#বিচ্ছেদময়_সুখ –[১৩]
মুনিয়া মিরাতুল নিহা
🚫(অন্য কোথাও পোস্ট নিষিদ্ধ)🚫
__________________________
-‘ আরে তুমি কখন আসলে আকাশ? আবার তন্ময়ের রিসেপশনে?’
আকাশ উত্তর দেবার আগেই আমি মুখ খুললাম, কি ভেবেছে কি লোকটা? উনার ভাইয়ের বিয়েতে কি কেউই আসতে পারবে না?
-‘ কেনো আসতে পারে না বুঝি? উনাকে নিশ্চয়ই দাওয়াত দেওয়া হয়েছে বলেই এসেছে নাকি?’
-‘ তো তোকে এতো উত্তর দিতে কে বলেছে? আমি তোকে কিছু বলেছি নাকি এখানে?’
-‘ আমি কখন কথা বলবো না বলবো সেটা কি আপনার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে বলবো নাকি স্ট্রেঞ্জ! ‘
রুহিন কিছু বলতে যাবে এবার আকাশ কথা বললো ওদের দু’জনের মাঝখানে।
-‘ আরে আরে তোমরা ঝগড়া করছো কেনো? আর রুহিন শোনো? আংকেলের সঙ্গে আজকে বাজারে দেখা হয়েছে তখন তিনি বলেছে আজকে তন্ময়ের রিসেপশনে যেনো আসি। আমি তো এসবের কিছুই জানি না। কালকে সবে বাড়িতে ফিরেছি, তাও ফিরতাম শুধু মায়ের জোরাজুরিতে ফিরেছি বিয়ে করতে।’
-‘ মানে আকাশ ভাইয়া আপনি বিয়ে করতে এসেছেন এবার?’
-‘ হুম মীরা, কিন্তু পছন্দসই মেয়ে কোথায়? তা তো পাচ্ছি না, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে পেয়ে গেছি বুঝেছো?’
-‘ হ্যাঁ তা ভালো মেয়ে পেয়ে গেলে বিয়ে তো করতেই হবে। সারাজীবন তো কারো জন্য বসে থাকা যায় না তাই বলুন ‘
-‘ ঠিকই বলেছো মীরা, তবে ভালো মেয়ের কাতারে কিন্তু তুমিই সর্বপ্রথম।’
আকাশের কথা শুনে মীরা লাজুক ভঙ্গিতে হেঁসে দিলো আকাশের দিকে চেয়ে। এদিকে রুহিনের বেশ রাগ ওঠছে তা রুহিনের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে!
-‘ কি ভেবেছে কি? হাতির পাঁচ পা দেখে ফেলেছে? কথা বলতে লাগলাম আমি আর উনারা আলাপ জুরে দিয়েছে!’
রুহিন রে’গে মেগে চলে গেলো সেখান থেকে। রুহিনের যাবার পানে মীরা তাকিয়ে আছে। বুঝতে পারলো না রুহিনের হঠাৎ হলো টা কি?’
-‘ মীরা রুহিন এভাবে চলে গেলো কেনো বলোতো?’
-‘ আরে আকাশ ভাইয়া ছাড়ুন তো ওসব। আপনি এসেছেন আনন্দ করুন, ভালো থাকুন। ‘
মীরা সে জায়গায় থেকে চলে যায় রুহিনকে খোঁজার জন্য, কিন্তু আশেপাশে রুহিনকে দেখতে পেলো না। অবশেষে দূরে চুপটি করে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলো রুহিন। মীরা রুহিনের কাছে গেলো কথা বলতে।
-‘ সমস্যা কি আপনার? এভাবে চলে এলেন যে কথার মাঝখান দিয়ে?’
-‘ আমার সমস্যা তোর চোখে পড়ে? তুই যা তো এখান থেকে। আকাশের সঙ্গে গিয়ে আড্ডা দে। এখানে কেনো এসেছিস খামোখা?’
রুহিনের খাপছাড়া কথাবার্তায় মীরা রে’গে গিয়ে রুহিনের কাছ থেকে চলে গেলো। এভাবেই চলছিলো পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে। রুহিন মীরাকে আড়চোখে দেখে যাচ্ছিলো মীরাও মাঝে মধ্যে রুহিনকে দেখে যাচ্ছিলো।
—————————–
রিসেপশন থেকে ফিরতে ফিরতে প্রায় বিকেল হয়ে যায় মীরাদের। মীরার বাবা মা গাড়ি করে চলে গেছিলো। মীরা এখনো রুহিনদের বাড়িতে রয়ে গেছে লিপির জন্য। লিপিই আ’টকে রেখেছে মীরাকে ওর নিজের রুমে। বলেছে সে কিছু দেখাতে চায় তাই সে জন্য মীরাও বসে রয়েছে লিপির রুমে। কিন্তু লিপি আদৌ মীরাকে কোনো কিছু দেখাবে বলে নয় রুহিনের কথায় মীরাকে রুমে বসিয়ে রেখেছে। রুহিন বলেছে লিপিকে যাতে মীরাকে কিছু একটা বলে ওর নিজের রুমে রাখে কিছুক্ষণের জন্য। রুহিনের কিছু কথা আছে মীরার সঙ্গে। লিপিও ভাইয়ের কথানুযায়ী মীরাকে কিছু দিবে বলে বসে রেখেছে। ওদিকে মীরা বসে রয়েছে কিন্তু এতোক্ষণ হয়ে যাচ্ছে লিপি আসছে না দেখে মীরা আগ বাড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে দেখতে যায় কি হয়েছে সেটা দেখার জন্য। মীরা যখনই দরজার কাছে গেছে হুড়মুড়িয়ে রুহিন রুমের ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়!
মীরা হতভম্ব! সে এখন রুহিনকে আশা করেনি। কিন্তু রুহিন কেনো এসেছে এখানে?
-‘ আপনি এভাবে রুমের ভেতর ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন কেনো?’
-‘ মীরা বাড়িটা আমার সুতরাং দরজা কেনো আমি চাইলে যা খুশি করতে পারি বুঝেছিস?’
এবার বেশ ভয় হচ্ছে লোকটার কথা শুনে। এ কি করতে চাইছে কি আমার সঙ্গে? উনাকে বিয়ের দিন ফিরিয়ে দেবার কারনে কোনো প্রতিশোধ তুলতে এসেছে নাকি এখন? কিন্তু আমি যা করেছি একদমই ঠিক করেছি। উনি যে এতোদিন আমাকে কষ্ট দিয়ে এসেছিলো তার বেলা বুঝি কিছু না? এখন নিজেও একটু চড়কির মতন ঘুরুক! বুঝুক কি রকম লাগে!
-‘ হু সে আপনি করতেই পারেন। আমি দরজা, জানলা বন্ধ করুন, দরকার হলে পুরো বাগিটা ভেঙে ফেলুন তাতে আমার কি? আপাততো আমাকে যেতে দিন।’
-‘ তোর জন্যই তো দরজাটা আটকেছি। ‘
-‘ মানে!’
-‘ দেখ মীরা ঠান্ডা মাথায় আমার কথাটা শোন একটু, আমি মানছি আমার ভূল হয়েছে তন্ময়ের সঙ্গে তোকে বিয়েতে জোর করা কিন্তু তার নির্দিষ্টি কারন ও তোকে বলেছি বল? আমার কাছে কোনো উপায় ছিলো না, বিরহের যন্ত্রণায় আমিও পু’ড়ে’ছি কিন্তু প্রকাশ করিনি, তাই বলে যে যাকে ভালোবাসি তাকে অন্যের হয়ে দেখতে কষ্ট লাগেনি আমার এমনটা নয়রে। তখন কোনো উপায় ছিলো না কিন্তু এখন তো আছে এখন তন্ময় বিবাহিতো তুইও আমাকে ভালোবাসিস আর আমিও তোকে ভালোবাসি এবার কি আমাদের নতুন জীবনের সূচনা হতে পারে না মীরা?’
হু এখন উনি বুঝেছেন তাহলে, কিন্তু রুহিন সাহেব আপনি তো এখন একবার এসেছেন আর আমি বারংবার গেছি আপনার কাছে ভালোবাসার অনুরোধ নিয়ে, তখন আপনি যেমন করে আমাকে প্রত্যাখান করেছেন এখন ঠিক সেটারই পুনরাবৃত্তি হবে। একটু নাচুন তারপর সব ঠিক করবো।
কথা গুলা নিজের মনে মনে আওরে নিলো মীরা।
-‘ আমি যখন আপনাকে একবার বলেছি যে আমি বিয়রটা করবো না তো করবো না বুঝেছেন? আমি কোনো পুতুল নই, এভাবে আমিও গেছিলাম আপনার কাছে একবার নয় কতোবার গেছি হিসেব নেই এখন আপনি বুঝুন মজা!’
মীরা আর এক মুহুর্তও অপেক্ষা করলো না, চলে গেলো রুহিনদের বাড়ি থেকে! বেচারা রুহিন খাটে বসে রয়েছে মা’থায় হাত দিয়ে! কি করবে বুঝে ওঠতে পারছে না। এটা তো সেই আগের ঘটনারই পুনরাবৃত্তি পার্থক্য তখন মীরা ছিলো আর আজকে সেই জায়গায় রুহিন দাঁড়িয়ে।
-‘ কিরে ভাইয়া? এটুকুতে হাল ছেড়ে দিলি নাকি? তাহলে বলবো মীরার ধৈর্য্যর কাছে তোর ধৈর্য্য শক্তি কিচ্ছুই না! শোন, মীরা বছরের পর বছর অপেক্ষা করেছে তোর জন্য, তখন কিন্তু জানতো না তুই মীরাকে ভালোবাসিস কিনা, তবুও তোকে ভালোবাসতো মেয়েটা। আমার সঙ্গে সবটা শেয়ার করতো, এবার তুই তন্ময় ভাইয়ার জন্য মীরাকে বড্ড কষ্ট দিয়ে ফেলেছিস,
রুহিন অসহায় হয়ে বোনের দিকে তাকালো,
-‘ এখন কি করবো লিপি?’
-‘ আরে চিন্তা করিস না ভাইয়া, মীরা তোকেই ভালোবাসে আমি জানি, লেগে থাক ওর পিছু আঠার মতন। যাকে ভালোবাসে এতো সহজে তো তাকে ছাড়তে পারবে না বল? অভিমান ঘুচিয়ে ভালোবাসার পরশে কাছে টেনে নে। দেখবি মীরাও তোর কাছে আছে।’
রুহিন হাসলো বোনের কথা শুনে, ভুল কিছু বলেনি এভাবেই লেগে থাকতে হবে। কিন্তু পরক্ষণেই লিপির কান ধরে টা’ন দিলো!
-‘ এখনই এতো টান তোমাকে কে বুঝিয়েছে বলোতো? এতো পাকা পাকা কথা না? ‘
-‘ আরে ভাইয়া ভূলে যেও না, তোমার হবু বউয়ের বেস্টু আমি তাই কিছু তো ব্যাপক থাকবেই না হু হু।’
লিপি চলে গেলো রুম থেকে। রুহিন আনমনে হাসছে। সময় যতোই লাগুক সে মীরাকে নিজের করে নিবেই নিবে! মীরাকে দেওয়া যতো আ’ঘা’ত সে তার ভালোবাসা দিয়ে ভূলিয়ে দিবে।
—————————-
সকাল সকাল তাড়াহুড়ো করে উঠেছি ঘুম থেকে। কলেজে যেতে হবে এই ক’দিন অনেক পড়া মিস গেছে বিয়ের চক্করে। আজকে দ্রুত কলেজে যেতে হবে। সেই কখন থেকে লিপিটার জন্য দাঁড়িয়ে আছি অথচ ওর আসার নামই নেই! এদিকে দেরিও হয়ে যাচ্ছে। একটা গাড়িও পাচ্ছি না খালি। হাতে থাকা ঘড়িতে বারংবার সময় দেখছি আর লিপির জন্য দাঁড়িয়ে আছি ঠিক সেই মুহুর্তেই একটা বাইক এসে থামলো, প্রথমে চিনতে পারিনি হেলমেটেন কারনে। কিন্তু হেলমেট খোলার পরেই লোকটিকে চিনতে আর অসুবিধা হলো না।
-‘ আপনি এখন? এই খানে কি করে?’
#চলবে
[