাগানের একদম পাশে এবং খুব সুন্দর বাতাস আসে এ পাশটায় তাই এখানটাই নিজের মতো করে সাজিয়েছে সে।
দোলনায় শুয়ে শুয়ে বাতাস উপভোগ করছে অপু।
কিছু একটা মনে করে উঠে ফোন হাতে নিয়ে ভাইয়ের নাম্বারে কল করলো সে।
কিন্তু ওপাশ থেকে রিসিভ হলোনা।
অপু ফোনটা পাশে রেখে চোখ বন্ধ করলো।
ভাবল হয়তো ভাই বিজি আছে তাই রিসিভ করেনি।
পরশু অপু গিয়েছিলো মায়ের কাছে।তার সাথে দেখা করে অপুর ভেতরটা প্রশান্তিতে ভরে গেছে।
খুব ভালভাবে মায়ের অপারেশনটা হয়েছে।
যদিও একটু অসুস্থ তিনি এখন কিন্তু কিছুদিনের ভেতরই মা সুস্থ হয়ে যাবেন।
সারাদিন মায়ের সাথে কাটিয়েছিলো অপু।
বিকেল হতেই আবার বাড়ি ফিরে এসেছিলো।যতো যাই হোক আরমান খানও তো অসুস্থ। তাকেও তো দেখতে হবে অপুকে,তার প্রতিও তো দায়িত্ব আছে।
এসব ভাবতে ভাবতে অপু উঠে দাড়ালো।
এখানে বসে থাকতে থাকতে তার চা খেতে ইচ্ছে করছে।
এমন পরিবেশের সাথে এক কাপ চা হলে মন্দ হতোনা, ভেবে কিচেনের উদ্দেশ্যে নিচে গেলো সে।
কিচেনে ঢুকে চা বানিয়ে আবার রুমে ফিরে এলো।
বেলকনিতে এসে দেখলো দোলনার উপর রাখা তার ফোনটায় আলো জ্বলছে।
পাশের টুলের ওপর চা র কাপ রেখে ফোন হাতে তুলে নিলো অপু।
দেখলো ফাইভ মিসডকল।
একটা আননোন নাম্বার থেকে।
কে হতে পারে ভাবতে ভাবতে আবার ফোন বেজে উঠলো।
অপু রিসিভ করে সালাম দিলো।
ওপাশ থেকে সালামের উত্তর নিয়ে বললো,
—এতক্ষণ কোথায় ছিলে?
অপু নিস্তব্ধ হলো।
এক নিমিষে কন্ঠ চিনতে পারলো।কিন্তু সে কি সত্যি অপুকেই কল দিয়েছে?সত্যি কি সে?সে কেনো অপুকে কল দিতে যাবে?এটা হয়তো অন্যকেউ।
কিন্তু কন্ঠ তো হুবহু এক।
অপুর নিজের উপরই নিজের অবিশ্বাস হলো যেনো।
তবুও যাচাই করার জন্য বললো,
—কে?
ওপাশ থেকে গম্ভীর গলায় জবাব এলো,
—-আমি।
—আমি কে?
নোমানের রাগ করে বলতে ইচ্ছে হলো,আমি কে চিনোনা?নিজের স্বামীর কন্ঠও চেনোনা?বলতে ইচ্ছে হলো, আমি তোমার হাসবেন্ড।
কিন্তু বলা হলো না।
হাসবেন্ড এর কোন দায়িত্বই সে পালন করেনি,তাহলে কোন মুখে বলবে সে কথা।
মুখে বললো,
—আমি নোমান।
যদিও উত্তরটা আশা করেছিলো অপু তবুও চমকালো।
কি বলবে খুজে পেলোনা।ভয়ে নয় লজ্জায়।
আজকাল নোমানের কথা ভাবলে অপুর মনে ভয় কাজ করেনা।কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হয়। অপু বোঝে তার মনে জায়গা নিতে শুরু করেছে নোমান।হয়তো নোমানের মনেও।
নোমানের কিছু কিছু কাজেই তা প্রকাশ পায়।
একটু রাগী বেশি সে,হুটহাট রেগে যাওয়া তার অভ্যাস তবুও অপুর তার প্রতি এক ভাললাগা কাজ করে ইদানিং।
নোমান আবার বললো,
—বললে না?
—কি?
—এতোক্ষণ কোথায় ছিলে?ফোন রিসিভ করোনি কেনো?
—কিচেনে ছিলাম।
—ওহ।
দুজনেই বেশকিছু সময় নিরবতা পালন করলো।
দুজনেই কোন কথা খুজে পেলোনা।
নোমান হুট করে বলে উঠলো,
—বাবা কেমন আছে?
অপু হাসলো।নিঃশব্দ হাসি হাসলো।
নোমান যে একটু আগে আরমান খানের সাথে ফোনে কথা বলেছে তা অপু দেখেছে।
এখন কথা বাড়ানোর জন্যই যে নোমান বাবার কথা বলেছে সেকথা সে বোঝে।
—ভালো।
নোমান আরও কিছুক্ষণ চুপ থেকে ফিসফিস গলায় বলে,
—আর তুমি?
অপু কেঁপে ওঠে।মুখ লজ্জায় নতো হয়।
বলে,
—ভালো।
কিছুটা সময় নিয়ে আবার বলে,
—কিন্তু আপনি আমার নাম্বার কোথায় পেলেন?
—আমার পক্ষে সামান্য একটা নাম্বার জোগাড় করা কোন ব্যাপার হলো?
পাশে একজন কর্মচারীর ডাক শুনে সেদিকে তাকিয়ে কোন কারনে চিৎকার করে কিছু বলে উঠলো নোমান।
অপু ভয় পেলো।
আবার রাগলো কেনো লোকটা,এবার কি ওখানকার রাগ সব অপুর উপর ঝারবে নাকি।
কিন্তু সেরকম কিছুই হলোনা। নোমান স্বাভাবিক গলায় অপুকে উদ্দেশ্য করে ফোনে বললো,
—দুমিনিট পরে ফোন করছি তোমায়।
অপু মাথা নাড়লো।
নোমান যেনো এক লহমায় সে কথা বুঝে ফেললো।একটু হেসে বললো,
–মাথা নাড়ালে কি ফোনের ওপাশের মানুষটা শুনতে পাবে?মুখে বলবা কথা।
অপু হেসে ফেললো।
–আচ্ছা।
——
ভার্সিটিতে যেতে আজ অপুর বেশ দেরি হয়ে গেছে।
কাল সারারাত নোমানের সাথে কথা বলেছে সে।
ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পরেছিলো তাই উঠতে একটু বেলা হয়ে গেছে।
উঠে তারাতাড়ি কাজা নামাজ আদায় করে সবার জন্য চা বানিয়েছে।
আরমান খানকে চা দিয়ে রেডি হয়ে ভাড়সিটির উদ্দেশ্যে বেড়িয়েছে।
মনের ভেতর কেমন যেন অশান্তি লাগছে অপুর।
ভেতরটা খুব হাসফাস করছে।
এমনটা তো হওয়ার কথা না।
সব তো ঠিকঠাক চলছে।
মা ভাল আছে,নোমানোর সাথে আস্তে আস্তে সম্পর্কটা ভালোর পর্যায়ে যাচ্ছে। তবু কেন ভেতরটা এতো অশান্ত তার?
অপু সিদ্ধান্ত নিলো আজ একটা ক্লাস করে বাড়ি ফিরে আসবে।
হাটতে হাটতে কিছুদুর যেতেই একটা রিকশা পেলো।
রিকশা ডেকে দাড় করিয়ে উঠতে যেতেই পেছন থেকে কেউ ডেকে উঠলো,
—রুপা দাড়াও?
অপু পেছন ফিরে দেখে রায়হান ভাই।
দৌড়ে এসে রিকশার একপাশে বসে পরলো সে।
অপুর সেদিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে একগাল হেসে রায়হান বললো,
—কি?এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?ওঠো রিকশায়।
অপু কথা বাড়ালো না।
চুপচাপ রিকশায় উঠে বসলো।
যদিও রায়হান একপাশে সরে বসেছিলো তারপরও অপু সাবধানে একপাশে বসলো যাতে স্পর্শ না লাগে।
অপু ইদানীং কিছুটা বুঝতে পারে রায়হানকে।
সে যে মনে মনে অপুকে পছন্দ করে তাও বোঝে।
যদিও মুখে কখনো বলেনি তবু অপু বুঝতে পারে।
এই যে প্রতিদিন অপু ঠিক যে সময় ভার্সিটিতে যায় অলৌকিক ভাবে ঠিক সেই সময়ে রায়হানের যায়।
অপুর লেট হলে সেদিন নাকি রায়হানেরও লেট হয়।
একদিন দু’দিন মিলতে পারে তাই বলে প্রতিদিন?
অপু তো আর বাচ্চা না!
তাছাড়া রাস্তার পাশে কোনার ঐ দোকানটায় রায়হানকে বসে থাকতে দেখেছে অপু।
রায়হান ঐ দোকানটায় বসে অপুর জন্য রোজ অপেক্ষা করে।
ব্যাপারটা খুব বিরক্ত করে অপুকে।
কিন্তু কিছু বলতে পারেনা।
কি বলবে?আগ বাড়িয়ে কিছু কি বলা যায়?রায়হান ভাই তো মুখে কিছু বলেনি,বা কোন খারাপ ব্যবহারও করেনি।
,
চুপচাপ মাথা নিচু করে রিকশায় বসে থাকে অপু।
এরমাঝে ফোন বেজে ওঠে।
অপু কল রিসিভ করে কানে ধরা মাত্র কারও কথা শুনে স্তম্ভিত হয়।
হাত থেকে আপনাআপনি ফোন খসে পরে।
চোখ জলে ভরে ওঠে।
রিকশা থেকে পরে যেতে গেলে রায়হান হাত টেনে ধরে।
,
,
চলবে…….