” আগামী তিন দিনের মধ্যেই তুই রিয়ানকে বিয়ে করবি আর আমার কথা মতো এই সমস্ত প্রোপার্টি আমার ছেলের নামে লিখে দিবি!
নাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না, সিরাত!”
সামনে থাকা মাঝবয়সী মহিলার হুংকারে রীতিমতো ভয়ে কেঁপে উঠলো সিরাত। রিয়ানকে বিয়ের করার কথা কর্ণকুহর পর্যন্ত পৌঁছাতে শিউরে উঠলো সে।
– ” চাচী তুমি এ,এগ্,এগুলো কি বলছো?”
কম্পনরত কন্ঠে সামনে থাকা মহিলাটিকে জিজ্ঞেস করে উঠলো সিরাত।
– ” হ্যাঁ আমি ঠিকই বলছি!
যদি এ বাড়িতে থাকতে চাস তাহলে রিয়ানকেই তোর বিয়ে করতে হবে আর তোর নামে বাদবাকি সব প্রোপার্টি রিয়ানের নামে লিখে দিতে হবে!”
কথাগুলো বলতেই সিরাতের মুখের উপর একটা দলিল ছুঁড়ে মারলেন মিসেস সেলেনা চৌধুরী।
কোনো কিছুর সংস্পর্শ পেয়ে হালকা নড়েচড়ে উঠলো সিরাত। সেলেনা চৌধুরী ওরফে চাচীর নিকট থেকে এমন অপ্রীতিকর আচরণ কখনোই আশা করেনি সে। রুমে কোনো তৃতীয় জনের উপস্থিতি টের পেয়ে মাথা তুলে তাকালো সে।
– ” মা, তুমি এখানে কি করছো এই মেয়েটার ঘরে?”
রিয়ানের কন্ঠস্বর শুনে হালকা স্বস্তি বোধ করলো সিরাত। মনে একরাশ ক্ষীণ আশা নিয়ে আশপাশের জিনিসপত্র হাতড়ে হাতড়ে এগিয়ে গেল সে।
– ” রিয়ান ভাইয়া, আপনি এসেছেন? আপনি একটু চাচীকে বোঝান না! চাচী এসব কি বলছে?
আপনার সাথে আমার বিয়ে, আর কিসের দলিল পত্রের কথা বলছেন তিনি!”
– ” কেন ভুল কি বলছে মা? ঠিকই তো বলছে। তোর সাথে বিয়েটা হলেই তো লিগ্যাল ভাবে তোর নামে লিখা সমস্ত প্রোপার্টি আমার নামে চলে আসবে!
আমি তো জাস্ট এটার জন্যই বিয়ে করব তোকে! এত বড় একটা এমাউন্ট কিভাবে হাতছাড়া করি বল?
নাহলে তোর মতো একটা অন্ধ মেয়েকে বিয়ে করার কথা আমি কল্পনাতেও ভাবতে পারি না! ইউ ডাফার!”
সিরাতকে উদ্দেশ্য করে তাচ্ছিল্যের সাথে বলা কথাটি সিরাতকে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে দিলো। আজকে পরিবারের লোকজনের এমন বিরূপ পরিবর্তন তাকে মর্মাহত করছে বারংবার।
– ” মা আমি বাইরে যাচ্ছি! ফিরতে ফিরতে কাল সকাল হয়ে যাবে!”
– ” আচ্ছা ঠিক আছে, বাবা! সাবধানে থাকিস কেমন!”
সেলেনা চৌধুরীকে বিদায় জানিয়ে রুম থেকে গটগট করে বেরিয়ে পড়লো রিয়ান। আর সেলেনা চৌধুরীও কয়েক পলক সিরাতের দিকে তাকিয়ে মুখ বাঁকিয়ে বেরিয়ে পড়লেন।
এদিকে একে একে সবাই বেরিয়ে যাওয়ার পর মেঝেতে ধপ করে বসে পড়লো সিরাত। অনুভূতিশূন্য ভাবলেশহীন ভাবে বসে থাকলেও মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে রিয়ানের বলে যাওয়া বাক্য ঘুরপাক খাচ্ছে।
– ” আপু, তুই ঠিক আছিস?”
চিন্তা মগ্ন হয়ে হুড়মুড় করে সিরাতের সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো নিশাত। চোখে মুখে বড় বোন সিরাতের প্রতি চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট।
সিরাত! পুরো নাম সিরাত আনবার পূর্বী!
দেখতে মাঝারি গড়নের, চোখ দুটো টানাটানা হলেও মায়াবী! নাকটা সরু, নাকের উপর কালচে একটা তীল! অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। বাবা সাদমান চৌধুরী এবং মা তাসলিমা চৌধুরীর আদরের রাজকন্যা হলেও বিগত পাঁচ মাস পূর্বেই ভয়াবহ রোড এক্সিডেন্টে প্রাণ কেড়ে নেয় দুজনের। সাথে করে কেড়ে নিয়ে যায় সিরাতের চোখের দৃষ্টি!! যৌথ পরিবারে থাকায় সিরাত ভেবেছিল অন্তত তার পরিবারের লোকজন একমাত্র সিরাত ও তার ছোট বোন নিশাতের শেষ ভরসা টুকু হবে। কিন্তু তার শেষ ভরসা টুকুয়ে ভেঙে দিয়ে সেলেনা চৌধুরী এত বড় ষড়যন্ত্র করবে তা কখনো কল্পনাও করেনি সে!
মেঝেতে বসে নীরবে চোখের অশ্রু বিসর্জন দিয়ে যাচ্ছে সিরাত। মাঝে মধ্যে হেঁচকি তুলে উঠছে।
– ” আপু তুই চিন্তা করিস না! চাচীর বলা কথায় কিছু হবে না। তোর সাথে রিয়ান ভাইয়ার বিয়ে হবে না। আমি সবটা শুনেছি। কিছু হবে না আপু!”
নিশাতের কথায় মাথা তুলে তাকালো সিরাত। হাতড়ে হাতড়ে নিশাতের হাতের মুঠো শক্ত করে চেপে ধরল।
– ” কিন্তু কি করে নিশাত? তুই তো জানিসই রিয়ান ভাইয়া কতটা ভয়ংকর!
আর চাচীও তো আমাকে মাত্র তিন দিনের সময় দিয়েছে! এই তিন দিনের মধ্যে কি করে বিয়ে আটকাবো? আর চাচীকে কিই বা বলে এই বিয়ে আটকাবো!
আমি যদি বিয়েটা করি তাহল তো রিয়ান ভাইয়া আর চাচী মিলে এসব কিছু লিখে নিবে নিজেদের নামে।
আর তাদের এই কাজের জন্য কি করে রিয়ান ভাইয়ার সাথে বিয়েতে রাজি হই বল?”
ক্রন্দনরত কন্ঠে বলে উঠতেই নিশাতের বুকটা ধক করে উঠল। তার চোখের কোণেও অশ্রুরা ভীড় জমিয়েছে!
– ” কাদিস না আপু! সব ঠিক হয়ে যাবে। তোর বিয়ে রিয়ান ভাইয়ার সাথে হবে না।
আর রিয়ান ভাইয়া সহ চাচী কেউই তোকে নাগাল পাবে না!”
নিশাতের কথার আগাগোড়া কিছুই বুঝতে পারলো না সিরাত। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া পানিটুকু মুছে নিলো সিরাত। তবে নিশাতের কথা কর্ণগোচর হতেই চেহারায় তার উদ্বিগ্নতার ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠলো।
– ” কি বলছিস এসব নিশাত? চাচী আর রিয়ান ভাইয়া আমার নাগাল পাবে না কেন? একই ছাদের নিচে থেকে আবার কি করে হাতের নাগালের বাইরে থাকবো!”
– ” নাগাল তো তখন পাবে যখন তুই এই বাড়িতে থাকবি আপু!”
– ” মানেহ্!!”
অবাক হয়ে সিরাত বলে উঠতেই নিশাত উঠে দাঁড়ালো।
– ” তুই আগামীকাল রাতের মধ্যেই এই ঢাকা শহর ছেড়ে পালিয়ে যাবি আপু!”
আরেক দফা অবাক হয় সিরাত। নিশাতের মুখে এমন উদ্ভট কথাবার্তা শুনে সেগুলো ঠিক হজম করতে পারছে না সে। পাশের সোফার হাতল ধরে হাতড়ে হাতড়ে উঠে দাঁড়ালো সিরাত।
– ” পাগল হয়ে গিয়েছিস নিশাত? কি সব হাবিজাবি বলছিস তুই!
আমি ঢাকা শহর ছেড়ে পালাবো কি করে! রিয়ান ভাইয়া আর চাচী যদি এসব সম্পর্কে জানতে পারে তাহলে তান্ডব রটিয়ে দিবে!
আর এত বড় ঢাকা শহর ছেড়ে পালাবোই বা কি করে? আমার কাছে তো আমার দৃষ্টিই নেই!”
বলেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো সিরাত।
– ” চিন্তা করিস না আপু! কেউ কিছু টের পাবে না! আমি সেই ব্যবস্থা করে দেবো! শুধু তুই এই শহর ছেড়ে পালিয়ে যা! কেননা একবার যদি রিয়ান ভাইয়ের সাথে তোর বিয়ে হয়ে যায় তাহলে চাচী আর রিয়ান ভাইয়া মিলে তোর জীবনটা পুরো তছনছ করে দিবে! প্লিজ আপু রাজী হয়ে যা!”
নিশাতের কথাগুলো কর্ণগোচর হতেই ব্যাপারটা বেশ ভাবিয়ে তুলছে সিরাতকে।
————————
” তুমি আকাশের বুকে বিশালতার উপমা!
তুমি আমার চোখেতে সরলতার প্রতিমা!
আমি তোমাতে গড়ি,,
ভেঙেচুরে শতবার,
রয়েছো তুমি বহুদূরে,……
আমাকে রেখে ছলনায়,,
এ হৃদয় ভেঙে গেলে,,
জানো কি তা?
লাগে না লাগে জোড়া!!”
পাশের টেবিলে ছন্নছাড়া ভাবে পড়ে থাকা ফোনটার রিংটোন কানে এসে পৌঁছাতেই থেমে গেল চন্দ্রিকা। চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে ফোনটা হাতে নিতেই কোনো আননোন নাম্বার চোখে পড়তেই ভ্রু কুঁচকে ফেললো সে। কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর আপনাআপনি ডিসকানেক্ট হয়ে যায়। পুনরায় বেজে উঠতেই একরাশ বিরক্তি নিয়ে রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে একটি চেনা কন্ঠস্বর ভেসে এলো চন্দ্রিকার কানে।
– ” নিশাত তুমি? ইজ এভরিথিং ওকে? পূর্বী কোথায়?”
উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করতেই অপর প্রান্ত থেকে নিশাতের গুটিকয়েক কথা কানে পৌঁছাতে বিস্ময়ে চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল চন্দ্রিকার।
রেস্টুরেন্টের চেয়ারে মুখোমুখি হয়ে বসে আছে সিরাত আর চন্দ্রিকা! পাশেই নিশাত বসে আছে।
– ” এতকিছু হয়ে গেল অথচ তুই আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না? রিয়েলি পূর্বী?”
চন্দ্রিকার গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনে মাথা নিচু করে বসে আছে সিরাত। নির্বাক মুখে বসে থাকতেই পাশ থেকে নিশাত বলে উঠলো,
– ” আপু তোমাকে তো সবটুকু বললামই। এবার প্লিজ কিছু একটা করো!”
চন্দ্রিকার গম্ভীর মুখ ধীরে ধীরে আরো গাঢ় হতে শুরু করলো। মিনিট পাঁচেক পর কিছু একটা ভেবে বলে উঠলো,
– ” কাল সময়টুকু পার হতে দেয়া যাবে না। তুই আজ রাতেই এই ঢাকা শহর ছেড়ে যাবি! আর সেটাও আমার সাথে!
আমি এখনি টিকেট বুকিং করে দিচ্ছি।”
বিস্ময়ে কিংকর্তব্ বিমূঢ় হয়ে গেল সিরাত। জীবনের সবচেয়ে বড় কঠিন মুহূর্ত আজ তার সামনে এসে উপস্থিত হয়েছে।
মাঝরাতের নিস্তব্ধ প্রহর শুরু হয়ে গিয়েছে বেশ খানিকক্ষণ আগেই। বন্ধ দরজা হালকা ভিড়িয়ে ধীর পায়ে বেরিয়ে আসতেই আশেপাশে পরখ করে নিলো নিশাত। পেছন পেছন সিরাত ও আসলো নিশাতকে অবলম্বন করে। বিশালাকার বাড়ির দোতলায় সিরাতের রুমের ঠিক ডান পাশেই সেলেনা চৌধুরীর রুম। অতি সন্তর্পণে কোনো রকম সেলিনা চৌধুরীর রুম পার করে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতেই সদর দরজায় চোখ পড়ে রিয়ানের উপর।
শার্টের হাতা, বোতাম, মাথার চুল এলোমেলো, নেশায় বুঁদ হয়ে ঢুলতে ঢুলতে দরজা দিয়ে প্রবেশ করে রিয়ান। রিয়ানের উপর চোখ পড়তেই মাঝ সিঁড়িতে থমকে দাঁড়ায় নিশাত। সাথে সিরাতও।
গুটি গুটি পায়ে এসে হলরুমের সোফার উপর বসে পড়ল রিয়ান। অতিরিক্ত ড্রিঙ্কস করার ফলশ্রুতিতে বসার কিছুক্ষণ পরেই অতল ঘুমের মধ্যে চলে যায় সে।
রিয়ানকে ঘুমিয়ে যেতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো নিশাত। সিরাতের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে গুটিগুটি পায়ে রিয়ানের পাশ ঘেঁষে মেইন ডোর থেকে বেরিয়ে পড়লো দুজনেই।
সোডিয়াম লাইটের মৃদু আলোয় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম হালকা আলোকিত হয়ে রয়েছে। মৃদু আলোতে বেশ খানিকটা সময় পর পর দু একটা ট্রেন চলাচল করছে। প্ল্যাটফর্মের এককোণে চুপচাপ টিকেট হাতে বসে আছে চন্দ্রিকা।
চন্দ্রিকা। পুরো নাম চন্দ্রিকা জাহান প্রভা। অনার্সের ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট। অত্যন্ত ম্যাচিউর স্বত্তাধিকারী যদিও সেটা সময়ের বিবর্তনে।
এক হাতে জ্যাকেট ঝুলিয়ে অন্য হাতে লাগেজ নিয়ে রেলওয়ে স্টেশনের দিকে হেঁটে আসছে একজন সুদর্শন যুবক।
– ” কেন যে এই ডিলটা সাইন করতে গিয়েছিলাম? এখন এই ডিলের কারণে তাড়াহুড়ো করে এক রাতের মধ্যে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে হবে! আবার সেখান এয়ার পোর্ট থেকে আগামী পাঁচ দিন পর রিয়াকে পিক আপ করতে যেতে হবে! জাস্ট ডিসগাস্টিং!
তার উপর এই ট্রেন ও মিস করেছি একবার। এখন এই চট্টগ্রাম যাওয়ার ট্রেন সেই কখন আসবে কে জানে? সব হয়েছে ঐ ইডিয়ট ধ্রুবের জন্য। ধ্যাত!”
একরাশ বিরক্তি নিয়ে বিড়বিড় করতে করতে সামনের দিকে পা বাড়ালো ফাইয়াজ। কয়েক পা এগোতেই কিছু একটা ভেবে থমকে দাঁড়ালো সে। কাঁপা কাঁপা হাতে জ্যাকেটের পকেটে হাত দিতেই চোখ দুটো ছানাবড়া হয়ে গেল।
– ” ওহ্ শিট! নো নো প্লিজ আবার না! এই টিকিট টা আবার কোথায় রেখে আসলাম? এক মিনিট, এক মিনিট! টিকিট আবার গাড়িতে রেখে আসিনি তো? ড্যাম ইট!”
জ্যাকেটের পকেট হাতড়ে টিকিটের কোনো চিহ্ন না পেতেই আতকে উঠলো ফাইয়াজ। পেছন ফিরে আবারো গাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলো সে।
প্রায় ঘন্টা খানেক পর একটা সিএনজি এসে থামলো রেলস্টেশনের সামনে। সিএনজি চালককে ভাড়া চুকিয়ে দিয়ে বাইরে বের হয়ে আসলো নিশাত আর সিরাত। নিশাত একবার আশেপাশে তাকিয়ে সাইড ব্যাগ থেকে ফোন করে নিলো। কললিস্ট ঘেঁটে চন্দ্রিকার নম্বরে কল দিতেই রিং হতে থাকলো।
নেটওয়ার্ক তেমন একটা না পাওয়ায় একরাশ বিরক্তি এসে জমা হলো নিশাতের চেহারায়।
– ” কি হলো নিশাত? কিছু হয়েছে? এভাবে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”
– ” আসলে এখানে তেমন একটা নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না আপু! তাই দাঁড়িয়ে আছি!
সিরাতের প্রশ্নোত্তরে বলে উঠলো নিশাত।
পাশ থেকে সিগারেটের ধোঁয়ার গন্ধ নাকে আসতেই চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো সিরাত।
– ” কি ব্যাপার সুন্দরী? এখানে কারো জন্য অপেক্ষা করছো নাকি? চাইলে বলো আমরাও তোমাদের সাথে না হয় অপেক্ষা করি!
যাই হোক তোমাদের মতো সুন্দরীদের একা ছাড়া যায় নাকি? কি বলিস তোরা?”
পেছন থেকে কয়েকদল ছেলেদের মধ্যে বিশ্রী ভাবে হেসে সিরাত আর নিশাতকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো।
এদিকে অপরিচিত কারো কন্ঠস্বরে এমন কথা শুনতেই কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো সিরাত। সাথে নিশাতেপর হাতও খুব জোরে চেপে ধরলো। নিশাতও এমন অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ে ঘাবড়ে গিয়েছে।
– ” আ,আপ্,আপনারা কারা? এভাবে আমাদের দুজনের পথ রুখে দাঁড়িয়েছেন কেন? আমাদের যেতে দিন নাহলে ভালো হবে না কিন্তু বলে দিচ্ছি!”
বখাটে ছেলেগুলো কে উদ্দেশ্য করে কম্পিত কন্ঠে কোনোমতে বলে উঠলো নিশাত।
– ” বাব্বাহ্! সুন্দরীর আবার রাগ কতো? বলি এত রাগ দেখালে চলে নাকি? একটু তো ভালোবাসাও দিতে পারো আমাদের!”
বলতে বলতে একটা ছেলে জোরে জোরে হাসতে শুরু করলো। সাথে তাল মিলিয়ে বাকি চারটা ছেলেও তাল মিলালো। এতক্ষণ বাদবাকি সাহস টুকু জমা থাকলেও এখন বেশ ভয় পাচ্ছে সিরাত আর নিশাত।
গাড়ি থেকে টিকিট নিয়ে আবারো পা বাড়াতেই সামনে একটা দৃশ্য দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো ফাইয়াজ। পরক্ষণেই চেহারার রং পরিবর্তন হতে শুরু করলো তার!
নিশাত একবার চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিলো একরাশ আশা নিয়ে যদি কাউকে সাহায্যের জন্য খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু তার আশা হতাশায় রূপান্তরিত হলো যখন আশেপাশে কাউকে পেলো না।
– ” আপু এবার কি হবে? এখানে তো কাউকেই খুঁজে পাচ্ছি না! এই বখাটে ছেলেগুলোর কাছ থেকে রেহাই পাবো কি করে! এখন কি করবো! চন্দ্রিকা আপুকেও তো কল করা যাবে না!”
ফিসফিস করে সিরাতকে উদ্দেশ্য করে বললো নিশাত।
– ” সেটাই তো বুঝতে পারছি না নিশাত। কি করবো এখন? চোখের দৃষ্টি না থাকার কারণে তো কিছু দেখতেও পারছি না!
আল্লাহ প্লিজ বাঁচিয়ে নাও!”
বিড়বিড় করতে করতেই বখাটেদের মধ্যে একটা ছেলে এগিয়ে আসলো সিরাতের দিকে। সিরাতের দিকে হাত বাড়াতেই কোনো এক অচেনা আগুন্তক এসে দাঁড়ালো সিরাতের ঠিক সামনে। সামনে কারো উপস্থিতি টের পেতেই আঁতকে উঠলো সিরাত। কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ছে দুশ্চিন্তার।
– ” ঐ পোলা! তুই আমাগো মাঝখান দিয়া ঢুকলি কেন? তোর সাহস তো কম না তুই আমাগো কাজে বাধা দেছ! চুপচাপ এখান থেইকা সইরা যা আর যেখান থেকে আইছিলি সেখানেই উল্টা হাঁটা ধর!”
তবুও যেন ছেলেটির মধ্যে তেমন কোনো ভাবান্তর ঘটলো না। বরং আরো গম্ভীর হয়ে একদৃষ্টে সামনে থাকা বখাটে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইলো।
– ” কি হইলো? কথা কানে যায় না? সরতে কইছি না তোরে!”
বখাটে ছেলেটা সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আগন্তুক কে উপেক্ষা করে সিরাতের দিকে পুনরায় হাত বাড়াতেই খপ করে হাত ধরে ফেললো সেই আগন্তুক।
– ” মেয়ে দুটোকে এখান থেকে যেতে দে! আমি চুপচাপ সবটা সহ্য করছি বলে এটা মনে করিস না আমি কিছু করতে পারবো না! সো চুপচাপ কোনোরকম ঝামেলা ছাড়াই এখান থেকে যেতে দে এদের।”
ছেলেটার কথা শুনে বখাটে ছেলেটার রাগান্বিত হয়ে চোখের ইশারা দিতেই পেছন থেকে একটা ছেলে এসে সেই আগন্তুক কে আক্রমণ করতে গেলেই ছেলেটাকে সজোরে একটা ঘুষি মেরে দিল সে। মারামারির এক পর্যায়ে বখাটেদের মধ্যে একজন পকেট নাইফ বের করে আগন্তুকের হাতে আঁচড় কাটতেই হাত বেয়ে রক্ত পড়া শুরু করলো। কিন্তু তৎক্ষণাৎ রেলওয়ে স্টেশনের পুলিশ কর্মকর্তা সেখানে উপস্থিত হতেই বখাটে ছেলেগুলো কে ধরে নিয়ে যায়।
– ” ভাইয়া আপনার হাত তো অনেকটাই কেটে গিয়েছে!”
পেছন থেকে নিশাত ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো।
– ” ইটস্ ওকে! এটা ঠিক হয়ে যাবে। তবে একটা কথা না বলে পারলাম না!
আপনার মতো মেয়েরা এসব বিষয় চোখে দেখতে পেয়েও না দেখার ভান করেন কি করে? আর একটু দেরি করে আসলে কি হতে পারতো আশা করি সেটা বলে দিতে হবে না!”
সিরাতকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো ছেলেটি। ছেলেটার কথা শুনে বিস্মিত হয় সিরাত। নিশাত কিছু একটা বলবে তার পূর্বেই পেছন থেকে একজনের ডাক পড়লো,
– ” ফাইয়াজ? ওখানে কি করছিস? তারাতাড়ি এখানে আয়! একটু পরেই ট্রেন ছেড়ে দিবে! কাম অন ইয়ার!”
ধ্রুবের কথা শুনে একপলক সিরাতের দিকে তাকিয়ে কথা না বাড়িয়ে আবারো সামনের দিকে পা বাড়ালো ফাইয়াজ।
এই দেখাই কি তবে শেষ দেখা নাকি এখনো নতুন কোন অধ্যায়ের সূচনা বাকি?…………
#চলবে 🍂
#বাসন্তী_প্রেম 🌼🌼
#সূচনা_পর্ব
#লেখনীতে: ইনায়াত আহসান ( ছদ্মনাম)