বালির সংসার পর্ব ২১

#বালির_সংসার(২১)
.
.
তাহাজ্জুদ নামাজের সিজদাহ্ তে শুধুই অর্থির ফিরে আসা চায় ওর বাবা।
দিন যে ফুরিয়ে আসছে তার খুব ভালোভাবে সে বুঝে।
মেয়েকে না দেখে মরেও শান্তি পাবেনা।
.
.
আয়ানের ব্যবহারে আদিত্য অবাক হয় মাঝেমধ্যে।
সে কি সত্যি জানেনা অর্থি কোথায়? না কি বলতে চাচ্ছেনা।
.
.
আজকাল দিন গুলো বড্ড ক্লান্তিকর যায় অর্থির। সারাদিন পরিশ্রমের পর রাতে যখন বিছানায় ঘুমায়,ঘুম চলে আসে।
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়, দুজন মানুষের স্মৃতি বড্ড পোড়ায়। না! সে আদিত্য, রুপ কে নিয়ে ভাবে না। ওর চিন্তায় তাদের অস্তিত্ব নেই কিন্তু অরুনীমা, আরশ কে সে ভুলতে পারে না। এখানে সবাই ওকে মা বলে ডাকে কিন্তু তবু তৃপ্তি বিষাদচূড়ায়।
হ্যাঁ! অর্থি বেঁচে আছে। ছোট্ট একটা চাকুরী করেই দিন চলছে। বেতন বেশি না সাত হাজার টাকা। তবুও লাগে না অর্থির। অনাথাশ্রম, বৃদ্ধাশ্রম এক সাথেই এখানে। তাদের সবার দেখাশুনার দায়িত্বে আছে।
সারাদিন সবার মা ডাক শুনতেই দিন কেটে যায়।
পরিবার, সন্তান হারিয়ে এদের নিয়েই বেঁচে আছে সে। তবুও কোন অভিযোগ নেই।
.
সকালে উঠে সব কাজ অন্য একজন কে বুঝিয়ে বেরিয়ে গেলো অর্থি।
যাওয়ার সময় পাশে দোকান থেকে মোমবাতি,আগরবাতি কিনে নিলো। আজকে যে তার সন্তানদের জন্মদিন।
একবছর আগেই তাকে নিঃস্ব করতে পৃথিবীতে এসেছিলো তারা।
মাঝেমধ্যে ভাবে ভালোই হয়েছে মরে গেছে। না হলে এই দুনিয়া বড্ড বেশি ভয়ংকর।
.
.
সন্তানদের কবরের পাশে বসে নিরবে কাদঁছে সে।
হাত দিয়ে স্পর্শ করাতে আর নিরব থাকতে পারলো না। চিৎকার করে কাদঁতে লাগলো।
মসজিদের ইমাম সাহেবের বউ এসে মাথায় হাত রাখলো। কিছুই অজানা নয় তার৷
মেয়েটার কষ্ট দেখে সত্যি কষ্ট হচ্ছে।
.
.
দূর থেকে আদিত্য কাউকে দেখতে পাচ্ছে। খুব সময় লাগলো না তার।
দৌড়ে কাছে গিয়েই পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে৷
ছাড়িয়ে সামনের দিকে তাকাতেই চমকে যায় সে। দ্রুত চলে যেতে নিলে আদিত্য কষিয়ে থাপ্পড় মারে।
টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায় অর্থি।
.
কাল রাত থেকে কেনো যেনো মনে হচ্ছিলো অর্থি আজকের দিনে এখানে আসবে। পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাক না কেনো? আজ যে তার সন্তানদের জন্মদিন।
ভাগ্যিস সময় থাকতে এসেছিলাম।
.
.
অর্থি কে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে আদিত্য কাউকে কল দেয়৷
কিছুর ব্যবস্থা করতে বলে। তারপর অর্থি কে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে নেয়। না হলে উঠলে চেচামেচি করবে।
.
.
টানা সতেরো মিসডকল দেখে চমকে যায় আয়ান।
মোনাপাখি ঠিক আছে তো?
সিকিউরিটি গার্ড কে কল দিতেই বলে কেউ একজন অর্থি ম্যাম কে নিয়ে গেছে।
আয়ান রাগে ফেটে যাচ্ছে তার থেকে বেশি ভয়।
কিন্তু? কে নিলো? বোন কই আছে আয়ান শুরু থেকেই জানে। ওর সাথে সব সময় ছদ্মবেশে সিকিউরিটি গার্ড থাকে। আজকেও ছিলো। যেখানে ও ছিলো খুশি ছিলো তাইতো আয়ান ওকে নিজের মতো সময় দিয়েছে তবে আজকে কে এলো? তবে কি?
ছবি পাঠাতেই আয়ান সিউর হলো। আদিত্য দা।
গার্ডদের না করে দিলো কিছু করতে৷
কারণ তার বোন এখন সবচেয়ে নিরাপদ মানুষের কাছেই আছে।
.
.
অর্থির ঘুম বেশ খানিক্ষন পর ভাঙে। কিছু কিছু মনে আছে৷ ব্ল্যাক জিন্স, স্কাইব্লু শার্ট, আদিত্যদা!!!!!
হ্যাঁ আদিত্যদা ছিলো।
উঠে বসতেই দেখে বারান্দার সাদা পর্দাগুলো বাতাসে সরে সরে যাচ্ছে।
সিগারেট হাতে দাঁড়িয়ে আছে আদিত্য।
উঠতে দেখেই ফিরে এলো তার কাছে।
কিন্তু অর্থি তাকে স্পর্শ করতে দিতে নারাজ।
কেনো করবে সে?
কোন অধিকারে।
বেশ খানিকটা তর্কবির্তক হয়।
অর্থির এক কথা সে অপবিত্র কেনো তাকে আদিত্য স্পর্শ করবে?
তার থেকে তাকে মেরে ফেলুক। কারণ সে তো আত্নহত্যাও করতে পারছে না।
.
আদিত্য রেগে গিয়ে বলে
– মরবি? মরতে চাস? আচ্ছা মারবো। তার আগে এখানে সিগ্নেচার কর।
– এটা কি?
– তোর মৃত্যুর পর তোর শরীর তুই স্বেচ্ছায় দান করছিস।
.
.
অর্থি একবারো চিন্তা না করে সাইন করে দেয়৷
তারপর আদিত্য তাকে হাত ধরে টানতে টানতে বাহিরে নিয়ে যায়।
বাহিরে গিয়ে অর্থির চোখ ছানাবড়া। কি দেখছে এসব? । চারপাশে শুধু পানি আর পানি। পানির মধ্যে ভাসমান কটেজে? তার মানে কি আদিত্যদা ওকে নিয়ে সিংগাপুর আছে?
কেননা বিয়ের পর ওদের এখানে আসা নিয়ে আদিত্যর প্ল্যান ছিলো। পানি খুব ভয় পায় সে। হাত পা খুব কাপছে৷ আদিত্য হাত ধরেই পিছনে দাঁড়িয়ে। খুব কান্না পাচ্ছে অর্থির। সে যে আরেক টা নিশি হতে চায় না। চাইছে না সে রুশাও তার মতো কষ্ট করুক। আদিত্য দা কেনো বুঝছে না।
উপরওয়ালা কেমন পরীক্ষা নিচ্ছে?
অতীত থেকে ছুটতে গিয়ে অতীতে জড়িয়ে যাচ্ছে সে।
.
আদিত্য হাল্কা ধাক্কা দিতেই পানিতে পড়ে যায় অর্থি।
আদিত্যর মুখে পৈশাচিক হাসি।
– তুই তো মরতে চাস তাই না? নে মরে যা।
.
অর্থি পানির মধ্যে হাত পা ছুড়তে থাকে সে যে সাতার পারে না। যাক বেশ ভালোই হলো মরেই যাচ্ছে সে।
.
আদিত্যর বড্ড হাসি পাচ্ছে। অনেকদিন পর অর্থি আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে। অনেকটা পানি খেয়ে নিয়েছে।
আদিত্য অর্থি কে ডিভানে শুয়িয়ে দিয়ে ওর পাশে শুয়ে পড়ে।
বড্ড জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।
অর্থির পানিতে ফোবিয়া আছে।৷ বেশি পানি প্রচন্ড ভয় পায়৷ সেবার সবাই মিলে সেন্টমার্টিন গিয়ে এক মুহূর্তের জন্য আদিত্যর হাত ছাড়েনি। আদিত্যর হাত ছাড়তে হলে আগে আয়ান এসে এক হাত ধরতো তারপর।
.
.
অর্থি কিছুটা শান্ত হয়েছে। অর্থির অস্থিরতা আরেকটু বাড়াতে ক্ষতি কি।
অর্থি কে সুযোগ না দিয়েই আদিত্য ঠোঁটে ঠোঁট রাখে।
একে তো পানি থেকে উঠেছে, আরেক আদিত্যর এমন ব্যবহারে অর্থির বেশ কষ্ট হয় দম নিতে।
আদিত্য বুঝে অর্থি অনেকটা শান্ত হয়ে এসেছে।
আদিত্যর ঠোঁট অর্থির গলায় নেমে এলে কিছুক্ষণ পর যখন ওর বুকে মাথা রাখবে তখন অর্থি আদিত্য কে সরিয়ে দেয়।
আদিত্য অর্থির এমন ব্যবহারে প্রচন্ডরকম রেগে যায়। এক হাত দিয়ে
গলায় চাপ দিয়ে বলে
– এই বুকেই রুপ মাথা রাখতো তাই না? তাই তুই এমন করছিস?
.
এবার অর্থির সত্যি মনে হচ্ছে ও মরে যাবে।
.
আয়ান জলদি জলদি সব কিছু গুছাচ্ছে৷ দ্রুত সিংগাপুর যেতে হবে।
আপু ওখানে আছে। যেতে সারে চার ঘন্টার মতো লাগবে।
এক মুহূর্ত ভাবলো আবার কি ভেবে যেনো আজকের টিকিট ক্যান্সেল করে দিলো।
হুম প্রয়োজন আছে।। আদিত্য অর্থি কে একা কিছু সময় থাকতে দেওয়া প্রয়োজন৷
হয়তো সব ঠিকঠাক হবে৷ কিন্তু সে তো তার বোন কে চিনে। এত সহজে মানবে না।
আল্লাহ আদিত্য দা কে সহ্য করার ক্ষমতা দিক। কারণ অর্থি ইমোশনাল হলে সামনের মানুষের মাথা কাজ করার মতো থাকে না তার করা কাজে । নিজেকে যে সে বর্বর ভাবে অত্যাচার করার ক্ষমতা নিয়ে জন্মিয়েছে।
.
চলবে
.
.
Sabiya moon

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here