#গল্পঃবসন্ত এসে গেছে
#লেখাঃনুশরাত জেরিন
#পর্বঃ২৫
,
,
প্লেটে খাবার নিয়ে রুমে ফেরে অপু।
ধীরে ধীরে পা ফেলে খাটের কাছে আসে।
নোমান তখন বিছানায় পাশ ফিরে শুয়ে আছে।
অপু গলা খুকখুক করে।
এদিকওদিক হাত দিয়ে জিনিসপত্র সরায়।নোমানের শোনানোর জন্য শব্দ করে।
বলে,
—এই যে শুনছেন?এইযে?
নোমান তবু নড়েনা।অপু এবার নখ দিয়ে গায়ে খোঁচা দেয়।
আবার ডাকে,চেচিয়ে বলে,
—শুনতে পাচ্ছেন? এই যে?
নোমান ধড়ফড় করে উঠে বসে।
বুকে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ হাপায়।চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে।কি ঘটেছে বোঝার চেষ্টা করে।বুঝতে পেরে রাগী দৃষ্টি ফেলে অপুর উপর।
বলে,
–এভাবে আমায় ঘুম থেকে উঠালে কেনো?
অপু অপরাধীর ভঙ্গিতে তাকায়।
তার নিজেরও খারাপ লাগে।এভাবে ঘুম থেকে ডাকা ঠিক হয়নি,ব্যাপারটা বোধগম্য হয়।
কিন্তু অপু তো ভেবেছে নোমান রাগ করে ভান ধরে শুয়ে আছে।এতো তারাতাড়ি কেউ ঘুমাতে পারে সেটা অপু জানতো নাকি?
নোমান অপুর উত্তর না পেয়ে আবার বলে,
–কি হলো,উত্তর দাও।
—আপনি ঘুমাচ্ছিলেন?
নোমানের মেজাজ গরম হয়।কেউ কাঁচা ঘুম থেকে ডেকে যদি বলে আপনি কি ঘুমাচ্ছিলেন?তাহলে মেজাজ গরম হওয়াটাই স্বাভাবিক।
তবুও নিজেকে যথাসাধ্য কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে।
একটা রাগী দৃষ্টি নিয়ে অপুর দিকে তাকায়।
অপু সে দৃষ্টির মানে বোঝে।
—না মানে আসলে,আপনি না খেয়ে কেনো ঘুমাচ্ছিলেন?
—খাবার ভাল লাগেনি তাই খাইনি।কেনো তুমি তখন শোনোনি?
অপু বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলে,
—সত্যি ভালো লাগেনি?
নোমান সেদিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়।ধরা পরার ভয়ে হুমকি ধামকি দেখায়।
জোর গলায় বলে,
—সত্যিই তো।মিথ্যা বলবো কেনো।
অপু চেয়ার ছেড়ে খাটে উঠে বসে।
শাসনের সুরে বলে,
—আমি কিছু জানিনা,আপনাকে খেয়ে দেয়ে তারপর ঘুমাতে হবে।নয়তো শরীর খারাপ করবে তো।
না খেলে আমি কিন্তু ঘুমাতে দেবোনা।চিমটি কেটে ঘুম ভাঙিয়ে দেবো।
—আমার খিদে নেই।
–তারমানে আপনি খাবেননা?
—উহু।
—সত্যিই না?
—না।
—আমি খাইয়ে দিলেও না?
নোমান না বলতে গিয়েও থেমে যায়।
এই মুহুর্তে কি শুনলো সেটা ঠিক মতো বোঝার চেষ্টা করে।
চোখ বড়বড় করে অপুর দিকে তাকায়।
অপু খাবারের প্লেট এনে সামনে ধরে।
নোমান খুশি হয়।মনের কুঠুরির গোপন ইচ্ছেগুলো না বলতেই কেউ বুঝে নিলে খুশি না হয়ে উপায় থাকেনা।
খুশি মনে সুবোধ বালকের মতো অপুর হাত থেকে খাবার মুখে নেয়।
খাইয়ে দেওয়ার মাঝে মাঝে অপুর হাতের সাথে নোমানের ঠোঁটের সংস্পর্শ লাগে।
অপু বারবার সেই স্পর্শে কেঁপে ওঠে।
নোমান প্রথমে বিষয়টা বুঝতে না পারলেও পরে বুঝতে পারে।
পরবর্তীতে ইচ্ছে করেই অপুর হাতে মৃদু কামড় বসায়।
অপু লজ্জায় গুটিশুটি মেরে যায়।
অপুর লজ্জায় রাঙা রক্তিম মুখ দেখতে নোমানের দারুন লাগে।
রাতের মৃদু জোৎস্নার আলোয় ঘর আলোকিত হয়।
সে আলো তীর্যকভাবে অপুর চোখমুখে পরে।
মুখশ্রী জোৎস্নার আলোয় আরও মনোমুগ্ধকর লাগে।
নোমান একধ্যানে সে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে।
মৃদু বাতাসের ঝাপটায় মুখে চুল নেমে আসে।
একহাতে প্লেট, আরেক হাতে খাবার খাওয়ানোর দরুন চুল সরাতে পারেনা।
মাথা এদিকওদিক ঝাকায়।
নোমান একহাত এগিয়ে নিয়ে নরম ছোয়ায় চুল সরায়।
অপু নিজের কপালের মৃদু ছোয়ায় চমকে নোমানের মুখপানে তাকায়।
নোমান মিষ্টি হাসে।
চোখ নামিয়ে নেয়।
বাকা হেসে আবার তাকায়,অপু ততক্ষণে প্লেট হাতে নিয়ে রুম ছেড়ে পালায়।
—-
পরপর দুদিন ভার্সিটি যায়নি অপু।
বাড়িতে বসেই সময় কাটায় সে।
ফুলি নামক মেয়েটার সাথে অপুর ব্যাপক ভাব হয়েছে।মেয়েটা খুব চটপটে স্বভাবের। এই বাড়িতে কাজ করার কারনে কষ্ট করে চুপচাপ থাকতে হতো তাকে।
কিন্তু এখন অপুকে পেয়ে সে তার স্বভাবের পুরোটায় উন্মুক্ত করেছে।
দুজনে মিলে হাতে হাতে বাড়ির কাজ সামলায়।
লুডু খেলে।হৈ হুল্লোড় করে।
প্রানশূন্য চুপচাপ বাড়িটায় যেনো প্রাণ সন্ঞ্চার হয়।
—-
আজ সকালে উঠে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হয় অপু।
দু দুটো দিন সে ভার্সিটি যায়নি।
না যাওয়ার কারনটা রায়হান ভাই।
রায়হান ভাইকে এড়িয়ে চলার জন্যই ভার্সিটি অফ দিয়েছিলো অপু।
কিন্তু কতোদিন আর ঘরে বসে কাটানো যায়?রায়হান ভাইয়ের জন্য পড়াশোনা তো আর ছেড়ে দিতে পারেনা সে?
রাস্তায় কোথাও রায়হানের দেখা পাওয়া যায়না।অপু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।
মানুষটার সামনে দাড়াতে ইচ্ছে করেনা অপুর।
কেনো যেনো নিজেকে দোষী দোষী মনে হয়।যদিও অপু রায়হান ভাইকে সেরকম কোন ধরনের ইঙ্গিত দেয়নি,স্বাভাবিক ভাবেই কথাবার্তা বলেছে।তারপরও রায়হান ভাই যে মন থেকে কষ্ট পেয়েছেন সে কারনটার জন্য নিজেকে অপরাধী মনে হয় অপুর।
ক্লাস শেষে এদিকওদিক দেখতে দেখতে গেট থেকে বের হতে যায় অপু।
কিন্তু সামনে রায়হান ভাইকে দেখে থমকে দাড়ায়।
আজ অপুর সাথে পিহু আছে।
পিহু পাশ থেকে বলে,
—কিরে অপু দাড়িয়ে পরলি কেনো?চল।
অপু আবার চলা শুরু করে।রায়হান ভাইকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে একটি ডাক শোনে।
—রুপা দাড়াও।
,
,
চলবে…….