বিন্দু থেকে বৃত্ত পর্ব – ৫১ ও শেষ

#বিন্দু_থেকে_বৃত্ত
#পার্ট_৫১
জাওয়াদ জামী

তিনদিন পর তাহমিদ সানাউল রাশেদিনের সাথে কথা বলে।
তাহমিদ বড় চাচ্চুকে সব খুলে বলে।
সব শুনে সানাউল রাশেদিনের চোখ কপালে উঠে।

” তোমরা ভেতরে ভেতরে এত কিছু করেছ! ছেলেটাকে অত্যাচার পর্যন্ত করেছ! এত কিছু করেছ, তোমাদের একটুও ভয় হয়নি? আবার বলছ, ঘটনা অ্যাকসিডেন্টের মত করে সাজাবে! তুমি কবে থেকে এত সাহসী হলে! ”

” আমি আগে থেকেই সাহসী ছিলাম, শুধু তোমার দেখার চোখ ছিলনা। আমি এসেছি তোমার সাথে আলোচনা করতে কিন্তু তুমি সহযোগিতা না করে বাগড়া দিচ্ছ। এখন আমার মনে হচ্ছে তোমাকে বলেই ভুল করেছি। একয়দিন যেটা গোপন রেখেছিলাম, তুমি এখনই বোধহয় সেটা প্রকাশ করে দিবে। বাই দ্য ওয়ে, তুমি তোমার ফ্রেন্ডকে বলে সবুজকে গ্রে’ফ’তা’র করার ব্যবস্থা করো৷ বড়মার চাচাতো ভাই যিনি এসপি তাকেও বলো। আমি সবুজকে বের করার ব্যবস্থা করছি।”

” ঠিক আছে, ঠিক আছে, আমি ওদের সাথে কথা বলছি। একটা কথা বললে, হাজারটা কথা শুনিয়ে দেয়। কপাল করে এমন একটা ছেলে পেয়েছিল আমার ভাই। ”

” সেভাবে দেখতে গেলে তোমার কপালও ভালো। এমন একটা জামাই পেয়েছ। তোমার চৌদ্দ গোষ্ঠিতে এমন জামাই এখন অব্দি হয়নি। ”

” আমার চৌদ্দ গোষ্ঠির মধ্যে বোধকরি তুমিও আছ।আমাকে সম্মান না করলেও, নিজের বংশের মানুষকে সম্মান করতে শিখ। ”

” কেন তুমি কি আমার বংশের বাইরের মানুষ? যে তোমাকে সম্মান করা যাবেনা! হায়রে মানুষ, নিজেই বলছে তাকে সম্মান না করতে। তোমার বুদ্ধি দেখছি তোমার ভুঁড়িতে সীমাবদ্ধ। ”

” তুমি এখান থেকে যাও। আজকের পর থেকে আমার সাথে কথা বলবেনা। তুমি আমাকে অপমান করতে দুইবার ভাবোনা। ” সানাউল রাশেদিন রেগে গেছে।

” বুঝেছি, কেন তোমার সাথে কথা বলতে নিষেধ করছ। বড়মার ভাইয়ের মেয়েকে বিয়ে করেছি, তাই জামাই হিসেবে তোমার কাছ থেকে অনেক কিছুই পাই। সেসব না দেয়ার জন্যই কথা না বলার বাহানা দিচ্ছ! তুমি কৃপণ জানতাম, কিন্তু এতটা ছোট মনের আজ প্রথম জানলাম৷ ”

” তুমি কি আমার সামনে থেকে যাবে? নাকি আমিই চলে যাব? বাপের জন্মে এমন বেয়াদব ছেলে দেখিনি। ” সানাউল রাশেদিন গজগজ করতে করতে প্রস্থান করে।

তাহমিদ বড় চাচ্চুকে রাগতে দেখে মিটিমিটি হাসছে। লোকটাকে রা’গা’তে মন্দ লাগেনা।

মাঝরাতে শহরের রাস্তায় একটা মাইক্রোর সাথে অ্যাকসিডেন্টে আহত অবস্থায় পাওয়া যায়। মাইক্রো ড্রাইভার ওকে আহত অবস্থায় রেখে পালিয়েছে। দুইজন পথচারী ওকে হসপিটালে ভর্তি করে। পরদিন সকালে ফুলতলার দুইজন ব্যক্তি হসপিটালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে সবুজকে আবিষ্কার করে। এবং তারা তৎক্ষনাৎ থানায় খবর দেয়। ঘন্টাখানেকের মধ্যে পুলিশ এসে সবুজকে গ্রে’ফ’তা’র করে।
কেউ জানলনা এসব ঘটনা তাহমিদের সাজানো। চিকিৎসা নিতে আসা ব্যক্তিরাও তাহমিদের নির্দেশেই হসপিটালে এসেছে। আবার দুইজন পথচারীও তাহমিদেরই লোক।

সানাউল রাশেদিন তার বন্ধুর সাথে কথা বলে, সবুজের নামে দৃষ্টির আত্নহত্যায় প্ররোচনের জন্য, নারী নির্যাতনের জন্য, কায়েসের টাকা ও সম্পত্তি আত্মসাৎ সহ কয়েকটা মামলা কায়েসকে দিয়ে করালেন।
আফরোজা নাজনীন তার চাচাতো ভাইকে বলে সবুজ ও তার বাবাকে আটকে রাখার ওদের কঠিন শাস্তি হওয়ার সকল ব্যবস্থা করেন।
সেই সাথে সবুজের স্বীকারোক্তি যেটা ওকে আটকে রাখা অবস্থায় তাহমিদরা নিয়েছিল, সেটা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
ওরা স্বীকারোক্তির বিষয়টি এমনভাবে সাজিয়েছিল, যেন সবুজ ওর বন্ধুর সাথে কথা বলছে এমন সময় কেউ রেকর্ড করেছে। অবশ্য এটা করতে ওদের কম ঝক্কি পোহাতে হয়নি।
সবুজ আচ্ছামত ধো’লা’ই করে ওকে রাকিবের সাথে কথা বলতে রাজি করাতে হয়েছে।
ধো’লা’ই খেয়ে সবুজ তাহমিদের কথামত রাকিবের সাথে ওর সকল কুকর্মের গল্প করে।
সবুজের আজীবন জেলে পঁচে ম’রা’র মত তথ্য সংগ্রহ করেই তবে তাহমিদ ওকে পুলিশে দেয়।
সবুজকে গ্রে’ফ’তা’র করার তিনদিন পর চেয়ারম্যানকে সিলেটের একটা হোটেল থেকে আটক করে পুলিশ।

শিউলি আক্তার আজকাল কাউকেই চিনতে পারছেনা। সে কুহুকে দৃষ্টি ভেবে বারবার বুকে জরিয়ে নিচ্ছে। মাঝেমধ্যে আবোলতাবোল বকছে। আফরোজা নাজনীন নিজে শিউলিকে নিয়ে ডক্টরের কাছে গিয়েছে। কিন্তু ডক্টর কোন আশার বানী শোনাতে ব্যর্থ হয়েছে।

দৃষ্টির মৃত্যুর একমাস পেরিয়েছে। শিউলির অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি৷ এই একমাস কুহু বাবার বাড়িতেই ছিল। তাহমিদ দুই-এক দিন পরপর এসে দেখা করে গেছে৷
আফরোজা নাজনীন, নাজমা পারভিন, শাহনাজ সুলতানা পালাক্রমে থেকেছেন ভাইয়ের কাছে।

একমাস পর তাহমিদ আর কুহুকে ফুলতলা থাকতে দিতে চাচ্ছেনা। এখানে এসে কুহুর পড়াশোনা হচ্ছেনা এই অযুহাত দিচ্ছে। কিন্তু কুহু বেশ বুঝতে পারছে তাহমিদ ওকে ছাড়া আর থাকতে পারছেনা। তাই এমন করছে।

তাহমিদ ফুলতলা আসলে কুহু কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ওর সাথে আলোচনা করে। এরপর ওরা সিদ্ধান্ত নেয় ফুপুদের সাথে এবং তাহমিদের বাবা-মা’র সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার।

পাশের বাড়ির সেই বৃদ্ধা দাদীকে বাবার বাড়িতে রেখে কুহু আর তাহমিদ কয়েকদিনের জন্য ঢাকায় আসে।

ছেলের বউ বাসায় এসেছে জন্য তাহমিনা আক্তার অনেকরকম রান্না করেছেন৷ রাতে খাওয়ার পর কুহু শ্বশুরের কাছে যেয়ে বসে।

” বাবা, আপনার কাছে একটা অনুরোধ আছে। যদি অনুমতি দেন, তবে বলব। ”

” মা তার ছেলের সাথে কথা বলবে, এতে অনুমতির কোন প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করিনা। তোমার যা বলার নির্ভয়ে বল। ” শফিউল রাশেদিনের খোলামেলা জবাব।

” বাবা, আমার বাবার বাড়ির বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সব কিছুই আপনারা জানেন। আমি বাবার কাছে পাশের বাড়ির একজন বৃদ্ধা দাদীকে রেখে এসেছি। ছোটমার অবস্থা ভালো নয়। তার এখন সংসার করার মত অবস্থা নেই। সে এখন বলতে গেলে উ’ন্মা’দ। এই অবস্থায় তাদের গ্রামে রাখার সাহস আমি পাচ্ছিনা। তাই আমি চাচ্ছিলাম তাদের ঢাকা নিয়ে আসতে। আমাদের বাসার আশেপাশে কোন বাসা নিয়ে তাদের রাখতে। এখানেই শিহাবকে ভর্তি করে দিব। ছোটমার চিকিৎসাও হবে। সবচেয়ে বড় কথা আমি মানসিক ভাবে স্বস্তিতে থাকতে পারব। ”

” তোর বাবা-মা’কে এখানে নিয়ে আসবি ভালো কথা। কিন্তু তাদের অন্য কোথাও রাখতে হবে কেন! আমাদের বাসায় তাদের থাকার মত যথেষ্ট জায়গা আছে। তাছাড়া আমরাও তাদের দেখাশোনা করতে পারব। ” কুহুর কথা শেষ হতেই তাহমিনা আক্তার বললেন।

” এটা হয়না, মা। আমার কথায় আপনি রাগ করবেননা। আমি জানি আপনারা আমার বাবা-মা’র যথেষ্ট খেয়াল রাখবেন। কিন্তু তবুও আমি চাই তাদের আলাদা বাসায় রাখতে। তাছাড়া মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে কোন বাবা-মা দীর্ঘদিন থাকলে বিষয়টি ভালো দেখায়না। আত্মীয়তা দূর থেকেই সুন্দর। আপনারা তাদের কাছে বেড়াতে যাবেন, তারা এখানে বেড়াতে আসবে, সম্পর্কটা এভাবেই থাকুক, মা। এতে সম্পর্কের সৌন্দর্য বজায় থাকে। সবার আত্মসম্মান ঠিক থাকে। ”

” আমি তোমার সাথে একমত, মা। তুমি চাইলে আমরা তোমার বাবা-মা’র জন্য ফ্ল্যাট দেখব। তারা এখানে আসবে, আমাদের আশেপাশে থাকবে এটা খুবই ভালো কথা। বিপদআপদে আমরা তাদের পাশে থাকতে পারব। তাদের খেয়াল রাখতে পারব। মা, তুমি কি তোমার বাবার সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছ? ” শফিউল রাশেদিনও কুহুর সাথে একমত হলেন।

” না, বাবা। এখনও তাকে কিছু বলিনি। আপনারা সবাই, ফুপুরা রাজি হলেই, তবে তার সাথে কথা বলব। ”

আফরোজা নাজনীন সপ্রশন্ন নয়নে কুহুর দিকে তাকিয়ে আছেন।
তিনি ভাবছেন, প্রতিকূল পরিস্থিতি মেয়েটাকে কতটা বদলে দিয়েছে! অল্প বয়স থেকেই পরিনত মেয়েটা আজকে ভালোমন্দ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শিখেছে। জীবনে চলার পথকে মসৃণ করতে যা করতে হয় সবটাই তার নখদর্পনে চলে এসেছে।

” সোনা মা, আমি শাহনাজ আর নাজমার সাথে কথা বলব। আমার বিশ্বাস তারা তোর এই সিদ্ধান্তে দ্বিমত করবেনা। আমিও চাই কায়েস এখানে এসে থাকুক। তাকে এ অবস্থায় অতদূর থাকতে দিতে আমিও চাচ্ছিনা। ওদেরকে এখন চোখেচোখে রাখা ভিষণ প্রয়োজন। আমরা শান্তিতে এখানে বাস করব, আর ওরা সেই কতদূরে গ্রামে একা একা কাটাবে, এটা হতে দেয়া যাবেনা। ”

‘কুঞ্জছায়া’র ড্রয়িংরুমে বসেই সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয় কায়েস ও তার পরিবার ঢাকায় এসে থাকবে। শুধু বাকি রইল ছোট দুই বোনের মতামত। আফরোজা নাজনীন তার দুই বোনকে ফোন করে সবটা জানালে তারা আপত্তি করেনা।তারাও চান তাদের ভাই ভালো থাকুক।
তিন বোন মিলে পরামর্শ করেন সাতদিন পর তারা ফুলতলা যাবেন। ভাইকে রাজি করাবেন ঢাকায় এসে থাকতে।

সাতদিন পর আফরোজা নাজনীন তিন বোনের সাথে ফুলতলা যাচ্ছেন। তাদের সাথে কুহু ও তাহমিদ আছে।

বিকেলে তারা ফুলতলা পৌঁছান। কায়েস একসাথে সবাইকে দেখে হুহু করে কেঁদে উঠে।
এই কয়দিনে শিউলির অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেছে।
রাতের খাবার তিন বোন মিলে রান্না করলেন।
সবাই একসাথে খেয়ে নেয়। শিউলি হাত দিয়ে খেতে পারছেনা বিধায় কুহু তাকে মুখে তুলে খাইয়ে দেয়।
শিউলি কুহুকে যখনই দেখছে, তখনই দৃষ্টি ভেবে বুকে টেনে নিচ্ছে।

খাবার পর সবাই কায়েসকে ডেকে নিয়ে কুহুর দেয়া প্রস্তাব শোনায়। সেইসাথে এ-ও জানায় তারা কিছুতেই কায়েসদের এখানে রেখে যাবেনা।
সকলের জোড়াজুড়িতে কায়েস রাজি হয় ঢাকায় যেয়ে থাকতে।
সিদ্ধান্ত হয় তাদের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ভাড়া দেয়া হবে। একমাস পর তাহমিদ এবং শিহাব এসে ভাড়া নিয়ে যাবে। এবং ভাড়ার টাকা কায়েসের এ্যাকাউন্টে জমা রাখা হবে। জমিজমাও লিজ দেয়া হবে। সেই টাকাগুলোও কায়েসের এ্যাকাউন্টে রাখা হবে। আম, লিচুর বাগানও লিজ দেয়া হবে। আর দুরের কিছু জমি আছে যেখানে সব সময় যাওয়া সম্ভব হয়না, সেগুলো বিক্রি করে দেয়া হবে। এতে তাদের ঢাকায় থাকতে কোন অসুবিধা হবেনা।
আফরোজা নাজনীন জানান, তারা সাতদিন গ্রামে থেকেই সব ব্যবস্থা করে কায়েসদের নিয়েই তবে ঢাকা ফিরবেন।

সবুজকে কয়েক দফা রিমান্ডে নেয়া হয়। প্রতিবারেই সে সব সত্যি উগরিয়ে দেয়। সানাউল রাশেদিনের হস্তক্ষেপে সবুজের জেল থেকে বের হওয়ার সকল পথ বন্ধ হয়ে যায়। সবুজ ও তার বাবা-মা ও জেলে বন্দী জীবন কাটাচ্ছে।

তাহমিনা আক্তার বড় জায়ের কথামত তাদের বাসার পাশেই একটা ফ্ল্যাট দেখেছে। তিন রুমের একটা ফ্ল্যাট। আফরোজা নাজনীন ছোট জায়ের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে সেই ফ্ল্যাটের মালিকের সাথে কথা বলতে বলেন।
তাহমিনা আক্তার মালিকের সাথে কথা বলে সব ঠিকঠাক করলেন৷

নির্দিষ্ট দিনে তারা সকলে ফুলতলা থেকে রওনা দেন। এই সাতদিনে তাহমিদ, কায়েস এবং আনান মিলে সব কাজকর্ম সেড়ে নেয়। আনান ওদের সাথে না গেলেও পরে তাহমিদ ওকে ডেকে নেয়।
যাবার আগে কায়েস তার বাড়ির দেখভালের দ্বায়িত্ব তার চাচাতো ভাইদের কাছে দেয়। তারা শুধু নিজের কাপড়চোপড় আর প্রয়োজনিয় জিনিসপত্র সাথে নেয়। সব ফার্নিচার রেখে যায়। কায়েসের নিজের গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে খারাপ লাগছিল। বারবার পেছন ফিরে তাকায়।

আফরোজা নাজনীন ভাইকে নিয়ে নিজেদের বাসায় উঠেছেন। আগে ফ্ল্যাট গুছিয়ে নিয়ে তারপর কায়েসদের সেখানে পাঠাবেন।

নাজমা পারভিন আনানকে সাথে নিয়ে প্রয়োজনিয় ফার্নিচার কিনেন। এরপর আনানকে দ্বায়িত্ব দেন সেগুলো বাসায় পৌছানোর।
আনান সব ফার্নিচার নিয়ে বাসায় আসে।

সিক্তা আর কুহু মিলে সব গোছগাছ শুরু করে। মাঝেমধ্যে তাহমিনা আক্তার এসে তাদের সাথে হাত লাগান।
একে একে নাজমা পারভিন, শাহনাজ সুলতানাও আসেন। হাসি আনন্দে তারা ভাইয়ের ফ্ল্যাট সাজান।

তবে এতকিছুর মাঝে তাহমিনা আক্তার লক্ষ্য করলেন আনান মাঝেমধ্যে সিক্তার সাথে ফ্লার্ট করছে। সিক্তাও সেসব বেশ উপভোগ করছে। তিনি বুঝে নেন, ওদের দুজনের মধ্যে কিছু একটা চলছে। তিনি আফরোজা নাজনীনের সাথে কথা বলতে মনস্থির করলেন। আনান ছেলেটাকে তার কাছে বেশ লাগে।

সবকিছু গোছানো শেষ হতে ওদের দুইদিন লেগে যায়। দুইদিন পর কায়েস তার স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে নতুন বাসায় উঠে। তাহমিনা আক্তার কায়েসের বাড়ির জন্য একজন মাঝবয়েসী মহিলা ঠিক করেন। সেই মহিলা শিউলির যত্ন নেয়ার পাশাপাশি বাসার সকল কাজ করবে।

কুহু আজ ভিষণ খুশি। শেষ পর্যন্ত বাবাকে তার কাছে এনে রাখতে পেরেছে। প্রতিদিন না হোক সপ্তাহে একদিন অন্তত বাবাকে দেখতে পারবে।
এই বাড়ির মানুষদের ওপর কৃতজ্ঞতায় ওর মন ছেয়ে গেছে। এতটাও ভালো কেউ হতে পারে!
আর তাহমিদ সে একজন আদর্শ স্বামী। সকল মেয়েই তাদের জীবনে এমন একটা পুরুষ চায়, যে স্ত্রীর সকল বিপদেআপদে, সুখ-দুঃখে স্ত্রীর পাশে ঢাল হয়ে থাকে।
কুহুর আজ নিজেকে পরিপূর্ণ সুখী মনে হচ্ছে। এক জীবনে আর কি চাই!

চলবে…#বিন্দু_থেকে_বৃত্ত
#অন্তিম
জাওয়াদ জামী

” আমার বউ এত রাতে ছাদে কি করছে! এদিকে আমি তাকে খুঁজে খুঁজে হয়রান। কিন্তু নিষ্ঠুর বউ হবে একা একা চন্দ্র বিলাসে ব্যস্ত। তাহমিদ তোর কপালে বউয়ের আদর নাই, বুঝলি! তোর বউ সুযোগ পেলেই তোকে একা রেখে ফুরুৎ করে উড়াল দেয়। ” কুহুর ভাবনার মাঝেই তাহমিদ এসে দু হাতে ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে, ঘাড়ের ওপর থুতুনি রেখে বলে।
কুহু তাহমিদের এমন কান্ডে মুখ টিপে হাসে।
মানুষটা ওকে বড্ড ভালোবাসে। যেন কুহুর জন্য এক সমুদ্র ভালোবাসা বুকে নিয়ে দিনাতিপাত করে।

” শুধু উল্টাপাল্টা চিন্তাভাবনা মনে ভেতর খোঁ’চা’য় আপনাকে, তাইনা? আপনি বাসায় ছিলেননা, তাই এই সুযোগে আমি ছাদে এসেছিলাম। আর তাতেই আমি ফুরুৎ করে উড়াল দিলাম! ” গাল ফুলিয়ে বলল কুহু।

” আমার বউয়ের অভিমান হল বুঝি? তাহলে চটপট কয়েকটা চুমু দিয়ে অভিমান ভেঙে দিই, কি বলো? না কি আরও বেশি কিছু চাই? তাতেও আমার আপত্তি নেই। এইসব কাজকর্মে আমি সব সময়ই প্রস্তুত। ” চোখ টিপে বলে তাহমিদ।

” ছিহ্ কিসব অশ্লীল কথাবার্তা! লজ্জাশরমের মাথা খেয়েছেন বুঝি! মুখে কখনো একটাও ভালো কথা নেই। ”

” বউয়ের সাথে কথা বলতে লজ্জা পেতে হয়, এটা আমার জানা ছিলনা। তাহমিদ কি নির্লজ্জরে তুই। একটামাত্র বউয়ের কাছে লজ্জা পাসনা! এই দুঃখে আমার বউ দিনে তিনবার স্ট্রোক করে। ”

” আপনি এবার চুপ করবেন? মুখ খুললেই উল্টাপাল্টা কথা বের হয়। ”

” তোমার সাথে ভদ্র হতে মোটেও ইচ্ছে করেনা। যার সাথে আজীবন পথ চলার শপথ নিয়েছি, তার সাথে একটুআধটু অশ্লীল না হলে জীবনটা পানসে লাগবে, বুঝেছ বউ? আমার সকল সুখ-দুঃখ, কান্নাহাসির সঙ্গী তুমি। আর অশ্লীলও তোমার কাছেই হব। ” কুহুকে দৃঢ়ভাবে আলিঙ্গন করে রেখেছে তাহমিদ।

” হয়েছে, এত কবি কবি ভাব দেখাতে হবেনা। আমার বাকিটা জীবন যে আপনার পাগলামি দেখেই কাটবে, তা আর বোঝার বাকি নেই। ”

” আমার পাগলামিগুলো কি তুমি উপভোগ করনা? তোমার অতলস্পর্শী হৃদয়ে এখনও আমার পাগলামিগুলো ঝড় তুলতে পারেনি? নাকি সব জেনেবুঝেও ধরা দিতে চাওনা? কিন্তু আমার কাছে তো মনে হয়, আমার চুড়ান্ত পর্যায়ের অশ্লীলতাই তোমার কাম্য। ” তাহমিদ চোখ টিপে কুহুকে বলে।
কুহু তাহমিদের কথা শুনে লজ্জায় মাটিতে মিশে যাচ্ছে। কি ঠোঁটকাঁটা স্বভাবের ছেলেরে বাবা!

” অনেক রাত হয়েছে। এবার নিচে চলুন। ”

” হুস, আমি কাছে আসলেই এত পালাই পালই কর কেন। এখানে আরও কিছু সময় থাকব। দুজনে মিলে চন্দ্রবিলাস করব। চাঁদের আলোয় মাখামাখি হবে দুজনের সিক্ত হৃদয়। তোমাতে মত্ত আমি, আরও মত্ত হব তোমাতে। হৃদয়ের দুকূল ছাপিয়ে প্রেমের জোয়ার বইবে। ভাসিয়ে দিবে সকল দুঃখ-ক্লেশ। সৃষ্টি হবে আরেক ধরনী। আমাদের ভালোবাসার ধরনী। যেখানে বিরাজ করব শুধু তুমি আর আমি। ” কুহুর কানে গাঢ় চুমু দেয় তাহমিদ।

” উহু, শুধু আপনি আর আমি নই। আরেকজনও থাকবে, আমাদের ভালোবাসার ধরনীতে। যে আমাদের পরিপূর্ণ করবে। এক আকাশ পূর্ণতা নিয়ে যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে আমাদের আসতে। ” কুহুর ঠোঁটে হাসি।

তাহমিদ প্রশ্নবোধক চোখে তাকিয়ে আছে কুহুর দিকে। এই মেয়ে বলে কি! কে আসবে আবার ওদের মাঝে? কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে ভাবে তাহমিদ। হুট করেই কুহুর হেয়ালি কথার মানে বুঝতে পারে। হুট করেই তাহমিদের প্রচন্ড পিপাসা পায়। আবার খুব কান্নাও পাচ্ছে। কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছে। শুধু ভাবছে কবে আসবে সে ? তাহমিদ এতদিন অপেক্ষা করবে কি করে!

” স..সত্যি বলছ, তুমি? ” কুহু হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়।

” বউ, আমার এমন লাগছে কেন? এতটা খুশি আমি কখনো হইনি। এসএসসি, এইচএসসি তে বিভাগে টপ হয়েছি। মেডিকেলে চান্স পেয়েছি। প্রতিবারই ভালো রেজাল্ট করেছি। তবুও এতটা খুশি কখনোই হইনি। আজ নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে। এ কি সুখের সন্ধান তুমি আমাকে দিলে! ” তাহমিদের চোখে পানি। নিজেকে কোনভাবেই ধরে রাখতে পারছেনা। এক সময় হুহু করে কেঁদে ফেলে।

কুহু অবাক হয়ে ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে থাকা মানুষটাকে দেখছে। যে বাচ্চাদের মত কেঁদেই যাচ্ছে। কুহুও তার পাশে বসে, তার দু হাত নিজের হাতের মুঠোয় নেয়।

” আপনি এভাবে কাঁদলে আমিও কেঁদে দিব। তখন সেও কিন্তু বাবার মত ছিঁচকাঁদুনে হবে। ”

” কি আশ্চর্য! আমি কাঁদলে সে ছিঁচকাঁদুনে হবে কেন! সে তো তোমার মাঝে আছে। তুমি কাঁদলেই তবে সে ছিঁচকাঁদুনে হবে। এই তুমি কিন্তু একদমই কাঁদবানা। তুমি শুধুই হাঁসবে। কোন দুষ্টু কথা বলবানা। আমি বলব তুমি শুধু শুনবা। ” চোখ মুছতে মুছতে বলল তাহমিদ।

” এবার নিচে চলুন। অনেক রাত হয়েছে। আর এভাবে কাঁদবেননা, ডিহাইড্রেশন হয়ে যাবে। ”

” ঠিকাছে চল। কিন্তু আমি তোমাকে কোলে করে নিচে নামতে পারবনা আগেই বলে দিলাম। আমি বাপু গল্পের হিরোদের মত ছয় ফিট, সিক্সপ্যাক ওয়ালা নই। তাই তোমাকে নিজের পায়ে হেঁটেই নিচে যেতে হবে। ”

কুহু তাহমিদের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেছে। সে কখন বলল, কোলে নিতে! নিজেই আদিখ্যেতা দেখাবে আবার নিজেই উল্টাপাল্টা বকবে।

” আপনার কোলে উঠতে আমার বয়েই গেছে। আমি তো জানি আপনি তাল পাতার সেপাই। আপনার শরীরে কি পরিমাণ শক্তি আছে তা-ও জানি। তাই কোলে না উঠে অনুগ্রহ করলাম। ” কুহু ভাব নিয়ে বলে।

হঠাৎই কুহু আবিষ্কার করল ও শূন্যে ভাসছে। ভয়ে জাপ্টে ধরে তাহমিদের টি-শার্ট।

” আমার শক্তি নিয়ে কোন কথা হবেনা। তাল পাতার সেপাই বলে কি দুই মন ওজনের বউকে কোলে নিতে পারবনা? এবার শুধু দেখে যাও তোমার জামাই কি কি পারে। আর তাছাড়া আজকে আমার ভিষণ প্রেম প্রেম পাচ্ছে। তাই আপাতত তোমাকে কোল থেকে নামাতে ইচ্ছে করছেনা। ” কুহুকে কোলে নিয়ে হাঁটা ধরেছে তাহমিদ।

” আমাকে নামান, প্লিজ। আমার ভিষন ভয় করছে। তাছাড়া কেউ দেখলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। যদিও আমার ওজন পঁয়তাল্লিশ কেজি, তবুও আপনার বলা দুই মন ওজন মেনে নিলাম। এবারতো আমাকে নামান। এসব প্রেম টেম কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ রাখেন। ”

” সবাই ঘুমিয়ে গেছে। কারো দেখার চান্স নেই। তুমি চুপ থাক। নতুবা ফেলে দিব। আর আমার প্রেম পাওয়া বন্ধ রাখব কেন! দেখছনা আজ কেমন আকাশে বাতাসে প্রেম প্রেম গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে।
আহা! প্রেমময় ধরনী।
আমার প্রেমবতী রমনী। আমার আর তড় সইছেনা। ”

কুহু আর কথা বাড়ায়না। ও জানে লোকটা কেমন জিদ্দি।

নাস্তার টেবিলে যে যার মত বসেছে। কুহু বসতে না চাইলেও বরাবরের মত ওর শ্বাশুড়ি জোড় করে বসিয়ে দিয়েছে।

আফরোজা নাজনীন সবার প্লেটে পরোটা তুলে দেন। তাহমিদ আঁড়চোখে কুহুর প্লেটের দিকে লক্ষ্য করল। তাছাড়া সুসংবাদটা এখনও বাড়ির কেউই জানেনা। তাদেরকে জানানো প্রয়োজন।

” ও ফুপু শ্বাশুড়ি, তোমার বউমাকে আরেকটা পরোটা বেশি দাও। ওর খুব ক্ষুধা পেয়েছে। ”

তাহমিদের কথা শুনে কুহু বিষম খায়। সে কখন লোকটাকে বলল, ওর খুব ক্ষুধা লেগেছে!

” এই লোকটা সব সময়ই আমাকে লজ্জায় ফেলে। এখানে যে তার বাবা, চাচা আছে তা-ও চুপ থাকবে না! আল্লাহ লোকটাকে একটু সুবুদ্ধি দাও। ” বিরবির করে বলে কুহু।

” বাপ, কুহুকে দুইটা পরোটা দিয়েছি। ও এর বেশি খেতে পারবে! ” আফরোজা নাজনীন জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন।

” বড়মা, দুইটা খাবে তোমার ভাইয়ের মেয়ে। আর এক্সট্রাগুলো খাবে আমার মেয়ে। তোমার কি মনে হচ্ছে, দুইটাতে হবে? ” খেতে খেতে জবাব দেয় তাহমিদ।

এদিকে ডাইনিং রুমে তাহমিদের কথায় যেন বো’মা ফা’ট’ল। কিছুক্ষণ পিনপতন নীরবতা বিরাজ করে। তাহমিদের কথার মর্মার্থ বুঝতে সবাই একটু সময় নেয়।
কয়েক সেকেন্ড পর তাহমিনা আক্তার এগিয়ে এসে নিরবতা ভাঙ্গলেন।

” বাবু, তুই সত্যি বলছিস! আমাদের বাড়িতে পুতুল আসবে! আমাদের ছোট্ট পুতুল! ”

” হুম, মা। তোমাদের খেলার সাথী আসবে। ” তাহমিদের গলা ভেজা।
ও জানে তাওহীদের মেয়েকে একটু কাছে পাবার জন্য তার মা কতটা ছটফট করে।

” সোনা মা, তাহমিদ সত্যি বলছে? আমার বিশ্বাসই হচ্ছেনা। ” ফুপুর কথার জবাবে কুহু মাথা নাড়ায়।

” তাহমিদের বাবা, এবার আমি আমার নাতি/নাতনিকে নিজের হাতে মানুষ করব। ওর সব আমি নিজ করব। ওকে গোসল করাব, ওর কাপড় পাল্টে দিব, ওর সব কাপড়চোপড় ধুয়ে দিব । সব আমি করব। কুহু শুধু ওকে খাওয়াবে। কুহু, আমাকে সব করতে দিবিতো, মা? ”

” হুম মা, তুমিই সব কর। ” কুহু আর কিছু বলতে পারেনা।
ওর ভিষণ কান্না পাচ্ছে। একটা মানুষের স্বপ্ন কিভাবে ছেলের বউয়ের অহংকারের কাছে পরাজিত হয়েছে, তা যেন কুহু স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে।

আয়েশা সালেহা ছেলের বউয়ের কাছে খুশির খবর শুনে নফল নামাজ আদায় করলেন।
আফরোজা নাজনীন ফোন করে বোনদের এবং ভাইকে সুখবর জানালেন।

সানাউল রাশেদিন আর শফিউল রাশেদিন মিলে বাজারে যান। এতবড় সুসংবাদ শোনার পর মিষ্টি না আনলে, সুসংবাদ উদযাপন ঠিকঠাক হবেনা।

কুহু রুমে বসে বারবার শ্বাশুড়ির বলা কথাগুলো ভাবতে থাকে। সে বুঝতে পারে ওর শ্বাশুড়ি ভালো নেই। বড় ছেলের জন্য তিনি প্রতিনিয়ত কষ্ট পাচ্ছেন।

” কুহু মা, এটা খেয়ে নে। ” তাহমিনা আক্তার এক গ্লাস কমলার জুস কুহুর সামনে ধরেন।

” আমি একটু আগেই খেলাম, এখন আর কিছু খেতে পারবনা, মা। তুমি রেখে দাও, আমি একটু পর খাব। ”

” তুই এখনই খাবি। আমি দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তুই খেয়ে নে। এখন থেকে আমরা যেভাবে বলব সেভাবেই চলবি। কোন অযুহাত চলবেনা। ”

কুহু জুসের গ্লাস হাতে নিয়ে শ্বাশুড়ির দিকে তাকায়।

” মা, বড় ভাইয়াকে কেন এখানে আসতে বলছেননা? সে প্রতিদিন আমাকে ফোন দিয়ে সবার কথা জিজ্ঞেস করে। ভাইয়া খুব কষ্ট পাচ্ছে, মা। আপনি ভাইয়াকে ক্ষমা করে দিন। তাকে আপনাদের সুখ-দুঃখের সঙ্গে জড়িয়ে নিন। ”

” তোকে এতসব ভাবতে হবেনা। তুই শুধু নিজের দিকে নজর দিবি। যার শুধু কষ্টই প্রাপ্য, তাকে সেটা পেতেই হবে। যে ছেলে বড়দের সম্মান করতে জানেনা, তাকে আমার দরকার নেই। ” আর কিছু বলে তাহমিনা আক্তার রুম থেকে বেরিয়ে যান।

কুহু দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাকিয়ে থাকে।

পরদিন ভোরের আলো ফুটতেই আফরোজা নাজনীন এবং তাহমিনা আক্তার মিলে রান্নাঘরে ব্যস্ত হয়ে পরেন। সানাউল রাশেদিনরা দুই ভাই মিলে পত্রিকায় চোখ বুলাচ্ছেন। তাদের পাশেই আয়েশা বসে তসবিহ পাঠ করছেন। সিক্তা, কুহু, তাহমিদ এখনও নিচে আসেনি।
এমন সময় কলিং বেল বেজে ওঠে।
তাহমিনা আক্তার দরজা খুলতে যান।
দরজা খুলেই তিনি থমকে যান। সামনে তাওহীদ তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
তাহমিনা আক্তার কিছু বলার আগেই নীরা এসে তার পা ধরে। নীরার এমন কান্ডে তাহমিনা আক্তার হতভম্ব হয়ে গেছেন। যে মেয়ে অহংকারের কারনে শ্বাশুড়ির আশেপাশে ভিড়েনা সেই মেয়ে আজ তার পা চেপে ধরেছে!

” মা, আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি আপনাদের সাথে অনেক অন্যায় করেছি। সবার কাছেই আমি ক্ষমা চাইব। ”

” কি করছ এসব! আমার পা ছাড়ো। তাওহীদ তুই তোর বউকে আমার পা ছাড়তে বল। সকাল সকাল যাত্রা করতে এখানে এসেছিস? তাহলে ভুল করেছিস। তোদের অভিনয়ে আমরা ভুলবনা। ” তাহমিনা আক্তার বিরক্ত হয়ে বলে উঠেন। কিন্তু তার মন বলছে অন্য কথা। কতদিন পরে তার ছেলেকে দেখছেন তিনি। নাতনিও কত বড় হয়েছে।

” মা, আমি কোন অভিনয় করছিনা। আমি সত্যিই ক্ষমা চাইছি। ” নীরা কাঁদছে।

নীরাকে এভাবে তাহমিনার পায়ে পরতে দেখে শফিউল রাশেদিন সেদিকে যেতে চাইলে আয়েশা সালেহা ছেলেকে ইশারায় যেতে না করে দেন। কারন তিনি চান তাদের মা-ছেলের মান-অভিমান তারা নিজেরাই মিটিয়ে ফেলুক।

নীরা শ্বাশুড়ির পা ধরে ঠায় বসে আছে। এদিকে তাহমিনা আক্তারও তার সিদ্ধান্তে অটল।

” আমার পা ধরে সারাদিন বসে থাকলেও কোন লাভ হবেনা। বড় ভাবি তোমাকে ক্ষমা না করা পর্যন্ত, তুমি আমার কাছে ক্ষমা পাবেনা। ”
তাহমিনা কথাগুলো বলা মাত্রই নীরা উঠে যেয়ে আফরোজা নাজনীনের পা জড়িয়ে ধরে।

” বড়মা, আমি তোমার সাথে অনেক দুর্ব্যবহার করেছি, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও৷ বড়মা, তোমরা আমাকে ক্ষমা না করলে, তাওহীদ আমাকে ওর জীবন থেকে দূর করে দিবে। আমার মেয়েটাকেও দিবেনা। আমি ওদের ছাড়া বাঁচতে পারবনা। প্লিজ বড়মা, তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দাও। ” নীরা এবার হাউমাউ করে কেঁদে উঠে।
নীরার কান্না দেখে আফরোজা নাজনীনেরও চোখে পানি আসে।

” পা ছাড়, বউমা। সন্তান কোন ভুল করলে, আমরা যদি তাদের ক্ষমা করতে না পারি, তবে কিসের মা হলাম। তোমার ওপর আমাদের কোন রাগ নেই। এখন ওঠ দেখি। সবার সাথে কথা বল। তূরকে ওর দাদু-দাদিমার কাছে দাও। তাওহীদ তূরকে নিয়ে ভেতরে এস। ”

বড়মার হুকুম পেয়ে তাওহীদ ভেতরে ঢুকে। তূরকে ওর দাদিমার কাছে নিয়ে যেতেই তূর দাদিমার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
এরপর তাওহীদ অবনতমস্তকে বাবা-চাচ্চুর সামনে দাঁড়ায়। কিন্তু তারা চুপচাপ পত্রিকার পাতায় চোখ বুলাতে থাকেন।
তাওহীদ বাবার সামনে বসে। হাত রাখে বাবার পায়ে।

” বাবা, তোমার অযোগ্য ছেলে আজ তোমার নিকট নত হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাকে কি ক্ষমা করা যাবে, বাবা। একবার শেষ সুযোগ দাও। আমি তোমার যোগ্য ছেলে হয়ে দেখাব। আমি সবার সাথে বাঁচতে চাই, বাবা। কোন সম্পত্তি আমি চাইনা। আমি শুধু বড়দের দোয়া আর ভালোবাসা চাই। আমার মেয়েটা তার পরিবারের লোকজনের সাথে হেসেখেলে কাটাতে চায়। তার এই চাওয়াটুকু তোমরা পূরন করো। প্লিজ বাবা, একটাবার আমাকে সুযোগ দাও। ”

ছেলের কথা শোনার পর শফিউল রাশেদিন আর তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখতে পারলেননা। ছেলেকে বুকে জরিয়ে নিলেন।

তাহমিনা আক্তার তার ছেলে আসার পর থেকে, একবারও ছেলের সাথে কথা বলেননি। তাওহীদ মায়ের সাথে কথা বলার জন্য ছটফট করছে।
তাহমিনা আক্তার নিজের রুমে কাপড় গোছাচ্ছেন এমন সময় তাওহীদ সেখানে আসে।

” মা, তোমার কাছে একটু বসি? ” মায়ের উত্তরের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে তাওহীদ। তাহমিনা আক্তার নিরুত্তর থাকেন।

এবার তাওহীদ সরাসরি মা’কে জড়িয়ে ধরে।
ব্যাস, তাহমিনা আক্তারের অভিমান ভাঙতে একটুকুই যথেষ্ট ছিল। তিনি হুহু করে কেঁদে উঠেন। তাওহীদ ও মায়ের সাথে কাঁদছে।

” মাগো, আর রাগ করে থেকোনা। তোমার ছেলে এই কয়মাসে বুঝতে পেরেছে, বাবা-মা তার জন্য কি। আর কোনদিন সে বাবা-মা’র সাথে কোনরূপ অন্যায় কিছু করবেনা। আমাকে মা’র, কা’ট আমি কোন উচ্চবাচ্য করবনা। শুধু তুমি একবার আমার সাথে কথা বল। ” তাওহীদ মায়ের হাত মুঠোয় নিয়ে কাঁদছে।
তাহমিনা আক্তার ছেলের হাতদুটো বুকের ভিতর জড়িয়ে নেন।

” ফিরেই যদি আসলি তবে সেদিন কেন নীরার কথার প্রতিবাদ করলিনা? সবাইকে কাঁদালি। আমরা ভুল করলে আমাদের ভুল যেমন ধরবি, তেমনি নীরার অন্যায়কেও প্রশয় দিবিনা। সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে হয়। মায়ের স্থান আর বউয়ের স্থান কখনো এক হয়না। দুই জায়গা থেকে দুজনকেই ভালোবাসতে হয়। আমি কখনো চাইনা তুই মা’কে মাথায় তুলে রাখতে যেয়ে বউকে অবহেলা কর। এমনকি তোর কাছ থেকে টাকা-পয়সা কিচ্ছু চাইনা। শুধু তোদের কাছ থেকে একটু ভালোবাসা চাই। ”

” আজকে থেকে তোমার যা যা প্রাপ্য তার সবই তুমি পাবে, মা। কেউ তোমার অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারবেনা। নীরা এখন থেকে এখানেই থাকবে। তুমি তোমার নাতনিকে প্রানভরে আদর করবে। প্রয়োজনে রাতেও ওকে তোমার কাছে রাখবে। নীরা বাঁধা দিবেনা। আর ভুল করেও ও যদি কিছু বলে, তবে সেদিনই ওর সাথে আমার সকল সম্পর্ক চুকাবে। এখন থেকে আমাকে এই পরিবার থেকে কেউ আলাদা করতে পারবেনা। ”

” এভাবে বলিসনা, বাবা। যতই অন্যায় করুক, নীরা তোর স্ত্রী। কোন অবস্থায়ই ওকে ছেড়ে দেয়ার কথা মুখে আনবিনা৷ মা হিসেবে আমিও চাইবনা আমার ছেলের জীবন তছনছ হয়ে যাক। আমি শুধু আমার ছেলেদের সুখী দেখতে চাই। ”

” মা হিসেবে তুমি অতুলনীয় তা কি তুমি জানো, মা? তোমার তুলনা তুমি নিজেই। ”

” বাবারে, সকল মা-ই তার নিজ নিজ অবস্থান থেকে অতুলনীয়। সকল মায়েরই একমাত্র চাওয়া তার সন্তানরা ভালো থাকুক, সুখে থাকুক। এবার নিজের রুমে যা। একটু ঘুমিয়ে নে। রাতে নিশ্চয়ই ঘুম হয়নি? এখন একটু ঘুমা দেখবি শরীর ভালো লাগবে। ”
তাওহীদ মায়ের কথা মেনে নিজের রুমে চলে আসে।

সেদিন বিকেলে আনান আসে ‘ কুঞ্জছায়া ‘ য়। তাহমিনা আক্তার দরজা খুলে আনানকে দেখে একটু হাসেন। আনানও তাকে সালাম দিয়ে ভেতরে ঢুকে।

” আপনাদের চাঁদেরহাট দেখতে এলাম, খালামনি। শুনলাম বড় ভাইয়া এসেছে। তা কোথায় সে? তূর সোনা কোথায়? ”

” চাঁদেরহাট শুধু দেখতে এলেই হবে? এবার এই চাঁদেরহাটের সদস্যও হতে হবে। তুমি ছাড়া এই চাঁদেরহাট অসম্পূর্ণ। তাওহীদ, তূর ওরা সবাই ওদের দিদুনের রুমে আড্ডা দিচ্ছে। তুমিও যাও। ”
আনান মাথা ঝাঁকিয়ে দিদুনের রুমের দিকে পা বাড়ায়। কিন্তু ওর মাথায় তাহমিনা আক্তারের কথা বাজছে। তার কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারেনি আনান।

রাতে কায়েস এসেছে মেয়েকে দেখতে। শিউলির জন্য সার্বক্ষনিক একটা নার্স নিয়োগ দিয়েছে তাহমিদ। শিউলি এখনও উন্মাদের ন্যায় আচরণ করে। কাউকেই চিনতে পারেনা।
কায়েস স্ত্রীকে এরূপ অবস্থায় দেখে ভেঙে পরেছে। সে শিউলির চিকিৎসার কোন ত্রুটি রাখছেনা। কিন্তু শিউলির কোন উন্নতি নেই।
এখানে এসে ছোটখাট একটা দোকান নিয়েছে কায়েস। দোকানে নিজেও বসে, পাশাপাশি দুইটা কর্মচারি রেখেছে। সময় পেলেই মেয়ের কাছে ছুটে আসে।
কুহু বাবাকে দেখে ছুটে আসে। কায়েস মেয়েকে বুকে টেনে নেয়। কায়েসের পিছুপিছু শিহাবও বাসায় ঢোকে। কুহু ভাইকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে বসায়। কায়েস যায় আয়েশা সালেহার সাথে দেখা করতে। কুহু তড়িঘড়ি করে রান্নাঘরে আসে। বাবা ও ভাইয়ের জন্য নাস্তা বানাবে।

সন্ধ্যায় তাহমিদ মেডিকেল থেকে বাসায় আসে। এসেই ফ্রেশ হয়ে তূরকে কোলে নিয়ে ড্রয়িংরুমে আড্ডায় মাতে। নীরা শ্বাশুড়িকে নাস্তা বানাতে সাহায্য করছে। সানাউল রাশেদিন ছোট ভাইকে নিয়ে মসজিদ থেকে ফিরে ছেলেদের পাশে বসেন।

নীরা নাস্তার ট্রে নিয়ে আসলে কুহু সবাইকে একে একে নাস্তা দেয়। ওদের সাথে যোগ দেন আফরোজা নাজনীন এবং তাহমিনা আক্তারও। কুহু ওর বাবার পাশে বসেছে। কায়েস মেয়েকে নিজের ভাগের নাস্তাটুকু একটু একটু করে খাওয়াচ্ছে। কুহু নিষেধ করলেও সে শুনছেনা।

” বড়মা, তোমার ছোট মেয়েকে বিয়ে না দিয়ে নিজেদের কাছে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছ কি? আমার দাদুর ছেলে সিনিয়র রাশেদিন, ভদ্রলোক মেয়ের বিয়ের কথা দিব্যি ভুলে বসে আছে বলে তুমিও কি ভুলে গেছ! অথচ তোমাদের চোখের সামনে ওরই বয়সি মেয়ে বিয়ের পর সংসার করছে, কয়দিন পর মা হবে। তোমাদের ব্যাপারস্যাপার আমার বোধগম্য হয়না। ”

” আফরোজা, তোমার গুনধর ছেলে শুধু আমার ভুল ধরতে ওস্তাদ। তার যদি এত দায়, তবে সে একটা পাত্র দেখে বোনের বিয়ে দিক। কে নিষেধ করেছে। কাজের বেলায় ঠনঠনাঠন, কিন্তু লেকচারের বেলায় ষোল আনার ওপর আঠারআনা। ”

বাবা-ভাইয়ের কথপোকথন শুনে সিক্তার বুক দুরুদুরু করছে। ছোট ভাইয়া হঠাৎ ওর বিয়ের কথা বলছে কেন! বাবা যদি এখন ওর বিয়ে দিতে রাজি হয়, তবে আনানের কি হবে!

” বড়মা, সিনিয়র ভদ্রলোককে বলে দাও আমার বোনের জন্য পাত্র রেডি রেখেছি। বড়ড়া অনুমতি দিলেই সানাই বাজবে। আমি তার মত ব্রেইন ভুঁড়িতে নিয়ে ঘুরিনা। ”

” আফরোজা শুনছ? তোমার আদরের ছেলে আমার মেয়ের জন্য পাত্র রেডি রেখেছে। তার এমন ভাব যেন পাত্র হাতের মোয়া। সে চাইলেই আকাশ থেকে টুপ করে পরবে। ”

” বড়মা, সিনিয়র রাশেদিনকে বলে দাও পাত্র টুপ করে আকাশ থেকে পরবে না, পাত্র হেঁটে তার বাসায় আসবে। আমি তার মত কাঁচা কাজ করিনা। ”

” এই তোরা থামবি। যখনই দুজন একজায়গায় হবে, তখনই ঠোকাঠুকি লাগতেই থাকে। আর এই মানুষটাও কম যায়না। এত বলি ছেলেটা তাকে রাগিয়ে মজা নেয়, কিন্তু সে শুনলে তো! তারও কোমড় বেঁধে ঝগড়া করতেই হবে। তাহমিদ তুই যা বলার আমাকে বল। মেয়ে বড় হলে বিয়ে দিতেই হবে, এটাই নিয়ম। তোর খোঁজে কি কোন ভালো ছেলে আছে? ” আফরোজা নাজনীন কয়েকদিন আগেই তাহমিনা আক্তারের কাছে আনানের ব্যাপারে শুনেছেন। আনান ভালো ছেলে। আনানকে তারও পছন্দ। আজ তাহমিদ কি বলে সেসব শুনে তিনি স্বামীর কাছে আনানের বিষয়ে কথা বলবেন।

” পাত্র আর কেউ নয়, বড়মা। আমার ডানপাশে বসা ইঁচড়েপাকা ছেলেটাকেই পাত্র হিসেবে আমার পছন্দ। যদিও সে এখনও রোজগার করেনা। তবে আশা করা যায় সে ভবিষ্যতে ভালো করবে। অবশ্য এ নিয়ে চিন্তার কিছুই নেই। তোমার হাসবেন্ডের তো অনেক টাকা, আপাতত তাকেই সব সামলে নিতে বল। ” তাহমিদের কথা শুনে আনানের বুক ধুকপুক করছে। না জানি সবাই কি বলে।
এদিকে বেচারা সানাউল রাশেদিন একবার স্ত্রীর দিকে তো আরেকবার সবার দিকে তাকাচ্ছেন।

” তোর প্রস্তাব আমরা শুনলাম। বাকিটা সবার সাথে আলোচনা করে দেখি। ”

” খালামনি আমি এখন আসছি। বাসায় যেতে হবে। এখন না বেরোলে পৌঁছাতে রাত হয়ে যাবে। ” আনান দ্রুত বাড়ি থেকে বের হতে চাইছে।

” এখনই যাবি কেন! খেয়ে যাস। সবাই একসাথে হয়েছিস, না খেয়ে চলে যাবি? ” আফরোজা নাজনীন বললেন।

কিন্তু আনান কোন কথা না শুনে বেরিয়ে যায়।
এদিকে সিক্তাও কখন ড্রয়িংরুম থেকে সটকেছে তা কেউ বলতে পারেনা।

রাতে খাবার পর সবাই মিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয় আনানের বাবা-মা’র কাছে বিয়ের জন্য প্রস্তাব নিয়ে যাবে।
তবে রাতেই আফরোজা নাজনীন তার ছোট বোনকে সব জানিয়ে দেন। শাহনাজ সুলতানা বড় বোনের কথায় দ্বিরুক্তি করেনা তিনি জানান আনানের বাবা বাসায় আসলেই তাকে সব বলবেন।

রাতে আনানের বাবা বাসায় আসলে শাহনাজ সুলতানা তাকে সব খুলে বলেন। তিনিও বিনাবাক্যে রাজি হয়ে যান।

দুইদিন পর আফরোজা নাজনীন তার পরিবারের বড়দের নিয়ে শাহনাজ সুলতানার বাড়িতে হাজির হন বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে। অনেক আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয় এক বছর পর ওদের বিয়ে হবে। কারন আনান এখনও ছাত্র। এক বছর পর ওর অনার্স কমপ্লিট হবে। আর তখনই ওদের বিয়ে হবে।

আনান, সিক্তা ভিষণ খুশি। ওরা আগে থেকেই জানত কেউ ওদের সম্পর্ক নিয়ে দ্বিমত করবেনা।

কুহু নিজের রুমে বই নিয়ে বসেছিল। তাহমিদ ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত শরীরে রুমে আসে।

” বউ, তুমি ঠিক আছো তো? আমার প্রিন্সেস ভালো আছে? তোমরা দুপুরে খেয়েছিলে? বিকেলে নাস্তা করেছিলে? সন্ধ্যায় কিছু খেয়েছ? ” কুহুকে দু’হাতে জড়িয়ে তাহমিদ একের পর এক প্রশ্ন করতেই থাকে।

” হুম, সারাদিন সব কিছু ফেলে শুধু খাওয়ার ওপরই থাকি। আপনি কি আমাকে রাক্ষস ভেবেছেন? খাওয়া ছাড়া আপনার মুখে আর কোন কথা নেই? ”

” বউটা আমার শুধু রে’গে যায়। আরে পাগলি এখন তুমি না খেলে আমার প্রিন্সেস বেড়ে উঠবে কেমন করে। তোমার জন্য না হলেও তার জন্য তোমাকে এখন খেতে হবে। তার বেড়ে ওঠা, সুস্থ থাকা সবকিছুই এখন তোমার হাতে। ”

” আপনাকে এভাবে দেখে আমার ভিষণ বমি পাচ্ছে। তারাতারি ফ্রেশ হয়ে আসেন। তারপর মাস্টারগিরি কইরেন। ” কুহু তাহমিদকে ঠেলে ওয়াশরুমে ঢোকায়।
এরপর সে নিচে যায় তাহমিদের জন্য শরবত আর নাস্তা আনতে।

রাতে তাহমিদের বুকে মাথা রেখে কুহু শুয়ে আছে। এখন প্রতিটা রাতেই তাহমিদের বুকে মাথা না রাখলে কুহুর ঘুম আসেনা। এই বুকটা ওর পরম নির্ভরতার স্থান। যেখানে মাথা রেখে অনন্তকাল পার করে দিতে পারবে কুহু।
তাহমিদ এক হাত কুহুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, অপর হাত দিয়ে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে। থেকে থেকে কুহুর মাথায় চুমু দিচ্ছে। পরম আবেশে কুহু চোখ বন্ধ করে। উপভোগ করতে থাকে তাহমিদের বিন্দু বিন্দু ভালোবাসা।
তাহমিদের এই বিন্দু বিন্দু ভালোবাসা দিয়েই এক অন্তরীক্ষ বৃত্ত পূরন করেছে কুহু।

সমাপ্ত

বিঃদ্রঃ আমি লিখালিখিতে খুব পুরাতন নই। শখের বশে লিখা শুরু করেছিলাম।। হুট করেই প্লটটা মাথায় আসে। তাই লিখাও শুরু করেছিলাম। কিন্তু এই গল্প আপনাদের এত রেসপন্স পাবো তা আমি ভাবতেই পারিনি।
আমি বাস্তবতার সাথে মিল রেখেই গল্পটা লিখতে চেয়েছিলাম। জানিনা কতটা সফল হয়েছি। আমি দেখেছি বাস্তবে যেমন শিউলিদের অস্তিত্ব আছে, তেমনি কুহু কিংবা নীরার মত মানুষও আছে। আবার তাহমিনা আক্তারের মত শ্বাশুড়িও দেখেছি। গল্পের প্রতিটা চরিত্রকে তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সাজানোর চেষ্টা করেছি। হয়তো সেইভাবে সফল হতে পারিনি। কিন্তু তারপরও যে আপনারা এতদিন আমার সাথে ছিলেন, এজন্য আপনাদের অন্তরের অন্তস্তল থেকে ভালোবাসা। আপনাদের একটু উৎসাহ, অনুপ্রেরণা আমার লিখার শক্তি জোগায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here