#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_১০
#নবনী_নীলা
কে রেখেছে এই হলুদ গোলাপ? রুহি বিছানার পাশ থেকে গোলাপের গুচ্ছটা হাতে নিলো। এটা দেখে তো সতেজ মনে হচ্ছে পুরোনো গুচ্ছটা এখনও ফুলদানিতেই তো আছে। রুহি গোলাপের গুচ্ছটা নিয়ে আগের গোলাপের পাশে রাখলো। সে ভেবেই পাচ্ছে না এইটা এলো কোথা থেকে? হয়তো স্টাফরা প্রতিদিন সকালে গোলাপের গুচ্ছ দিয়ে যায় নইলে এটা আসবে কিভাবে। হ্যা এটাই হবে অবশেষে উত্তর খুজে পেল রুহি। তোয়ালে দিয়ে চুল ঝেড়ে পানি ঝরাচ্ছিল রুহি এমন সময় আহান ফ্রেশ হয়ে বের হতেই পানির ছিটে তার মুখে পড়লো। আহান ভ্রু কুঁচকে চোখ বন্ধ করে ফেললো।
” তোমাকে কতবার বলেছি হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুলের পানি ঝরাতে। আর আমাকে দেখলেই তোমার চুলের পানি ঝরাতে ইচ্ছে করে”, বাম হাতের উল্টা পিঠ দিয়ে মুখের পানি মুছেতে লাগলো আহান।
রুহি ইচ্ছে করে আবার জোড়ে চুল ঝাড়া দিয়ে পিছনে ফিরলো। আহান বিরক্তির সাথে মুখ দিয়ে তিক শব্দ করে বললো,” রুহি!”
রুহি তোয়ালেটা হাতে ভাজ করতে করতে বলল,” শুনুন আপনি হচ্ছেন কটকটে মেজাজের মানুষ আপনি কিভাবে বুঝবেন ভেজা চুলের মোহ।”
” হোয়াট! ভেজা চুলের মোহ! এসব আমার বুঝতেও হবে না।”, বোলেই রুহিকে পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে বলল,” তৈরি হয়ে নাও আমরা ফিরে যাচ্ছি।”
” ফিরে যাচ্ছি মানে? কোথায় ফিরে যাচ্ছি?”, চোখ বড় বড় করে বললো রুহি।
” বাড়ি যাচ্ছি রুহি।”, রুহির দিকে তাকিয়ে বললো আহান।
” এতো তাড়াতাড়ি? আরেকটু থেকে যাই।”, মন খারাপ করে আহানের দিকে তাকালো রুহি।
আহানের মন একটুও গললো না,আহান শক্ত চোখে তাকিয়ে বললো,” রেডি হয়ে নাও। খেয়েই বের হচ্ছি।”
রুহি আহানকে মুখ বাকিয়ে নিজের সুটকেস থেকে একটা শাড়ি বের করলো। আচ্ছা মতন কথা শুনাতে ইচ্ছে করছে রুহির, শুধু মুখ বন্ধ করে আছে কাল রাতে কি হয়েছে সেটা আহানের মুখ থেকে বের করবে বলে এই কুম্ভকর্ণের মেজাজ বিগড়ে গেলে তখন তো আর কিছুই পেট থেকে বের করবেনা।
আরো কয়েকদিন থাকা গেলে কি ভালো হতো। মুখ কালো করে শাড়ি হাতে ওয়াসরুমে যাচ্ছিল রুহি। আহান রুহির হাত টেনে নিজের সামনে নিয়ে এলো। আহানের এমন কাজে রুহি চোখ বড় বড় করে আহানের দিকে তাকালো। আহান রুহির হাতের শাড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,” শাড়ি নিয়ে কোথায় যাচ্ছো?”
” গলায় দড়ি দিতে যাচ্ছি।”, রুহির কথায় আহান একটা ভ্রু তুলে তাকালো।তারপর রুহি আড় চোখে তাকিয়ে আরো বললো,” শাড়ি নিয়ে কি করবো আবার? পড়বো আপনি না বললেন রেডি হতে।”
আহান রুহির উপর থেকে নিচে চোখ বুলিয়ে বললো,” তুমি তো রেডি আছো, আবার শাড়ি পড়ার কি প্রয়োজন। সময় নষ্ট করবার প্ল্যান? এভাবেই যাবে, শাড়ি পড়তে হবে না।”
” না না বেশী সময় লাগবে না আমি এক্ষুনি যাচ্ছি আর আসছি।”, রুহির কথা শেষ হবার আগেই আহান রুহির হাতের শাড়ি নিয়ে সুটকেসে ভরে দিলো।
রাগে রুহির গা একেবারে কিরমির করতে লাগলো। আজ আর কোনো কথা বলা যাবে না সব অত্যাচার সহ্য করতে হবে। কিছু পেতে হলে একটু তো কষ্ট করতেই হবে। রুহি বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস ফেলে রাগ কমাচ্ছে। মনে মনে বললো,”বদমেজাজি কুম্ভকর্ণ একটা।”
🍁🍁🍁
রুহি গোলাপের গুচ্ছ হাতে গাড়িতে বসলো। আহান ভেবেছিলো গোলাপের গুচ্ছটা দেখলে রুহি জিজ্ঞেস করবে এটা কে এনেছে? অবশ্যই মনে প্রশ্ন জাগবে আর হয়তো রুহি জানার চেষ্টা করবে কিন্তু রুহি কিছুই বলছে না চুপচাপ নিজের সিটবেল্ট পরে নিয়ে বসে আছে।
আহান দৃষ্টি সামনে রেখে বলল,” এইটা কি পুরাতন গোলাপের গুচ্ছ?”
” নাহ্, এটা সতেজ আজকে বিছানার উপর পেলাম।”, আহানের দিকে তাকিয়ে বললো রুহি।
” বিছানার উপর? কে রেখেছে?”, কিছু না জানার ভান করে বললো আহান।
” কোনো স্টাফ হয়তো রেখে গিয়েছে।”, ফুলের দিকে তাকিয়ে বললো রুহি।
আহান আড় চোখে তাকিয়ে বলল,” স্টাফ?”
” নয়তো কে? আপনি? আপনি আর ফুল তাও হলুদ গোলাপ কিনে রাখবেন আমার জন্য এটা দিনের বেলায় চোখ খুলে ঘুমানোর মতোন হয়ে যাবে না। অবিশ্বাস্য !”,
আহান বিরক্তি নিয়ে রুহির দিকে তাকালো তারপর দৃষ্টি সামনে স্থির করলো। ফুলটা কেনাই ভুল হয়েছে বলে মনে হচ্ছে এখন আহানের। বাড়িতে ফিরতে ফিরতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে। এতক্ষণ জার্নি করার পর রুহি আর আহান দুজনেই ক্লান্ত। রুহি হেলে দুলে আহানের পিছু পিছু গোলাপের গুচ্ছ জড়িয়ে রেখে হাঁটতে লাগলো। আহান বাড়ির ড্রয়িং রুমে পা রাখতেই হটাৎ একটি মেয়ে ছুটে এসে আহানের গলা জড়িয়ে ধরলো। প্রথমে, আহান নিজেও বুঝে উঠতে পারলো না ব্যাপারটা। রুহি বাড়িতে ঢুকতেই এমন দৃশ্য দেখে দাড়িয়ে যায় । ভুল করে অন্য কোথাও চলে আসেনি তো তারা। না সব তো ঠিক আছে নাকি এই মেয়েই ভুল করে কোথাও চলে আসছে।
মেয়েটা আহানের গলা ছেড়ে দাড়াতেই আহানের বুঝতে অসুবিধে হলো না, সামনে সামিরা দাড়িয়ে। আহানের এক্স যদিও সম্পর্কটা নেই, আহানের দিক থেকেই নেই তবে সামিরা আহানকে পাবার আশা এখনও ছাড়েনি। তাই তো তার এই আগমন। সামিরা আহানের আরো কাছে আসতেই আহান সমিরার হাত ধরে হাতটা নিচে নামালো। সামিরা কে বার বার বুঝিয়েছে আহান কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। আহান আশে পাশে তাকালো কেউ নেই রুহি বাদে। রুহি থমথমে মুখে একপাশে দাড়িয়ে আছে। আহান দোটানায় পরে গেলো। এর মাঝেই সামিরা আহানের গালে হাত ছুঁইয়ে দিলো। সে বিদেশে থেকেছে এসব তার কাছে খুবই সামান্য তবে রুহি আড় চোখে তাকালো রুহি কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না। কেমন জানি লাগছে কি অদ্ভুত অনুভূতি। আহান সামিরার হাত সরিয়ে দিয়ে শক্ত চোখে বললো,” তুই দেশে কখন এলি?”
” কাল,তোর জন্যে এসেছি।”, মোহ ভরা কন্ঠে বলল সামিরা।
রুহির ভীষন অসস্তি হচ্ছে এদের দেখে মনে হচ্ছে এখানেই লীলাকাণ্ড শুরু করবে। রুহি হনহনিয়ে চলে যাচ্ছে।
আহান সামিরাকে নিজের থেকে দুরে সরিয়ে দিয়ে বললো,” কি করছিস কি? তুই ভালো করেই জানিস এসবের কোনো প্রভাব আমার উপর পড়বে না।”
আহান আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সামিরার থেকে সরে এলো। সমিরাও কিছু বললো না কারণ বাড়ির সবাই বেড়িয়ে এসেছে। রুহি সিড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে দিদাকে দেখে দাড়িয়ে গেলো। দিদা আর রুহি কথা বলছিলো এমন সময় আহানের গর্জনে সবাই পিছে ফিরলো। রুহির বুকের ভিতরটা ধক করে উঠলো।
আহানের চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেছে।
” এই মহিলা এ বাড়িতে কি করছে দিদা? আমি তোমায় কি বলেছিলাম? উনি থাকলে আমি এই বাড়িতে থাকবো না। তা ওনাকে যখন রাখবে আমাকে আগে বলতে পারতে আমিই চলে যেতাম।”,
কথাগুলো শুনে রুহি হতভম্বের মতো তাকিয়ে আছে। কি বলতে চাইছে আহান? আর এই মহিলাই বা কে? এর উপর আহানের এতো রাগ কিসের? সবাই কেমন ভয়ে ভয়ে আছে। রুহি একটা ঢোক গিললো।
দিদা আহানের কাছে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,” শান্ত হও আহান। এভাবে কেউ মায়ের সাথে কথা বলে? শত হলেও উনি তোমার মা।”
” মা কিসের মা? আমার শৈশবে যখন মায়ের প্রয়োজন ছিলো তখন তিনি কোথায় ছিলেন। এখন আমারও ওনার প্রয়োজন নেই। আমি থাকছি না এখানে।”, বলেই হনহনিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায় আহান।
আহানের রাগ দেখে রুহির অবস্থা খারাপ এই লোক যেখানে নিজের মাকে মাফ করতে পারছেনা সেখানে রুহি কে? কোনো ভুল হলে পুলিশে ধরিয়ে দিতেও এর বাঁধবে না। আহানের মার চেহারায় কুটনি ভাব আছে কিছুটা তাও মা তো মা হয়। এভাবে ব্যাবহার করবে কেন?
এসব ভাবনার মাঝে রুহির ডাক পড়লো। রাগী গলায় ডাকছে আহান। রুহি আতকে উঠলো আর কাউকে পেলো না এই লোক এই সময়ে তাকে ডাকতে হলো। রুহি ভয়ে ভয়ে দিদার দিকে তাকালো দিদা ঈশারায় যেতে বলেছেন। রুহি না সূচক মাথা নাড়ল। সেধে সেধে কে বাঘের খাচায় জেতে চায়।
” যাও না গেলে আরো রেগে যাবে।”, বললেন দিদা। এর মাঝে সামিরা উঠে বললো”আমি যাচ্ছি”। বলেই আশে পাশে না তাকিয়ে ধেই ধেই করে উপরে উঠে গেল সামিরা। রুহিকে দিদা ঠেলে ঠুলে পিছনে পিছনে পাঠিয়ে দিলো।
কোনো উপায় না পেয়ে রুহি পা টিপে টিপে হেঁটে হেঁটে এসে দরজার বাহিরে দাড়িয়ে রইলো। ভিতরে যাবার সাহস তার নেই।
আহান নিজের জামা কাপড় ব্যাগে ভরতে ভরতে রুহিকে ডাকছিলো এমন সময় সামিরা ঘরে ঢুকলো। সামিরাকে দেখে আহানের রাগ বেড়ে গেলো সঙ্গে সঙ্গে রেগে উঠে বলল,” তুই এখানে কেনো? রুহি কোথায় আমি ওকে ডেকেছি।”
” শুন আমার কথা শুন।”, আহানকে থামানোর চেষ্টা করলো সামিরা। আহান সামিরার কথা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে বললো,” আগে বল রুহি কোথায়?”
সামিরার প্রচুর হিংসে হতে লাগলো সে সামনে দাড়িয়ে আছে অথচ আহান সেই মেয়েটিকে খুঁজছে। এদিকে বাহিরে দাড়িয়ে বার বার রুহির নাম শুনে রুহির আত্তা কেপে উঠছে। হ্যা বাঁশ দেবার সময় রুহিকে ওনার খুব মনে পড়ে। কেনো ভিতরে গার্লফ্রেন্ড আছে তাতে মন ভরছে না নাকি? তাকে কি দরকার? বির বির করতে লাগলো রুহি।
” রুহি বলেছে সে আসবে না”, ইচ্ছে করে মিথ্যে কথা বলছে সামিরা। যাতে আহান রুহি রুহি করা বন্ধ করে। কিন্তু এ কথা শুনে আহানের মেজাজ তুঙ্গে ওঠে গেলো। বাহিরে এ কথা শুনে রুহির ইচ্ছে করছে গিয়ে শাকচুন্নিটার চুল ছিঁড়ে আনে। শাকচুন্নি কোথাগার! মিথ্যে কথা বলার জায়গা পায় না। অ্যাটম বোমা তো রুহির উপরে পড়বে আহান দা অ্যাটম।
” কোথায় সে?”, বলেই আহান বাহিরে বেড়িয়ে আসতে নিলো। রুহির পায়ের আওয়াজে কোথায় পালাবে বুঝতে পারলো না দেওয়াল ঘেঁসে দাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে রাখলো।
আহান বাহিরে বেরিয়ে এসে রুহিকে এভাবে দাড়িয়ে থাকাতে দেখে বিরক্তির সুরে বললো,” কি করছো কি তুমি এখানে?”
রুহি আস্তে আস্তে চোখ খুললো। রুহি ঘামতে লাগলো কি বলবে সে? তারপর নিজের দিকে আঙ্গুল করে বললো,” আমায় খুঁজছেন? ”
আহান রাগী চোখে তাকাতেই রুহি একঢোক গিললো তারপর বললো,” ভিতরেই যাবো যাবো ভাবছিলাম কিন্তু আপনারা কথা বলছিলেন।”, বাকিটা বোলে শেষ করার আগেই আহান রুহির হাত ধরে টেনে রূমের ভীতরে নিয়ে এলো।
সামিরা যাবে এমন সময়ে আহান ওকে বললো,” সামিরা তোর সাথে পরে কথা বলছি।” সামিরা রেগে চলে আসে সেখান থেকে।
” রুহি তোমার ব্যাগ গুছিয়ে নেও।”, নিজের ব্যাগটা ঠিক করতে করতে বলল আহান।
“কেনো আমি কেনো ব্যাগ গুছিয়ে নিবো। কোথায় যাচ্ছি আমি?”, ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করলো রুহি।
” আমার ফ্ল্যাটে?”
” আপনার ফ্ল্যাটে আমি কেনো যাবো? অসম্ভব আমি যাবো না। আপনার যেতে হলে আপনি যান। আমি এখানেই থাকবো।”, ডাট দেখিয়ে বললো রুহি।
আহান কিছু বলতে যাবে এমন সময়ে দিদা হাপাতে হাপাতে ঘরে এলো। আহান আর রুহি দুজনেই ছুটে গিয়ে দিদাকে ধরে চেয়ারে বসালো। আহান অস্থির হয়ে গেলো। রুহি দিদার জন্য পানি নিয়ে এলো। পানি খেয়ে তিনি ঘনো ঘনো নিঃশ্বাস নিচ্ছে। আহান আর রুহি দিদার পায়ের কাছে বসে রইলো। দিদা ওদের দুজনের হাত শক্ত করে ধরে আছে।
” দিদা তুমি ঠিক আছো? ডাক্টার আংকেল কে ডাকবো।”, অস্থির হয়ে বললো আহান।
দিদা না সূচক মাথা নাড়লো। তারপর অনেক কষ্টে বললো,” তুই যাসনে। আমার এই অনুরোধ টা রাখ।” আহান আর কিছু বললো না। চুপ করে দিদার দিকে তাকিয়ে রইলো। প্রিয়জনের কাছে সব রাগ যেনো মেঘের মতোন, বেশিক্ষণ ধরে রাখা যায় না।
[ চলবে ]
{ Don’t be silent reader. }
[ আজ বোনাস পার্ট দিবো।]