#বাসন্তীগন্ধা
লাবিবা ওয়াহিদ
[০১]
আমার এক বি!টকেল ভাই আছে। আমার-ই বয়সী। ভুল বললাম, আমার থেকে মাত্র দেড় মিনিটের বড়ো। এই দেড় মিনিটের বড়ো হয়ে সে দুনিয়া উলটে ফেলেছে। সাথে উলটিয়েছে আমার মস্তিষ্কের সব রlক্তচাপ। উঠতে, বসতে এক ভাষণ শুনিয়েছে। ভাষণ শুনানোর মাঝে মাস্ট তাঁর দুটো বাক্য থাকবেই। “আমি তোর থেকে পুরো দেড় মিনিটের বড়ো। বড়ো ভাই হই তোর।”
কথা সেখানে না। আমার এই দেড় মিনিটের বড়ো হয়ে খোঁ!চা মাlরা ভাইটা ফ্লার্ট করায় অভিজ্ঞ। ক্লাস টেনে থাকতে স্কুলের এমন একটা মেয়েকে সে বাদ রাখেনি যার সাথে সে ফ্লার্ট করেনি। স্কুলের প্রতিটা দরজা, জানালা, ফ্লোর আর দেয়াল জানতো ওর ফ্লার্ট করার ইতিহাস। ওর ইতিহাসের নমুনাস্বরূপ টেস্ট পরীক্ষায় গিয়ে ডিম পেলো। মানে ফেইল। প্রিন্সিপালের এত হাত-পা ধরলো ওরে পাশ করিয়ে দেয়ার জন্যে। কিন্তু কোনোরকম ভাবেই প্রিন্সিপাল রাজি হলো না।
আমার বাবা, চাচা’রাও যায়নি প্রিন্সিপালের মুখোমুখি হয়ে ছেলের পাশ করানোর কথা বলতে। তাদের ভাষ্যমতে পড়ার মতো পড়লে ঠিক-ই পাশ করতো। এখন বুঝুক, পড়াশোনা না করার ফল!” অবশেষে আমার দেড় মিনিটের বড়ো ভাইটা বুকে বড়ো পাথর বেঁধে আবার নিউ টেনে ভর্তি হলো, আমি সেবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। ভাইটার প্রতি করুণা হতে শুরু করলো, আমার দেড় মিনিটের বড়ো ভাই কী না শেষমেষ আমার থেকে এক বছরের জুনিয়র হয়ে গেলো? আহারে! দুঃখে হালকা হয়ে গেছিলাম। দিন-রাত মিlথ্যে করুণার নাটক করে ওকে জ্বালাতাম। বেচারা ভাইটাও পরিস্থিতির কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিলো। চাইলেও বেশি কিছু বলতে পারতো না আমার।
আমার এই ফ্লার্ট করা ভাইটার নাম হচ্ছে মাহিম। যদিও আমাদের কলেজের-ই। মাহিম লজ্জার হাত থেকে বাঁচতে আরেক কলেজে ভর্তি হতে চেয়েছিলো। নয়তো বলবে না, জমজ হয়ে একজন উপর ক্লাস আর আরেকজন নিচের ক্লাসে কেন? কিন্তু আমার বাবা-চাচা’রা এবারও তাঁর সব ভাবনায় পানি ঢেলে দিলো। অবশ্য এবার শুধু বাবা-চাচা নয়, আরেকজন তাদের সাথে তাল মেলালো। সারিম ভাই। আমার বড়ো চাচার ছেলে। আমার ধারণানুযায়ী সারিম ভাই হয়তো জেনে গিয়েছে ওর ফ্লার্ট করার বিষয়ে। তাই হয়তো শিক্ষা দিতে চাইলো।
এবার সারিম ভাইয়ার কথায় আসি। তিনি একমাত্র মানুষ যাকে আমি বাl(ঘের মতো ভয় পাই। এরও নির্দিষ্ট কারণ আছে। সারিম ভাই হচ্ছে আমাদের পরিবারের মেজো ছেলে। তার বড়ো আরেকজন আছে। সাইয়ান ভাই। যিনি বর্তমানে আমাদের সাথে থাকে না। ব্যবসার খাতিরে চট্টগ্রাম শহরে থাকে৷ আমাদের বাবা-জেঠুদের অফিসের নতুন শাখা হয়েছে চট্টগ্রামে। যার ফলে অভিজ্ঞতাসম্পণ্ণ সাইয়ান ভাই ওদিকটা সামলাচ্ছে। এজন্যই মূলত আমাদের বাড়ির ছোটগুলাকে সারিম ভাই-ই নিয়ন্ত্রণ করে। তবে সাইয়ান ভাইয়া হচ্ছে আমার আবদার পূরণের নায়ক।
এদিকে সারিম ভাইয়ের ধ!মকানি মনে হয় আমি মাহিমের চাইতেও বেশি খাই। তাঁর কোন ধ!মকে আমি কেঁপে উঠিনি আমার মনে পরে না। আমার কেঁপে ওঠার সাথে সারিম ভাইয়ের ধ!মকের সম্পর্ক অবশ্য বেশ নিবিড়। মাঝেমধ্যে এও মনে হয়, আমার কম্পন হয়তো সারিম ভাইয়ের ধ!মকের বিয়ে করা বউ। প্রতিদিন আল্লাহ্’র কাছে কতবার করে যে বলি, “আল্লাহ্ আমার সারিম ভাইয়ার ঘরে লাল টুকটুকে বউ এনে দাও, তাঁর টুকটুকে বউয়ের মাধ্যমে ধ!মকাlনোর রোগটা সারিয়ে দাও।” কিন্তু সে গুড়ে বালি। আমার এত নিয়্যত সাফ দোয়াটাও কবুল হচ্ছে না। আর… হ্যালো, হ্যালো? সোহা শুনতে পাচ্ছিস? হ্যালো?”
মেহের কান থেকে ফোন এনে দেখলো ফোনের ব্যাটারি শেষ। এদিকে মেহের কথা বলায় এত ব্যস্ত ছিলো যে অপরপাশের নিস্তব্ধতা খেয়াল করেনি। ফোনের চার্জের কথাও ভুলে গেছিলো। সোহা মেহেরের নতুন বান্ধুবী, খুব ক্লোজ। কিছুদিন হলো অন্য কলেজ থেকে ট্রান্সফার হয়ে এসেছে। মেহেরের পুরো ক্লাসের মধ্যে সোহাকেই ভীষণ পছন্দ হয়। এইতো কিছুক্ষণ আগে কল করে সোহা তাঁর পরিবার সম্পর্কে জানতে চাইলো। মেহের এতটাই উৎসুক হয়ে পরেছিলো যে নিমিষেই চার্জের কথা ভুলে গেলো। আদৌ সোহা কিছু শুনেছে কী না সন্দেহ। ফোন চার্জে দিয়ে বেজার মুখে গালে হাত দিয়ে বসে পরলো মেহের। ঠিক তখনই ভেজানো দরজা খুলে দাঁড়ায় সারিম। হালকা কেশে মেহেরের ধ্যান ভাঙানোর চেষ্টা করলো। মেহের ধড়ফড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়। বড়ো বড়ো চোখে দরজার দিকে তাকাতেই দেখলো সারিম দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভ্রু-যুগল তাঁর কুচকানো। মুখ-ভঙ্গি ভীষণ গম্ভীর। অবশ্য ক্লান্তির ছাপও কিছুটা আছে।
সারিমকে দেখে মেহের ঘাবড়ে গেলো। হালকা শুকনো ঢোঁক গিললো। সারিম থমথমে সুরে বলে,
–“তোকে বলেছি পড়ার টেবিল থেকে না উঠতে। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। এর মধ্যে তুই চেয়ার থেকে বিছানা অবধি চলে গেছিস? ভালো উন্নতি হচ্ছে তো তোর!”
মেহের মুখ ঘুচে ভাঙা গলায় আওড়ায়,
–“বিশ্বাস করুন ভাইয়া। আমি মাত্র এসে বসেছি। চেয়ারে অনেকক্ষণ বসে থাকার জন্যে আমার কোমড়টা বাঁকা হয়ে গেছে।”
–“আমি তো তোর কোমড় সোজাই দেখছি! বাঁকা হলো কখন? ভণিতা না করে চুপচাপ চেয়ারে গিয়ে বস!”
অগত্যা, অসহায় মুখ করে মেহের চেয়ারের দিকে এগোলো। সারিমও মেহেরের ওয়াশরুমে ঢুকলো। এটা দেখে মেহেরের ভিতরটা জ্বলে উঠলো। মিনমিন করে বললো,
–“তাঁর রুম, তাঁর ওয়াশরুম থাকতে আমার ওয়াশরুম কেন ইউজ করবে? আসলেই সারিম ভাইয়ের একটা বউ দরকার। অন্তত এনাকে আঁচলে বেঁধে রাখবে!”
এর মাঝে সারিম ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো। মুখমন্ডল তাঁর ভেঁজা। টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে মেহেরের পাশের চেয়ারটায় বসলো। মেহের বইয়ে কলম খোঁচাতে খোঁচাতে বললো,
–“মাহিম তো পড়তে আসেনি!”
–“ডেকে নিয়ে আয়। আমি ক্লান্ত!”
মেহের টু-শব্দও না করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। রুম থেকে বেরিয়ে আসার আগেই সারিম মেহেরকে পিছু ডাক দিলো। মেহের পিছে ফিরে তাকালে সারিম বলে,
–“মাথাটা ধরেছে। এক কাপ কফি করে নিয়ে আসিস!”
মেহের ঘাড় কাত করে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। রুম থেকে বের হতেই বিড়বিড় করে কিছুক্ষণ সারিমের উদ্দেশ্যে গাল-মন্দ করলো। মাহিমের রুমের কাছে আসতেই শুনলো, মাহিমের ঘর থেকে ফিসফিসের শব্দ। মেহের উৎসুক হয়ে দরজায় কান লাগালো। মাহিমের কথাগুলো স্পষ্ট শুনতে পেলো না সে। তবে এইটুকু বুঝলো মাহিম আবারও ফ্লার্ট করার মিশনে নেমেছে। মেহের তৎক্ষণাৎ শব্দের সাথে দরজা খুললো। মেহেরের ধাক্কায় দরজা স্ট্যান্ডের সাথে বিকট শব্দে লাগলো। বিকট শব্দ পেয়ে মাহিম ধড়ফড়িয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো। ফোনটাও অসাবধানবশত হাত থেকে বিছানায় পরে গেলো। প্রথমে ভীত নজরে চাইলেও পরবর্তীতে মেহেরকে লক্ষ্য করে ফোঁস করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। অবাক না হয়ে বললো,
–“ওহ, তুই!”
মেহের কোমড়ে হাত গুঁজে বললো,
–“হ্যাঁ, আমি। কেন, ভয় পেলি না?”
মাহিম দায় সাড়া ভাব নিয়ে আগের মতো শুয়ে পরলো। মেহের যেন পুঁটিমাছ, এমন ভাব তাঁর। মাহিম ফোনটা হাতে নিতে নিতে বলে,
–“তুই তো পোণা মাছ। তোকে ভয় পাবো কোন দুঃখে?”
কিড়মিড় চোখে তাকালো মেহের। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
–“আমার ভয় করা উচিত তোর। তোর কীর্তি আমি যদি সারিম ভাইয়ের কানে সব ফাঁস করে দিই?”
মাহিম ফিক করে হেসে দিয়ে মেহেরের দিকে তাকায়। রসিক সুরে বলে,
–“সারিম ভাইয়ের সামনে গেলে যে মিউমিউ করে সে আসছে আমারে ভয় দেখাতে। তোর পা থেকে চুল অবধি পুরোটাই আমার জানা। আফটার অল, তোর থেকে দেড় মিনিটের বড়ো!”
–“বাবাকে বলে দিবো আমি!”
–“বল, দুই একটা হাড্ডি-ই তো ভাঙবে। তবে আমার না তোর। আমাকে ফাঁসাতে আসলে আমি তোকে ফাঁসিয়ে দিবো। হুঁশ, হুঁশ!”
ফেল্টুশ মার্কা ছেলের ভাব কতো! এত অপ!মান মেহের গিলতে পারলো না। গা রি রি করে ওঠে প্রচন্ড রা!lগে। এর সাথে কথা বলাই বেকার। ফুঁসতে ফুঁসতে বললো,
–“এই মুহূর্তে সারিম ভাই তোকে পড়তে যেতে বলেছে। যদি না যাস, তাহলে ভাই তোকে এমনিতেই হ্যান্ডেল করবে। আমি যাচ্ছি কফি বানাতে!”
বলেই মেহের ভেংচি কেটে চলে যেতে নিলে মাহিম পেছন থেকে মেহেরকে ডেকে বলে,
–“আমার জন্যে-ও আনিস!”
–“বিlষ মেশানো কফি আছে, খাবি?”
মুহূর্তে-ই মাহিমের হাসি মিলিয়ে গেলো। থমথমে মুখে বলে,
–“তুই খা, আমার এখনো বিয়ে করা বাকি!”
[ক্রমশ]
বিঃদ্রঃ সকলের উদ্দেশ্যে অনুরোধ, রেসপন্স করবেন। আমার একাউন্টটা রেস্ট্রিকশনে পরে লক হয়ে গেছে। কিছুতেই ঢুকতে পারছি না। যার ফলে গল্পটার প্রচারও করতে অক্ষম আমি। তাই আপনাদের রেসপন্স আমার একান্ত প্রয়োজন। আপনারা রেসপন্স করলে অন্যান্য পাঠকদের ফিডেও গল্প পৌঁছাবে। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম। আপনাদের রেসপন্সের উপর ভিত্তি করছে পরবর্তী পর্ব!🌻