#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্ব_31
মেঘ অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে পিছনে ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকালো।তাকিয়েই ও বড়সড় একটা ঝটকা খেলো।ওর সামনে আহান দাড়িয়ে আছে।অন্ধকারের মধ্যে বাইরের আবছা আলোতে আহানের রাগান্বিত চেহারাটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।মেঘ অবাক চোখে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে।আহান যে কখনো ওর সাথে এরকম করতে পারে সেটা ও স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি।আহান মেঘের দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে এসে হাটু গেরে ওর সামনে বসলো।তারপর এক হাত মেঘের গালে রেখে শান্ত স্বরে জিঙ্গেস করলো
“শাড়ি পড়ে ভার্ষিটিতে কেনো এসেছো মেঘ পড়ি?”
আহানের এমন শান্ত স্বরে বলা কথাটাও যেনো মেঘের মনে মধ্যে অদ্ভুত কম্পন সৃষ্টি করলো।ও ভালো করেই বুঝতে পারছে আহান ভিষন রেগে আছে।এখন যদি ও কোনো উল্টাপাল্টা জবাব দেয় তাহলে আহান ওকে মারতেও দ্বিতীয় বার ভাববে না।তাই মেঘ একটা শুকনো ঢোক গিলে কাপাকাপা কন্ঠে বললো
“আ-আগেই প-প্লান করে রেগেছিলাম স-সবাই একসাথে শাড়ি পড়বো।”
আহান একটু গম্ভির কন্ঠে বললো
“তো এইভাবে সেজেছো কেনো?এটাও কি আগে থেকে প্লান করা ছিলো?”
মেঘ কিছু না বলে শুধু উপর নিচ করে হ্যা সূচক মাথা নাড়ালো।আহান এবার রেগে মেঘের গাল জোড়ে চেপে ধরে চেচিয়ে বললো
“সবাই যদি গিয়ে পাহার থেকে যাপ দেয়,,তাহলে কি তুমিও ঝাপ দিবে?সবাই শাড়ি পড়ার প্লান করলেই তোমারও কেনো শাড়ি পড়তে হবে?আর কার থেকে পারমিশন নিয়ে তুমি শাড়িটা পড়ে ভার্ষিটিতে এসেছো?”
আহান মেঘের গাল এতো জোড়ে চেপে ধরেছে মেঘের শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে।ব্যাথ্যায় ওর চোখ থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে।মেঘ ওর দুহাত দিয়ে আহানের হাতটা নিজের গাল থেকে সরানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু আহানের হাতটা সরানো তো দূরের কথা এক চুল অবদি নাড়াতে পর্যন্ত পারছে না।আহান রেগে চেচিয়ে বললো
“কি হলো চুপ করে আছো কেনো?অ্যান্সার মি!শাড়ি পড়ে ভার্ষিটিতে কেনো এসেছো?”
মেঘ কান্না ভেজা কন্ঠে বললো
“সবাই তো শাড়ি পড়েছে!আমিও পড়েছি তাতে কি হয়েছে?আপনি আমার সাথে এমন বিহেব করছেন কেনো?”
আহান মেঘের গাল ছেড়ে দাড়িয়ে এক ঝটকায় মেঘকে উপরে টেনে তুলে দাড় করালো।তারপর ওকে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে ওর দুই বাহু চেপে ধরে বললো
“সবাই শাড়ি পড়লেও তুমি পড়তে পারবে না।আমি চাই না,, তোমাকে শাড়ি পড়া অবস্থায় অন্য কেউ দেখুক।তুমি সব সময় শুধু আমাকে দেখানোর জন্য শাড়ি পড়বে।আর আজকের পর যদি আর কখনো আমার পারমিশন ছাড়া শাড়ি পড়েছো তাহলে তোমার হাত পা ভেঙে একদম ঘড়ে বসিয়ে রাখবো।”
মেঘ ভয়ে কাপছে আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে।কান্না করতে করতে ওর হেচকি উঠে গেছে।ভয়ে আহানের দিকে তাকাতে অবদি পারছে না।আহান মেঘকে ধমক দিয়ে বললো
“এই মেয়ে শুধু শুধু এভাবে কাদছো কেনো?আমি কি তোমাকে মেরেছি?কান্না বন্ধ করো বলছি।”
মেঘ আহানের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে হিচকি দিতে দিতে বললো
“লাগছে আমার,,হাতটা ছাড়ুন প্লিজ।”
মেঘ এভাবে বলায় আহানের একটু মায়া হলো।ও মেঘের বাহু ছেড়ে দিয়ে মেঘের থেকে সরে দু-কদম পিছনে চলে গেলো।মেঘ এতোক্ষন এটারই সুযোগ খুজছিলো।আহান ছেড়ে দিতেই মেঘ শারির কুচি ধরে দিলো এক দৌড়।কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলো না।মেঘ দুই পা সামনে এগোতেই আহান খপ করে মেঘের হাত ধরে ফেললো।তারপর আবার দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বাকা হেসে বললো
“এই ভাবে বাচ্চাদের মতো দৌড়াদৌড়ি করার কোনো মানে হয় মেঘ?তোমার মনে হয়,,আমি না চাইলে তুমি এখান থেকে কোথাও যেতে পারবে?”
মেঘে ভয়ার্ত চোখে আহানের দিকে তাকিয়ে আহানের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।ওর আজকে হঠাৎ করেই আহানকে খুব ভয় লাগছে।কেনো এতোটা ভয় পাচ্ছে সেটা ও নিজেও যানে না।শুধু জানে আহানের কাছ থেকে এক্ষুনি ওকে পালাতে হবে।মেঘকে এভাবে হাত পা ছোড়াছুড়ি করতে দেখে আহান বিরক্তকর ভঙ্গিতে বললো
“মেঘ এভাবে হাত পা ছোড়াছুড়ি করে কোনো লাভ হবে না।আমার পারমিশন ছাড়া তুমি এখান থেকে এক চুলও নড়তে পারবে না।প্লিজ লাফালাফি টা বন্ধ করো”
কে শোনে কার কথা,, মেঘ ওর মতো ছটফট করেই যাচ্ছে।আহান ধমক দিয়ে বললো
“মেঘ স্টপ ইট!তোমাকে থামতে বলেছি না?থামো বলছি।চুপচাপ দাড়াও এখানে।”
মেঘ এবারেও আহানের কথার কোনো পাএা দিলো না।আহান মেঘের দিকে বিরক্তিকর একটা চাহনি দিয়ে বললো
“সরি মেঘ!আমি এটা করতে চাই ছিলাম না।বাট তুমি এটা করতে বাধ্য করলে।”
বলেই আহান ওর হাতের দুটো আঙ্গুল মেঘের কানের একটু নিচে চেপে ধরলো।আঙ্গুল দুটো চেপে ধরার কিছু সেকেন্ডের মধ্যে মেঘ ঢলে আহানের বুকে পড়ে গেলো।আহান মেঘকে বুকের সাথে মিশিয়ে জড়িয়ে ধরে কপালে একটা চুমু খেলো।তারপর ঝট করে মেঘকে পাজ-কোল করে তুলে ওর কানের কাছে গিয়ে লো ভয়েজে বললো।
“সরি মেঘ পরি!আই অ্যাম রিয়েলি ভেরি সরি।আমি এটা একদমই করতে চাইছিলাম না।কিন্তু তুমি করতে বাধ্য করলে।”
কথাটা বলেই আহান মেঘকে নিয়ে সামনের দিকে হাটা দিলো।
_________________________
ফাংশনের এতো চিল্লাচিল্লি ডাকাডাকির মধ্যেও অভির চারদিকে কোনো খেয়াল নেই।ওর দৃষ্টি সামনের ষ্টেজের দিকে স্থির।চোখে মুখে একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে ষ্টেজের উপর দাড়িয়ে থাকা পার্ফমেন্সরতো মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে।মেয়েটি দাড়িয়ে দাড়িয়ে অ্যাঙ্কারিং করছে।মেয়েটা মার্জিত ভঙ্গিতে কথার মাঝখানে বারবার মুচকি হাসছে।ওকে অভি আগেও অনেকবার দেখেছে কিন্তু যখনই দেখা হয়েছে তখনই ওর সাথে কোনো না কোনো ব্যাপ্যার নিয়ে অভির ঝগরা চিল্লাচিল্লি এইসব হয়েছে।কখনো মেয়েটির সাথে ওর ভালো ভাবে কথা বলার সুযোগই হয়ে উঠেনি। মেয়েটি আর কেউ না,, মেয়েটি হচ্ছে দিশা।
অভি আজকে দিশাকে নতুন একটা রূপে আবিষ্কার করলো।এতো দিনের খচ্চর ঝগরুটে মেয়েটাকে আজকে অভির কাছে একদম ভদ্র, স্নিগ্ধ, মার্জিত একটা মেয়ে লাগছে।যার একটু খানি কথা শুনলেই মনের মধ্যে অদ্ভুত শান্তি খেলে যায়।ঠোটের কোনের মুচকি হাসির দিকে তাকালে মনে হয় ওই মাতার করা হাসির দিকে তাকিয়ে যে কেউ অনন্তকাল কাটিয়ে দিতে পারবে।অভি বার বার চেষ্টা করেও দিশার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না।অভির মনে হচ্ছে ও যদি সারাদিনও এভাবে দিশার দিকে তাকিয়ে থাকে তাহলেও ওর কোনো ক্লান্তি লাগবে না।বরং ও সারাদিন কোনো কারন ছাড়া এভাবেই পলকহীন চোখে দিশার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারবে।
দিশা ষ্টেজের একপাশে দাড়িয়ে হাতে থাকা কাগজ গুলো নেড়েচেড়ে দেখছিলো।কাগজ গুলোতে কে কি পার্ফরমেন্স করবে সেগুলো লেখা আছে।আপাততো ফাষ্ট ইয়ারের একটা মেয়ে গান গাইছে।দিশা ভালো করে কাগজ গুলোর দিকে তাকিয়ে দেখে নিচ্ছে এর পর কাদের কাদের পার্ফরমেন্স আছে।ও মনোযোগ দিয়ে ওইগুলোই দেখছিলো তখনই একজন টিচার্স এসে ওকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“দিশা দুপুর হয়ে গেছে।প্রিন্সিপাল স্যার লাঞ্চের জন্য ব্রেক দিতে বলেছে।তুমি এনাউন্সমেন্টটা করে সোজা স্যারের কেবিনে চলে আসো।”
দিশা স্যারের কথায় সম্মতি জানিয়ে এনাউন্সমেন্ট করতে চলে গেলো।
_________________________
রেষ্টুরেন্টের মধ্যের এক পাশের একটা টেবিলে বসে ঠোট ফুলিয়ে রেখেছে দিশা।বিরক্তিতে ওর এখন হাত পা ছড়িয়ে চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে।কোথায় ভেবে ছিলো ব্রেক টাইমে একটু রিল্যাক্স করবে তা না করে এখন এতো গুলো টিচার্সের মধ্যে বসে অভির টর্চার সহ্য করতে হচ্ছে।
তখন দিশা প্রিন্সিপালের রুমে যেতেই প্রিন্সিপাল স্যার সাড়িকা,সাঈফা,দিশা,রিজা,আহির,মিহির সহ আরো কিছু সিনিয়র ষ্টুডেন্ট আর টিচারদের নিয়ে রেষ্টুরেন্টে চলে আসে।আসলে ভার্ষিটি কর্তিপক্ষ আগেই চিফ গেষ্ট, কিছু টিচার্স আর ভার্ষিটির কিছু ষ্টুডেন্টদের জন্য রেষ্টুরেন্টে টেবিল বুক করে রেখেছিলো।ষ্টুডেন্ট বলতে যারা এই প্রোগ্রাম টা মেনেজমেন্টের দ্বায়িত্বে ছিলো শুধু মাএ তাদের জন্য।যদিও সাড়িকা সাঈফা মেনেজমেন্টের দ্বায়িত্বে ছিলো না।কিন্তু তাও ওরা দিশা রিজাকে অনেক হেল্প করেছে।
আসলে মেঘ,দিশা, রিজা ওদের এ্যাঙ্কারিং করার দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো।কিন্তু হঠাৎ করেই অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কিছুক্ষন আগে আহির,মিহির এসে জানায় মেঘের শরীর নাকি খুব খারাপ লাগছিলো তাই ও বাসায় চলে গেছে। দিশা আর রিজা ওদের দুজনের পক্ষে কিছুতেই এতোবড় অনুষ্ঠান সামলানো সম্ভব ছিলো না।তাই ওরা সাড়িকা সাঈফাকেও ওদের সাথে এ্যাঙ্কারিং করার জন্য ডেকে নিয়েছিলো।ওরা চারজন সারাদিন এতো কষ্ট করেছে দেখে, প্রিন্সিপাল স্যারও জোড় করে ওদের চারজনকে ওনাদের সাথে রেষ্টুরেন্টে খাওয়াতে নিয়ে এসেছে।
___
দিশা মনে মনে রেগে বোম হয়ে আছে।কারন যখন থেকে রেষ্টুরেন্টে এসেছে তখন থেকে অভি ওকে জেনারেল নলেজ নিয়ে এটা সেটা প্রশ্ন করে যাচ্ছে।বেচারি দিশাও চুপচাপ দাতে দাত চেপে অভির সব প্রশ্নের অ্যান্সার দিচ্ছে।মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারছে না।আপটার অল ভার্সিটির চিফ গেষ্ট বলে কথা। তার সাথে তো আর মিস বিহেইব করতে পারে না!আর তাছাড়া ওদের পাশের টেবিলে ভার্ষিটির অনেক টিচার্সরাও বসে আছে।তাদের সামনে অভিকে কিছু বললে সবাই ওকে খারাপ ভাববে।এখানে যদি টিচারেরা না থাকতো তাহলে ও আজকে অভিকে বুঝিয়ে দিতো দিশার সাথে লাগতে আসার ফল কি হয়। দিশা নিজেও ভালো করেই জানে অভি এইগুলো ইচ্ছে করে ওকে বিরক্ত করার জন্য করছে।কিন্তু তাও ওর আপাততো কিছুই করার নেই।
অভি ফোন স্ক্রল করতে করতে একবার আড় চোখে দিশার দিকে তাকালো।দিশা অভির দিকেই তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে।অভি ঠোট চেপে একটা বাকা হাসি দিলো।দিশাকে আজকে বিরক্ত করতে ওর বেশ মজা লাগছে।ভাগ্যিস এখানে টিচরেরা আছে নাহলে দিশা এতোক্ষনে চিল্লাচিল্লি করে ওর কান ঝালাপালা করে দিতো।কিন্তু এখন স্যারদের বকার ভয়ে দিশাকে ওর সব জ্বালা চুপচাপ মেনে নিতে হচ্ছে।
দিশা আর অভির কান্ড দেখে আহির,মিহির,সাড়িকা, রিজা সবাই মিটমিট করে হাসছে।ওরা ভালো করেই বুঝতে পারছে বেচারি দিশা বাধ্য হয়ে কিছু বলতে পারছে না।নাহলে এতোক্ষনে অভির নাক ফাটিয়ে দিতো।
সাঈফার কোনো হেলদোল নেই,, ও ওর নিজের মতো করে ফোন টিপে যাচ্ছে।ইদানিং সাঈফা অনেকটা বদলে গেছে এখন আর আগের মতো হাসি খুশি থাকে না।কারো কোনো বিষয়ে নাক গলায় না।মেকআপ করা ড্রেস পড়া নিয়ে সাড়িকার সাথে আর ঝগরা করে না।সব সময় একা একা চুপচাপ বসে থাকে নাহলে ফোন স্ক্রল করে।আবার কখনো কখনো বই পড়ে।আর মিহিরকে টোটালি ইগনোর করে।মিহিরের সাথে কথা বলা তো দুরের কথা,,সাঈফা মিহিরের দিকে তাকায় অবদি না।
শুরুতে সাঈফার এমন ব্যাবহারে মিহির ভিষন খুশি হয়েছিলো। কিন্তু আজকাল কেনো যেনো সাঈফার আগের হাসি খুশি চেহারাটা ও খুব মিস করে।সাঈফা যখন ওকে ইগনোর করে চলে যায় তখন মনে হয় ও অতি মূল্যবান কিছু একটা জিনিস ওর জিবন থেকে হারিয়ে ফেলেছে।মিহির নিজেও জানে না ওর এমন কেনো মনে হয়!শুধু জানে সাঈফার এমন ইগনোর করাটা ও কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।এসব ভাবতে ভাবতে মিহির আর চোখে একবার সাঈফার দিকে তাকালো। দেখলো সাঈফা গম্ভির মুখ করে ফোনের দিকে তাকিয়ে ফোন টিপছে।ওর আশে পাশে কে কি করছে!কি বলছে!সেদিকে ওর বিন্দুমাত্রও ভ্রুক্ষেপ নেই।ও নিজের মতো ফোন স্ক্রল করতে ব্যাস্ত।মিহির কিছুক্ষন সাঈফার দিকে তাকিয়ে রইলো।ও ভেবেছিলো সাঈফা হয়তো একবার হলেও ওর দিকে তাকাবে, কিন্তু না সাঈফা ভুলেও একবার চোখ তুলেও মিহিরের দিকে তাকায় নি।
মিহিরের এবার সাঈফার উপর ভিষন রাগ লাগছে।কিসের এতো ভাব এই মেয়ের?এতোদিন তো ছ্যাচরার মতো পিছনে পরে ছিলো আর এখন একবার ফিরেও ওর দিকে তাকাতে পারছে না? কেনো? সেইদিন শুধুমাএ ওই কয়েকটা কথা বলেছিলো সেইজন্য?হুহ মাএ ওই কয়েকটা কথা শুনেই ভালোবাসা উড়ে পালিয়ে গেলো? মিহির রাগে টেবিলের উপর থেকে একটা কাটা চামচ বাম হাতে নিয়ে ডান হাতের তালুতে চামোচের কাটার অংশটা গেথে ধরলো।এতো জোড়ে চামোচ টা চেপে ধরলো যে হাত ফুটো হয়ে হাতের তালু থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগলো।
_______________________
মেঘের জ্ঞান ফিরতেই ও পিটপিট করে চোখ খুলে সামনের দিকে তাকালো।তাকিয়েই ও নিজেকে একটা অপরিচিত জায়গায় আবিস্কার করলো।মেঘ বুঝতে পারছে না, ও এখানে কিভাবে এলো?ও তো ভার্ষিটির অনুষ্ঠানে ছিলো,,তাহলে এখানে ওকে কে আনলো!মেঘ মাথায় একটু জোড় দিতেই ওর আস্তে আস্তে সব মনে পড়ে গেলো।আহান ওর ঘাড়ে আঙ্গুল চেপে ধরে ওকে অজ্ঞান করেছিলো।তারপর কি হয়েছে মেঘের কিচ্ছু মনে নেই।ও ধীরে ধীরে শোয়া থেকে উঠে বসলো।বসে সামনে তাকাতেই ওর চোখ দুটো রসগোল্লার মতো হয়ে গেলো।ওর মনে হচ্ছে ও কোনো স্বপ্ন দেখছে।মেঘ নিজের চোখ বন্ধ করে আবার খুললো,কিন্তু না এটা কোনো স্বপ্ন না সত্যি।ও দ্রুত খাট থেকে নেমে ভালো করে চারপাশে তাকিয়ে রুমটা দেখতে লাগলো।ওর মনে হচ্ছে এটা কোনো রুম না বরং কোনো শুভ্র রাজ্য।পুরো রুমাটা একদম ধবধবে সাদা।কার্পেট থেকে শুরু করে জানালার পর্দা পযর্ন্ত সবকিছু শুভ্র রঙে মুড়ানো।এখানে কোনো জিনিসের উপর অন্য কোনো রঙের ছোয়া নেই।মেঘ মুগ্ধ চোখে চারপাশটা ঘুড়ে ঘুড়ে দেখতে লাগলো।
কিন্তু হঠাৎ ওর খেয়াল হলো এটা কোথায় আছে ও?এটা তো ওর রুম না!আর আহানদের বাসায়ও তো এমন কোনো রুম নেই।আর এইটা দেখে কোনো রির্সোটের রুমও মনে হচ্ছে না।তাহলে এটা কোন জায়গা?আহান ওকে কোথায় নিয়ে আসলো?আদৌ কি ওকে আহান এখানে এনেছে?নাকি ওকে অন্য কেউ এখানে নিয়ে এসেছে?মেঘ এসব কথা ভাবতেই দরদর করে ঘামতে লাগলো।ওর হাত পা ভয়ে কাপছে।ওর কেনো যেনো মনে হচ্ছে ওকে কেউ কিডন্যাপ করে এখানে নিয়ে এসেছে।আচ্ছা ওর সাথে কেউ খারাপ কিছু করেনি তো?মেঘ দ্রুত নিজের শরীরের দিকে তাকালো।নাহ সব ঠিকই আছে,ও ফাংশনে যে শাড়িটা পড়েছিলো এখোনো সেটাই পড়ে আছে।মেঘের মাথা ভয়ে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।ওর শুধু এখন একটা কথাই ভাবছে ওকে এখান থেকে পালাতে হবে।মেঘ আর কিছু না ভেবে সোজা রুমের দরজা খুলে বেড়িয়ে গেলো।বাইরে বের হয়ে ও আরো অবাক হলো শুধু ওই রুমটা সাদা রঙের নয়,,পুরো বাড়িটাই একদম সাদা রঙের।কিন্তু মেঘের এখন এসব দেখার বা ভাবার সময় নেই।ও দিলো এক ভো দৌড় ,,রুমের বাইরের কড়িডোর দিয়ে কিছুটা দূর দৌড়ে আসতেই,হঠাৎ কিছু একটার শব্দ শুনে ওর পা দুটো থেমে গেলো।
মেঘ দাড়িয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলো শব্দটা কোথা থেকে এসেছে। হঠাৎ ওর চোখ যায় কড়ডোরের অপর পাশের একটা রুমের দিকে হ্যা শব্দটা ওখান থেকেই আসছে।মনে হচ্ছে কেউ ব্যাথ্যায় কাতরাচ্ছে।মেঘ একবার ভাবলো ও এখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যাবে, ওখানে যেই হোক তাতে ওর কি?কিন্তু পরক্ষনেই আবার ভাবলো যদি ওর মতো কেউ বিপদে পড়ে থাকে তাহলে অবশ্যই ওর হেল্প করা উচিৎ।মেঘ একটা শুকনো ঢোক গিলে আস্তে আস্তে রুমটার দিকে এগিয়ে গেলো।তারপর কাপাকাপা হাতে দরজাটা হালকা করে খুলে ভিতরে উকি মারলো।ভিতরে তাকাতেই ভয়ে মেঘের শ্বাস বন্ধ হয়ে গেলো।ওর চোখ থেকে আপনা আপনি গড়িয়ে পানি পড়তে লাগলো।
রুমটার মধ্যে একটা মেয়েকে চেয়ারে বেধে রাখা হয়েছে।মেয়েটার গায়ে অসংখ্য মারের দাগ।সারা গায়ে কালসিটে দাগ পড়ে গেছে।শুধু মারের দাগই না,, জায়গায় জায়গায় কেটে গেছে।দেখেই মনে হচ্ছে কেউ ধারালো ব্লেড টাইপ কিছু দিয়ে ইচ্ছে করে পোচ দিয়ে কেটেছে।মেয়েটার সামনের চেয়ারে একটা লোক বসে আছে।লোকটার গায়ে কালো হুডি আর মুখে কালো মাক্স পড়া।লোকটি নিচের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে আর হাতে থাকা গান টা নিয়ে কপালে শ্লাইড করছে।লোকটার পিছনে আরো চারজন লোক আছে, তাদের সবার মুখে কালো মাক্স দেয়া আর হাতে বন্ধুক নিয়ে দাড়িয়ে আছে।এদের দেখে মেঘের ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেলো।ও অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে মেয়েটার চেহারার দিকে তাকালো।তাকিয়েই ও বড়োসড়ো একটা ঝটকা খেলো।ও নিজের চোখকেই যেনো বিশ্বাস করতে পারছে না।এটা কিভাবে সম্ভব?এই মেয়ে এখানে কিভাবে এলো?মেঘ কাপাকাপা কন্ঠে অস্পষ্ট স্বরে বললো
“সৃষ্টি!”#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্ব_32
এদের দেখে মেঘের ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেলো।ও অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে মেয়েটার চেহারার দিকে তাকালো।তাকিয়েই ও বড়োসড়ো একটা ঝটকা খেলো।ও নিজের চোখকেই যেনো বিশ্বাস করতে পারছে না।এই মেয়ে এখানে কিভাবে এলো?মেঘ অস্পষ্ট স্বরে বললো
“সৃষ্টি!”
মেঘ ওর মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে হাটু ভেঙে বসে পড়লো।সেই দিনের সেই সৃষ্টির মধ্যে আর আজকের সৃষ্টির মধ্যে আকাশ পাতালের ডিফারেন্স।সেই দিনের সেই সুন্দর স্মার্ট মেয়েটা আজকে ক্ষত বিক্ষত হয়ে চেয়ারের সাথে বাধা অবস্থায় পড়ে আছে।মেঘের মনে শুধু একটা কথাই ঘুড়ছে,,এতো নিষ্ঠুরও কি কেউ হতে পারে?কিভাবে একটা মেয়েকে কেউ এইভাবে মারতে পারে?এই মেয়েটা এমন কি দোষ করেছে যার জন্য ওকে এতোটা ভয়ংকর শাস্তি পেতে হলো?মেঘের চোখ থেকে অঝোড়ে পানি পড়ছে।ভয়ে ও ওর মুখ হাত দিয়ে জোড়ে চেপে রেখেছে যাতে ওর কান্নার সাউন্ড কেউ শুনতে না পারে।মেঘ নিজেকে একটু শক্ত করে মনে মনে ডিসাইড করে নিলো,, যে করেই হোক ও সৃষ্টিকে এখান থেকে বাচিয়ে নিয়ে যাবে।তাই ও ওখান থেকে একটু সরে আড়ালে গিয়ে লোক গুলোর বের হওয়ার অপেক্ষা করতে লাগলো।
____
মুখোশ পড়া লোকটা মাথা উঠিয়ে একবার সৃষ্টির দিকে তাকালো।তারপর বসা থেকে দাড়িয়ে গান টা কোমরে গুজে গার্ডদের কে উদ্দ্যেশ্য করে সৃষ্টিকে দেখিয়ে গম্ভির কন্ঠে বললো
“এই ডাষ্টবিন টাকে নিয়ে গিয়ে হসপিটালে ভর্তি করে আসো।যদিও ওকে আরো কয়েকদিন টর্চার করতে চেয়ে ছিলাম কিন্তু এখন আমার পড়িটা এখানেই আছে,,ও যদি এসব দেখে তাহলে খুব ভয় পাবে।তাই এইবারের মতো এই মেয়েকে মাফ করে দিলাম।আর শোনো এই মেয়েকে এই রুম থেকে সরানোর পর পুরো রুমটা সুন্দর করে ক্লিন করবে।রুমের কোথাও যেনো রক্তের ছিটে ফোটাও না থাকে।বুঝেছো?”
হুডি পড়া লোকটার কথায়,পিছনের সেই চারজন মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। ওদের সম্মতি পেয়ে লোকটা রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।মেঘ ওইপাশে লুকিয়ে ছিলো তাই লোকটার কথা কিছুই শুনতে পায়নি।আর লোকটাও বের হওয়ার সময় মেঘকে দেখতে পায়নি।হুডি পড়া লোকটা বের হতেই সেই চারজন মাক্স পড়া লোকও সৃষ্টিকে কিভাবে নিয়ে যাবে তার ব্যাবস্থা করতে রুম থেকে বের হয়ে নিচে চলে গেলো।ওরা যেতেই মেঘ আড়াল থেকে বের হয়ে আস্তে করে দরজাটা খুলে পা টিপে টিপে ভিতরে প্রবেশ করলো।ভিতরে গিয়ে সৃষ্টির সামনে দাড়াতেই ওর আবার কান্না চলে আসলো।কি অবস্থা করেছে মেয়েটার এরা আদৌ মানুষ নাকি জানোয়ার?মেঘ আস্তে আস্তে করে সৃষ্টির গালে হাত রেখে চাপর মেরে ডাকলো।
“ম্যাম!ম্যাম! প্লিজ উঠুন।”
(মেঘ সেদিন সৃষ্টিকে ম্যাম ডেকেছিলো তাই আজকেও ম্যাম ডাকলো।)
মেঘের মৃদু কন্ঠের ডাকে সৃষ্টি অনেক কষ্টে চোখ খুলে পিটপিট করে তাকালো।তারপর কিছুক্ষন নিভু নিভু চোখে মেঘের দিকে তাকাতেই ও মেঘকে চিনে ফেললো।মেঘকে দেখেই ওর মনে আশার আলো জেগে উঠলো। মেঘের দিকে তাকিয়ে অসফুট স্বরে বলতে লাগলো
“প-প্লিজ বাচাও আমাকে। এরা আমাকে মেরে ফেলবে।আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো প্লিজ।”
মেঘ দ্রুত মেয়েটার হাত চেয়ার থেকে খুলতে খুলতে বললো
“চিন্তা করবেন না।আমি আপনাকে এখান থেকে বাচিয়ে নিয়ে যাবো।কিন্তু আপনি এখানে কিভাবে আসলেন?আর ওই লোক গুলোই বা কারা?”
বলেই মেঘ সৃষ্টির হাতের দড়িটা খুলে, হাটু গেড়ে সৃষ্টির সামনে বসে পায়ের দড়ি খুলতে লাগলো।সৃষ্টি মেঘকে কিছু একটা বলতে চাইছে কিন্তু পারছে না।মেঘের দিকে তাকিয়ে বারবার ঠোট নাড়াচ্ছে কিন্তু এতো মার খাওয়ার জন্য শরির একদম দূর্বল হয়ে গেছে তাই গলা থেকে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না।সৃষ্টি একটা সময় কথাটা বলতে না পেরে অস্থির হয়ে উঠলো।সৃষ্টিকে এতোটা অস্থির হতে দেখে মেঘ শান্তনার স্বরে বললো
“ম্যাম থাক,,আপনাকে কিছু বলতে হবে না।যা জানার পরে জেনে নিবো।আপাততো আমাদের এক্ষুনি এখান থেকে যেতে হবে।যেকোনো সময় ওরা এখানে চলে আসতে পারে।”
বলেই মেঘ সৃস্টির পা টা খুলে দিয়ে নিজে সোজা হয়ে দাড়ালো।তারপর সৃষ্টিকে বসা থেকে উঠিয়ে দাড় করিয়ে আস্তে আস্তে রুমের বাইরে যাওয়ার জন্য রওনা দিলো।সৃষ্টি নিজের গায়ের প্রায় সব ভর মেঘের উপর ছেড়ে দিয়েছে।মেঘ অনেক কষ্টে ওকে ধরে টেনে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।মেঘ সিড়ির কাছে এসে দাড়িয়ে গেলো তারপর উকি দিয়ে নিচের দিকে তাকালো নিচে কেউ নেই সব কেমন নিস্তব্ধ।ও আশে পাশে একবার সতর্ক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে নিলো,,নাহ এখানে কেউ নেই।মেঘ একটা স্বস্তির নিস্বাস ফেলে পা টিপে টিপে সিড়ি দিয়ে নিচে নামলো।নিচে নেমে একটু সামনে এগোতেই ওদের কানে গুলির বিকট একটা শব্দ ভেষে এলো।হঠাৎ এতো জোড়ে শব্দ হওয়ায় মেঘ আর সৃষ্টি ভয়ে একে অপরের থেকে ছিটকে দূরে সরে গেলো।মেঘ ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকিতেই দেখলো সেই হুডি পড়া লোকটা গান উপরের দিকে পয়েন্ট করে দাড়িয়ে আছে।মানে ইচ্ছে করেই উপরের দিকে মিস ফায়ার করেছে।মেঘকে আরো একধাপ অবাক করে দিয়ে দরজা খুলে সাত আটজন গার্ড হাতে গান নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো ,,সাথে কিচেন থেকে কয়েকজন মহিলা সার্ভেন্টরাও ছুটে আসলেন।মেঘ চোখ বড় বড় করে সবার দিকে তাকিয়ে আছে।ও এতোক্ষন ভাবছিলো বাড়িতে তেমন কেউ নেই কিন্তু এখন দেখছে মানুষের অভাব নেই। মেঘের ভয়ে অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।ও এখন কি করবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না।
এদিকে সৃষ্টি হুডি পড়া লোকটাকে দেখে খুব ভয় পেলো। কিন্তু ও শুধু একটা কথাই ভাবছে কিভাবে এখান থেকে যাওয়া যায়।কারন ও জানে ওই লোকটার হাতে এইভাবে পালানো অবস্থায় ধরা পড়লে ওকে ভয়ংকর শাস্তি পেতে হবে।হঠাৎ ওর চোখ গেলো মেঘের দিকে।মেঘ ভয়ে একদম কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে।সৃষ্টি মনে মনে একটা বাকা হাসি দিলো। হুম মেঘই এখন ওর একমাএ বেচে থাকার রাস্তা।যার জন্য ও এতোটা শাস্তি পেয়েছে আজকে তাকে ব্যাবহার করেই এখান থেকে বের হবে।সৃষ্টি আশে পাশে তাকিয়ে কিছু একটা খুজতে লাগলো।হঠাৎ ওর চোখ গেলো টি টেবিলের উপর রাখা একটা বিয়ারের কাচের বোতলের উপর।ও খুব সাবধানে গিয়ে টি টেবিলের উপর থেকে বোতলটা হাতে নিয়ে টি টেবিলের উপর জোড়ে একটা বারি দিলো।সাথে সাথে বোতটার অর্ধেক ভেঙে গেলো।সবাই কাচ ভাঙার শব্দ শুনে সৃষ্টির দিকে তাকালো।হুডি পড়া লোকটা সিড়ি থেকে নেমে দাড়িয়ে গিয়ে ভ্রু কুচকে সৃষ্টির দিতে তাকালো।মেঘ পিছনে ঘুড়ে সৃষ্টির দিকে অবাক চোখে তাকালো হঠাৎ করে সৃষ্টি কেনো এভাবে বোতটা ভাংঙলো মেঘ বুঝতেই পারলো না।মেঘ কিছু বলতে যাবে তার আগেই সৃষ্টি মেঘের কাছে এসে কাচের বোতলটা ওর গলার উপর রাখলো।সৃষ্টির এমন কাজে মেঘ হতবম্ভ হয়ে গেলো।ও ভাবতেও পারেনি সৃষ্টি ওর সাথে এমন কিছু করতে পারে।
সৃষ্টি মেঘের গলায় বোতলটা ধরতেই হুডি পড়া লোকটা সৃষ্টির দিকে গান পয়েন্ট করলো।সৃষ্টি লোকটার দিকে তাকিয়ে একটা বাকা হাসি দিয়ে বললো
“উহুম,,এই কাজ ভুলেও করবেন না স্যার,,আপনার প্রান ভোমরা কিন্তু আমার কাছে বন্ধি।শুধু এই বোতলটা একটু গলায় চেপে ধরবো সাথে সাথে আপনার জান সারাজীবনের জন্য উপরে চলে যাবে।”
সৃষ্টির কথা মেঘ কিছুই বুঝতে পারলো না।কি বলছে সৃষ্টি ও এই লোকটার প্রান ভোমরা মানে?কে এই লোকটা?মেঘের ভাবনার মধ্যেই লোকটা ওদের দিকে একটু এগিয়ে এসে সৃষ্টিকে উদ্দ্যেশ্য করে দাতে দাত চেপে বললো
“জিবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা আজকে করে ফেললি।সেই দিনের করা ওতোটুকু ভুলের জন্য তোকে এতোদিন শাস্তি দিয়েছি।তাহলে ভাব আজকের এই অন্যায়ের জন্য তোর কি অবস্থা করবো।আমি তো তোকে ছেড়ে দিতেই চেয়ে ছিলাম। কিন্তু তুই কি করলি নিজের মৃত্যুকে নিজেই ডেকে আনলি।আই অ্যাম সরি টু সে,,আজকেই তোর জিবনের শেষ দিন।”
লোকটার কথায় সৃষ্টি ভয় পেলো কিন্তু সেটা চেহারায় না ফুটিয়ে জোড় গলায় বললো
“যতোক্ষন এই মেয়ে আমার কাছে আছে,, আপনি আমার কিচ্ছু করতে পারবেন না।আপনার গার্ডদের বলুন আমাকে যেতে দিতে নাহলে এই মেয়েকে আমি মেরে ফেলবো।”
লোকটা বললো
“নিজের ভালো চাস তো ওকে ছেড়ে দে।ওর গায়ে যদি একটা আচোড়ও লাগে তাহলে তোর লাশ আমি শেয়াল কুকুরকে দিয়ে খাওয়াবো।”
বলেই লোকটা মেঘদের দিকে আরেকটু এগিয়ে সৃষ্টির মাথা বরাবর গানটা পয়েন্ট করলো।মেঘ ভয়ার্ত চোখে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে।ওর অবস্থা এখন ডাঙায় বাঘ আর জলে কুমিরের মতো।একজন গলায় কাচ ধরে দাড়িয়ে আছে আরেকজন সামনে বন্ধুক ধরে দাড়িয়ে আছে।এই মুহূর্তে মেঘের দুইজনকেই ভীষন ভয় লাগছে।
সৃষ্টি হুডি পড়া লোকটাকে এতোটা কাছে আসতে দেখে কোনো কিছু না ভেবেই, মেঘের গলায় বোতল টা চেপে ধরলো।মেঘ ব্যাথ্যায় কুকিয়ে উঠে আহ বলে চিৎকার দিলো।ওর গলা কেটে রক্ত বের হচ্ছে।লোকটা মেঘের গলা কেটে গেছে দেখে “মেঘ পড়ি” বলে জোড়ে একটা চিৎকার দিলো।কিন্তু লোকটার সেই ডাক মেঘের কান অবদি পৌছালেও মস্তিষ্ক অবদি পৌছালো না।ও হাত দিয়ে গলা চেপে ধরে রেখেছে,,মাথাটা কেমন বনবন করে ঘুড়ছে,,ব্যাথ্যায় চোখ থেকে এমনি এমনি পানি গড়িয়ে পড়ছে।লোকটা দ্রুত মেঘের কাছে এগিয়ে আসতে নিলেই সৃষ্টি আরো একটু পিছিয়ে গিয়ে বললো
“নো,,একদম এগোবেন না।তাহলে কিন্তু একদম ওকে শেষ করে দিবো।”
লোকটা চেচিয়ে বললো
“বাষ্টার্ডের বাচ্চা তোর আজকে কি অবস্থা করবো তুই স্বপ্নেও ভাবতে পারছিস না।তুই আমার পড়িকে আঘাত করেছিস তোকে এতোটা ভয়ংকর মৃত্যু দিবো যে পশু পাখিতেও তোর লাশ দেখলে ঘৃণায় মূখ ফিরিয়ে নিবে।”
বলেই লোকটা সৃষ্টির পায়ে গান পয়েন্ট করে সুট করলো। গুলিটা একদম সোজা গিয়ে সৃষ্টির গোড়ালি বরাবর লাগলো।সৃষ্টি জোড়ে একটা চিৎকার দিয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লো।সৃষ্টি পড়ে যেতেই সব গার্ড গুলো সৃষ্টির কাছে এসে ওর দিকে গান পয়েন্ট করে দাড়িয়ে রইলো।
মেঘ কান চেপে ধরে ফ্লোরে বসে পড়লো।ও ফ্লোরে বসে চোখ বন্ধ করে হাউমাউ করে কেদে দিলো।ভয়ে ওর সারা শরির এখনো কাপছে।হুডি পড়া ছেলেটা দৌড়ে গিয়ে মেঘের পাশে হাটু গেরে বসে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।তারপর ওর মাথায় আজস্র চুমু দিয়ে ব্যাথ্যাতুর কন্ঠে বললো
“সরি জান আমার তোমাকে রুমে একা রেখে আসা একদম ঠিক হয়নি।আজকে তোমার যদি কিছু হয়ে যেতো তাহলে আমার কি হতো!আই অ্যাম সরি কলিজা,,আমার একটা বোকামির জন্য তুমি এতোটা হার্ট হলে।আই প্রমিস আর কক্ষনো তোমাকে একা ছেড়ে কোথাও যাবো না।”
লোকটার কথায় মেঘ অবাক হলো।ও তো ভেবেছিলো এই লোকটা ওর কোনো ক্ষতি করার জন্য এখানে নিয়ে এসেছে,কিন্তু কথা শুনে তো মনে হচ্ছে এই লোক ওর ক্ষতি করা তো দূরের কথা সামান্য আঘাত টুকুও সহ্য করতে পারেনা।এরকম তো একজনই করে সবসময়।মেঘের কাছে লোকটায় স্পর্শটাও বড্ড চেনা চেনা লাগছে।তাহলে কি ও যেটা ভাবছে সেটাই ঠিক?এটা কি তাহলে!
মেঘ লোকটাকে কিছু বুঝতে না দিয়েই হঠাৎ করে লোকটার মাথা থেকে হুডিটা ফেলে দিলো।লোকটার মুখে মাক্স লাগানো কিন্তু তাও চোখ দুটো দেখে মেঘের চিনতে একটুও অসুবিধা হলো না।লোকটা ভাবতেও পারেনি মেঘ এমন একটা কান্ড করে বসবে।ওনি এসবের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। তাই দ্রুত আবার হুডিটা পড়তে নিলেই মেঘ আরেকটা টান দিয়ে মাক্সটাও খুলে ফেললো।তারপর লোকটার দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে কাপা কাপা কন্ঠে বললো
“আর নিজেকে আড়াল করতে হবে না।আমি আপনাকে চিনে ফেলেছি আহান ভাইয়া।”
কথাটা বলেই মেঘ আহানকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ছিটকে দুরে সরে গেলো।আহান হতবম্ভ হয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে।মেঘ যে এমন একটা কান্ড করবে ও ভাবতেও পারেনি।ও এতো তাড়াতাড়ি মেঘের সামনে এভাবে আসতে চায়নি।কিন্তু মেঘকে এভাবে কান্না করতে দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারেনি তাই এসে ওকে ওভাবে জড়িয়ে ধরেছে।আহান মেঘের দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে ওকে আবার জড়িয়ে ধরতে নিলেই মেঘ আহানের থেকে আরো পিছিয়ে গিয়ে ভয়ার্ত কন্ঠে বললো
“খবরদার আপনি আমার দিকে এক দম এগোবেন না।আপনি একটা খারাপ মানুষ।”
আহান অসহায় কন্ঠে বললো
“মেঘ পড়ি আমার কথাটা তো একটু শোনো!”
“কিচ্ছু শুনতে চাই না আমি,,আপনি একটা বাজে লোক।আপনি মানুষ খুন করেন।”
“মানুষ কোথায় খুন করলাম?আমি তো শুধু ওর পায়ে একটা শুট করেছি।সেটাকে কি খুন করা বলে?”
মেঘ চেচিয়ে বললো
“আপনি ওনার পায়েই বা কেনো শুট করেছেন?যদি গুলি টা অন্য কোথাও লাগতো?ওনি যদি মরে যেতেন?”
আহান শান্ত স্বরেই বললো
“আমি যদি ওকে শুট না করতাম তাহলে ও তোমাকে আরো আঘাত করতো।যেটা আমি কোনোদিন হতে দিবো না।আর গুলি অন্য কোথাও লাগার কোনো সম্ভাবনাই নেই,কারন আহান খানের টার্গেট কখনো মিস হয়না।”
“আমাকে আঘাত করলে করতো তাতে আপনার কি?আপনি কেনো ওনাকে এভাবে শুট করতে গেলেন?আর ওনাকে এইভাবে জানোয়ারের মতো টর্চার কেনো করেছেন?”
এবার মেঘের কথায় আহানের রাগ উঠে গেলো।ও রাগি কন্ঠে বললো
“ওকে কেনো টর্চার করেছি সেই কৈফিয়ত কি এখন তোমাকে দিতে হবে?ও অন্যায় করেছে তাই ওকে শাস্তি দিয়েছি।আর এইটুকু শাস্তি ওর জন্য যঠেষ্ট হয়নি।ওকে আরো ভয়ংকর শাস্তি পেতে হবে।”
মেঘ কাপা কাপা কন্ঠে বললো
“আরো ভয়ংকর শাস্তি পেতে হবে মানে?”
“সেটা তোমাকে না জানলেও চলবে।তুমি আমার কাছে এসো কাটা জায়গা থেকে ব্লিডিং হচ্ছে ব্যান্ডেজ করতে হবে হবে।”
মেঘ ফ্লোর থেকে উঠে দাড়িয়ে শক্ত কন্ঠে বললো
“মরে যাবো তবুও আপনার হাত থেকে ব্যান্ডেজ করাবো না।”
আহান ধমক দিয়ে বললো
“খবরদার মেঘ উল্টাপাল্টা কথা বললে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।ভালোয় ভালোয় বলছি আমার কাছে এসো।”
মেঘ আহানের দিকে তাকিয়ে তাছিল্য হেসে বললো
“আপনার কাছে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না।”
বলেই মেঘ বাইরের দরজার দিকে দৌড় দিলো।আহান বসা থেকে দ্রুত দাড়িয়ে বললো
“ষ্টপ মেঘ!খবরদার পালানোর চেষ্টা করো না।যেখানে আছো সেখানেই দাড়িয়ে যাও।”
মেঘ আহানের কথায় কোনো পাএাই দিলো না। দরজা দিয়ে দৌড়ে সোজা বাইরে চলে গেলো।দুইজন গার্ড মেঘের পিছনে দৌড়ে যেতে নিলেই আহান তাদের দিকে অগ্নিচোখে তাকিয়ে বললো
“ডোন্ট ডেয়ার টু টাচ হার।ওর থেকে একশো হাত দূরে থাকবে।ওকে ছোয়ার অধিকার আমি ছাড়া আর কারো নেই।গট ইট?”
গার্ড দুজন মাথা নেড়ে হ্যা সূচক সম্মতি জানালো।আহান দেখলো সৃষ্টি অঙ্গান হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে।ও গার্ডদের দিকে তাকিয়ে তীক্ষ্ম স্বরে বললো
“এই অসভ্য মেয়েটাকে পিছনের গোডাউনে নিয়ে বেধে রাখো।ওর পায়ে কোনো ব্যান্ডেজ বা ঔষধ লাগাবে না।আর খাবার তো দূরের কথা এক ফোটা পানিও যেনো ওকে কেউ খেতে না দেয়।”
বলেই আহান দৌড়ে বাইরে চলে গেলো।মেঘ বাইরে আসতেই ওর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।কারন বাইরে প্রায় বিশ পচিশ জনের মতো গার্ড দাড়িয়ে আছে।মেঘকে বাইরে আসতে দেখেই সবাই মাথা নিচু করে ফেললো।এদের দেখে মেঘের পা অটোমেটিক থেমে গেলো।ও ভাবলো হয়তো সবাই দৌড়ে এসে ওকে এক্ষুনি ধরে ফেলবে। কিন্তু ওর ভাবনাকে ভুল প্রমান করে সবাই নিজেদের জায়গায় মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলো।ওদের এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে মেঘ অবাক হলো কিন্তু বিষয়টা তেমন পাএা দিলো না।আপাততো ও এখান থেকে বাইরে বের হওয়ার তাড়ায় আছে তাই এতোকিছু ভাবার ওর সময় নেই।ও আবার গেটের দিকে ছুট লাগালো।
আহান বাসা থেকে বের হয়ে দেখলো মেঘ দৌড়ে গেটের দিকে যাচ্ছে।আহান হাতে থাকা রিভলবার টা কপালে শ্লাইড করতে করতে মেঘকে উদ্দেশ্য করে চেচিয়ে বললো
“মিসঃ মেঘনা রহমান এখনো ভালোয় ভালোয় বলছি যেখানে আছো সেখানে দাড়িয়ে যাও।নাহলে আমার কথার অবাধ্য হওয়ার ফল হারে হারে টের পাবে।আজ অবদি এখান থেকে আমার অনুমতি ছাড়া কোনো গ্যাং ষ্টাররা পযর্ন্ত বেরোতে পারেনি সেখানে তুমি তো সামান্য পুচকে বাচ্চা একটা মেয়ে।”
আহান কি বলছে তাতে মেঘের কিচ্ছু গেলো আসলো না।ও আহানের কথা কানেই তুললো না।ও আরো জোড়ে ছুটতে লাগলো।আহান মেঘকে আরো জোড়ে ছুটতে দেখে ওর মাথাটা গরম হয়ে গেলো।ও আর নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারলো না।ওর হাতে থাকা গানটা মেঘ যেদিকে ছুটে যাচ্ছে সেদিকে পয়েন্ট করে সোজা টির্গারে চাপ দিলো।সাথে সাথে গুলিটা গিয়ে সোজা একদম,,,,,
চলবে,,,,,
চলবে;,,,,,,,