#ভালোবাসতে_চাই_প্রিয়_তোমাকে
#পর্ব_চতুর্থ
#লেখিকা_দিয়া
ইশিতা দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো এবং শুভ্রকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,
আই মিস ইউ শুভ। আই মিসড ইউ সো মাচ ডিয়ার। কেমন আছো তুমি?- ইশিতা
হঠাৎ ইশিতা এসে এভাবে জড়িয়ে ধরায় শুভ্র তাল সামলাতে না পেরে পিছন দিকে কিছুটা হেলে পড়ে।তারপর বিরক্তি সহকারে নিজের থেকে ইশিতাকে সরিয়ে দিয়ে রাগী কন্ঠে বলে উঠলো,
এটা কি ধরনের বিহেভ ইশিতা ? এভাবে জড়িয়ে ধরার কি আছে ? আর বড় ভাই হই তোমার আর বড় ভাইয়ের সাথে কেমন আচরণ করতে হয় এটা তো তোমার জানাই। আমার আর বলতে হবেনা এই কথা।পরের বার কথাটা মাথায় রেখে তারপর আমার ধারে কাছে এসো – বলে শুভ্র ইশিতাকে পাশ কাটিয়ে রুমে চলে আসলো
আর আমি আগের জায়গায় দাঁড়িয়েই ইশিতাকে দেখছিলাম।ইশিতা শুভ্রের কথা শুনে যে রেগে বোম হয়ে গেছে এটা ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। বেচারির মুখ রাগে অপমানে পুরো লাল হয়ে গেছে।ইশিতা আমার দিকে এগিয়ে এসে বলতে লাগলো,
ভালোই তো বশ করেছো আমার শুভ্রকে। আমি ও দেখবো আর কয়দিন থাকতে পারো এ বাড়ির বউ হয়ে। আমি এবার এসেছি আমার শুভ্রকে আমার করেই ছাড়বো।তোমার কোনো যোগ্যতা আছে ওর পাশে দাড়ানোর।শুভ্র আমার মতো আধুনিক মেয়ে পছন্দ করে।দেখেছো আমাকে আমরা দুজন একসাথে দাঁড়ালে সবাই বলতে মেইড ফর ইচ আদার।তুমি শুভ্রের নখের ও যোগ্যতা রাখোনা।এত দিন হয়ে গেলো বিয়ের এখনো শুভ্রকে বাবা হওয়ার আনন্দ টা ও তো দিতে পারলে না।সত্যি কর বলো তোমার কোনো সমস্যা নেই তো।মা হতে অক্ষম না তো তুমি। – ইশিতা
এতক্ষণ চোখ বন্ধ করে আমি ইশিতার কথাগুলো হজম করছিলাম।কিন্তু হঠাৎই কারোর থাপ্পড় দেওয়ার শব্দে চমকে গিয়ে চোখ খুলে দেখি সামনে ইশিতা গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে।আমার পাশে তাকাতেই দেখলাম শুভ্রকে। ঘটনাটা বুঝতে আমার খুব বেশি বেগ পেতে হলো না। ইশিতার দিকে তাকিয়ে আমি নিজেই ভয় পেয়ে গেলাম।মেয়েটার গালে শুভ্রের পাঁচ আঙুলের ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। ততক্ষণে আম্মা খালামনি আর খালু ও রুমে থেকে বেরিয়ে ড্রইং রুমে চলে এসেছে। ইশিতা আম্মার কাছে গিয়ে কান্না করতে করতে বলতে লাগলো,
অপমান করতে হলে সোজাসুজি ভাবেই করতে মামনি।ছেলেকে দিয়ে থাপ্পড় মেরে আর বউমাকে দিয়ে অপমান না করালে ও পারতে – কান্না করতে করতে বলতে লাগলো ইশিতা।
ওর কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমি কখন ওকে অপমান করলাম।শুভের দিকে ফিরে তাকাতেই দেখি শুভ্রের মধ্যে এসব নিয়ে কোনো ভাবাবেগের রেশ পযন্ত নেই।নির্বিকার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে ও যেন এখানে কিছুই হয়নি।কিছু সময় আগে যে ও এতবড় এক কান্ড করলো তা নিয়ে ওর মাঝে কোনো অনুভূতিই নেই।আমি শুধু অবাক হচ্ছি শুভ্রকে দেখে। আমার শাশুড়ী আম্মা রাগী কন্ঠে বলতে লাগলেন,
তোকে কে মেরেছে শুভ্র ? – আম্মা
হ্যা – ইশিতা
তোর এতবড় সাহস তুই ইশিতাকে মারলি।কি কারণে তুই আমার এত বড় মেয়ের গায়ে হাত তুললি।আমার মেয়ের গায়ে আমরাই হাত তুলি না আর তুই কিভাবে পারলি ওকে এভাবে থাপ্পড় মারতে। আর ঝিলিক তোমাকে ও বলিহারি। আমার মেয়ের সাথে তোমার কিসের শত্রুতা শুনি।তুমি কোথা থেকে সাহস পাও আমার মেয়েকে অপমান করার।আমার মেয়ের সাথে তোমার কোনো তুলনা হয়।তুমি নিজের স্থানটা একবার দেখো কোথায় আছো তুমি।তারপর আমার মেয়ের সঙ্গে নিজের তুলনা করতে এসো – খালামনি
আমার বউয়ের স্থান আমি বুঝে নিব খালামনি।তোমার এসব ব্যাপার নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। তুমি বরং তোমার মেয়েকে নিয়ে ভাবো।মেয়েকে তুমি এখন পযন্ত ভদ্রতাই শিখাতে পারলে না।বড়দের সাথে কেমন আচরণ করতে হয়। কিভাবে চলতে হয় তোমার মেয়ে তো এখনো এসবই জানেনা।তুমি আবার এই মেয়ের হয়ে কোন মুখে কথা বলতে আসো – শুভ্র
কি বলতে চাচ্ছিস তুই শুভ্র ? – খালামনি
তুমি এত ও অবুঝ না যে তোমাকে সবকিছু বুখিয়ে বলতে হবে।এক মিনিট আমি তোমাকে একটা জিনিস শুনাই – বলে শুভ্র তার ফোনে থেকে কিছু সময় আগে ইশিতার বলা কথাগুলোর রেকডিং চালু করে দিল।এটা দেখে তো ইশিতার মুখটা একটুখানি হয়ে গেল।তারপর শুভ্র বলে উঠলো,
মা খালামনি এখন কি তোমরা কিছু বলতে চাও ? ইশিতা তোর কিছু বলার আছে ? – শুভ্র।
ইশিতা ছোট শুভ্র ও নাহয় ভুলে একটা দুটো কথা বলে ফেলছে তাই বলে তুই ওকে এভাবে মারবি।ছোট বোন হয় তোর – আম্মা
আপা শুভ্র যা করেছে ঠিকই করেছে।আজকে শুভ্র ভাই হিসেবে ঠিক সময়কে ইশিতাকে শাসন করেছে। অনেক বার বেড়ে গিয়েছিল ও। এটুকু শাস্তির প্রয়োজন ছিল ওর।আমি চাইনা এসব বিষয়ে আর কথা হোক।আর হ্যা উশা ( খালামনি) তুমি আর তোমার মেয়ে কালকে রেডি থেকো আমরা কালকেই বাসায় যাব। আমি আর কিছু শুনতে চাইনা – বলে খালু রুমে চলে গেল।
শুভ্র আমার হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে আসলো।তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো –
আমাকে কি সুযোগ দিবে ঝিলিক তোমাকে ভালোবাসার। আমি তোমাকে চাই ঝিলিক বড্ড কাছে চাই তোমাকে যতটা কাছে এলে দুজন দুজনের সাথে মিশে যেতে পারব আমি ঠিক তোমাকে ততটা কাছে চাই ঝিলিক। ভালোবাসবে আমাকে ঝিলিক – শুভ্র
শুভ্রের কথা শুনে আমার শরীরে এক শিহরণ বয়ে গেলো।আমি সবকিছু ভুলে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম শুভ্রকে।তারপর ধীরে ধীরে দুজনে ডুবে গেলাম ভালোবাসার এক অতল সাগরে।
সকালে ঘুম ভাঙতেই খেয়াল করি আমি শুভ্রের বুকের উপরে শুয়ে আছি।আর শুভ্র দুই হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।এমন ভাবে ধরে রেখেছে যেন ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাব।আমি শুভ্রের কপালে নিজের ঠোঁট জোড়া স্পর্শ করিয়ে আস্তে আস্তে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।
~~~~~~~~
কিছু মাস পর,
বিকেল বাজে ৪ টা
দিন কাল কেমন ভাবে জানি কেটে যাচ্ছে। শুভ্রের সঙ্গে আমার সম্পর্ক টায় এখন কিঢ়ুটা উন্নতি এসেছে ।অনেকদিন ধরে রিনি মিনিকে দেখতে যাওয়া হয় না তাই আজকে সময় পেয়েছি বিধায় বের হয়েছি।মেইন রাস্তায় এসে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছি তখনি মাথাটা একবার চক্কর দিয়ে উঠলো।সকাল থেকেই আজকে শরীরটা অনেক খারাপ। কিছু দিন ধরেই শরীরটা জানি কেমন করছে।কিন্তু আজকে সকাল থেকে বেশি খারাপ লাগছে। হঠাৎই আমি অনুভব করতে পারছিকাম আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। তারপর আমার আর কিছু মনে নেই।
চলবে 🥰🥰