#গল্পঃবসন্ত এসে গেছে
#লেখাঃনুশরাত জেরিন
#পর্বঃ৪
,
,
,
টিউশনি শেষ করে ফিরতে ফিরতে সন্ধা হয়ে এসেছে।
আসেপাশে মানুষের আনাগোনা কমতে শুরু করেছে।অপু দ্রুত হাটার চেষ্টা করে কিন্তু ছেড়া স্যান্ডেলের জন্য গতি বাড়াতে পারেনা।খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে যতো তাড়াতাড়ি পারে হাটার চেষ্টা করে।
এদিকে পেট বারবার জানান দেয় ক্ষুধার পরিমান।পেটে ইদুর বেড়াল সব একসাথে যেনো মহাযুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে।
সেই যে সাত সকালে যেমন তেমন করে কিছু মুখে দিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়েছিলো আর এপর্যন্ত একটা দানাও পেটে পরেনি তার।
গলির রাস্তা ছেড়ে বড় রাস্তা ধরে অপু।গলির মোড়ে বখাটে কিছু ছেলে অপুকে দেখে শিষ বাজানো শুরু করে,উল্টা পাল্টা গান গায়।বাজে ইঙ্গিত দেয়।
অপু চোখ মুখ শক্ত করে সামনে এগোয়।
এসব ছেলেদের কাজই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে যাতায়াত রত মেয়েদের বিরক্ত করা।
এদের পাত্তা না দেওয়াই ভালো।
আবার প্রতিবাদ করারও জো নেই।
এরা এলাকার প্রভাবশালী নেতার ছেলে আর তার চেলাপেলা।
এদের কিছু বলতে যাওয়া মানে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা।
,
অপু আরেকটু সামনে এগোনোর পর কিছু মানুষের জটলা দেখে।একবার ভাবে এড়িয়ে যাবে,পরমুহূর্তেই মনে কৌতূহল দানা বাঁধে।
কি জন্যে মানুষের ভিড় লেগেছে দেখার জন্য এগিয়ে যায়।
কয়েকজনকে পাশ কাটিয়ে সামনে উঁকি দেয়।
একটা বয়স্ক লোককে গাড়ির পাশে মুখ থুবড়ে পরে থাকতে দেকে আঁতকে ওঠে।
লোকটা নিশ্চই এক্সিডেন্ট করেছে ভেবে এদিক ওদিক তাকায় অপু।
এতো এতো মানুষ দাড়িয়ে আছে এখানে কিন্তু কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসছে না?
তাহলে ভিড় লাগিয়ে কি করছেটা কি সবাই?সার্কাস দেখছে নাকি লোকটার মৃত্যুর অপেক্ষা করছে?
অপু পাশে দাড়িয়ে থাকা একটা লোককে ডেকে বলে
—এই যে ভাই,ওনাকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করছে না কেন কেউ?
লোকটা বললো,
—পুলিশ কেস এটা।পুলিশ না আসলে কেউ হাতও লাগাবেনা।
অপু উত্তেজিত হয়ে বললো,
—কিন্তু ততক্ষণে যদি লোকটার কিছু হয়ে যায়?
দাড়িয়ে থাকা লোকটা অপুর আপাদমস্তক একবার ভালো করে দেখে বললো,
—আপনার এতো মায়া লাগে কেন?আপনার চেনা কেউ?
—আপন বা চেনা না হলে বুঝি কারও প্রতি মায়া দেখানো যাবেনা?
লোকটা এবার বেশ বিরক্ত হলো।
—এতো মায়া লাগলে আপনি কেন হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন না?
অপুও তেজ দেখিয়ে বললো,
—আমিই নিয়ে যাচ্ছি।আপনাদের মতো মনুষ্যত্বহীন আমি নই।
রাস্তায় চলাচল রত এক সিএনজি দাড় করিয়ে আরও কয়েকজন লোকের সাহায্য নিয়ে অসুস্থ লোকটাকে সিএনজিতে টেনে তুললো অপু।
সিএনজি চালক কে পাশের হাসপাতালে যাওয়ার কথা বলে অপুও উঠে বসলো।
,
,
,
—-স্যার স্যার।
কর্মচারী লোকটার আকস্মিক চিৎকারে কিছুটা চমকে উঠলো নোমান।সে তার রুমে সোফায় বসে লেপটপে অফিসের প্রয়োজনীয় কাজ সারছিলো।এমন সময় সচারাচর কেউ নোমানকে বিরক্ত করেনা।কড়া নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আছে তার।এ সময় অফিসের যাবতীয় কাজ সারে নোমান।অফিসেও কাজ করে আবার বাড়িতেও বাড়তি কাজগুলো সম্পাদন করে সে।
এভাবে চিৎকার করে মনযোগ নষ্ট করায় কর্মচারী ছেলেটার উপর বেশ বিরক্ত হলো নোমান।
তারচেয়েও বেশি বিরক্ত হলো নক না করে রুমে ঢুকে পরায়।
লেপটপ বন্ধ করে পাশের সেন্টার টেবিলে রেখে থমথমে মুখ নিয়ে ছেলেটার দিকে তাকালো নোমান।
এক তাকানোতেই ছেলেটা যা বোঝার বুঝে নিলো।
আবার রুমের বাইরে ফেরত গিয়ে দরজায় নক করে উকি দিয়ে বললো,
—আসবো স্যার?
নোমান চেহারায় আরো কঠোরতা এনে বললো,
—না।
ছেলেটা অপ্রস্তুত হলো।রুমে ঢোকার পারমিশন চাইলে কেউ যে মুখের ওপর না বলে সেটা তার জানা ছিলো না।
আমতা আমতা করে বলে,
—কেনো স্যার?
নোমান দু-হাত বুকে ভাজ করে শরীর সোফায় এলিয়ে দিয়ে বলে,
—প্রথমবার তো পারমিশন না নিয়েই রুমে ঢুকেছিলেন,এবার নাহয় পারমিশন নিয়ে রুমের বাইরে থাকুন।
ছেলেটা অসহায় দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলে,
—কিন্তু একটা জরুরি খবর বলবো স্যার।খবরটা খুব জরুরি তাই উত্তেজনায় না বলে রুমে ঢুকে পরেছিলাম।
—কি এমন জরুরি কথা?ভেতরে আসুন।তারপর বলুন।
ছেলেটা রুমে ঢুকে বললো,
—আপনার বাবা এক্সিডেন্ট করেছেন স্যার।
নোমান তড়িৎ গতিতে উঠে দাড়ালো।
—কিন্তু বাবা তো বাসায় ছিলো।অসুস্থ তো তিনি।
আমি কাল দেখা করে এলাম।
একটু থেমে আবার বললো,
—কোথায় যাচ্ছিলেন বাবা?
—আপনার ফ্লাটে নাকি আসছিলেন।
—আমার ফ্লাটে? কিন্তু কেনো?
—আমি জানিনা স্যার।
—কোন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে,ঠিকানাটা বলুন।
ছেলেটা ঠিকানা বলার সাথে সাথে বিছানার পাশ থেকে জ্যাকেটটা তুলে পরতে পরতে বেড়িয়ে পরলো নোমান।
,
,
,
,
চলবে……