ভালোবাসার অনুভূতি পর্ব -৪৩+৪৪

#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্বঃ43

অভিদের বাড়ির ড্রইংরুমের সোফায় বসে আছে মেঘরা সবাই।ওরা সবাই কিছুক্ষন আগেই এখানে এসেছে।বড়রা সবাই একপাশে বসে বিয়ের ব‍্যাপ‍্যার নিয়ে টুকিটাকি আলোচনা করছে।আরেক পাশের সোফায় আহান মাথা নিচু করে বসে চুপচাপ ফোন টিপছে।মেঘও মন খারাপ করে চুপচাপ বসে আছে।আহির আর মিহিরও থম মেরে বসে আছে।হিয়ান বাইরে গেছে ওর একটা জরুরী কল এসেছে সেটা পিক করতে।আলিশা ভিতরে নিজের রুমে বসে রেডি হচ্ছে।অভি দিশাদের বাসায় গেছে ওকে নিয়ে আসার জন‍্য।সাড়িকা,সাঈফা সবাইকে এই ভাবে চুপচাপ থাকতে দেখে নিজেরাও মন খারাপ করে চুপচাপ বসে আছে।

সার্ভেন্ট এসে ওদের সামনে টেবিল ভর্তি করে নাস্তা দিয়ে গেলো।কিন্তু তেমন কিছু একটা খেলো না।বড়রাও নিজেদের মতো কথা বলতে ব‍্যাস্ত এদিকে কি হচ্ছে সেদিকে ওনাদের খেয়াল নেই।কিছুক্ষনের মধ‍্যেই কলিংবেল বেজে উঠলো।একজন সার্ভেন্ট গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো।দরজাটা খোলার সাথে সাথে অভি হনহন করে ভিতরে ঢুকলো।ওর পিছন পিছন দিশাও বাড়ির ভিতরে ঢুকলো।অভি গিয়ে আহানের পাশে ধপ করে বসে পড়লো তারপর ওর মাকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“আম্মু এই নাও তোমার দিশা।সকাল থেকে “দিশা” “দিশা” করে আমার মাথা খারাপ করে দিয়েছো।নাও এনে দিয়েছি এখন মন ভরে দেখো।”

দিশা গিয়ে প্রথমে অভির মা-বাবা কে সালাম দিলো।তারপর বড়দের একে একে সবাই কে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করলো।অভির মা বসা থেকে উঠে গিয়ে দিশাকে জড়িয়ে ধরে বললো

“মাসাআল্লাহ,,আমার মেয়েটাকে তো অনেক সুন্দর লাগছে।”

এইটুকু বলতেই অভি ওর মায়ের কথায় ফোরন কেটে বললো

“আমি যদি এক ঘন্টা ধরে বসে বসে নিজের চেহারায় এই রকম হলুদ,মরিচ,লবন,চিনি,আটা, ময়দা মাখি তাহলে আমাকে ওনার থেকেও সুন্দর লাগবে।”

অভির কথা শুনে দিশা রাগি চোখে অভির দিকে তাকালো।এখানে বড়রা সবাই আছে,তাই জন‍্যে ও অভিকে কিছু বলতেও পারছে না।নাহলে এক গাদা কথা শুনিয়ে দিতো।অভির মা দিশার হাত ধরে নিয়ে গিয়ে ওকে ওনার পাশে বসিয়ে অভির তাকিয়ে বিদ্রুপের স্বরে বললো

“আটা,ময়দা মাখা তো দূরের কথা,তোকে যদি প্লাষ্টিক সার্জারিও করানো হয়।তাহলেও তুই আমার মেয়ের মতো সুন্দর হতে পারবি না।”

অভি অবাক কন্ঠে বললো

“হোয়াট!তুমি জানো,,আমার উপর প্রত‍্যেক দিন কতো মেয়েরা ক্রাশ খায়?লন্ডনে থাকতে কতো মেয়েরা আমার জন‍্য পাগল ছিলো।কতো মেয়েরা রোজ আমার সৌন্দর্যের প্রশংসা করে।আর তুমি এই বাইরের মেয়েটার জন‍্য নিজের ছেলেকে এইভাবে অপমান করছো?”

অভির মা অভির দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বললো

“লন্ডনের মেয়ে গুলোর চোখ আর মাথা দুটোতেই প্রভলেম ছিলো।তাই ওরা তোর মতো ছাগলের জন‍্যে পাগল ছিলো। আর কে নিজের ছেলে রে?তুই?যে বিদেশে থাকতে নিজের মায়ের সাথে সপ্তাহে একবারও কথা বলতো না।সব সময় ব‍্যাস্ত আছি বলে ফোন কেটে দিতো।সে আবার নিজেকে আমার ছেলে বলে দাবি করছে?তুই জানিস,,যেখানে তোর আমার সাথে কথা বলার জন‍্য দশটা মিনিট সময় ছিলো না।সেখানে দিশা দুই দিন পরপর আমাদের বাড়িতে এসে আমাকে এটা সেটা রান্না করে খাওয়াতো।আমার সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে গল্প করতো।দিশা পরের মেয়ে না,ও আমার নিজের মেয়ে।তোকে আর আলিশাকে আমি যতোটা ভালোবাসি তার থেকে হাজার গুন বেশি আমি দিশাকে ভালোবাসি।তাই আমার মেয়েকে কিছু বলার আগে মুখ সামলে কথা বলবি।আর যদি ভুলেও আমার মেয়ে কে বাইরের মেয়ে বলেছিস তাহলে তোকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিবো।”

অভি ওর মায়ের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।শেষ পযর্ন্ত ওর মা ওকে বাসা থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার কথা বললো?তাও আবার শুধুমাত্র দিশাকে বাইরের মেয়ে বলেছে সেইজন‍্য?অবশ‍্য ও আগে থেকেই জানতো ওর মা,,দিশা বলতে পাগল।অভিকে ওভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে অভির বাবা গম্ভীর কন্ঠে বললো

“ওই ভাবে গাধার মতো তাকিয়ে না থেকে দিশা কে সরি বলো।”

ওর বাবার কথায় অভি আরো অবাক হয়ে গেলো।ও অবাক কন্ঠে বললো

“আমি ওকে সরি কেনো বলবো?আজব!”

অভির বাবা বললো

“আমি বলেছি তাই সরি বলবে।চুপচাপ ওকে সরি বলো।”

“আরে আমি কি এমন অন‍্যায় করেছি যার জন‍্য ওকে সরি বলতে হবে?”

অভির বাবা ধমক দিয়ে বললো

“বেশি কথা আমার একদম পছন্দ না অভি।তুমি এক্ষুনি দিশা মা কে সরি বলবে।”

অভি বসা থেকে দাড়িয়ে দিশার সামনে গিয়ে দু-হাত জোড় করে বললো

“আমাকে ক্ষমা করে দিন দিশা ম‍্যাড‍্যাম।আমার ভুল হয়ে গেছে।আমি আর জিবনেও আপনাকে বাইরের মেয়ে বলবো না।এই কান ধরলাম প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন।আমার এই ভুলের জন‍্যে আপনি চাইলে আমি আপনার পায়েও ধরেও মাফ চাইতে পারি।চাইবো?”

অভির কান্ড দেখে সবাই মুখ টিপে হাসছে।দিশা একটু ভাব নিয়ে বললো

“নাহ থাক আর পা ধরতে হবে না। এই বারের মতো আপনাকে ক্ষমা করে দিলাম।পরের বার থেকে আমাকে বাইরের মেয়ে বললে আপনাকে আপনার লাগেজ সুদ্ধ বাড়ির বাইরে ছুড়ে মারবো।”

দিশার কথা শুনে অভির মাথায় রাগ উঠে গেলো।শেষ পযর্ন্ত এই মেয়েটা ওকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে?অভি রাগি চোখে দিশার দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বললো

“মিস দিশা তোমাকে তো আমি পরে দেখে নিবো।এর প্রতিশোধ যদি আমি তোমার থেকে না নিয়েছি তাহলে আমার নামও অভি না!”

কথাটা বলতেই অভির মা ধমক দিয়ে বললো

“তোর সাহস তো কম না?তুই আমার সামনে দিশাকে হুমকি দিচ্ছিস?এক থাপ্পরে তোর সব দাত ফেলে দিবো বেয়াদপ ছেলে।”

অভি ওর মায়ের কথা শুনে মুখটা বাচ্চাদের মতো বানিয়ে কাদো কাদো কন্ঠে বললো

“আমাকে কেউ ভালোবাসে না।সবাই শুধু আমাকে বকে।তোমাদের আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে হবে না।আমি নিজেই এক্ষুনি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।না,,শুধু বাড়ি থেকে যাবো না?এই দেশ থেকেই চলে যাবো।আর থাকবো না এই দেশে।আমাকে কেউ ভালোবাসে না,সবাই ওই বিষাকে ভালোবাসে।আমি চললাম আমার জামা-কাপর প‍্যাক করতে।”

বলেই অভি ওখান হনহন করে সিড়ি দিয়ে উপরে চলে গেলো।অভির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সবাই হা হা করে হেসে দিলো।আহান,মেঘ,মিহির,,আহির এতোক্ষন মন খারাপ করে থাকলেও এইবার ওরাও সবাই হেসে দিলো।

ভার্ষিটিতে ভর্তি হওয়ার পর দিশার যখন মেঘের সাথে আবার দেখা হয়েছিলো।তখন মেঘ মাঝে মাঝে ভার্ষিটি ছুটির পর আলিশার সাথে আলিশাদের বাড়িতে আসতো, সাথে দিশাকেও নিয়ে আসতো।ওরা এসে অভির মায়ের সাথে সারাক্ষন বকবক করতে থাকতো।অভির মা আগে থেকেই মেঘকে খুব স্নেহ করতো।দিশার সাথে কথা বলতে বলতে একটা সময় ওনি দিশাকেও খুব কাছের একজন ভেবে ফেলে ছিলেন।দিশাও ওনার প্রতি আলাদা একটা টান অনুভব করতো। তাই মেঘ না আসলেও ও অভির মায়ের সাথে দেখা করতে চলে আসতো।এই রকম মাঝে মাঝে আসাটা দিশার একটা সময় অভ‍্যাসে পরিনত হলো।ও সময় পেলেই যখন তখন অভির মায়ের সাথে দেখা করতে চলে আসতো।অভির মাও ধীরে ধীরে দিশাকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবেসে ফেলে ছিলেন।দিশার সাথে সব সিকরেট সেয়ার করতেন।দিশার মন খারাপ হলে ওকে রান্না করে খাওয়াতেন,শপিং করাতে নিয়ে যেতেন।আর অভি যখনই ফোন করতো তখনই ওর সাথে শুধু দিশার কথাই বলতো।অভি ওর মায়ের মুখে সারাদিন দিশার প্রশংসা শুনে দিশার প্রতি হিংসা হতো।তাই রেগে কাজ আছে বলে ফোন কেটে দিতো।ছেলেকে এমন রেগে যেতে দেখে অভির মা ওকে আরো বেশি বেশি জ্বালাতো।
___________________________

অভির মা দিশাকে বললো আলিশাকে গিয়ে নিচে নিয়ে আসতে।ওনার কথা মতো দিশা আলিশাকে নিয়ে আসতে উপরে চলে গেলো।ওর সাথে সাড়িকা আর সাঈফাও আলিশাকে আনতে গেলো।ওরা উপরে এসে করিডোর দিয়ে হেটে আলিশার রুমের দিকে যেতে লাগলো।দিশা ফোন স্ক্রল করতে করতে হাটছিলো তাই ও সাড়িকা,সাঈফার থেকে একটু পিছিয়ে পড়লো।হাটতে হাটতে হঠাৎ একটা রুমের সামনে আসতেই হঠাৎ কেউ দিশার হাত ধরে টান দিয়ে রুমটার মধ‍্যে নিয়ে গেলো।

সাড়িকা সাঈফা আলিশার রুমের সামনে এসে দিশার কোনো সারাশব্দ না পেয়ে পিছনে তাকালো।তাকিয়ে দেখলো পিছনে কেউ নেই।সাড়িকা ওবাক হয়ে বললো

“একি আপি তো আমাদের পিছনেই ছিলো।হঠাৎ কোথায় ভ‍্যানিশ হয়ে গেলো।”

সাঈফা স্বাভাবিক ভাবেই বললো

“হয়তো ওয়াশরুমে গেছে,চলে আসবে এক্ষুনি।”

“এই ভাবে না বলে আচৎমকা ওয়াশ রুমে চলে গেলো?স্ট্রেইঞ্জ!”

সাঈফা বিরক্তির সাথে বললো

“ওয়াশরুমে যাবে সেটা আবার বলে যাওয়ার কি আছে?আপি কি ছোট বাচ্চা নাকি?আর এই বাড়ির সবকিছু আপি খুব ভালো করে চিনে তাই আপির কাজ শেষ হলে ঠিক চলে আসবে।চল নিচে সবাই অপেক্ষা করছে আমরা আলিশা আপুই কে নিয়ে নিচে যাই।”

সাঈফার কথায় সাড়িকা মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে দুজন আলিশার রুমে চলে গেলো।
__________________

এদিকে দিশা সেই কখন থেকে ছটফট করে নিজেকে অভির থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু অভি দিশার দু-হাত পিছনে মুচরে ধরে দিশাকে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে দাড় করিয়ে রেখেছে।হ‍্যা তখন অভিই দিশাকে টেনে রুমের মধ‍্যে নিয়ে এসেছে।দিশা ছটফছ করতে করতে অভিকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে রাগি কন্ঠে বললো

“এটা কোন ধরনের অসভ‍্যতা,ছাড়ুন আমাকে নাহলে কিন্তু আমি চেচাবো।”

দিশাার কথা শুনে অভি বাকা হেসে বললো

“যতোই চেচাও তোমার আওয়াজ এই রুম থেকে বাইরে বের হবে না।বিকজ এই রুমটা সাউন্ড প্রুফ।তুমিতো সব সময়ই এই বাড়িতে আসো তোমার তো জানার কথা।”

অভির কথা শুনে দিশা কিছুটা থতমত খেয়ে গেলো।ও আগে থেকেই জানতো এই রুমটা সাউন্ড প্রুফ,কিন্তু একটু আগে অভি ওকে এভাবে নিয়ে আসায় ভয়ে সব ভুলে গিয়েছিলো।দিশা নিজেকে সামলে নিয়ে আবারও রাগি কন্ঠে বললো

“দেখুন ভালোয় ভালোয় বলছি ছাড়ুন আমাকে নাহলে কিন্তু,,,,”

দিশা কথাটা শেষ করার আগেই অভি ওর হাতে আরো জোড়ে মুচরে ধরলো।দিশা ব‍্যাথ‍্যায় চোখ খিচে বন্ধ করে আহ বলে মৃদ‍্যু চিৎকার দিলো।অভি দাতে দাত চেপে বললো

“নাহলে কিন্তু?নাহলে কিন্তু কি?কি করবে তুমি?তোমার সাহস তো কম না,তুমি আমার বাড়িতে,আমার সামনে দাড়িয়ে আমাকেই বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছো?আবার এখনো বলছো নাহলে কিন্তু?”

বলেই অভি দিশার হাতটা আরো জোড়ে চেপে ধরে দিশাকে একদম নিজের শরীরের সাথে মিশিয়ে নিলো।দিশা এইবার আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না,ব‍্যাথ‍্যায় চোখ খিচে বন্ধ করে রাখা অবস্থাই ওর চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো।অভি দিশাকে কাদতে দেখে বললো

“উপস!এই টুকুতেই কান্না চলে এলো?যেই মেয়ে হাতের সামান‍্য এতোটুকু ব‍্যাথ‍্যা সহ‍্য করতে পারে না,,সে আর অভি মির্জাকে হুমকি দেয়?”

দিশা চোখ খুলে অশ্রুসিক্ত চোখে অভির দিকে তাকিয়ে ধরা গলায় বললো

“লাগছে আমার ছাড়ুন প্লিজ।নাহলে কিন্তু ভালো মা,ভালো বাবা(অভির মা-বাবা)কে সব বলে দিবো।”

দিশার কথা শুনে অভি রেগে দিশাকে বেডের উপর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।তারপর নিজেও দিশার দিকে ঝুকে ওর দুহাত বেডের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে গায়ের সব ভর দিশার উপরে ছেড়ে দিয়ে দিশাকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে ধমক দিয়ে বললো

“এই মেয়ে তুমি আবার আমাকে হুমকি দিচ্ছো?তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি!তোমার মতো একটা পুচকে মেয়ে কথায় কথায় আমাকে হুমকি দেয় সিরিয়াসলি?নেহাত আম্মু-আব্বু তোমাকে খুব ভালোবাসে। নাহলে তোমাকে মেরে এতোক্ষনে তোমার লাশটা গায়েব করে দিতাম।তখন আমাকে হুমকি দেওয়ার ফল তুমি হারে হারে টের পেতে।”

অভি দিশার এতোটা কাছে আসায় দিশার হার্ট জোড়ে জোড়ে বিট করছে।ও ভীতু চোখে অভির দিকে তাকিয়ে আছে।মুখ ফুটে কোনো কথাই বলতে পারছে না।সব কথা গলায় দলা পাকিয়ে যাচ্ছে।অভি দিশাকে এভাবে ভয় পেতে দেখে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বললো

“একি এই টুকুতেই ভয় পেয়ে গেলে?এখন যদি তোমার সাথে আরো খারাপ কিছু হয় তখন?”

অভির কথা শুনে ভয়ে দিশার সারা শরীর বরফের মতো জমে গেলো।ও কাপা কাপা কন্ঠে বললো

“ম-ম-মানে?”

অভি দিশার দিকে একটা কিলার লুক দিয়ে তাকিয়ে লো ভয়েজে বললো

“তোমার কি মনে হয় বলোতো?এই ভাবে একটা মেয়েকে এতোটা কাছে পেয়েও আমি তাকে ছেড়ে দিবো?উহুম নেভার!আমি কখনো এতো বড় একটা সুযোগ হাত ছাড়া করবো না!আজকে আমার হাত থেকে তোমাকে কেউ বাচাতে পারবে না।”

বলেই অভি ধীরে ধীরে দিশার দিকে নিজের মাথাটা এগিয়ে নিয়ে যেতে লাগলো।অভিকে এগিয়ে আসতে দেখে ভয়ে দিশার হাত-পা কাপাকাপি শুরু করে দিলো।ও নিজের গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে অভিকে নিজের থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো।কিন্তু অভিকে কিছুতেই সরাতে পারলো না।অভির সাথে না পেরে একটা সময় দিশা ফুপিয়ে কেদে উঠলো।তারপর কাদতে কাদতে বললো

“প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন।আমার এতো বড় ক্ষতি করবেন না প্লিজ।আমি কক্ষনো আর আপনার সাথে ঝগরা করবো না।আপনি না চাইলে আমি আপনাদের বাড়িতেও কখনো আসবো না।ভালো মায়ের সাথেও কখনো যোগাযোগ রাখবো না।প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন।আমি আপনার ছোট বোনের মতো।”

এতোক্ষন অভি দিশাকে ভয় দেখানোর জন‍্য এমনিতেই ওই কথা গুলো বলেছিলো।কিন্তু দিশার শেষের কথাটা শুনে অভির ভিষন হাসি পেলো।ও দিশাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে বসে হাহা করে হেসে দিলো।

অভির থেকে ছাড়া পেয়ে দিশা আর কোনো দিকে না তাকিয়ে শোয়া থেকে উঠে দিলো এক ভো দৌড়।কিন্তু অসাবধানতা বশত বেডের পাশে থাকা টেবিলের কোনায় পা লেগে উপুর হয়ে ও ফ্লোরে পরে গেলো।দিশাকে ওভাবে পড়ে যেতে দেখে অভির হাসি বন্ধ হয়ে গেলো।ও দ্রুত গিয়ে দিশাকে টেনে তুলে দাড় করিয়ে ব‍্যাস্ত স্বরে বললো

“তোমার কোথাও লাগেনি তো?কি হলো এই ভাবে দৌড় দিলে কেনো?”

কথাটা বলেই অভি দিশার দিকে তাকিয়ে দেখলো দিশা ভয়ে কাপছে কাপছে।কাদতে কাদতে ওর চোখ,নাকের ডগা সব একদম লাল হয়ে গেছে।দিশাকে এতোটা ভয় পেতে দেখে অভির ওর প্রতি ভীষন মায়া হলো।সাথে অনুশোচনাও হলো এটা ভেবে যে এতোটা ভয় দেখানো ঠিক হয়নি।দিশা অভির দিকে তাকিয়ে অনুনয়ের স্বরে বললো

“আমার সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করবেন না প্লিজ।আমি আর কক্ষনো আপনাদের বাড়িতে আসবো না।আমার উপর একটু দয়া করুন প্লিজ।আপনি যদি আজকে আমার সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করেন তাহলে আমার বেচে থাকার কোনো উপায় থাকবে না।আমি নিজেকেই নিজে শেষ করে দিতে বাধ‍্য হবো।একজন ধ্বর্ষিতার তকমা গায়ে লাগিয়ে কিছুতেই আমি বেচে থাকতে পারবো না।বিশ্বাস করুন আমি কোনো খারাপ উদ্দ‍্যেশে আপনাদের বাড়িতে আসি না।আসলে আমার তো মা নেই,আর বাবা থেকেও নেই।তাই আমি বারবার ভালো মায়ের কাছে ছুটে আসি।ওনাদের কাছে আসলে মনে হয় আমি আমার মা-বাবাকে ফিরে পেয়েছি।আমি ওনাদের নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি তাইতো ওনাদের ভালোবাসা উপেক্ষা করতে পারি না।কিন্তু আজকের পর থেকে আমি কক্ষনো আর এই বাড়িতে আসবো না।আর আমার জন‍্য আপনাকে ওনাদের কাছে বকাও শুনতে হবে না।”

অভি এক দৃষ্টিতে দিশার দিকে তাকিয়ে আছে।ও ভালো করেই বুঝতে পারছে দিশা খুব ভয় পেয়েছে।ওর নিজের উপরই এখন রাগ লাগছে।কি দরকার ছিলো এতোটা ভয় দেখানোর?শুধু শুধু একটা হাসি খুশী মেয়েকে এইভাবে কাদালো।একটা মেয়ের কাছে যে নিজের সম্মানের থেকে দামী আর কিচ্ছু নেই সেটা তো ও ভালো করেই জানে।তারপরেও কেনো যে এই রকম ফালতু মজাটা করতে গেলো!অভি দিশার হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে ওকে বেডের উপর বসিয়ে দিয়ে নিজেও ওর সামনে দুই হাটু গেড়ে বসলো।তারপর দিশার গালে দু-হাত রেখে অপরাধি ভঙ্গিতে বললো

“আই অ‍্যাম সরি!আমি তোমার সাথে মজা করেছি।বিলিভ মি ওই কথা গুলো আমি একদম সিরিয়াসলি বলিনি।আমি শুধু তোমাকে একটু ভয় দেখাতে চেয়ে ছিলাম।কিন্তু তুমি যে এতোটা ভয় পেয়ে যাবে সেটা বুঝতে পারিনি।”

অভির কথা শুনে দিশার দেহে যেনো প্রান ফিরে আসলো।ও এতোক্ষন নিজের সম্মান হারানোর ভয়ে হিতাহিত জ্ঞান পযর্ন্ত হারিয়ে ফেলেছিলো।ভেবে ছিলো আজকে এখানেই হয়তো সব কিছু শেষ হয়ে যাবে।দিশা মাথাটা নিচু করে হিচকি দিতে দিতে কাদতে লাগতো।অভি দিশার চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বললো

“ষ্টপ ক্রাইং দিশা।এভাবে কেদো না প্লিজ।দেখো আমি কোনো মেয়েদের কখনো অসম্মান করি না।আর তোমাকে অসম্মান করার তো প্রশ্নই আসে না।এমনিতেই তুমি আমারই হবে।তাহলে আমি তোমার সাথে শুধু শুধু কেনো জোড় করে কিছু করতে যাবো?আর তোমাকে বারবার ছুটে ছুটে তোমার ভালো মায়ের কাছে আসতে হবে না।আমি খুব শিখ্রই তোমাকে পার্মানেন্টলি এই বাড়িতে নিয়ে আসার ব‍্যাবস্থা করছি।”

কথাটা বলতে বলতে অভির চোখ গেলো দিশার পায়ের দিকে।দেখলো দিশার পায়ের একটা নক উঠে গিয়ে সেখান থেকে গলগল করে রক্ত পড়ছে।অভি বুঝতে পারলো এটা তখন টেবিলের কোনায় পা লেগে পড়ে যাওয়ার জন‍্য হয়েছে।ও দিশার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো হাত জোড়ে চেপে ধরার জন‍্য ওর হাতেও লালা র‍্যাস পড়ে গেছে।অভি মুখ থেকে একটা বিরক্তি কর চ শব্দ উচ্চারন করে বসা থেকে দাড়িয়ে গিয়ে ওয়ারড্রোপ খুলে ফাষ্ট-এইড বক্স খুজতে লাগলো।

এদিকে দিশা অভির কথা শুনে কান্না বন্ধ করে হতবম্ভ হয়ে বসে আছে।ও অভির দিকে তাকিয়ে অবাক কন্ঠে বললো

“আমি আপনারই হবো মানে কি?আর আপনিই কিভাবেই বা আমাকে এই বাড়িতে পার্মানেন্টলি নিয়ে আসার ব‍্যাবস্থা করবেন?”#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্বঃ44

এদিকে দিশা অভির কথা শুনে কান্না বন্ধ করে হতবম্ভ হয়ে বসে আছে।ও অভির দিকে তাকিয়ে অবাক কন্ঠে বললো

“আমি আপনারই হবো মানে কি?আর আপনিই কিভাবেই বা আমাকে এই বাড়িতে পার্মানেন্টলি নিয়ে আসার ব‍্যাবস্থা করবেন?”

অভি কিছু না বলে চুপচাপ ওয়ারড্রোপ থেকে ফাষ্ট-এইড বক্স টা বের করে নিয়ে এসে দিশার সামনে এক হাটু গেরে বসলো।দিশা অভিকে চুপচাপ থাকতে দেখে বললো

“কি হলো আমার প্রশ্নের অ‍্যান্সার দিন?”

অভি দিশার দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললো

“সেটা নাহয় সময় হলেই জানতে পারবে।আপাততো চুপচাপ ভালো মেয়ের মতো বসে থাকো।তোমার পা টা ব‍্যান্ডেজ করতে হবে অনেকখানি ছিলে গেছে।”

বলেই অভি দিশার কাটা পা টা তুলে নিজের হাটুর উপরে রেখে ব‍্যান্ডেজ করতে লাগলো।অভি দিশার পা ধরেছে দেখে দিশা অভির হাটুর উপর থেকে পা টা নামিয়ে তড়িঘড়ি করে বললো

“একি আপনি পায়ে হাত দিচ্ছেন কেনো?আপনাকে ব‍্যান্ডেজ করতে হবে না।আমাকে ফাষ্ট-এইড বক্স টা দিন,,আমি নিজের টা নিজে করে নিতে পারবো।”

দিশার কথা শুনে অভি রাগি চোখে দিশার দিকে তাকালো।অভিকে এভাবে তাকাতে দেখে দিশার মুখটা ফ‍্যাক‍্যাশে হয়ে গেলো।অভি দিশার পা টা আবার নিজের হাটুর উপর তুলে দাতে দাত চেপে বললো

“চুপচাপ আমাকে আমার কাজটা করতে দাও।শুধু শুধু আমার রাগ উঠিও না।আমি রেগে গেলে তোমার হাত পায়ের যে ভালো আঙুল গুলো আছে ওগুলোও এটার মতো হয়ে যাবে বুঝলে?”

কথাটা বলেই অভি আবার ব‍্যান্ডেজ করায় মনোযোগ দিলো।দিশা শুকনো একটা ঢোক গিলে চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে রইলো।অভি দিশার পায়ের আঙুলে ব‍্যান্ডেজ করে হাতের র‍্যাস পড় জায়গায় ওয়েনমেন্ট লাগিয়ে দিলো।তারপর বসা থেকে দাড়িয়ে ফাষ্ট- এইড বক্স টা আবারও ওয়ারড্রোপে রেখে দিশাকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“পেইন কিলার খেতে হবে,,দুপুরে কিছু খেয়েছো?”

দিশা ডানে বামে ঘাড় ঘুড়িয়ে না সূচক মাথা নাড়ালো।অভি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দিশার কাছে গিয়ে ওকে ঝট করে কোলে তুলে নিলো।আকষ্মিক ঘটনায় দিশা ভ‍্যাব‍াচ‍্যাক‍া খেয়ে গেলো।দিশা চোখ বড় বড় করে অভির দিকে তাকিয়ে অবাক কন্ঠে বললো

“একি হঠাৎ এভাবে কোলে তুলে নিলেন কেনো?প্লিজ নামান আমাকে!”

অভি দিশাকে নিয়ে ওর রুম থেকে বের হতে হতে বললো

“তোমাকে আলিশার রুমে রেখে আসতে যাচ্ছি।এখন বাড়িতে অনেক মেহমান আছে।তোমাকে আমার রুমে দেখলে শুধু শুধু উল্টাপাল্টা কিছু ভেবে বসে থাকবে।”

কথাটা বলে অভি সামনে তাকাতেই দেখলো সাড়িকা সাঈফা আলিশাকে নিয়ে সবেমাএ রুম থেকে বের হয়েছে।ওরা অভির কোলে দিশাকে দেখে ষ্টাচু হয়ে দাড়িয়ে গেলো।তিনজনই রসগোল্লার মতো চোখ বড় বড় করে অভির দিকে তাকিয়ে রইলো।

অভি ওদের এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ধমক দিয়ে বললো

“কিরে এভাবে মূর্তির মতো সামনে দাড়িয়ে আছিস কেনো?সর সামনে থেকে!”

অভির কন্ঠস্বর কানে আসতেই ওদের হুস ফিরে আসলো।আলিশা অবাক কন্ঠে জিঙ্গেষ করলো

“তুই দিশাকে কোলে করে কোথা থেকে নিয়ে আসলি?আর কি হয়েছে ওর?”

অভি বিরক্তির স্বরে বললো

“ওয়াশরুমে পড়ে গিয়েছিলো,,পা কেটে গেছে।”

সাঈফা সন্দীহান কন্ঠে বললো

“ওয়াশ রুমে পড়ে গিয়েছিলো তো তোমার কোলে কিভাবে আসলো?”

দিশা লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে।এইভাবে অভির কোলে থাকা অবস্থায় যে ওদের সামনে পড়ে যাবে সেটা ও ভাবতেই পারেনি।

অভি বিরক্তিতে নাক মুখ কুচকে সাঈফা কে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“দিশা ওয়াশ রুমে পড়ে গিয়ে জোড়ে চিৎকার দিয়েছিলো।আমি ওর চিৎকারের শব্দ শুনতে পেয়ে গিয়ে দেখি ও ফ্লোরে পড়ে আছে।তাই ওকে কোলে তুলে নিয়ে আসলাম।আলিশার রুমে রেখে যাবো বলে।”

সাড়িকা ফিক করে হেসে দিয়ে বললো

“আচ্ছা আপি কে যখন ওয়াশ রুম থেকেই এখানে নিয়ে এসেছো তাহলে আপির পায়ে ব‍্যান্ডেজ আসলো কোথা থেকে?আর আপির চিৎকারের শব্দ তুমি একা শুনতে পেলে কিভাবে?বাড়িতে এতো লোক তারা কেনো শুনতে পেলো না?”

সাড়িকার কথা শুনে আলিশা আর সাঈফা ফিক করে হেসে দিলো।দিশা লজ্জায় অন‍্যদিকে মুখ ঘুড়িয়ে নিলো।অভি আলিশা,সাড়িকা,সাঈফাকে ধমক দিয়ে বললো

“তোদের এতো প্রশ্নের অ‍্যান্সার দিতে আমি বাধ‍্য না।সর সামনে থেকে।”

বলেই অভি হনহন করে আলিশার রুমের মধ‍্যে ঢুকে গেলো।আর ওরা অভির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাহা করে হেসে দিলো।

____________________________

সারাদিন সবাই অনেক হই হুল্লোর করলো।তারপর দুপুরে লাঞ্চ করার পর সবাই একসাথে বসে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে ফেললো।এক সপ্তাহ পরে বিয়ের তারিখ নির্ধারন করা হলো।অবশ‍্য সবাই মোটামুটি সুস্থ হলেও আহান এখনো অসুস্থ।তাই সবাই মিলে বিয়ের ডেট টা আরো পেছোতে চেয়েছিলো কিন্তু আহান বারন করে দিয়েছে।আহান বলেছে ও এখন একদম ঠিক আছে।ওর কোনো সমস‍্যা নেই।তাই তাড়াতাড়িই বিয়ের ডেটটা রাগা হয়েছে।বাকিরা পুরোপুরি সুস্থ না হলেও এমনিতে ঠিক আছে,,তবে ওদের সবার শরীরেই কোথাও না কোথাও কাটা ছেড়ার দাগ।মেঘের গায়ের কাচ ফোটার দাগ গুলো এখন আর নেই।সব সময়ের সাথে সাথে মিলিয়ে গেছে।কিন্তু ড্রাগস টা ওর উপরে খুব খারাপ ভাবে এফেক্ট করেছিলো তাই এখনো মাঝে মাঝে ওর মাথার মধ‍্যে ঝীমঝীম করে।
___________

সন্ধ‍্যার দিকে আহানরা সবাই অভিদের বাসা থেকে চলে আসলো।সবাই যার যার গাড়ি নিয়ে নিজ গন্তব্যে চলে গেলো।আহান এসে মেঘদের বাসার গেটের সামনে গাড়ি থামালো।আহান কে গেটের সামনে গাড়ি থামাতে দেখে মেঘ আহানকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে জিঙ্গেস করলো

“একি গাড়ি এখানে থামালেন কেন ভিতরে যাবেন না?”

আহান সামনের দিকে দৃষ্টি রেখে শক্ত কন্ঠে বললো

“নাহ ইচ্ছে করছে না,তুমি যাও।”

মেঘ জানে আহান একবার যখন মানা করেছে তখন আর হাজারবার বললেও যাওয়ার জন‍্য রাজি হবে না।তাই ও আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ গাড়ির দরজা খুলে বাইরে নামার জন‍্য পা বাড়ালো, ঠিক তখনই আহান মেঘের কোমরে এক হাত রেখে হেটকা টান দিলো।হঠাৎ এভাবে টান দেওয়ায় মেঘ গিয়ে হুমরি খেয়ে আহানের বুকের উপর পড়লো।আহান তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে মেঘের চোখে চোখ রাখলো।হঠাৎ আহানকে এভাবে তাকাতে দেখে মেঘ ভিষন অবাক হলো।আহান এক হাত দিয়ে মেঘের গাল আস্তে করে চেপে ধরে শান্ত স্বরে বললো

“সুইটহার্ট ভুল করেও আবিরের ধারে কাছে যাওয়ার চেষ্টা করবে না।ওর থেকে একশো হাত দূরে থাকবে।আর কথা তো একদমই বলবে না।যেখানেই থাকো না কেনো,আমি যখনই কল করবো সাথে সাথে ফোন পিক করবে।মেডিসিন গুলো ঠিকঠাক মতো খাবে।আর তোমার ওই সো কলড পরিবারের লোকদের থেকেও যতোটা সম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করবে।মনে থাকবে?”

মেঘ উপর নিচ করে হ‍্যা সূচক মাথা নাড়ালো।মেঘের সম্মতি পেয়ে আহান মেঘের গালে আরেকটু জোড়ে চাপ দিয়ে ওর দিকে ঝুকে বললো

“আমার একটা কথারও যদি অমান‍্য করেছো টিয়া পাখি তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।”
__________________________

মেঘ বাসায় ফিরে রুমে ঢুকে রুমের দরজা বন্ধ করে চুপচাপ বসে ছিলো।কিন্তু মিরা রহমান এসে মেঘকে নিচে ডেকে নিয়ে গেলো।মেঘ প্রথমে যেতে চায়নি কিন্তু মিরা রহমানের ধমক শুনে যেতে বাধ‍্য হলো।মিরা রহমান ট্রে তে স্নাক্স সাজিয়ে মেঘের হাতে ধরিয়ে দিয়ে মেঘকে ওগুলো ড্রইং রুমে গেষ্ট দের কাছে দিয়ে আসতে বললেন।মেঘ এক প্রকার বাধ‍্য হয়েই স্নাক্সের ট্রে তা হাতে নিয়ে ড্রইং রুমের দিকে এগিয়ে গেলো।তখনই বাহির থেকে ফোন টিপতে টিপতে বাসার ভিতরে প্রবেশ করলো মিহির।মিহিরকে ভিতরে ঢুকতে দেখেই মেঘ ট্রে তা হাতে নিয়ে ষ্টাচু হয়ে দাড়িয়ে গেলো।ভয়ে ওর হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেলো।এখন না জানি এই ছেলে কি একটা ঝামেলা বাজাবে।

মিহির সামনে এগিয়ে আসতে আসতে ওর চোখ গেলো মেঘের দিকে।ও ভালো করে মেঘের দিকে তাকাতেই দেখলো মেঘের হাতে খাবারের ট্রে।মিহিরের আর বুঝতে বাকি রইলো না মেঘ খাবারের ট্রে টা কেনো হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে।মিহিরের
মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে উঠলো।ও ওর ফোন টা প‍্যান্টের পকেটে ঢূকিয়ে মেঘের সামনে গিয়ে ওর হাত থেকে ট্রে টা ছো মেরে নিয়ে জোড়ে ফ্লোরে আচাড় মারলো। ট্রে টা এতোটাই জোড় আছাড় মারলো যে ওটা ফ্লোরে পড়ে ঝনঝন শব্দ করে উঠলো।

আবিরেরা সবাই এতোক্ষন ড্রইংরুমে বসে নিজেদের মতো কথা বলছিলো।হঠাৎ কাচ ভাঙার বিকট শব্দ কানে আসতেই ওরা সবাই ঘাড় ঘুড়িয়ে সামনে তাকালো।মিড়া রহমানও কাচ ভাঙার শব্দ শুনে কিচেন থেকে ছুটে এলেন।মিহির মেঘকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে রেগে চিল্লিয়ে বললো

“তোকে এসব করতে কে বলেছে মেঘ?বাড়িতে কি লোকের অভাব পড়েছে যে আমার বোনকে খাবার সার্ভ করতে হবে?”

মিহিরের চিৎকারে ওখানে উপস্থিত সবাই কেপে উঠলো।মিড়া রহমান মিহিরকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললেন

“মিহির ওগুলো আমিই মেঘকে সার্ভ করতে বলেছি।আর নিজের বাড়ির লোকদের সার্ভ করবে সেটা তো খারাপ কিছু না?তাহলে তুমি এতো ওভার রিয়‍্যাক্ট করছো কেনো?”

ব‍্যাস মিড়া রহমানের এইটুকু কথা আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করলো।মিহির রেগে সামনে থাকা একটা টি-টেবিলের উপর একটা জোড়ে লাথি মারলো।টেবিলটা সাথে সাথে কাৎ হয়ে পরে গেলো।মিহির রেগে চিল্লিয়ে ওর মাকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললো

“তুমি আমার বোনকে দিয়ে এদের সার্ভ করাচ্ছো আর আমাকে জিঙ্গেস আমি ওভার রিয়‍্যাক্ট কেনো করছি?আমার বোন এদের জন‍্য কষ্ট করে সার্ভ করবে আর এরা বসে বসে গরুর মতো গিলবে?”

মিহিরের কথা শুনে মিড়া রহমান ধমক দিয়ে বললেন

“মিহির মুখ সামলে কথা বলো।এনারা তোমার গুরুজন হয়।”

“এরা আমার কেউ হয়না!তোমাদের যতো খুশী এনাদের নিয়ে আদিক্ষেতা করো,কিন্তু আমাকে আর মেঘকে একদম এসব ড্রামার মধ‍্যে জড়াবে না।এদের কোনো কাজে মেঘকে টানবে না।যদি আরেক বার দেখেছি তুমি এদের কোনো কাজ মেঘকে দিয়ে করিয়েছো তাহলে আমি এই বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিবো।সব কিছু পুড়িয়ে শেষ করে দেবো।আশাকরি আমার রাগ সম্পকে তোমাদের ভালোই ধারনা আছে।তাই যাই করবে ভেবে চিন্তা করবে।”

বলেই মিহির আর কাউকে কিছূ বলার সুযোগ না দিয়ে মেঘকে নিয়ে সোজা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো।আর বাকিরা সবাই মিহিরের ব‍্যাবহার দেখে হতোবম্ব হয়ে বসে রইলো।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here