বিলম্বিত বাসর পর্ব ১৪

#বিলম্বিত_বাসর
#পর্ব_১৪
#Saji_Afroz
.
.
.
-তুমি কি পাগল হয়ে গেলে লামিয়া? বিয়ে করতে পারবেনা মানেটা কি?
.
আজ আয়ানের কথার পিঠে রেগে না গিয়ে হাসলো লামিয়া।
-আরে বিয়ে করতে পারবোনা মানে এখন করতে পারবোনা। বাবা বললেন, আগে তোমার ফাইনাল পরীক্ষাটা শেষ হোক।
তুমি কাজে হাত লাগাও, তারপর নাহয়…
-বেকার কোনো ছেলের হাতে তিনি মেয়ে তুলে দিতে চাইছেন না। এইতো?
-হু। তবে এনগেজমেন্ট করিয়ে রাখা যায় বললো।
-ঠিক আছে। আমি মাকে বলবো সবটা।
-মন খারাপ করেছো?
-একটু তো হচ্ছেই। বিয়েটা হয়ে গেলে সাথে থাকতে পারতাম না বলো?
-হুম।
-যাক, বড়রা যা ভালো বুঝেন করবেন। সবটা যে দুই পরিবার এতো সহজে মেনে নিয়েছে এটাই অনেক বেশি।
-আসলেই।
.
.
.
ফাতেমা বেগমের সামনে দাঁড়িয়ে লামিয়ার বাবার বলা কথাগুলো শোনাতেই আয়ান ভ্রু জোড়া কুচকে ফেললেন তিনি।
গম্ভীরমুখে তিনি বললেন-
আমার ছেলে কি ফেইল করে বাসায় থেকে যাবার মতো ছেলে? বেকার মানে? আমাদের নিজস্ব ফ্যাক্টরি আছে। পরীক্ষার আগে বিয়ে করলে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হতো?
.
রুমের ভেতরে প্রবেশ করতে করতে আদুরে বললো-
উত্তেজিত হবেন না মা। অনেক ছেলেই বিয়ের পর কাজে মন দিতে চায়না। তাই হয়তো তিনি এমন ডিসিশন নিয়েছেন। আমি বলি কি আপনি কাল তাদের বাসায় যান। বলুন যে লামিয়াকে আয়ানের পরীক্ষার পরেই ঘরে তুলবেন কিন্তু…
-কি?
-এখন এনিগেজমেন্ট নয়। যেনো আকদ করিয়ে রাখে।
.
আদুরের কথাটা মন্দ লাগেনি ফাতেমা বেগমের।
মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে তিনি বললেন-
খুবই ভালো কথা বলেছো তুমি।
.
-কিন্তু কথাটা আমার একেবারেই পছন্দ হলোনা।
.
দরজায় দাঁড়ানো নাসরিন আক্তারকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লো আয়ান ও আদুরে।
উৎসুক দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে আদুরে প্রশ্ন করলো-
ইনি কে মা?
-পরীর মা।
.
দৃষ্টি তার দিকে নিয়ে সালাম জানাতেই নাসরিন আক্তার বললেন-
ওয়া আলাইকুমুসসালাম। আমার আপার সাথে কিছু কথা আছে। একা বলতে চাই।
-জ্বী নিশ্চয়।
.
কথাটি বলেই বেরিয়ে পড়লো আদুরে। আয়ানও তার সাথে দরজার দিকে পা বাড়ালো।
ফাতেমা বেগম তার উদ্দেশ্যে বললেন-
কি যেনো বললা তুমি? বুঝলাম না নাসরিন?
-আবেশের ব্যাপারটা নাহলে মেনে নিলাম। কিন্তু আয়ানের জন্য হলেও আমার মেয়েকে কি আপনারা ঠিক করতে পারতেন না? আমি ভেবেছিলাম কাল সকালে আসবো। কিন্তু পরীর মুখে সবটা শুনে না এসে পারলাম না।
.
এতক্ষণে সবটা বুঝলেন ফাতেমা বেগম। ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে তিনি বললেন-
আয়ান যে মেয়েটাকে ভালোবাসে।
.
আবারো এই ভালোবাসার অযুহাত! আবেশের মতো আয়ানেরও কারো সাথে সম্পর্ক আছে ভাবতেই বুক চিরে নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসলো নাসরিন আক্তারের।
.
ফাতেমা বেগম দাঁড়িয়ে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললেন-
আবেশের সাথে যা করেছিলাম আয়ানের সাথে তা করতে আমি পারিনা নাসরিন। পরীর জন্য অনেক ভালো একটা ছেলে আসবে। দেখিও তুমি! মেয়েটাকে পড়তে দাও। মেধা আছে তার। সবচেয়ে বড় কথা সে পড়তে ইচ্ছুক। আমরাও আছি ওর জন্য। তাহলে কেনো তোমার এতো চিন্তা! এসব বাদ দিয়ে আমার সাথে এসে বসো। অনেকদিন গল্প করিনা। আসো দেখি।
.
.
.
আয়নার একটা ছবি খুব যত্ন করে নিজের কাছে রেখে দিয়েছে আবেশ। তবে ছবিটা দেখার তার সাহস হয়না। বছরে একবার দেখে কিনা সন্দেহ। কিন্তু এই মুহুর্তে তার এই ছবিটা দেখতে খুব বেশি ইচ্ছে করছে। হঠাৎ এমন ইচ্ছের কারণ তার নিজেরই অজানা।
হাতে ছবিটা নিয়ে ছলছলে নয়নে তাকিয়ে আছে সে ছবিটির দিকে।
আর ভাবছে, আজ আয়না তার পাশে থাকলে সবটা হয়তো আরো সুন্দর হতো।
আদুরের থেকেও এতোটা দূরে থাকতে হতোনা।
-হাতে কি ওটা?
.
পকেটে ছবিটা তাড়াহুড়ো করে লুকিয়ে চোখ জোড়া মুছে নিয়ে আবেশ বললো-
কই! কিছুনা।
-তোমার চোখে পানি আবেশ! কার ছবি দেখে তোমার চোখে পানি?
-কারো না।
.
আবেশের পাশে এগিয়ে গেলো আদুরে। তার গলায় দুহাত জড়িয়ে বললো-
আমাকে বলবেনা?
-উহু! তেমন কিছুনা আদুরে।
-তাহলে কেমন কিছু? তোমার এক্স গফ এর ছবি? বলো বলো?
.
আদুরের হাত সরিয়ে খানিকটা চেঁচিয়েই আবেশ বলে উঠলো-
যেটা আমি বলতে চাইছিনা সেটা শুনতেই এতো আগ্রহ কেনো তোমার! বলবোনা কে। কি করবে তুমি?
.
আবেশের হঠাৎ এমন ব্যবহারে চমকে গেলো আদুরে। কোনো কথা না বলে সে সোজা বেরিয়ে গেলো রুম ছেড়ে।
দরজার পাশেই নাসরিন আক্তারকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো সে।
নাসরিন আক্তার একটা বিশ্ব জয়ের হাসি দিয়ে বললো-
অন্যের প্রাপ্য সুখ তোমার কপালে কি করে সইবে বলো?
.
টলমলে চোখে তাকিয়ে আদুরে বললো-
মানে?
-মানে পরীর যেটা প্রাপ্য ছিলো সেটা তুমি কেড়ে নিয়েছো। তাই সুখ তোমাকে ধরা দিবেনা।
.
কথাটি বলে নাসরিন আক্তার চলে গেলেও নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে আদুরে।
কি হচ্ছে তার সাথে! প্রথমে ভালোবাসার মানুষের এমন ব্যবহার আর এখন নাসরিন আক্তারের এসব কথা!
দুটোর মাঝেই কি কোনো যোগসূত্র রয়েছে? এমন কি কোনো ঘটনা আছে যা আবেশ তাকে জানায়নি? জানায়নি তা পরিষ্কার নাসরিন আক্তারের কথা শুনেই বোঝা গেলো। কিন্তু কি জানায়নি?
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here