#ভালোবাসা ভালোবাসা
#পর্ব – ০৩
#লেখিকা > জান্নাতুল ইসলাম মাওয়া
অধরা চুপচাপ দাঁড়িয়ে ভাবছে হঠাৎ করেই বললো,বলতে পারতেন কুকুর কামড় দিছে।
-বাহ বাহ নিজেকে কুকুরের সাথে তুলনা করলেন।
-আমি কুকুরের সাথে তুলনা করছি কোথায়?আমি তো শুধু আপনাকে বলতে বলছি।
-আমি মশা বলাতে অনেক রেগে গেলে অথচ নিজেকে কুকুরের সাথে তুলনা খুবই ভালো। বাবা, মা যখন জিজ্ঞেস করতো কুকুর বাসায় ঢুকলো কিভাবে? কুকুর কিভাবে তিন তলায় আসছে?
অধরা বোকার মতো আছে।অধরা এই বোকা বোকা দৃষ্টি অয়নের ভালো লেগে যায়।ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে বিড়বিড় করে বললো,সত্যি তোমাকে অপূর্ব লাগছে।যতো দেখছি ততোই নতুন নতুন করে তোমাকে আবিষ্কার করছি।তোমার সাথে ঝগড়া করতেও ভালো লাগে। কেনো এতো ভালো লাগে তোমার সব কিছু।
-এই যে ভাবছিস কি এতো?
-ভাবছি তুমি কতো বোকা।
-রান্না করুন আমার প্রচন্ড ক্ষুধা লাগছে।
-দেখো আমি রান্না করতে পারি না।
-আপনি রান্না করতে না পারলে অন্যের রান্নায় দোষ কেনো খুঁজেন।আপনাকে রান্না করতেই হবে।
-অয়ন অধরার দিকে তাকিয়ে আছে।
-এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?
-তোমার মনে মায়া বলে কিছু নেই।
-বেশি মায়া ভালো না।তাই কথা কম বলে কাজ করুন। আমি বলে দিচ্ছি আপনি রান্না করেন।
-তাহলে ঠিক আছে।
অধরা পাশে দাঁড়িয়ে থেকে অয়ন কে বলে দিচ্ছে। অয়ন অধরার কথা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে। অয়নের ফোনের রিংটোন বাজতেই অয়ন রান্না ঘর থেকে বের হয়ে আসছিলো।অধরা সামনে এসে দাঁড়ায়, আপনি রান্না করেন। আমি কথা বলে আসি।
-আমার মোবাইলে কল আসছে তোমার না।
-আপনি আর আমি তো একই।আপনার সব কিছুতেই আমার অধিকার আছে।
-আর তোমার সব কিছুতে আমার অধিকার নেই?
-না নেই।আপনি কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না।
অয়ন মন খারাপ করে বললো,তুমি ঠিক বলেছো।আমি কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না।
-আপনি রাগ করছেন?
-আমি রাগ করি না।
অধরা কথা না বাড়িয়ে অয়নের মোবাইল এনে দিলো।ধরেন আপনার মোবাইল।
-কে ফোন করছিলো?
-জানি না।আমি রিসিভ করিনি।
অয়ন ফোন হাতে নিয়ে বের হয়ে গেলো।অন্য রুমে গিয়ে কথা বলে। তাড়াহুড়া করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।অধরা রান্না ঘর থেকে বের হয়ে অয়ন কে খুঁজে পাচ্ছে না।লোকটা গেলো কোথায় আমাকে কিছু না বলে।অধরা পুরো বাসা ঘুরে দেখলো অয়ন কোথাও নেই।অয়নের মোবাইল নাম্বার অধরার কাছে নেই।মিসেস সাহেয়া বসে টিভি দেখছেন।অধরা সোফায় এসে বসলো।
-মা।
-কিরে কি হয়েছে?মুখটা এতো ফেকাসে লাগছে কেনো?অয়ন বকা দিয়েছে?
-না।
-তাহলে কী হয়েছে?
-ওনি বাসা থেকে বের হয়ে গেছে।কোথায় গেছো তুমি জানো?
-বলিস কী?কই আমাকেও বলে যায় নি।
-তোমার কাছে ওনার ফোন নাম্বার আছে?
মিসেস সাহেয়া উঠে গিয়ে মোবাইল এনে অধরা কে ফোন নাম্বার দিলো।অধরা অয়ন কে কল দিয়ে যাচ্ছে। অয়ন কল রিসিভ না করে কল কেটে দিচ্ছে।
-কিরে কল রিসিভ করছে না?
-না কেটে দিচ্ছে।
অধরা বসে আছে অয়নের অপেক্ষায় দিন কেটে সন্ধ্যা নেমে এসেছে।পশ্চিম আকাশে সূর্য ডুবে যাচ্ছে। আকাশ লাল হয়ে আছে।পাখি গুলো এক গাছ থেকে অন্য গাছে ছুটে যাচ্ছে। কিচিরমিচির শব্দে চারপাশ জুড়ে আছে।দল বেধে ছুটে যাচ্ছে নিজের আপন ঠিকানায়। অধরা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে রাস্তার দিকে।অন্ধকার নেমে আসতে আসতে রাস্তার পাশের ল্যাম্পপোষ্টের আলো গুলো জ্বলে উঠেছে।
-অধরা।
অধরা চমকে যায়।আমতা আমতা করে বলে উঠলো, মা তুমি আমার রুমে?
-কেনো আমি আসতে পারি না?
-আসলে তেমন কিছু না।এই সময়ে তাই জিজ্ঞেস করছি।
-অনেক চিন্তিত মনে হচ্ছে।চিন্তা করার কিছু নেই।নাস্তা করতে আসো।
-আমি চিন্তা করছি না।মা আমার খাওয়ার ইচ্ছে নেই।তোমরা নাস্তা করো। আমি পরে খেয়ে নিবো।
-পরে কেনো আমরা একসাথে বসে লুডু খেলবো নাস্তা করবো।
-মা আমার ভালো লাগছে না।
মিসেস সাহেয়া অধরার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়।চায়ের আড্ডা বসলো সবাই।
অভ্র সাহেব সোফায় বসে আছে চুমুক দিয়ে বললো।জানো বউ মা তোমার মা কে যখন দেখতে গেলাম।তোমার মা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।হাত পাঁ কাঁপছিলো।যতো প্রশ্ন করেছি কোনো উওর দেই নি।শুধু একটা প্রশ্নের উওর দিয়েছে।
অধরা আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,কি প্রশ্ন করেছিলে তুমি বাবা?
-জিজ্ঞেস করেছিলাম কয়টা প্রেম করেছিলো।তোমার মায়ের অদ্ভুত আচরণ দেখে আমি পুরো হা হয়ে যাই।
-কেনো বাবা মা কি করছিলো?
-তোমার মা চোখগুলো বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলছিলো।আমাকে দেখে আপনার কি মনে হয়।আমি প্রেম করার মতো মেয়ে।আপনার আমাকে বিয়ে করতে হবে না।এই মূহুর্তে আমাদের বাসা থেকে বের হয়ে যাবেন।
-তারপর তুমি কি বলছিলে?
-আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম। কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না।
-তুমি কিছুই বলো নি?
-বলেছি।
-কী?
-বলেছি আপনাকে রাগলে অনেক সুন্দর লাগে।মনে হয় আগুনে গোলাপ ফুটেছে।
অধরা জোরে জোরে হেসে দেয়।মিসেস সাহেয়া রেগে রুমে চলে যায়।অধরা সবাই কে রাতের খাবার দেয়।
-তুমি খাবে না।
-পরে খাবো।এখন খেতে ইচ্ছে করছে না।
সবাই খেয়ে চলে গেলো।অধরা সোফায় বসে আছে।অয়নের মোবাইলে এখনো কল দিয়ে যাচ্ছে। অয়ন কল ধরছে না।মানুষটা কেমন অদ্ভুত একটা বার কল রিসিভ করে বলে দিলেই তো হয় কোথায় আছে।আমার টেনশন হচ্ছে বুঝতে পারছে না।বুঝার মতো বুদ্ধি ওনার নেই।অধরা দেয়ার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত বারোটা বেজে গেছে।এখনো আসছে না কেনো? কোনো বিপদ হয় নি তো আবার?অধরা সোফায় হেলান দিয়ে বসে থাকতে থাকতে চোখ বন্ধ হয়ে আসে।
অয়ন দরজার সামনে এসে কলিং বেল বাজতেই অধরা চমকে উঠে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।তাড়াতাড়ি করে দরজা খুলে অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে।অয়ন কে ক্লান্ত মনে হচ্ছে। অধরা প্রশ্ন করলো,কোথায় ছিলেন আপনি?সেই সকালে বাসা থেকে বের হয়েছেন রাত বারোটা বাজে এখন বাসায় ফিরলেন। কোথায় ছিলেন এতোক্ষণ?
-তোমার না জানলেও চলবে।
-অবহেলা করছেন?
অয়ন হেসে দিয়ে বললো,তোমাকে অবহেলা করার মতো সাধ্য কারো নেই।আমি তোমাকে অবহেলা করছি না।
-তাহলে বলছেন না কেনো কোথায় গেছেন?
-আমি অনেক ক্লান্ত এক কাপ কফি হবে কি মেডাম?
-রাতে খাবেন না?
-আমি খেয়ে এসেছি।তুমি খেয়েছো।
অধরা মুখ কালো করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
-বললে না।
-খেয়েছি।
-আমাকে ছাড়া খেয়ে নিলে?
-আপনিও আমাকে রেখে খেয়ে নিয়েছেন।
-আমি খেয়েছি কে বললো?
-আপনি তো বললেন।
-আমি খাই নি।মিথ্যে বলেছি।
অধরা এবার খেপে যায়।চোখগুলো লাল করে অয়নের দিকে তাকিয়ে বললো,আমিও মিথ্যে বলছি।কিন্তু আপনি আগে মিথ্যে বলেছেন।আমি এখনো খাই নি আপনার জন্য অপেক্ষা করেছি।
-আমি মিথ্যে বলিনি।আমি সত্যি খেয়ে এসেছি।মিথ্যে বলে তোমার পেট থেকে সত্যি কথা বের করেছি বুঝলে।খেয়ে নেও রাত অনেক হয়েছে।
-আমার ইচ্ছে করছে আপনাকে ইচ্ছে মতো মারতে।
-কেনো?
-রাগ হচ্ছে আমার অনেক।
-রাগ হওয়া ভালো।
-আমি খাবো না।
মিসেস সাহেয়া এসে অয়নের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।অয়ন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।অধরা মায়ের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ অদ্ভুত আচরণ করার মতো কোনো কারন অধরা খুঁজে পাচ্ছে না।মিসেস সাহেয়া কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে শুরু করেন।অয়ন ও চোখের পানি জড়াচ্ছে। অধরা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে কি হচ্ছে কিছুই অধরা বুঝছে না।
-মা তুমি কেনো কান্না করছো?
মিসেস সাহেয়া জবাব দিলেন না।কান্না করেই যাচ্ছেন। অধরা অয়ন কে জিজ্ঞেস করলো, কী হয়েছে?অয়ন আঙুল দিয়ে অধরা কে চুপ থাকতে বললো।
চলবে…
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।