বিচ্ছেদময় সুখ পর্ব -১৪

#বিচ্ছেদময়_সুখ — [১৪]
মুনিয়া মিরাতুল নিহা
🚫(অন্য কোথাও পোস্ট নিষিদ্ধ)🚫
_____________________

-‘ আকাশ ভাইয়া আপনি এই সময় এখানে কি করছেন?’

-‘ মীরা ওই সামনেই যাচ্ছিলাম, দূর থেকে লক্ষ্য করলাম তুমি বারবার হাতের ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছো আবার পিছেনও তাকাচ্ছো তোমার বোধহয় দেরি হয়ে যাচ্ছে সে জন্যই আমি বাইকটা থামালাম।’

-‘ হ্যাঁ তা ঠিকই ধরেছেন, কলেজে যাবো লিপির কোনো পাত্তা নেই এখনো অথচ লেট হয়ে যাচ্ছে।’

-‘ তো চলো আমি তোমাকে নামিয়ে দিই? ওদিকেই তো যাচ্ছি।’

-‘ কিন্তু আপনার তো দেরি হয়ে যাবে না?’

-‘ আরে কিচ্ছু দেরি হবে না, আমি তো বলছি আসি ওদিকেই যাবো তুমি ওঠোতো বাইকে তোমাকে পৌঁছে দিচ্ছি।’

মীরা আকাশের কথানুযায়ী বাইকে ওঠে বসলো। সত্যিই তো আজকে বোধহয় আর লিপি আসবে না এতোক্ষণ তো দেখলো এবার না পেরর বাইকে ওঠলো। ওদিকে লিপি রুহিনকে পাঠিয়েছে মীরাকে একটা নোট’স দেবার জন্য, হঠাৎ করেই লিপির শরীর খারাপ হয়ে যায় যার দরুন লিপি আসতে পারেনি, মীরা কলেজে ফোন নেয় না কখনো তাই লিপি রুহিনকে পাঠিয়েছে মীরার কাছে কিন্তু রুহিন আসতে আসতে মীরা ততক্ষনে বাইকে ওঠে চলে গেছে। দূর থেকে আকাশের বাইকে করেই যে যাচ্ছে মীরা এটা বুঝতে রুহিনের কোনো বুঝতে বাকি রইলো না।
—————————-
কলেজ শেষ করে বাড়ির দিকে হাঁটছি। আজকে লিপি এলো না অথচ কথাটি একটকবার ওতো আমাকে কিছু বললো না, এরকম টা তো সরাসরি কখনোই করে না লিপি যেদিন আসবে না তো আসবেই না বলে দেয়। আজকে এরকম করার কারন? এক্ষুনি ওদের বাড়িতে গিয়ে দেখতে হবে। মনটা শান্ত হবে না তাহলে।

-‘ একি আকাশ ভাইয়া আপনি এখানে আবারো?’

-‘ আরে মীরা আর বলো না আংকেল মানে লিপির আব্বু ডাক পাঠিয়েছেন আমাকে উনাদের বাড়িতে যেতে হবে কোনো বিশেষ কারনে সেজন্যই যাচ্ছি বুঝলে?’

-‘ আপনিও লিপিদের বাড়িতেই যাচ্ছেন? আমি ও তো ওখানেই যাচ্ছি।’

-‘ তাহলে তো ভালোই হলো চলো এক সঙ্গে যাওয়া যাক?’

-‘ হুম চলুন।’

মীরা আকাশের বাইকের পিছনে বসে চলে গেলো লিপিদের বাড়িতে। বাড়িতে ঢুকেই লিপির মা বললো লিপি ঘুমাচ্ছে একটু ওয়েট করতে আর লিপির আব্বু বাহিরে গিয়েছেন আকাশ আর মীরা দু’জনেই যেনো একটু অপেক্ষা করে তাদের জন্য। সে মোকাবেকই দু’জন বসে আছে।

-‘ আচ্ছা মীরা তোমার কি লিপিকে ছাড়া একটা মুহুর্তও চলে না না-কি বলতো?’

-‘ তা ঠিকই বলেছেন লিপিতো আমার ছায়ার মতন ছায়াকে বাদ দিয়ে চলা যায় নাকি কখনো?’

-‘ তুমি সেই আগের মতনই আছো বিন্দুপরিমানও বদলাও নি। তা বিয়ে হয়ে গেলে কি করবে শুনি?’

আরে আকাশ ভাইয়া আপনি তো জানেন ই না আমি তো লিপিদের বাড়িতে একসঙ্গে থাকার সেই ব্যাবস্থা কবেই করে ফেলেছি এখন শুধু সেটা পূর্ন হবার পালা আই মিন রুহিনের সঙ্গে বিয়েটা।

মনে মনে কথাগুলো আওড়ে নিলাম। আকাশ ভাইয়া বড্ড রসিক মানুষ উনার সঙ্গে থাকলেই কেমন হাসি পায়।

নিচে মীরার গলার আওয়াজ শুনে রুহিন রুম থেকে বেরিয়ে আসে। এসে দেখে তার ধারনাই ঠিক মীরা এসেছে বাড়িতে কিন্তু মীরার সঙ্গে আকাশকে দেখেই রুহিনের খুশি এক নিমিষেই রা’গে পরিনত হলো। কিচ্ছু বললো না চুপচাপ ভাবে দাঁড়িয়ে রইলো উপর থেকে সবটা দেখে যাচ্ছে। মীরা আকাশের সঙ্গে থাকলে কেমন হাসি খুশি থাকে।

মীরা কথা বলতো বলতে এক পর্যায় লিপির রুমে যায় লিপির ঘুম ভাঙাতে। বান্ধবীর সঙ্গে একটু আড্ডা দিয়ে বাসায় ফেরার জন্য নিচে নামতেই আকাশ ডাক দিলো।

-‘ মীরা বাড়িতেই তো যাবে বলো? চলো পৌঁছে দিই একসঙ্গেই তো এসেছি।’

মীরা কিছু বলবে ওমনি রুহিন এসে মাঝখান দিয়ে ফোড়ন কাটলো।

-‘ জিগেস করতে হয় নাকি এ কথা? মীরা তো আপনার সঙ্গে যাবার জন্য এক পায়েই রাজি আছে বুঝলেনন তো? ওর তো আবার সকাল দুপুর বাইকে ওঠতে বেশ লাগে।’

-‘ আপনি এভাবে কথা বলছো কেনো রুহিন? সমস্যা কি?’

-‘ ওপস! তোর খারাপ লেগেছে? তাই না মীরা? স্যরি স্যরি, আর দিত্বীয় বার হবে না। আমার তো বোঝা উচিত ছিলো আকাশকে কিছু বললে সেটা তোর গায়েও আচ এসে লাগে!’

বেশ বুঝতে পারছি আমাকে আকাশের সঙ্গে দেখে উনার রা’গ হচ্ছে! হলে হউক এরকম অনেক কষ্ট আমিও পেয়েছি এবার আপনিও একটু পান তো রুহিন সাহেব তারপর দেখুন কি রকম লাগে!

-‘ হ্যাঁ লাগেই তো! চলুন তো? আপনার তো আংকেলের সঙ্গে কথা বলা শেষ তাই না? এবার চলুন দেখি?’

আকাশও চলে গেলো সেখান থেকে মীরাকে সঙ্গে নিয়ে!রুহিন শুধু দেখেই যাচ্ছে সবটা। তারও খুব কষ্ট হচ্ছে নিজেন প্রিয়তমাকে এভাবে অন্য কারো সঙ্গে দেখে কিন্তু এ তো তারই ভূলের মাশুল!
তাহলে মীরা এখন অন্য কারোর ভেতর সুখ খুঁজছে! হাহ্ নিজের করা ভূলের মাশুলটা যে এতটাই জঘন্য ভাবে দিতে হবে এটা কোনো দিনও কল্পনাও করিনি, মীরা আকাশের সঙ্গে থাকলে বেশ হাসি খুশি থাকে অথচ আমার কাছে আসলেই তার গোমরা মুখ শুরু হয়ে যায়। মীরাকে তো আমি সুখী দেখতে চাই আর ও যেভাবে সুখী থাকুক সেটাই হোক।’

——————————-
তন্ময় একটা চাকরি খুঁজে পেয়েছে। এতোদিন নিজেদের ব্যাবসাই দেখতো কিন্তু তন্ময়ের ইচ্ছে ছিলো নিজে কিছু একটা করার সেই মোতাবেকই চাকরিটা একসেপ্ট করেছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে চাকরির জন্য তন্ময়কে অন্য কোথাও শিফট হতে হবে পরিজনকে ছেড়ে। তন্ময় বাহিরে যাবার সিদ্ধান্ত নিলো সে একা একাই যাবে।

-‘ শোনো তরু? আমি চাকরি পেয়েছি এবং সেই চাকরির জন্য আমাকে অন্য জায়গায় থাকতে হবে তাই আমি সেখানে শিফট করবো তুমি বাড়িতেই থেকো?’

তন্ময়ের কথা শুনে তরুর মনটা নিমিষেই বিষাদ হয়ে গেলো! সবে তো বিয়ে হয়েছে এখুনি কি করে তন্ময় তরুর থেকে দূরে যাবার কথা ভাবছে? তরুর বেশ অভিমান হলো তন্ময়ের উপর।

-‘ একদমই না আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না, আমি যাবো আপনার সঙ্গে। আপনি একা একা কি করবেন কে জানে? রান্না করা, নিজের খেয়াল রাখা এসব করতে পারবেন কি? সারাদিন অফিস করে এসে ক্লান্ত শরীরে এসব করা যায় নাকি? আপনার খেয়ল রাখার জন্যতো আমিই আছি বলুন? আমি থাকতে আপনাকে এতোটা কষ্ট করতে হবে না বুঝেছেন?’

তন্ময় অবাকের সুরে শুনতে লাগলো তরুর কথাগুলো। মেয়েটা তাকে বড্ড ভালোবাসে হয়তো সেজন্যই নিজের কথা না ভেবে তন্ময়ের সঙ্গে যেতে রাজি হয়ে গেলো। একবারো ভাবলো না তন্ময় চলে গেলে সে একা কি করে থাকবে? তন্ময় যে চেয়েও তরুকে তার প্রাপ্য সম্মান দিতে পারছে না এখনো যে তার মনের এক কোনে মীরার নাম রয়েছে। তবে সেই অচেনা জায়গায় না মীরা থাকবে আর না তন্ময়ের কোনো জড়তা থাকবে।

বাড়িতে এসে সর্বপ্রথম আমার বিছানায় চোখ যায়, বাসায় ঢোকার সময়ই মা বলেছিলো কেউ আমার জন্য কুরিয়ার করে গিফট পার্সেল করেছে। আমি আগ্রহের সহিত সেই প্যাকেটের দিকে তাকিয়ে আছি কিন্তু আপাততো ফ্রেশ হয়ে ভেতরে এসে আবারো প্যাকেটটার দিকে চোখ বোলালাম। বেশ যত্ন সহকার প্যাকেট করেছে ভেতরে যে কি জিনিশ আছে কে জানে? আমি আস্তে আস্তে পেপার টা খুলে ভেতরের জিনিশটা দেখার জন্য উৎসাহিতো হয়ে আছি। অবশেষে প্যাকেটটা খুললাম সেখানে একটা পুতুল আছে বউ সাজে! বুঝতে পারলাম না কেউ কুরিয়ারে এরকম গিফট করে? কিন্তু পুতুল টা যেনো আমার বড্ড চেনা চেনা লাগছে মনে হচ্ছে এটা আরো আগে আমি দেখেছিলাম। খুব করে চেনা লাগছে পুতুলটাকে কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছি না এই পুতুলটা ঠিক কোথায় দেখেছি? এর সঙ্গে একটা চিরকুটও দেখতে পেলাম,

ঠিক এইভাবেই একদিন পুতুলটার মতন টুকটুকে বউ সাজিয়ে আমার জন্য নিয়ে আসবো তোমাকে, শুধু তুমি অপেক্ষায় থেকো। তোমার বাচ্চা মার্কা ইচ্ছে ও পূরন হবে😊

এসব পুতুল চিরকুট এসবের কোনো আগা মা’থাই বুঝছি না, বাধ্য হয়ে মা’কে ডাক দিলাম এই পুতুলের রহস্য বের করতে।

#চলবর?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here