#বিবর্ণ_আলোকবর্ষ
#পর্বঃ১৫
#লেখিকাঃদিশা মনি
আলো জোনাকির সাথে গাড়িতে করে তার ভার্সিটির উদ্দ্যেশ্যে যাচ্ছিল। নতুন পরিবেশে কিভাবে মানিয়ে নেবে সেই নিয়ে অনেক ভয় হচ্ছে আলোর। জোনাকি আলোকে বলে,
‘এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই৷ গিয়ে দেখ সব ঠিক হবে। কত বন্ধু হবে তোর।’
‘হয়তোবা।’
ড্রাইভার মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামায়। আলো জিজ্ঞেস করে,
‘কি হলো এখানে গাড়ি থামালেন কেন?’
‘গাড়ির মনে হয় কোন সমস্যা হয়েছে। গাড়িটা ঠিক করতে সময় লাগবে। আপনাদের তো তাড়া আছে। আমি দেখছি কি করা যায়।’
ড্রাইভার একটি রিক্সা ডেকে আনেন। জোনাকি এবং আলো সেই রিক্সাতে উঠে পড়ে।
রিক্সায় কিছুদূর যাওয়ার পর জ্যামে তাদের গাড়ি আটকে যায়৷ আলো খুব বিরক্ত হয় এতে। ভার্সিটির সময় হয়ে আসছিল। রিক্সাওয়ালা বলেন,
‘এখানে ভিড় তো মনে হয় সহজে থামবে না। আপনারা ফুটপাত ধরে ১০ মিনিট এগিয়ে গেলেই ভার্সিটিতে পৌছে যাবেন।’
আলো আর জোনাকি রিক্সা থেকে নেমে যায়। ফুটপাত ধরে হাটতে থাকে। রাস্তার অপর পাশে যাওয়ার সময় আচমকা একটি গাড়ি আলোদের সামনে চলে আসে। অল্পর জন্য তারা বেচে যায়। আলো রেগেমেগে বলে,
‘চোখে দেখতে পারেন না। রাস্তায় এরকম উন্মা’দের মতো গাড়ি চালাচ্ছিলেন কেন? আপু তুমি ঠিক আছো তো?’
আলোর কথা শুনে গাড়ি থেকে নেমে আসে একজন যুবক। তার চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব রেগে আছে। কালো ফ্রেমের চশমাটা খুলে যুবক বলে,
‘রাস্তা পারাপারের নিয়ম না জানলে আসো কেন? যতসব গেয়ো ভূত।’
কথাটা শুনে আলো খুব রেগে যায়। যুবকটির দিকে না তাকিয়েই বলে,
‘আপনাদের মতো মানুষ যারা কাউকে সম্মান দিতে পারে না তাদের আর কি বলব। আমরা যদি আজ ম’রে যেতাম তাও আপনার কিছু যায় আসতো না। আমরা কোন ঝামেলা চাইনা আপনি চলে যান।’
যুবকটি এক হাজার টাকার একটি নোট ছু’ড়ে দিয়ে চলে যায়। আলো রা’গে ফুসতে থাকে।
‘তুই লোকটাকে দেখেছিস আপু? তোর পায়ে ব্যাথা লেগেছে জন্য আমি একটু দেখছিলাম তাই লোকটার দিকে খেয়াল করি নি। যদি দেখতে পেতাম তাহলে চেহারাটা মনে রেখে দিতাম। কোনদিন দেখা হলে,,,’
‘আচ্ছা বাদ দে। এই শহরে এত মানুষের মধ্যে ওনাকে আর কিভাবে খুজে পাবি। চল এখন।’
‘এই হাজার টাকার নোটটা আমি নিচ্ছি। যদি কোনদিন ওনার দেখা পাই তাহলে মুখের উপর ছু’ড়ে মা’রব। কি ভেবেছেন উনি টাকা আছে জন্য যা খুশি করবে।’
২৯.
আলো এখন ভার্সিটিতে নিজের ক্লাসে এসে বসেছে। জোনাকি তাকে পৌছে দিয়েই চলে গেছে। আলো সেখানে বসে আপনমনে কিছু ভাবছিল। আচমকা একটা মেয়ে এসে তার পাশে বসে। আলোর নজর যায় মেয়েটার দিকে। মেয়েটার পোশাকে আধুনিকতার ছোয়া। জিনস আর টপস পড়ে এসেছে।
মেয়েটা আলোর দিকে একবার অদ্ভুতভাবে তাকায়। আলো সাধারণ একটা সালোয়ার কামিজ পড়েছে।
মেয়েটি আলোকে ভালো করে পরখ করে বলে,
‘তোমার নাম কি? তোমাকে নতুন মনে হচ্ছে। তোমার ড্রেসসেন্স এত ব্যাকডেটেড কেন?’
আলোর খুব খারাপ লাগে মেয়েটির কথা শুনে।
‘আমার নাম আলো। হ্যা আমি নতুন। আমার শালীন পোশাক পড়তেই ভালো লাগে।’
আলোর র’গচটা উত্তরটা মেয়েটার ঠিক হজম হয়না। মেয়েটা বিড়বিড় করে বলে,
‘আমি রুহি বনানী। এই ভার্সিটির সবথেকে স্টাইলিশ আর আধুনিক মেয়ে। আমার সাথে ভালোভাবে কথা বলবে।’
আলো রুহির কথা ইগনোর করে। রুহির খুব মানে লাগে। এই ভার্সিটির সবাই তাকে মাথায় তুলে রাখে। অথচ এই মেয়েটা তাকে পাত্তাই দিচ্ছেনা।
রুহি এটেনশন পাওয়ার জন্য বলে,
‘তুমি তো এখানে নতুন তাই জানো না। আমাদের এখানে ইংলিশ লেকচারার কে জানো? একটু পরই তার ক্লাস। স্যারকে দেখে ক্রাশ খেয়ে যেতে পারো। সব মেয়েরাই তাকে দেখে ক্রাশ হয়। তবে আমি সিউর উনি আমারই হবেন।’
আলো নিরুত্তর। আলোকে এভাবে চুপ থাকতে দেখে রুহির এবার খুব রাগ হয়৷ সে আলোর কানের কাছে গিয়ে চি’ৎকার করে বলে,
‘তুমি কি বোবা? কথা বলতে পারো না।’
‘আমি কথা বলতে পারি। অযথা কথা বলি না রুহি বনানী।’
রুহি এবার মনে মনে বলে,
‘এই মেয়েকে তো আমি,,,,আমাকে এটিটিউড দেখাচ্ছে তো। আমি দেখব এই মেয়ের এত এটিটিউড কোথায় থাকে।’
ধীরে ধীরে ক্লাসে সবাই আসতে থাকে। সবার শেষে হাফাতে হাফাতে একটি মেয়ে আসে। মেয়েটিকে দেখে রুহি মুখ বাকিয়ে বলে,
‘জানো আলো এই মেয়েটার নাম লতা। মেয়েটাকে দেখো একবার কি কালো। মেয়েটার গা থেকেও ঘামের দূর্গন্ধ আসে। প্রতিদিন এরকম লেইট করে আসে।’
এবার আর আলো চুপ থাকেনা।
‘কারো সম্পর্কে এরকম কথা বলা ঠিক নয়। সব মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি। মানুষের বাহ্যিক রূপ দেখে মন তার মন মানসিকতা দেখে বিচার করা উচিৎ।’
রুহি বনানী চুপ হয়ে যায়। প্রথম প্রথম মেয়েটার উপর রাগ হলেও এখন কিরকমটা লাগছে। মেয়েটাকে তার খুবই ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে। রুহি ভাবে, এই মেয়েটার সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে। মেয়েটাকে আমার অন্যরকম মনে হচ্ছে।
একটু পরই ইংলিশ লেকচারার ক্লাসে প্রবেশ করেন। তাকে দেখেই সব মেয়েরা পুরো ফিদা হয়ে যায়। টকটকে ফর্সা, কালো ফ্রেমের চশমার মধ্য দিয়ে সুন্দর চোখদুটো দেখে যে কেউই ক্রাশ খাবে। ক্লাসে প্রবেশ করেই সবার সাথে কুশল বিনিময় করেন তিনি। তার নজর যায় আলোর দিকেও। আলোকে দেখেই তার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।
‘আরে এটা তো সেই মেয়ে যে রাস্তায় আমার গাড়ির সামনে চলে এসেছিল। আমাকে কতকিছু বলল। মেয়েটা এই ভার্সিটিতে পড়ে। আগে তো দেখিনি। জরিনা খালা যেই মেয়েটার কথা বলল এটা কি সেই মেয়ে নাকি।’
আলো তাকায় তার চোখের দিকে। চোখদুটোর মধ্যেই যেন হারিয়ে যায়। মুখ ফুটে আনমনে বলে দেয়,
‘বর্ষ,,,’
৩০.
জোনাকি আলোকে ভার্সিটিতে রেখে এসে এখন নিজেও চলে এসেছে তার কার্যালয়ে। চানাচুরের কোম্পানিতে জানাচ্ছি প্যাকেটজাত করার কাজ দেওয়া হয়েছে জোনাকি সহ আরো নতুন কিছু মেয়েদের।
জোনাকি নিজের কাজই করছিল তখন কোম্পানির ম্যানেজার এসে বলে,
‘আজ আমাদের কোম্পানির মালিক নিজে আসছেন পরিদর্শন করতে। এতদিন তিনি কিছু কাজে বিদেশে ছিলেন এখন দেশে ফিরেই সোজা চলে আসবেন। তোমাদের জানিয়ে দিলাম যাতে আগেভাগেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারো। ওনার সাথে ভালোভাবে কথা বলবে।’
সবাই বলে,
‘জ্বি স্যার’
১০ মিনিটের মধ্যেই ম্যানেজার এসে বলেন,
‘সবাই এদিকে দেখো স্যার নিজে এসেছেন সবকিছু দেখতে। উনি হলেন বর্ণ মাহমুদ। আরাম চানাচুর কোম্পানির মালিক।’
জোনাকি বর্ণ নামটা শুনেই কালকের কথা ভাবে। মালি বলছিল যে বর্ণ নাকি ফুলের ব্যাপারে খুব সৌখিন। বর্ণর দিকে তাকাতেই আলো আরো চমকে যায়। এটা তো সেই লোকটা যার গাড়ির সামনে সকালে তারা পড়েছিল। লোকটিকে দেখে জোনাকির খুব ভয় হয়। না জানি জোনাকিকে দেখে কিরকম প্রতিক্রিয়া করবেন তিনি।
বর্ণ চারপাশটা ভালো ভাবে দেখে। সবার সাথে কত সুন্দর করে কথা বলছিল সে। জোনাকি হতবাক হয়ে সব দেখতে থাকে। তার বিশ্বাসই হচ্ছিল না এই লোকটাই সকালে তাদের সাথে এত রুঢ় ব্যবহার করেছিল।
বর্ণর এবার নজর যায় জোনাকির দিকে। জোনাকি ভয়ে আঁটোসাটো হয়ে যায়। বর্ণ জোনাকির কাছে এসে বলে,
‘আপনার কি কোন সমস্যা হয়েছে? আপনার চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে কোন বিষয়ে ভয় পেয়ে আছেন।’
‘আসলে,,, সকালের ঘটনা,,’
জোনাকি কথা শেষ করতে পারে না তার আগেই ম্যানেজার বলে,
‘স্যার চলুন আপনাকে কিছু ফাইল চেক করতে হবে।’
বর্ণ জোনাকির হাতে পানির বোতল দিয়ে বলে,
‘এটা খেয়ে নিন। এখানে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কোন সমস্যা হলে নিঃসংকোচে বলতে পারেন।’
জোনাকি শুধু হা করে তাকিয়ে থাকে। বর্ণ কত সুন্দর কথা বলে! এই লোকটা কিভাবে সকালের ঐ রাগী লোকটা হতে পারে!
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨#বিবর্ণ_আলোকবর্ষ
#পর্বঃ১৬
#লেখিকাঃদিশা মনি
আলো ক্লাসে চুপচাপ বসেছিল। পাশ থেকে রুহি বনানী বলে,
‘এই হলো আমাদের সবার ক্রাশ বর্ষ স্যার। দেখলে ওনাকে? কেমন লাগল?’
‘ভালোই।’
মুখ ফসকে কথাটা বলে ফেলল আলো। লজ্জায় এখন মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছা করছে। বর্ষ যে সুমনার ছেলে যে আলো জানে। বাড়িতে ছবি দেখেছিল তবে আজ সকালে বর্ষকে খেয়াল করেনি আলো। আলো খেয়াল না করলেও বর্ষ ঠিকই খেয়াল করেছে। বর্ষ তো আলোর দিকে বারবার আড়চোখে দেখছিল আর কিছু একটা ভাবছিল। রুহি বনানী আলোকে বলে,
‘জানতাম তুমিও আমাদের মতো স্যারের উপর ক্রাশ খাবেই। এটাই তো সাইন্স।’
‘এটা কোন সাইন্স না এটা ইংলিশ ক্লাস।’
বর্ষর ঝাঝালো গলা শুনে ক্লাসের সবাই চুপ হয়ে যায়। বর্ষ বলে,
‘রুহি বনানী আর তার পাশে যে নতুন মেয়েটা বসে আসো তোমরা খুব ডিস্টার্ব করছ। এভাবে ক্লাস করতে আমার অসুবিধা হচ্ছে। তাই তোমাদের জন্য ক্লাসটা ভালো না লাগে তাহলে বাইরে যেতে পারো আর তা নাহলে চুপচাপ ক্লাস করো।’
‘সরি স্যার এই ভুল আর হবে না।’
রুহি বনানী সরি বললেও আলো কিছু বলে না। বর্ষ আলোর দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়। রুহি বনানী ইশারা করে আলোকে বলে ক্ষমা চাইতে।
‘আমি তো কোন দো’ষ করিনি তাহলে ক্ষমা চাইব কেন। আমি ক্ষমা চাইবো না।’
আলোর কথা শুনে ক্লাসের সবাই হতবাক হয়ে যায়। আজ অব্দি বর্ষর মুখের উপর কেউ কথা বলে নি। বর্ষ খুব রেগে যায় আলোর উপর।
‘এই মেয়ে তোমার নাম কি?’
‘আলো।’
‘তুমি এক্ষুনি ক্লাস থেকে বেরিয়ে যাও।’
‘আমার অপরাধ জানতে পারি?’
‘আবার মুখের উপর কথা বলছ! যা বলছি চুপচাপ করো।’
আলোর সব ভালো লাগা মুহুর্তে রাগে পরিণত হয়। মনে মনে বর্ষকে অনেক গালি দিয়ে ক্লাস থেকে চলে আসে আলো। বিনা কারণে এভাবে শাস্তি পেতে কারই বা ভালো লাগে?
৩১.
জোনাকি কোম্পানি থেকে বাড়ি আসে৷ সুমনা লাঞ্চ করছিল৷ জোনাকিকে দেখে বলে,
‘জোনাকি এসো একসাথে লাঞ্চ করি।’
জোনাকি বসে পড়ে। তার মনে বর্ণর ব্যাপারটা ঘুরপাক খাচ্ছিল। জোনাকিকে কোন ভাবনায় মশগুল থাকতে দেখে সুমনা জিজ্ঞাসা করে,
‘কি হয়েছে তোমার? এত কি ভাবছ?’
‘আপনার ছেলে বর্ণ কি আজই দেশে ফিরেছে?’
‘হ্যা আজ সকাল ১০ টার ফ্লাইটে ল্যান্ড করেছে কেন?’
জোনাকি আরো অবাক হয়। কারণ ৯ঃ৩০ টার সময় দেখল। এবার জোনাকি সুমনাকে সব ঘটনা খুলে বলে। সব শুনে সুমনা হেসে ফেলে।
‘তুমি জানোনা আমার তো দুই যমজ ছেলে বর্ষ আর বর্ণ। চশমা পড়া রাগী ছেলেটা বর্ষ আর অন্যজন মানে যে সবার সাথে ভালো ব্যবহার করে সে বর্ণ।’
এবার জোনাকির কাছে সবটা পরিস্কার হয়। সুমনা বলতে থাকে,
‘আমার দুই ছেলেকে নিয়েই সমস্যা। বর্ষ টা হয়েছে একদম ওর বাবার মতো। সবসময় নাকের ডগায় রাগ আর অহংকার। আলোর ভার্সিটিরই টিচার ও। কোম্পানির কাজে ওর কোন ইন্টারেস্ট নেই। আর বর্ণ হয়েছে আমার মতো। আমার থেকেও বেশি প্রাণখোলা ও। তবে ওর সমস্যাটা শারীরিক। জন্মের পর থেকেই ওর হার্টের সমস্যা। যার কারণে ওকে মাঝে মাঝেই বিদেশে যেতে হয় চিকিৎসা করাতে।’
জোনাকির খুব খারাপ লাগে বর্ণর অসুখ সম্পর্কে জেনে। বর্ণর হাসি মুখটার কথা মনে পড়ে যায়। এরকম হাসি আগে কখনো দেখেনি সে।
‘আম্মু দিস ইজ ভেরি ব্যাড। আমি এতদিন পর ফিরে আসলাম আর তুমি আমাকে ছাড়া একা একা লাঞ্চ করছো।’
কারো গলার শব্দ শুনে পিছনে ফিরে তাকায় জোনাকি। বর্ণর সাথে আবার তার চোখাচোখি হয়। বর্ণ জোনাকিকে দেখে চমকে যায়।
‘তোর কথা কিভাবে ভুলব?যা চিন্তায় রেখেছিলি। আয় বস আমার পাশে আমি তোকে নিজের হাতে খাইয়ে দেব।’
বর্ণ সুমনার পাশে বসে। সুমনা তাকে খাইয়ে দিচ্ছিল। মা ছেলের এমন ভালোবাসা দেখে জোনাকির অনেক ভালো লাগে।
‘এই মেয়েটা কে আম্মু? কোম্পানিতে ওকে দেখেছিলাম খুব নার্ভাস লাগছিল।’
‘ও হলো জোনাকি। ওর ব্যাপারে সব বলব তোকে আগে খেয়ে নে তুই।’
বর্ণ খাচ্ছিল আর জোনাকিকে বারবার দেখছিল। জোনাকির খুব অস্বস্তি হয় বর্ণর চাহনিতে। অন্যরকম এক অনুভূতির জন্য হয় তার হৃদয়ে। বর্ণ তার মায়ের সাথে কি নিয়ে কথা বলছিল আর হাসছিল। বর্ণর হাসিটা দেখে জোনাকি আরেকদফা নিজের নিয়ন্ত্রণ হারায়। হারিয়ে যায় ঐ মিষ্টি হাসির মধ্যে। হাসতে হাসতে জোনাকির দিকে চোখ যায় বর্ণর। জোনাকিকে নিজের দিকে মুগ্ধচোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে বর্ণ তার দিকে তাকিয়ে হাসি থামিয়ে দেয়। জোনাকি লজ্জায় মুখ নামিয়ে নেয়।
জরিনা রান্নাঘর থেকে সব খেয়াল করছিল।
‘এই মেয়েটাকে ভালো মনে হচ্ছে না। বর্ণর দিকে কিভাবে দেখছিল। মেয়েটাকে নজরে রাখতে হবে।’
খাওয়া শেষ হলে জোনাকি উঠে যায় গেস্টরুমের দিকে। বর্ণকে সুমনা জোনাকিদের ব্যাপারে সব বলব। সব শুনে বর্ণ বলে,
‘তুমি একদম ঠিক কাজ করেছ আম্মু মেয়েগুলোকে সাহায্য করে।’
কথাটা বলে সে উঠে চলে যায়।
জরিনা বর্ণকে যেতে দেখে সুমনার কাছে এসে বলে,
‘আমার এসব ঠিক লাগছে না ম্যাম। ঐ জোনাকি বর্ণর দিকে কিভাবে জেনো তাকাচ্ছিল।’
‘তোমার এসব বাজে কথা বন্ধ করো তো৷ যাও গিয়ে কফি নিয়ে আসো।’
জরিনা বিড়বিড় করে কফি আনতে যায়।
৩২.
‘ইংলিশ ক্লাস শেষ হয়ে গেছে ভেতরে চলো এখন।’
কারো কন্ঠস্বর শুনে আলো পিছনে তাকায়। দেখে লতা নামের মেয়েটি এসেছে।
‘হুম যাচ্ছি। তুমি বাইরে এলে কেন?’
‘তোমায় ডাকতে।’
‘অন্য কোন উদ্দ্যেশ্য নেই।’
‘সত্য বলতে আছে। জানো এখানে আমার কোন বন্ধু নেই। না হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমাকে দেখে সবাই আমার থেকে দূরে চলে যায়। আমার খুব ইচ্ছে কারো সাথে বন্ধুত্ব করব। আমার নাম লতা দাস তুমি?’
‘আমার নাম আলো রহমান।’
আলো লতার সাথে কথা বলতে বলতে ক্লাসের ভিতরে যায়। লতার সাথে আলোকে দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে রুহি বনানী। বিড়বিড় করে বলে,
‘এই মেয়েটা তো অনেক পা’জী। আমার মতো ফেমাস মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব না করে ঐ লতার মতো ভূতের সাথে বন্ধুত্ব করল। এটা তো আমার প্রেস্টিজে আঘাত। এটা আমি কিছুতেই মানব না। আলোকে আমার বেস্টু না বানানো পর্যন্ত আমি থামবো না।’
চারটা ক্লাস শেষ হওয়ার পর আলো লতার সাথে হেসে হেসে কথা বলে বাইরে যাচ্ছিল। রুহি বনানী তাদের সামনে এসে বলে,
‘কোথায় যাচ্ছ তোমরা? চলো আমিও তোমাদের সাথে যাব।’
রুহি বনানীকে দেখে লতা ইতস্তত বোধ করে। মেয়েটা তো তাকে কম অপমান করে নি। আলো বলে,
‘যেতে চাইলে আসতে পারেন। আমরা একটু ক্যাম্পাস ঘুরে দেখব।’
‘আমরা তো ব্যাচমেট এভাবে আপনি করে বলার দরকার নেই। আমাকে তুমি করে বলবে।’
তিনজন একসাথে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখতে থাকে। এমন সময় তাদের দেখা হয়ে যায় বর্ষর সাথে। বর্ষ আলোকে দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে। আলোরও ক্লাস থেকে বের করে দেওয়ার জন্য রাগ হয় তার উপর। তাই পাশ কাটিয়ে চলে যায়। বর্ষ খুব রেগে যায় এই ব্যবহারে,
‘আমাকে এটিটিউড দেখাচ্ছে এই মেয়ে। হাউ ডেয়ার সি?’
বর্ষ ডাক দেয়,
‘এই নতুন মেয়ে দাড়াও ‘
‘আমার নাম আলো।’
‘আচ্ছা সে যাই হোক তুমি এসো এদিকে।’
আলো আসে। বর্ষ আলোকে বলে,
‘আমি তোমার স্যার সম্মান দিতে জানো না। ক্লাসে গল্প করো কেন? তুমি এখানে নতুন জানিনা কোথা থেকে এসেছ। অন্য যায়গার নিয়ম এখানে চলে না। এখানে পড়তে হলে ডিসিপ্লিন মেনে চলতে হবে।’
‘আমি গল্প করিনি। রুহি বনানী তুমি কিছু বলো।’
রুহি বনানী এগিয়ে এসে বলে,
‘জ্বি, স্যার। আলোর কোন দো’ষ নেই আমিই ওর সাথে কথা বলছিলাম।’
‘যা হওয়ার হয়ে গেছে। এই মেয়ে আই মিন আলো শোন। এখন থেকে আমায় দেখে সম্মান দেবে আর রাস্তায় যার তার গাড়ির সামনে পড়বে না।’
বর্ষর কথা শুনে আলোর খটকা লাগে। ভালো করে ভেবে দেখে,
‘এইজন্যই কন্ঠস্বরটা এত পরিচিত লাগছিল। এই তাহলে সেই অভদ্র লোক যে সকালে আমাদের গাড়ি দিয়ে ধা’ক্কা দিতে চাচ্ছিল। সুমনা আন্টির ছেলে এত অভদ্র হয় কিভাবে আমি বুঝছি না। যদি ইনি আমার স্যার না হতেন তাহলে এখনই মুখের উপর হাজার টাকার নোটটা ছু’ড়ে মারতাম।’
আলো তার ব্যাগ থেকে হাজার টাকার নোটটা বের করে বর্ষর হাতে দিয়ে বলে,
‘এই টাকাটার আমার কোন প্রয়োজন নেই স্যার। আপনি আপনার কাছে রেখে দিন। এরপর কাউকে ধা’ক্কা দিয়ে চলে যেতে চাইলে কাজে লাগবে।’
কথাটা বলে আলো লতা ও রুহি বনানীর সাথে চলে যায়। বর্ষ এক হাজার টাকার নোটটা হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে বলে,
‘এই মেয়েটাকে তো আমি,,,’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨