#ভালোবাসার_অনূভুতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্ব__2
“”” আজ কিছু চাইব প্রথম এবং শেষ বারের মতো আর কখনো কিছু চাইব না প্রমিস।আমাকে প্রমিস কর যা চাইব তাই দেবে।”””
মেঘ হাত বাড়িয়ে দিল তার চাচ্চুর দিকে,,,শফিক রহমান কাপাকাপা হাতে মেঘের হাতের উপর হাত রাখল তারপর বলল
“কথা দিলাম,,যা চাইবে তাই দেব।তারপর হাতটা মেঘের মাথায় রেখে বলল,,,জেরিন প্রেগনেন্ট,,,তাই যা চাইবে ভেবে চিন্তে চাইবে এমন কিছু চেও না। যা দিতে গিয়ে আমাকে সারাজীবন সবার কাছে অপরাধী হয়ে থাকতে হয়।”
মেঘ ছলছল চোখে তার চাচ্চু দিকে তাকালো। সে বুঝলো তার চাচ্চু তাকে কি বলতে চাইছে। তার চাচ্চু হয়তো ভেবেছে সে আবিরকে বিয়ে করতে চাইবে ।মেঘের এবার ভীষন কান্না পাচ্ছে । ওর চাচ্চুও ওকে ভুল বুঝলো ।মেঘ ধরা গলায় বলল
” চাচ্চু তোমার কি আমাকে এতটাই স্বার্থপর মনে হয়।আমি এতটাও খারাপ না চাচ্চু।অবশ্য তোমাদের কোনো দোষ নেই সব দোষ আমার,,,,,আমি হয়ত তোমারদের বিশ্বাস অর্জন করতে পারিনি।যাই হোক তোমাকে অসম্মানিত হতে হয় এমন কিছু চাইব না। আমি চাই আবির ভাইয়া আর জেরিন এর বিয়েতে তুমি রাজি হও। ওদেরকে বিয়ে দাও।ওরা একটা ভুল করেছে,,তার শাস্তি তো আর বেবি কে দিতে পারি না। এখানে বেবিটার তো কোনো দোষ নেই।শুধু শুধু সে কেন তার বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হবে। তাই তুমি বিয়েতে আর অমত করো না প্লিজ।”
সবাই এতক্ষণ মনেযোগ দিয়ে মেঘের শুনছিল,,,সবটা শুনে সবাই ভীষন অবাক হল,,,অবাক চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে রইল সবাই। কেউ ভাবতেও পারেনি,,, মেঘ শফিক রহমান কে বিয়েতে রাজি হওয়ার কথা বলবে। শফিক রহমান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মেঘের মুখের দিকে।
মনে মনে বলল,,,
এই মেয়েটার মনটা যে ফুলের মত পবিত্র । এই জন্য তিনি আবির এর সাথে বিয়ে দিয়ে ঘরের লক্ষী করে আনতে চেয়েছিলেন মেঘকে।কিন্তু তার ছেলে হিরে ফেলে কাচের পিছনে ছুটছে।ভাবতেই একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল শফিক রহমান।তারপর মেঘের দিকে তাকিয়ে বলল,,,
“ঠিক আছে আমি এই বিয়ের অনুমতি দিলাম।তারপর মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন আমাকে ক্ষমা করে দিস মা,,,আমি তোর সাথে অন্যায় করেছি। আমার ছেলে তোর যোগ্য না মেঘ। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তোর জীবনে এমন কাউকে পাঠাক যে তোকে খুব ভালোবাসবে।তোর যত্ম নেবে । কখনো তোকে কষ্ট পেতে দেবে না ।”
তারপর চেয়ার থেকে দাড়িয়ে,,,আবিদা রহমান এর দিকে তাকিয়ে শক্ত গলায় বললেন
“তো বিয়েটা দিয়ে দাও নিজের ছেলের।আর আমাকে এই বিষয়ে একদম জরাবে না। তোমরা মা ছেলে যা খুশি তাই করো।”
“আবিদা রহমান… শিহাব রহমানের ( মেঘের মেজ চাচা)এর দিকে তাকিয়ে বলল শিহাব কাজি কে আবার ফোন কর।এখনি আসতে বল। ”
তাদের কথার মাঝে জেরিন বলল
“এখন কাজি কেন আসবে?বিয়ে কী এখনি হবে?”
আবিদা রহমান আল্লাদি গলায় জিঙ্গেস করলো
“হ্যা। কেন মামনি কোন সমস্যা?”
জেরিন তারাতাড়ি করে জবাব দিলো
“না না মামি কোন সমস্যা নেই।আমি রেডি হয়ে আসি।”
“আচ্ছা যাও। খুব সুন্দর করে সাজবে কিন্তু।আমার একমাএ ছেলের বউ বলে কথা।কোনো কিছুতে যেনো কোনো কমতি না থাকে।”
জেরিন ঘুরে যেতে নিলে,, পিছন থেকে মেঘ বলে দাড়া জেরিন।জেরিন ঘুরে দাড়ায়,,,তারপর মেঘ জেরিনের সামনে গিয়ে দাড়ায়,, জেরিন এর চোখে চোখ রেখে বলে
“আমি তোকে এটা জিঙ্গেস করব না,,,তুই আমার সাথে এগুলো কেন করলি।শুধু বলব thank you so much. তুই আজকে বন্ধুত্বের মানে বদলে দিলি রে। আজকে আমার বোন আমার লাইফের বেষ্ট উপহার টা দিলো। সবার সামনে এটা প্রমান করলো আমি একটা ক্যারেকটারলেস মেয়ে।এটা আমার লাইফের সবচেয়ে বেষ্ট গিফট।আজকের পর থেকে হয়তো আমি আর কাউকে কখনো বিশ্বাস করতে পারবো না। এন্ড তার জন্য thanks to you.
আল্লাহ্ যেন কাউকে হাজারটা শএু দিয়ে দিক। কিন্তু তোর মতো বন্ধু যেন কাউকে কক্ষনো না দেয়।”
একটু থেমে শুকনো গলায় আবার বললো
“আরে একবার বলতি যে তুই আবির ভাইয়াকে ভালোবাসিস ।আমি নিজে সবাইকে তোদের বিয়ের জন্য রাজি করাতাম। এত অপমান না করলেও পারতি।পরি শেষে একটা কথাই বলব খুব ভালো থাকিস আসি।”
শেষের কথা গুলো বলার সময়,, মেঘের খুব কান্না পাচ্ছিল ,,,সে জেরিন কে আরও কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু পারে নি,,,আরও কিছু বললেই সে কেদে দিত ,,, কিন্তু মেঘ এখন কারো সামনে কাদতে চায় না। সে সবাইকে দেখাতে চায় যে সে কতটা strong,,,,তাই সে কথাগুলো বলেই দৌড়ে চলে গেল ।তার পিছনে মিহিরও দৌড়ে গেল।
জেরিন কে দেখে মনে হচ্ছে না ,,,,,যে সে যা করেছে তাতে তার কোন অনুশোচনা আছে।সে একটা ভেংচি কেটে ,,, সাজতে চলে গেল।আজম আর মিড়া রহমান চলে গেলেন ছেলে মেয়ের পিছনে।শফিক রহমান তার রুমে গিয়ে ঠাস করে দরজাটা বন্ধ করে দিলেন।
🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵🏵
মেঘ দৌড়ে এসে তাদের ফ্লাটে ডুকল। তার পিছনে পিছনে মিহিরও আসল,,,মিড়া রহমান ও আজম রহমানও আসল। তাদের ফ্লাটটা দুইটা তলা নিয়ে করা,,,আসলে এই ব্লিল্ডিনটা 11 তলা।
এক তলা আর দুই তলা মেঘের বড় ফুফুর।
তিন তলা আর চার তলা মেঘের ছোট ফুপির।
তাদের দুই বোনের ফ্লাট ভাড়া দিয়ে দিয়েছেন।কারন তারা এখানে থাকে না। শ্বশুর বাড়ি থাকেন। যখন বেড়াতে আসেন তখন ভাইদের বাসায় থাকেন।
পাচ তলা ও ছয় তলা শফিক রহমান এর।সাত তলা আট তলা শিহাব রহমানের (মেঘের মেজ চাচ্চু)।আর নয় তলা দশ তলা আজম রহমানের।11 তলায় ছাদ,, ছাদের এক পাশে একটা সুইমিংপুল,,,আরেক পাশ খালি।
মেঘের বড় ফুপির দুই মেয়ে। বড় মেয়ে জিয়া।আর ছোট মেয়ে জেরিন।জিয়ার বিয়ে হয়ে গেছে এক বছরের একটা ছেলে আছে।
ছোট ফুপির এক ছেলে কলেজের টিচার,,, তার নাম রিফাত,,, সে কিছু দিন আগেই বিয়ে করেছে। তার wife নিজেও কলেজের টিচার।ছোট ছেলে রিয়াদ ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পরে।
বোনদের পর হলেন শফিক রহমান,,, তিনি তার বাবা মায়ের ত্বীতিয় সন্ত্রান,,,তার এক ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলে আবির আর ছোট মেয়ে আনহা। আনহা ক্লাস eight এ পরে।
তারপর শিহাব রহমান ওনার এক ছেলে ।তার নাম ইফাদ,,, সে কানাডাতে থাকে,, এখনো বিয়ে করনি।লেখা পড়া প্রায় শেষের দিকে।
ছোট হলেন আজম রহমান তার এক ছেলে এক মেয়ে,,,মিহির আর মেঘ।
________________________________________________________________________________________________
মেঘ বাসায় এসে,, দৌড়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে তার রুমে যায় আর গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।আজম রহমান ড্রইনরুমের সোফায় ধপ করে বসে পরে,,,পাশেই মিড়া রহমান বসে পড়েন ,,, মিহির নিচে এক মূহুর্ত না দাঁড়িয়ে মেঘের রুমের সামনে এসে দাড়ায়।তারপর আস্তে করে দরজায় ধাক্কা দেয়,,আর বলে
“মেঘ দরজাটা খোল প্লিজ। তোর সাথে আমার কথা আছে। ”
মেঘঃ•••••••••••••••••••••
গলাটা আরেকটু নরম করে,,, আদুরে গলায় বলল
মেঘ বুড়ি দরজাটা খোল। সোনা বনু আমার ,,, ভাইয়ার কথা শুনবি না।প্লিজ দরজাটা খোল।
মেঘঃ ••••••••••••••••••••••••••
“সোনা মনি আমার বাইরে বের হয়ে আয়।ভাইয়া প্রমিশ করছে ভাইয়া সব ঠিক করে দেবে।ওই আবিরের বাচ্চাকে মেরে ওর লাশ আমি কুকুরকে দিয়ে খাওয়াবো।প্লিজ সোনা বনু আমার একবার দরজাটা খুলে দে।”
মেঘ আর চুপ থাকতে পারল না,,, দরজা খুলে বেরিয়ে এল,,, তারপর মিহির কে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কেদে দিল।মিহিরও শক্ত করে জরিয়ে ধরল তার বোনকে।মেঘ চিৎকার করে কাদছে,,,, মেঘের খুব কষ্ট হচ্ছে।কিছুতেই কান্না থামাতে পারছে না।মেঘকে এভাবে কাদতে দেখে মিহির এর চোখ থেকেও পানি পরছে। তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে,,, তার কলিজার টুকরা বোনটা আজকে খুব কষ্ট পেয়েছে।মেঘকে বুকে সাথে জরিয়ে রেখে রুমের ভিতরে ডুকল মিহির ,,,,,,,তারপর সোফায় গিয়ে বসে। মেঘকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বসে রইল।
নিচে ড্রইনরুমের সোফায় বসে মেয়ের কান্না শুনছেন, মিরা রহমান আর আজম রহমান। তাদের বুকটাও ফেটে যাচ্ছে,,, তাদের একটা ভুলের জন্য তাদের মেয়েটা আজকে এতটা কষ্ট পাচ্ছে।সবসময় হাসি খুশি থাকা মেয়েটা,,, এভাবে পাগলের মতো চিৎকার করে কাদছে। আজম রহমান মিরা রহমানের দিকে তাকিয়ে আহত গলায় বলল
“আমি একজন ভালো বাবা হতে পারিনি মিরা। আমার মেয়ের জীবনের সবচেয়ে বড় কষ্টের কারন আমি হয়ে গেলাম। আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারব না। এই সবকিছুর জন্য আমি দায়ী,,, সবার বলা কথাগুলো আমার মেয়ের ছোট্ট মনটাকে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে। সবার এতো অপমান চুপচাপ সয্য করেছে ,,, আসার সময় কি সুন্দর বড় ভাইজান কে রাজি করালো বিয়ের জন্য।আমার মেয়েটা যে শএুরও কখনো খারাপ চায় না। তাহলে আল্লাহ্ কেন আমার ভালো মেয়েটাকে এতটা কষ্ট দিচ্ছে।”
এই কথা গুলো বলে কিছু ক্ষন চুপ করে রইল আজম রহমান। তারপর সোফার সামনের টি টেবিল থেকে একগ্লাস পানি নিয়ে ডকডক করে খেয়ে নিল,,, তারপর আবার বলতে শুরু করলেন
“জানো মিরা,,, আমি ভেবেছিলাম আমরা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করছি বলে,,, ভাবি আমাদের উপর রাগ করে আছে। আমরা তার কাছে থাকলে রাগটা আস্তে আস্তে ঠিক কমে যাবে,,,, তোমাকে আপন করে নেবে,,, ভেবেছিলাম তুমি আমার জন্য তোমার পরিবার ছেরেছো,,,, কতো কষ্ট পেয়েছ ।সবাই যদি তোমাকে একটু করে হলেও ভালোবাসা দেয়,,, তাহলে তোমার কিছুটা কষ্ট অন্ততপক্ষে কমাতে পারবে। তুমি যেভাবে সবার মন জয় করেছিলে,,, ঠিক সেই ভাবে ভাবির মনটা জয় করে নিতে পারবে। তোমার ভালোবাসা দিয়ে তার সব রাগ অভিমান ভুলিয়ে দেবে।ভেবেছিলাম অপমান করতে করতে হয়ত একদিন সেও খুব ক্লান্ত হয়ে যাবে,,, তারপর তোমাকে ঠিক আপন করে নেবে। কিন্তু আমি ভুল ভেবেছিলাম,,, ভাবি তোমার উপর রাগ বা অভিমান করে নেই,,, সে তোমাকে ঘৃনা করে।”
মিরা রহমান হতম্বভ হয়ে তাকিয়ে রইলেন তার স্বামীর মুখের দিকে,,,তরপর কাপা কাপা গলায় বলল
” ঘৃণা করে,,কিন্ত কেন? আমার তো তার সাথে কোনো শএুতা নেই।তাছাড়া আমি তার সাথে কখনো উচু গলায়ও কথা বলিনি। তাহলে কেন সে আমাকে পছন্দ করে না। শুধুমাত্র তার বোনের সাথে তোমার বিয়ে হয়নি তার জন্য।”
আজম রহমান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো
” হ্যা। আমি তার বোন কে বিয়ে না করে তোমাকে বিয়ে করেছি তার জন্য ভাবি তোমাকে এতটা ঘৃণা করে।আর সেই ঘৃণার আগুন এতটাই তীব্র যে,,, আমাদের সব কিছু জ্বালিয়ে শেষ করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।ভাবির সেই ঘৃণার আগুনে আজকে আমার মেয়েটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই আর ও বেশি দেরি হওয়ার আগে আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
মিড়া রহমান প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে আজম রহমান এর দিকে তাকালেন। আজম রহমান তার দৃষ্টি বুঝতে পেরে আজম রহমান বলল
“আমরা এখানে আর থাকবো না,, ঢাকায় শিফট করবো কিছু দিনের মধ্যে। ”
মিরাঃ কিন্তু •••••••••••
মিরা রহমান কে আর কিছু বলতে না দিয়ে,,, আজম রহমান বলল
“কোনো কিন্তু না। আমরা এখান থেকে যাব
মানে যাব,,,এটাই আমার শেষ কথা। ”
তারপর বসা থেকে দারিয়ে বলল
“আমাদের এখান চলে যাওয়াটাই সবার জন্য ভালো হবে।আমি আমার ছেলে মেয়েদের একটা শান্তির জিবন দিতে দিতে চাই।”
কথাটা বলেই তিনি সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলেন,,, তার পিছনে পিছনে মিরা রহমানও গেলেন।
অনেকক্ষণ মেঘের কোনো সারাশব্দ না পেয়ে,,,, মেঘের মুখের দিক তাকাল মিহির।দেখল তার ছোট্ট বুড়িটা কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে গেছে।ঘুমের মধ্যে এখনো বারবার মেঘ হিচকি দিচ্ছে। মেঘের চোখের পানিতে, মিহিরের শার্টের বুকের অংশ টা একদম ভিজে গেছে।মিহির লম্বা একটা শ্বাস নিল,,,,তারপর মেঘকে কোলে করে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে।গায়ে একটা পাতলা চাদর দিয়ে দিল ।তারপর বোনের মাথায় কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে দিলো।আসার সময় Ac টা বন্ধ করে দিয়ে । ফ্যান ছেড়ে ফ্যানের পাওয়ার একবারে কমিয়ে দেয়। বোনের কাছে গিয়ে কপালে একটা চুমু খায়।তারপর আস্তে করে দরজাটা টেনে রুম থেকে বের হয়ে নিচে আসে। নিচে এসে যা দেখে তাতে ধপ করে মাথায় আগুন জ্বলে উঠে।
#ভালোবাসার_অনূভুতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্ব_3
তারপর আস্তে করে দরজাটা টেনে রুম থেকে বের হয়ে নিচে আসে।নিচে এসে যা দেখে তাতে ধপ করে মাথায় আগুন জ্বলে উঠে।
মিরা রহমান সোফায় বসে আছে আর তার সামনের সোফায় পাশের বাসার কিছু মহিলা বসে আছে।এরা নিশ্চয়ই বিয়ে ভাঙার খবরটা পেয়ে গেছে।তাই কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে এসেছে। আসলে প্রতিবেশিদের সংগা হলো
“পরের সুখে জ্বলে বেশি
অন্যের দুঃখে খুব খুশি।
শুনে কম রটায় বেশি
আর এদের নাম হল প্রতিবেশি।”
মিহির এসে মিরা রহমান এর পাশে বসে ফোন স্ক্রল করতে লাগল।ওদের মধ্যে একজন মহিলা মিরা রহমান কে উদেশ্য করে বললেন
” তা ভাবি মেঘনা কে তো দেখতে পাচ্ছি না।মেঘনা কোথায়?”
” উপরে নিজের রুমে আছে।”
আরেক জন মহিলা বিদ্রূপের সুরে বলল
” কী আর বলব ভাবি,, কি দিন কাল পরল,,,, এক বোন আরেক বোনের হবু স্বামীর সাথে প্রেম করছে। কী লজ্জার বিসয় ভাবুনতো। জেরিন কি সুন্দর দেখতে ,,,ওর জন্য কি জগতে ছেলের অভাব পরতো কিসের জন্য আবিরের সাথে জেরিনের অবৈধ সম্পর্ক করতে হবে। হাজার হোক মেঘনা তো ওর বোন হয়,,,কেউ বোনের এত বড় ক্ষতি করে।”
মিহির দাতে দাত চেপে সব সজ্য করছে।ইচ্ছে করছে এদের এক এক জনকে মাথায় তুলে আছাড় মারতে।
মিরা রহমান কথা ঘোরাতে বললেন,,,
“এসব কথা ছারুন ভাবি,,,আপনারা কি খাবেন চা নাকি কফি।”
আরেক জন বললেন
” কিছু খাব না ভাবি,,, আমরা এই মাএ আবিরদের বাসা থেকে খেয়ে এসেছি।
তারপর মহিলাটি বেশ আগ্রহ নিয়ে জিঙ্গেস করল
” তা আপনারা কি সিন্ধান্ত নিলেন,,,,,মেঘনা যে ছেলেটাকে ভালো বাসে ,,,তার সাথে ওর বিয়ে টা দিবেন নাকি?”
মিরা রহমান বলল
“মেঘনা কউকে ভালোবাসে না ভাবি।”
মহিলাটি আবার বললেন
“কি বলেন ভাবি,,,,জেরিন আমাদের এইমাএ ওর ফোনে মেঘনা আর একটা ছেলের কিছু ছবি দেখালো।আমরা সবাই নিজের চোখে দেখলাম।”
মিরা রহমান কথার মাঝে মহিলাটিকে থামিয়ে দিয়ে দৃঢ় গলায় বললেন
“জেরিন আপনাদের কি দেখিয়েছে , আপনারা কি দেখেছেন সেটা আমি জানিনা।আমার মেয়ের উপর আমার পুরো ভরসা আছে।সে এমন কিছু করবে না,,,,যাতে তার বাবা মায়ের সম্মানহানি হয়।”
মহিলাটি আবার বললো
“মেয়েকে এতটাও বিশ্বাস করবেন না ভাবি,,, আজকালকার মেয়ে কখন কি করে বসে,,, আসলে আপনাদের কোনো দোষ নেই,,, আপনাদের অগচরে আপনাদের মেয়ে বাইরে কি করে বেরায় সেটা আপনারা কি করে জানবেন বলুন।”
শেষের কথাটা অনেকটা ব্যঙ্গ করে বললেন মহালাটি।মিহির এতক্ষন সব চুপচাপ সহ্য করলেও,,,,এবার আর সহ্য করতে পারল না । সোফার পাশের টি টেবিলে থাকা ফ্লয়ারভাস টাকে শজোরে ফ্লোরে আছাড় মারল।ঘটনার আকষ্মিকতায় সবাই কেপে উঠল,,,,,তাকিয়ে দেখল মিহির চোখ লাল করে দারিয়ে আছে,,,, পাশে কাচের ফুলদানিটা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে ফ্লোরে পরে আছে।মিহির জোরে চেচিয়ে বলল
___”what you mean by বাইরে কি করে বেরায়।আপনাদের সাহস তো কম না,,,,আমাদের বাসায় এসে আমার বোনের নামে যা নয় তাই বলছেন।”
কিছু ভাঙার বিকট শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় মেঘের,,,,,ধরফরিয়ে উঠে বসে মেঘ ,,,নিচ থেকে চেচামেচির আওয়াজ আসছে,,,সে তারাতারি রুম থেকে আসে,,, শিড়ির কাছে আসতেই দেখতে পায় সোফার একপাশে মিহির রাখি লুক নিয়ে দারিয়ে আছে,,,আরেক পাশে কিছু আন্টি বসে আছে,,, আর মিরা রহমান মাথা নিচু করে সোফা ধরে দারিয়ে আছে।মিহির চিৎকার করে বলল
___”এই মূহুর্তে এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যান,,,, নাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
সাথে সাথে মহিলা গুলো বসা থেকে দাড়িয়ে গেল।তাদের মধ্যে একজন বলল
__”কথায় আছে চোরের মায়ের বড় গলা,,,,, তোমার বোন নষ্টামি করতে পারবে আর আমরা বললেই দোষ।”
আরেক জন রাগি গলায় বললো
___ “এক দম ঠিক বলেছেন ভাবি,,,,তাছাড়া আমরা কি আর এমনি এমনি বলছি জেরিন নিজে আমাদের ওর ফোনের ছবি দেখিয়েছে,,, তাছাড়া ওরা নিজের চোখে নাকি দেখেছে তোমার বোনকে একটা ছেলের সাথে হোটেলে যেতে।”
আরেক জন মহিলা বললো
“আবিরের মা তো বলল তোমার বোনের আরও অনেক ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে।”
তারপর মিরা রহমান এর দিকে তাকিয়ে বলল
“‘ অদ্ভুত মহিলা তো আপনি,,,আপনাকে তো এতদিন ভালোই জানতাম,,,,কিন্তু আজ দেখতে পাচ্ছি ছেলেমেয়েকে তো ঠিক ভাবে শিক্ষাটাও দিতে পারেন নি।”
মিরা রহমান এর চোখ থেকে দুই ফোটা পানি গরিয়ে পরল।মিহির এবার রেগে টি টেবিলের উপরে একটা লাথি মারল,,,,টেবিলটা কাত হয়ে পরে গেল।মিহির জোরে চিল্লিয়ে বলল
“আমি কোনো মেয়েদের গায় হাত তুলিনা,,,,তাই আপনারা এখনো অক্ষত অবস্থায় এখানে দাড়িয়ে আছেন,,,নাহয় আপানদের পা ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে দিতাম।”
মিহিরের কথায় মহিলা গুলো ভয় পেয়ে একপ্রকার দৌড়ে চলে গেল।মেঘ আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না দৌড়ে রুমে চলে গেল।রুমে এসে শুনতে পেল নিচে কেউ খুব জোরে জিনিসপত্র ভাঙচুর করছে।মেঘের বুজতে পারল এটা মিহির করছে।সে গলার নেকলেজ টা ধরে টান মারল,,,নেকলেজটা ছিরে নিচে পড়ে গেল,,,একটা একটা করে সব গয়না গা থেকে খুলে ফ্লোরে ছুরে মারল,,, দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেল,,,, সাওয়ার ছেরে তার নিচে বসে আঝরে কাদতে লাগল।
15 দিন পর……
এই পনেরো দিন ঘর বন্ধি হয়ে ছিল মেঘ।শুরুতে মন ভালো করার জন্য,,, মিহিরের জোড়া জোড়িতে একবার বাইরে বের হয়ে ছিল মেঘ,,, কিন্তু লোকজন ওকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করছে।উল্টো পাল্টা কথা বলেছে হাসাহাসি করেছে,,, তার জন্য মেঘ নিজেকে ঘর বন্ধি করে নিয়েছে,,, রুম থেকে কোখাও বের হয় না,,,,কারও সাথে কথা বলে না,হাসে না,,,,ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করে না,,,,চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে,,,,মুখটা সারাদিন মলিন থাকে,,,কেউ কিছু জিঙ্গাসা করলে শুধু হ্যা বা নাতে উওর দেয়।যেই বাড়িটা সাড়াদিন দুই ভাইবোনের খুনশুটিতে মেতে থাকত,,, সেই বাড়িটা এখন শান্তপুরি হয়ে গেছে,,,,যেনো এখানে কোনো মানুষ থাকে না ।মিহির তার মা বাবার সাথে এখনো কোনো কথা বলেনি।দুই ভাই বোন দুই রুমে পরে থাকে,,,,মিহির শুধু মাঝে মাঝে মেঘের সাথে কথা বলে,,,,বোনকে খায়িয়ে দেয়,,,চুল বেধে দেয়,,, ঘুম পরিয়ে দেয়,,জোকস বলে হাসানোর চেষ্টা করে। কিন্তু এখন জোকস শুনে মেঘের আর হাসি পায় না,,,সাড়াক্ষন মুখটা মলিন করে বসে থাকে ।মিহিরও হাল ছাড়ার পাএ না সে রোজ নতুন নতুন উপায় খোজে মেঘের মোন ভালো করার জন্য।মিরা রহমান এসব ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।তারপর আজম রহমান কে জিঙ্গেস করলেন
“আমরা ঢাকা যাচ্ছি কবে?”
“আর তিন দিন পর।ওদিকে সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে। বিজনেস শিফট করে ফেলেছি,,,বাড়ির ডেকরেশনের কাজ সম্পূর্ণ করে ফেলেছি,,,, সব ফার্নিচার কেনা হয়ে গেছে,,,,,মেঘের কলেজে এডমিশনও হয়ে গেছে,,,,মিহিরের টিসি নিয়ে নিয়েছি ওখানে গিয়েই ভর্তি করে দিব,,,,এই বাড়িটার জন্য নতুন ভাড়টেও পেয়ে গেছি ,,আমরা গেলেই ভারাটে উঠবে।(এক দমে কথা গুলো বলল আজম রহমান।)”
মিরা রহমান শান্ত গলায় জিঙ্গেস করলো
“সবাইকে কবে বলবে যে আমরা চলে যাচ্ছি?”
“মেঘ আর মিহির আজ রাতে রাতে বলে দেব। আর বাকিদের যাওয়ার সময় বলে দিলেই হবে। আর যদি নাও বলি তাহলেও মনেহয় না কারো কোনো কিছু আসবে যাবে।”
ব্যালকনির ফ্লোরে শুয়ে আছে মেঘ।মিহির এসে আস্তে করে ডাকে
“মেঘ বুড়ি।”…..
মিহিরের ডাকে মেঘ উঠে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে,,,,মিহির মেঘের পাশে বসে বলে
“রেডি হয়ে নে,,, আমরা বেরোবো।”
মেঘ ভাঙা গলায় বলে
“আমি কোথায়ও যাবো না।”
” ঘুরতে যাচ্ছি না,,, হযরত শাহাজালাল মাঝারে যাব,,,,, তারাতারি রেডি হয়ে নিচে আয় আমি অপেক্ষা করছি।”
মেঘ আর কিছু বললো না,,,সে জানে তার ভাই তার মন ভালো করার চেষ্টা করছে,,,,আর মাঝারের নাম শুনে আর মানা করতে পারল না,,,হয়ত সেখানে গেলে মনটা কিছুটা হলেও ভালো হবে।
গাড়িতে বসে আছে মেঘ এবং মিহির।মিহির ড্রাইভিং করছে,,,আর তার পাশের সিটে মেঘ বসে আছে,,,,গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে,,,ঠটাৎ করে মিহির ব্রেক করল,,,আচমকা ব্রেক করায় মেঘ চমকে তাকালো ভাইয়ের মুখের দিকে। মিহির বললো
“বনু আইসক্রিম খাবি?”
মেঘ বিরক্তি নিয়ে বললো
” না আমার এখন আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে না।”
” ইচ্ছে করছে না মানে কি? তোর না আইসক্রিম অনেক পছন্দ,,,, একটু বস এখনি নিয়ে আসছি।”
মেঘকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মিহির গাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল।মেঘ নিজের ফোনের ঘড়িতে একবার টাইম টা দেখে নিল4 :35 P.m.বাজে।তারপর মিহির এখনও আসছে না দেখে গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালো,,, দেখলো এটা একটা ছোট মার্কেট ,,, এখানে মেঘ আগে অনেক বার এসেছে ,,, এখানের প্রায় সবাই মেঘকে চিনে,,, তাই সে আর সামনে গেল না,,,কেউ ওকে দেখলেই আবার কথা শোনাবে। তাই চুপচাপ গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে ফোন স্ক্রল করতে লাগল।
মেঘনা বেবি……
কারো ডাকে ফোন থেকে চোখ তুলে সামনে তাকালো মেঘ।আর সামনে তাকাতেই সে চমকে উঠল,,,,ভীষন ভয় পেয়ে গেল সে,,,,তার সামনে সাত জন ছেলে দাড়িয়ে আছে,,,,এদের খুব ভালো করে চেনে মেঘনা,,,,এরা এই এলাকার নামকরা বখাটে ছেলে,,,,মেঘকে একবার টিজ করেছিল এরা,,,,আর সেটা জানতে পারে মিহির,,,তারপর মিহির ও তার বন্ধুরা মিলে এদের খুব মেরেছিল পুরো কলেজের সামনে।এদের দলের লিডার হলো রাকিব,,,,ওর বাবা একজন পলিটিশিয়ান,,,তাই এদের যতবার পুলিশ ধরে নিয়ে যায় ততবারই ওর বাবা ওদের ছাড়িয়ে নিয়ে আসে।ওদের মধ্যে একজন বলল
‘আরে ভাই এতো মেঘ না চাইতেই বিষ্টি,,,,পাখি নিজে আমাদের খাচায় ধরা দিতে এসেছে,,,বলেই একটা বিশ্রি হাসি দিল।”
মেঘ এদের দেখে ভিষন ঘাবরে গেল,,,,তারিতারি করে গাড়ির দরজা খোলার চেষ্টা করল,,,কিন্ত বিপদ যখন আসে সব জায়গা দিয়েই আসে,,,গারির দরজা অটো লক হয়ে গেছে,,,গাড়ির চাবি মিহিরের কাছে,,,কয়েক বার জোরে টানাটানি করতেও দরজা খুলল না।এবার মেঘ কোনো উপায় না পেয়ে জোরে এক দৌড় দিল,,,তখনই রাকিব ল্যাং মারল আর মেঘ উপুর হয়ে ধরাম করে মাটিতে পরে গেল।তারপর রাকিব তাকে নিচ থেকে টেনে তুলল মেঘকে আর বললো
“আমার হাত থেকে পালানো এত সোজা না বেবি। ”
কথাটা বলতেই রকিবের নাকের উপর কেউ জোরে ঘুসি মারে।রাকিব মাটিতে পড়ে যায়।মেঘ দেখে মিহির দাড়িয়ে আছে,,,দূরে আইচক্রিম গুলো মাটিতে পরে আছে।মিহির মেঘকে জিঙ্গেস করল
“ঠিক আছিস?”
মেঘ মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক উওর দিল।
ততক্ষণে এখানে লোকজনের ভিড় জমা হয়ে গেল,,,সবাই দাড়িয়ে দাড়িয়ে ফ্রিতে তামাশা দেখছে।
“মিহির রাকিবের কলার ধরে দার করিয়ে বলল তোর সাহস হয় কিকরে আমার বোনকে ছোয়ার।”
রাকিবের কলার ধরায় সে ভিষন রেগে গেল।এক ঝটকায় মিহিরের হাত থেকে নিজের কলার ছারিয়ে,,,কোমর থেকে পিস্তল বের করে মেঘের দিকে পয়েন্ট করে,,,তারপর বলে
“হয় তোর বোনকে আমাদের সাথে যেতে দিবি নাহয় ওকে এখানেই গুলি করে দেব।”
ঘটনার আকষ্মিকতায় মিহির চমকে উঠলো ,,,,মেঘ এবার শব্দ করে কেদে দিল।মিহির কোনো কিছু না ভেবেই,,,রাকিবের থেকে পিস্তল টা নেওয়ার জন্য টানাটানি করতে লাগল,,,একপর্যায়ে ওদের দুজনের মধ্যে পিস্তলটা নিয়ে ধস্তাধস্তি শুরু হল,,,,,তারপর খুব জোরে বিকট একটা আওয়াজ হলো।আর মিহির দুই পা পিছিয়ে গিয়ে ধুপ করে মাটিতে পড়ে গেল,,,মেঘ ভাইয়া বলে জোরে চিৎকার দিল,,,মিহিরের বুকে গুলি লেগেছে,,,গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে।এটা দেখে রাকিব ভয় পেয়ে যায়,,,আর তার দলবল নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।মেঘ দৌড়ে মিহিরের কাছে গিয়ে,,, মাটিতে বসে মিহিরের মাথাটা ওর কোলের উপর রেখে চিৎকার করে কাদছে,,,,তার কান্না দেখে ওখানে উপস্থিত থাকা সবার চোখ থেকে পানি পরছে।মেঘের মনে হচ্ছে কেউ ওর কলিজাটা টেনে ছিরে ফেলেছে,,, এখন তার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে,,আল্লাহ তুমি আমায় নিয়ে নাও আমার ভাইটাকে বাচিয়ে দাও প্লিজ,,, আমার ভাইয়ার কিছু হয়ে গেলে আমিও বাচবো না আল্লাহ্।কিন্তু বলতে পারছে না ।গলা দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছে না।
হাসপাতালের ফ্লোরে বসে একধ্যানে ওটির দিকে তাকিয়ে আছে মেঘ,,,তার আশেপাশে কি হচ্ছে সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই,,, দেখে মনে হচ্ছে যেন জীবন্ত লাশ হয়ে গেছে।সারা গায়ে রক্ত লেগে আছে।চোখের পানিগুলো
গালে শুকিয়ে গেছে,,,কাদতে কাদতে চোখদুটো লাল হয়ে গেছে,,,মাথার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে।
মিরা রহমান এবং আজম রহমান পাশের সিটে বসে কাদছেন,,,তাদের পাশে বসে আছেন শিহাব রহমান ও তার স্ত্রী সাথি রহমান।
আসলে তখন র্মাকেটের কিছু লোক মিহিরকে ধরে হাসপাতালে নিয়ে আসে।ওখানের প্রায় সবাই আজম রহমান কে চিনে উনি সিলেটের একজন নামকরা বিজনেস ম্যান। মিহির আর মেঘকে দেখে ওখানকার অনেকেই চিনতে পারল,,,
দুইজন লোক দ্রুত আজম রহমানের বাড়িতে গিয়ে সবটা খুলে বলে,,,সেখানে শিহাব রহমান এবং সাথী রহমানও ছিল ,,,,সবটা শুনে তারা দেরি না করে দ্রুত এখানে চলে আসে।
এই বিষয় পরিবারের বাকিরা কিছুই জানেন না।আজম রহমান নিজে ইচ্ছে করেই তার অন্য ভাইবোনদের কিছু বলেননি,,,আর শিহাব রহমানকে কিছু বলতে দেননি।
ওটির দরজা খুলে ডাক্তার বের হয়ে এলো,,,ওনারা সবাই গিয়ে ডাক্তারের সামনে দাড়ালো,,,মেঘ ফ্লোর থেকে দাঁড়িয়ে ডাক্তারের দিকে এগিয়ে গেল।
আজম রহমান কাপাকাপা কন্ঠে জিঙ্গেস করল
“আমার ছেলের কি অবস্থা ডাক্তার?”
আমরা রক্ত পড়া বন্ধ করতে পেরেছি,,, but I’m sorry to say Mr Ajom.আমরা ওনার অপারেশন টা করতে পারবো না।বুলেট টা ওনার বুকের হাড্ডি থেকে একটু নিচে লেগেছে।অপারেশনটা করতে একজন দক্ষ সার্জেন লাগবে।আমাদের এখানে ভালো কোনো সার্জেন নেই।তাই আপনারা যত দ্রুত সম্ভব ওনাকে ঢাকায় নিয়ে যান।তাছাড়া ওনার বাচার চান্স খুবই কম,,, এখানে আমরা কেউ রিক্স নিতে চাইছি না।
বলেই ডাক্তার ওটির মধ্যে চলে গেল।
মেঘের মাথা টা ঘুরিয়ে উঠল ,,,, তার কানে শুধু ডাক্তারের বলা শেষ কথাগুলো বাজছে।চোখের সামনে মিহিরের রক্তাক্ত শরীরটা ভেষে উঠল,,,মেঘ আর দারিয়ে থাকতে পারলো না,,, মাথাটা ঘুরে ফ্লোরে পড়ে গেল।
চলবে…..
চলবে…..