#বেলা_শেষে। [০৭]
ভূমিকার এমন কঠিন জবাব আশা করেনি তপু। তার কথার প্রতিউত্তর এভাবে দিবে ভূমিকা সেটা কল্পনাতেও ভাবে নি সে। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ক্যবলাকান্তের ন্যায় মুখ করে তাকিয়ে আছে ভূমিকার দিকে। ভূমিকা এখন নরমালি ওর বন্ধুদের সাথে কথা বলছে। দিগন্ত অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ভূমিকার দিকে। ভূমিকা এমন কিছু বলবে সেটা দিগন্তের ও ভাবনার বাইরে ছিলো। দিগন্ত ভেবেছিল ভূমিকা হয়তো সত্যিটা সবাইকে বলে দিবে। আবারও ওকে ভুল প্রমানিত করলো ভূমিকা।
ভূমিকা ওর বন্ধুদের নিয়ে ক্যান্টিন থেকে বেড়িয়ে যায়। দিগন্ত মিমি নওশাদ আর তপু ওদের আগের জায়গায় গিয়ে বসে। নওশাদ তপুকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-আরে মামা এত চুপ হয়ে গেলে যে। মেয়েটার জবাব হজম হয়নি বুঝি। নওশাদের কথা শুনে মৃদু হাসলো দিগন্ত। মনে মনে বলল, ধানি লঙ্কার ঝাঁজ কি সবাই সহ্য করতে পারে। তবে যাই বলি, ভূমি আজ মুখ্য জবাব দিয়েছে। সবাই যদি মানুষের প্রফেশন দেখে জার্জ করে তাহলে গরীব মাধ্যবিত্তদের অবস্থা কি হবে। আমাদের দেশে অনেক মানুষ আছে যারা গরীবদের মানুষ বলে মনে করে না। অর্থের অহংকারে মানুষ এটা ভুলে যায় দেশে গরীর চাষি, জেলে কামার কুমার তাঁতি কাজের লোক আছে বলেই তাদের মতো ধনীরা আজও সৌখিন ভাবে বেঁচে আছে। আচ্ছা সব জায়গায় কি অর্থদিয়ে দিয়ে বিচার করলে হয়। না হয়না। গরীবদের কি বড় বড় ইউনিভার্সিটি পড়তে নেই।সব মেধাবীরাই কি বড় লোক পরিবারে জন্মগ্রহণ করে। করে না তো। তাহলে সমাজে ধনী দারিদ্রের এত বৈষম্য কেন?? আজ ভূমিকা কাজের মেয়ে হয়ে কলেজে এসেছে বলে দিগন্তের বন্ধুরা ওকে অদ্ভুত চোখে দেখছে। কাজের মেয়েরা কি লেখাপড়া করতে পারবে না নাকি। এটা নিয়ে কি সংবিধানের কিছু লেখা আছে।
ভূমিকার চলে যাওয়ার দিকে এখনো মুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ক্যান্টিনে বসে থাকা এক সুদর্শন যুবক। লম্বা মুখ আকৃতির এই সুদর্শন যুকটি এতক্ষণ ভূমিকার কথা গুলো শুনছিলো আর ভূমিকাকে দেখছিল। প্রথম দেখাতেই এক অন্যরকম অনুভূতির জন্মহয় তার মনে। আনমনেই বুকের বা পাশটাতে হাত রাখে সে। তারপর মৃদু হাসে। হাতের সাহায্য বুকের ধুকবুকানির শব্দ অনুভব করে সে। ওষ্ঠদ্বয় চেঁপে স্মিত হাসে।
রাস্তার এক পাশে রিক্সার জন্যে অপেক্ষা করছে ভূমিকা। ভূমিকার বন্ধুরা ওকে একা ছেড়ে চলে গেছে। আসলে ভূমিকাই ওদের যেতে বাধ্য করেছে। ভূমিকার থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বাইকের উপর দাঁড়িয়ে আছে দিগন্ত। ভূমিকা এখন কি করে সেটাই দেখছে। দিগন্তের বাইক এ তো সে যাবে না। এদিকে প্রায় দশ মিনিট ধরে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে ভূমিকা। না কোন রিক্সা আসছে আর না কোন অটো আসছে। ইচ্ছে করছে হেটে যেতে। কিন্তু এখন সেটাও হবে না। এখান থেকে ওদের বাসা অনেকটা দূরে। ভূৃমিকার পক্ষ এখন এত রাস্তা হেটে যাওয়া সম্ভব নয়। বিরক্তি নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে ভূমিকা। দূর থেকে এই বিরক্তি মাখা মুখ দেখে মুখ টিপে হাসছে দিগন্ত। আর মনে মনে রিক্সাওয়ালাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছে সে। এই ভাবেই যদি এই ধানি লঙ্কার ঝাঁজটা একটু কমানো যায়।
কিছুক্ষণ পর একটা লোকাল বাস আসলো আর ভূমিকা সেটাতেই উঠলো। দিগন্ত কেন জানি ভূমিকার বাসে উঠাটা ঠিক মেনে নিতে পারলো না। আজকাল লোকাল বাসে উঠাটা কেও ভালোভাবে মেনে নিতে পারে না। এই বাসেও এখন দিনে দুপুরে ক্রাইম হয়। দিগন্তের মনে পরে যায় কিছুদিন আগের ঘটনা। বন্ধুদের সাথে ক্লাবে গিয়েছিল সেদিন। ড্রিঙ্ক করে বাসায় ফেরার সময় পথিমধ্যে একটা মেয়েকে দেখতে পায় । ড্রাংক অবস্থায় থাকলেও হুস একেবারেও হায়ারনি কেও। মেয়েটার শরীরের অর্ধেক জামাকাপড় ছিলোই না বলে চলে। শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়ছিলো। আর মেয়েটা ব্যথায় কাতরাচ্ছিল। দিগন্তের ও তার বন্ধুরা মেয়েটাকে নিয়ে হসপিটালে যায়। হাসপিটালের লোকেরা মেয়েটাকে ইমারজেন্সিতে নিয়ে যাওয়ার পর ওদের কে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ডক্টরদের ধারনা ওরাই কিছু একটা করেছে। দু-দিন পরে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছিল দিগন্তরা। কারন মেয়েটা নিজে এসে পুলিশের কাছে জবাববন্দি দিয়েছিলো। সেদিন মেয়েটা তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছিলো। শহর ছেড়ে পালানোর জন্যে একটা বাসে উঠে তারা। সেই বাসে কয়েকজন ছেলেছিলো শুধু। তবুও তারা সেই বাসটাতেই উঠছিলো। কারন তাদের পালাতে হবে। কিন্তু ভাগ্য সেদিন তাদের সহায় ছিলো না। চলতি বাসে সবাই মিলে মেয়েটাকে গন ধর্ষণ করে। আর ছেলেটাকে বাস থেকে ধাক্কাদিয়ে ফেলে দেয়। সেদিনের কথা মনে পড়তেই বুকটা ধুক করে উঠে দিগন্তের। সে বাসের কাছে এগিয়ে যাবে এমনি সময় নওশাদ ওকে ডাকদিয়ে বলে,
-প্রিন্সিপ্যাল স্যার তোকে ডাকছে। দিগন্ত নওশাদের দিকে একপলক তাকালো। তারপর আবার সেই বাসের দিকে তাকালো। তখন দেখতে পেল একটা সুদর্শন যুবক সেই বাসে উঠছে। দিগন্ত ভ্রু কুচকিয়ে সে দিকে তাকালো। এই ছেলেটা বাসে উঠছে কেন?? যে প্রতি মাসে একটা করে গাড়ি চেঞ্জ করে সে কিনা লোকাল বাসে উঠছে। অদ্ভুত না বিষয়টা।
-কি রে!! এত কি ভাবছিস। স্যার তোকে ডাকছে।
-হ্যাঁ চল যাচ্ছি। দিগন্তের অনিচ্ছা থাকা সত্তেও সে নওশাদের সাথে যায়।
বেশ অস্বস্তি নিয়ে গাড়িতে বসেআছে ভূৃমিকা। কারন ওর পাশেই বসে আছে একটা বুড়া লোক। বয়সটা বেশী হলেও তাকে কাবু করতে পারেনি মনে হচ্ছে। কেমন ভাবে তাকিয়ে আছে ভূমিকার দিকে। মনে মনে লোকটার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করছে ভূমিকা। শালা লুচু, খবিশ মেয়ে দেখিসনি কখনো। এক পা কবরে আছে তারপরেও লুচুগিরি। ভূমিকার একবার ভাবলো সে উঠে চলে যাবে এখান থেকে। কিন্তু এখানে তো কোন সিট খালি নেই তাহলে সে কোথায় বসবে। এদিকে লোকটা ধীরে ধীরে ভূমিকাকে ঘেসে বসছে।
-এই যে টাকলা দাদু একটু ওদিয়ে সরে বসুন। এমনভাবে চেপে বসছেন আমি তো গাড়ি থেকে পড়ে যাব। টাকলা দাদু ডাক শুনেই লোকটা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো। তারপর দুজনের সাথে বেশ কথাকাটিও হয়। এক পর্যায়ে লোকটা ভূমিকাকে বেয়াদব মেয়ে বলে সম্বোধন করলো। তাতেও ভূমিকার কিছু যায় আসেনা। কারন এই তকমা সে আগেই অনেকবার পেয়েছে। তখন একটা যুবক এসে ভূমিকাকে সাহায্য করলো। আর গাড়িতে সকলের সামনে সেই বুড়ো লোকটাকে অপমান করো। এদের মতো লোকেদের কারনে আমাদের সমাজের মেয়েরা এতটা অনিরাপদ। অপমানিত হয়ে লোকটা গাড়ি থেকে নেমে যায়। তারপর ভালোভাবেই বাকিটা রাস্তা পাড়ি দেয় ভূমিকা। আজকাল বৃদ্ধা লোকেদের থেকে যুবকদের কাছে মেয়েরা সেইভ বেশী। বুড়োরা মেয়েদের সুযোগ নেয়। আর সেখানে অনেক যুবকরা সেই সুযোগকে নিজেদের দায়িত্ব মনে করে। আমাদের যুব সমাজের দায়িত্ব অনেক বেশী।
বিছানায় বই নিয়ে বসে মাত্রই বইয়ের পাতা উল্টিয়েছে ভূমি। এমন সময় মাশহুদ তালুকদার কল করলো। মোবাইলের স্কিলে আব্বাজান নামটা দেখেই শুকনো ডুক গিলল ভূমিকা। ইনোসেন্ট ফেসকরে মোবাইলের স্কিনের উপর তাকিয়ে আছে ভূমিকা। কল বাজতে বাজতে মোবাইলটা কেটে গেলো। এবার মনে হয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচলো ভূমি। বড় করে শ্বাস নিলো। কিন্তু তার এই স্বস্তি বেশীক্ষণ টিকলো না। মাশহুদ তালুকদার আবারও কল করলেন। ভূমিকা মোবাইলটা হাতে নিয়ে দৌড়ে দিগন্তের রুমে চলে আসলো। দিগন্ত ফ্রেশ হয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে শার্টের বাটন লাগাচ্ছিল এমন সময় ভূমিকাকে দৌড়ে আসতে দেখে ভ্রু কুচকিয়ে তাকায় সে। ভূমিকার দৌড়ের স্প্রিড এতই ছিলো যে সে ব্রেক করার সময় টাল সামলাতে না পেরে দিগন্তের উপর ঝাপিয়ে পরে। আর দিগন্ত ভূমিকার স্প্রিড সামলাতে না পেরে নিচে পরে যায়।
নিচে পরে আছে দিগন্ত। আর দিগন্তের উপরে শুয়ে আছে ভূমিকা। ভূমিকার তার হাত দিয়ে দিগন্তের শার্ট খামচে ধরে আছে। আর দিগন্ত তার হাত রেখেছে ভূমিকার বাহুর উপর। দুজনেই কিছুটা সময় দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো।
-তুমি ঠিক আছো?? দিগন্তের করা প্রশ্নের কোন রকমের উত্তর দেয় ভূমিকা।
-হ্যাঁ – হ্যাঁ।
-তাহলে উঠ। এভাবে পরে না থেকে উঠে দাঁড়াও।
ও হ্যাঁ হ্যা। বলেই ভূমিকা দিগন্তকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। দিগন্ত উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে, ওই মেয়ে খাও কি তুমি। এত ভারি কেন?? দিগন্তের কথায় মৃদু হাসলো ভূমিকা। তারপর সে বলল, আসলে আমার ভার আপনি নিতে পারবেন না। তারপর বিরবির করে বলল,
-ঠিকই বলেছেন আপনি। আমি একটু বেশীই ভারি কিনা। তাইতো বয়তে পারছেন না। ঝুলে আছি।
-কিছু বললে?? মাথাটা ভূমিকার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল দিগন্ত।
-নাহহ।
-ওওহ আচ্ছা। দৌড়াচ্ছিলে কেন ওভাবে?? কলের কথা মনে পড়তেই শুকনো ডুগ গিলল ভূমিকা। তারপর তুতলিয়ে বলল,
-আ-আব্বা কল করছে।
-ওও আচ্ছা। মানে কি বলল আব্বা।
-আমি কল রিসিভ করিনি মনে হয় কেটে গেছে। আপনি কথা বলুন না।
-আমি কেন?? তোমাকে কল করেছে তুমি কথা বল।
-আপনি বললে প্রবলেম কি?? আপনি কথা বলুন আমি আসছি। বলেই চলে যাওয়ার জন্যে পা বাড়ায় ভূমিকা। আর তখন দিগন্ত ভূমিকার হাত ধরে ফেলে। ভূমিকা হাতের দিকে একপলক তাকিয়ে থেকে দিগন্তের মুখের দিকে তাকায়। তখন দিগন্ত বলে,
-আমি কল করছি। তুমি একটু এখানে থাকো। আব্বা তোমাকে চাইতে পারে। ভূমিকা হাতের দিকে দৃষ্টিরেখে মাথা নাড়ায়। অতঃপর দিগন্ত মাশহুদের নাম্বারে কল করে।
দুজনেই মন খারাপ করে দু-দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে। ভূমিকা হাতের নোখ কামড়াতে কামড়াতে এমন অবস্থা করেছে যে। আর একটু হলেই নোখ খেয়ে ফেলবে। আর দিগন্ত পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে গভীরভাবে চিন্তা করছে।
#বেলা_শেষে। [বোনাস পার্ট]
কোন আইডিয়া পেলেন?? ভূমিকার ছুঁড়ে দেওয়া প্রশ্নের প্রতিউত্তরে শুধু মাথা নাড়ালো দিগন্ত। ভূমিকা চোখমুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলল,
-কাজের সময় তো আপনার মাথায় কোন আইডিয়া আসেই না। এমন মাথা না রেখে কেটে ফেলে দিলেই পারেন। যত্তসব। উহঃ দেখুন আমি কিন্তু আপনার সাথে এক রুমে থাকতে পারবো না বলে দিলাম।
-এত বাজে বকো কিভাবে। তুমি টায়ার্ড হও না। বিরক্তি মুখ করে বলল দিগন্ত।
-আপনার মতো একটা মানুষ নামক জলহস্তীর সাথে থাকলে যে কেওই বাজে বকবে। ইনোসেন্ট মুখ করে বলল ভূমিকা।
-স্টুপিড মেয়ে একটা। একটা বললে হাজারটা শুনায়। এই মেয়েটা এত কথা কিভাবে বলে। আমি জাস্ট ভাবতে পারিনা। অতঃপর দিগন্ত রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। আর ভূমিকা সেখানেই দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে।
কিছুক্ষণ আগে যখন দিগন্ত মাশহুদকে কল করে তখন মাশহুদ জানায় সে তার স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় আসছে। দিগন্তের মায়ের কোমড় ব্যথাটা বেড়েছে তাই তাকে ডাক্তার দেখানোর জন্যে ঢাকায় আসবেন তিনি। যেহেতু দিগন্ত আর ভূমিকা একটা ফ্ল্যাট নিয়ে থাকে তাই তারা সোজা দিগন্তের বাসাতেই আসবেন। তাছাড়া ছেলেমেয়ে দুটোর সাথে কয়েকদিন থাকবেন তিনি। মাশহুদ তার স্ত্রীকে নিয়ে এখানে আসবেন বলে সবচেয়ে বেশী প্রবলেম হচ্ছে দিগন্ত আর ভূমিকার। সে এসে যদি দেখে দিগন্ত আর ভূমিকা দুজনেই আলাদা রুমে থাকে তাহলে ব্যপারটা অন্যরকম হবে। দিগন্ত এখনি তার বাবাকে কিছুই জানাতে চায়না। এক্সাম শেষে একেবারে বিয়ে করে তার বাবাকে জানাবে। ভূমিকা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে সে দিগন্তের সাথে একই রুমে থাকবে না। আর দিগন্ত সেও চায়না ভূমিকা তার সাথে একই রুমে থাকুক। এখন কে কোথায় থাকবে এটা নিয়েই ভাবছিলো দুজনে।
শেষে কোন উপায় না পেয়ে ভূমি নিজের সমস্ত জিনিসপত্র দিগন্তের রুমে নিয়ে আসে। ভূমিকা বিষণ্ণ মন নিয়ে কাজ করছে। আর দিগন্ত বিছানায় বসে ভূমিকার এমন মুখ দেখে মুখ টিপে হাসছে। দিগন্ত উঠে গেল রান্নাঘরের দিকে। মেয়েটা আজ অনেক কাজ করছে এক কাপ চা করে খাওয়াতেই পারি। তারপর দিগন্ত নিজের আর ভূমিকার জন্যে দুকাপ চা করে নিলো।
কাবার্ডে নিজের জামাকাপড় ঘুছিয়ে রাখছিলো ভূমিকা, এমন সময় দিগন্ত এসে ওর সামনে এক কাপ চা ধরলো। ভূমিকা চায়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে দিগন্তের দিকে তাকালো। দিগন্ত ইনোসেন্ট ফেস করে হাসি দিয়ে বলল,
-তুমি ব্যাস্ত তাই নিজেই চা করে নিলাম। খেয়ে দেখতে পারো। চা টা আমি ভালোই বানাই। স্মিত হাসলো ভূমিকা। তারপর দিগন্তের হাত থেকে কাপ নিয়ে তাতে নিজের ওষ্ঠদ্বয় ঠেকালো। চায়ের স্বাদ অনুভব করতেই দু-চোখ বন্ধকরে নিল ভূমিকা আজকের চায়ের স্বাদটা অন্যরকম। বেশ ভালো লাগছে খেতে। তৃপ্তি সহকারে পুরো চা টা খেয়ে নিলো ভূমিকা।
রাতের আটটা নাগাদ মাশহুদ তার স্ত্রীকে নিয়ে পৌঁছে দিগন্তদের বাসায়। ভূমিকাকে পেয়ে যে মাশহুদ ও তার স্ত্রী হাতে চাদ পেয়েছে। আসার পর থেকেই সেই তিনজনে মিলে গল্প শুরু করে দিয়েছে। দিগন্ত ভেবে পায়না। এই কয়দিনে এত কথা জমা হয়ে আছে। কথার ঝুড়ি খুলে বসেছে। সুফায় গুটিশুটি মেরে বসে সবার কথা শুনছে আর বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে দিগন্ত। কেও একবারের জন্যেও দিগন্তের দিকে তাকাচ্ছে না। আসলে এখানে যে দিগন্ত নামের কেও একজন থাকে এটা হয়তো তারা ভুলে গিয়েছে। এখানে নিজেকে ফোর্ট পারসোন সিঙ্গুলার নাম্বার মনে করছে দিগন্ত।
সবাই মিলে একসাথে এক টেবিলে বসে ডিনার করলো আজ। আজ মাশহুদের মনে হলো তার একটা পরিবার আছে। তবে কিসের যেন অপূর্ণতা লাগছে। তার মনে হচ্ছে তার পরিবারে এমন কিছু নেই। যেটা থাকার খুব প্রয়োজন।তবুও ছেলে বৌমাকে নিয়ে একসাথে আছেন এতেই অনেক খুশি মাশহুদ।
আজ রাতে দুজনের মাঝে তার তেমন কোন কথা হয়নি। ডিনার শেষ করে দিগন্ত বসেছিল পড়ার টেবিলে। এই সুযোগে ভূমিকা বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ে। পড়া শেষ করে দিগন্ত যখন দেখতে পেলো ভূমিকা তার বিছানায় গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে তখন দিগন্ত তার বালিশ আর চাদর নিয়ে গিয়ে সুফায় শুয়ে পরে
কলেজের মাঠে পা রাখতে মেজাজটা বিগড়ে গেলো ভূমিকার। অনেকগুলো ছেলেমেয়ে এক সাথে দাঁড়িয়ে আছে আর তাদের সামনে দাঁড়িয়ে কিছু ছেলে রয়েছে। যারা ওই ছেলেমেয়েদের দিয়ে কিছু না কিছু করিয়ে নিচ্ছে। ভূমিকার বুঝতে বাকি রইলো না এখানে র্্যগিং হচ্ছে। আজ ফ্রেশ মুড তাই কারো সাথে ঝামেলা করতে চায়না ভূমিকা। তাই ওদের পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলো ভূমিকা এমন সময় একটা যুবক ভূমিকাকে ডাকদিয়ে বলল,
-এই যে মিছ তোতাপাখি, এদিকে আসেন??
ভূমিকা আশেপাশে তাকিয়ে তোতাপাখি খুঁজতে লাগলো বাট সে এখানে কোন তোতাপাখি দেখতে পেলো না। তখন সেই যুবকটি আবার বলল,
-আপনাকেই বলছি মিছ তোতাপাখি, এদিক ওদিক না দেখে এখানে আসুন।
-আমাকে বলছেন। একটু জোরেই বলল ভূমিকা। যুবকটি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিলো। অতঃপর ভূমিকা ওদের কাছে গেলো। ভূমিকা সেখানে গিয়ে দাঁড়াতেই সেই যুবকটা বলল,
-তোতাপাখি কি নতুন এই কলেজে??
-আপনি আমাকে বারবার তোতাপাখি বলে সম্বোধন কেন করছেন?? আমি কি তোতাপাখি নাকি??
-সবুজ ড্রেসে তোমাকে একদম তোতাপাখির মতোই লাগছে গো। পাশ থেকে আরেকটা ছেলে বলল।
-একদম খাটি কথা বলছিস দোস্ত। [যুবকটি]
-আচ্ছা। মৃদু হেসে বলল ভূমিকা। সবুজ ড্রেসে আমাকে তোতাপাখির মতো দেখতে লাগছে তাইতো। রাইট। আপনি যে কালো ড্রেস পড়েছেন আমি কি একবারও বলছি আপনাকে কাকের মতো দেখতে লাগছে। ভূমিকার কথা শুনে সবাই তাজ্জব হয়ে গেলো। এই মেয়ে বলে কি??
-এই বেয়াদব মেয়ে এসব কি বলছো কি হুম।
-ভুল কি বললাম। সবুজ ড্রেস পড়লে যদি তোতাপাখির মতো লাগে তাহলে কালো ড্রেসে কাকের মতো লাগবে এটাই তো স্বাভাবিক তাইনা। বলেই দু ঠোট প্রসারিত করে হাসি দিলো ভূমিকা। ছেলেগুলো ভূমিকার কথা শুনে বেকুব হয়ে গেলো। এভাবে নিজেদের কথায় নিজেরা ফাঁসবে সেটা ভাবতে পারেনি বোধহয়। অন্যএকটা ছেলে এসে ভূমিকার সামনে দাঁড়ায়। তার চোখে ক্রোধ স্পষ্ট। তবুও ভূমিকা হেলদুল নেই সে আগের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে আর ঠোট চেপে হাসছে। তখনি ওদের পাশে একটা কালো বাইক এসে থামলো। বাইকটা দেখেই সকলে সেখান থেকে প্রস্থান করলো। ভূমিকা ভ্রু কুচকিয়ে সেদিকেই তাকিয়ে আছে। কে এই বাইকার যাকে দেখে সকলে এভাবে পালিয়ে গেলো। ভূমিকার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বাইকার তার হেলমেড খুলে সেটা বাইকের উপর রেখে ধীর পায়ে ভূমিকার সামনে এসে দাঁড়ালো। তাকে দেখেই ভূমিকা যেন পাঁচশো পাঞ্চাচ ভল্টিজের শক খেলে। এই লোকটাকে দেখে এভাবে ভয় পাওয়ার কি আছে। ভূমিকা এবার লোকটার দিকে তাকাচ্ছে তো আবার কলেজের দিকে তাকাচ্ছে। তখন খেয়াল করলো কিছু কিছু মেয়েরা হা করে এই ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে। আর বাকিরা ভয়ে লেজ গুটিয়ে রেখেছে।
-হ্যালো মিছ।
ছেলেটার কথায় সামনে তাকায় ভূমিকা। অতঃপর বলে,
-আপনি আসাতেই সকলে এমন চুপচাপ হয়েগেল কেন।
লোকটা তার চাপ দাড়িতে হাত দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলল,
-আপনি এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?? ক্লাস নেই?
-মাত্রই আসলাম। আর তারপরেই কিছু ছেলের সাথে ঝামেলা। আপনাকে কেন এসব বলছি আমি। আমি ক্লাসে যাচ্ছি। ক্লাসে যাওয়ার জন্যে সামনের দিকে পা বাড়ায় ভূমিকা। আর তখনি লোকটা ভূমিকাকে প্রশ্ন করে,
-ছেলেগুলো কে ছিলো??
-জানিনা ।
-দেখলে চিনতে পারবেন??
-হ্যাঁ বাট। বাট আপনি কি আজকেও আমাকে হেল্প করবে নাকি। কাল আপনি না থাকলে কি যে হতো। আমি ওই বুড়ো লেকটাকে ধাক্কাদিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দিতাম। নিহাত আপনি এসেছিলেন না হলে কাল আমার হাতে একটা খুন হয়ে যেতো। ভূমিকার কথা শুনে স্মিত হাসলো লোকটা। অতঃপর মনে মনে বলল,
-আমি থাকতে আপনাকে এমন অন্যায় করতে দিবো নাকি।
-এইযে মিস্টার আপনার নামটাই তো জানা হলো না। আমি ভূমিকা। আমাইরা ভূমিকা।
-আমি জুহায়িন আরাভ। বলেই ভূমিকার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো হ্যান্ডসেক করার জন্যে। জুহায়িন আরাভ নামটা শুনেই শুকনো ডুক গিলল ভূমিকা। আর তুতলিয়ে বলল,
-ভি.পি. আরাভ আপনি? আরাভ মৃদু হাসলে। আবারও ভ্রু কুচকিয়ে তাকালো ভূমিকা। তারপর বলল,
-সবার মুখে যে ভাবে আপনার কথা শুনছিলাম তাতে মনে হলো আপনার চোখ দুটো বেশী আছে। কান একটা বেশী, হাত হবে ছয়টা আর মাথায় হবে বড় বড় শিং। কিন্তুু আমি তো দেখছি আপনি আমাদের মতোই স্বাভাকিক মানুষ তাহলে আপনাকে সবাই ভয় কেন পায়। আচ্ছা আপনি কি কোন অলৌকিক ক্ষমতা জানেন। ভূমিকার কথায় না হেসে পারলো না আরাভ। হাসতে হাসতে বলল,
-না সে রকম কিছু না।
-তাহলে সবাই আপনাকে ভয় পায় কেন??
-আপনার ক্লাসের দেরী হয়ে যাচ্ছে। বলেই সেখান থেকে প্রস্থান করে আরাভ। ভূমিকা ভেঙচি কেটে ওর ক্লাসে চলে যায়। দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে বাইকে জোরে লাথি দিলো মাহিন। ভূমিকার সাথে আরাভ এর কি সম্পর্ক। যে আরাভ সব সময় মেয়ে মানুষ এড়িয়ে চলে। মেয়ে দেখলে যার শরীর এালার্জির মতো চুলকায় সেই কিনা কলেজের মাঠে দাঁড়িয়ে ভূমির সাথে কথা বলছে। না তার আর দেরী করলে চলবে না। আরাভ কিছু বুঝে উঠার আগেই তাকে তার কাজটা শেষ করতে হবে। না হলে,,,
চলবে,,,,,,,
#লেখিকা- মাহফুজা আফরিন শিখা।
চলবে,,,,,,,,,,
#লেখিকা- মাহফুজা আফরিন শিখা।