#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্বঃ55
দুই বছর পর,,,,,,,,,
দরজার কলিং বেলের শব্দে ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসলো মেঘ।বেডের পাশের টি-টেবিলের উপর থাকা ছোট টেবিল ক্লোকের দিকে তাকিয়ে দেখলো অলরেডি নয়টা বেজে গেছে।মেঘ মাথায় হাত দিয়ে বললো
“ওহ শিট!আজকে আবারও উঠতে দেরি হয়ে গেলো।”
কথাটা বলতে বলতে মেঘ কম্বলের নিচ থেকে বের হয়ে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো।দরজা খুলতেই একজন মধ্য বয়সের মহিলা বাসায় ঢুকতে ঢুকতে বললো
“কি হইলো আম্মাজান আইজকে আবারো ঘুম থেইকা উঠতে দেরি হইছে?”
মেঘ দরজাটা আটকে দিয়ে তাড়াহুড়ো করে ওয়াশরুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো
“কি আর করবো বলো?কালকে রাতে তিনটার সময় ঘুমিয়েছি।অফিসের কাজ করতে করতে কখন যে তিনটা বেজে গেছে টেরই পাইনি।”
মেঘের কথা শুনে মহিলাটি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিচেনে চলে গেলেন মেঘের জন্য ব্রেকফাস্ট রেডি করতে।মেঘ ফ্রেস হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে গিয়ে দ্রুত রেডি হতে লাগলো।এদিকে মহিলাটি ব্রেকফাস্ট রেডি করে ডাইনিং টেবিলের উপর এনে রাখলেন।তারপর মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললেন
“আম্মাজান নাস্তা দিছি তাড়াতাড়ি খাইয়া লও।”
মেঘ দরজার পাশের “শু-র্যাক” থেকে জুতা বের করে পরতে পরতে ব্যাস্ত গলায় বললো
“না খালা এখন খাওয়ার সময় নেই।ওগুলো তুমি খেয়ে নাও।আমি আসি।”
মেঘের কথা শুনে মহিলাটি মুখটা কালো করে বললো
“আমি এতো কষ্ট করে বানাইলাম আর তুমি না খাইয়াই চইলা যাইবা?”
মেঘ দরজা দিয়ে বের হতেই যাচ্ছিলো কিন্তু মহিলাটির কথা শুনে দাড়িয়ে গেলো।তারপর দ্রুত পায়ে দরজার সামনে থেকে ডাইনিং রুমে আসলো।এসে দেখলো মহিলাটি ওর জন্য ব্রেডের টোষ্ট আর ডিম অমলেট করেছে।মেঘ একটা ব্রেড টোষ্ট হাতে নিয়ে তাতে একটা বাইট দিয়ে খেতে খেতে মহিলাটি কে জড়িয়ে ধরলো।তারপর বললো
“আর মুখ কালো করে থাকতে হবে না।এইতো খেয়েছি এখন আমি আসি।আল্লাহ হাফেজ।”
কথাটা বলে মেঘ ওনাকে ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।মহিলাটি মেঘের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ম্লানো একটা হাসি দিলেন।গত দুই বছর থেকে মেয়েটাকে দেখছেন উনি।একাই এই ফ্লাট টায় থাকে।সকাল হলে ভার্ষিটিতে যায়,সারাদিন ক্লাস করে।তারপর বিকাল চারটা থেকে রাত দশটা পযর্ন্ত পার্ট টাইম জব করে।বাসায় আসতে আসতে প্রায় রাত এগারোটা বাজে।বাসায় এসে আবার পড়তে বসে নাহলে অফিসের কাজে করে।উনি সারাদিন মেঘকে কাজ করতেই দেখেন।’ও’ সারাদিন কাজের মধ্যে নিজেকে ঢুবিয়ে রাখে।ওকে দেখলে মনে হয় ‘ও’ পড়া শোনা আর কাজ ছাড়া কিছু ভাবতেই চায় না।উনি অনেক বার মেঘকে জিঙ্গেস করেছে ওর বাসা কোথায়?বাবা মা কোথায় থাকে?বাবা মায়ের নাম কি?’ও’ পরিবারের সাথে না থেকে একা এই ফ্লাটে থাকে কেনো?আরো কতো শতো প্রশ্ন করেছে তার কোনো হিসেব নেই।কিন্তু যখনই মেঘের পার্সনাল ব্যাপ্যারে কিছু জিঙ্গেস করেন তখনই ‘ও’ কথাটা এরিয়ে যায়।এখন পযর্ন্ত উনি মেঘের নামটা ছাড়া আর কিছুই জানেন না।অবশ্য নামটাও আসল কিনা সেটাও জানেন না।মাঝে দেখেন মেয়েটা বালিশে মুখ গুজে হাউমাউ করে কাদতে থাকে।কাদতে কাদতে বাচ্চাদের মতো গুটিশুটি মেরে আবার সেখানেই ঘুমিয়ে পড়ে।
_____________________________
মেঘ রাস্তায় এসে রিকশার জন্য দাড়িয়ে ছিলো।হঠাৎ ওর সামনে লাল রঙের বেশ দামি একটা গাড়ি এসে থামে।’ও’ ভ্রু কুচকে গাড়িটার দিকে তাকিয়ে থাকে।গাড়িটা থামতেই ওটার পিছনের সিটের দু পাশের দরজা খুলে দুটো ছেলে বেড়িয়ে আসে।মেঘ ছেলে দুটোর চেহরার দিকে তাকালো।সেই চির চেনা অতি প্রিয় দুটো মুখ।কতোদিন পর এদের দেখলো।ছেলে দুটো অন্যকেউ না,আহির আর মিহির।মেঘ এক ধ্যানে ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলো।তখনই আহির এসে মেঘের চোখে সামনে দুটো কার্ড বাড়িয়ে দিয়ে বললো
“আমার আর মিহিরের বিয়ের কার্ড।কালকে গায়ে হলুদ আর পরশুদিন বিয়ে।ইচ্ছে হলে আসিস আর নাহলে আমরা জোড় করবো না।”
মেঘ কাপাকাপা হাতে কার্ড দুটো নিলো।প্রথম কার্ড টা ওপেন করে দেখলো সেটাতে আহির ওয়েডস সাড়িকা লেখা আছে।আর দ্বীতিয় কার্ডটায় মিহির ওয়েডস সাঈফা লেখা আছে।মেঘ কার্ড দুটোর দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিলো।তারপর আহিরের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিহির ওকে হাতের ইশারায় থামিয়ে দিয়ে বললো
“তোর কোনো কথা শোনার ইচ্ছা বা সময় কোনোটাই আমাদের কাছে নেই।সাড়িকা,সাঈফা কান্নাকাটি করছিলো বলছিলো তুই না গেলে ওরা নাকি বিয়েটাই করবে না।তাই এগুলো দিতে আসলাম।নাহলে কোনো দিন আসতাম না।এবার তুই যাবি নাকি যাবিনা সেটা তোর ইচ্ছে।”
মিহিরের কথা শেষ হতেই আহির তাছিল্য হেসে বললো
“অবশ্য না গেলেও আমরা অবাক হবো না।কারন মানুষের সুখ শান্তি কেড়ে নেওয়া তো তোর পুরনো অভ্যাস।আহান ব্রোর লাইফ টা তো দুই বছর আগেই হেল করেছিস।এখন নাহয় আমাদের টাও করবি।”
কথাটা বলে আহির আর এক মুহূর্তও দাড়ালো সোজা গিয়ে গাড়িতে বসে পড়লো।মিহিরও গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে পড়লো।ওর উঠতেই গাড়িটা দ্রুত চলে গেলো।আর পিছন থেকে এক জোড়া অশ্রুসিক্ত চোখ সেদিকে তাকিয়ে রইলো।
____________________________
রাত 10 টা
ছাদের একপাশের রেলিংএ বাইরের দিকে পা ঝুলিয়ে বসে আছে সাঈফা।শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনের অন্ধাকারের দিকে।চারপাশে কি হচ্ছে সেদিকে ওর বিন্দু মাএও খেয়াল নেই।আপাততো ‘ও’ নিজের ভাবনায় মগ্ন।হঠাৎ কেউ এসে সাঈফাকে পিছন থেকে ঝাপটে ধরে কোলে তুলে ছাদের ভিতরে এনে দাড় করালো।আকষ্মিক ঘটনায় সাঈফা হকচকিয়ে উঠলো।তারপর সামনে তাকিয়ে দেখলো ওর সামনে রাগি লুক নিয়ে মিহির দাড়িয়ে আছে।সাঈফা একটা শুকনো ঢোক গিয়ে কাপা কাপা কন্ঠে বললো
“তুমি এতো রাতে এখানে?এখনো যাওনি?”
মিহির দাতে দাত চেপে বললো
“গিয়ে তো ছিলাম।কিন্তু মাঝ পথে গিয়ে দেখি ফোনটা ফেলে গেছি তাই আবার নিতে আসলাম।ভাগ্যিস এসেছিলাম নাহলে জানতেই পারতাম না,আমি না থাকলেই আপনি এসব কাজ করে বেড়ান।”
সাঈফা আমতা আমতা করে বললো
“আসলে ভালো লাগছিলো না তাই ওভাবে বসে ছিলাম।”
মিহির ভ্রু কুচকে বললো
“ভালো লাগছিলো মানে কি?বিয়েটা কি করতে চাও না?নাকি বোনের মতো ন্যাক্যামো করার ইচ্ছে জেগেছে?”
মিহিরের কথাটা শেষ হওয়ার সাথে সাথে সাঈফা ঝাঝালো কন্ঠে বললো
“সব কথায় আপিকে কেনো টেনে আনো বলোতো?দুই বছর আগে আপি যা করেছিলো সেটার পিছনে নিশ্চয়ই কোনো কারন ছিলো।নাহলে কখনো ওসব করতো না।তোমরা তো সব সময় আপিকে শুধু দোষারোপই করে গেছো।কখনো তো এটা জানতে চাওয়ার চেষ্টা করোনি হঠাৎ করেই ‘ও’ ওসব কেনো করেছিলো।আগে সব কিছু ভালো করে খোজ নিয়ে আসো তারপর আপির ব্যাপ্যারে কিছু বলতে আসবে।”
কথাটা বলেই সাঈফা হনহন করে ছাদ থেকে বেড়িয়ে আসলো।ওর ভিষন রাগ লাগছে।সত্যিটা না জেনেই সবাই শুধু মেঘকে দোষারোপ করে যাচ্ছে।আরে ভাই যাকে এতো ভালোবাসতো তাকে যখন দূরে সরিয়ে দিয়েছে তখন তার পিছনে নিশ্চয়ই কোনো কারন আছে।এই সামান্য কথাটা এদের মাথায় যে কেনো ঢোকেনা ‘ও’ সেটাই বুঝতে পারে না।সাঈফা পারলে এখন মিহিরের মাথাটা ফাটিয়ে দেখতো যে ওর মাথার মধ্যে একটুও বুদ্ধি আছে নাকি পুরোটাই গোবরে ভরা।’ও’রাগে ফুসতে ফুসতে ওয়াশরুমে চলে গেলো হাতের মেহেদি ধোয়ার জন্য।
আজকে সাড়িকা,সাঈফার মেহেন্দি ছিলো।মেহেন্দীর অনুষ্ঠান টা সাঈফাদের বাড়িতে বসেই হয়েছিলো।অনুষ্ঠান শেষে বর পক্ষের লোকেরা যাওয়ার পর সাঈফা মেহেদি হাতে দিয়ে ছাদে চলে গিয়েছিলো।হঠাৎ করেই ‘ও’ আজকে মেঘকে বড্ড মিস করছিলো।মেঘের কথা ভেবে মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।তাই ভেবেছিলো একা একা বসে থাকলে হয়তো মনটা ভালো হয়ে যাবে।অথচ মন তো ভালো হলোই না উল্টে মিহির এসে মাথাটা গরম করে দিলো।
____________________________
সাঈফা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলো মিহির বেডের উপর চিৎ হয়ে শুয়ে আছে।’ও’ মিহিরের দিকে একবার বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে চেয়ারের উপর থেকে তোয়ালে নিয়ে হাত মুখ মুছতে মুছতে বললো
“প্লিজ তুমি এখন আমার চোখের সামনে থেকে যাও।এই মুহুর্তে আমি ভিষন রেগে আছি যখন তখন তোমাকে যা খুশী বলতে পারি।আর বিয়ের মাএ দুই দিন বাকি আছে তাই এখন আমি তোমার সাথে কোনো তর্কে জড়াতে চাই না।”
সাঈফার কথা শুনে মিহির শোয়া থেকে বসে বললো
“আমি তোমার সাথে তর্ক করতে আসিনি মিষ্টি পাখি,রোমান্স করতে এসেছি।এখন আমার খুব প্রেম প্রেম পাচ্ছে তাই ভাবছি তোমার সাথে এখন একটু প্রেম করবো।”
সাঈফা ওর হাতে থাকা তোয়ালে টা মিহিরের মুখের উপর ছুড়ে মেরে বললো
“তোর প্রেমের গুষ্টি কিলাই।তুই এক্ষুনি বের হ আমার রুম থেকে।”
মিহির বসা থেকে দাড়িয়ে তোয়ালে টা বেডের উপর রেখে সাঈফার দিকে একপা একপা করে এগোতে এগোতে বললো
“ছিহ বউ নিজের হাজবেন্ট কে এভাবে তুই তোকারি করতে তোমার লজ্জা করেনা?”
সাঈফা ঝারি মেরে বললো
“লজ্জা কেনো করবে?তুমি এখনো আমার হাজবেন্ট হওনি।আমাদের বিয়ের আরো দুইদিন বাকি আছে।আর এই দুই দিনে যা কিছু হতে পারে।”
মিহির একদম সাঈফার কাছে এগিয়ে এসে ওর কোমরে এক হাত রেখে এক টানে সাঈফাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো
“যা কিছু হয়ে যেতে পারে মানে কি?বিয়েটা ক্যান্সেল করার প্লান করেছো নাকি?”
সাঈফা একটা তাছিল্য হাসি দিয়ে বললো
“আমি তো মেঘ আপিরই বোন।সো করতেই পারি।”
সাঈফার কথা শুনে মিহির হাত দিয়ে সাঈফার গালে শ্লাইড করতে করতে বললো
“যদি বিয়ে ক্যান্সেল করার মতো কোনো প্লান করে থাকো তাহলে সেটা মাথা থেকে এক্ষুনি ঝেরে ফেলো।নাহলে তোমাকে কুচি কুচি করে কেটে নদীতে ফেলে দিবো।”
সাঈফা চোখ ছোট ছোট করে মিহিরের দিকে তাকিয়ে বললো
“তোমার কি মনে হয় এইসব বললে আমি ভয় পেয়ে যাবো?”
মিহির একটা বাকা হাসি দিয়ে বললো
“হুম ভয় পাবে।কারন আমি যে শুধু মুখে বলি না,কাজেও করে দেখাই সেটা তোমার থেকে ভালো কে আর জানে বলো?”
কথাটা বলেই মিহির সাঈফার নাকের সাথে নিজের নাক ঘসলো।সাঈফা ওর চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো।মিহির অনেকটা সময় নিয়ে সাইফার কপালে গভীর ভাবে একটা চুমু খেলো।তারপর সাঈফার নাক টেনে দিয়ে বললো
“বউ আজকে এই পর্যন্তই থাক।বাকি রোমান্স নাহয় আমরা বিয়ের পরেই করবো।আপাততো আমার একটা আর্জেন্ট কাজ মনে পড়ে গেছে।তাই এখন রোমান্স করা বাদ দিয়ে কাজটা করতে যেতে হবে।টাটা…..”
কথাটা বলে মিহির আর এক মুহূর্তও দাড়ালো না।সাঈফাকে ছেড়ে দিয়ে এক দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।সাঈফা মিহিরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিলো।’ও’ ভালো করেই জানে মিহির এখন কোথায় গেছে।লাষ্ট দুই বছর ধরে মিহির আর আহির রাতের এই সময়ে গায়েব হয়ে যায়।এই সময়ে ওদের দুজনের ছায়াটাও খুজে পাওয়া যায় না।কোথায় যায় সেটা সবাই ভালো করেই জানে।তাই এই বিষয়ে কেউ কখনো কোনো প্রশ্ন করে না।
_____________________________
মেঘ অফিস থেকে ফিরে দরজার সামনে দাড়িয়ে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে ফ্লাটের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো।ভিতরে ঢুকে দেখলো সেই মহিলাটি বেডের উপর ঘুমিয়ে আছে।মেঘ একটু হাসলো।ইনি মাঝে মাঝেই এরকম করে।কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও এখানে রাতে থেকে যায়।সারা রাত জেগে মেঘের সাথে গল্প করে।ওর মাথায় তৈল দিয়ে দেয়,বিলি কেটে দেয়।এমন ভাবে আগলে রাখেন যেনো মেঘ ওনার নিজের মেয়ে।ওনি যতোক্ষন মেঘের কাছে থাকে ‘ও’ মায়ের থেকে দূরে থাকার কষ্ট টা ভুলে যায়।
মেঘ দরজাটা ভিতর থেকে লক করে দিয়ে।ওর হাতে থাকা ফাইল গুলো টেবিলের উপর রাখে।তারপর মহিলাটির কাছে এগিয়ে গিয়ে ওনার মাথায় হাত রেখে মৃদ্যু কন্ঠে বলে
“খালা ডিনার করেছো?”
মহিলাটি ঘুমু ঘুমু চোখে তাকিয়ে বললো
“না আম্মাজান তোমার আসার অপেক্ষা করতে ছিলাম।যাও তুমি গিয়া ফ্রেস হইয়া আসো তারপর দুজন মিলে এক সাথে খামু।”
“আচ্ছা,,,”
বলেই মেঘ ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেস হওয়ার জন্য।এই ফ্লাট টায় একটা বেডরুম,একটা ডাইনিং রুম,একটা কিচেন আরেক টা বাথরুম।ব্লিডিং টার কালার একদম উঠে গেছে।জায়গায় ফাট ধরেছে।জানালার গ্রিলে জং ধরে একদম যা ইচ্ছে তাই হয়ে গেছে।মেঘ কয়েকবার চেয়েছিলো এই ফ্লাট টা ছেড়ে দিয়ে অন্য একটা ফ্লাটে উঠবে।কিন্তু যে টাকা মাইনে পায় তাতে এর থেকে ভালো ফ্লাট ওর পক্ষে এফোর্ট করা সম্ভব না।দুবছর ধরে ওর লেখা পড়া,খাওয়ার,জামা কাপর,বাসা ভাড়া এই সব কিছুর খরচ ‘ও’ নিজেই চালায়।ফেমিলির কারো কাছ থেকে একটা টাকাও নেয় না।আহাদ খান আর আজম রহমান প্রতি মাসে ওর একাউন্টে মোটা অঙ্কের টাকা পাঠান। কিন্তু মেঘ সেখান থেকে একটা টাকাও স্পর্শ করে না।
কাজের মহিলাটি মেঘের ফাইলগুলো গুছিয়ে রাখছিলো।তখনই হঠাৎ করে ফাইলগুলোর মধ্যে থেকে সেই বিয়ের কার্ড দুটো বেড়িয়ে আসে।উনি কৌতুহল বশতো কার্ড দুটো হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখতে থাকে।ঠিক তখনই মেঘ ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আসে।মহিলাটি কে এতোটা উৎসাহ নিয়ে কার্ড দুটো দেখতে দেখে মেঘ হাসি মুখে প্রশ্ন করে
“ওভাবে কি দেখছো খালা?”
মহিলা টি কার্ড গুলো দেখতে দেখতেই বললো
“আম্মা জান আমি এই কাগজ গুলা আরো একখানে দেখছি।এগুলা তোমার কাছে আসলো কোথা দিয়া?”
মেঘ তোয়ালে দিয়ে হাত মুছতে মুছতে বললো
“কোথায় দেখেছো?”
“তোমারে কইছিলাম না এক বড় লোক বাসায় কাজ করি সেইখানে দেখেছি।”
মেঘ বললো
“দেখতেই পারো,কারন এই কার্ড এখন এই শহরের প্রায় 50% নামি দামি বিজনেস ম্যানদের বাসায় খুজে পাবে।এগুলো কার বিয়ের কার্ড জানো?”
মেঘের প্রশ্ন শুনে মহিলাটি না সূচক মাথা নাড়ালো।মেঘ মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো
বিজনেস ম্যান আহাদ খান এবং আজম রহমানের দুই ছেলের বিয়ে।মেঘের কথা শুনে মহিলাটি চোখ বড় বড় করে বললো
“এগুলা কি আহির খান আর মিহির রহমানের বিয়ার কার্ড?যাগো বিয়ার কথা টিবিতেও দেখাইছিলো?”
মেঘ ছোট্ট করে বললো
“হুমম!”
মহিলাটি অবাক কন্ঠে বললো
“ওনারা তো শুনছি খুব নামকরা মানুষ।ওনাগো বিয়ার কার্ড তুমি কই পাইলা?”
মেঘ স্বাভাবিক ভাবেই বললো
“ওনারাই সকালে এসে দিয়ে গেলেন।”
মেঘের কথা শুনে মহিলাটির চোখ বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম।উনি মেঘের দিকে একটু এগিয়ে এসে বললেন
“সত্যি করে কওতো আম্মাজান এইগুলা তুমি কই পাইলা?দেখো আমার কাছে একদম মিথ্যা কথা কবা না।আচ্ছা ওনারা কি তোমার অফিসের বস?”
ওনার অবস্থা দেখে মেঘ ফিক করে হেসে দিয়ে বললো
“আরেহ না ওনারা আমার অফিসের বস হতে যাবে কেনো।আমি তো একটা ছোট খাটো কম্পানিতে চাকরি করি।ওনাদের অফিসে চাকরি করার মতো যোগ্যতা এখনো আমার হয়নি।”
মেঘের কথা শুনে মহিলাটি অসহায়ের মতো মুখ করে বললো
“তাহলে কই পাইলা?”
মেঘ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো
আমি বিজনেস ম্যান আজম রহমানের ছোট মেয়ে।আর মিহির রহমানের একমাএ ছোট বোন তাসনুবা সায়াজ মেঘনা।”
মেঘের কথা শেষ হতেই মহিলাটার হাত থেকে কার্ড দুটো নিচে পড়ে গেলো আর উনি চিল্লিয়ে বললো
“কিহ?”
হঠাৎ করে এতো জোড়ে চিৎকার দেওয়ায় মেঘ কেপে উঠলো।আবার পরক্ষনেই মহিলাটির অবস্থা দেখে হো হো করে হেসে দিলো।
#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্বঃ56
খান বাড়ির গেষ্ট রুমে কাচুমাচু করে বসে আছে মেঘ।চার পাশের সব কিছু কেমন অসহ্য লাগছে।নিজের কাছেই নিজেকে বড্ড ছোট মনে হচ্ছে।এই বাড়ির ছেলে একদিন ওর জন্যই এই বাড়ি ছেড়ে,দেশ ছেড়ে চলে গেছে।নাহ চলে যায়নি হারিয়ে গেছে।
প্রায় দুই বছর ধরে আহানের কোনো খোজ নেই।মেঘের দেওয়া আঘাত সহ্য করতে না পেরে আহান কাউকে কিছু না বলে দেশ ছেড়েই চলে গেছে।আজ অবদি কাউকে একটা ফোন অবদি করেনি।সবাই অনেক খুজেছে কিন্তু ওর কোনো হদিস পায়নি।কোথায় আছে?কি করছে?কেউ কিচ্ছু জানেনা।কথায় আছেনা না,কেউ যদি হারিয়ে যায় তাহলে তাকে খুজে বের করা যায়।কিন্তু কেউ যদি নিজের ইচ্ছায় চলে যায় তাহলে তাকে হাজার বার খুজেও কোনো লাভ হয়না।আহির,মিহির, হিয়ান,অভি ওরা ওদের সব সোর্স লাগিয়েও আহানকে খুজতে ব্যার্থ হয়েছে।ওরা শুধু এই টুকু জানতে পেরেছে আহান এই দেশ ছেড়ে চলে গেছে।কিন্তু কোথায় গেছে সেটা আজও অজানা রয়ে গেছে।
মেঘের নিজেকে আজকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে।ওর জন্য এতো গুলো মানুষ আজ কষ্টের মধ্যে আছে।এই বাড়ি,ঘর সবকিছু একই আছে।শুধু পাল্টে গেছে মানুষ গুলো।যারা এক সময় ওকে মাথায় করে রাখতো তারা এখন ওর সাথে ঠিক ভাবে কথা অবদি বলে না।অভিমানে সবাই ওর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।উহুম,মেঘের জন্য আহান সব কিছু ছেড়ে চলে গেছে সেই জন্য কেউ ওর উপরে অভিমান করেনি।অভিমান করেছে কারন মেঘ নিজেও কারো সাথে যোগাযোগ রাখেনি।এই দুই বছরে এক বারের জন্যও কারো সাথে দেখা করেনি।ইনফ্যাক্ট নিজের ভার্ষিটি থেকে টিসি নিয়ে অন্য একটা ভার্ষিটিতে ভর্তি হয়েছে।কাউকে একটা বার জিঙ্গেস করার প্রয়োজনও মনে করেনি।ওর বাসার ঠিকানা টা পর্যন্ত ‘ও’ কাউকে দেয়নি।
মেঘ আজকে সকালে ওদের বাড়িতে গিয়েছিলো।কিন্তু সেখানে গিয়ে জানতে পারে বিয়েটা খান বাড়িতে হবে।আহির আর মিহিরের বিয়ের অনুষ্ঠান টা একসাথে এই বাড়িতেই করা হবে।তাই মেঘ ওখান থেকে সোজা এই বাড়িতে চলে এসেছে।এখানে আসার পর কেউই ঠিক ভাবে ওর সাথে কথা বলেনি।সবাই কাজের বাহানা দেখিয়ে ওকে এক প্রকার ইগনোর করেছে।শুধু মোনা খান এক ফাকে একজন সার্ভেন্ট কে মেঘের রুম দেখিয়ে দিতে বলেছে।তারপর সেই সার্ভেন্ট ওকে এই রুমে নিয়ে এসেছে।শুধু ও’ই না,সাথে ওর বাসার সেই পরিচারিকা কেও নিয়ে এসেছে।উনি প্রথমে আসতে রাজি হননি কিন্তু মেঘের জোড়া জুড়িতে আসতে এক প্রকার বাধ্য হয়েছেন।আপাততো মেঘ ওনাকে সবার সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য নিচে পাঠিয়ে দিয়েছে।আর যাওয়ার আগে সাবধান করে দিয়েছে যাতে ওর ব্যাপ্যারে এখানের কাউকে কিছু না বলে।
_____________________________
দুপুর 02:00 টা
মেঘ সাওয়ার নিয়ে ড্রেস চেইঞ্জ করে ওয়াশ রুম থেকে বের হলো।বের হয়ে হেয়ার ড্রেয়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে চুলগুলো বেধে নিলো।তারপর ওড়নাটা সুন্দর ভাবে মাথায় পেচিয়ে রুম থেকে বের হলো।মেঘ সিড়ি দিয়ে নামতে যাবে তখনই ওর চোখ গেলো ড্রইং রুমের সোফার দিকে।সেখানে হিমা,রিয়ান,রিজা,রিজার হাসবেন্ট,দিশা,অভি,হিয়ান, আলিশা বসে আছে।মেঘ বুঝতে পারলো ওরা সবাই গায়ে হলুদের তত্ব দিতে এখানে এসেছে।তত্বের কথা ভাবতেই মেঘের মনে পড়ে গেলো হিয়ানের গায়ে হলুদের কথা।সেদিন ওরাও এভাবে তত্ব নিয়ে হিয়ানদের বাড়িতে গিয়েছিলো।আর আহানরা সবাই মিলে ওদের কি রকম নাজেহালটাই না করেছিলো।সেসব কথা ভেবে মেঘের ঠোটের কোনে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো।পরক্ষনেই সামনে তাকিয়ে কিছু একটা দেখে ওর হাসি মিলিয়ে গেলো।ওর চোখে মুখে এসে ভর করলো একরাশ মুগ্ধতা।আলিশার কোলে ছোট্ট একটা ছেলে বেবী বসে আছে।বেবিটার বয়স মোটামুটি এক বছরের মতো হবে।বেবি টা বারবার আলিশার নাক,চোখ,ঠোট ছুয়ে দিচ্ছে।ওর হিজাব,জুয়েলারি,শাড়ির আচল ধরে টানাটানি করছে।আর আলিশা নাক মুখ কুচকে বেবির হাত একটা থেকে সরিয়ে দিচ্ছে আর ছাড়া পেয়ে বেবি গিয়ে আরেকটা ধরছে।মেঘ বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে এটা আলিশা আর হিয়ানের বেবি।’ও’ সবার থেকে দূরে ছিলো ঠিকই কিন্তু আড়াল থেকে সবার খোজ খবর রেখেছে।
আলিশা আর হিয়ানের এক বছর আগে বেবি হয়েছে।ওরা এখন বেবি নিয়ে ওদের আলাদা ফ্লাটে থাকে।কারন সেখান থেকে হিয়ানের অফিসে যেতে সুবিধা হয়।রিয়ান আর হিমার বেবির বয়স আড়াই বছর।ওরা লন্ডনে সেটেল্ড হয়ে গেছে।রিজা আর দিশার কাজিন আট মাস আগে বিয়ে করেছে।ওদের রিলেশন টা বাড়ি থেকে কেউ মেনে নিচ্ছিলো না।তাই ওরা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে।আর বিয়ের পর আস্তে আস্তে সবাই মেনে নিয়েছে।আহান আর মেঘ চলে যাওয়ার কিছু মাস পরে দিশা আর অভির বিয়ে হয়েছে।বিয়েটা মোটামুটি করে ঘরোয়া ভাবেই হয়েছে।দিশা প্রথমে বিয়েতে রাজি না থাকলেও বিয়ের পরে অভির ভালোবাসা,কেয়ারিং গুলো দেখে আস্তে আস্তে অভিকে ভালোবাসতে বাধ্য করেছে।দিশা,অভি আর অভির মা-বাবা ওরা সবাই একসাথেই থাকে।আর দিশা আপাততো ছিক্স মানর্থ প্রেগনেন্ট।
কথা গুলো ভাবতে ভাবতে মেঘ নিচে নামলো।নিচে নেমে প্রথমেই সোফার কাছে এগিয়ে গিয়ে সবাইকে সালাম দিলো।মেঘের কন্ঠস্বর শুনে সবাই মেঘের দিকে তাকালো।আর তাকিয়েই সবাই বেশ অবাক হয়ে গেলো কারন মেঘ আগের থেকে একদম শুকিয়ে গেছে।চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে।দুই বছর আগের মেঘের মধ্যে আর এই মেঘের মধ্যে আকাশ-পাতালের পার্থক্য।সবাই ওভাবে অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকেই মেঘের সালামের অ্যান্সার দিলো।মেঘ গিয়ে আলিশার কোল থেকে ওর বেবিকে কোলে নিলো।তারপর বেবির নাম জিঙ্গেস করতেই জানতে পারলো ওর নাম আরাফ।মেঘ বেবিটাকে কোলে নিয়ে অন্য পাশে গিয়ে একা একা ওর সাথে কথা বলতে লাগলো।আর বাকিরা সবাই অবাক হয়ে দূর থেকে মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকলো।এতোগুলো দিন পরে দেখা হলো আর মেঘ কারো সাথে ঠিক করে কথা অবদি বলছে না?সবাই ভাবছে কি দিয়ে তৈরি এই মেয়ে?একে তো এতো বড় একটা ভুল করেছে তার উপর এখন ওদের সবাইকে এভাবে ইগনোর করছে?
হিয়ানেরা সবাই দুপুরে লাঞ্চ করার পর চলে গেলো।মেঘও ওদের সবার সাথে এক সাথেই লাঞ্চ করেছে।কিন্তু কারো সাথে আগ বাড়িয়ে একটুও কথা বলেনি।সবাই যেটা জিঙ্গেস করেছে ‘ও’ শুধু তাতে “হ্যা” “না” বলে অ্যান্সার দিয়েছে।সবাই মেঘের এমন ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখে বেশ বিরক্ত হয়েছে।
__________________________
সন্ধ্যা 07:00 টা
মেঘ ওর রুমে এসে বসে আছে।নিচ থেকে লাউড মিউজিকের আওয়াজ ভেসে আসছে।বাসার সামনের গার্ডের এরিয়ায় আহির আর মিহিরের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হচ্ছে।আহিরের মিহিরের গায়ে হলুদ এখানে হবে আর সাড়িকা সাঈফার গায়ে হলুদ ওদের বাড়িতে হবে।মেঘের আপাততো এসবে কোনো ইন্টারেষ্ট নেই।’ও’ লাউড মিউজিক আর মানুষের চিল্লাচিল্লি একদম সহ্য করতে পারে না।মানে যে জায়গায় অতিরিক্ত শব্দ শোনা যায় সেখানে গেলে ওর ভিষন মাথা ব্যাথ্যা হয়।তাই মেঘ ডিসিশন নিয়েছে ‘ও’ হলুদের ফাংশনে যাবে না।
মেঘ বেডের উপর থেকে উঠে গিয়ে ওর ব্যাগ খুলে ঘুমের ঔষধ বের করে সেখান থেকে দুটো ঔষধ খেয়ে নিলো।তারপর রুমের দরজা লক করে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো।মেঘ ঘুমাতে যাবে তার আগেই শুনতে পেলো মিউজিক থেমে গেছে।আর বাইর থেকে কান্নাকাটির আওয়াজ ভেষে আসছে।’ও’ একবার ভাবলো নিচে গিয়ে দেখবে কি হয়েছে।কিন্তু ঘুমের ঔষধ খাওয়ার কারনে বেশিক্ষন চোখের পাতা খুলে রাখতে পারলো না।কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলো।
___________________________
রাতে তারাতাড়ি ঘুমানোর জন্য বেশ সকাল সকাল ঘুম ভাঙলো মেঘের।’ও’ ফ্রেস হয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে নিচে চলে গেলো।রাতে কিছু না খেয়েই শুয়ে পড়েছিলো তাই ভিষন খিদে পেয়েছে ওর।আপাততো কিছু না খেতে পারলে পেটের মধ্যে থাকা ইদুর,বাদুর গুলো হিপ-হপ ডান্স করা শুরু করে দিবে।
মেঘ নিচে এসে কিচেনে গিয়ে ফ্রিজ খুললো।দেখলো ফ্রিজে বেশির ভাগই ফাষ্ট ফুড রাখা আছে।বাট খালি পেটে এগুলো খেলে মেঘের শরীর খারাপ করবে।তাই ‘ও’ এগুলো বাদ দিয়ে অন্য কিছু খুজতে লাগলো।আর খুজতে খুজতে একটা প্যাকেটে কতোগুলো পেয়ারা পেয়ে গেলো।সেখান থেকে একটা পেয়ারা নিয়ে খেতে খেতে ‘ও’ বাইরে চলে গেলো।যদিও খালিপেটে ফল খেলে সমস্যা হয়।তবুও কিছুই করার নেই।আপাততো খিদে কমানোটা জরুরি।
____
মেঘ বাইরে এসে দেখলো এখানে গার্ড আর পার্টি প্লানারের লোকেরা ছাড়া কেউ নেই।পার্টি প্লানারের লোকেরা কালকের গায়ে হলুদের ষ্টেজ,গেট,ডেকারেশন সব কিছু খুলে চেইঞ্জ করে আবার নতুন করে বিয়ের জন্যে সাজাচ্ছে।মেঘ পেয়ারাটা খেতে খেতে সুমিংপুলের কাছে গিয়ে পড়নে থাকা প্যান্ট টা পায়ের দিক থেকে একটু ফোল্ড করে উপরে উঠিয়ে পুলের পানিতে পা ঢুবিয়ে বসে পড়লো।’ও’ খেতে খেতে সামনে তাকাতেই ওর চোখ দুটো রসগোল্লার মতো হয়ে গেলো।গলায় পেয়ারা আটকে গেলো।হঠাৎ করেই ‘ও’ বিষম খেয়ে কাশতে শুরু করলো।কাশতে কাশতে ওর মুখ থেকে সব পেয়ারা বের হয়ে পানিতে পরে গেলো।
মেঘ পুলের যে পাশে বসে আছে ঠিক তার অপর পাশ দিয়ে আহান ফোন স্ক্রল করতে করতে হেটে যাচ্ছে।ওর পড়নে একটা ট্রাউজার আর হুডিওয়ালা জ্যাকেট।দেখেই বোঝা যাচ্ছে ‘ও’ এইমাএ ঘুম থেকে উঠে এখানে এসেছে।কিন্তু মেঘ এটা ভেবে পাচ্ছে না যে আহান এখানে কিভাবে এলো?একদিকে কাশতে কাশতে ওর দম আটকে আসছে।অন্যদিকে আহান সত্যিই ওর সামনে দাড়িয়ে আছে,নাকি স্বপ্ন দেখছে সেটা ভেবে ওর মাথায় সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।
কারো কাশির শব্দ শুনে আহান ফোন থেকে চোখ সরিয়ে ডান পাশে তাকালো।দেখলো মেঘ পুলের মধ্যে পা ঢুবিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে কেশে যাচ্ছে।আহান দ্রুত পায়ে মেঘের দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই মেঘ ভয় পেয়ে পুল থেকে পা তুলে দৌড় দিতে চাইলো।কিন্তু ওর পা ভেজা থাকায় দৌড় দিতে গিয়ে ‘ও’ শ্লিপ কেটে পড়ে যেতে নিলো ঠিক তখনই আহান দৌড়ে এসে ওর এক হাত ধরে ফেললো।মেঘ এতোক্ষনে বুঝতে পারলো এটা স্বপ্ন না সত্যিই আহান ওর সামনে দাড়িয়ে আছে।
মেঘ ভীতু চোখে একবার আহানের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার পিছনের পুলের দিকে তাকাচ্ছে।কারন আহান শুধু মেঘের একহাত ধরে আছে।আর মেঘের সম্পূর্ন শরীর চিৎ হয়ে পুলের দিকে ঝুলে আছে।এখন যদি আহান কোনো ভাবে মেঘের হাতটা ছেড়ে দেয় তাহলে মেঘ একদম সোজা পানিতে গিয়ে পড়বে।মেঘের ভাবনাকে সত্যি প্রমান করে দিয়ে আহান ওর হাতটা ছেড়ে দিলো।আর ‘ও’ যেভাবে ছিলো সেভাবেই চিৎ হয়ে পানিতে পরে গেলো।আহান মেঘের পরে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে আসতে যাবে তার আগেই মেঘ কোনো রকম নিজেকে সামলে নিয়ে পিছন থেকে রাগি কন্ঠে চিল্লিয়ে বললো
“আর ইউ ষ্টুপিড?আপনি আমাকে এভাবে ফেলে দিলেন কেনো?”
মেঘ কথা শুনে আহান দাড়িয়ে গেলো।তারপর পিছনে মেঘের দিকে ঘুরে ভ্রু কুচকে রুড স্বরে বললো
“ও হ্যালো ম্যাম আমি আপনার বেতন ভুক্ত বডিগার্ড নই যে আপনাকে বাচাবো।আর আপনার সাহস তো কম না,আপনি আমার বাড়িতে দাড়িয়ে আমাকেই ষ্টুপিড বলছেন?এই বাড়িতে থাকতে হলে একটু বুঝে কথা বলবেন নাহলে আপনাকে গেট থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে আমার বেশি সময় লাগবে না।”
কথাটা বলেই আহান হনহন করে ওখান থেকে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো।আর মেঘ ছলছল চোখে আহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
____________________________
মেঘ ভিতরে এসে ফ্রেস তাড়াতাড়ি নিচে এলো।ওর নাকে মুখে পানি চলে গেছে।ঠান্ডায় সারা শরীর কাপছে।মাথাটা ব্যাথ্যায় ফেটে যাচ্ছে।’ও’ নিচে এসে দেখলো বাড়ির সবাই ড্রইং রুমে বসে কফি আর স্নাক্স খাচ্ছে।মেঘ ড্রইং রুম থেকে দ্রুত পায়ে কিচেনে চলে গেলো।সেখানে গিয়ে কফি বানাতে যাবে তার আগেই মোনা খান ওর দিকে একটা কফির মগ বাড়িয়ে দিলেন।মেঘ কফির মগটা হাতে নিয়ে ডাইনিং রুমে এসে চেয়ারে বসে চুপচাপ কফি খেতে লাগলো।সবাই বারবার মেঘের দিকে আর চোখে তাকাচ্ছে।ওদের কাছে মেঘের বিহেইবিয়ার কেমন অস্বাভাবিক লাগছে।’ও’ দ্রুত কফিটা শেষ করে অন্য একটা কফির মগ হাতে নিয়ে উপরে চলে এলো।আহান মেঘের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।দুই বছরে মেয়েটা একদম পাল্টে গেছে।হয়তো এতোদিনে বিয়েও করে নিয়েছে।আহান তাছিল্য একটা হাসি দিলো।যাকে মন প্রান এতো গুলো বছর ভালোবেসে গেলো।সে এখন অন্য এক জনের সংসার করছে।
_________
মেঘ ব্রেকফাস্ট করতে নিচে এসে জানতে পারলো আহান কালকে সন্ধ্যায় এখানে এসেছে।’ও’ যে আসবে সেটা আগে থেকে কেউই জানতো না।হঠাৎ করে এভাবে এসে সবাইকে চমকে দিয়েছে।সবাই প্রথমে অবাক হলেও এতোদিন পর আহান কে দেখে পুরো বাড়িতে কান্নার বন্যা হয়ে গেছিলো।আহান কে কালকে সবাই অনেক বার জিঙ্গেস করেছিলো যে এতোদিন ‘ও’ কোথায় ছিলো?কারো সাথে যোগাযোগ করেনি কেনো?কিন্তু আহান কারো প্রশ্নের কোনো অ্যান্সার দেয়নি।সব কিছু ইগনোর করে গেছে।
________
বারোটার দিকে সবাই সাড়িকা,সাঈফাদের বাড়ির উদ্দ্যেশে বের হলো।সেখানে যাওয়ার পর সবাই আহান আর মেঘকে দেখে যেমন খুশী হলো তেমনি সবাই ভিষন ইমোশনালও হয়ে গেছিলো।এতোদিন পর ওদের দুজনকে একসাথে দেখতে পাবে সেটা কেউ ভাবতেই পারেনি।অবশেষে আহির-সাড়িকা আর মিহির-সাঈফার বিয়েটা হয়েই গেলো।সন্ধ্যার দিকে বর যাএীরা সবাই খান ম্যানশনে চলে আসলো।এখানে আসার পর সমস্ত রিচুয়্যাল শেষ করে সাড়িকা,সাঈফা কে উপরে পাঠিয়ে দেওয়া হলো।
____
রাত 11:30
কনকনে ঠান্ডার মধ্যেও ছাদের এক কোনে বসে এক মনে অফিসের কাজ করে যাচ্ছে মেঘ।’ও’ অফিস থেকে অনেক রিকোয়েস্ট করে তিন দিনের ছুটি নিয়েছে ঠিকই।কিন্তু আসার আগে ওর বস এক গাদা ফাইল ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেছে তিন দিনের মধ্যে এগুলো কম্পিলিট করতে।তাই মেঘ সাঈফাদের বাড়ি থেকে এসেই ফাইল পএ নিয়ে ছাদে চলে এসেছে কাজ করার জন্য।নিচে লোক জনের চিল্লাচিল্লির জন্য কাজে মন বসাতে পারছিলো না।এজন্য ছাদটাকেই কাজ করার জন্য বেষ্ট জায়গা মনে করলো।মেঘ মনোযোগ দিয়ে কাজ করছিলো হঠাৎ ওর নামে সিগারেটের স্মেল আসতেই ওর কাশি শুরু হয়ে গেলো।’ও’ ঘাড় ঘুড়িয়ে সামনে তাকিয়েই দেখলো আহান হাতে সিগারেট নিয়ে ভুত দেখার মতো চমকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।মেঘ কাশতে কাশতে বললো
“আপনি এতো রাতে এখানে কি করছেন?”
আহান দেখলো মেঘের কষ্ট হচ্ছে তাই হাতে থাকা সিগারেট টা ছুড়ে বাইরে ফেলে দিয়ে অবাক কন্ঠে বললো
“আমি তো সিগারেট খেতে এসেছিলাম।কিন্তু আপনি এতো রাতে একলা এখানে কি করছেন?”
মেঘ আহানের প্রশ্নের উওর না দিয়ে ওকে আবার পাল্টা প্রশ্ন করলো।বললো
“আপনি সিগারেট খান?কোথায় আগে তো কখনো খেতে দেখিনি?”
মেঘের কথা শুনে আহান তাছিল্য হেসে বললো
“শুধু সিগারেট খাইনা,ড্রিংকসও করি।আর আগে খেতে দেখেননি কারন আমি আগে কখনোই এসবে হাতও লাগাইনি।”
মেঘ তাছিল্য হেসে বললো
“আরেহ বাহ বেশ ভালো।তা হঠাৎ এতো উন্নতির কারন জানতে পারি।”
আহান গিয়ে মেঘের পাশের বেতের চেয়ারটার উপর বসলো।তারপর স্বাভাবিক ভাবে বললো
“আগে এসবের প্রয়োজন হয়নি।কারন একটা পরীর উপর আমি খুব বাজে ভাবে আসক্ত হয়ে গিয়েছিলাম।সে ছাড়া আমার উপর অন্য কোনো নেশা কাজ করতো না।কিন্তু আমার সেই পরীটা হঠাৎ করেই একদিন হারিয়ে গেছে তাই তার নেশা কাটাতে এই নেশাকে বেছে নিয়েছি।বলতে পারেন নিজের কষ্ট গুলোকে কমানোর সামান্য একটা চেষ্টা করছি।”
আহানের কথা শুনে মেঘের কান্না চলে আসলো।ওর ইচ্ছে করছে একবার আহান কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেদে দিতে।আর বলতে আমি যা করে ছিলাম সব তোমাদের সবার ভালোর জন্য করে ছিলাম।একদিন তোমরা সবাই সত্যিটা ঠিক বুঝতে পারবে।কিন্তু না,ও এখন এসব কিছুই আহানকে বলতে পারবে না।এতো স্যাক্রিফাইজ করার পর কিছুতেই ওর প্লান টা ফেইল হতে দিবে না।মেঘ দ্রুত ওর ফাইল গুলো গুছিয়ে বসা থেকে উঠে দারালো।ওকে দাড়াতে দেখে আহান ব্যাস্ত কন্ঠে বললো
“আরে ম্যাম প্লিজ কুল ডাউন।আমি ড্রিংকস করি এটা ঠিক।বাট আজকে ছুয়েও দেখিনি বিশ্বাস করুন।আমি আপনার কোনো ক্ষতি করবোনা প্রমিস।প্লিজ আপনি এখানে বসতে পারেন।”
আহানের কথা শুনে মেঘের বুকটা দুমরে মুচরে শেষ হয়ে যাচ্ছে।’ও’ কোনো রকম জিহ্ব দিয়ে ঠোট টা ঝুলিয়ে শুকনো কন্ঠে বললো
“আসলে আমার একটু কাজ আছে।এগুলো গিয়ে কম্পিলিট করতে হবে আমি আসি।”
আহান শুকনো হেসে বললো
“কাজ আছে নাকি আপনার হাসবেন্ট এতো রাতে আপনাকে একটা ছেলের সাথে দেখলে মাইন্ড করবেন?বাই দ্যা ওয়ে আপনার হাসবেন্ট কোথায়?ওনাকে তো বিয়ে বাড়িতে দেখলাম না।”
আহানের কথা শুনে মেঘ রুক্ষ গলায় বললো
“আমি কোনো ছেলের সাথে কথা বলি সেটা আমার হাসবেন্ট একদম পছন্দ করেন না।আমার হাজবেন্টের অপছন্দ করে এমন কোনো কাজ আমি করতে চাই না।আর উনি অফিসের কাজে ব্যাস্ত আছেন তাই এখানে আসেন নি।”
কথাটা বলেই মেঘ হনহন করে সেখান থেকে চলে গেলো।একবারের জন্যেও পিছনে তাকালো না।কারন ও জানে পিছনে তাকালেই এক জোড়া অসহায় চোখ দেখতে পাবে।যেই চোখের দিকে তাকালে ও আর নিজেকে সামলাতে পারবে না।ইচ্ছে করবে একবার ছুটে এসে লোকটা কে ছুয়ে দিতে।
আহান মেঘের যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে সামনে রাখা টেবিল টা কে জোড়ে লাথি মারলো।তারপর মৃদ্যু চিল্লিয়ে বললো
“কতো সহজে বলে দিলে তোমার হাজবেন্ট অপছন্দ করে এমন কোনো কাজ তুমি করতে চাও না।তুমি এতোটা সেলফিস কিভাবে হয়ে গেলে মেঘ?কেনো আমার ভালোবাসা টা তোমার চোখে পড়ে না?আমাকে কেনো এভাবে কষ্ট দিলে মেঘ?এর থেকে তো ভালো তুমি আমাকে নিজের হাতে শেষ করে দিতে।অন্তত এই যন্থনা থেকে তো মুক্তি পেতাম।”
কথাটা বলতে বলতে আহানের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো।’ও’ দ্রুত চোখের পানি মুছে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করতে লাগলো।না এভাবে দূর্বল হলে চলবে না।মেঘ যদি ওকে ছাড়া ভালো থাকতে পারে তাহলে ও কেনো মেঘকে ছাড়া ভালো থাকতে পারবে না।কথাটা ভাবতে ভাবতে আহানের চোখ গেলো টেবিলের নিচের দিকে।দেখলো সেখানে একটা কাগজ পড়ে আছে।’ও’ ভাবলো হয়তো তাড়াহুড়োতে মেঘ কাগজ টা ফেলে গেছে।আহান একটু ঝুকে কাগজ টা হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো।এটা মেঘের পার্সনাল কোনো একটা ডকুমেন্ট।হঠাৎ আহানের চোখ মেঘের নামের উপরে আটকে গেলো।এখানে মেঘের নাম দেওয়া মিসেস মেঘনা খান।নামটা পরে আহান চারশো চল্লিশ বোল্টের শকড খেলো।’ও’ ভাবতেই পারছে না মেঘ এখনো ওর সারনেইম ইউজ করে।তাহলে কি মেঘ ওদের বিয়েটা মেনে নিয়েছিলো?যদি মেনেই থাকে তাহলে দ্বীতিয় বিয়ে কেনো করলো?আর মেঘ যে এখনো ওর এক্স হাজবেন্টের সারনেইম ইউজ করে সেটা কি ওর বর্তমান হাজবেন্ট জানে?এসব ভেবে আহানের মাথা ঘুরছে।কি যে হচ্ছে ‘ও’ কিছুই বুঝতে পারছে না।মেঘের বর্তমান হাজবেন্ট কেনো মেঘকে ওর এক্স হাজবেন্টের সারনেইম ইউজ করতে দিচ্ছে আহানের মাথায় সেটাই ঢুকছে না।
#চলবে,,,,,