#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্বঃ45
শহরের ব্যাস্ত রাস্তার মধ্যেও মোটামুটি ফুল স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে মিহির।পাশেই মেঘ দুইকানে হাত চেপে ধরে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে আছে।মিহিরের সেই দিকে কোনো হুশই নেই। ও নিজের মতো করে গাড়ি চালাচ্ছে আর রাগে ফুসছে।
তখন মিহির মেঘকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে এসেই সোজা গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছে।মেঘও মিহিরের রাগ দেখে আর কিছু বলার সাহস পায়নি।চুপচাপ মিহিরের সাথে ও নিজেও চলে এসেছে।কিন্তু গাড়িতে ওঠার পরই মেঘের এমন মনে হচ্ছে ও গাড়িতে নয় এ্যারোপ্লেনে বসে আছে।মিহির গাড়ির স্পিড এতোটা বাড়িয়েছে যে ওদের সামনে থাকা গাড়ি গুলোও একে একে ওদের পিছনে চলে যাচ্ছে।মেঘ অনেক বার মিহিরকে বারন করেছে এতো জোড়ে গাড়ি না চালানোর জন্য। কিন্তু মিহির মেঘের কোনো কথাই কানে তোলেনি।ও নিজের ইচ্ছে মতো ফুল স্পিডে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে।নিজের সব রাগ গাড়ির উপরে ঝাড়ছে।মেঘ অতিরিক্ত ভয়ে চোখ বন্ধ করে থরথর করে কাপছে।হঠাৎ করে গাড়িটা থেমে যেতেই মেঘ চোখ খুলে সামনে তাকালো।দেখলো গাড়িটা খান মেনশনের সামনে দাড়িয়ে আছে।মেঘ ঘাড় ঘুড়িয়ে পাশে তাকিয়ে দেখলো মিহির সিটের সাথে সোজা হয়ে হেলান দিয়ে বসে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস ফেলছে।এক পলক মিহিরের দিকে তাকিয়ে ঝটফট করে গাড়ি থেকে নেমে গেলো।তারপর মিহিরকে উদ্দ্যেশ্য করে ঝাড়ি দিয়ে বললো
“গর্দভ কোথাকার,আরেকটু হলেই তো আমার প্রানপাখি খাচা ছাড়া হয়ে যেতো।তোর কোনো কমনসেন্স নেই?এইভাবে ইষ্টুপিডের মতো কেউ কার ড্রাইভ করে?আজকে যদি এ্যাক্সিডেন্ট হয়ে যেতো তখন কি হতো?”
মিহির মেঘের কথায় কোনো পাএাই দিলো না।ও চুপচাপ গাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়ির দরজাটা লক করে হনহন করে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো।মেঘ মিহিরকে চলে যেতে দেখে ও নিজেও মিহিরের পিছু পিছু বাসার ভিতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
_________________________
আহান আর আহাদ খান সোফায় বসে বিজনেস রিলেটেড কিছু কথা ডিসকাস করছিলো।মোনা খান কিচেনে রাতের রান্না করছিলেন।হঠাৎ বাসার কলিংবেল বেজে উঠতেই আহান এবং আহাদ খানের দৃষ্টি দরজার দিকে গেলো।একজন সার্ভেন্ট এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই মিহির হনহন করে বাসার মধ্যে প্রবেশ করলো।ওর পিছনে পিছনে মেঘও মাথা নিচু করে চুপচাপ ভিতরে প্রবেশ করলো।
এই সময়ে মেঘ আর মিহিরকে হঠাৎ এই বাড়িতে দেখে আহাদ খান,আহান দুজনেই অবাক হলো।মোনা রহমানও কলিং বেলের শব্দ শুনে কিচেন থেকে ড্রইংরুমে এসে ওদের দেখে বেশ অবাক হলেন।এমনিতে মিহির যখন তখন এই বাড়িতে চলে আসে আহিরের সাথে।কিন্তু মেঘ বিনা নোটিশে এভাবে হঠাৎ করে কখনো এই বাড়িতে আসে না।তাছাড়া মিহিরকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও ভয়ংকর রেগে আছে।মোনা খান মিহিরের দিকে এগিয়ে এসে ওকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“বাবাই এতো রেগে আছিস কেনো?কিছু কি হয়েছে?”
“এখন অবদি কিছুই হয়নি।তবে খুব তাড়াতাড়ি হবে।আমি ওই রহমান পরিবারের সবাইকে খুন করে মাটিতে পুতে দিবো।সাথে তোমার বোন আর তার ওই মহান হাজবেন্ট কেও!”
রাগি কন্ঠে কথাটা বলেই মিহির সিড়ি দিয়ে উপরে চলে গেলো আহিরের রুমের দিকে।মোনা খান অনেক বার মিহিরকে পিছন থেকে জিঙ্গেস করলেন কি হয়েছে?কে কি বলেছে?কিন্তু মিহির ওনার প্রশ্নের কোনো অ্যান্সারই করলো না।মিহির উপরে যেতেই সবার চোখ গেলো মেঘের উপর।মেঘের চেহারায় স্পষ্ট ভয়ের ছাপ দেখা যাচ্ছে।
আহান ওর হাতে থাকা পেন টা আঙুলে নিয়ে ঘোড়াচ্ছে আর সুক্ষ চোখে মেঘকে অবজারভ করছে।হঠাৎ মেঘের এইভাবে ভয় পাওয়ার কারন টা ওর মাথায় ঢুকছে না।মেঘ বারবার আহানের দিকে আর চোখে তাকাচ্ছে কিন্তু আহানের এমন সুক্ষ চাহনি দেখে আবার ভয়ে চোখ নামিয়ে নিচ্ছে।
আহাদ খান বসা থেকে উঠে এসে মেঘের মাথায় এক হাত রেখে ওকে উদ্দ্যেশ্য করে আহ্লাদি কন্ঠে জিঙ্গেস করলো
“কি হয়েছে আম্মুটা?এতোটা ঘাবরে আছো কেনো?তোমাকে কেউ কিছু বলেছে?”
মেঘ একটা জোড় পূর্বক হাসি দিয়ে বললো
“না পাপা,,আমাকে আবার কে কি বলবে?কেউ কিছু বলেনি তো।”
“তাহলে এতোটা ভয় পেয়ে আছো কেনো?আর মিহিরই বা এতো রেগে আছে কেনো?বাড়িতে কিছু হয়েছে?”
আহাদ খান কথাটা বলতেই মেঘ দ্রুত কন্ঠে বললো
“না না বাড়িতে কিছুই হয়নি।সব কিছু ঠিকঠাকই আছে।আসলে পাপা আমি একটু ক্লান্ত,তাই হয়তো আমাকে এই রকম দেখাচ্ছে।আর ভাইয়া কেনো রেগে আছে আমি জানি না।”
মেঘের কথা শুনে আহাদ খান এক হাতে মেঘকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে মুচকি হেসে বললো
“কিছু না হলেই ভালোরে আম্মুটা।তোকে নিয়েই আমার যতো চিন্তা।আহান,আহির,মিহির ওরা যেটা চায় সেটা ঠিক ওরা আদায় করে নেয়।হয় সোজা পথে নাহলে বাকা পথে।ওদের নিয়ে আমাকে কখনো ভাবতে হয় না।কিন্তু তুইতো কখনো কিছু মুখ ফুটে চাস না।তোর ভালো লাগা খারাপ লাগার বিষয়ে কাউকে কিচ্ছু বলিস না।হাজার কষ্ট হলেও নিজের পছন্দের জিনিসগুলো অন্যেদের দিয়ে দিস।তাইতো তোকে নিয়ে আমাকে সব সময় ভাবতে হয়।”
আহাদ খানের কথা শেষ হতেই মেঘ ম্লানো হেসে আহাদ খানকে জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বললো
“আমাকে নিয়ে তোমরা কেনো এতো চিন্তা করো পাপা?আমি মুখ ফুটে কিছু না চাইতেই তোমরা সবকিছু আমার সামনে এনে হাজির করো।আমাকে কখনো কিছু চাওয়ার সুযোগই তো তোমরা দেওনা।তাহলে কিভাবে চাইবো বলো?”
মোনা খান এক দৃষ্টিতে আহাদ খান আর মেঘের দিকে তাকিয়ে আছেন।ওনার ঠোটের কোনে তৃপ্তির হাসি।উনি মাঝে মাঝে ভুলেই যান যে আহাদ খান আর মেঘের মধ্যে কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই।ওদের দুজনকে দেখলে যে কেউ খুব সহজেই বিশ্বাস করবে ওরা বাবা মেয়ে। কখনো কখনো মোনা খানের মনে হয় ওনার থেকে মেঘকে আহাদ খান বেশি ভালোবাসে।কারন উনি আজ অবদি কখনো আহাদ খানকে মেঘের সাথে রাগি স্বরে কথা বলতে শুনেনি।আহান,আহির,মিহির থেকে শুরু করে ওনার রাজনৈতিক, ব্যাবসাহিক সেক্টরে যতো লোক আছে তাদের সবার সাথে উনি বেশ স্ট্রিক্টলি কথা বলেন।একমাএ মেঘের সাথেই আহাদ খান সব সময় আহ্লাদি কন্ঠে কথা বলে।এই চার বছরে উনি কখনো মেঘকে একটা ধমকও দেননি।
মেঘ আহাদ খানকে ছেড়ে দিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো
“পাপা আমি খুব ক্লান্ত।একটু ফ্রেস হয়ে আসি প্লিজ?তারপর আমরা দুই বাবা মেয়ে মিলে জমিয়ে আড্ডা দিবো।”
মেঘের কথা শুনে আহাদ খান মেঘের গাল টেনে দিয়ে বললেন
“ওকে আম্মুটা যাও ফ্রেস হয়ে আসো।”
_____________________________
মেঘ ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেস হয়ে টাওয়েল দিয়ে হাত-মুখ মুছতে মুছতে বের হলো।বের হয়েই বেডের উপর টাওয়েল টা রেখে পিছনে ঘুরতেই দেখলো আহান হনহন করে রুমের মধ্যে ঢুকে ঠাস করে রুমের দরজাট লক করে দিলো।আহানকে হঠাৎ এভাবে আসতে দেখে মেঘ কিছুটা ভ্যাব্যাচ্যাগ্যা খেয়ে গেলো।আহান দরজাট লক করে দিয়ে পিছনে ঘুরে একপা একপা করে মেঘের দিকে আগাতে আগাতে বললো
“এতোটা অবাক হওয়ার কিছুই নেই।আমি তোমার রুমে কখনোই পারমিশন নিয়ে ঢুকিনি আর ঢুকবোও না।আমার যখনই ইচ্ছে তখনই এভাবে চলে আসবো।যাই হোক,এইবার বলো আজকে বাড়িতে কি হয়েছিলো?”
আহানের প্রশ্ন শুনে মেঘের চোখে মুখে আবার ভয়ের ছাপ ফুটে উঠলো।ও জানে আহান যদি এখন বাড়িতে ঘটা ঘটনাটা জানতে পারে তাহলে হয়তো আবার একটা বড়সড় ঝামেলা হবে।এই মুহুর্তে কোনো ঝামেলার সৃষ্টি হোক সেটা মেঘ কিছুতেই চাইছে না।একবার হিয়ানের বিয়েটা মিটে যাক তারপর যা হওয়ার হবে।
মেঘ কাচুমাচু করে দাড়িয়ে নিমনিমে কন্ঠে বললো
“বাড়িতে কি হবে?কিছুই তো হয়নি!”
আহান হাটতে হাটতে মেঘের একদম কাছে এসে বললো
“কিছুই হয়নি তাহলে তুমি আমার প্রশ্ন শুনে এতোটা ভয় পাচ্ছো কেনো?”
মেঘ শুকনো একটা ঢোক গিলে কাপাকাপা কন্ঠে বললো
“ক-কোথায় ভ-ভয় প-পাচ্ছি?”
আহান মেঘের দিকে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললো
“ভয় পাচ্ছো না তাহলে তোমার গলা কাপছে কেনো?”
আহানকে এগিয়ে আসছে দেখে মেঘ পিছিয়ে গিয়ে একদম খাটের সাথে লেগে দাড়ালো।তারপর মাথাটা নিচু করে বললো
“ক-কোথায় গ-গলা ক-কাপছে?”
মেঘের কথা শেষ হতেই আহান মেঘের কোমরে হাত রেখে একটানে মেঘকে নিজের বুকে এনে ফেললো।তারপর তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে বললো
“আমার সাথে মিথ্যা বলার চেষ্টাও করো না মেঘ পরী।আমার সাথে মিথ্যা বলার ফল তোমার জন্যও ভালো হবে না।আর যাদের জন্য বলছো তাদের জন্যে তো আরোই ভালো হবে না।তাই বলছি ভালোয় ভালোয় সত্যিটা বলে দাও।”
মেঘ আহানের দিকে একবার অসহায় চোখে তাকিয়ে মাথাটা নিচু করে ফেললো।মেঘকে চুপ করে থাকতে দেখে আহান মেঘের কোমর একটু চেপে ধরে বললো
“ওকে টিয়া পাখি,তোমাকে কিচ্ছু বলতে হবে না।তুমি যদি ভেবে থাকো,তুমি না বললে আমি কিছুই জানতে পারবো না?তাহলে তুমি ভূল ভাবো!তোমার বিষয়ে কোনো খবর নিতে আমার শুধু কয়েক সেকেন্ড লাগবে।ভেবে ছিলাম তোমার মুখ থেকে সত্যিটা শুনবো, কিন্তু তুমি যখন বলবেই না।তখন আমি নাহয় নিজেই সবটা জেনে নিবো।একবার সত্যিটা জানতে পারি তারপর তোমার ক্লাস নিচ্ছি।”
আহানের কথা শুনে মেঘ কাদো কাদো মুখ করে আহানের দিকে তাকালো।আহান মেঘকে ছেড়ে দিয়ে রুমের দরজা খুলে বেড়িয়ে যেতে যেতে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“ডিনারের সময়ে চুপচাপ নিচে চলে আসবে।খাবার না খাওয়ার জন্য যদি কোনো অযুহাত দেখিয়েছো তাহলে তোমাকে আমি সারা রাত পুলের মধ্যে দাড় করিয়ে রাখবো।”
আহানের কথা শুনে মেঘ চিৎ পটাং হয়ে বেডের উপর শুয়ে পড়লো তারপর কাদো কাদো কন্ঠে বললো
“আল্লাহ এটা আমি কাকে ভালো বাসলাম?কথায় কথায় শুধু হুমকি দেয়।এর থেকে তো আমার সিঙ্গেল লাইফই ভালো ছিলো।
ব্যা…ব্যা….ব্যা…”
___________________________
মেঘ নিচে নেমে আহাদ খান আর মোনা খানের সাথে কিছুক্ষন গল্প গুজব করলো।তারপর সবাই মিলে একসাথে ডিনার করতে বসলো।খাওয়ার মধ্যেই মেঘ খেয়াল করলো আহান,আহির, মিহির তিনজনই গম্ভীর মুখ করে খাবার খাচ্ছে।মোনা খান,আহাদ খানও বিষয়টা খেয়াল করলেন।ওনারা দুজন ওদের কয়েকবার জিঙ্গেসও করলেন ওদের কি হয়েছে?কিন্তু ওরা এটা সেটা বলে কথা এড়িয়ে গেলো।ওরা এড়িরে যাচ্ছে দেখে মোনা খান আহাদ খানও বেশি জোড় করলেন না।সবাই চুপচাপ যে যার মতো খেতে লাগলো।খাওয়া শেষে আহান বসা থেকে দাড়িয়ে মিহিরের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললো
“মিহির নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করতে শেখ।রাগের মাথায় হুটহাট কোনো কাজ করে ফেলাটা চরম বোকামি।আজকে তুই যেটা করেছিস তাতে তোর বোনের কতো বড় ক্ষতি হতে পারতো তোর ধারনা আছে?”
আহানের কথা শুনে মিহির অবাক হয়ে আহানের দিকে তাকালো।কারন ও আহানকে সন্ধ্যায় ঘটে যাওয়া বিষয়টা কিছুই জানায়নি। ইনফ্যাক্ট এখানে আসার পর আহানের সাথে ওর কথাই হয়নি।মিহিরকে এভাবে তাকাতে দেখে আহান একটা বাকা হাসি দিয়ে বললো
“এভাবে তাকানোর তো কিছু নেই মিহির।তুই না বললেও আমার কাছে সব খবরই আসে সেটা তো তোর ভালো করেই জানার কথা।যাই হোক আজকে যাই করেছিস,,ভবিষতে যেনো কখনো এরকম কিছু করতে না শুনি।সব সময় সাবধানে ড্রাইব করবি নাহলে তোর ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল করানো ছাড়া আমার আর কোনো উপায় থাকবে না।”
কথাটা বলেই আহান কোনোদিক না তাকিয়ে সোজা উপরে চলে গেলো।মিহির আহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ঠোট টা বাচ্চাদের মতো ফুলিয়ে রাখলো।
____________________________
রাত 2:30
মাঝরাতে হঠাৎ করেই দিশার ঘুমটা ভেঙে গেলো।ও ধরফর করে শোয়া থেকে উঠে বসলো।ওর সারা শরীর কেমন থরথর করে কাপছে।গলাটা শুকিয়ে একদম কাঠ হয়ে গেছে।মনে হচ্ছে এখুনি পানির তেষ্ঠায় প্রানটা বেড়িয়ে যাবে।দিশা পাশে তাকিয়ে দেখলো আলিশা গভির ঘুমে তলিয়ে আছে।ও ভাবলো আলিশাকে ডাকবে কিন্তু পরেক্ষনেই আবার ভাবলো সারাদিন আলিশার উপর দিয়ে অনেক ধকল গেছে তাই ওকে ডাকাটা উচিৎ হবে না।দিশা কোনো রকম শোয়া থেকে উঠে দাড়ালো।সোজা হয়ে দাড়াতেই পায়ে ব্যাথ্যায় কুকিয়ে উঠলো।নোখের ভিতরে এখনো যন্ত্রণা হচ্ছে।ও খাটের একপাশ ধরে ভর দিয়ে দাড়িয়ে সারা রুমে চোখ বুলালো।কিন্তু রুমের কোথাও কোনো পানির বোতল রাখা নেই।হয়তো এতো ঝামেলার মধ্যে আলিশা পানি রাখতে ভূলে গেছে।এটা ভেবে নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
দিশা দেয়ালে ভর দিয়ে আস্তে আস্তে সিড়ির কাছে আসলো।এসে ধীরে ধীরে সিড়ি দিয়ে নামতে লাগলো।অর্ধ সিড়িতে নামতেই দেখতে পেলো অভি পানির বোতল হাতে নিয়ে উপরের দিকেই আসছে।অভিকে দেখে দিশা দাড়িয়ে গেলো।অভিও এতো রাতে দিশাকে এখানে এভাবে দেখে ষ্টাচু হয়ে দাড়িয়ে গেলো।দিশা খেয়াল করলো অভি ওর দিকে পুরো ভুত দেখার মতো চমকে তাকিয়ে আছে।অভিকে এভাবে তাকাতে দেখে দিশা ভ্রু কুচকে নিজের শরীরের দিকে তাকালো।তাকিয়েই ওর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।এতোক্ষন ওর যে পিপাসা পেয়ে ছিলো সব মুহুর্তের মধ্যে হাওয়া হয়ে গেলো।ও চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে একবার নিজের শরীরের দিকে তাকাচ্ছে আরেক বার অভির দিকে তাকাচ্ছে।
দিশা তাড়াহুড়োয় নিজের ওড়না আনতেই ভুলে গেছে।ওর গায়ে যে ওরনা নেই সেটা এতোক্ষন ওর খেয়ালই ছিলো না।দিশা আশে পাশে তাকিয়ে আর কোনো উপায় না পেয়ে নিজেকে লজ্জার হাত থেকে বাচানোর জন্য পিছনে ঘুড়ে দৌড়ে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে লাগলো।কিন্তু দুই-তিন সিড়ি উঠতেই অ্যাক্সিডেন্টলি ওর পা টা ফসকে গেলো।পা টা ফসকে পড়ে যেতে নিলেই অভি দ্রুত এসে দিশাকে ধরে ফেললো।দিশা ভয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে আছে।ভয়ে ওর সারা শরীর কাপছে।কিছুক্ষন পরে ওর খেয়াল হলো ও পড়ে যায়নি,কেউ ওকে ধরে রেখেছে।দিশা ফট করে চোখ খুলে সামনে তাকালো।তাকিয়েই দেখলো অভি ওর কোমরে একহাত দিয়ে ধরে রেখে ওর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।অভিকে এভাবে তাকাতে দেখে দিশা শুকনো একটা ঢোক গিললো।
অভি কোনো কথা না বলে আচমকা দিশাকে পাজকোলে তুলে নিলো।তারপর উপরে এসে দিশাকে নিয়ে সোজা নিজের রুমে গিয়ে ওকে বেডের উপর এক প্রকার ছুড়ে মারলো।হঠাৎ করে এভাবে ফেলে দেওয়ায় দিশা মুখ থেকে অসফুট স্বরে আহ বলে মৃদু চিৎকার দিলো।অভি গিয়ে দরজাটা লক করে দিয়ে এসে দিশাকে একটানে শোয়া থেকে উঠিয়ে দাড় করালো।তারপর কোনো কথা না বলে দিশার গালে ঠাটিয়ে একটা চড় মারলো।চড়টা খেয়ে দিশা তাল সামলাতে না পেড়ে উপুৎ হয়ে বিছানার উপর হুমড়ি খেয়ে পড়লো।অভি আবারও দিশার বাহু ধরে টেনে দাড় করিয়ে ওর এক হাত পিছনে নিয়ে মুচরে ধরে বললো
“গাধা কোথাকার এই ভাবে কেউ দৌড় দেয়?আজকে যদি পড়ে গিয়ে কিছু একটা হয়ে যেতো তখন কি হতো?ঝগরা করা ছাড়া আর কিছু শিখেছো জিবনে?মাথার মধ্যে কি একটুও বুদ্ধি আছে নাকি সবটাই গোবর ঢুকানো?”
অভির কথা মেঘের কান অবদি পৌছালেও ও মুখ থেকে একটাও কথা বলতে পারছে না।কারন থাপ্পরটা এতোই জোড়ে পড়েছে যে দিশার মাথায় ঝিম ধরেছে।গালটা ভিষন জ্বলছে।দিশাকে চুপ থাকতে দেখে অভি আবারও দিশাকে ধমক দিয়ে বললো
“এই মেয়ে চুপ করে আছো কেনো?আমার প্রশ্নের উওর দাও?আর তুমি এতো রাতে কোন সাহসে ওড়না ছাড়া নিচে গিয়েছিলে হ্যা?জানো বাড়িতে কতো মেহমান আছে?আজকে আমার জায়গায় যদি অন্যকেউ থাকতো তখন কি হতো একবার ভেবে দেখেছো?”
অভি দিশার হাত এতো জোড়ে চেপে ধরেছে ব্যাথ্যায় ওর চোখ থেকে পানি পড়ছে।দিশা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে কাদতে বললো
“আমার খুব পানির পিপাসা পেয়েছিলো।শরীরটা খুব খারাপ লাগছিলো।রুমে কোথাও পানি ছিলো না।তাই আমি নিচে যেতে চেয়ে ছিলাম পানি খাওয়ার জন্য।বিশ্বাস করুন আমার একটুও খেয়াল ছিলো না যে আমার গায়ে ওড়না নেই।”
দিশার কথা শুনে অভির ওর প্রতি অনেকটা মায়া হলো।ও দিশার হাতটা ছেড়ে দিলো।তারপর জোড়ে জোড়ে দুটো নিশ্বাস নিয়ে নিজের রাগাটাকে কন্ট্রোল করে শান্ত স্বরে বললো
“তোমার পানির পিপাসা লেগেছিলো তুমি আলিশাকে ডাকলেই পারতে?অথবা তোমার ফোন ফোন থেকে আম্মুকে বা আমাকেও তো ফোন দিতে পারতে?এতো কষ্ট করে পা ব্যাথ্যা নিয়ে নিচে যাওয়ার কি দরকার ছিলো?”
অভি যে হাতটা চেপে ধরেছিলো দিশা ওই হাতটা ধরে কাদতে কাদতে বললো
“আপির উপর দিয়ে সারাদিন এতো ধকল গেছে তাই আর আপিকে উঠাইনি।আর আমার তখন খুব কষ্ট হচ্ছিলো তাই কাউকে কল করার কথা মাথাই আসেনি।”
দিশার কথা শুনে অভির বুকের বা পাশে কেমন চিনচিনে ব্যাথ্যা অনুভব হলো।অভি দিশার দিকে তাকিয়ে দেখলো ও এখনো চোখ বন্ধ করে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে।গালে পাচ আঙুলের স্পষ্ট ছাপ বসে আছে।অভি গিয়ে দিশাকে কোলে নিয়ে ওর বেডের উপর শুইয়ে দিলো।তারপর ওর মাথার নিচে হাত দিয়ে মাথাটা একটু উচু করে ধরে ওকে পানি খাইয়ে দিলো।দিশা পানি খাওয়ার পর আস্তে আস্তে বেটার ফিল করতে লাগলো।কিন্তু সন্ধ্যায় পেইন কিলারের সাথে ঘুমের মেডিসিন নেওয়ার কারনে বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারলো না।বেডে শোয়ার কিছুক্ষন পরেই ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো।
দিশাকে ঘুমিয়ে পড়তে দেখে অভি একটা ওয়েনমেন্ট নিয়ে দিশার গালে লাগিয়ে দিলো।তারপর আস্তে করে ওর গায়ে কাথা টেনে দিয়ে ওর কপালে একটা গভির ভাবে চুমু খেলো।তারপর বিরবির করে বললো
“তোমাকে খুব তাড়াতাড়ি আমার কাছে নিয়ে আসবো পাখিটা।তোমাকে আর দূরে রাখা যাবে না।তুমি একদম নিজের খেয়াল নিজে রাখতে পারো না।এখন থেকে যা করার আমাকেই করতে হবে।”
কথাটা বলে অভি দিশার ঘুমন্ত মুখটার দিকে কিছুক্ষন মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।তারপর নিজেও সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।
#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্বঃ46
চৌধুরী বাড়িতে পুরো দমে বিয়ের আয়োজন চলছে।আর দুইদিন পরে হিয়ানের বিয়ে।বিয়ের আয়োজন নিয়ে সবাই খুবই ব্যাস্ত আছে।দুই মিনিট বসার জন্যও কারো হাতে সময় নেই।বিয়ের সব আয়োজন হিয়ানদের বাড়িতেই হবে।গেষ্টরা অলমোষ্ট সবাই চলে এসেছে।মেঘ আর মিহির এতোদিন আহানদের বাড়িতেই ছিলো।আহান মেঘকে আর মিহিরকে নিজেদের বাড়িতে যেতে দেয়নি।কারন আবিরেরা এখনো মেঘদের বাড়িতেই আছে।মেঘের মামা-মামি আবিরদের সবাইকে বিয়েতে আসার জন্য ইনভাইট করেছে।তাই ওরা কেউই যায়নি,বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হলে তারপর একসাথে যাবে।এর মধ্যে মিরা রহমান অনেক বার ফোন করেছিলেন মেঘ আর মিহিরকে বাড়িতে ফিরে আসার জন্য। কিন্তু আহান সাফ সাফ মানা করে দিয়েছেন।ও বলেছে যতোদিন আবিরেরা ওই বাড়িতে আছে ততোদিন মেঘ বা মিহির কেউই ওই বাড়িতে যাবে না।মিড়া রহমান আহানকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
এই কয়েকদিনে আহান আর মেঘের সম্পর্ক টা আরো গভীর হয়েছে।আহানের ছোট্ট ছোট্ট কেয়ারিং গুলো মেঘকে আহানের প্রতি অনেকটা দূর্বল করে দিয়েছে।ও সব সময় নিজেকে আহানের মনের মতো তৈরি করার চেষ্টা করে।আহানের অপছন্দের জিনিস গুলোকে সম্পূর্ন ইগনোর করে।আহানের পছন্দ অনুযায়ী সব কাজ করে।মেঘের এই ছোট ছোট চেইঞ্জ গুলো আহান সব সময় নোটিশ করে।আর ভিষন খুশীও হয়।এসব দেখে ওর মনের মধ্যে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে কাছে পাওয়ার আকাঙ্খা আরো দৃঢ় হয়।এতো দিনের এতো অপেক্ষা এতো ভালোবাসার ফল যে মিষ্টি হতে চলেছে সেটা ভেবে ওর ঠোটের কোনে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠে।
___________________________
সকালের ব্রেকফাস্ট করে সবাই বিয়ের শপিংয়ের জন্য বের হলো।শপিং মলে গিয়ে আহান মেঘকে রেখে গায়েব হয়ে গেলো।যাওয়ার আগে বলে গেলো আমি না আসা পযর্ন্ত তুমি নিজের জন্য কিছুই চুজ করবে না।অগত্যা মেঘও নিজের কেনাকাটা বাদ দিয়ে আলিশা আর হিয়ানকে ড্রেস কিনতে হেল্প করতে লাগলো।সাড়িকা,সাঈফা,দিশা ওরা এক পাশে দাড়িয়ে নিজেদের মতো ড্রেস চুজ করছে।আহির আর মিহির একপাশের চেয়ারে বসে ফোন টিপছে।ওদের দেখে মনে হচ্ছে এসবে ওদের কোনো ইন্টারেষ্ট নেই।অভি অনেকক্ষন আগেই আহানের সাথে চলে গেছে।মেঘ দেখলো আহির আর মিহির চুপচাপ বসে আছে।তাই ও নিজেই গিয়ে আহির আর মিহিরের জন্য ড্রেস চুজ করতে লাগলো।
প্রায় দুপুর তিনটার দিকে আহান আর অভি ওদের কাছে ফিরে আসলো।এসেই দেখলো সবাই খুব হাসি খুশী হলেও মেঘ মুখটা কালো করে বসে আছে।মেঘ আহানকে আসতে দেখে ম্লানো হাসলো।আহান এসে খুব তাড়াহুড়ো করে সবাইকে রেষ্টুরেন্টে নিয়ে গেলো।লাঞ্চটা সবাই রেষ্টুরেন্টেই করলো।এর মধ্যে আহান মেঘের সাথে তেমন একটা কথা না বলায় মেঘের মুখে বিষাদের ছায়া নেমে এলো।লাঞ্চ করা শেষে মেঘদের সবাইকে জুয়েলারির শপে নিয়ে এসে আহান আর অভি কাজ আছে আবার চলে গেলো।আহানকে চলে যেতে দেখে মেঘের এবার কান্না চলে আসলো।কিন্তু পাবলিক প্লেসে কোনো সিনক্রিয়েট করবে না বলে নিজেকে সামলে নিলো। তারপর এক কোনায় গিয়ে চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে ফোন স্ক্রল করতে লাগলো।সন্ধ্যার দিকে সবার শপিং করা কম্পিলিট হয়ে গেলেও মেঘের নিজের জন্য কিছুই কেনা হলো না।হিয়ান অনেকবার মেঘকে বলেছিলো নিজের পছন্দ মতো কিছু কেনার জন্য।কিন্তু মেঘ হিয়ানের একটা কথাও শোনেনি চুপচাপ এক কোনায় বসে রয়েছে।এর মধ্যে আহান আর অভির ছায়াও কেউ খুজে পায়নি।ওরা ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছে।
__________________________
সন্ধ্যা 07:00
মেঘরা সবাই শপিংমল থেকে বের হয়ে বাইরে এসে দেখে আহান আর অভি অলরেডি গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে বাইরে দাড়িয়ে আছে।হিয়ান এসেই আহানকে একটা ধমক দিয়ে বললো
“সারাদিন কোথায় ছিলি?শপিং করতে এসে কি এমন মহৎ কাজ করতে গেলি যার জন্য সারাদিন লেগে গেলো?তুই ব্যাস্ত ছিলি তাই আমরা এতদিন বড়দের সাথে শপিং করতে আসিনি।তোর ফ্রি হওয়ার জন্য অপেক্ষা করেছি।কিন্তু তুই আজকেও কাজে চলে গেলি?দুইদিন পর বিয়ের অনুষ্ঠান শুধু হয়ে যাবে।সবার কেনাকাটা কম্পিলিট অথচ এখন অবদি মেঘের কিছুই কেনা হলো না।”
হিয়ানের কথা শুনে আহান আর চোখে একবার মেঘের দিকে তাকালো।দেখলো মেঘ একপাশে মন খারাপ করে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।অভি এসে হিয়ানের কাধে এক হাত রেখে বললো
“থাম ভাই এতো রাগিস না।দুইদিন পর তোর বিয়ে,এখন যদি অতিরিক্ত রাগের ফলে তোর হার্টফেল হয় তাহলে আমার বোনটার কি হবে?এতো তাড়াতাড়ি ওর জন্য তোর মতো একটা অপাএ কোথায় পাবো বলতো?”
অভির কথা শুনে হিয়ান রাগি চোখে অভির দিকে তাকালো।আহির গিয়ে আলিশার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এসে বললো
“অভি ব্রো পাএ নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না।আলিশা বেবিকে বিয়ে করার জন্য আমিতো সেই কবে থেকে এক পায়ে দাড়িয়ে আছি।”
হিয়ান গিয়ে আহিরের হাত থেকে আলিশাকে ছাড়িয়ে এনে আহিরকে ওকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“ওই তুই আমার বউয়ের থেকে একশো হাত দূরে থাকবি।একদম আমার বউয়ের চার পাশেও আসবি না।তোর ইন্টেনশন আমার একদম সুবিধার মনে হয়না।”
হিয়ানের কথা শুনে সবাই হাহা করে হেসে দিলো।মেঘের এতোক্ষন মন খারাপ থাকলেও ওদের কথা শুনে না হেসে পারলো না।আহির হাসতে হাসতে বললো
“সিরিয়াসলি ব্রো,তুমি এখন আমার জন্য জেলাস ফিল করছো?”
হিয়ান দাতে দাত চেপে বললো
“না রে জেলাস ফিল করছি না।চিন্তা হচ্ছে আমার।তোর তো আর ক্যারেক্টারের ঠিক নেই।কখন আমার বউটার দিকে নজর দিয়ে ফেলিস।”
আহির চোখ বড় বড় করে অবাক কন্ঠে বললো
“ব্রো তোমার কি আমাকে ক্যারেক্টারলেস মনে হয়?”
আহিরের কথা শুনে হিয়ান কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাড়িকা ভেংচি কেটে বললো
“এখানে মনে হওয়ার কি আছে?তুমিতো আসলেই একটা ক্যারেক্টারলেস।মেয়ে দেখলেই হা করে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকো।”
আহির রেগে চিল্লিয়ে বললো
“হোয়াট?আমি কবে,কখন,কোন মেয়েদের দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলাম?সাড়িকার বাচ্চা আবল তাবল কথা বললে তোকে এখানেই ফেলে চলে যাবো বলেদিলাম।”
সাড়িকা রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিহির বললো
“ভাই তোরা এখানে আবার শুধু করে দিস না প্লিজ।আমি এমনিতেই খুব ক্লান্ত।এখন আর তোদের এই ক্যাট ফাইট দেখার মুড আমার নেই।সারাদিন হাটতে হাটতে আমার পায়ের নাট বল্টু ঢিলে হয়ে গেছে। এখন একটু রেষ্ট দরকার।”
মিহিরের কথা শেষ হতেই হিয়ান বললো
“হ্যা আমিও খুব ক্লান্ত।যদি আগে জানতাম বিয়ে করতে হলে এতো শপিং করতে হয় তাহলে জিবনেও বিয়ে করতাম না।এত শপিং করে বিয়ে করার থেকে তো চির কুমার থাকা ভালো।”
__________________________
আহানদের গাড়ি এসে চৌধুরী বাড়ির সামনে থামলো।ওরা শপিংমল থেকে সোজা এখানে চলে এসেছে।শুধু আলিশা আর অভি নিজেদের বাড়িতে চলে গেছে।যাওয়ার সময় ওদের সাথে দিশাকেও নিয়ে গেছে।যাওয়ার পথে দিশাকে ওর খালামনির বাসায় ড্রপ করে দেবে।
আহানরা গাড়ি থেকে নামতেই দেখতে পেলো পুরো বাড়িটা ঝাড়বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে।বাড়ির সামনের দিকটা এখনো ডেকারেশন চলছে।চারপাশে বিভিন্ন লোকজনের আনাগোনা।একেক জন একেক ধরনের কাজ করছে।সবাই নিজেদের কাজে ব্যাস্ত।আহানরা গাড়ি থেকে নামতেই কয়েকজন সার্ভেন্ট ওদের দিকে এগিয়ে এলো।তারা গিয়ে একে একে গাড়ি থেকে জিনিসপত্র গুলো নামিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো।আহান গিয়ে নিজের গাড়ির ডিকি খুলে কয়েকটা শপিং ব্যাগ বের করলো।তারপর দুজন সার্ভেন্ট কে আলাদা করে ডেকে নিয়ে গিয়ে ওদেরকে কিছু একটা বলে ব্যাগ গুলো ওদের কাছে দিয়ে দিলো।ওরাও ব্যাগ গুলো নিয়ে সোজা বাড়ির ভিতরে চলে গেলো।আহির,মিহির,সাড়িকা, সাঈফা, হিয়ান,মেঘ ওদের কাছে ব্যাপ্যারটা একটু ষ্ট্রেইঞ্জ লাগলেও অতিরিক্ত ক্লান্ত থাকায় ওরা ব্যাপ্যারটা তেমন পাএা দিলো না।
মেঘরা বাসার ভিতরে এসে সবাই অবাক হয়ে গেলো।হিয়ানদের বাসার ড্রইংরুমে আবির জেড়িন সহ ওদের মা-বাবারা সবাই বসে আছে।এই সময়ে ওদের এখানে একদমই আশা করেনি মেঘরা।আহান অগ্নি দৃষ্টিতে আবিরদের দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে ধীর কন্ঠে বললো
“এদের মনে হয় শান্তিতে বেচে থাকার ইচ্ছে নেই। থাকলে বারবার ঘুড়ে ফিরে মরার জন্য আমার সামনে চলে আসতো না।”
আহানের কথা শেষ হতেই আহির বললো
“আমার তো এদের চেহারা দেখলেই সবকটা কে জানে মেরে দিতে ইচ্ছে করে।”
মিহির বললো
“ইচ্ছে করলে মেরে দে।আমি আর এদের এক মুহুর্তও টলারেট করতে পারতেছি না।কোনো একদিন আমার সহ্য শক্তির বাধ ভেঙে যাবে আর আমি এদের কিছু একটা করে বসবো।”
মিহিরের কথা শেষ হতেই পাশ থেকে মোনা খান চাপা স্বরে বলে উঠলেন
“খবরদার এখানে কেউ কোনো সিনক্রিয়েট করবে না।ওদের বড় ভাইয়া ইনভাইট করেছে।বিয়ে শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওরা এখানেই থাকবে।ওরা সবাই আপাততো তোমাদের গেষ্ট,তাই ওদের আপ্যায়ন করার দ্বায়িত্ব তোমাদের।ওদের সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করার কথা কেউ স্বপ্নেও ভাববে না।বিয়ে উপলক্ষ্যে অনেক গেষ্টরা আসবে তাই এমন কোনো কাজ করবে না যাতে আমাদের মান সম্মান নিয়ে টানাটানি হয়।”
আহান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো
“ওদের কারনে মেঘের গায়ে যদি এতোটুকু আচও লাগে,তাহলে আই সোয়্যার মা ওরা এখান একজনও সুস্থ অবস্থায় বাড়িতে ফিরতে পারবে না।তাতে তোমাদের মান সম্মান থাকুক,বা না থাকুক সেটা আমাদের দেখার বিষয় না।”
কথাটা বলেই আহান হনহন করে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো।মিহিরও মেঘের হাত ধরে নিয়ে একদম উপরে চলে গেলো।ওদের সাথে হিয়ান,আহির,সাড়িকা,সাইফাও উপরে চলে গেলো।
___________________________
রাত 11:30
ছাদের এক কোনায় দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে কানে ইয়ারফোন গুজে চোখ দুটো বন্ধ করে গান শুনছে মেঘ।একফালি চাদের রশ্নি এসে মেঘের মুখে পড়েছে।চাদের আলোতে মেঘের চেহারাটা অসম্ভব মায়াবি লাগছে।হালকা বাতাশে ওর চুল গুলো মৃদ্যু উড়ছে।আজকে আহানের প্রতি বড্ড অভিমান জমেছে মেঘের।খুব কষ্টও হচ্ছে।বুকের বাম পাশটা ভয়ংকর ভাবে জ্বলছে।আজকে সারাদিনে তো আহান মেঘের সাথে কথা বলে নি।তার উপর এখানে আসার পরও কথা বলেনি।একবার দেখা অবদি করতে আসেনি।মেঘ একে তো বিয়ের জন্য কোনো শপিং করতে পারেনি সেটা নিয়ে আপসেট ছিলো।তার উপর প্রিয় মানুষের থেকে এমন অবহেলা যেনো ও কিছুতেই মেনে নিতে পারছে।কষ্টে কান্না গুলো সব দলা পাকিয়ে বেড়িয়ে আসছে।মেঘের চোখের কোনা থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে।হয়তো প্রিয় জনের দেওয়া সামান্য অবহেলাও মানুষকে ভয়ংকর ভাবে কষ্ট দেয়।
চোখ বন্ধ করা অবস্থাই মেঘ অনুভব করলো কারো গরম নিশ্বাস ওর চোখে মুখে আচড়ে পড়ছে।কেউ ওকে খুব কাছ থেকে গভীর চাহনি দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে।মেঘ ফট করে চোখ খুলে সামনে তাকালো।আবছা আলোতেও সামনে থাকা ব্যাক্তিটিকে মেঘের চিনতে একটুও অসুবিধা হবে না।সামনে থাকা ব্যাক্তিটি আর কেউ না আহান।মেঘ আহানকে দেখে দ্রুত চোখের কোনে জমে থাকা পানিটা মুছে ফেললো।তারপর ওখান থেকে যেতে নিলেই আহান দেয়ালের দু পাশে হাত রেখে মেঘকে আটকে দিলো।আহানের এমন কান্ডে মেঘ আর কোনো উপায় না পেয়ে দেয়ালের সাথে একদম পিঠ ঠেকিয়ে গুটিশুটি মেরে অন্যদিকে মুখ করে তাকিয়ে রইলো।আহান মেঘের দিকে একটু ঝুকে বললো
“কাদছিলে কেনো?কি হয়েছে?”
আহানের প্রশ্ন শুনে মেঘ বললো
“কোথায় কাদছিলাম?আর কাদবোই বা কেনো?”
“ওই দিকে তাকিয়ে কেনো এ্যান্সার দিচ্ছো আমার দিকে তাকাও!”
আহানের কথাটা শুনেও মেঘ অন্য দিকেই তাকিয়ে রইলো।আহান মেঘের দিকে আরেকটু ঝুকে বললো
“কি হলো টিয়া পাখি তাকাও আমার দিকে?তুমি আমার উপর খুব রেগে আছো তাইনা?”
আহানের কথা শুনে মেঘের গাল গড়িয়ে পানি পড়তে লাগলো।আহান আদুরে কন্ঠে আবারও বললো
“আই অ্যাম ভেরি সরি টিয়া পাখি।আর কখনো এরকম ভুল হবে না।আমি খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছি।দরকার হলে তুমি আমাকে শাস্তি দাও।তবুও এভাবে চুপ করে থেকো না প্লিজ।”
আহানের কথা শেষ হতেই মেঘ ফুপিয়ে কেদে উঠলো।মেঘকে কাদতে দেখে আহান তড়িঘড়ি করে মেঘের দু গালে হাত রেখে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে বললো
“এভাবে কাদছো কেনো মেঘ পরী?আমি তো সরি বলেছি।ভুল হয়ে গেছে আমার আর কখনো এরকম ভুল হবে না।আমি আর কখনো তোমাকে শপিংমলে একা রেখে যাবো না।”
মেঘ হিচকি দিতে দিতে বললো
“আপনি আজকে সারাদিন কেনো আমাকে ইগনোর করেছেন?কেনো আমার সাথে একটা কথাও বলেননি?জানেন আপনার এমন ব্যাবহার আমাকে কতোটা আঘাত দিয়েছে?কতোটা কষ্ট হচ্ছে আমার?”
কথাটা বলেই মেঘ আরো জোড়ে জোড়ে কেদে দিলো।মেঘকে এভাবে কাদতে দেখে আহান মেঘকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওর ঘাড়ে মুখ গুজে লো ভয়েজে বললো
“সরি মেঘ পরী আমি আর কখনো এমন করবো না।এই বারের মতো মাফ করে দাও প্লিজ।আসলে তখন ওদের এই বাড়িতে দেখে মাথাটা এতো গরম হয়ে গিয়েছিলো যে তোমার সাথে কথা বলার সুযোগই পাইনি।আই অ্যাম সরি ফর দ্যাট।”
কথাটা বলেই আহান মেঘের ঘাড়ে ঠোট ছোয়ালো।মেঘ লজ্জায় আহানের শার্টের পিঠের অংশ খামচে ধরে ওর বুকে মুখ লুকালো।আহান মেঘের কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বললো
“জিঙ্গেস করবে না আজকে সারাদিন কোথায় ছিলাম?”
বলেই আহান মেঘের কানের লতিতে ঠোট ছোয়ালো।সাথে সাথে মেঘ কেপে উঠে ওকে আরো শক্ত করে আকড়ে ধরলো।আহান মেঘকে নিজের বুক থেকে উঠিয়ে সামনের দিকে ঘুড়িয়ে মেঘের পিঠ ওর বুকের সাথে লাগিয়ে দাড় করালো।তারপর ওর কাধে নিজের থুতনি রেখে ওকে নিজের বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করে ধীর কন্ঠে বললো
“সারাদিন কোথায় ছিলাম জানো?তোমার আর আমার জন্য শপিং করেছি।সব কিছু একদম ম্যাচিং করে।বিয়ের প্রত্যেকটা ফাংসনে তোমাকে আমার পছন্দের রঙে রাঙাবো।তোমার ড্রেস থেকে শুরূ করে তোমার পায়ের জুতো পযর্ন্ত সব কিছু আমার পছন্দের হবে বুঝলে সুইটহার্ট?”
আহানের কথা শুনে মেঘের ঠোটের কোনে মৃদ্যু হাসি ফুটে উঠলো।ও সারাদিন কতো উল্টাপাল্টা চিন্তা ভাবনা করেছে অথচ আহান ওর জন্যই কেনাকাটা করায় সারাদিন ব্যাস্ত ছিলো।আহান মেঘের ঘাড়ে আস্তে করে ঠোট ছুইয়ে বললো
“কখনো উল্টাপাল্টা চিন্তা ভাবনা মাথায় আনবে না টিয়া পাখি।আমি সারাদিন যতোই ব্যাস্ত থাকি না কেনো তোমাকে অপেক্ষায় রেখে কখনো কোনো কাজ করতে যাবো না।আমার কাছে সবার আগে তোমার খুশী থাকাটা জরুরী তারপর বাকি সবকিছু।”
#চলবে,,,,,