#ভাগ্য ৯ পর্ব
জামাই ইঞ্জিনিয়ার অনেক টাকা রোজকার করবে, হয়তো জামাইয়ের টাকায় বসে খেতে পারবে, সেই আশায় আমার মায়ের মুখ ঝলমল করছে।
আমার মা বাবার রুপ পাল্টে গিয়েছে, আমাকে আর নিধিকে কি আদর, কোল থেকে নিধিকে নামাতেই চায়না।
মনে মনে ভাবি স্বার্থের জন্য মানুষ কতটা বদলে যেতে পারে।
মা ইমাকে ফোন করে জানালো আমি বিদেশ থেকে আসছি, আর সবার জন্য অনেককিছু নিয়ে এসেছি। ইমা তার স্বামীকে নিয়ে চলে আসল, আমি তো জানতাম না ইমার বিয়ে হয়েছে, তাই তার বরের জন্য কিছু আনিনি। ইমার হাতে তিন হাজার টাকা দিয়ে বললাম তোর বরকে এই টাকা গুলো দিয়ে বল শপিং করতে, ইমা খুব খুশী তার বরকে শপিং করতে টাকা দিয়েছি বলে।
আপু শুনলাম দুলাভাই ইঞ্জিনিয়ার, আর দেখতেও বেশ সুন্দর, তোর তো সেই কপাল রে, ভালোই করেছিস আদিব শয়তানকে ছেড়ে দিয়ে, এখন তুই ইঞ্জিনিয়ারের বউ, দুলাভাই অনেক টাকা ইনকাম করবে, সব টাকা তোরই হবে, তুই চাইলে মা বাবাকে আমাদেরকে সাহায্য করতে পারবি।
এখন বলছিস আদিব শয়তান ছিল, আমি তোদেরকে কতবার বলেছি আদিব আমাকে অত্যাচার করে, তোরা কি বলছিল, ওইরকম অত্যাচার সব স্বামীরাই করে।
ইংল্যান্ড যাবার আগে মাকে বলছিলাম, আমি ইংল্যান্ড যাবো না, সেদিন মা আমাকে অনেক কথা শুনিয়েছে, মনে ত্যাগ দিয়ে আদিবের সাথে ইংল্যান্ড গিয়েছিলাম, ভাবছি বাঁচলে বাঁঁচব মরলে মরব।
আদিব আমাকে অন্য পুরুষের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিল, আমি সেদিন পালিয়ে গিয়েছি, আমার ভাগ্য ভালো হাসিবের মত মানুষের সাথে দেখা হয়েছিল, সে আমাকে আশ্রয় না দিতে এতদিনে হয়তো মরে যেতাম নয়তো কোনো পতিতালয়ের বাসিন্দা হয়ে থাকতাম।
আর সাহায্যের কথা বলছিস, আমি কি করে সাহায্য করব, টাকা ইনকাম করবে হাসিব সে যদি চায় মা বাবাকে তোদেরকে সাহায্য করতে করবে।
তার আদেশ ব্যতীত আমি কিছু করব না, কারণ সে আমার কাছে অনেক মূল্যবান একজন মানুষ।
ইমার মুখ কালো হয়ে গেল আমার কথা শুনে, সে আর কিছু বলল না।
মিলি নিধিকে কোল থেকে নামাতেই চায়না, অনেক আদর করছে মিলি নিধিকে।
নিধি বারবার পাপ্পা যাবো পাপ্পা যাবো বলছে, ভাবছি হাসিবকে ফোন দেবো কি না, সে তো তার বাসায় আছে এখন কি ফোন দেওয়া উচিত হবে, কিন্তু এইদিকে নিধি আর জন্য কান্না করছে।
তখনি হাসিব ফোন দিয়ে বলল,
আমি কাল সকালে আসব তোমাদের নিয়ে যেতে,
নিধি কেমন আছে, খুব মিস করছি নিধিকে।
সে তোমার জন্য খুব কান্না করছে এখনো ঠিকমত না খেয়ে ঘুমাইছে।
আচ্ছা আমি এখনি আসছি,
এই কথা বলেই হাসিব ফোন রেখে দিলো, আমি বললাম এতো রাতে আসার দরকার নেই সকালেই এসো, সে আমার কথা শুনলো না।
আধা ঘণ্টা পর হাসিব এসে দরজায় নক করছে, মা গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে জানতে চাইলো, জামাই তুমি এতো রাতে কোন সমস্যা হয়েছে কি।
হাসিব মাকে বলল, না মা কোন সমস্যা না, ইসরাত বলল, নিধি আজ সারাদিন আমার জন্য কাঁদছে, রাতেও ঠিকমত খায়নি, তাই চলে আসলাম, সকালে ইসরাতকে আমার বাসায় নিয়ে যাবো।
হাসিবের মেয়ের প্রতি এমন টান দেখে মা বাবা বেজায় খুশী, বাবা বলে, ভাগ্য করে এমন স্বামী পেয়েছি, যার স্ত্রীর প্রতি সন্তানের প্রতি এত ভালোবাসা, সে মানুষ হিসেবে অবশ্যই অনেক ভালো।
হাসিবকে বললাম, তুমি কি পাগল এতরাতে কেন আসলে, আসার সময় আম্মা আব্বাকে বলে আসছ, না হলে তো সকালে তোমাকে রুমে না পেয়ে খুঁজবে।
আম্মু ঘুমিয়ে গিয়েছে, আব্বু টিভি দেখছিল, বললাম, আব্বু নিধি আমার জন্য কাঁদছে, আমি এখন নিধির কাছে যাচ্ছি সকালে তাদেরকে নিয়ে চলে আসবো।
আব্বু বলেছিল, সকালে যেতে পারতি এতো রাতে না যেয়ে, আমি চলে আসলাম।
হাসিবের কাছে জানতে চাইলাম, আম্মা আব্বা আমাকে মেনে নিলো, এটা তো আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা।
প্রথমে তো খুব রাগারাগি শুরু করে আব্বু পরে সব বুঝিয়ে বললাম, বলছি ভুল করে ফেলছি ক্ষমা করে দাও, নিধির পিক দেখালাম তোমার পিক দেখালাম।
নিধির পিক দেখে আম্মু আব্বু শান্ত হয়ে গেল, আম্মু আব্বুকে বলল, দেখো হাসিব কিন্তু ছোট বেলা দেখতে এমন ছিল, হাসিবের মেয়ে হাসিবের মত হয়েছে, আর রাগ করে কি হবে, ছেলের বউ আর নাতীকে মেনে নাও।
ভাইয়া ভাবী একটু প্রতিবাদ করেছিল, আব্বু ধমকে দিয়েছে, পরে আর তারা কিছু বলেনি, আব্বু বলেছে কাল তোমাদেরকে বাসায় নিয়ে যেতে।
হাসিবের বাসায় আমাকে মেনে নিতে রাজী হয়েছে শুনে আমার বুকের উপর থেকে একটা পাথর নেমে গেল, আমি ভেবে নিয়েছিলাম, হাসিবের মা বাবা আমাকে মেনে নিবেনা।
আজ প্রথম আমি হাসিব এক বিছানায় শুয়েছি, এখন থেকে এক বিছানায় থাকতে হবে, না হলে তো সবাই বলবে স্বামী স্ত্রী হয়ে কেন আমরা এক বিছানায় ঘুমাই না।
নিধি মাঝখানে আমি আর হাসিব দুইজন দুই পাশে, হাসিব বলল, ইসরাত তোমার মনে হয় সংকোচ লাগছে আমার সঙ্গে ঘুমাতে।
আজ রাতটা কোনমতে কাটিয়ে দাও আমার বাসায় গেলে একসঙ্গে থাকা লাগবে না, আমার রুমে সোফা আছে আমি সেখানেই ঘুমাবো, তুমি নিধিকে নিয়ে খাটে ঘুমাবে।
তুমি এতটাই সাধুপুরুষ নিজের স্ত্রীকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাও, আমাকে কি তুমি ভালোবাসো না, কেন দূরে সরে থাকতে চাও, বিয়ে করছ কিন্তু স্ত্রীর অধিকার এখনো দাও না, আমি কি এতটাই নগন্য যে তোমার স্পর্শ পাওয়ার যোগ্যতা আমার নেই।
হাসিব আমার মুখে হাত চাপা দিয়ে ধরে ফেলে বলল, আর লজ্জিত কর না আমাকে, এখানে না, আমার বাসায় যাই সব হবে।
হাসিব নিধিকে তার বুকের উপর তুলে নিলো নিধি হাসিবের বুকের উপর ঘুমাচ্ছে, হাসিব একটা হাত আমার গলার নিচে দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি তার আরেকটা হাতে আমার হাত রেখে ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালে নাস্তা করে হাসিব আমাদেরকে নিয়ে তার বাসায় গেল, পল্লবীতে তার বাসা, বাসার ভিতরে অনেক সুন্দর, অনেক ফুল ফলের গাছ লাগানো চারদিকে।
বাসার ভিতর ঢুকতেই হাসিবের আম্মু এসে নিধিকে কোলে নিলো, শ্বশুর শাশুড়ীকে সালাম করলাম, হাসিবের ভাবী হাসিবকে বলল, এমন মেয়ে বিয়ে করেছ পছন্দ করে, কি রুচি তোমার।
হাসিব তার ভাবীকে বলল, আপনার গায়ের রঙ ফর্সা বলেই কি আপনি নিজেকে সুন্দরী ভাবেন, একবার ইসরাতের সাথে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখেন কে সুন্দরী, ইসরাতের গায়ের রঙ আপনার চেয়ে একটু কালো কিন্তু ফেস আপনার চেয়ে সুন্দর।
আচ্ছা থাকো তোমার সুন্দরী বউ নিয়ে আর কখনো কিছু বলব না, এই কথা বলে হাসিবের ভাবী রুমে চলে গেল।
ভালোই যাচ্ছে আমাদের সংসার, এখন আমার শ্বশুর শাশুড়ী আমার প্রতি দারুণ খুশী, কারণ আমি সংসারের দায়িত্বগুলো নিজ হাতে তুলে দিয়েছি।
কাজের মেয়ে থাকা সত্বেও রান্না আমি করি, সকালে বিকালে চা করে দেই শ্বশুর শাশুড়ীকে তাদের সেবাযত্ন করি।
ভাবী কোনো কাজ করে না, খাবার সময় খায় আর সারাদিন টিভি দেখে মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকে, তার একটা বেবি আছে ছয় বছর, নাম ইফাত, তার দেখাশোনা আমার শাশুড়ী করে। আমি যখন নিধিকে খাওয়াই তখন ইফাদকেও খাইয়ে দেয়, ইফাদ আমাকে ছোট আম্মু বলে ডাকে।
হাসিব সরকারি চাকরি পেয়েছে আইটি সেক্টরে, সে সংসারের সমস্ত খরচ দেয়, আগে আমার ভাসুর সব খরচ দিতো।
এখন আমার ভাসুর, শ্বশুরকে বলে, তোমার ছেলেকে বিদেশে লেখাপড়া করিয়ে ইঞ্জিনিয়ার বানাইছ, সে এখন, সরকারি চাকরি করে, অনেক ভালো বেতন পায়, তাকে বল সব খরচ চালাতে।
হাসিব তার বেতনের বেশির ভাগ টাকা তার বাবার হাতে তুলে দেয়, আর বাদবাকি টাকা আমার কাছে রাখে।
আমি টাকা আমার কাছে রাখতে চাইনি, হাসিব বলে আমার টাকা মানে তোমার টাকা, যখন ইচ্ছা করবে খরচ করবে।
সে বলেছে খরচ করতে, কিন্তু আমার খরচ করার প্রয়োজন পড়ে, না চাইতেই সবকিছু পেয়ে যাই।
আজ শুক্রবার ছুটির দিন, হাসিব আমাকে রেডি হতে বলল।
কেন জানতে চাইলাম,
সে বলল, নামাযের পর নুহাশ পল্লী ঘুরতে যাবে।
বিকালে নুহাশ পল্লীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম, নিজেদের গাড়ি করে। সাথে ইফাদকে নিয়ে গেলাম।
নুহাশ পল্লী থেকে ঘুরে আসতে রাত আটটা বেজে গেছে, এসেই হাসিব বিছানায় শুয়ে পড়ল, নিধিও ঘুমিয়ে পড়ছে।
আমি শাড়ি চেঞ্জ করে আসতেই হাসিব আমাকে টান মেরে তার বুকের উপর নিয়ে নিলো, বললাম কি করছ দরজা লক করা হয়নি।
হাসিব বলল, তাতে কি আমার বউকে আমি আদর করব, কে আসবে আমার রুমে।
আমি জোর করে ছাড়িয়ে দরজা লক করে আসলাম।
চলবে,,,
সাদমান হাসিব সাদ