#ভালোবাসতে_চাই_প্রিয়_তোমাকে
#পর্ব_দশম
#লেখিকা_দিয়া
কলিং বেল বেজে উঠলো । মিনি গিয়ে দরজা খুলতেই ভিতরে যারা প্রবেশ করে তাদের দেখে আমি অবাকের চরম পর্যায়ে চলে যাই দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আম্মা আর আব্বা মানে শুভ্রের আম্মু আব্বু।কতদিন পর মানুষ দুজনকে দেখলাম । আসার আগে যদি ও শাশুড়ী আম্মার সাথে দেখা হয়েছিল। কিন্তু আব্বা আসার আগেই তো আমি চলে আসি।আমি এখনো অবাক দৃষ্টিতে তাদেরকে দেখেই যাচ্ছি। তারা ভিতরে ঢুকতেই রিনি মিনি তাদের সালাম দেয়।শাশুড়ী আম্মা আমার দিকে এগিয়ে এসে বলতে লাগে,
তা মা এত বড় সিদ্ধান্ত টা যে নিলে তুমি একবার তো পারতে আমাকে জিজ্ঞেস করতে।আমাকে জিজ্ঞেস করলেই তো আর এত বড় ভুল বোঝাবুঝি হতো না।হ্যা আমি মানছি শুভ্রের দোষ রয়েছে। তোমার থেকে সমস্ত কিছু লুকানো ওরর মোটেও উচিত হয়নি।স্বামী স্ত্রীর মাঝে এসব লুকানো কথা বার্তা থাকতে নেই।তবুও এত বড় শাস্তি আমার ছেলেটাকে না দিলে ও পারতে মা। পাঁচ টা বছর আমার ছেলেটা গুমরে গুমরে মরেছে মা।ওর অবস্থা দেখে তো তুমি বুঝতে পারছো ও নিজেকে কতটা ভালো রেখেছে। কতটা খেয়াল রেখেছে নিজের।এবার অনেক মান অভিমান হয়ে । এখন তোমরা এসব শেষ করো।এই বুড়ো বয়সে এসব কি আমরা মানতে পারি বলো।আমরা আর কত দিন বলো। আজ আছি কাল না ও থাকতে পারি।মরার আগে যদি ছেলেটাকে গুছানো না দেখে যেতে পারি তাহলে যে আমি মরে গিয়ে ও শান্তি পাবনা মা।আমি জানি তোমার সাথে আমিও অন্যায় করেছি আমি।তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। দয়া করে তুমি এসব মনে রেখো না – হাত জোর করে বললো শাশুড়ী আম্মা
আমি তারাতাড়ি উনার হাত নিচু করে বলতে লাগলাম,
একি করছেন আপনি আম্মা।আমার মনে আপনাকে নিয়ে কোনো রাগ নেই বিশ্বাস করেন।সেই কবেই আমি সবকিছু ভুলে গিয়েছি – আমি
আমি নাতি টা কোথায় বউমা ? – শশুড় আব্বা
ও তো উপরের রুমে।রিনি যা তো বোন শুভকে নিয়ে আয়।ওকে গিয়ে বল নিচে ওর জন্য সারপ্রাইজ আছে। ও যেন জলদি আসে – আমি
ওকে আপু যাচ্ছি – বলে রিনি উপরে চলে গেল শুভকে আনতে।
মিনি আমি মোটামুটি সব সাজিয়ে রেখেছি।বাকি যা যা আছে তুই গিয়ে একটু করে ফেল না বোন।অনেক বেলা হয়ে গেছে আর কেউ এখনো খাবার খায়নি দুপুরে – আমি
আচ্ছা আপু তুমি চিন্তা করো না।আমি বাকি সব কিছু গুছিয়ে তোমাদের ডাক দিচ্ছি – বলে মিনি রান্না ঘরে চলে গেলো।
মাম্মি ও মাম্মি কি সারপ্রাইজ। জলদি বলো আমাকে – সিড়ি দিয়ে জলদি দৌড়ে নিচে আসতে আসতে বললো শুভ
আস্তে দৌড়াও শুভ।পরে যাবা তো।পরে গেলে কতটা ব্যাথা পাবা ভেবেছো তুমি – আমি
উফ মাম্মা আমি হচ্ছি হিরো। আর হিরোরা কখনো পরে যায় কোথাও শুনেছো তুমি? – কোমরে দুই হাত গুঁজে গাল ফুলিয়ে বললো শুভ
শুভের কথা শুনে ড্রইং রুমে উপস্থিত সকলে উচ্চ স্বরে হেসে দিল।এতক্ষণ পর হাসির শব্দ পাওয়ার পরে শুভ আম্মু আব্বুকে খেয়াল করলো।ওর চেহারা দেখেই আমি বুঝতে পারছি ও কাউকে চিনতে পারছে না।না চেনাটাই অবশ্য ঠিক।ও তো কখনো দেখে ও নি তাদের।চিনবেই বা কেমন করে।শুভ কৌতুহলী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তাই আমি ওকে বলতে শুরু করলাম,
শুভ এটা হচ্ছে তোমার ঠাম্মি ( আম্মাকে দেখিয়ে) আর এটা হচ্ছে তোমার দাদা ( আব্বাকে দেখিয়ে)- আমি
মাম্মা রিয়েলি তুমি সত্যি বলছো।সত্যিই এরা আমার গ্যান্ডমা আর গ্যান্ডপা – শুভ খুশি হয়ে বলে উঠলো।
হ্যা শুভ। আর তোমার পাপা কে আমার কাছে জানতে চেয়েছিলে না ? শুনবা কে তোমার পাপা? – আমি
ইয়েস মাম্মা জলদি বলো কে আমার পাপা – আগ্রহী কন্ঠে বলে উঠলো শুভ
ওই যে তোমার সুপার হিরো – শুভ্রকে দেখিয়ে বললাম আমি
মাম্মা তার মানে সুপার হিরোই হচ্ছে পাপা ? – শুভ
হ্যা শুভ তোমার সুপার হিরোই হচ্ছে তোমার পাপা – আমি
পাপা – বলে শুভ দৌড়ে গিয়ে শুভ্রের কোলে উঠে পরলো।
শুভ্র ও বেশ আদরেই নিজের ছেলেকে কোলে তুলে নিলো।তারপর আম্মা আব্বা শুভ্র শিহাব রনি সবাই শুভর সঙ্গে দুষ্টুমিতে মেতে উঠলো।অন্য দিকে আমিও এগিয়ে গিয়ে রিনি মিনির সঙ্গে হাতে হাতে সব কিছু গুছাতে লাগলাম।একটু সময়ের মাঝেই আমাদের সব গুছানো শেষ হয়ে গেল।তারপর আমি এসে সবাইকে ডেকে নিয়ে গেলাম খাওয়ার জন্য। বেশ জমজমাট পরিবেশের মাঝেই সকলে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলো।তারপর আবার ড্রইং রুমে সকলের গল্প আড্ডা চলতে লাগলো।আজ বেশ অনেক দিন পরে আমার বাড়িটা আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। বাড়িটা যেমন আবার নতুন করে নিজের প্রাণ ফিরে পেয়েছে। সন্ধ্যার দিকে রনি আর শিহাব চলে গেলো।আব্বু আম্মু রনি রিনি শিহাব আর মিনিদের বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত এখানেই থাকবে।বিয়ে শেষ হওয়ার পরে আমরা সবাই একসঙ্গে ঢাকা ফিরে যাব।আর এই বাসাটা কোনো এক ভালো ফ্যামেলি দেখে ভাড়া দিয়ে দিব।শুভ্র যাওয়া আসার উপরে থাকবে।কারণ হঠাৎ করে তো আর এতদিনের ছুটি পাওয়া সম্ভব নয় আবার ওদের বিয়েতে ও বেশ কয়দিনের ছুটি নেওয়া লাগবে।আর ভেবেছি আমার জুয়েলারি শপের একটা ব্যাঞ্চ ঢাকায় খুলে ফেলব যত জলদি সম্ভব। ওখানে থেকেই আমি প্রায় সব দেখাশোনা করবো।আর মাঝেমধ্যে সিলেটে এসে এদিকটা ও দেখে যাব।শুভ আজকে বায়না ধরেছে সে তার গ্যান্ডমা আর গ্যান্ডপার সঙ্গে ঘুমাবে।তাই আমি ওর জিনিসপত্র নিয়ে ওকে আম্মু আব্বুর রুমে গুছিয়ে দিয়ে আসলাম।রুমে ঢুকতে যাব দেখি দরজা লক।নক করতেই ও পাশে থেকে দরজা খুলে যায়।কিন্তু একি পুরো রুম অন্ধকার। হঠাৎ করে পুরো রুমে মোমবাতি জ্বলে উঠে। আর পিছনে থেকে শুভ্র বলতে লাগে,
চলবে🥰