#বাসন্তীগন্ধা
|২১|
লাবিবা ওয়াহিদ
সামিরাকে সারিমের বন্ধুর পরিবার দেখতে এলো। আশিফ তার বাবা-মায়ের পাশে সটান মেরে বসে আছে। সারিম আসতেই আশিফ উঠে সারিমের সাথে গিয়ে দাঁড়ালো। সারিম অবাক সুরে বললো,
–“আরেহ? আমার সাথে কেন? বস গিয়ে তুই।”
–“আমি নার্ভাস দোস্ত। প্লিজ জোর করিস না, তোর সাথে থাকতে দে।”
সারিম আর কিছু বলেনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই সামিরাকে নিয়ে আসা হলো। আশিফের বাবা-মায়ের মুখোমুখি বসানো হলো। সামিরা অস্বস্তিতে ডুবে চুপ করে বসে রইলো। আশিফ কয়েক পলক সামিরার দিকে চেয়ে নজর ফিরিয়ে নিলো। হার্টবিট বাড়ছে। শান্ত থাকা দরকার। মেহের সামিরার পিছে দাঁড়িয়ে আড়চোখে সারিমকে দেখছে। সারিম হেসে হেসে আশিফের বাবা-মায়ের সাথে কথা বলছে। কেমন অদ্ভুত শান্তি লাগছে এই হাসিটা দেখে। বৈঠকঘরে ছোটো-বড়ো সবাই উপস্থিত। আইঁয়ুব সাহেব বিনয়ী হাসি দিয়ে আশিফের বাবার সাথে কুশল বিনিময় করতে ব্যস্ত। কথাবার্তা, আলোচনার ফাঁকে আশিফের মা এসে সামিরার হাতে আংটি পরিয়ে দিলো। অতঃপর কিছু টাকা হাদিয়াহ্ দিয়ে বললো,
–“মাহ-শা-আল্লাহ্। আমাদের মেয়ে খুব পছন্দ হয়েছে। বিয়ের তারিখ কবে দিবেন সেটা আগে বলুন। আমাদের মেয়েকে আমাদের ঘরে তোলার জন্যে যে তড় সইছে না!”
রোকসানা আলতো হেসে বললো,
–“বড়ো ছেলে সাইয়ানের বিয়ের অনুষ্ঠানের মাসখানেক পরই বিয়ের তারিখ দিলে ভালো হয়!”
এ-কথা শুনে আশিফের বাবা হেসে বললো,
–“হ্যাঁ। তাই হোক। আমাদেরও তো কতো গোছগাছের বাকি।”
সামিরা আড়চোখে একপলক আশিফের দিকে তাকালো। অতঃপর আশিফের বাবা আবারও বললো,
–“ছেলে-মেয়ে দুজনকে আলাদা কথা বলতে দেওয়া হোক?”
সকলে সম্মতি জানালো। সামিরা আশিফকে নিয়ে ছাদে চলে গেলো। পিছু পিছু মেহেরও গেলো। সে ধারণা করছে সামিরা অন্য কাউকে ভালোবাসে। এ বিয়েতে সামিরা একদমই রাজি না। সামিরা নিশ্চয়ই আশিফকে বলবে যে সামিরা অন্য কাউকে ভালোবাসে। সে বিয়ে করতে পারবে না?
এসব নিয়ে ঘাটতে মেহেরের ভীষণ পছন্দ। তাই সে যাচাই করতে-ই পিছু নিচ্ছে। সামিরা এবং আশিফ ছাদে আসলো। কিছুটা বৃষ্টি বৃষ্টি ভাব। এজন্যে সেরকম তেজী রোদ নেই। পরিবেশ শীতল। শীতল বাতাস বইছে চারপাশে। মেহের দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। ওরা কী বলবে তা শোনার জন্য। হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগেই লাবিবা ওয়াহিদ পেজ হ্যাক। আসল পেজ লাবিবা ওয়াহিদ – labiba wahid. সামিরা আশিফকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। মেহের হতবাক, বিমূঢ়।
নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। আশিফও হাসতে হাসতে সামিরাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–“এই বোকা? কাঁদছো কেন?”
–“তুমি খুব পচা। এভাবে কেন ভয় দেখালে? আমি ভেবেছি কে না কে আসবে? ভয়ে আমার কলিজার পানি শুকিয়ে গেছিলো!”
আশিফ হো হো করে হেসে দিয়ে বললো,
–“কলিজার পানি শুকালে এখন চোখভর্তি এত পানি কোথা থেকে এলো? সাজগোছ দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো আমার ম্যাডাম হাত-পা ছড়িয়ে কেঁদেছে৷ এই পাগলি? কারো এত সাহস আছে তোমাকে দেখতে আসার?”
বলতে বলতে আশিফ নিজের থেকে সামিরাকে ছাড়িয়ে স্ব-যত্নে চোখের অশ্রু মুছে দিলো। খুব আদুরে গলায় বললো,
–“সব ঠিকাছে। এত কাঁদতে হবে না বুঝছো?”
সামিরা ক্ষীণ নাক টেনে ইতিবাচক মাথা নাড়ালো। দরজার সামনে দাঁড়ানো মেহের এতক্ষণে সব সমীকরণ মেলাতে পারলো। এর মানে সামিরার সাথে এতদিন আশিফের প্রেম চলছিলো? আর মেহের কী না আকাশ-পাতাল ভেবে অস্থির। হঠাৎ মেহেরের হাতে হেঁচকা টান লাগলো।
মেহের ভীষণ চমকে গেলো। পেছনে ফিরতেই দেখলো সারিম ভ্রু কুচকে চেয়ে আছে। মেহের তাকাতেই সারিম গম্ভীর কন্ঠে বললো,
–“এখানে কী করছিস?”
মেহের আমতা আমতা করে বললো, “আপনি?”
–“হুম আমি। আমার প্রশ্নের উত্তর দে।”
মেহের কী বলবে বুঝলো না। আটকে গলায় আবার বললো,
–“আ..আসলে..”
–“আমি দেখছিলাম সব ঠিকাছে কী না।”
বলেই আড়চোখে চাইলো সারিমের দিকে। সারিম বললো,
–“ওদের প্রাইভেসি দে। আর আমার সাথে আয়।”
বলেই সারিম মেহেরকে টেনে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগলো। মেহের হঠাৎ থেমে চোখ-মুখ খিঁচে বললো,
–“এর মানে আপনি জানতেন সামিরা আপু এবং আশিফ ভাইয়ার মধ্যে সম্পর্ক ছিলো?”
মেহেরের এরকম প্রশ্নে পিছে ফিরে তাকায় সারিম। শান্ত নয়নে মেহেরের মুখভঙ্গি লক্ষ্য করে স্বাভাবিক স্বরেই বললো,
–“হু!”
মেহের অবাক হয়ে তাকালো সারিমের দিকে। বললো,
–“আপনি অনুমতি দিলেন?”
–“না দেওয়ার কারণ?”
মেহের উত্তর দিতে পারলো না। তবে কিছুতেই বুঝতে পারছে না সারিম এভাবে বোনের সম্পর্ককে বিয়ের রূপ দিবে। মেহেরকে নীরব দেখে সারিম আবার বললো,
–“আমি চাই না কেউ ভালোবাসা না পেয়ে যন্ত্রণায় প্রতিনিয়ত জর্জরিত হোক।”
মেহের অবাক নজরে চাইলো সারিমের দিকে। সারিম আলতো করে টোকা দিলো মেহেরের কপালে। অতঃপর নিচে চলে গেলো। আর মেহের সেখানেই মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রয়।
————-
রোজা জানালা খুলে শান্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। দমকা হাওয়া তাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। যা রোজা খুব আনন্দের সাথে উপভোগ করতে ব্যস্ত। হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেলে রোজা পিছে ফিরে তাকায়। সাইয়ান দাঁড়িয়ে। রোজা আলতো হাসলো সাইয়ানকে দেখে। সাইয়ানও হাস্যার উত্তরে হাসি দিয়ে বললো,
–“ঘুমাবে না? কাল তো রিসিপশন!”
রোজা জানালাটা বন্ধ করে বললো,
–“হ্যাঁ। আসুন।”
বলেই দু’জন বিছানার দিকে এগোতে লাগলো। রোজা আনমনে হঠাৎ বলে ওঠে,
–“শুনুন!”
সাইয়ান ঘাড় বাঁকিয়ে রোজার দিকে চেয়ে বললো,
–“হু, বলো।”
রোজা বিছানায় বসে পরে বললো,
–“আমি আমার বীভৎস অতীতের সবকিছু আপনাকে খুলে বলতে চাই। আপনি আমার জীবন সঙ্গী। আপনার সবকিছু জানা প্রয়োজন!”
সাইয়ান রোজার পাশে বসে বললো,
–“কিন্তু ওসবে তো তোমার অস্বস্তি হয় রোজা। আমি চাই না তুমি আবার অস্থির হয়ে ওঠো!”
শেষোক্ত বাক্য শুনে রোজার মস্তিষ্ক জুড়ে শান্তি বিরাজ করলো। স্মিত হেসে রোজা বললো,
–“আপনাকে এবং আপনার ফুলের মতো সুন্দর পরিবারকে পেয়ে এখন ওসব ঠুনকো মনে হয় সাইয়ান। এজন্যে আমি বলাটাকে ঠিক মনে করছি।”
সাইয়ান শান্ত হলো। শীতল নজরে চেয়ে রইলো রোজার দিকে। রোজার তার পরিবারের প্রতি প্রশংসা শুনে সত্যি-ই কেমন শান্তি অনুভব করছে। লাবিবা ওয়াহিদ পেজ হ্যাক। নতুন এবং আসল পেজ লাবিবা ওয়াহিদ – labiba wahid. আমার পেজের আসল ফলোয়ার ৪ হাজারের কাছাকাছি। মেয়েটা তাহলে সকলকে আপন করে নিতে সক্ষম হয়েছে। ভাবতেই সাইয়ান মুচকি হাসলো। রোজা ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলো,
–“তখন আমি কিশোরী ছিলাম। সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া মেয়ে ছিলাম আমি। বাবা হুট করে এক রাতে কোনো বিধবা মহিলাকে বিয়ে করে হাজির হলো। সাথে ছিলো সেই মহিলার আগের ঘরের সতেরো বছরের ছেলে। মা এসব দেখে বাবার সাথে থাকার মতো সাহস করলেন না। আমার এবং আমার ছোটো ভাই রাতুলের পুরো ভবিষ্যৎ পরে ছিলো। এমন পরিস্থিতিতে ছেলে-মেয়ে বেড়ে উঠুক তা তিনি কিছুতেই চাইলেন না। তার আগে বলে রাখি, বাবা এবং মায়ের সম্পর্ক খুব খারাপ যাচ্ছিলো। সবসময় ঝগড়াঝাটি, ঝামেলা লেগেই থাকতো। হয়তো মা ধরতে পেরেছিলেন আমার বাবার কোথাও পরকিয়া চলছে।
বাবা মায়ের ডিভোর্স হলো। মা আমাকে সহ আমার ছোটো ভাইকে নিয়ে যেতে নিলেন ওমনি বাঁধা হয়ে দাঁড়ালেন আমার বাবা। তিনি বললেন আমাকে বাবার কাছেই রাখবে। মা রাজি হলো না। বাবা মায়ের মধ্যে আবারও ঝগড়া শুরু হলো আমাকে নিয়ে। আমি তখনো এতকিছু বুঝতাম না। লাবিবা ওয়াহিদ পেজ হ্যাক। আসল পেজ লাবিবা ওয়াহিদ – labiba wahid. বাবা আমাকে ইমোশনাল কথা বলে বাবার সাথে থাকতে রাজি করিয়ে নিলো। মা আমাকে এখানে কিছুতেই রাখবে না। কতো পা ধরে বললো বাবাকে কিন্তু বাবা শুনলো না। আমাকে মায়ের থেকে একেবারে বিচ্ছেদ করে দিলো।
বাবার কাছে আমি যতটা খুশিতে থাকবো ভেবেছি ততটাও সুখ পাইনি। আমাকে রান্নাঘরে ঘুমাতে হতো। আলাদা ঘর দিতো না। আমার রুমটা বাবার সেই সৎ ছেলেকে দিয়ে দেওয়া হলো, আর আমার ঠাই হলো রান্নাঘরে। বাবাকে কিছু বলতে পারতাম না, খুব ভয় লাগতো। কিন্তু এসব সহ্যও করা যেত না। সৎ মা জোর করিয়ে কাজ করাতো। কাজ ঠিকমতো না হলে একই কাজ বারবার করাতো। এসব সহ্য করতে না পেরে মা, মা বলে কাঁদতাম। কিন্তু মায়ের কথা মুখে আনলেই কষিয়ে চড় মারতেন সৎ মা এবং ভীষণ বকাঝকা করতেন। না খাইয়েও রেখেছেন তিনি।
এভাবেই যাচ্ছিলো বেশ কয়েকটা মাস। এর মাঝে হঠাৎ রুবেল ঘনঘন আমার আশেপাশে ঘুরঘুর করতো। আমাকে ডাকতো। আমি রুবেলের সামনে দাঁড়ালে আমাকে টেনে তার পাশে বসিয়ে দিতো। অতঃপর স্পর্শকাতর জায়গায় বাজে স্পর্শ করতো। যা আমাকে খুব অস্বস্তির মধ্যে ফেলতো।”
রোজা হুট করে থেমে যায়। চোখ বুজে নিজেকে সামলে নিলো। লম্বা নিঃশ্বাস ছাড়লো। সাইয়ান ব্যস্ত কন্ঠে বললো,
–“তারপর?”
রোজা চোখ মেলে সাইয়ানের দিকে তাকালো। সাইয়ানের চোয়াল শক্ত হয়ে আসছে। তা দেখে মুচকি হাসলো রোজা।
~চলবে, ইন-শা-আল্লাহ্।