#বেলা_শেষ। [১৭]
আরাভকে এম.ডি স্যারের চেয়ারে দেখে খানিকটা অবাক হয় ভূমিকা। হয়তো সে আরাভকে এখানে আশা করেনি। ভূমিকা যতদুর জানে আরাভ ওদের কলেজের ভি.পি। কিন্ত ও একটা কোম্পানির এম.ডি এটা অজানা ছিলো। ভূমিকা অবাকের সুরে জিগ্যেসু করে,
-মিস্টার আরাভ, আপনি?? আরাভ এতক্ষণ তাকিয়ে ছিলো ভূমিকার অক্ষির দিকে। ভূমিকার কথা কর্ণপাত হতে সামনে তাকালো সে, অতঃপর ভ্রু ভ্রু নাড়িয়ে জিগ্যেসু দৃষ্টিতে তাকালো সে?? ভূমিকা পুরো কেবিনটায় অবলোকন করে নিলো। হঠাৎ একটা ছবিতে তার আঁখিদ্বয় আটকে যায়। আরাভের হাসিমাখা ছবি। তার সাথে রয়েছে একটা বয়স্ক লোক। বয়স সত্তর হবে তার। দুজন দু-জনের দিকে তাকিয়ে আছে ছবিটায়। ভূমিকা বুঝতে পাড়ছে না আরাভের ছবি এখানে কেন?? ভূমিকা জিগ্যেসু দৃষ্টিতে আরাভের দিকে তাকালো। আরাভ হয়তো ভূমিকার অবস্থা বুঝতে পাড়ছে। তাই সে নিজের ভাবনা ভূলে মৃদু হাসার চেষ্টা করলো। অতঃপর বলল,
-মিছ ভূ,,, উহঃ সরি, মিসেস। মিসেস ভূমিকা, প্লিজ সিট ডাউন। হাতের ইশারায় চেয়ার দেখিয়ে বলল আরাভ। ভূমিকা আরাভের দিকে একপলক তাকিয়ে থেকে, আরাভের ইশারা লক্ষ করে সিট গ্রহন করলো সে। অতঃপর আরাভ বলল,
-এতটা অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমিই এম.ডি। আপানার কাগজপত্র গুলো দেখান?? তারপর ভূমিকা ব্যাগ থেকে কিছু কাগজপত্র বের করে সেগুলো আরাভের হাতে দিলো। আরাভ কাগজপত্র গুলোতে একটু চোখ বুলিয়ে বলে উঠলো,
-আপনি তো দেখছি টপার। ভূমিকা হাসার চেষ্টা করলো কিন্ত পারলো না। আধো তার চাকরি হবে কি হবে না সেটা নিয়ে বেশ চিন্তায় আছে। আরাভ কাগজপত্র ফাইলে ডুকিয়ে এক পাশে রেখে দিলো। তারপর কিছুক্ষণ মৌনতা থেকে বলল,
-আমি যতদূর জানি দিগন্ত উচ্চবংশীয় ছেলে। আর সেই দিগন্তের ওয়াইফ হয়ে আপনি আসছেন চাকরি করতে। কেন মিছ, সরি মিসেস। আপনার কি মনে হয়না এতে দিগন্তের পরিবারের অসম্মান করা হবে। আরাভের কথা শুনে চোখমুখ শক্তহয়ে এলো ভূমিকার। শক্তগলায় বলল,
-চাকরি করলে পরিবারের অসম্মান হয় এটা আপনাকে কে বলল? তাছাড়া আমার চাকরি করার সাথে দিগন্তের পরিবারের কি সম্পর্ক। আমি চাকরি খুজছি নিজের জন্যে। করো উপর নির্ভরশীল হওয়ার থেকে নিজে উপার্জন করাটা বোধহয় বেশী সম্মানজনক। ভূমিকার কথা শুনে ছোটছোট চোখ করে ফেলল আরাভ। ভূমিকা যে এমন কিছু বলবে সেটা সে আগে থেকেই জানতো। অতঃপর আরাভের চাওনি দেখে ভূমিকা কাটকাট গলায় বলে উঠলো,
-আপনি যদি আমাকে চাকরি দিতে না পাড়েন তাহলে সোজাসাপ্টা বলুন।
-আমি কি আপনাকে বলেছি চাকরি দিবো না। এত বেশী বকেন না আপনি??
আমি তো শুধু জানতে চাইছিলাম আপনার কিসের এতো প্রবলেম। নয়না আমাকে আপনার প্রবলেমের কথা বলেছে। কিন্ত কি প্রবলেম সেটা বলেনি। আমি জানতে চাই ভূমি। আপনার অসহায় মুখটা যে আমাকে রাতে ঘুমাতে দেয়না। বড্ড যন্তণা দেয় আমাকে। কথাগুলো বলতে ইচ্ছে করলেও মুখে প্রকাশ করলো না আরাভ। বড় করে শ্বাস ফেলল আরাভ। তারপর বলল,
-কবে জয়েন করছেন?? আরাভের কথা শুনে ভূমিকার অধরে হাসি ফুটে উঠলো। উৎফুল্ল হয়ে বলল, আজ তো এসেই পড়েছি। কলেজটাও মিছ গেলো। তাহলে আজ থেকেই জয়েন করে।
-এস ইউর ওয়িশ। উঠে দাঁড়িয়ে বলল আরাভ। ভূমিকাও উঠে দাঁড়ালো।ফাইলটা ব্যাগে পুরে ব্যাগ কাঁদে ঝুলিয়ে নিলো। আরাভ টেবিলের উপর থেকে মোবাইল হাতে নিয়ে সেটা পকেটে রাখলো। হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সামনে পা বাড়ালো।আর ভূমিকাকে বলল,
-কাম উয়িথ মি। ভূমিকা আরাভের পিছু পিছু চলল।
আরাভ ভূমিকাকে নিয়ে ম্যানেজারের কেবিনে নিয়ে আসলো। মুলত সে ভূমিকাকে ম্যানেজারের এসিস্ট্যান্ড হিসাবে রেখেছে। ম্যানেজার ঢের মনোযোগ দিয়ে তার কাজ করছিলেন। আরাভের দিকে নজর দেওয়ার টাইম নাই তার। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজ শেষ করতে হবে তাকে। আরাভ পকেটে হাত গুজে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ম্যানেজারকে পরখ করে নিলো। তারপর বিরবির করে বলল,
-যার কাজে এত মনোযোগ তার হিসাবে এত গোলমাল হয় কেমনে?? আরাভের ভাবনার ছেদ ঘটে ভূমিকার কথায়,
-স্যার, আমাকে এখানে নিয়ে আসলেন কেন?? আর ওনি তো ম্যানেজার তাইনা।
আরাভ ভূমিকার কথার কোন জবাব দিলো না। সে ম্যানেজারের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। অতঃপর ম্যানেজার কে বলল,
-কাকা আপনা আর কিছু করতে হবে না। আমি আপনার এসিস্ট্যান্ড নিয়ে আসছি। এখন থেকে আপনার কাজগুলো ওনি করবে।
আরাভের কথা শুনে ভূমিকার চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। ম্যানেজার ও পারসোনাল এসিস্ট্যান্ড থাকে সেটা আগে জানতো না সে। ভূমিকা কিছু বলবে তার আগেই আরাভ বলে উঠলো,
-কোন কথা নয়। আপনি ম্যানেজার কাকার পারসোনাল এসিস্ট্যান্ড হিসাবে কাজ করবেন। কথাটা বলেই শিটি বাজাতে বাজাতে বেড়িয়ে যায় আরাভ। আরাভ চলে যাওয়ার পর ভূমিকা ম্যানেজারের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
-এই যে দাদু, এগুলো আমাকে দিন আমি করে দিচ্ছো।
-এই মাইয়া এই। আমাকে কোন দিক থেকে দাদু মনে হয় তোমার হুম। আমার কি চুল দাঁড়ি পেকেছে??
-দাঁড়ি থাকলে তো পাকবে?? বিরবির করে বলল ভূমিকা।
-এই মাইয়া শুনো, জ্বি বলুন, তুমি এগুলো করতে পারবে?? না মানে বলছিলাম। তুমি যদি এখন এই কাজগুলো করো তাহলে আমি একটু আমার বউয়ের সাথে দেখা করতে যেতাম।
ভূমিকার চোখ কোটর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম। এই লোকটা এই বয়সে এসেও বউয়ের জন্যে কেমন দেওয়ানা। আসলে স্বামি স্ত্রীর সম্পর্কটাই এরকম, যতদিন যাবে সম্পর্কটা আরো মজবুত হবে।
আরাভ দাঁড়িয়ে আছে দিগন্তের ফ্ল্যাটের সামনে। নওশাদের কাছ থেকে দিগন্তের বাসার ঠিকানা নিয়ে এখানে এসেছে সে। আরাভ যখনি বুঝতে পারছে ভূমিকা তাকে কিছুতেই সত্যিটা বলবে না। তখনি সে সিদ্ধান্ত নেয় ভূমিকাকে ফোর্স না দিগন্তের কাছ থেকে সবটা শুনবে। আরাভের বিশ্বাস দিগন্ত তাকে সত্যিটা বলবেই। পর পর দু-বার বেল বাজানোর পর দিগন্ত এসে দরজা খুলে দিলো। দরজার ওপাশে আরাভকে দেখে প্রাণউচ্ছল হাসি হাসলো দিগন্ত। অতঃপর দুজনেই রুমে প্রবেশ করে।
ড্রয়িংরুমে সুফাতে মুখোমুখি বসে আছে দিগন্ত আরাভ। দু-জনের মধ্যেই বিরাজ করছে পিনপতন নিরবতা। আরাভ এই নিরবতা ভেঙে বলে উঠলো,
-মিমির সাথে যদি সারাজিবন কাটাতে চাও তাহলে সেদিন তোমার বাবাকে সত্যিটা বলোনি কেন? কেন ভূমিকার জিবনটা নষ্ট করলে। আরাভের এই প্রশ্নে দিগন্ত জবাব ছিলো এরকম, আমি নয় ভূমি নিজে নিজের জিবন নষ্ট করেছে। আর যদি কেও ওর জিবন নষ্ট করার জন্যে দায়ি থাকে তাহলে সেটা আমার আব্বা আমি নয়। কারন সেদিন বিয়েটা ভূমিকা ভেঙে দিয়েছিলো। যার কারনে আব্বা আমার সাথে জোর করে ওর বিয়ে দেয়।
-বিয়েতো যৌতুকের কারনে ভেঙেছে। এতে ভূমিকার দোষটা কোথায়??এতক্ষণ দিগন্ত ওদের বিয়ের শুরু থেকে সবটা বলেছে। এমনকি মিমির সাথে সম্পর্কের কথাও বলেছে আরাভকে।
-হ্যাঁ এটাও ঠিক। তবে ভূমিকার জিবন নষ্ট হওয়ার জন্যে ও নিজে দায়ী। ওর ওই চঞ্চলতা, প্রতিবাধি শক্তিই দায়ি। আমি নয়। দিগন্তের এই কথাটা শুনে আরাভের ইচ্ছে করছে ওর গালে পরপর কয়েকটা চড় বসিয়ে দিতে। ভূমিকার মতো মেয়েকে অবহেলা করছে। আজকাল এমন মেয়ে কজন পাওয়া যায়। আর ও পেয়ে তাকে অবহেলায় হারাচ্ছে। তবুও যতটা সম্বভ নিজকে সংযত রাখলো। দিগন্তকে বুঝানোর জন্যে আবারও বলে উঠলো,
-দেখ দিগন্ত যা হয়েছে সেটা ভূলে যাও। ভূমিকা তোমার ওয়াইফ। এই পবিত্র সম্পর্ককে তুমি অস্বীকার করতে পারো না। তোমার উচিৎ,,,,
-ইটজ্যকলি, আরাভকে থামিয়ে বলে উঠলো দিগন্ত। বিয়ে একটা পবিত্র সম্পর্ক। এই সম্পর্ক আমি কিছুতেই অস্বীকার করতে পারবো না। আপনি জানেন আমি আর মিমি আইনগত ভাবে স্বামি স্ত্রী। দু-বছর আগে আমার রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেছি। এখন শুধু ইসলামিক আর পরিবারগত ভাবে এই বিয়ের সম্মতি দেওয়ার পালা। সেই সম্পর্ক কি করে অস্বীকার করবো বলতে পারেন । তারপর দিগন্ত উঠে গিয়ে ওর রুম থেকে একটা কাগজ নিয়ে আসলো। আর সেটা আরাভের হাতে দিয়ে বলল,
-এই দেখুন আমাদের রেজিস্ট্রি পেপার। দিগন্তের কথা শুনে আরাভ যেন শকড্ এর উপর শকড্। সে কাগজটা হাতে নিয়ে দেখলো। সত্যিই এটা ওর আর মিমির বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপার। তারমানে দিগন্ত মিমি বিবাহিত। এবার আরাভের পচন্ড রাগ হলো। একটা বিয়ে করা সত্তেও আরেকটা বিয়ে কেন করলো। কেন সে সেদিন তার বাবাকে সত্যিটা বলে নি। আরাভ দু-হাত শক্ত মুঠি করে নিলো। রক্তচক্ষু করে দিগন্তের দিকে তাকালো। তাতেও দিগন্ত কোন ভাবান্তর হচ্ছে না। আরাব বুঝতে পারছে এই কি সেই দিগন্ত। আগে এই দিগন্তকে নিয়ে আরাভে গর্ব হতো। আরাভ উঠে দাঁড়ালো। তারপর বলল,
-ডিভোর্স তা কবে দিচ্ছো??
-এক্সাম শেষ হলেই। তাছাড়া বিয়েটা যখন পারিবারিক ভাবেই হয়েছে। ডিভোর্সটাও সেখান থেকে হবে।
দিগন্তের কথা শুনে আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করলো না আরাভ। ক্রোধান্বিত হয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করলো। আরাভ চলে আসতেই দিগন্ত দু-হাতে মাথা চেপে ধরলো। আর মিনমিনিয়ে বলল, কেন এমন দু-টানায় ফেললে আমাকে।
অফিসের ভিতরে হট্টগোল শুরু করে দিয়েছে ম্যানেজার। এপাশ থেকে ওপাশ পায়চারী করে যাচ্ছে আর বিরবির করে আরাভকে বকে যাচ্ছে। রাকিব ম্যানেজারের মাথার উপরে আইসব্যাগ ধরে রেখেছে। ম্যানেজারের নাকি পেসার হাই। তখন স্ট্রক করে বলাতো যায়না। তাই রাকিব আছে ম্যানেজারের সেবায়। নয়না সহ অফিসে বাকি স্টাফগুলো ম্যানেজারের কান্ড দেখছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। কারন ম্যানেজার আগে কখনো রাগেনি। ভূমিকা নয়নার পাশে দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে। প্রথম দিনেই তার কারনে অফিসে এমন হোলস্থুল কান্ড হবে এটা তার ধারনার বাইরে ছিলো। আর এই ম্যানেজারটাও একদিনেই ভূমিকাকে পাগল বানিয়ে ফেলছে। সারাক্ষণ শুধু বউয়ের গল্পে। কিছুক্ষণ পর একরাশ মন কাখাপ নিয়ে অফিসে প্রবেশ করলো আরাভ। ছোট ছোট পা ফেলে পকেটে দুহাত পুরে মাথা নিচু করে হাটছে সে। আরাভকে দেখেই ম্যানেজার হন্তদন্ত হয়ে আরাভের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। অতঃপর বলল,
-এই যে বাবা আরাভ, এমন একটা কর্কশ মেয়েকে আমার সাথেই কেন দিলে। অফিসে তো আরো অনেক স্টাফ আছে তাদের সাথে দিতে পারো নি। জানো, এই মেয়েটা কত বড় ঠেঁটা, আমাকে বলে আমি নাকি টুকে টুকে পাশ করেছি।
-ম্যানেজারের কোন কথায় আরাভের কান পর্যন্ত পৌছালো না। সে প্রেমপরায়ণ দৃষ্টিতে ভূমিকার মুখ মণ্ডলের দিকে তাকালো। ভূমিকা তখন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলো।
চলবে,,,,,
#লেখিকা- মাহফুজা আফরিন শিখা।
[বিঃদ্রঃ- পুরো গল্পটা না পড়ে কেও বাজে কমেন্ট করবেন না। আসসালামু আলাইকুম ]